সন্ধ্যায় সন্ধি পর্ব-১৪

0
463

#সন্ধ্যায়_সন্ধি
#মম_সাহা

পর্বঃ১৪

তেজ চাঁদের মাথায় হাত বুলিয়ে কয়েকবার স্বাভাবিক করার চেষ্টা করেছে কিন্তু চাঁদের কোনো হেলদোল নেই।সে এক ধ্যানে অন্য দিকে তাকিয়ে আছে।তেজ বুঝতে পেরেছে চাঁদ রাহার মৃত্যুর জন্য নিজেকেই দ্বায়ী করছে।এবার তেজ বেশ রেগে ই বলল,

–“চাঁদ প্লিজ নিজেকে ব্লেম দেওয়া বন্ধ কর।তুই কিছুই করিস নি আমরা জানি।এমনেতেই পরিবারে শোকের ছায়া নেমে এসেছে এখন আবার তুই যদি এমন বোবা সেজে থাকিস তাহলে আমাদের প্রত্যেক টা মানুষের কেমন লাগবে বল?”

–“তেজ ভাইয়া আমি মেরেছি রাহা আপুকে আমি? আপনি বিশ্বাস করেন আমি যদি জানতাম রাহা আপুকে আমি এত কষ্ট দিয়ে ফেলেছি তাহলে আমি কখনোই এমন করতাম না। চাঁদ কাঁপা কাঁপা গলায় বলল।

তেজ ভ্রু কুঁচকে বলল,

–“এই ওয়েট ওয়েট কি বললি তুই? তুই জানলে রাহাকে কষ্ট দিতিস না, কি জানলে রে? রাহা আমাকে ভালোবাসে এতটা সেটা জানলে রাহাকে কষ্ট দিতিস না? তখন কি করতিস?রাহাকে আমার সাথে বিয়ে দিতিস নাকি? আনসার দে।

–“না না তেজ ভাইয়া আমি এমন বলতে চাই নি।”

–“থাম চাঁদ, তুই কেমন বলতে চেয়েছিস আমি ভালো করেই বুজেছি।আসলে ভুল আমারই তুই যে কখনো আমাকে ভালোবাসতে পারিস নি আজ বুঝলাম।না হয় এমন চিন্তা কখনোই মাথায় আনতে পারতিস না।”

এই বলে তেজ উঠে যেতে নিলে চাঁদ খপ করে তেজের হাতটা ধরে ফেলল আর ফুফিয়ে কেদেঁ উঠলো।কান্নার জন্য কথাও বলতে পারছে না।তেজও কান্না থামাচ্ছে না।মেয়েটা কাল থেকে এই অব্দি চুপ হয়ে থেকেছিলো।এখন কান্না করলে একটু হালকা হবে।অন্য দিকে চাঁদ কেঁদে অস্পষ্ট স্বরে বলছে,

–“আপনি যাবেন না তেজ ভাইয়া, আপনি যাবেন না। আমার ভয় লাগে তেজ ভাইয়া খুব ভয় লাগে।আমি রাহা আপুকে মিস করছি তেজ ভাইয়া। খুব বাজে ভাবে মিস করছি।আপনি বলেন আমি কখনো এমন পরোচনা দিতে পারি? আত্মহত্যার মতন বুদ্ধি আমি কখনো দিবো বলেন?তাহলে রাহা আপু মিথ্যে কেনো বলল?

–“চাঁদ শান্ত হ।আমি দেখছি আসল ঘটনা কি।রাহা এটা কেনো লিখে গেলো সেটাই বুজছি না।ওসব আমার উপর ছেড়ে দে।তুই কান্না থামিয়ে একটু খাবার খা।আমার একটু বাহিরে যেতে হবে।”

–“কোথায় যাবে তুমি?আর তুহা আপুর বিয়েটা কি হবে তেজ ভাইয়া? ”

–“বিয়েটা সপ্তাহখানেক পেছানো হয়েছে।”

চাঁদ আর কিছু জিজ্ঞেস করে নি।তেজও চাঁদের মাথায় হাত বুলিয়ে বাহিরে গেলো।ড্রয়িং রুমে সবাই বসে আছে চিন্তিত হয়ে। তেজ তাদের আশ্বাস দিলো।আর চাঁদের মাকে বলল চাঁদকে খাবার খাওয়াতে। তখন প্রহেলিকা বলে উঠলে,

–“আমি যাচ্ছি খাবার নিয়ে,আমি খাইয়ে আসি”।

তেজ বেশ শক্ত কন্ঠেই বলল,

–“না তোরা কেউ এখন যাবি না ওর রুমে।ওর রেষ্ট দরকার।খালামনি খাইয়ে ঘুম পাড়িয়ে দিবে।”

প্রহেলিকা থতমত খেয়ে যায়। আর একটা কথা বলে না সে। চাঁদের মা মেয়ের জন্য খাবার নিয়ে যায়। আর তেজও আদিবকে নিয়ে বের হয়ে যায় রহস্যের খোঁজে।

________________

“মিস্টার তেজস্ব আবরার আপনি কি জানেন আপনার ফুফাতো বোনের পোস্টমর্টেম রিপোর্ট বের হয়েছে?”–পুলিশ অফিসার কথাটা বলেই প্রশ্নাত্মক দৃষ্টিতে চাইল তেজের মুখ পানে।

তেজ মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ জানাল।এখন তেজ আর আদিব পুলিশ স্টেশনে বসে আছে। পুলিশ অফিসার আবারও বললেন,

–” জানেন কি আপনার বোন সুইসাইড করে নি খুন হয়েছে। আর খুব নিঁখুত ভাবে তাকে খুন করা হয়েছে”।

এবার আদিবের মাথায় জেনো আকাশ ভেঙ্গে পড়লো কিন্তু তেজ স্বাভাবিক। কারণ তেজ আগেই আন্দাজ করতে পেরেছিলো এমন কিছু।তেজ পুলিশ অফিসারকে প্রশ্ন করলো,

–“আচ্ছা কীভাবে খুন করা হয়েছিলো?”

–“শ্বাসরোধ করে খুন করা হয়। তারপর দড়িতে বেঁধে ঝুলিয়ে দেওয়া হয় ফ্যানের সাথে।”

–“আচ্ছা আমরা তাহলে এখন আসি”।

পুলিশ স্টেশন থেকে বের হয়ে গেল তেজ।আদিবও পিছে পিছে আসছে।আদিবের ধারনা মতে তেজ সবটুকু আন্দাজ করতে পেরেছে।তাই সে এত নিশ্চুপ। আদিব তেজ কে ডাক দেয়।এতক্ষণে তেজ ভাবনার জগৎ থেকে বের হয়।তখন আদিব জিজ্ঞেস করে,

–“কিরে কি ভাবছিস?কী হবে এবার?বাসায় জানাবি না? আর কে খুন করেছে বলে তোর মনে হয়?”

–“আমি বুঝতে পারছি না কে খুন করবে।বাহিরের মানুষ তো তেমন ছিলো না। যা ছিলো সব রিলেটিভ।আর মনে হয় না রিলেটিভ কেউ এমন করবে।করলে বাসার মানুষই করেছে কিন্তু বাসার কেউ এমন কেনো করবে? রাহা বদরাগী কিন্তু খারাপ না।” বেশ চিন্তিত স্বরেই বলল তেজ।

তারপর দুজনের মাঝে পিনপতন নীরবতা। হঠাৎ তেজের কিছু একটা মনে হতেই গাড়ি ব্রেক কষে।হঠাৎ ব্রেক করার কারণে আদিবও সামনের দিকে বেশ খানিকটা ঝুঁকে যায়।তেজের হঠাৎ এহেন কান্ডে আদিব তেজের দিকে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকিয়ে এর কারণ জানতে চাইলে তেজ একটা বাঁকা হাসি দিয়ে বলে,

–“আমরা খুব সহজেই বোধহয় খুনি খোঁজে পাবো?”
–“কীভাবে?” অবাক দৃষ্টিতে বলল আদিব।

–“দেখ যেহেতু রাহাকে কেউ খুন করেছে সেহেতু ওর সুইসাইড নোটা টা নকল ছিলো।আর যে খুন করেছে সে লিখেছে।তাই আমাদের আগে সুইসাইড নোটটা দেখতে হবে তারপর সব।”

আদিবের এবার মাথায় ধরলো বুদ্ধিটা।সত্যিই তো সুইসাইড নোট দেখলেই বোঝা যাবে কে করেছে এমন।তেজ দ্রুত ড্রাইভ করে বাড়ির দিকে রওনা দিচ্ছে।সুইসাইড নোটটা তেজের বাবার কাছে।আগে গিয়ে সেটাই আনতে হবে।

_______________

তেজের হাতে সুইসাইড নোট আর আদিবের হাতে একটা খাতা।সুইসাইড নোট আর খাতাটার লেখা হেন্ডরাইটিং একই রকম।তেজ নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছে না। তার এত কাছের একজন মানুষ এমন করেছে শুধু মাত্র চাঁদকে ফাসাঁনোর জন্য। সে কীভাবে জানাবে সবাইকে।

আদিবও বেশ অবাক হয়েছে।আদিবের ধরনার বাহিরে ছিলো এমন কিছু যে হতে পারে।এত কাছের মানুষের বিশ্বাসঘাতকতায় নিস্তব্ধ হয়ে যায় তেজ।তবে সে মনে মনে প্রতিজ্ঞা করেছে।রাহার লাশ দাফন করার আগে খুনিকে জেলে ঢুকাবে।একটু পর রাহার লাশ স্টেশন থেকে পাঠানো হবে।বিকালেই দাফন হবে।

তেজ সবাইকে ড্রয়িং রুমে ডেকে বসালো।সবাই বেশ আহত হয়েছে এটা শুনে যে রাহাকে খুন করা হয়েছে।তেজ সবার মাঝেই বলে উঠলো,

–“খুন করেছে আমাদের বাসার খুব কাছের মানুষ।”

সবাই এবার বেশ চমকালো।এটা শোনার জন্য প্রস্তুত ছিলো না সবাই। চাঁদ তো কান্নায় ভেঙ্গে পড়লো। তেজ চাঁদকে শক্ত করে এক হাতে জড়িয়ে নিয়ে সবার উদ্দেশ্যে বলল,

–“এবার যার নাম বলবো তার জন্য সবাই প্রস্তুত হও।কারণ এটা সামলে নিতে সময় লাগবে তোমাদের”

সবার কলিজাটা এবার বের হয়ে আসবে লাগছে।কে এমন আপন মানুষ যে পিঠ পিছে এমন ছুড়ি মারল। উপস্থিত সবার মাঝে একজন সবার আড়ালে নিজের ঘাম মুছছে।সে তো খুন করতে চায় নি।কিন্তু রাগে করে ফেলেছে।তেজ এর মাঝেই বলল,,
–“খুন করেছে আমাদের,,,,,,,

চলবে,,