সাজিয়েছি এক ফালি সুখ পর্ব-০৭

0
96

#সাজিয়েছি_এক_ফালি_সুখ
#লেখনীতে – #kazi_Meherin_Nesa
#পর্ব – ০৭

নওয়াজ সাহেব একের পর এক প্রশ্ন করেই যাচ্ছেন, থামার যেনো নাম নেই। এই কান্ড দেখে তার স্ত্রী বললেন…

‘ আর কতো প্রশ্ন করবে? মেয়েটাকে তো ভয় পাইয়ে দিচ্ছো তুমি। থামো এবার ‘

‘ ভয়ের কি আছে? আমি বাঘ না ভাল্লুক? প্রথমবার একটা মেয়েকে বিয়ে করতে রাজি হয়েছে আবরার, তার সম্পর্কে একটু জানবো না?’

‘ অনেক জানলে তো, এবার থাক? ওকে অন্তত কিছু খেতে দাও এখন ‘

‘ হ্যা আব্বু, অনেক হয়েছে। এতক্ষণ আমি কিছু বলিনি কিন্তু তুমি অনেক প্রশ্ন করে নিয়েছো জারাকে, আর না ‘

‘ তুই চুপ কর আবরার, এটা আমাদের হবু শ্বশুর – বৌমার ব্যাপার। তুই মাঝখানে নাক গলাবি না ‘

‘ আব্বু? তুমি নিজেই বলছো হবু বৌমা, তারমানে ওকে তুমি অলরেডি মেনে নিয়েছো। তাহলে আর প্রশ্ন কেনো?’

‘ বেশ, জারা.. এটাই আমার শেষ প্রশ্ন। আমার ছেলেকেই কেনো তুমি নিজের জীবনসঙ্গী হিসেবে বাছাই করলে?’

নওয়াজ সাহেবের প্রশ্ন শুনে আবরার জারা উভয়ই একে অপরের দিকে তাকালো। কিছুটা চিন্তিত তবে উৎসুক হয়ে জারার উত্তরের অপেক্ষায় আছে আবরার…

‘ আমি আবরারকে ভরসা করতে পারি, এটাই সবচেয়ে বড় কারন। আমি মনে করি প্রত্যেকটা নারীর উচিত সেই পুরুষকে জীবনে জায়গা দেওয়া যে কখনো বিশ্বাস ভাঙবে না। যাকে ভরসা করে, যার হাত ধরে অজানা পথে পাড়ি দিতেও কোনো ভয় থাকবে না। আবরার আমার ভরসা ও বিশ্বাসের জায়গা’

জারার উত্তরে বেশ সন্তুষ্ট হলেন নওয়াজ সাহেব, আবরারের স্থির দৃষ্টি তখনও জারার দিকেই আবদ্ধ। যদিও জারার এই কথাগুলোর মাঝে কোনো অনুভূতির উপস্থিতি নেই, তবে আবরারের হৃদয়ে গেঁথে গেলো কথাগুলো…আলাদা আলাদা দেখা সাক্ষাৎ শেষে আবরার – জারা উভয়ের পরিবার দেখা করেছে। বিয়ের দিনক্ষণ ঠিক করা হয়ে গেছে, জারার বাবা মেয়ের বিয়েতে দেরি করতে চাইছেন না। সবমিলিয়ে বিয়ের পূর্বের সব আনুষ্ঠানিকতা ভালোভাবে সম্পন্ন হয়েছে!
________________________________

আগামীকাল বিয়ে… জারা চেয়েছিলো কোর্ট ম্যারেজ করতে কিন্তু ওর বাবা রাজি হয়নি। অগত্যা ছোটখাটো একটা অনুষ্ঠানের জন্যে রাজি হতে হয়েছে জারাকে, ওর পক্ষের তেমন আত্মীয় স্বজন নেই। ওর মামাবাড়িতে বিয়ের দাওয়াত দেওয়া হয়েছিলো কিন্তু তারা আসবেনা বলে জানিয়ে দিয়েছে। গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান বাদ দিয়েছে জারা, আবরারের সঙ্গে এ বিষয়ে আগেই আলাপ করে নিয়েছিলো। আবরারও ওর বাড়িতে বলে ম্যানেজ করে নিয়েছে যে শুধু বিয়ে আর রিসিপশনের অনুষ্ঠান হবে। জারা বিয়েতে নিজের ডিজাইন করা একটা লেহেঙ্গা পড়বে বলে ঠিক করেছে, রাতে এলিনা ওর হাউজ থেকে লেহেঙ্গা নিয়ে আসে…

‘ জারা, আমি তোর লেহেঙ্গা নিয়ে এসেছি। দেখ তো এইটার কথাই বলেছিলি কিনা ‘

‘ হ্যাঁ এটাই ‘

‘ এটায় তোকে দারুন মানাবে আর রংটাও সুন্দর। আর নিজের ডিজাইন করা ড্রেস পরে বিয়ে করার ব্যাপারটাই আলাদা তাইনা?’

বান্ধবীর কথা যেনো জারার কানে পৌঁছালো না, ও অন্যমনস্ক হয়ে জানালার বাইরে তাকিয়ে আছে। লেহেঙ্গাটা বিছানার ওপর রেখে জারার পাশে বসলো এলিনা…

‘ দেখি দেখি, কাল বিয়ে আর আজ আমাদের কণের মন খারাপ কেনো? বাবার বাড়ি ছেড়ে চলে যাবি বলে মন খারাপ করছে নাকি এখনই?’

‘ তেমন কিছুনা, আসলে আম্মুর কথা মনে পড়ছে। নকল হলেও আমার বিয়েটা তো হচ্ছে, আর আম্মু থাকলে হয়তো কালকের দিনটা অন্যরকম হতো ‘

‘ থাক না, এসব ভেবে আজ আর মন খারাপ করিস না। যা হওয়ার সেটা তো ভালোর জন্যেই হয় তাইনা বল?’

‘ ভালো? হ্যা, আলাদা হয়ে যাওয়ায় আমার বাবার ভালো হয়েছে। আমার মা আর আমার কি ভালো হলো? মায়ের চেহারাও ঠিকঠাক মনে নেই আমার। বাবা যদি মাকে ডিভোর্স না দিতো তাহলে আজ আমার জীবনও অন্যরকম হতো ‘

জারার কথার পৃষ্ঠে উত্তর দিতে পারলো না এলিনা, ওরা হাই স্কুল জীবন থেকে বন্ধু যাওয়ার সুবাদে জারার ভালোমন্দ সব সম্পর্কেই অবগত ও। তবে আজকের দিনে মেয়েটাকে এভাবে মন খারাপ করতে দেখে ওর নিজেরই মনটা খারাপ হয়ে গেলো। ওদিকে, আবরারের শেরওয়ানি চলে এসেছে। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে সেটাকে গায়ের উপর ধরে কেমন লাগছে সেটা দেখে নিচ্ছিলো তখনই আয়েশা এসে বলে….

‘ আর দেখতে হবে না, তোকে বেশ হ্যান্ডসাম লাগছে ‘

‘ থ্যাংক ইউ আপু!’

‘ কীরে, আনন্দে বুঝি আজ কিছু ভালো লাগছে না তোর? সকাল থেকে দেখছি কেমন অস্থির হয়ে আছিস’

‘ অস্থির? কই? আমি নরমাল ভাবেই আছি ‘

‘ তুই বুঝবি না, আমরা তো দেখছি। সেদিন তুই যেভাবে রিয়েক্ট করেছিলি, আমি ভেবেছিলাম তোদের বুঝি ব্রেকআপ হয়ে গেছে। কিন্তু এভাবে হুট করে যে বিয়েও ঠিক হয়ে যাবে ভাবিনি। ভালো সিদ্ধান্ত নিয়েছিস, দ্রুত বিয়ে করে নেওয়াই উত্তম ‘

‘ কিন্তু, তোদের সবার কথা শুনে যদি আব্বুর পছন্দের মেয়েকে বিয়ে করে ফেলতাম তাহলে জারাকে পেতাম না। এ থেকে কি বুঝলি? সবকিছুর একটা নির্দিষ্ট সময় আছে, সঠিক সময়ে সঠিক জিনিস হাতের নাগালে আসে। তার আগে নয় ‘

‘ হ্যা বাবা বুঝেছি, এবার এগুলো রেখে খেতে চল। রাত কয়টা বাজে দেখেছিস? চলে আয়, সবাই অপেক্ষা করছে ‘

‘ তোরা গিয়ে খেতে বস, আমি আসছি ‘

আয়েশা চলে গেলো, আবরার শেরওয়ানি উঠিয়ে রেখে বারান্দায় এলো। ফোন করলো জারাকে। কয়েকবার রিং হওয়ার পর রিসিভ করলো জারা…

‘ ব্যস্ত?’

‘ না, ওই বান্ধবী এসেছে তো। ওর সঙ্গে একটু কথা বলছিলাম। আপনি হঠাৎ এখন ফোন করেছেন?’

‘ হুমমম? আবারো আপনি! এই আপনি তুমি চক্করে মানুষের মনে সন্দেহ তৈরি করতে চাইছো নাকি?’

‘ ওহ ভুলে গেছিলাম, আচ্ছা বাদ দাও। কোনো দরকারে ফোন করেছিলে?’

‘ না, এমনি ফোন করলাম। শুনেছি মেয়েরা বিয়ের আগের দিন নার্ভাস থাকে, জানতে ইচ্ছে হলো তুমিও তেমন কিছু ফিল করছো কিনা ‘

‘ না তবে, গিল্টি ফিল হচ্ছে। তোমার পরিবারের সবাই অনেক ভালো আর আমি তাদের ধোঁকা দিতে যাচ্ছি ‘

‘ তাহলে তো সবার আগে তোমার আমার জন্যে গিল্টি ফিল করা উচিত, এইযে আমার সঙ্গে ছয়টা মাস থাকবে। আমরা একসঙ্গে থাকবো, ঘুরবো, একে অপরের সঙ্গে সব শেয়ার করবো আর এরপর তুমি আমাকে ছেড়ে দেবে। এই অবলা পুরুষটির প্রতি কি আপনাদের একটুও দয়া হচ্ছে না ম্যাডাম?’

‘ আজকে এসব আলাপ থাক? কাল দেখা হবে। শুভ রাত্রি ‘

আবরার কিছু বলারই সুযোগ পেলো না, ওপাশ থেকে কল কেটে দিয়েছে। ফোনটা পকেটে রেখে রেলিং ধরে আকাশপানে তাকালো আবরার, মেঘমুক্ত আকাশের মাঝে তারারা উঁকি দিচ্ছে…

‘ একবার তুমি আমার জীবনে এসো জারা, তারপর তোমার সব ধারণা বদলে দেবো আমি। তুমি আমার জীবনে আসছো নিজের ইচ্ছায় কিন্তু আমার জীবন থেকে তোমাকে এতো সহজে যেতে দেবো না। আবরারের জেদ সম্পর্কে আপনার কোনো ধারণা নেই মিসেস. জারা’
_________________________________

সন্ধ্যায় বিয়ের সময় নির্ধারণ করা হয়েছিলো, ভেন্যুতে ইতিমধ্যে জারার পক্ষের আত্নীয় স্বজনরা চলে এসেছে। আধ ঘন্টা পর বরপক্ষও এসে উপস্থিত হয়। হবু দুলাভাইয়ের কাছ থেকে প্রায় ভালো এমাউন্ট পেয়েছে রায়ান ও জাফা…উপস্থিত সকলে তো বরকে দেখে বেশ প্রশংসা করেছে, অনেকেই এসে আবরারের সঙ্গে বসে হাসি মজাও করছে। আবরার তাদের তালে তাল মিলাচ্ছে ঠিকই তবে ওর চোখ এই মুহূর্তে একজনকেই খুঁজছে। কাজী এসে উপস্থিত হওয়ার পর মেয়েকে ডাকতে বলা হয়। একটু পরে আসমা বেগম নিয়ে এলেন জারাকে। চোখ আটকে গেলো আবরারের, বেবী পিঙ্ক রংয়ের লেহেঙ্গা সঙ্গে গয়না এবং হালকা মেকাপ। এটুকুতেই কি অপরুপা লাগছে জারাকে, ধীর পায়ে হেঁটে আসার সময় স্টেজে বসা অবস্থায় আবরারকে দেখে জারার চোখও আটকেছে বটে। পুরুষটিকে যে আজ মা’রা’ত্ম’ক সুন্দর লাগছে তা অস্বীকার করার উপায় নেই। ঠোঁটের কোণে হাসির রেখা ফুটে জারার, অবশ্য তা কারো নজরে পড়েনি। বসা থেকে উঠে দাঁড়ায় আবরার। স্টেজ থেকে নেমে নিজে গিয়ে হাত ধরে এগিয়ে আনলো তার প্রিয়তমা হবু স্ত্রীকে…এসে বসার পর আবরার জারার একটু কাছে এগিয়ে ফিসফিসিয়ে বললো…

‘ ইউ আর লুকিং বিউটিফুল ‘

হাসলো জারা…

‘ আমারও কি এখন তোমার প্রশংসা করতে হবে?’

‘ দরকার নেই, কারণ আসার সময় তুমি যেভাবে আমার দিকে দেখছিলে তাতেই বোঝা হয়ে গেছে যে আমাকে কতটা হ্যান্ডসাম লাগছে ‘

‘ আমি তাকাইনি ‘

‘ এখন অস্বীকার করে লাভ নেই, আমি দেখেছি। তুমি হেসেছো আমার দিকে তাকিয়ে’

এবার কিছুটা লজ্জা পেলো জারা, ভেবেছিলো এতো মৃদু হাসি কারো নজরে পড়বে না কিন্তু যার জন্য এসেছে তার নজর এড়াতে পারেনি! জারা মনে মনে ভাবলো, লোকটার চশমার পাওয়ার একটু বেশীই নাকি? বরের বাবা ও কনের বাবা বসলেন। সবার উপস্থিতি আরেকবার দেখে নিয়ে আনোয়ার সাহেব বললেন…

‘ সবাই এসে গেছে, কাজী সাহেব এবার আপনি বিয়ে পড়ানো শুরু করতে পারেন ‘

মেয়ের বাবার অনুমতি পেয়েই বিয়ে পড়ানো শুরু করলেন কাজী সাহেব, তখনই হঠাৎ জারার কেমন এক অন্যরকম অনুভূতি হতে শুরু করলো। প্রতিটা মেয়েরই হয়তো বিয়ের কিছু সময় পূর্বের এই মুহূর্তে এমন অনুভূতি হয়। কাজী সাহেবের কথামতো ‘ কবুল ‘ শব্দটি তিনবার উচ্চারণ করার সময় জারার হাত পা হুট করেই যেনো কেমন ঠাণ্ডা হয়ে আসছিলো। নার্ভাস ফিল করছে মেয়েটা? কাল অব্দি নিজেকে ভীষন স্ট্রং ভাবতো জারা, আজ অব্দি অনেক কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে ভয় পায়নি। এমনকি ছয়মাসের জন্যে বিয়ে করার মতো সিদ্ধান্তও নিতে দ্বিধাবোধ করেনি কিন্তু আজ হঠাৎ কি হলো কে জানে, কাবিননামায় সাক্ষর করার সময় চোখদুটো পানিতে ভরে গেলো। কোনরকম নিজেকে সামলে সই করা শেষ করতেই চোখের পানি আর আটকে রাখতে পারলো না, গাল গড়িয়ে পড়তে শুরু করলো। ওর বান্ধবীও ওর কান্না দেখে অবাক, টিস্যু বের করে জারার হাতে দিলো এলিনা। পাশে যারা ছিলো সবাই জারাকে বুঝ দিচ্ছিলো, সেই মুহূর্তে আবরার ওর হাতের ওপর হাত রাখে। অশ্রুসিক্ত নয়নে আবরারের দিকে তাকায় জারা…

‘ ইটস ওকে!’

অসহায়ের মতো আবরারের দিকে কয়েক সেকেন্ড তাকিয়ে নিজের বাবার দিকে তাকালো জারা, বাবাও নীরবে দু ফোঁটা চোখের পানি ফেলেছেন। একজন বাবার জীবনের সবচেয়ে বড় রত্ন তার মেয়ে, আর সেই মেয়ের বিদায়বেলায় প্রায় সব বাবাদেরই চোখ নোনাজলে ভরে যায়। আবরার জারার হাত এখনো ছাড়েনি, মেয়েটার হাত কেমন ঠান্ডা হয়ে আছে। জারাকে কখনও এতো নার্ভাস, এতোটা অসহায় লাগেনি। আবরারের ইচ্ছে হচ্ছে এই মুহূর্তে জারাকে নিজের বক্ষপিঞ্জরে লুকিয়ে নিতে, কিন্তু আপাতত তার উপায় নেই! বিয়ের সকল আনুষ্ঠানিকতা শেষে সদ্য বিবাহিত দম্পতিকে নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন নওয়াজ সাহেব। একমাত্র ভাইয়ের বউকে বেশ যত্ন করে ছোটখাটো বরণের মাধ্যমে ঘরে তুলেছে আয়েশা। এর আগেও এই বাড়িতে একবার এসেছে জারা, কিন্তু আজকে বাড়ির বউ হিসেবে পা রাখলো। এ যেনো এই অন্যরকম অনুভুতি!
______________________________

অনেক রাত হয়ে গেছে, আবরারের ফুপু খালারা ওদের বাড়িতে রয়েছে। পরশু রিসিপশনের অনুষ্ঠান শেষ হলে তারা বাড়ি ফিরবেন। নতুন বউয়ের সঙ্গে অনেক আলাপ করেছে তারা, যদিও জারা বেশ ক্লান্ত ছিলো তবে তাদের বুঝতে দেয়নি। পরে আবরারের মা সবাইকে ঘরে পাঠিয়ে দিয়ে জারাকে বলেন…

‘ আমি একটু কাজে ব্যস্ত ছিলাম জারা, নাহলে ওনাদের আরো আগে পাঠিয়ে দিতাম ঘরে। তুমি তো অনেক ক্লান্ত হয়ে গেছো, বিশ্রাম করো এখন। আয়েশা তোমাদের খাবার ঘরে দিয়ে যাবে’

‘ দিয়ে যেতে হবে না আন্টি, আমি ফ্রেশ হয়ে এসে গিয়ে নিয়ে আসবো ‘

‘ না না, তোমাকে কিচ্ছু করতে হবেনা। এমনিতেই অনেক খাটাখাটনি গেছে আজ তোমার। আর হ্যাঁ, এখনো তো আন্টি বললে চলবে না। শাশুড়িকে মা বা আম্মু বলতে হবে বুঝলে?’

হাসিমুখে জারা জবাব দিলো…

‘ তাহলে মা বলি?’

‘ আচ্ছা! তুমি ফ্রেশ হয়ে নাও, আর কিছু দরকার হলে আমাকে বলো কেমন?’

‘ জ্বি ‘

একটু পরে আয়েশা এসে খাবার দিয়ে গেলো, যাওয়ার সময় বলে গেছে কাল অনেক গল্প করবে। আবরারের মা বোন উভয়ই অনেক ফ্রেন্ডলি, জারার ওনাদের পছন্দ হয়েছে। আয়েশা যাওয়ার পর জারা ফ্রেশ হতে যাবে, তার আগে গয়না আর চুলের ক্লিপগুলো খুলতে হবে। সেগুলো সব খুলে গুছিয়ে রেখে ফ্রেশ হয়ে এসে বসলো বিছানায়। এতক্ষণে একটু শান্তি লাগছে, তোয়ালে দিয়ে হাত মুখ মুছতে মুছতে আবরারের ঘরে এক নজর চোখ বুলিয়ে নিলো। এর আগে যখন এই রুমে এসেছিলো তখন যেসব জিনিস ছিলো এখন সেগুলোর অর্ধেকই নেই, নতুন জিনিস! আর দেয়ালের রংটাও চেঞ্জ, আগে সাদা রংয়ের ছিলো আর এখন হালকা আসমানী রংয়ের! আবরার ঘরে এসেছে মাত্র, এসেই দরজা বন্ধ করে লম্বা নিঃশ্বাস ফেললো। ওর গায়ে টি শার্ট আর ট্রাউজার দেখে জারা প্রশ্ন করলো…

‘ তুমি ড্রেস চেঞ্জ করলে কখন?’

‘ আব্বুর রুমে গিয়ে করেছি, এই রুমে তো একগাদা মানুষ ছিলো। আমার ফুপু আর খালামনিরা কি গল্প করলো তোমার সঙ্গে এতক্ষণ? তাদের জন্যে আমি ঘরে ঢুকতে পারছিলাম না ‘

‘ নতুন বউকে ছেলের আত্মীয় স্বজন যা বলেন তাই বলেছে ‘

‘ নতুন বউকে কি বলে সেটা আমার জানা নেই, কি বলেছে ওনারা তোমাকে?’

জারা প্রথমে বলতে চায়নি, পরে আবরার শোনার জন্যে এতো জোরাজুরি করলো যে ও বলতে বাধ্য হলো…

‘ ওনারা বলেছেন, আমাদের বয়স অনেক হয়ে গেছে তাই জলদি বাচ্চা নিয়ে নিতে ‘

আজকে সবে বিয়ে হয়েছে, এরই মধ্যে বাচ্চার কথা ওঠায় দুজনেই অনেকটা অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে!! আবরার হালকা কেশে বলে ওঠে…

‘ আচ্ছা, এসব বাদ দাও। তোমার কথা বলো, তোমার কি কোনো আমাদের এক রুমে থাকার ব্যাপারে কোনো শর্ত আছে?’

‘ না, ছয় মাস আমরা সাধারণ স্বামী স্ত্রীর মতোই থাকবো। বিয়েটা যেহেতু আইকানুন মেনেই হয়েছে তখন ঐ আলাদা ঘুমানো, এই – সেই শর্ত রাখার মানেই হয় না তাছাড়া আমি যতদিন এই বাড়িতে আছি তোমার স্ত্রী ও এই বাড়ির বৌমা হিসেবে নিজের সব দায়িত্ব পালনের চেষ্টা করবো ‘

‘ ওহ রিয়েলি? সব দায়িত্ব পালন করবে?’

‘ হুমম করবো, আফটার অল তুমি আমাকে অনেক সাহায্য করেছো। তোমার পক্ষ থেকে পার্টনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছো, এবার আমার পালা ‘

‘ তারমানে স্ত্রী হিসেবে স্বামীর প্রতি যে কর্তব্য তোমার কাছে সেটাও কিন্তু পালন করতে হবে মিসেস আবরার, পিছিয়ে যাবেন না তো?’

‘ কোন দায়িত্বের কথা বলছেন?’

‘ ইউ নো হোয়াট আই মিন ‘

প্রথমে জারা বুঝতে পারেনি, ভেবেছিলো অন্যকিছু কিন্তু আবরারের দুষ্টু চাহনি ও বাঁকা হাসি দেখেই বুঝে গেছে কোন দায়িত্বের কথা বলছে। এ অবস্থায় নিজেকে যথেষ্ট স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করছে জারা, কিন্তু হাজার হলেও ও তো একটা মেয়ে। সদ্য বিবাহিত স্বামীর এহেন ইশারা বুঝে হৃদপিন্ডের গতি অস্বাভাবিক হওয়াটা একদম স্বাভাবিক!

চলবে…

[ভুলত্রুটি ক্ষমা সুলভ দৃষ্টিতে দেখবেন…!!]