সর্বনাশীনি তুমি পর্ব-১৮

0
310

#সর্বনাশীনি_তুমি
#পর্ব:১৮
#Mishmi_muntaha_moon

উপমা মন খারাপ করে বসে আছে।কাল তার শ্বাশুড়ি মা অর্থাৎ রাবেয়া বেগম কল করেছিলো। আজ সাদাত এর ফ্লাইট।সেহরিশকে কল করেছিলো কিন্তু আশামতো উত্তর পায়নি।
উপমা কম বলেনি সেহরিশকে কিন্তু ইগনোর করে তার কথা।না এসপার না ওসপার কিছুই বলে না। তবে সেহরিস উপমার ব্যাক্তিগত সকল বিষয়ে এক্টিভ।
রাতে সাদাফকে নিতে যাবে এয়ার্পোট এ সেহরিশের বাবা মা।সেহরিশ উপমাকে কিছুই বলে নি।তবুও উপমা তৈরি করেই রেখেছে সব।সেহরিশের জন্য পাঞ্জাবি তার জন্য মেচিং শাড়ি।
বিকেলমাত্র, সেহরিশের উপর ধীরে ধীরে কাজের চাপ বেশি দেখা দিচ্ছে।তাইতো এখন বিকেলের পরিবর্তে রাতে আসে।মাঝে মাঝে দেখা যায় কাজ ফেলেই এসে বিকেলে উপমার সাথে ব্যাক্তিগত সময় স্পেন্ড করে।এতো কাজ নাকি ভালো লাগে না সেহরিশের।সেহরিশের কথা শুনে উপমার হাসি পায়।
অফিসের কাজ কখনই সেহরিশ সামলায় নি সে হিসেবে খুবই ভালো করছে এখন রেস্পন্সিবল হাসবেন্ড একদম।

গাড়ির হর্ন শুনে উপমার ভাবনা থেকে বের হয়।দ্রুত বারান্দায় যেতেই সেহরিশের গাড়ি দেখে আনন্দে আত্মহারা হয়ে রুম থেকে বেরিয়ে আগে ভাগেই দরজা খুলে দাঁড়িয়ে থাকে। সেহরিশ আস্তেধীরে গাড়ি পার্ক করে বাড়ি দিকে পা বাড়াতেই দরজা খোলা দেখায় ভ্রু কুচকে বাড়িতে ঢুকে।উপমাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ঠোঁট কামড়ে হেসে বলে

‘ কি ব্যাপার। এতো খুশি কেনো?’

উপমা কিছু বলে না হাসি হাসি মুখে সেহরিশেরর দিকে তাকিয়ে থাকে।সেহরিশ উপমার উত্তর না পেয়ে দরজা অফ করে উপমাকে জড়িয়ে ধরে। উপমা হঠাৎ জড়িয়ে ধরায় থতমত খেয়ে বলে

‘কি করছেন?আজব তো ছাড়েন বলছি।’

সেহরিশ হেসে ছেড়ে দেয়।গলার টাই আলগা করে রুমের দিকে পা বাড়ায় উপমাও পিছে পিছে যায়।সেহরিশ আলমারি থেকে পোশাক বের করতে নিতেই উপমা বলে

‘আপনার পোশাক বের করে রেখেছি আমি দেখুন ওইযে।’

বলে খাটের উপরে ইশারা করে।সেহরিশ তার পাঞ্জাবী উপমার শাড়ির দিকে নজর বুলিয়ে বলে

‘ কিসের প্রস্তুতি চলছে?’

‘সাদাত ভাই আসছে আজ ভুলে গেলেন নাকি?’

সেহরিশ দীর্ঘশ্বাস ফেলে বিছানা থেকে পাঞ্জাবী নিয়ে ওয়াশরুমে চলে যায়।সেহরিশকে পাঞ্জাবী নিয়ে যেতে দেখে উপমা ঠোঁট কামড়ে বলল

‘বাহ, এতো সহজে মেনে গেলো।’

সেহরিশ পাঞ্জাবী পরে রেডি হয়ে বের হয়ে ভেজা চুল গুলো হাত দিয়ে ঝারতে ঝারতে বলল

‘তুমি রেডি হচ্ছো না কেনো?যাও রেডি হয়ে নাও শপিংমলে যাবো।’

বলে গাল টিপে বেরিয়ে গেলো।উপমাও দ্রুত থ্রিপিস পালটে শাড়ি পড়ে নিলো।

____

১ঘন্টায় সেহরিশের শপিং শেষ। সাদাতের জন্য কিছু পাঞ্জাবীসহ, শার্ট কিনে নিয়েছে কিছু আর টুকটাক জিনিসপত্র । সাথে একটা ফোটো ফ্রেম ও কিনলো।
সর্বশেষে কম্পিউটারের দোকানে গিয়ে মোবাইল থেকে একটা ছবি প্রিন্ট আউট করে নিলো।
ভালো করে পর্যবেক্ষণ করতেই দেখতে পেলো উপমা যেই ফ্যামিলি ফটোটা সে সেহরিশদের বাড়িতে গিয়ে সাদাতের রুম থেকে ভুলে ভেঙে ফেলেছিলো সেইটা।

দোকান থেকে বের হয়ে সেহরিশ উপমার হাত চেপে ধরে রাস্তা পাড় হতে লাগলো।উপমা সেহরিশেরর মুখপানে তাকিয়ে আছে।জিজ্ঞেস করবে কিনা, করবে কিনা বলতে বলতে জিজ্ঞেস করবে বলে ঠিক করলো

‘আচ্ছা একটা কথা জিজ্ঞেস করি?’

‘হুম?’

‘এই ফ্রেমটা তো আমি ওইদিন ভেঙে ফেললাম।আর আপনি তখন বলেছিলেন থাকা না থাকা একই তো এখন আবার প্রিন্ট আউট কেনো করালেন?সব নতুন করে?’

সেহরিশ উপমার বসার জন্য গাড়ির দরজা খুলে দিয়ে দাড়ালো।উপমা সেহরিশের দিকে পূর্ন দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে গাড়িতে উঠে বসলো।সেহরিশও ড্রাইভিং সিটে বসে গাড়ি স্টার্ট দিতে লাগে।উপমা সেহরিশের উত্তর না পেয়ে আবারও বলে

‘বলুন।’

সেহরিশ গাড়ি চালাতে চালাতে বলে

‘সাদাত সবসময় ফ্যামিলিকে একত্রিত রাখতে বিশ্বাসী। আর ও বাবাকে একটু বেশি ভালোবাসতো।আমাদের ফ্যামিলি টাকে ও অলওয়েজ হ্যাপি ফ্যামিলি বলে আখ্যায়িত করে।আর তাই আমিও ওর ধারনাটাকে ধরে রাখি। দেটস ইট।’

উপমা শুনে ছোট করে ‘ওহ’ বলে রাস্তা দেখতে লাগল।সন্ধ্যা হয়ে গেছে।আর ১, দেড় ঘন্টার মধ্যেই সাদাত ল্যান্ড করবে।ফোনে একের পর এক কল আসছে রাবেয়া বেগমের। নিশ্চয়ই টেনশনে আছে সেহরিশ আসবে কিনা।মুচকি হেসে কল রিসিভ করে বলল যে সেহরিশ আর ও আসছে।শুনে রাবেয়া বেগম স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল।

কিছুক্ষণের মধ্যেই আবার সেহরিশের ফোন বেজে উঠেলো।উপমা সেহরিশের ফোন হাতে নিতেই দেখতে পেলো তার বাবা কল করেছে।কল রিসিভ না করে সেহরিশের দিকে তাকালো।তারপর রিসিভ করে স্পিকারে দিতেই সেহরিশের বাবার ভারী কন্ঠ ভেসে আসে

‘কোথায় তুমি সেহরিশ।আজ সাদাত আসছে ওকে কি তুমি পিক আপ করতেও আসছো না?’

সেহরিশের বাবার কথা উপমা আড়চোখে সেহরিশের দিকে তাকালো।থমথমে মুখ। কিছুক্ষন চুপ থেকে ঠোঁট নাড়িয়ে গম্ভীর কন্ঠে বলল

‘আবার ভাইকে পিক করতে যাবো এইটা আমাকে কারো মনে করিয়ে দিতে হবে না।আপনি নিজের টা দেখুন যেতে পারবেন নাকি কোনো এক্সকিউজ আছে।’

সেহরিশের বাবার কোনো কথা শোনা গেলো না পরিবর্তে।সেহরিশ উপমাকে চোখে ইশারা করে কাটতে বললে উপমা সেহরিশের থমথমে মুখের দিকে তাকিয়ে ফোন কেটে দেয়।

___

সাদাত এসেই সেহরিশকে জাপ্টে ধরলো।সেহরিশ ও মুখে হাসি ফুটিয়ে জড়িয়ে ধরে সাদাতকে।
সাদাতের চোখ উপমার দিকে পড়তে সেহরিশকে রেখে উপমার সামনে এসে দাড়ায়।হাসি মুখে বলে

‘আপনি উপমা।ওহ সরি ভাবি।বাহ খুবই কিউট ফেইস তো আপনার।’

উপমা লাজুক হাসলো।সেহরিশ তার মা কে কল করে আসতে না করেছে তাই তারা আসে নি।সেহরিশ সাদাত কে নিয়ে একেবারে বাড়িতে উঠবে।
উপমা বেকসিটে বসে আছে।সাদাত তার ভাইয়েরর সাথে কথা বলছেন।তার মাঝেই উপমার উদ্দেশ্যে বলে

‘ভাই খুবই সেলফিশ বুঝলেন ভাবি।আমাকে রেখে রেখেই বিয়ে করে ফেলল।’

সাদাতের কথা শুনে সেহরিশ আয়না দিয়ে উপমার দিকে বলল

‘তোর জন্য ওয়েট করলে বিয়ে করা লাগতো না।আর এইদিকে উপমার বাবা তো ভিলেন হয়ে যাচ্ছিলো।’

সেহরিশের কথায় উপমার মুখ হা হয়ে গেলো।কি সুন্দর ভাইয়ের কাছে বউয়ের সামনেই বউয়ের বাপ কে ভিলেন বলছে।সাদাতের হাসার আওয়াজে উপমা আয়না থেকে দৃষ্টি সরিয়ে জানালা দিয়ে বাহিরে তাকালো।

‘ ভাই তুম ভাবির সামনে তার বাবাকে এভাবে বলছো।একা রুমে পেলে খবর নিবে দেখে নিও।’

বলে সাদাত হেসে পিছনে ফিরে তাকালো। মজা করে বলল

‘ঠিক না ভাবি?’

সাদাতের কথায় উপমা তার দিকে তাকিয়ে হাসলো কিছু বলল না।

__
বাড়িতে সাদাতকে নিয়ে ফিরতেই রাবেয়া বেগমের সে কি কান্না।সাদাত হেসে রাবেয়া বেগমকে জাপটে আছে।কান্না থামাতে বলছে কিন্তু তার কান্না থামলে তো।

সাদাতের আসার কারনে বিশাল আয়োজন করেছেন।সব সাদাতের পছন্দের খাবার।শুধু সাদাতের না সেহরিশেরও পছন্দের খাবার রান্না করেছে।
উপমা সব খাবার টেবিলে সাজালো।সোফায় সেহরিশ সাদাত আর তার মা বসে আছে।উপমাও সেদিকে গেলো। রাবেয়া বেগম বেজার মুখে এখন সাদাতকে বলছে সেহরিশের বাড়ি ছেড়ে চলে যাওয়া।সাদাত শুনে অবাক হলো। বিস্মিত হয়ে বলল

‘সত্যি নাকি ভাই?’

সেহরিশ মাথা নিচু করে রইলো।সাদাত একঘেয়েমি করে বলল

‘ভাই তুমি না থাকলে আমিও থাকবো না এই বাড়িতে।ফিরে আসতে হবে তোমার। ‘

সেহরিশ কথার জবাব না দিয়ে বলল

‘অনেক রাত হয়েছে।খাওয়া দাওয়া সেড়ে নিলে ভালো হয়।’

‘না ভাই তুমি আগে জবাব দাও আমার কথার।’

সাদাতের কথা শেষ হয়েই উপমা বলল

‘জ্বী ভাইয়া আমরা এখানেই থাকবো।আপনাকে রেখে আমরা যেতে পারি।’

__
সেহরিশের রুমে ঢুকে উপমা হতবাক।খুবই সুন্দর ভাবে সাজানো গুছানো।সেহরিশের রুমে আগে আসা হয় নি উপমার।স্টাডি টেবিল বিভিন্ন ধরনের বই সাজানো।
বই নেড়েচেড়ে দেখতে লাগলো উপমা।কিন্তু নাহ অনেক খুজেও একটাও রোমেন্টিক থিমের বই পেলো না।
ঠোট বাকিয়ে বিছানায় গিয়ে বসলো।

‘এভাবে বসে আছো কেনো?’

‘কিভাবে?’

‘মন খারাপ করে নাকি রাগ করে বোঝা যাচ্ছে না।’

সেহরিশের কথায় উপমা শূন্য দৃষ্টিতে সেহরিশের দিকে তাকালো।সেহরিশ উপমার সামনেই আলমারি থেকে শার্ট নিয়ে পাঞ্জাবী খুলে শার্ট পড়তে লাগলো।
উপমা চোখ ছোট ছোট করে অন্য দিকে তাকালো।কিছুক্ষনে পাশে সেহরিশ গায়ের সাথে একেবারে লেগে বসায় উপমা সেহরিশের দিকে তাকায়।ভ্রু কুচকে বলে

‘আপনার বইয়ের রাজ্যে তো একটাও পড়ার মতো বই পেলাম না।এইসব কি বই রেখেছেন বলুন তো?’

উপমার কথায় সেহরিশ ভ্রু কুচকালো।অবাক হয়ে বলল

‘কেনো সব তো হাই রেটেড,হাই স্টেন্ডার্ড এর বই।তুমি পড়ার মতো কেনো খুজে পেলে না?’

‘একটাও তো রোমেন্টিক বই নেই কি পড়বো।’

উপমার কথায় সেহরিশ এক ভ্রু উচিয়ে উপমার সামনের চুল কানে গুজে দিতে দিতে বলল

‘তোমার রোমেন্টিক বই পড়ার প্রয়োজন আছে নাকি ঘরে এতো রোমেন্টিক একটা হাসবেন্ড থাকার পড়েও।’

উপমা কিছু বলল না।কথার রেশ পালটে বলল

‘আমরা তো এখানেই থাকছি তাই না?’

সেহরিশ উপমার দিকে তাকিয়ে থাকলো।দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল

‘কালকে সকালে আমাদের লাগেজ নিয়ে আসবে জাহিদ।বলে দিয়েছি ওকে।’

উপমা বেশ খুশি হল।যাক অবশেষে সেহরিশ মানলো।অনেকটা চিন্তামুক্ত হলো উপমা।

চলবে,,,
(ভুল ত্রুটি গুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন সবাই ❤️❤️)