সন্ধ্যে নামার আগে পর্ব-১৭+১৮

0
312

#সন্ধ্যে_নামার_আগে
#লেখিকা_সুমাইয়া_জাহান
#পর্ব_১৭

(৩৭)

আজ রুমাইসার গায়ে হলুদ। পুরো বাড়ি জুড়ে কত আলোর রোশনাই। আত্নীয় স্বজনদের কোলাহল, হইহুল্লোড়ে মেতে উঠেছে সারা বাড়ি।একটু পর রুমাইসার হলুদের আয়োজন শুরু হবে, তাই রুমাইসার দুই ফুফাতো বোন এসেছে তাকে সাজাতে। সবুজ পাড় হলুদ জামদানী শাড়ি তার সাতগে গা ভর্তি কাঁচা ফুলের গয়না অপূর্ব দেখতে লাগছে তাকে। রিমা দরজার সামনে দাঁড়িয়ে রুমাইসাকে সাজাতে দেখছে। মেয়েটার মুখে হাসি নেই, চোখ মুখ শুকিয়ে এতটুকু হয়ে আছে। রিমাকে দরজায় দাঁড়িয়ে থাকতে মণিকা বলল,

“কিরে রিমা ওইখানে খাড়ায়া আছোস ক্যান, এইখানে আয়?”

রিমা কোনো উত্তর না দিয়ে নিশ্চুপে ঘরে এসে রুমাইসার পেছনে দাঁড়াল। আয়নায় বোনের প্রতিবিম্বের দিকে তাকি প্রশস্ত শ্বাস ছাড়লো সে। এমন একটা দিনে হয় তো বোন হিসেবে তারই বেশি খুশি হওয়ার কথা ছিলো কিন্তু সে কেনো খুশি হতে পারছে না?

আয়নায় রিমার মলিন মুখ দেখে স্মিত হাসলো রুমাইসা। চোখের ইশারায় জানতে চাইলো কি হয়েছে কিন্তু রিমা কোনো প্রতিক্রিয়া করলো না মৌন হয়ে তাকিয়ে দেখতে লাগলো নিজের আপাকে। পৃথিবীতে বাবা আর সমীরের পর যদি কাউকে সে বেশি ভালোবেসে থাকে তবে সেটা রুমাইসাকেই। ছোটবেলা থেকেই তার রুমাইসার প্রতি একটা আলাদা টান ছিলো। মায়ের অত্যাচার আর অশ্রাব্য গালি সহ্য করে রুমাইসা যখন বাড়ির সকল কাজ শেষ করে পুকুর ঘাটে গিয়ে নিভৃতে চোখের জল ফেলতো, তখন মায়ের চোখ ফাঁকি দিয়ে চুপিচুপি বোনের কাছে গিয়ে ক্রোড় ঘেঁষে বসতো রিমা। ছোট ছোট দুই হাত দিয়ে বোনের চোখের জল মুছে দিতো। ছোট্ট রিমা চেষ্টা করতো কি করে আপাকে খুশি করা যায়, কি করলে তার আপা আবার হাসবে, আদর করে তার গালে চুমু খাবে।

“এই রিমা তুই এত কি ভাবতাছোস? যা তাড়াতাড়ি রেডি হইয়া নে একটু পরই তো হলুদ শুরু হইবো।”

“আপার লগে আমার কথা আছে।”

“এহন আপার লগে আবার কিসে কথা কইবি রিমা। তার আগে দেখতো কেমন দেখতে লাগে আপারে?”

“কইলাম তো আমার আপার লগে কথা আছে।” কিছুটা উচ্চবাক্যে কথাটা বললো রিমা।

অনামিকা, মণিকা দুজনেই অবাক হয়ে রিমার মুখের দিকে চেয়ে রইলো। তারপর তারা দুজনে দুজনের মুখ চাওয়াচাওয়ি করে শেষে ঘর থেকে বেড়িয়ে গেলো।

অনামিকা, মণিকা ঘর থেকে বেড়িয়ে গেলে রুমাইসা রিমার সামনাসামনি এসে দাঁড়ায়। রিমা তখন নতমস্তকে মাটিতে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে তাকিয়ে আছে। রুমাইসা ক্ষণকাল রিমার দিকে তাকিয়ে থেকে পরে বলল,

“কি কথা বলবি বল ওরা চলে গেছে।”

এবার রিমা মুখ তুলে সরাসরি রুমাইসার মুখের দিকে তাকালো। তারপর কণ্ঠে কিছুটা কাঠিন্যতা এনে বলল,

“তুমি কি সত্যিই বিয়েটা করবা আপা?”

“এই কথার জন্য এত রাগ?”

“আমি মজা করতেছি না আপা, তোমারে যেইডা জিগাই তার উত্তর দাও।”

“আমার উত্তরে আর কি হবে রিমা। বাবা যা চান আমি তাই করতে রাজী।”

“কিন্তু আপা তুমি ক্যান আব্বারে সব কথা কইলা না? শেহওয়ার ভাইরে বিয়া করলে তুমি কোনো দিন সুখী হইবা না, তোমার সব স্বপ্ন শেষ হইয়া যাইবো।”

“স্বপ্নই যার মরিচিকা তা কি আর ধরা যায় বল? কত জন কত স্বপ্নই তো রোজ দেখে কিন্তু তার আর কয়টাই পূর্ণ হয়।”

“তাই বলে তুমি ওই লোকটারে বিয়া করবা যেই লোকটা,,,।”

“প্রতিশ্রুতি সবাই দিতে পারে রিমা কিন্তু তা রক্ষা করতে জানে কয় জন। ধরে নে আমার সাথেও তাই হয়েছে। স্বপ্ন দেখার আগেই যার ঘুম ভেঙে যায় সে কি করে আশা করে পুরো স্বপ্ন দেখার?”
বলতে বলতে রুমাইসার বুক ছিঁড়ে একটা প্রশস্ত নিশ্বাস বেড়িয়ে এলো। রিমা এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখছে রুমাইসাকে। মেয়েটার চোখ ভিজে উঠেছে, ভেতরটাও নিশ্চই ধুমড়ে মুচড়ে যাচ্ছে। রিমা অনুভব করতে পারলো রুমাইসার কষ্ট কিন্তু তারই বা কি করার আছে। সে আর কতটুকুই বা করতে পারে।

“আপা একটা কথা কমু?”

“হু।”

“তুমি জানো স্মরণ ভাই গতকাল রাইতে নিশ্চিন্দপুর আইসে।”

“হু।”

“কিন্তু তিনি একবারো আমাদের বাড়িতে আইলো না ক্যান? আব্বার লগে তো তার ভালা সম্পর্ক তাও ক্যান আইলো না।”

“এসব কথা এখন কেনো বলছিস, অনেক দেরি হয়ে গেছে দেখ, তাড়াতাড়ি গিয়ে তৈরি হয়ে নে যা।”
বলে রুমাইসা আয়নায় দিকে ফিরে নিজেকে দেখতে লাগলো। রিমা আরো কিছুটা সময় সেখানে দাঁড়িয়ে কিছু ভাবলো তারপর রুমাইসার কাছে এসে বলল,

“আপা উনি তো তোমারে কতবারই সাহায্য করছে, এইবার যদি করতো তাহলে নিশ্চই বিয়া টা আটকানো যাইতো।”

রিমার মুখের কথা কর্ণপাত হতেই রুমাইসার বুকের ভেতরটা ধক করে উঠলো। বুকের বা পাশে চিনচিন ব্যাথাটা এবার তীব্রভাবে যন্ত্রণা দিতে শুরু করলো। স্মরণ নাম টা অজান্তেই তার মনে অনেকখানি স্থান দখল করে নিয়েছে।

কারণে অকারণে বিনাপ্রতিশ্রুতিতে স্মরণ আড়ালে থেকে রুমাইসার অনেক উপকার করেছে আর তার সবটাই রুমাইসার অজানা। তাই তো স্মরণে কড়া ব্যাক্তিত্বের কাছে ঘেঁষার সাহস কখনো হয় নি রুমাইসার।

(৩৮)

পুকুরঘাটে নির্লিপ্ত ভাবে বসে আছে স্মরণ। তার একটু অদূরে দাঁড়িয়ে সিগেরেটে আগুন ধরালো রমিজ।

“ডাক্তার সাহাব হঠাৎ কি মনে কইরা ক্যান নিশ্চিন্দপুর আইলেন ওইডা তো কইলেন না?”

“সেটা আপনার না জানলেও চলবে মি রমিজ সাহেব।”

“আরে, ডাক্তার সাহাব রাগ করেন ক্যান? আমি কিন্তু কথাডা ওই ভাবে কই নাই।”

“চেয়ারম্যান সাহাব কইলো উনার কি এক দরকারে আপনারে এখানে ডাইকা আনছেন।”

“সব যখন জানেন তবে এত প্রশ্ন কেনো?”

এবার রমিজ কিছুটা লজ্জা পেলো। মাঝে মাঝে সে আগ বাড়িয়ে একটু বেশি কথা বলে সেটার প্রমাণ সে আজ নিজেই পেলো। স্মরণ কিছু সময় পানিতে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বসে রইলো। আকাশে আজ ভরা পূর্ণিমারচাঁদ। তবুও এতটুকু আলো নেই চারপাশে। আকাশ জুড়ে মেঘের আনাগোনা, মাঝে মাঝে তারা চাঁদকে আড়াল করে নিচ্ছে। চেয়ারম্যান সাহেবের পদ্ম পুকুরের শান্ত জলে চাঁদের প্রতিবিম্ব পড়েছে আর সে দিকে তাকিয়ে স্মরণ রমিজকে বলল,

“মাঝে মাঝে আকাশের চাঁদও যে ধরনীর বুকে এসে ধরা দেয়, তা জানেন তো রমিজ সাহেব?”

রমিজ বোকা হাসি হেসে তাকিয়ে রইলো স্মরণের দিকে। স্মরণ ঘাঢ় ফিরিয়ে একবার রমিজকে দেখলো, রমিজের হাতের জ্বলন্ত সিগেরেটের দোয়ার দিকে তাকিয়ে স্মরণ স্মিত হাসলো তারপর বলল,

“আরেকটা সিগেরেট হবে?”

স্মরণের কথায় অপ্রস্তুত হয়ে পড়লো রমিজ। দ্রুত নিজের হাতের সিগেরেট মাটিতে ফেলে পা দিয়ে পিষে নিলো, তারপর জিভে কামড় দিয়ে লজ্জিত ভঙ্গিতে বলল,

“এই ভুল আর হইবো না ডাক্তার সাহাব। আপনের সামনে আর খামু না কসম কইরা কইতাছি।”

স্মরণ এবার রমিজকে অবাক করে দিয়ে বলল,

“আমায় একটা সিগেরেট দাও দেখি।”

“আপনে সিগেরেট খাইবেন?”

“কেনো ডাক্তার হয়েছি বলে আমার সিগেরেট খাওয়া বারণ?”

“কিন্তু আপনে তো,,,।”

“মাঝে মাঝে দুঃখ হাল্কা করতে শুনেছি লোকে সিগেরেট খায়। তাতে আদৌ কোনো উপকার আছে বলে বলতে পারেন?”

“তা আমি কইবার পারি না, তবে সিগেরেট হইলো নেশার মতোন একবার ধরলে আর ছাড়ন যায় না।”
বলে লুঙ্গীর কোছড় থেকে বের করে একটা সিগেরেট স্মরণের দিকে এগিয়ে দিলো।

সিগেরেট মুখে নিয়ে তাতে আগুন ধরিয়ে টান দিতে দিতে আকাশের দিকে মুখ করে নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে আবারো বলল,

“মাঝে মাঝে আকাশের চাঁদও যে ধরনীর বুকে এসে ধরা দেয়, তা জানেন তো রমিজ সাহেব?”
একি প্রশ্ন স্মরণকে আবারল করতে দেখে রমিজ এবার মুখে হাসি ফুটিয়ে বলল,

“আপনি আবার কবি হইলেন নাকি ডাক্তার সাহাব?”

সিগেরেটে দ্বিতীয় টান দিয়ে স্মরণ জবাব দিলো,

“উহু। তবে কথাটা নেহাত মিথ্যে কিছু নয়। এই যে দেখো আকাশে চাঁদ পুকুরের জলে কেমন লুটোপুটি খাচ্ছে। তার থেকে আমাদের দূরত্ব কিন্তু খুব একটা বেশি নয়, তবুও তাকে ধরার সাধ্য আমাদের নেই। শুধু দূর থেকে তার সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়। মানুষের জীবনও কিছুটা আকাশের চাঁদের ন্যায়। উপরে তাকালে সে অনেক খানি দূরে আর যখন জলভাগে তাকাবে তখন দেখবে সে অতি নিকটে তবুও তাকে ধরার সাধ্য কেউর নেই। ঠিক এমনি কারো কারো জীবনে চাঁদের ন্যায় একজন বিশেষ মানুষ থাকে, যাকে আমরা মন থেকে চাই ভালোবাসি কিন্তু সে কখনো আমাদের অতি নিকটে অবস্থান করে কখনো বা অতিদূর, চাইলেও তাকে ধরা যায় না, শুধু দূর থেকে তাকে অনুভব করা যায়।”

স্মরণের এমন কঠিন কথার অর্থ রমিজ ধরতে পারলো না। তবে সে বুঝতে পেরেছে স্মরণ কিছু একটা নিয়ে কষ্ঠ পাচ্ছে।

বেশ খানিকটা সময় দুজন নিশ্চুপে কাটিয়ে দিলো।
রাতের গভীরতা ক্রমশ বেড়ে চলেছে। স্মরণ তখনো একিভাবে বসে রইলো। রমিজ হাই তুলে ইতিউতি তাকিয়ে বলল,

“ডাক্তার সাহাব মেলা রাইত হইছে ঘরে যাইবেন না?”

“উহু আরেকটু বসবো। আপনি গেলে যেতে পারেন।”

রমিজ আর কিছু বলল না, আরো কিছুটা সময় একিভাবে কাটিয়ে দিলো। তারপর কি যেনো মনে করে বলল,

” আইজ করিম চাচার মাইয়া রুমাইসার গায়ে হলুদ। ইশশ মাইয়াটা কতই না চেষ্টা করলো বিয়াখান না করবার কিন্তু কিছুই হইলো না। খুব খারাপই লাগে মাইয়াডার কথা ভাইবা। মা মরা মাইয়াটা সারা জীবন সৎ মায়ের লাথি ঝাঁটা খাইয়া বড় হইছে। আর এখন মেট্রিক পরীক্ষার আগেই বিয়া দিয়া দিতাছে। হুনছি মামাতো ভাইর লগেই নাকি বিয়া হইতাছে।

রুমাইসার কথা মনে হতে স্মরণের ভেতটা কেমন হুহু করে উঠলো। মনে পড়ে গেলো মেডিকেল ক্যাম্প হতে ছেড়ে যাবার দিন সন্ধ্যে বেলার কথা। ভর সন্ধ্যেবেলায় বাড়ির সকলের চোখ ফাঁকি দিয়ে বিধ্বস্ত রুমাইসা শেষ আশা নিয়ে তিন কোশ রাস্তা পাড়ি দিয়ে তার কাছে ছুটে এসেছিলো, কিন্তু সেদিন তাকে সে ফিরিয়ে দিয়েছিলো কিন্তু কেনো দিয়েছিলো? এই কথার উত্তর শুধু তার অবচেতন মনই জানে।

চলবে,,,।

#সন্ধ্যে_নামার_আগে
#লেখিকা_সুমাইয়া_জাহান
#পর্ব_১৮

(৩৯)

হলুদের সাজে রিমার হাত ধরে বাড়ির পেছনের দরজায় এসে দাঁড়াল রুমাইসা। কিছুটা বিস্ময় নিয়ে সে তাকিয়ে আছে রিমার দিকে। পেছনে পেছনে সমীরও কখন এসে তাদের পাশে দাঁড়িয়েছে রুমাইসা খেয়াল করে নি। সমীরকে দেখে রিমা গলা কিছুটা নিচু করে বলল,

“আসতে কেউ দেখে নাই তো তোরে।”

“না আপা কেউ দেখে নাই।”

“শেহ্ওয়ার ভাইরে দেখছিলি?”

“হু, আব্বার লগে কথা কয়।”

রুমাইসা হাঁ হয়ে তাকিয়ে আছে দুই ভাই বোনের দিকে। তাদের কথোপকথনের কিছুই সে বুঝতে পারছে না।

“তোরা কি করছিস আমাকে একটু বলবি, এত রাতে বাড়ির পেছনে টেনে আনলি কেনো, আর কেউ যদি দেখে ফেলতো কি হতো?”

“আপা তোমার জন্য রমিজ ভাই শ্মশানঘাটে অপেক্ষা করতাছে।”

রিমার কথা শুনে রুমাইসা আশ্চর্যান্বিত হয়ে রইলো। রিমা ঠিক কি করতে চাইছে সেটা সে বুঝতে না পেরে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো। রিমা কিছু বলার আগে কয়েক সেকেন্ড সময় নিলো তারপর বলল,

” রমিজ ভাই শ্মশানঘাটে তোমার অপেক্ষায় আছে। তার লগে গেলেই বাকিটা বুঝতে পারবা। সমীর তুই আপার লগে যাইতে পারবি তো? ”

“হু, আপা আমি ডরাই না।”

“কিন্তু রিমা আমি কিছু বুঝতে পারছি না, তাছাড়া এত রাতে আমি রমিজ ভাইয়ের সাথে শ্মশানঘাটে দেখা করতেই বা যাবো কেনো। বাড়ি ভর্তি আত্নীয় স্বজন কেউ দেখে নিলে কি হবে?”

“কেউ কিচ্ছু দেখবো না আপা আর জানতেও পারবে না।”

“চল ঘরে যাই।”

“আপা!”

“তো কি করবো বল? উনি কখনোই আমাকে সাহায্য করবেন না, আর আজ আমাকে এই সাজে দেখার পর তো প্রশ্নই উঠে না। আমি আর উনার কাছে যেতে পারবো না রিমা।”

“তুমি জানো তাহলে?”

“রমিজ ভাইয়ের কথা বলাতে প্রথমে বুঝি নি কিন্তু এখন বুঝতে পারছি।”

“তুমি একটা বার চেষ্টা করবা না?”

“চল ঘরে যাই অনেক রাত হয়েছে।”

বলেই রুমাইসা চলে যাবার জন্য অগ্রসর হলো কিন্তু কিছু একটা ভেবে আবার থমকে দাঁড়িয়ে পড়লো। কয়েক পা পিছিয়ে এসে রুমাইসার চোখে চোখ রেখে করুণ চাহনিতে বলল,

“উনি কি আমার শেষ অনুরোধটা রাখবেন নাকি আবারো ফিরিয়ে দিবেন?”

রিমা তৎক্ষণাৎ কিছু বলতে পারলো না। কারণ সে নিজেও স্মরণকে খুব একটা বেশি চেনে না। স্মরণের মনে রুমাইসার প্রতি কোনো অনুভূতি আছে কিনা তাও সে জানে না, তবে এতটুকুই সে জানে তার আপার এই বিপদে কেউ যদি সাহায্য করতে পারে সে হলো স্মরণ।

রুমাইসা কয়েক মুহূর্ত মৌন হয়ে রইলো। তারপর সমীর আর রিমাকে পেছনে ফেলে দ্রুত সামনে পা বাড়ালো আর কয়েক মুহূর্তের ব্যবধানে অন্ধকারে মিলিয়ে গেলো।

(৪০)

নিশুতি রাতের আধার ঠেলে গ্রামের সুরু পথ ধরে রমিজের পিছুপিছু হাঁটছে রুমাইসা। শুনশান নীরবতা আর কুয়াশার ঘন চাদরে ঢেকে আছে সমস্ত প্রকৃতি। দূরে কোথাও থেকে শেয়ালের ডাক ভেসে আসছে, গভীর রাতে সে ডাক কারো করুণ আর্তনাদের মতো শুনা গেলো। রুমাইসার মনে হঠাৎ ই অজানা কোনো ভয়ের সঞ্চার হলো। বুকের ভেতর ডিব ডিব করতে লাগলো। নিশুতি রাতের আধার পেড়িয়ে গ্রামের নির্জন কাঁচা রাস্তা ধরে একজন মাঝ বয়সী লোকের পেছন পেছন হেঁটে যাচ্ছে ষোল বছর বয়সী এক ষোড়শী, যার কিনা কয়েক ঘন্টা আগে গায়ে হলুদ সম্পন্ন হয়েছে। পড়নে হলুদ শাড়ি, গায়ে কাঁচা ফুলের গহনা, হাত ভর্তি মেহেদি, কপাল আর গালের দুপাশ জুড়ে হলুদের ছোঁয়া নিয়ে কিসের আশায় সে বাড়ি থেকে বেড়িয়ে পথে নেমে এসেছে, এমন নিকষ কালো আধারি রাতে কার মনে এতটুকু ঠাঁই পাবার আশায় সে হেঁটে পাড়ি দিচ্ছে তিন ক্রোশ রাস্তা? মুহূর্তে রুমাইসার বুক ছিঁড়ে দীর্ঘশ্বাস বেড়িয়ে এলো। সে জানে না যে অজানা গন্তব্যের পথে সে ছুটে চলছে সে পথ কতটুকু সুগম্য হবে।

হাঁটতে হাঁটতে অনেকটা পথ পেছনে পেলে এসেছে তারা। রমিজ আগে আগে রুমাইসা পেছনে। আকাশের বুকে একপালি চাঁদ ডুবি ডুবি করছে। কুয়াশার দাপটে চাঁদের আলো ধীরেধীরে ক্ষীণ হয়ে আসছে। অনেকটা পথ হাঁটার কারণে রুমাইসা হাঁফিয়ে উঠেছে। পা আর সামনে এগুতে চাইছে না। রমিজ একটু পর পর রুমাইসাকে জিজ্ঞাস করে বলল,

“বইন তোমার কি হাঁটতে কষ্ট হইতাছে?”

“না রমিজ ভাই। আপনি সামনে চলেন আর কত টুকু পথ বাকি?”

“এই তো বইন আর বেশি দূর না, প্রায় আইসা পড়ছি।”

“ওহ, তবে চলেন।”

রমিজ অতিদ্রুত দ্রুত হাঁটতে পারে কিন্তু রুমাইসার চলা ধীর দেখে সেও নিজের গতি কমিয়ে আনে।

“এমন রাত বিরাইতে বিয়ার কনে ঘর থেকে বাহিরানো ভালা না, খারাপ জিনিসের নজর লাগে।”

রমিজের কথায় রুমাইসা কোনো উত্তর করলো না। তার মনে তখন অন্য ভাবনা ঘুরপাক খাচ্ছে। কি করে সে এই সাজে স্মরণের সামনে গিয়ে দাঁড়াবে, আর কি বা বলবে তাকে, অন্যের বাগদত্তাকে মাঝরাতে নিজের ঘরে দেখলে কি প্রতিক্রিয়া করবে স্মরণ? মনে করতেই লজ্জায় মরে যেতে ইচ্ছে করলো তার। কেনোই বা রিমার কথা শুনতে গেলো সে, আর কেনোই বা মাঝরাতে বেড়িয়ে এলো ঘর ছেড়ে। যদি কেউ তাকে এই অবস্থায় দেখে নেয় কি হবে, কল্কের দাগ নিয়ে কি সে বাবার মুখোমুখি দাঁড়াতে পারবে? কি জবাব দেবে সে বাবাকে। এসব কথা ভাবতে ভাবতে চলা থামিয়ে দিলো রুমাইসা। তার পা আর সামনে এগুতে চাইছে না। নিজেকে বড্ড ক্লান্ত লাগছে। মনে এতটুকু জোর পাচ্ছে না সামনে এগুনোর মতো। আচ্ছা কি বলবে সে স্মরণকে, কেনো সে এত রাতে তার কাছে ছুটে এসেছে, শুধু সাহায্য চাইতে নাকি অন্য কিছু? এই এত প্রশ্নের ভিড়ে যেনো রুমাইসা নিজেকে হারিয়ে ফেলছে। চলার মত এতটুকু শক্তি তার অবশিষ্ট নেই। রুমাইসাকে থেমে যেতে দেখে রমিজও জায়গায় দাঁড়িয়ে পড়লো। তারপর জিজ্ঞাস করলো,

” কি হইলো বইন থামলা ক্যান? এইতো আইসা পড়ছি চেয়ারম্যান বাড়ি,,,ওই যে দেখা যায়।”

রুমাইসা সামনে তাকিয়ে দেখলো চেয়ারম্যান বাড়ির কাছারিঘরের দোতালায় হারিকেন আলো জ্বলছে। হয় তো এখনো কেউ জেগে বসে আছে। যত সে বাড়ির দিকে অগ্রসর হচ্ছে ততোই যেনো হৃদপিন্ড দ্রুত উঠানামা করছে। হাত পা শীতল থেকে আরো শীতল হয়ে উঠছে। রুমাইসা দুরুদুরু বুকে যেনো কেউ হাতুড়ি দিয়ে সজোরে আঘাত করছে এমনি অনুভূতি তাকে ঘিরে ধরেছে।

চেয়ারম্যান বাড়িতে পা রাখার সাথে সাথে ছাতিম ফুলের তীব্র গন্ধ এসে রুমাইসার নাকে লাগলো। রাতে নিস্তব্ধতা আর ছাতিমের গন্ধ দুইয়ের মাঝে যেনো এক নিবিড় মিতালী। রুমাইসা গুটিগুটি কাছারিঘরের সামনে এসে দাঁড়িয়েছে। রমিজ তাকে দাঁড় করিয়ে কোথাও একটা গেলো আর মিনিট দুইয়েক এর মাঝে ফিরে এসে গলা খাদে নামিয়ে এনে বলল,

“মেলা রাইত হইছে, এখন আর কেউ জাগন নাই। হজ্ঞলে গুমে কাঁদা। তয় ডাক্তার সাহাব মনে অয় ঘুমায় নাই হারিকেন জ্বলতে দেখা যায়। ওই যে পূর্ব দিকে সিঁড়ি দেখা যাই ওইডা ধইরা উপরে চইলা যাও বইন। আমি এখানেই খাড়ায়া আছি, ভয় পাইও না কিছুর দরকার হলে আমারে ডাক দিও।”

রুমাইসা একটানা রমিজের কথাগুলো মন দিয়ে শ্রাবণ করলো। একবার পূর্বদিকে তাকিয়ে সিঁড়ির অবস্থান বুঝে নিলো তারপর আর কোনো কথা না বলে দ্রুত সিঁড়ির দিকে অগ্রসর হলো। রুমাইসা চলে গেলে রমিজ কাছারিঘরের বারান্দায় চাদর বিছিয়ে বসে পড়ে। কনকনে ঠান্ডায় তার দাঁত কিড়মিড় করছে।

“আহ, কি শীতটাই না পড়তাছে। কাঁপুনি ধইরা গেলো গো।”

বলে রমিজ একটা সিগেরেট ধরালো। আর কাছারিঘরের বারান্দায় গা এলিয়ে শুয়ে পড়লো।

(৪১)

দরজায় করাঘাতের শব্দ শুনে বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়াল স্মরণ। ঘড়িতে রাত কত হয়েছে তা দেখতে টেবিলের দিকে এগিয়ে গিয়ে হাত ঘড়ির দিকে তাঁকাতেই দ্বিতীয় বার দরজায় করাঘাত হলো। ঘড়িতে রাত দুইটা পনেরো মিনিট । গ্রামে রাত দুইটা মানেই মধ্যরাত। স্মরণের বুঝতে পারলো না এত রাতে তার কাছে কে আসতে পারে। এমন শীতের রাতে লেপের উম ছেড়ে কোন নাছোড়বান্দাই বা এসেছে ভাবতে ভাবতে দরজা খুলে দিলো। অন্ধকারে দরজার বাহিরে কে দাঁড়িয়ে আছে ঠিক ঠাহর করতে পারলো না স্মারণ তাই সে কিছুটা গলা ছেড়ে বলল,

“কে? ”

রুমাইসা নিশ্চুপে দাঁড়িয়ে রইলো টুঁশব্দটি করলো না। স্মরণ কয়েক সেকেন্ড উত্তরের আশা করে শেষে নিরাশ হয়ে ঘরে ফিরে এলো। হারিকেনের আলো মৃদু বাড়িয়ে দরজার কাছে এগিয়ে এসে স্মরণ যা দেখলো তার জন্য সে মোটেই প্রস্তুত ছিলো না। হলুদের সাজে রুমাইসা তার ঘরের দরজায় দাঁড়িয়ে আছে। স্মরণ কয়েক মুহূর্তের জন্য নিজেকে স্বপ্নে আবিষ্কার করলেও পরবর্তীতে বুঝতে পারলো এই তার স্বপ্ন নয় সত্যি। রুমাইসা হলুদের সাজে মাঝরাতে তার ঘরের দোরগোড়ায় এসে দাঁড়িয়েছে।

রুমাইসাকে এই অবস্থায় দেখে স্মরণ শুধু অবাকই হয় নি, বিস্ময়ে তার চোখের পাতাজোড়া পলক ফেলতেই ভুলে গেছে।

“মিস রুমাইসা আপনি এত রাতে এভাবে এখানে কি করে?”

স্মরণ রুমাইসা আশেপাশে তাকিয়ে আবারো বিস্ময়ের সাথে জিজ্ঞাস করলো,

“আপনার সাথে কেউ আসে নি?”

রুমাইসা স্মরণের কোনো কথার জবাব দিতে পারলো না। এই মুহূর্তে স্মরণের কোনো কথাই তার কান অবধি পৌঁছাচ্ছে না। নতমস্তকে দাঁড়িয়ে আছে সে। ঠান্ডায় তার হাত পা বরপের ন্যায় শীতল হয়ে উঠেছে, ঠোঁট দুটো তিরতির করে কাঁপছে। স্মরণ লক্ষ্য করলো ঠান্ডায় রুমাইসার গা কাঁপুনি দিয়ে উঠছে তাই সে আর বেশি কিছু প্রশ্ন করলো না, দরজা থেকে সরে গিয়ে শীতল কন্ঠে রুমাইসাকে ঘরে আসতে বলল।

রুমাইসা ঘরে ডুকলে স্মরণ দরজা লাগিয়ে রুমাইসার সামনাসামনি এসে বাহুতে হাত গুঁজে দাঁড়াল। নিজের মাঝে কাঠিন্যতা ধারণ করে বলল,

“মিস রুমাইসা আমি আপনাকে কিছু জিজ্ঞাস করছি তার উত্তর দিন। আপনি এতরাতে এখানে কি করে এলেন?”

রুমাইসা তখনো কোনো প্রতিক্রিয়া করলো না। আগের মতোই নিশ্চুপে নতজানু হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। স্মরণ ক্ষণকাল রুমাইসার দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করে থাকলো তারপর আবার বলল,

“দেখুন আপনি এসব পাগলামি কেনো করছেন আমি জানি না, আপনার সাথে আমার এতটাও গভীর সম্পর্ক কখনো গড়ে উঠেনি যার ভিত্তিতে আপনি বিয়ের আগের দিন রাতে আমার কাছে ছুটে এসেছেন।”

“আমি আপনাকে আগেও বলেছি আর এখনো বলছি শুধু শুধু আমার কাছে সাহায্য চাইতে এসে লাভ হবে না, আপনি অন্যের বাগদত্তা আমি পারি না আপনাকে,,,।”

রুমাইসাকে তখনো একিভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে চুপ হয়ে গেলো স্মরণ। মেয়েটার চেহারায় ক্লান্তির ছাপ। চোখ মুখ শুখিয়ে গেছে। স্মরণ লক্ষ্য করলো এমন প্রচন্ড শীতে রুমাইসা শুধু একটা শাড়ি পড়ে আছে। গায়ে গরম কোনো কাপড় নেই যেটা তাকে ঠান্ডার হাত থেকে রক্ষা করবে। স্মরণ শীতল দৃষ্টিতে রুমাইসার পায়ের দিকে তাকিয়ে রইলো। আজও মেয়েটা খালি পায়ে ঘর থেকে বেড়িয়ে এসেছে।

“আপনি কি ঠিক করেছেন আমার কথার জবাব করবেন না।”

রুমাইসা এবার ভয়ে ভয়ে স্মরণের চোখের দিকে তাকালো। স্মরণে চোখের দিকে তাকানোর মতো সাহস তার কোনো দিনো ছিলো না, আর আজও নেই। তাই সে দ্রুত আবার চোখ সরিয়ে নিলো। স্মরণ দেখলো রুমাইসার চোখজোড়া ছলছল করছে। যেনো এক্ষুনি কেঁদে ফেলবে। শ্রাবণের ভড়া নদীর জলের মতো চোখদুটিতে অশ্রু টলমল করছে। স্মরণ প্রশস্ত শ্বাস ছেড়ে আলমারি কাছে গেলো, সেখান থেকে একটা চাদর বের করে এনে রুমাইসার দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল,

“চাদর টা গায়ে জড়িয়ে নিন। আর হ্যাঁ এভাবে এত রাতে বেড়িয়ে আসাটা আপনার ঠিক হয় নি। কেউ দেখলে কি হবে বুঝিতে পারছেন?”

“আমি বিয়ে টা করতে চাই না।”

“কিন্তু তাতে আমি কি করতে পারি বলুন?”

“আপনার কিছুই করার নেই?”
কাতর স্বরে বলল রুমাইসা।

“মি শেহ্ওয়ার আপনাকে সুখে রাখবে। তাছাড়া আপনার বাবা নিশ্চই আপনার ভালো জেনেই তার সাথে বিয়ে দিচ্ছেন আপনার দরকার তার পছন্দকে সম্মান করা।”

“বাবা সব কিছু জানেন না, যদি জানতেন তবে কখনো আমাকে উনার হাতে তুলে দিতে চাইতেন না।”

“সেটা একান্ত আপনাদের পারিবারিক ব্যাপার। ”

“আপনি আজও আমায় ফিরিয়ে দেবেন বলে ভেবে রেখেছেন?”

“অন্যের বাগদত্তাকে বেঁধে রাখি কি উপায়ে?”

“আপনির মনে কি এতটুকু দয়া মায়া নেই। একটা মেয়ে হলুদের রাতে এইভাবে আপনার কাছে ছুটে এসেছে।”

“আমি তো তাকে ছুটে আসতে বলি নি।”

“তবে এখানে কেনো এসেছেন? আর কেনোই বা লুকিয়ে লুকিয়ে এতদিন আমাকে সাহায্য করেছেন।”

“সেটা নিছক আপনার মনের কল্পনা যে আমিই আপনাকে সাহায্য করেছি।”

“তবে নিশ্চিন্দপুর ফিরে এলেন কেনো? ”

“সে কৈফত নিশ্চই আমি আপনাকে দেবো না।”

“আপনি এত নিষ্ঠুর কেনো?”

“দয়ালু বা ছিলাম কবে।”
গম্ভীরস্বরে বলল স্মরণ। স্মরণের এমন ব্যাবহারে রুমাইসার ভেতরটা গুঁড়িয়ে গেলো। একটা মানুষ এতটা কঠিন হতে পারে তার জানা ছিলো না। যন্ত্রণায় বুকের ভেতরটা কেমন হু হু করে উঠলো রুমাইসার। কান্না গুলো দলা পাকিয়ে বেড়িয়ে আসতে চায়। কিন্তু না সে কাঁদবে না। নিজেকে শক্ত রেখে স্মরণ চোখে দৃষ্টি রেখে জিজ্ঞাস করলো,

“ভালোবাসেন আমায়?”

স্মরণ নিজের মাঝে কঠিনতা ভাব এনে বলল,

“অনর্থক কথা না বলে চলুন আপনাকে বাড়ি পৌছে দেই।”

“আমি ফিরে যাবার জন্য আসি নি।”

“মিস রুমাইসা এবার কিন্তু খুব বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে। চলুন আমি আপনাকে বাড়ি পৌঁছে দিচ্ছি।”

রুমাইসা এবার আর নিজেকে ধরে রাখতে পারলো না হুহু করে কেঁদে দিলো। রুমাইসার এমন বেসামাল অবস্থা দেখে স্মরণে বুকে বা পাশ টা চিনচিন করে উঠলো। হৃদপিন্ডে যেনো কেউ কয়েক গা তরবারি চালিয়েছে এমনি তীব্র যন্ত্রণা অনুভব করছে স্মরণ, তবুও সে নিজেকে শক্ত রেখেছে। সে চায় না রুমাইসার ভবিষ্যৎ নষ্ট হোক।

“বিশ্বাস করুন আমি বিয়েটা করতে চাই না। এর কারনটা আমি কাউকে বলে বুঝাতে পারছি না। সবাই কেনো আমার সাথে এমন করছে? ভাগ্যও কেনো আমার সাথে এমন খেলা খেলছে। আমি কি অন্যায় করে এই পৃথিবীতে এসেছি, কেনোই বা আমাকে এত কষ্ট সহ্য করতে হবে? ”
বলেই কাঁদতে কাঁদতে নিচে বসে পড়লো রুমাইসা। স্মার তখনো নিজের মাঝে কাঠিন্যতা ধরে দাঁড়িয়ে রইলো। চোখের সামনে রুমাইসার এমন বেহাল অবস্থা দেখেও যেনো তার হৃদয়ে এতটুকু কষ্ট অনুভব হচ্ছে না।

বেশ খানিকটা সময় কেটে গেলে রুমাইসা ধীরেধীরে উঠে দাঁড়ায়। স্মরণ পেন্টের পকেটে হাত গুঁজে অন্যদিকে তাকিয়ে আছে। রুমাইসা একবার তার দিকে দৃষ্টি ফেলে চোখ মুছে নিলো। টলতে টলতে ঘর থেকে বেড়িয়ে যাবার আগে আরেকবার স্মরণ কাছাকাছি এসে বলল,

“মানুষ নিষ্ঠুর হতে দেখেছি তবে আপনার মতো কাউকে দেখি নি। আমি ভুল ছিলাম আজ সেটা আপনি চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিলেন। আপনার প্রথম দিকের সরলতাটাকেই হয় তো এতদিন আঁকড়ে ধরেছিলাম আজ তার সমাপ্তি ঘটলো।”
বলেই রুমাইসা সামনে পা বাড়াতে নিলে তার মাথা ঘুরে যায় আর স্মরণের প্রশস্ত বুকে ডুলে পড়ে।

চলবে,,,।