সাজিয়েছি এক ফালি সুখ পর্ব-১৩

0
139

#সাজিয়েছি_এক_ফালি_সুখ
#লেখনীতে – #kazi_Meherin_Nesa
#পর্ব – ১৩

আজ নিজের প্রতিপক্ষের অফিসে এসেছে আবরার, দিন দুয়েক আগে জুয়েলারি ডিজাইনিং অ্যাসোসিয়েশনের আয়োজিত সম্মাননা অনুষ্ঠানে এবারও সেরা ডিজাইনার হিসেবে আবরার সম্মানিত হয়েছে। যদিও ও আগেই জানতে পেরেছিলো ওকে এই সম্মাননা প্রাপ্তি থেকে কে আটকাতে চাইছিলো, চাইলে তখনই সেই ব্যক্তির গিয়ে মুখোমুখি দাঁড়াতে কিন্তু আবরার সঠিক সময়ের অপেক্ষায় ছিলো…কফি খাচ্ছিলো আবরার তখন রুমে প্রবেশ করলো রায়হান। সে বাইরে এক কাজে গিয়েছিলো, একেই নিজের এতো ভেবে করা প্ল্যানে আবরার পানি ফেলে দেওয়ায় রায়হানের মাথা খারাপ হয়ে গেছে কারণ তার অনেকগুলো টাকা অপচয় হয়েছে কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। তার ওপর আবরার আজ নিজেই এসে চোখের সামনে উপস্থিত হয়েছে। আবরারের বাঁকা হাসিই বলে দিচ্ছে আজ এখানে ও ঠিক কোন উদ্দেশ্যে এসেছে! চেয়ার টেনে বসেই রায়হান বললো…

‘ মি. আবরার হঠাৎ আজ আমার অফিসে কি করছে?’

‘ বহুদিন হলো আপনার কোনো খোঁজ নেই, তার পর এতকিছু ঘটে গেলো তাই আপনার জন্যে চিন্তা হচ্ছিলো। হাজার হলেও আপনি আমার প্রতিপক্ষ, আপনি না থাকলে তো কোনো প্রতিযোগিতাই হবেনা ‘

উত্তর দিলো ওরা রায়হান, এই মুহূর্তে আবরারের মুখোমুখি হওয়ার মতো মানসিকতা নেই তার!

‘ আমাকে দেখে খুব একটা খুশি হননি মনে হচ্ছে, অবশ্য হবেনই বা কি করে। এবারও অ্যাওয়ার্ড মিস হয়ে গেলো! পরপর তিনবার! হাউ স্যাড ‘

‘ আপনি খুব আনন্দে আছেন মনে হচ্ছে মি. আবরার?’

‘ সেটাই কি স্বাভাবিক নয়? একটানা তিনবার বেস্ট ডিজাইনার হিসেবে সম্মানিত হওয়াটা আনন্দেরই বটে। কিন্তু একটা কথা না বললেই নয়, ইউ আর ভেরি আনলাকি মি. রায়হান! এতো চেষ্টা করেও নিজের জুনিয়রকে হারাতে পারলেন না ‘

‘ ভুল ভাবছেন আবরার, আপনি জিতেছেন কারণ আপনাকে আমি জিততে দিয়েছি নাহলে…’

তাচ্ছিল্যের হাসি হাসলো আবরার…

‘ ওহ প্লিজ, এইসব বলে আমাকে হাসাবেন না। আপনি জিতবেন কিভাবে? জেতার জন্যে যে চেষ্টা করা দরকার সেটা আপনি করেননি, উল্টে কিছু চিপ ফর্মুলা অ্যাপ্লাই করতে গেছিলেন আমাকে হারানোর জন্যে ‘

‘ কি বলতে চাইছেন?’

‘ ইউ নো হোয়াট আই মিন। আমারই লোককে আমার বিরুদ্ধে কাজ করাবেন আর ভেবেছেন আমি জানবো না? একজন সিনিয়রের থেকে এমনটা আমি আশা করিনি মি. রায়হান ‘

এবার একটু নড়েচড়ে বসলো রায়হান, আবরার যে সত্যিটা জেনে গেছে সেটা তার জানা ছিলো না কারণ আবরারের অফিসের যে লোককে টাকা দিয়েছিলো তার সঙ্গে আর রায়হান যোগাযোগ করতে পারেনি! আবরার সত্যিটা জেনে গেছে বুঝেও বিষয়টা অস্বীকার করার চেষ্টা করলো রায়হান…

‘ কি বলছেন আপনি এসব?’

‘ মি. রায়হান, আমি কি বলছি সেটা আমরা দুজনেই ভালোভাবে জানি ‘

‘ আপনি যখন সব জেনেই গেছেন আর আমার গোপন করার কিছুই নেই, এই দুনিয়াটা প্রতিযোগিতায় চলে। সবাই চায় সেরা হতে, এগিয়ে যেতে। আর প্রতিযোগিতায় সব করা যায়, এখানে এভরিথিং ইজ ফেয়ার ‘

‘ আপনি ঠিকই বলেছেন, কিন্তু প্রতিযোগিতায় জেতার থেকে অর্জিত সম্মান রক্ষা করা বেশি কঠিন। একজন সিনিয়র হিসেবে আপনার উচিত জুনিয়রদের সুযোগ দেওয়া সেটা না করে আপনি আপনার জুনিয়র প্রতিপক্ষকে হারানোর জন্যে এতো লেইম একটা প্ল্যান করেছিলেন? আপনার থেকে এটা আশা করিনি ‘

‘ প্রতিযোগিতায় জুনিয়র সিনিয়র ম্যাটার করে না, জিতটাই আসল ‘

এতকিছুর পরও রায়হানের মধ্যে বিন্দুমাত্র অনুশোচনা বোধ দেখতে পেলো না আবরার, বুঝলো লোকটা জেতার জন্য অবসেসড, এছাড়া তার কাছে আর কিছুর দাম নেই। আর কথা বাড়াতে চাইলে না আবরার…

‘ থ্যাংকস ফর ইউর ইনস্পিরিয়েশন! আসলে আমি কিছুটা আবেগ দিয়ে ভেবেছিলাম কিন্তু আপনি আমার ভুল ভেঙে দিয়েছেন। প্রতিযোগিতায় শুধু জিত আসল আর কিছুই না। এবার থেকে আমিও
আপনাকে হারানোর জন্যে সব করবো যা করা যায়! সি ইউ অ্যাগেইন ‘

বেরিয়ে গেলো আবরার, পরপর তিনবারের ব্যর্থতার ফলে রায়হান এবার উঠেপড়ে লেগেছে। একজন জুনিয়রের কাছে এভাবে হারতে সে চায়না, ঠিক করেই নিয়েছে যেভাবেই হোক পরেরবার সেই জিতবে!
_______________________________

আবরার ও জারার সংসার জীবনের বয়স বর্তমানে প্রায় সাড়ে তিনমাস, এক এক করে দিনগুলো যতো পেরোচ্ছে ততোই যেনো পূর্বের আগের তুলনায় আরো সুন্দর হয়ে উঠছে। শুরুতে আবরারের কান্ড কারখানা দেখে জারার মনে হতো বিয়ের পর নতুন নতুন বলে এমন আচরণ করে, সময় পেরোলে পাল্টে যাবে। কিন্তু নাহ, উল্টে আবরারের ওর প্রতি পাগলামো যেনো দিনদিন বেড়েই চলেছে আর তার সঙ্গে বাড়ছে জারার ওর প্রতি দুর্বলতা। ছুটির এক সকালে ঝলমলে রোদ উঠেছিলো, রোদ দেখে চাদর ও বালিশের কভারগুলো ধুয়ে রোদে শুকাতে দিয়েছিলো কিন্তু দুপুর হতে না হতেই আকাশে মেঘ জমলো আর কিছু সময় পরেই শুরু হলো ঝুম বৃষ্টি। অগত্যা ছাদ থেকে সেগুলো ঘরে নিয়ে আসতে হলো, শাশুড়ির ঘরের চাদর দুটো ফেরত দিয়ে জারা নিজের ঘরের ভেজা চাদর দুটো নিয়ে ফিরলো। আবরার বিছানায় বসে ল্যাপটপে কাজ করছিলো, একনজর জারার মুখের দিকে দেখে প্রশ্ন করলো…

‘ আজকে আমার বউটার আবার কি হলো?’

‘ মেজাজটা গরম হয়ে যাচ্ছে আমার, আমার একবার আবহাওয়ার খবর চেক করে তারপর এগুলো ধোয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত ছিলো ‘

কথাগুলো বলতে বলতে বারান্দায় গেলো জারা, আরেকদফা চাদর দুটোর পানি নিংড়ে ফেলে মেলে দিলো বারান্দায়…

‘ ভিজে গেছে তাতে কি? শুকিয়ে যাবে। এতো রাগের কি আছে?’

‘ বুঝবে না তুমি। এই অবেলায় বৃষ্টি নামবে বুঝলে আজ জামাকাপড় ধুতে যেতাম না। এগুলো এখন বারান্দায় দিলেও ভালোভাবে শুকাবে না, কি লাভ হলো এতো কষ্ট করে ধুয়ে?’

এ মুহূর্তে ভীষণ রেগে আছে জারা, আবরার বুঝলো ওকে একলা ছেড়ে দেওয়াই শ্রেয়। কিছু সময় পর রাগ একাই পড়ে যাবে। বিকেলে… জারা সামনের সপ্তাহে নিজের কাজের শিডিউল তৈরি করছিলো তখন আবরার বললো…

‘ বিয়ের এতগুলো মাস কেটে গেলো, তোমার কি মনে হয় না আমাদের এবার একটু হানিমুনে যাওয়া উচিত?’

‘ তোমার ঘোরার শখ হয়েছে নাকি?’

‘ ঘোরা আর হানিমুন এক হলো?’

এবার আবরারের দিকে ঘুরে তাকালো জারা…

‘ তোমার কাছে হানিমুনের ব্যাখ্যা শুনি একটু ‘

‘ ঐতো দুজনে একসঙ্গে সারাদিন একসঙ্গে ঘুরবে, সুন্দর সময় কাটাবে আর রাতে যদি সারাদিনের ক্লান্তি কিছুটা দুর করতে পারে সেই সুযোগে একটু রোমান্স করে নেবে ‘

‘ এই, তোমার মুখে কি কিছু আটকায় না? এসব কথা সরাসরি এভাবে বলতে লজ্জা করেনা?’

‘ পর নারীকে তো আর বলছি না, আমার বউকে বলছি। লজ্জার কি আছে? তাছাড়া এটাই তো সত্য। হানিমুনে গিয়ে মানুষ এগুলোই তো করে ‘

‘ মনে হচ্ছে বেশ অভিজ্ঞতা অর্জন করে এসেছো এ ব্যাপারে?’

‘ কি যে বলো না, আমি খুবই নিরীহ প্রকৃতির ছেলে। জীবনের এতগুলো বছর মেয়েদের থেকে দূরে থেকেছি আর তুমি কিনা আমাকে সন্দেহ করছো?’

“নিরীহ” শব্দটি ঠিক হজম হলো না জারার, ভ্রু উচিয়ে প্রশ্ন করলো..

‘ তুমি নিরীহ?’

‘ এ ব্যাপারে কোনো সন্দেহ আছে?’

‘ তুমি যদি নিরীহ হও তাহলে প্রকৃত নিরীহ কারা?’

‘ আমাকে নকল নিরীহ মনে হয় তোমার?’

‘ তুমি তো নিরীহ হওয়ার ভাব ধরেছো, হারে হারে জানা আছে আমার তুমি কেমন ‘

‘ আচ্ছা যাও, তোমার ইচ্ছে পূরণ হবে। যাবো আমরা হানিমুনে। কিন্তু জায়গা আমি ঠিক করবো আর আমি যেখানে বলবো সেখানেই যেতে হবে ‘

‘ শিওর ম্যাডাম, আপনার আদেশই পালন করা হবে ‘

জারা হানিমুনে যেতে রাজি হয়েছে ভেবে আবরার তো মহা খুশি, এদিকে জারা যে ওকে কোন হানিমুনে নিয়ে যাবে সেটা শুধু ওই জানে। বর্তমানে ব্যস্ততা আরো বেড়েছে জারার, কিছুদিন হলো নতুন কয়েকটা ফ্যাশন হাউজের সঙ্গে জয়েন্ট পার্টনারশিপ সাইন করেছে। আজ কর্মক্ষেত্রে আসতে অনেক দেরি হয়ে গেছে জারার। এসেই কমপ্লিট হওয়া অর্ডার ও অর্ডারকারীদের নামগুলো আরেকবার চেক করে নিলো। একটু পরেই ডেলিভারি ম্যান চলে আসবে, কিছু হোম ডেলিভারি আছে আজকে। কিছু সময় পর ডেলিভারি বয় এলে জারা তাকে সবকিছু বুঝিয়ে দিয়ে হিসেবের খাতা নিয়ে বসলো। তখনই ওর সেক্রেটারি এসে বললো…

‘ ম্যাডাম, আজ সকালে আপনার সঙ্গে এক ভদ্র মহিলা দেখা করতে এসেছিলেন। আপনার আসতে দেরী হবে শুনে চলে গেলেন’

‘ আমাদের কোনো পুরোনো ক্লায়েন্ট?’

‘ না, অন্য কেউ। তবে ওনার কথা শুনে মনে হলো আপনাকে ভালোভাবে চেনে। কিন্তু উনি নিজের পরিচয় দিলেন না, পরে এসে আপনার সঙ্গে সামনাসামনি দেখা করবে বলেছেন ‘

‘ আমার সঙ্গে তো কারো দেখা করতে আসার কথা ছিলো না, ফোন নাম্বার দিয়ে গেছে বা কিছু বলেছে?’

‘ না, শুধু যাওয়ার আগে বলেছেন উনি আবার একদিন আসবেন ‘

কে হতে ভদ্রমহিলাটি যে নিজের পরিচয় দেয়নি নাকি জারার চেনা কেউই বটে? শত চেষ্টা করেও এমন কারো কথা মনে করতে পারলো না যে ওর সঙ্গে দেখা করতে এসে পরিচয় গোপন রাখবে?? সন্ধ্যায় বাড়ি ফেরার পর জারা দেখলো আবরারের ফুপু এসেছে, জারা দ্রুত রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে এসে ফুপুর আপ্যায়নের ব্যবস্থা করলেন। কাজের পাশাপাশি যতোটা সময় পায় তাতে জারা পুরো চেষ্টা করে বাড়ির বউ হিসেবে নিজের কর্তব্য পালনের। আবরারের মা সন্ধ্যার নাস্তা বানাচ্ছিলেন রান্নাঘরে, জারা ওখান থেকে সব এনে ফুপুকে দিয়ে বলে…

‘ আপনার আরো কিছু লাগলে আমাকে বলবেন, আমি এনে দেবো ‘

‘ ঠিক আছে কিন্তু তুমি কি রোজ এইরকম সন্ধ্যাবেলা বাড়িতে ফেরো নাকি তাও আবার একা?

‘ হ্যাঁ, অনেকসময় আরো দেরি হয়ে যায়। আজ রাস্তায় জ্যাম কম থাকায় তাড়াতাড়ি ফিরেছি ‘

‘ ওহ! তা বৌমা, তুমি কতো বছর ধরে বাইরে কাজ করছো?’

‘ প্রায় চার বছর হবে ‘

‘ তোমার কাজের জায়গায় ছেলে আছে?’

‘ হ্যাঁ, কর্মচারী আর ডেলিভারি ম্যান তো ছেলেই এছাড়া আমার ইনভেস্টর আর ক্লায়েন্ট তো আছেই ‘

ফুপু আরো কিছু প্রশ্ন করতো কিন্তু তার আগেই আবরারের মা এসে বললেন…

‘ জারা, ফ্রিজ থেকে ইলিশ মাছ বের করে রেখো। রাতে আজ ভাবছি ইলিশ পোলাও করবো ‘

‘ আম্মু, আমি ইলিশ পোলাও বানাতে পারি। আমিই বানিয়ে নেবো, এই গরমের মধ্যে আপনাকে রান্নাঘরে আসতে হবেনা ‘

‘ কিন্তু তুমি মাত্র বাইরে থেকে এলে, এই ক্লান্ত শরীরে আবার রান্না করবে?’

‘ বিশ্রাম আমি রান্নার পর নিয়ে নেবো, আপনি বসে ফুপুর সঙ্গে গল্প করুন আমি রান্নাঘরে যাচ্ছি ‘

হাতখোপা করতে করতে রান্নাঘরের দিকে গেলো জারা, আবরারের মা চেয়ার টেনে বসে একগ্লাস পানি খেলো। তখনই ফুপু বলে বসলো…

‘ আয়েশার মা, তোমরা আবরারকে বিয়ে করানোর জন্যে আর মেয়ে পেলে না? এইরকম একটা মেয়েকেই ওর বউ বানাতে হলো তোমাদের?’

‘ কেনো আপা? জারা কি করেছে?’

‘ ও তো বললো বিয়ের আগে থেকেই বাইরে কাজ করে, রাত বিরাতে কতো দেরী করে বাড়ি ফিরতো তার ঠিক নেই। এখন বিয়ের পরও একই অবস্থা, ছেলের বউকে কেউ এভাবে ছাড় দিয়ে রাখে? কোথায় বাড়িতে বসে শাশুড়িকে সাহায্য করবে সেটা না করে বাইরের কাজ দেখাচ্ছে’

‘ তাতে কী হয়েছে আপা? কাজ করছে করুক না, আমি তো আর বুড়ো হয়ে যাইনি যে ছেলের বৌর কাজ করার অপেক্ষায় থাকতে হবে ‘

‘ সবকিছু এতো হালকাভাবে নিও না আয়েশার মা, মেয়ে মানুষ রাতের বেলা বাইরে থাকা মানেই অনেককিছু হতে পারে। তোমরা তো আর গিয়ে দেখতে যাবেনা। কোনো অঘটন ঘটলে থামাতে পারবে? এখনো সময় আছে ছেলের বউকে এই বাইরে কাজে যেতে দিও না ‘

‘ আপা, আপনি একটু বেশীই ভাবছেন। এমন কিছুই হবেনা, তাছাড়া জারা যথেষ্ট বুদ্ধিমতি মেয়ে। ও জেনেবুঝে এমন কিছুই করবেনা যাতে ওর বা ওর পরিবারের সম্মানহানি ঘটবে। আবরার তো ওর সম্পর্কে সব জেনেই ওকে বিয়ে করেছে তাইনা?’

‘ তোমাদের বউ, তোমরা যা ভালো বোঝো করো গিয়ে। আমার বলার দরকার তাই বললাম, আমরা বাবা ছেলে বউকে অতো তোয়াতে পারিনা যতোটা তুমি আর আমার ভাই করো ‘

আবরারের মা উত্তর দিলেন না কারণ উনি জানেন ওনার বড় ননদ খিটখিটে মেজাজের। ওনার মতে উনি যেটা বলেন সেটাই সঠিক আর কেউ তার বিরোধিতা করলেই দোষ হয়ে যায়! রান্নাঘর থেকে ফুপুর সব কথাই জারার কানে গেছে, এ বাড়িতে আসার পর কেউই এই ধরনের কথা বলেনি কিন্তু আজ আড়ালে হলেও এ ধরনের কথা শুনে জারার কিছুটা খারাপ লাগলো বটে! তবে জারা ঠিক করলো ফুপুর এই ভুল ধারণাটা একটু হলেও বদলের চেষ্টা করা দরকার তাই রাতের খাওয়া শেষে জারা স্বেচ্ছায় ফুপুর রুমে গেলো….

‘ ফুপু, আপনি নাকি মশারী খুঁজছিলেন? আমাদের বাড়িতে তো মশা নেই ‘

‘ ও তুমি জানো না, আমি তো এসে থাকি এই বাড়িতে। আমি জানি, এই ঘরে জানালা খোলা থাকলে মশা আসে। মশারী একটা দিয়া যাও নাহলে কয়েল দিয়ে যাও ‘

‘ এইতো, আমি গুড নাইট নিয়ে এসেছি, মশা আর কামড়াবেনা ‘

সবকিছু সেট করে দিয়ে জারা বলে…

‘ আপনি কি এখনই ঘুমাবেন?’

‘ তোমার কোনো দরকার আছে?’

‘ না, আপনি যদি এখন না ঘুমান তাহলে আপনার সঙ্গে একটু গল্প করতাম। আসলে আপনাকে সেই আমার বিয়ের দিন দেখেছিলাম, এরপর আজকে দ্বিতীয়বার দেখছি। আপনার সঙ্গে সেভাবে কথা বলার সুযোগই হয়নি ‘

মোড়া টেনে বসে পানের পোটলাটা বের করলেন আবরারের ফুপু, পান বানাতে বানাতে বললেন…

‘ আমরা হলাম পুরোনো যুগের মানুষ, আর তোমরা এ যুগের মেয়েছেলে। আমাদের সঙ্গে তোমরা আর কি কথা বলবা?’

‘ যুগ বাদ দেই, আমরা দুজন মেয়ে হিসেবে তো কথা বলতেই পারি তাইনা? তাছাড়া আমি কাজের চাপে সেভাবে গল্প করার সুযোগই হয়ে ওঠেনা ‘

মুখে পান গুঁজে আবরারের ফুপু ঘড়ির দিকে তাকালেন, মাত্র সাড়ে নয়টা বাজে। এখন ঘুমালে ঘুম আসবে না নিশ্চিত তাই উনি জারাকে বসতে বললেন। দুজনের মধ্যে টুকটাক অনেক কথাই হলো, এক পর্যায়ে জারা প্রশ্ন করলো….

‘ আচ্ছা ফুপু, আপনার বিয়ে হয়েছে কতো বছর হলো মনে পড়ে?’

‘ আরে, মনে কেনো থাকবে না? আজ আমার স্বামী বেঁচে থাকলে বিয়াল্লিশ বছর হতো আমার সংসার জীবনের। কিন্তু আল্লাহ আমার স্বামী ভাগ্য বিশ বছরই রেখেছিলেন ‘

‘ মন খারাপ করবেন না, আপনি তো একা হাতে নিজের ছেলেমেয়ে নিয়ে দীর্ঘ একটা সময় কাটিয়েছেন। তাদের সফলতা দেখেছেন, এটা তো অনেক বড় প্রাপ্তি ‘

‘ হুমম, তা তো বটেই ‘

এভাবে এক কথায় অনেক কথা হলো, সে সময় জারা ফুপুকে সরাসরি না হলেও অন্যান্য নানান উদাহরণের মাধ্যমে মেয়েদের শিক্ষা ও সাবলম্বী যাওয়ার গুরুত্ব সম্পর্কে বোঝালো। যদিও শুরুতে ফুপু জারার কথায় দ্বিমত পোষণ করেছিলেন কিন্তু জারা যখন বিস্তারিতভাবে আলোচনা করলো তখন ফুপু কিছুটা হলেও বিষয়টা বুঝলেন! জারা যে ফুপুর মন্তব্য শুনে তাকে বোঝাতে গিয়েছেন সেটা বুঝতে দেয়নি, ও বিষয়টি নিয়ে একদম সাধারণভাবেই আলোচনা করেছে এবং ফুপুর ধারণায় সামান্য কিছুটা হলেও পরিবর্তন আনতে সক্ষম হয়েছে জারা!

চলবে…

[ভুলত্রুটি ক্ষমা সুলভ দৃষ্টিতে দেখবেন…!!]