সংসার সমরাঙ্গন পর্ব-২১+২২

0
11

#সংসার_সমরাঙ্গন (২১)
রূপন্তি রাহমান (ছদ্মনাম)

মাঝরাত!

তবে তনয়াদের বসার ঘর দেখে মনে হচ্ছে না এখন মাঝরাত। আচমকা মাহমুদের আগমনে আলোড়ন সৃষ্টি হলো। রাতের নিস্তব্ধতা রূপ নেয় ব্যস্ততায়। তবে ঘরের উজ্জ্বল আলো যেন মাহমুদের অস্বস্তি আর উত্তেজনা বাড়িয়ে দিচ্ছে । নাজমা বেগম দিশেহারা হয়ে এদিক-ওদিক ছোটাছুটি করছেন। মেয়ের জামাই এসে বসে আছে—এত রাতে, এতগুলো দিন পর! কী করবেন, কী বলবেন, কিছুই যেন বুঝে উঠতে পারছেন না। হন্তদন্ত হয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন আপ্যায়নের ব্যবস্থায়।

মেয়ের মায়েদের এই এক অদ্ভুত স্বভাব—জামাই যেমনই হোক, যত অন্যায়ই করুক, তারা তার প্রতি যত্নশীল থাকবেনই। যেন মনের গভীরে এক অদৃশ্য শিকল বাঁধা আছে, যা কোনো অভিমান বা রাগ দিয়ে ছেঁড়া যায় না। তাই মেয়ের মা যতই অভিমান করুক, যতই রাগ জমুক, জামাই এসে পড়লে যেন সব ভুলে যান।

আর যদি পারতেন, তাহলে হয়তো বুক চিরে হৃদয়ের ভালোবাসাটুকুও তুলে দিতেন।।কে’টে খাওয়াতেন নিজের কলিজাও

অন্যদিকে মাহমুদ বসে আছে অপরাধীর মতো—মাথা নিচু, কাঁধ নুয়ে এসেছে। চোখের নিচে গভীর কালি জমে আছে, চুল এলোমেলো, গালের হাড় বেরিয়ে এসেছে। এত পরিবর্তন! এই মানুষটাকে তনয়া চেনে না। চেনা মাহমুদের এই অচেনা রূপ সে অনেকক্ষণ ধরে দূর থেকেই পর্যবেক্ষণ করছে।

একসময় যে মানুষটা তার সামনে এসে বুক চিতিয়ে দাঁড়াত। চোখে চোখ রেখে ভালোবাসার নীরব ভাষায় কথা বলত। আকুল আগ্রহে টেনে নিতো বুকে। যেন সেখানেই তার চিরস্থায়ী আশ্রয়। সেখানেই তার অস্তিত্বের পূর্নতা। সে-ই আজ মাথা নিচু করে বসে আছে! তার এই অসহায়ত্ব, বিধ্বস্ত চেহারা দেখে তনয়ার মনে কেমন যেন শূন্যতা তৈরি হচ্ছে। এটা কী? অভিমান? ঘৃণা? নাকি অনেকদিন ধরে জমে থাকা এক অদ্ভুত কষ্ট?

কিছুই বুঝতে পারছে না সে। শুধু অনুভব করছে—ঘরের মধ্যে এক অদ্ভুত ভারী নীরবতা জমে আছে, যা বুকের ভেতরেও চাপ সৃষ্টি করছে।

নাস্তার ট্রে নিয়ে হাজির হয় রূপা। কপাল অব্দি ঘোমটা টেনে মাহমুদের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। ট্রে টেবিলের উপর রেখে সালাম দেয়,

‘আসসালামু আলাইকুম ভাইয়া।’

মাহমুদ এক পলক চেয়ে জোরপূর্বক হাসার চেষ্টা করে। উত্তর দেয় সালামের-

‘ওয়ালাইকুমুস সালাম।’ জবাব দিয়েই মাথা নুইয়ে ফেলে মাহমুদ।

‘কেমন আছেন?’

‘এই তো।’

‘অনেক রাত হয়েছে। তোমার এখন ঘুমের প্রয়োজন। ঘুমোতে যাও তুমি।’

রূপাকে উদ্দেশ্য করে দূর থেকেই কথাখানি বলে তনয়া।

তনয়ার কণ্ঠস্বর কর্ণগোচর হতেই ধক করে উঠল মাহমুদের বক্ষঃস্থল। বহুদিন পরে এতটা কাছ থেকে শুনছে এই স্বর—একসময় যে কণ্ঠস্বর ছিল তার দিনযাপনের অবিচ্ছেদ্য অংশ, আজ তা যেন তা দূর আকাশের তাঁরার সমতূল্য।

সে অবাক চোখে তাকিয়ে রইল তনয়ার দিকে। মনে হলো, সময় যেন পেছন ফিরে তাকিয়েছে, পুরোনো দিনের আবেশ ছুঁয়ে যাচ্ছে বর্তমানকে। তনয়ার ঠোঁট নড়ে, কিন্তু মাহমুদ শব্দের অর্থ বোঝার আগে হারিয়ে যায় সেই সুরের মোহে। এতদিনের দূরত্ব, নীরবতা, অভিমান—সবকিছু মুহূর্তেই ফিকে হয়ে যায় স্ত্রীর কণ্ঠের স্পর্শে।

তার দৃষ্টি আটকে যায় তনয়ার মুখে। কতদিন পর এভাবে, এতটা নিবিড়ভাবে দেখছে তাকে! মনে হয়, এই চেনা মুখ যেন আবার নতুন করে ধরা দিচ্ছে তার চোখে। সময় থমকে আছে—শুধু হৃদয়ের গভীরে প্রতিধ্বনিত হচ্ছে তনয়ার সেই বহু প্রতীক্ষিত কণ্ঠস্বর।

‘আম্মা রান্নাঘরে। একা সবটা সামলাতে পারবেন না।’

নিজেকে সামলে নিলো মাহমুদ। আবারও অপরাধীর ন্যায় তাকালো মেঝের দিকে।

‘ওসব নিয়ে তোমার ভাবতে হবে না। আমি আর মা সামলে নিবো। এই সময়ে রাত জাগা ঠিক না।’

‘কিন্তু,,,,,,

‘কোনো কিন্তু না। অনাকাঙ্ক্ষিত কিছু হয়ে গেলে এর মাশুল তোমাকেই দিতে হবে। তাই বলছি আমার কথা শুনো।’

রূপা চলে গেলো। ভ্রুকুটি করে মাহমুদকে দেখছে তনয়া।

‘বলছিলাম কি আম্মাকে মানা করো এসব করতে। আমি চলে যাবো এখনই।’

মাথা উঁচিয়ে তাকাতেই তনয়ার চোখে চোখ পড়ে যায় তার। দ্রুতই নামিয়ে নিলো সেই দৃষ্টি।

‘তোমরা বউ আদরে কার্পণ্য করলেও আমার মা কিন্তু জামাই আদরে কার্পণ্য করে না। সেটা যত রাত হউক আর তিনি যত অসুস্থই হউক।’

‘খোঁচা দিচ্ছো বুঝি?’

‘ওহ্! জাস্ট বাস্তবতা দেখাচ্ছি। ছেলের মায়েরা বউ আদর না করলেও মেয়ের মায়েরা জামাই আদর করার জন্য মুখিয়ে থাকে। এবার মেয়ে জামাই ভালো হউক বা মন্দ।’

কথা পিঠে আর কিছু বলতে পারলো না মাহমুদ।

চেনা অনুভূতিরা কড়া মনের দরজায়। এড়িয়ে যেতে চেয়েও যাওয়া যায় না। হার মানতে হয়। আত্মসমর্পণ করতে হয়। সুপ্ত অনুভূতির সাথে তনয়াও পেরে ওঠে না। ঘায়েল করে তাকে। বিধ্বস্ত মানুষটা দূর থেকেই তাকে চূর্ণবিচূর্ণ করে দিচ্ছে। ভেঙে দিচ্ছে তার মনোবল আর জেদ। পালিয়ে বাঁচতে চাইলো সে।

‘নাস্তা করো। আমি মায়ের কাছে যাচ্ছি।’

‘আমি চলে যাবো। আম্মাকে ডেকে দিলে ভালো হতো।’

‘তুমি নিজে ডাকতে পারছো না? নাকি আমার মাকে মা ডাকতে নিষেধাজ্ঞা আছে?’

তনয়ার চোখে চোখ রাখে মাহমুদ। নিস্তেজ স্বরে আওড়ায়-

‘কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই। তবে বয়োজ্যেষ্ঠ মানুষটার চোখে চোখ রাখার সাহস আমার নেই। তাকে যে কথা আমি দিয়েছিলাম সেটা রাখতে পারিনি। কিংবা রাখার চেষ্টা করিনি।’

___________________

প্রেশার কুকারের শিস একটানা বাজছে, তার তীক্ষ্ণ আওয়াজ রান্নাঘরের নীরবতাকে বারবার ছিঁড়ে দিচ্ছে। গরম ভাপে রান্নাঘর ভারী হয়ে আছে, মশলার ঝাঁজ চোখে পানি এনে দিচ্ছে, তবু নাজমা বেগম হাতের কাজ থামাচ্ছেন না। রোস্টের মশলা কষাতে কষাতে ব্যস্ত হাতে ডিমের খোসা ছাড়াচ্ছেন। কোমরের ব্যথাটা সারাদিন ধরে কুঁকড়ে ধরে আছে তাকে। দাঁড়িয়ে থাকাটাই কষ্টকর হয়ে উঠছে। কিন্তু তার চোখেমুখে ক্লান্তি নেই, নেই বিরক্তিও। যেন এই ব্যথা-যন্ত্রণা গায়ে সয়ে গেছে, অভ্যস্ত হয়ে গেছেন বছরের পর বছর।

‘মা?’

কাঁধের উপর দিয়ে উড়ে আসা মেয়ের ডাকে তিনি পেছন না ফিরেই বললেন,

‘কি বলবি বল তাড়াতাড়ি।’

‘মাহমুদ নাকি চলে যাবে।’

নাজমা বেগমের হাতের নড়াচড়া থেমে গেল। খুন্তিটা কড়াইয়ের পাশে রেখে এক মুহূর্ত চুপ করে দাঁড়ালেন। কপালের ভাঁজটা আরও গভীর হলো।

‘কিহ?’

তার কণ্ঠে অবিশ্বাস, চোখে একরাশ প্রশ্ন। হাত ধুয়ে আঁচলে মুছতে মুছতে বললেন,

‘চলে যাবে মানে? এখন ক’টা বাজে? কোথায় যাবে ও এখন?’

তিনি হনহনিয়ে বসার ঘরের দিকে এগোচ্ছিলেন, কিন্তু তনয়ার কথা শুনে থমকে দাঁড়ালেন মাঝপথে ।

‘পরের ছেলের জন্য এতোকিছু কেন করছো মা? অসুস্থ শরীর নিয়ে এত হাড়ভাঙা খাটুনি? কই, তার মা তো আমার অসুস্থতার সময় কিছুই করেনি।’

কথাটা যেন নাজমা বেগমের বুকের মাঝে একটা গরম শলাকা হয়ে বিধল।

তার হাতের আঙুল শক্ত হয়ে এঁটে এল আঁচলের কোণে। রান্নাঘরের হলুদ আলোয় তনয়ার চোখমুখ তীক্ষ্ণ দেখাচ্ছে, যেন অনেক দিনের জমে থাকা অভিমান, অভিযোগের পাহাড় নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

নাজমা বেগম ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রইলেন মেয়ের দিকে।

‘উত্তর দিচ্ছো না যে!’

তনয়ার কণ্ঠস্বর খানিকটা কাঁপল।

নাজমা বেগম দীর্ঘশ্বাস ফেললেন। চোখ তুলে রান্নাঘরের জানালা দিয়ে বাইরে তাকালেন।রাস্তাগুলো অন্ধকারে ডুবে গেছে, শুধু দূরের একটা হলুদ বাতি আলো ছড়াচ্ছে। সেই আলোয় ধুলো-মাখা রাস্তা রহস্যময় দেখাচ্ছে। যেখানে অনেক প্রশ্ন আছে, কিন্তু সব প্রশ্নের উত্তর নেই।

অবশেষে তিনি ধীর কণ্ঠে বললেন,

‘হয়তো মেয়েকে সুখী দেখার প্রত্যাশায়।’

তনয়া হালকা হাসল, তবে সেই হাসির মাঝে তীব্র বিদ্রুপ।

‘মেয়েরা কি শ্বশুরবাড়িতে সত্যি সুখী হয়? আর সুখী দেখানোর জন্য মায়েদের এতো কিছু করতে হবে কেন? কই, ছেলের মায়েরা তো ছেলের সুখের কথা ভেবে বউকে কখনো এভাবে তোয়াজ করে না!’

নাজমা বেগম এবার আর বাইরে তাকালেন না। তিনি শুধু চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলেন। রান্নাঘরের আগুনের শিখা দপদপ করে উঠল, যেন তার হৃদয়ের নিভু নিভু অস্থিরতা এই আগুনের শিখার মতোই।

তারপর আস্তে করে বললেন,

‘জানি না।’

তনয়া জোর করে না। জোর করলেও কোনো উত্তর সে পাবে না। এই প্রশ্নের উত্তর কোনো মায়ের কাছেই নেই।

_________________

বাকি ডিমের খোসা ছাড়িয়ে একপাশে রাখলো তনয়া। কষানো মশলায় মুরগির পিসগুলো দিয়ে নেড়েচেড়ে দিলো। বেসিনের কাছে রাখা পোলাও এর চালগুলো ধোয়ার মাঝেই নাজমা বেগম আবার ফিরে এলেন।

‘তোর এখানে আর থাকতে হবে না মা। মাহমুদ হাতমুখ ধুবে। তুই মাহমুদের কাছে যা।’

‘বসেছে যখন আর একটু বসুক। আমি এদিকটা একটু সামলাই। তোমার জন্য তো চাপ হয়ে যাচ্ছে। চেয়ারটা আনছি। তুমি একটু বসো। খানিক জিরিয়ে নাও।’

‘নারে মা কোনো চাপ না। আমি পারবো। তুই যা জামাইয়ের কাছে।’

তনয়া নাক মুখ কুঁচকে গাল ফুলিয়ে তাকাল তার মায়ের দিকে।

‘সন্ধ্যায় কিমা পরোটা বানিয়ে দেওয়ার কথা বলাতে অসুস্থতার হাজারটা বাহানা দেখালে। এখন কোথায় তোমার অসুস্থতা?’

মেয়ের অভিমানী অভিযোগ শুনে বিস্তর হাসলেন নাজমা বেগম। তনয়ার গালে হাত রেখে কপালে ছুঁয়ালেন মমতাময়ী স্পর্শ।

‘পরিবেশ ও পরিস্থিতির জন্য অনেক অসুস্থতাকেই ঝেড়ে ফেলে দিতে হয়।’

তনয়াকে সরিয়ে তিনি গিয়ে দাঁড়ালেন চুলার সামনে। প্রেশার কুকার নামিয়ে পোলাও রান্নার বন্দোবস্ত শুরু করলেন।

‘আমি জানি তোর মাহমুদের উপর অভিমান আছে। ঠিক অভিমান না রাগ আর হাজারো অভিযোগ। সেই রাগ থেকেই আমাকে প্রশ্নটা করেছো। মা গো মনে রেখো স্বামী স্ত্রীর মাঝে ঠোকাঠুকি হবেই। আজ মান অভিমানের পাল্লা ভারী তো কাল ভাবের। তাই বলে কি তাকে আপ্যায়ন করবো না? সে এই বাড়ির জামাই। তোর বাবাও আমার সাথে কত ঝগড়া করেছে তাই বলে তোর নানু কি তোর বাবা কে আদর যত্ন করেননি?’

প্রশ্নটা করেই তাকালেন তনয়ার দিকে। এক গাল হেসে আবারও বলেন,

‘মাহমুদ এই পরিবারের মেহমান আর তুমি ওই পরিবারের অবিচ্ছেদ্য অংশ। আজ কিংবা কাল হয়ে উঠবে পরিবারের কর্তী। মাহমুদ এখানে আসবে এক রাত কিংবা দুই রাতের জন্য। কিন্তু তোমায় সেখানে থাকতে হবে মৃত্যু পর্যন্ত। মাহমুদ কিন্তু চাইলেও এই পরিবারের কর্তা হতে পারবে না। তাই বলছি যা বাস্তবতা তা মেনে নাও। হাজারো অসুস্থতায় নিজের সংসারটা নিজেই গুছিয়ে রাখতে হবে এটা মাথায় গেঁথে রাখো। মনে করবে তোমার আশেপাশে কেউ নেই। যে যা ইচ্ছে বলুক তোমার দায়িত্ব পালনে কোনো কার্পণ্য করবে না।’

‘আমার প্রতি অন্যায় হলেও আমি চুপ থাকবো মা?’

‘তোমায় কেন জবাব দিতে হবে? তোমার প্রতি হওয়া অন্যায়ের জবাব দেবে মাহমুদ।’

‘আদৌও দেয় জবাব? প্রথমেই জবাব দিলে আজকের পরিস্থিতির সৃষ্টি হতো না।’

‘হয়তো সে অপারগ।’

‘তো? সে অপারগ হলে আমি কি করবো? সহ্য করবো? প্রটেক্ট করতে না পারলে বিয়ে কেন করেছে? ভুজুংভাজুং বুঝাতে এসো না মা। ওই সংসারটা কেবল আমার না। ওখানে বাস করা সকলের। কাজের বেলায় সংসার আমার আর অন্যসময় সংসারটা তার এটা বললেই তো হবে না। দায়িত্বগুলোও ভাগ করে নিতে হবে। যেখানে আমাকে সকলের কথা ভাবতে হয়। সকলকে রান্না করে খাওয়াতে হয় সেখানে আমি কেন ভাবতে যাবো আমি একা?’

‘আহ্! মাহমুদ শুনবে।’

‘শুনলে? দেখো মা ও এসেছে। আপ্যায়ন করছো। এই পর্যন্ত ঠিক আছে। তবে আমাকে ওর সাথে যাওয়ার জন্য চাপ দিবে না। জামাইয়ের কথা গলে গিয়ে আমাকে বকাবকিও করবে না। আমি কোথাও যাবো না। আর যদি যেতে হয় তবে সারাজীবনের জন্য এই বাড়ি ছাড়বো। মুখও দেখাবো না কখনো।’

#চলবে

#সংসার_সমরাঙ্গন (২২)
রূপন্তি রাহমান (ছদ্মনাম)

রাত তিনটা। খাবার শেষ করে ক্লান্ত দেহটা বিছানায় এলিয়ে দিলেও মাহমুদের চোখে একটুও ঘুম নেই। ঘরের নরম আলোয় দরজার দিকে চেয়ে আছে চাতক পাখির মতো—কখন তনয়া আসবে, কখন চোখ ভরে দেখবে তাকে। প্রতিটি মুহূর্ত যেন দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হয়ে যাচ্ছে, অপেক্ষার এই প্রহর ফুরোতেই চাইছে না।

অন্যদিকে, তনয়া এখনো রুমে ফেরেনি। সোফায় পা গুটিয়ে বসে আছে, মুখে অনড় জেদের ছাপ। পাশে দাঁড়িয়ে নাজমা বেগম বারবার তাড়া দিলেও তনয়া রুমে যেতে নারাজ। ঠেলেঠুলে পাঠানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ তিনি। তনয়া সাফ জানিয়ে দিয়েছে—আজ সে কিছুতেই রুমে যাবে না। দরকার হলে এখানেই শুয়ে থাকবে, মশার কামড় খেলেও আপত্তি নেই!

দুজন দু’জায়গায় বসে আছে—একজন অপেক্ষায়, আরেকজন অভিমানে। অথচ দুজনের মাঝেই আছে এক অদৃশ্য টান।

‘বাচ্চাদের মতো জেদ কেন ধরছিস মা?’

‘জেদ ধরেনি তো। আমার রুমে যেতে ইচ্ছে করছে না।’

নাজমা বেগম মেকি রাগ দেখালেন। ভ্রু উঁচিয়ে ধমকের ভঙ্গিতে বললেন,

‘ছেলেটা রুমে একা একা বসে আছে। তুই এখানে আর কতক্ষণ থাকবি?’

‘আহ্! মা, তোমার জন্য কি একটু বসতেও পারবো না এখানে?’ তনয়ার চোখেমুখে বিরক্তির ছাপ।

‘সারাদিন বসেও কি স্বাদ মিটে না? এই রাতদুপুরেও কেন বসতে হবে?’ দাঁতে দাঁত চেপে কড়া গলায় বলেন তিনি।

করুণ চোখে এক পলক নাজমা বেগমের দিকে তাকিয়ে পা গুটিয়ে বসে তনয়া।

‘অনেক ধকল গেছে তোমার উপর দিয়ে। ঘুমোতে যাও এবার।’

‘তুই এমন করলে আমার ঘুম আসবে? টেনশনের সাথে সাথে প্রেশারও বেড়ে যাবে।’

তনয়া গভীর নীরবতার আবরণে ঢেকে দীর্ঘশ্বাস ফেলল। তার শ্বাসের ভারী সুরে যেন অদৃশ্য এক বেদনার সুর বাজল। নাজমা বেগম মমতার পরশ বুলিয়ে দিলেন তার চুলে, স্নেহসিক্ত স্পর্শে যেন একটুখানি শান্তির আভাস খুঁজে পেল তনয়া। মাথা এলিয়ে দেয় মায়ের কাঁধে।

‘মান অভিমান তো স্বামী স্ত্রীর মাঝেই হয়। তাই বলে এমন পাগলামি করবি তুই? ঠোকাঠুকি হয়েছে দুজনের মধ্যে বুঝলাম। ছেলেটা তো এসেছে তোর কাছে। তোর মান ভাঙাতে। সেই সুযোগ টা দে। এখানে বসে থাকলে কষ্ট বাড়বে মা। সাথে আমার চিন্তা।’

তনয়া কিছু বলতে চায়। কিন্তু কণ্ঠনালী ভেদ করে সেই শব্দ বের হয় না। বুক ভারী হয়ে আসে তার। চিৎকার করে বলতে চায়, ‘কেন এসেছি ও বাসা ছেড়ে সেটা জানলে তো তুমি চিন্তায় আরো ম*রে যাবে।’ কিন্তু বলতে পারে না।

‘তুই না গেলে যে ছেলেটার কাছে আমি ছোট হয়ে যাবো। আমার অনুরোধ রাখ!’

________________

তনয়া যেন এক মুহূর্তও অপেক্ষা করল না। ঝড়ের বেগে এগিয়ে গিয়ে একটিমাত্র বালিশ হাতে তুলে নিল এবং নির্বিকার ভঙ্গিতে মেঝেতে শুয়ে পড়ল। মাহমুদ বিস্ময়ে স্থির হয়ে রইল। তার দৃষ্টি তনয়ার ওপর নিবদ্ধ। এমন আচরণ সে কল্পনাও করেনি। যেন এক অদৃশ্য স্রোতে ভেসে এসে তনয়া নিজের জন্য এই স্থান নির্ধারণ করল। কোনো প্রশ্নের অবকাশ রাখল না। কোনো প্রতিবাদ শোনার সুযোগ দিল না।

‘আলো নিভিয়ে শুয়ে পড়ো।’ মাথা উঁচিয়ে বলে তনয়া।

সম্বিত ফিরে মাহমুদের। মিনমিন করে নরম স্বরে বলে-

‘নিচে শুয়েছো কেন? তোমার তো ঠান্ডার ধাত আছে। ঠান্ডা লেগে যাবে তো।’

‘নিজের চিন্তা নিজে করো। আমায় নিয়ে না ভাবলেও চলবে। ভাবনার সময় শেষ।’

নীরবতার চাদরে নিজেকে মুড়িয়ে নেয় মাহমুদ। অপরাধবোধে ভারী তার বুক, অথচ মুখে কোনো কথা নেই। তনয়ার অভিমানী মুখ তার আত্মগ্লানি বাড়িয়ে দিচ্ছে।

মাহমুদও ধীর পায়ে এসে তনয়ার পাশে শুয়ে পড়ে। নির্বাক ভালোবাসায় আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরে তাকে।যেন এই এক আলিঙ্গনে সব অভিমান গলে যায়। সব দূরত্ব মুছে যায়। তনয়ার নরম শ্বাস তার হাতে এসে ঠেকে। মাহমুদ অনুভব করে— এই নিঃশ্বাসেও যেন অভিমানের ছোঁয়া স্পষ্ট।

তনয়া ছাড়ানোর চেষ্টা করে, ব্যাকুল হাতে সরিয়ে দিতে চায় মাহমুদের বন্ধন। কিন্তু যতই ছটফট করে, ততই আরও দৃঢ় হয়ে আসে মাহমুদের আলিঙ্গন।

মাহমুদ তার থুতনি তনয়ার কাঁধে ঠেকায়। এক গরম নিঃশ্বাস আছড়ে পড়ে তনয়ার গলায়। সেই শ্বাস যেন অদৃশ্য এক ঝড়ে বদলে যায়, তনয়ার শরীরে ছড়িয়ে পড়তে থাকে। গা কাঁটা দিয়ে ওঠে। যেন সেই স্পর্শে তার সমস্ত অনুভূতি একত্রিত হয়ে একটা শিহরণের রূপ নেয়। এক নিঃশব্দ অনুভূতির পাহাড় সমান শীতল শিহরণ।

তনয়ার প্রতিবাদী হাতগুলো ক্রমশ ক্লান্ত হয়ে আসে, আর মাহমুদের আকুল স্পর্শে এক অদৃশ্য যুদ্ধের রেশ লেগে থাকে—একদিকে অভিমান, অন্যদিকে অপরাধবোধে পোড়া ভালোবাসা।

‘মাহমুদ, কি হচ্ছে এসব?

মাহমুদের শ্বাস ভারী হয়ে আসে। গলায় যেন আটকে যায় কিছু কথা।

‘কতদিন তোমায় একটু ছুঁতে পারি না, তনয়া। তোমায় মন ভরে দেখতে পারি না… কতদিন!’

তনয়া শক্ত হয়ে যায়, চোখের তারায় জমে ওঠে অভিমান আর ক্ষোভের ছায়া।

‘আমাকে ছোঁয়ার অধিকার তুমি হারিয়েছো, মাহমুদ। আমাকে ছাড়ো!’

মাহমুদ নিঃশব্দে মাথা নাড়ে। তার কণ্ঠ তীব্র কিন্তু ভেতর থেকে ভেঙে পড়া।

‘ছেড়ে দেওয়ার জন্য ধরিনি তোমায়।’

তনয়া তাচ্ছিল্যের হাসি হাসে, কিন্তু সেই হাসির আড়ালে এক টুকরো ব্যথা লুকিয়ে থাকে।

‘ছেড়ে দেওয়ার জন্য ধরোনি, তবে প্রতি মুহূর্তে আঘাত দেওয়ার জন্য ধরেছো? তাই তো?’

মাহমুদ চুপ। যেন সমস্ত অপরাধবোধ তার কণ্ঠরোধ করে দিয়েছে।

‘তোমায় ছাড়া থাকতে পারবো না, তনয়া। আমার দমবন্ধ লাগে…

তনয়া চোখ বন্ধ করে একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে। গলার স্বর ঠান্ডা, অথচ ধৈর্যের শেষ সীমায় পৌঁছে গেছে।

‘থাকতে পারবে, মাহমুদ। চেষ্টা করলেই পারবে।’

মাহমুদ দ্রুত মাথা নাড়ে, যেন এই কথাটা শুনতে চায় না।

‘সেই চেষ্টাটাই করতে চাই না আমি।’

তনয়া এবার মুখ ফিরিয়ে নেয়। চোখের কোণে জমে ওঠে অশ্রু, কিন্তু গলায় কঠিন একটা শক্তি ধরে রাখে।

‘নতুন মানুষ নিয়ে নতুন করে শুরু করো, মাহমুদ। তোমার মায়ের পছন্দ অনুযায়ী, অল্প বয়সী কাউকে নিয়ে। যেমনটা তোমার পরিবার চায়।’

মাহমুদ তীব্র দৃষ্টিতে তাকায় তনয়ার দিকে, যেন এই কথাটা তার বুক চিরে গেল।

‘ আল্লাহর কাছে চাইব, তেমন দিন আসার আগে… আমি যেন ম*রে যাই।’

তনয়ার ভেতরটা দুলে ওঠে, যেন কোথাও গভীরে একটা সুতোর টান লেগেছে। বুকের মাঝে অদ্ভুত শূন্যতা ছড়িয়ে পড়ে, অথচ মুখটা কঠিন রাখার চেষ্টা করে সে। ফাঁকা ঢোক গিলে শুষ্ক গলাটা ভেজাতে চায়, কিন্তু তাও যেন ব্যর্থ হয়।

এক মুহূর্তের জন্য মনে হয়, সত্যিই যদি মাহমুদ… না, সে এইসব ভাবতে চায় না।

তনয়া চোখ বুজে রাখে। একটু গভীর শ্বাস নেয়, নিজেকে সামলে নেয়। হৃদয়ের গতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা করে, কিন্তু ভেতরের অস্থিরতা কিছুতেই থামতে চায় না।

‘ফেরার কথা ভুলেও মায়ের সামনে উচ্চারণ করবে না। আমি ফিরবো না।’

‘ফিরো না তবুও আমার হয়েই থেকো। ছুঁতে না পারলেও অন্তত এটা তো বলতে পারবো তুমি কেবল আমার।’

_________________

‘এভাবে রাগ করে নিজের সংসার ফেলে আর কতদিন থাকবে মা? এবার ফিরে চলো।’

গুনে গুনে ঠিক পনেরো দিনের মাথায় তনয়াকে ফিরিয়ে নিতে এলেন খালেকুজ্জামান। গভীর দৃষ্টিতে তাকালেন তনয়ার দিকে। কণ্ঠে অনুনয়ের সুর।

তনয়া বিমূঢ়। কী উত্তর দেবে, বুঝে উঠতে পারে না। চোখ তুলে তাকায় মায়ের দিকে, যেন সেখানে খুঁজে পেতে চায় নির্ভরতার আশ্রয়।

খালেকুজ্জামান তনয়ার দোদুল্যমানতা অনুভব করেন। ভরসা দেওয়ার চেষ্টা করেন।

‘এমন ঝুট ঝামেলা প্রতিটা সংসারেই হয়। তোমার শ্বাশুড়ি অনুতপ্ত। নিজের ভুল বুঝতে পেরেছে।’

‘শ্বাশুড়ি মানে? আমি তো ভেবেছিলাম মাহমুদের সাথে মনোমালিন্য হয়েছে।’ খালেকুজ্জামানের মুখের কথা কেড়ে নিয়ে পাল্টা প্রশ্ন করেন নাজমা বেগম।

তিনি তনয়ার দিকে তাকান। পুনরায় বলেন।

‘স্বামী স্ত্রীর মাঝে ঝামেলা ভেবে এতোদিন কিছু জানতে চাইনি। আজ জানতে চাই। কারণ বল আমাকে।’

নাজমা বেগম উত্তেজিত হয়ে পড়লেন।

‘মা, শান্ত হও তুমি। তোমার প্রেশার বেড়ে যাবে। আমি তোমায় বলছি সব।’

‘বেয়ান কে কিছু জানাওনি তুমি?’

তনয়া মাথা নাড়ে।

‘আমি জানতে চাই কি হয়েছে।’

খালেকুজ্জামান শুরু থেকে শেষ সবটা বলতেই স্তব্ধ হয়ে যান নাজমা বেগম। চোখজোড়া অশ্রুসজল হয়ে ওঠে। শব্দহীন বেদনার স্রোত বয়ে যায় অন্তরে। গলা ধরে আসে তার। কাঁপা কাঁপা স্বরে বলেন,

‘আমার ঘরে ভাতের অভাব নেই বেয়াই। আর না অভাবে পড়ে মেয়েকে বিয়ে দিয়েছি। একা হাতে সংসার সামলানোর পরও আপনারা ভর্ৎসনা করেছেন। এভাবে মানসিক অত্যাচার করার আগে মনে পড়েনি আপনাদেরও মেয়ে আছে? তার আগে আমার মেয়ে আমার কাছে পাঠিয়ে দিতেন।’

নাজমা বেগমের চোখের কোণে জমে থাকা অশ্রুবিন্দু ধীরে ধীরে গাল বেয়ে নেমে আসে। শীতল স্পর্শে কেঁপে ওঠে তাঁর হৃদয়। স্নেহমাখা হাত বাড়িয়ে মেয়ের গালে আলতো ছোঁয়া দেন তিনি—মায়ায় মোড়া সেই স্পর্শ যেন ভাষাহীন ভালোবাসার এক নিঃশব্দ আর্তি।

‘বড্ড আদরের মেয়ে আমার। তার চেয়ে বেশি আদরের ছিলো বাপের। আজ মানুষটা আমার পাশে থাকলে না সেদিন এতো বড় কান্ড হতো আর না মেয়ে মানসিক অত্যাচার ভোগ করতো। সেই ঘটনার জের ধরেই এতোকিছু। আমায় কিছু বলিসনি কেন মা?’

নাজমা বেগমকে দু’হাতে জড়িয়ে ধরে তনয়া। কেঁদেকুটে একাকার করে ফেলবেন বলেই তনয়া কিচ্ছুটি বলেনি।

চোখের পানি মুছে স্বাভাবিক হওয়ার প্রয়াস চালান নাজমা বেগম।

‘মেয়ের বাবা বেঁচে থাকলে হয়তো আপনাকে সরাসরি বলে দিতেন, ‘আমি মেয়েকে দেবো না।’ কিন্তু আমি মা। সহজেই এতোবড় সিদ্ধান্ত নিতে পারি না। অনেককিছুই ভাবতে হয় আমাকে। তবে আজ আমি সবকিছু আমার মেয়ের উপর ছেড়ে দিলাম। ও যা সিদ্ধান্ত নিবে আমি তাতেই সায় জানাবো।’

অপরাধবোধের ভারে খালেকুজ্জামানের কণ্ঠ যেন বোবা হয়ে আসে। শব্দ খুঁজে পান না তিনি। গলার স্বর গভীর এক অনুশোচনা। চোখ তুলে তাকানোর সাহস হয় না। দৃষ্টির সামনে এক অদৃশ্য দেয়াল তুলে দাঁড়ায় লজ্জা আর অপরাধবোধ।

‘আপনাদের কাছে ক্ষমা চাওয়ার মুখ আমার নেই। কিন্তু বেয়ান বিশ্বাস করুন মাহমুদের মায়ের মধ্যে অনেক পরিবর্তন এসেছে। মাহমুদের এমন ভেঙে পড়া দেখে নিজেও ভেঙে পড়েছে। ছেলে ঠিক মতো খায় না। কথা বলে না। তাই উপলব্ধি করতে পারছে অনেককিছুই। তাই সে নিজে আমায় নিজে পাঠিয়েছে তনয়াকে নিতে।’

‘আমাকে নেওয়ার জন্য আম্মা পাঠিয়েছে আপনাকে?’

“আমাকে নিতে আম্মা আপনাকে পাঠিয়েছেন?”

তনয়ার কণ্ঠে বিস্ময়ের সুর। যেন সে নিজের কানকেই বিশ্বাস করতে পারছে না।

‘হ্যাঁ মা, মাহমুদের মা পাঠিয়েছে আমায়। তাকে নিয়ে আসতে চেয়েছিলাম আমি। সে আসেনি। তাছাড়া সামনের সপ্তাহে মুনিরার বিয়ের ব্যাপারে পাকা কথা বলতে আসবেন ছেলে পক্ষ।’

‘তাই তো বলি এতো ঘটা করে আমাকে নিতে পাঠানোর কারণ কি। কাজের চাপের জন্যই,,,,

তনয়ার কন্ঠে তাচ্ছিল্য।

‘না, না এমন কিছুই না। তুমি ভুল বুঝছো।’

‘কোনটা ভুল আব্বা?’

‘আমি আরো আগেই আসতাম।’

‘তবে এলেন না কেন?’

খালেকুজ্জামানের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে তনয়া। উত্তরের আশায়। তিনি মাথা নুইয়ে ফেলেন।

‘কাজের চাপ এলেই সবাই আমাকে মনে করে? কিন্তু যখন রাগে বাড়ি ছেড়েছিলাম, তখন কেউ আটকায়নি।

আপনারা সবাই এক! এখন বলছেন, সংসারে এমন হয়, আর আপনার ছেলে বলে, আমায় ছাড়া দমবন্ধ লাগে! কিন্তু তখন কোথায় ছিলেন? যখন আম্মা আমাকে মানসিক নির্যাতন করছিল, কেউ তো কিছু বলেননি। যদি শক্ত গলায় আম্মাকে থামাতেন তবে তিনি তখনই থেমে। আসল দোষী তো আপনারা।’

অনর্গল বলে থামে তনয়া। পুনরায় দম নিল সে। খালেকুজ্জামানের উদ্দেশ্যে আবারও ছুড়ে প্রশ্নের তীর।

‘প্রয়োজন হলেই কেন বউদের কথা মনে পড়ে? আর কাজের সময়েই কেন শুনতে হয় — “সংসার তো তোমারই”?’

#চলবে