সায়রে গর্জন পর্ব-১৬+১৭

0
8

#সায়রে_গর্জন
#নীতি_জাহিদ
১৬.
( অনুমতি ব্যতীত কপি করা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ)

পুরোনো বিল্ডিং।কাজ বন্ধ কয়েক বছর। কনস্ট্রাকশন এর কাজ চলছিলো হয়তো, চারপাশে স্যাঁতস্যাঁতে ইট,বালু,রড ছড়ানো ছিটানো। দোতলার গোপন কামরায় উপস্থিত সবাই। এক বালতি পানি ঢালা হলো নোমানের মুখে। কালো পাঞ্জাবি পরনে, হাতা গুটিয়ে মুখোমুখি বসে আছে শাহাদ। ফুলে আছে হাতের পেশীগুলো। তাকে ঘিরে দাঁড়িয়ে আছে পাভেল,হামজাসহ আরো বিশ্বস্ত কয়েকজন। নোমান পিট পিট নয়নে তাকিয়ে দেখে সামনে বসে থাকা মানবকে। অন্তরাত্মা কেঁপে উঠেছে।

– চিনতে পেরেছিস?

কাট কাট প্রশ্নে নোমান এখনো নিশ্চুপ। চোখে মুখে বিস্ময়। ভাবতে পারেনি গত কাল কিডন্যাপ করে এখানে নিয়ে আসা হবে। সাক্ষাৎ মৃত্যুদূত মনে হচ্ছে সাবেক মালিককে। পাভেল একটা থাপ্পড় দিয়ে বলে,

– বসের প্রশ্নের উত্তর দে।

নোমান পাভেলের দিকে কটকট চোখে তাকিয়ে বলে,

– বেশি বাড়ছোস না? তোর এই জায়গায় আমিও ছিলাম।লাত্থি মে*রে নামায় দিছে।

-আরেহ মাদা******দ। তুই তো নে/ম ক/হারাম। যার নূন খাইছোস তারই পিটপিছে ছুরি মা*রোস। তোর কি মনে হয় সবাই তোর মতো।

নোমান অট্টহাসিতে ফেটে পড়েছে।হাসতে হাসতে বলে,

– এমপি সাহেব, আপনি হলফ করে বলেন তো আমি কি সত্যি বেঈমান ছিলাম। আপনার জীবন বাঁচাতে নিজের জীবন বাজি রাখিনি? আপনি বাইরের শত্রু ধরেন,ঘরে তো কাল সাপ পুষেন। দুইটা কাল না*গিনী দুধ কলা দিয়া পালতাছেন সেই কথা কি অগোচরে থেকে যাবে?

শাহাদ পাভেলের দিকে তাকিয়ে বলে,

– ওরে নাটক কম করে আসল কথা ছাড়তে বল।

নোমান হাসি থামিয়ে বলে,

– আপনি আমারে কেনো আটকাইছেন আমি জানি। বাকি সব কথা পরে বলবো আগে একটা পাপ মোচন করি।ভাবীমা নির্দোষ। উনি আমার বয়সে ছোট হলে মাতৃস্থান সমতুল্য। আমি এই পাপের বোঝা আর টানতে পারবোনা। আর বাকি রইলো সেদিনের কথা। আমি আপনার সব কথা রাখবো তবে আমাকে একটা কথা দিতে হবে?

সকলে বিস্ময়কর দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে আছে। শাহাদের উত্তরের অপেক্ষায়। নোমানের দিকে ভ্রু কুঞ্চিত নেত্র নিক্ষেপ করতেই নোমান বলে,

– আমি এখানে থাকবোনা। আমাকে বিদেশ পাঠানোর ব্যবস্থা করেন…

পাভেল প্রবল বে*গে একটা ঘু*ষি দিলো নাকে। তাল হারিয়ে চেয়ারসমেত নিচে পড়ে গেলো নোমান। ক্ষেপে উঠে পাভেলকে গালি ছুড়ে। পাভেল চেঁচিয়ে বলে,

– তোর সাহস হয় কি করে,তুই বসের সামনে শর্ত রাখিস।

নোমান নিচে পড়ন্ত অবস্থায় বলে,

– এজন্য কারো ভালো করতে নাই। কমুইনা কিছু।সর বা**ল। মা*ইরা ফেল আমারে।

শাহাদ পাভেলকে ধমকে বললো,

– এত উত্তেজিত হলে তো চলবেনা। উঠা ওকে। কি বলতে চায় শুন।

হামজা আর পাভেল চেয়ার ধরে উঠালো। নোমানের নাম দিয়ে রক্ত ঝরছে। হামজা একটা টিস্যু ধরলো নোমানের নাকে। এক হাত খুলে দেয়া হলো। নাকে টিস্যু চেপে ধরে বলে,

– বস… অনেক অপরাধ করেছি।মাফ চাইবো। তবে সবচেয়ে বড় অপরাধ করেছি আপনার বোনকে বিয়ে করে। বিদেশ যেতে চেয়েছি কারণ,আমি জানি আমার ছেলেটার ভবিষ্যৎ আপনি চাইলে গুছিয়ে দিতে পারবেন। ওর মা নষ্ট করে ফেলবে। এমন অনেক কিছুই আপনাদের অজানা। আমাকে আর আবিরকে বাইরে পাঠানোর ব্যবস্থা করে দিলে আমি চিরজীবন কৃতজ্ঞ থাকবো। আমার কেউ নেই।না বাবা মা আছে, না ভাইবোন।থাকার মধ্যে ছিলেন আপনি আর পাভেল। গত এক বছর লুকিয়ে বেড়িয়েছি। কার থেকে জানেন?

শাহাদ সহ সকলে আজ বিস্মিত? নিজেকে শান্ত করে শুধায়,

– কার থেকে?

– আপনার বোন। সেদিন ভাবীমা আমাকে নয় পেছন থেকে আপনাকে জড়িয়ে ধরেছিলো। বারান্দায় আপনার জায়গায় আমি ছিলাম। আপনি হয়তো লক্ষ্যই করেন নি শেফালী আমাকে এবং আপনাকে একই পাঞ্জাবি উপহার দিয়েছিলো শিফার জন্মদিন উপলক্ষে। আপনি যে সময়টা বারান্দায় যান শেফালীর প্ল্যান মোতাবেক আমি তখন গিয়েছিলাম। আমাকে একটা তুরুপের তাস হিসেবে ব্যবহার করেছে আপনার বোন। আপনার বোনের আসল প্রেমিক তো বাইরে। আর আমার ছেলেটা ওর ট্রাম্প কার্ড।

শাহাদ বজ্রনাদের মতো চমকে উঠেছে।একেকটি বাক্য কানে কা*টা বিঁধে দিচ্ছে। নোমান পুনরায় বলে,

– সাবধান হয়ে যান বস।সেদিন বাধ্য হয়ে বলেছিলাম আমার আর ভাবীমার সম্পর্ক চলছে। আমার পিছুটান ছিলো একটা।তা নাহয় অন্য কখনো বলব। আমি শেফালী যা বলেছে তাই করেছি। যদি পারেন ভাবীমাকে মাফ করে দিবেন।আমার ছেলেটাকে দেখে রাখবেন। আমি আপনার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করিনি। আপনার কাছে সত্যতা বলব বলেই নিজেকে বাঁচিয়ে রেখেছি। পরদিন আমি কেনো গায়েব হয়ে গেলাম এই প্রশ্ন কেনো কখনো নিজেকে করেন নি? করলে হয়তো উত্তর পেয়ে যেতেন।আমি গায়েব হইনি।আমাকে মেরে ফেলার জন্য উঠিয়ে নেয়া হয়েছিলো।আর সাহায্য করেছিলো আমার ভালোবাসা শেফালী। বলেছিলো মেরে লা*শ গা*য়েব করে দিতে। হয়তো বোন বলে বিশ্বাস করবেন না কিন্তু এটাই বাস্তব।

শাহাদ উঠে দাঁড়ায় চেয়ার থেকে। পাভেল এবং হামজাকে বলে,

– সুরাইয়ার সাথে নোমানের বিয়ের ব্যবস্থা কর। আমি দেখি আবিরকে বের করে আনার সুযোগ পাই কিনা। তিনজনের পাসপোর্ট, ভিসার ব্যবস্থা কর।

পাভেল থতমত খেয়ে বলে,

– কোন সুরাইয়া?

– তোর বোন।

– বস…

– নোমান আর সুরাইয়ার সম্পর্কটা আবির হওয়ার পর হয়েছে আমি সেই খবর রেখেছি। শেফালীর ব্যবহার সম্পর্কে আমি জানতাম। নোমান আজ সুরাইয়ার কথা লুকাবে এটাও জানতাম। যা করার তাড়াতাড়ি কর। শেফালী এত উগ্র কেনো হয়ে উঠেছে আমিও জানতে চাই।আমার রক্ত আমার সাথে বেঈমানী করছে অথচ আমি বেঈমান খুঁজে বেড়াচ্ছি রাস্তায় রাস্তায়।

নোমানের করুণাময় চাহনীতে শাহাদ তাকায়নি। পাভেল মুখের উপর না করতে পারছেনা। বন্ধু হিসেবে নোমান ছিলো সেরা। বছর তিনেক আগে সুরাইয়ার সাথে নোমানের বিয়ের কথাও বলবে ভেবেছিলো। যখন জানতে পারলো শেফালীকে পছন্দ করে নিজেই পিছিয়ে গিয়েছিলো। সুরাইয়া হোস্টেলে থাকে।পরিবার না থাকাতে দুই ভাইবোন মানুষ হয়েছে এতিমখানায়। আচ্ছা সুরাইয়া কি করে নোমানের সাথে যোগাযোগ রাখলো? এসব নিয়ে ভাবনা পরে হবে ভেবে নিজেকে শান্ত করলো পাভেল।

শাহাদ ফিরে চলে আসতে চাইতেই পেছন দিক থেকে ভেসে এলো পরিচিত ডাক,

– ভাইজান…

পেছন ফিরতেই দেখে নোমান তাকিয়ে আছে। পাভেলের দিকে তাকিয়ে বলে,

– ভাই একবার খুলে দেয়,পালাবোনা। আবার বেঁধে দিস।

পাভেল শাহাদের ইশারা পেয়ে খুলে দিতেই নোমান শাহাদের পা জড়িয়ে ধরেছে। শাহাদ অনড়,অটল,প্রস্তরের মত কঠিন হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। নোমান ভাঙা ভাঙা গলায় বলে,

– মাফ করে দেন ভাইজান। অনেক বার সুইসাইড করতে গিয়েছি। আবির আর সুরাইয়ার চেহারা ভাসলেই পারতাম না। আমি একমাত্র যোগাযোগ রেখেছি সুরাইয়ার সাথে। আর আমি জানি মেয়েটা আমাকে এতটাই ভালোবাসে যে আমাকে বাঁচাতে আপনাকে আমার খবর দিয়েছে।হয়তো একটা বিশ্বাস ছিলো আপনি আমার ক্ষতি করবেন না। তবে আপনাদের আজ যা বললাম তা কেউ জানেনা। ভাবীমা পবিত্র ভাইজান।

গমগমে গলায় শাহাদ বললো,

– আমি জানি। তার চরিত্রে আমি নিজেও দাগ লাগাই নি,কাউকে লাগাতেও দিব না।

হামজা তৎক্ষনাৎ প্রশ্ন করলো,

– তাহলে এত দূরত্ব কেনো বস।

– সেই কৈফিয়ত কি তোকে দিব?

– স্যরি বস।

____

হাসপাতালের করিডরে বসেই দেখতে পাচ্ছে আপনজনদের আর্তনাদ। কত মানুষের কত আপনজন হারিয়ে গিয়েছে। সামনে স্ট্রেচারে করে নিয়ে যাচ্ছে বাবার লা*শ। ছেলে মেয়ে ব্যাকুল,দিশেহারা। বন্ধুর সাথে রক্ত দিতে এসেছে লিমন। সাদা কাপড়ে ঢেকে রাখা মানুষটাকে দেখে মনে পড়ে গেলো বাবার কথা। মাথা নত করে বসে আছে।সন্তানদের আহাজারি সহ্য হচ্ছে না। লিমন উঠে দাঁড়িয়ে চলে যায় কাউন্টারে। এক পাশে দাঁড়ায়। আচমকা চোখ পড়ে গলায় স্টেথো চাপানো নারীর দিকে। ঠোঁটে ফুটে উঠলো উজ্জ্বল হাসি। ছুটে আসলো রমনীর দিকে।একেবারে সামনে দাঁড়িয়ে সালাম দিতেই রমনী চমকে উঠলো। বিস্মিত নয়নে প্রশ্ন ছুড়লো,

– তুমি এখানে?

– রক্ত দিতে এসেছি।

– কাকে?

– আমার বন্ধুর খালাকে। বেবি হবে তো তাই।

– ওহ, কত নাম্বার বেডের পেশেন্ট?

– তাতো জানিনা।

– হুম, ঠিক আছে দাও আমি গেলাম।

– এমা এটা কেমন অপমান,আপনাদের বাড়িতে এসেছি নাস্তা করাবেন না?

– এটা হাসপাতাল, আমোদ ফূর্তির জায়গা নয়।

– স্যরি। একটা কথা বলি?

– আমার ব্লাড ফোবিয়া আছে, এই প্রথম দিব। বন্ধু জোর করাতে নিষেধ করতে পারিনি। আপনি থাকবেন একটু পাশে।

– নাহ।

– আপনার হাতের কি অবস্থা?

– ভালো।

– রেস্টে থাকতে পারতেন। ভালো হত।

– অহেতুক কারণে সময় নষ্ট করিনা আমি,আসি।

হনহন করে চলে গেলো তাহি। লিমন মন খারাপ করে বেঞ্চিতে বসলো। প্রকৃতপক্ষে ভয় পাচ্ছে। ভঅয়কে জয় করতে কিছুক্ষণ তাহির সাথে ভাব জমাতে চাইলো। সুঁই দেখলেই ভয় চেপে ধরে। সেল ফোন বের করে ফোন দিলো উপর মহলে,

– ভাইজান…

– কি হয়েছে?

– ব্লাড দিতে আসছি।

– তো?

– ভয় লাগছে?

– এড্রেস টেক্সট করো।

লিমন ফোনটা কে*টে দিয়ে সাথে সাথে ঠিকানা পাঠিয়ে দিলো।জানতো এই মানুষটা না করেনা। হয়তো একটা ব্যবস্থা করবে ভাইয়ের জন্য। কিছুটা সময় ব্যয় হতেই চলে আসে শাহাদ। শরীরে পানি। টানা সকাল থেকে বৃষ্টি হচ্ছে। কিন্তু শাহাদের তো ভেজার কথা নয়? গাড়ি করে এলে বৃষ্টি পেল কি করে? শাহাদ সামনে আসতেই পিঠ সোজা করে দাঁড়িয়ে বলে উঠলো,

– ভাইজান ভিজে গিয়েছেন তো?

– ব্যাপার না। রিকশায় এসেছি তাই ভিজে গিয়েছি। চলো আগের কাজ শেষ করো।

– রিকশায় কেনো ভাইজান?

– গাড়ি দিয়ে পাভেলকে একটা কাজে পাঠিয়েছি। এত কথা না বাড়িয়ে চলো।আবার বের হতে হবে আমাকে।

এই ঝড় বৃষ্টি মাথায় করে লিমনের জন্য চলে আসা মানুষটাই প্রকৃত মানুষ, লিমনের কাছে তার আদর্শ ভাই,অভিভাবক। শাহাদ লিমনের হাত ধরলো ছোট বাচ্চাদের মতো। যেনো বাবা আকড়ে ধরেছে সন্তানকে। লিমনের সাহায্য নিয়ে জানতে পারলো কেবিন কোনটা।নার্সের পিছু নিলো।শাহাদের মুখে মাস্ক থাকাতে হাসপাতালে হৈ চৈ হয়নি।নতুবা এতক্ষনে একটা লঙ্কাকাণ্ড বেঁধে যেত। রক্ত নেয়ার সময় দেখে প্যাশেন্ট ডাক্তার তাহির। তাহি শাহাদকে দেখে সালাম দিয়ে এক পাশে দাঁড়ালো। লিমন ইঞ্জেকশন দেখে ঠোঁট উলটে ফেললো।এক্ষুনি কেঁদে দিবে। শাহাদের দিকে ছলছল চোখে তাকাতেই শাহাদ লিমনের পাশে দাঁড়িয়ে মাথা চেপে আকড়ে ধরলো। লিমন আরেক হাত দিয়ে ভাইয়ের কোমড় চেপে ধরেছে। তাহি হতবাক হয়ে দেখছে। নার্স ভ্যাবাচেকা খেয়ে শাহাদের দিকে তাকিয়ে বলে,

– স্যার পুশ করবো।

– জ্বি করুন।

তাহি ইশারা দিতেই পুশ করলো। লিমনের চোখ দিয়ে অশ্রু ঝরছে। শাহাদ তাকাতেই চোখ বুঁজলো। শাহাদ তাহির দিকে তাকিয়ে বললো,

– ও সুঁই,ব্লা*ড দেখলে ভয় পায়।মারাত্মক ফোবিয়া আছে।নাহয় আমি কাজ ফেলে আসতাম না। আমি চাইলেই হয়তো দিতে মানা করতে পারতাম কিন্তু এই ভয়টা কাটিয়ে উঠুক এটাই চাই।তাই নিজেই চলে এসেছি। নেক্সট টাইম আর ভয় পাবে?

লিমন দু পাশে মাথা নাড়িয়ে বলে,

– ভাইজান ভয় পেয়ে কাঁদিনি। মনে হয়েছে আমার পাশে আব্বু দাঁড়িয়ে আছে। আব্বুর কথা মনে পড়ে গিয়েছে।

মানুষটাকে যতই ইমোশনাল কথা বলুক মানুষটা পাথরের মত থাকে। অকস্মাৎ তাহির দিকে চোখ যেতেই লক্ষ্য করলো মেয়েটা চোখ মুছছে। নিজেকে স্থির করতে পারছেনা। শাহাদ আশ্বাস দিয়ে বলে,

– তাহি বাইরে থেকে ফ্রেশ হয়ে আয়। ডেলিভারির মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজে নিজেকে নিয়োজিত করেছিস। ঘাবড়ালে চলবেনা।

কম্পিত গলায় বললো,

– জ্বিইই ভাইজান…

লিমনের দিকে তাকাতেই দেখে ছেলেটা চোখ মুখ বন্ধ করে শুয়ে আছে। এভাবেই একসময় রাশেদের পাশে বসে থাকতো। ইঞ্জেকশন দেখলেই হাসপাতাল মাথায় করে তুলতো। ভয়ে চিৎকার চেঁচামেচি শুরু করে দিত।তাহি একপাশে থাকতো,অন্যপাশে শাহাদ। আজ হয়তো সেই ঘটনার কথা মনে করিয়ে দিলো প্রকৃতি মেয়েটাকে। না চাইতেই আমরা বারংবার অপছন্দের, অপ্রস্তুত দৃশ্যের মুখোমুখি হয়ে যাই। হয়তো প্রকৃতির ইশারা অন্যদিকে।

___

নিকষ কালো রাত্রি। ঘড়িতে সাড়ে এগারোটা। হাসপাতালের মর্গের পাশের বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে তাহি। এই মুহুর্তে এই জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকাটা সাধারণ মানুষের জন্য হয়তো ভীতিকর কিন্তু তাহির কাছে ব্যাপারটা স্বাভাবিক। এখানে কর্মরত বেশিরভাগ ডাক্তারই জানেন সেকথা। রাত হলেই তাহি এই বারান্দায় দাঁড়ায়। এখানেই রাখা হয়েছিলো রাশেদের লা*শ। প্রায় সাতঘন্টা ছিলো। পোস্টমর্টেম করতে দেয়নি শাহাদ। শাহাদের কক্সবাজার থেকে আসতে আরো দেরি হলে হয়তো রাশেদের লা*শ সেদিন ও ছাড়া পেতনা। কতটা দায়িত্বজ্ঞানহীন হলে কমান্ডারের লা*শ শিপ থেকে ঢাকা পাঠানো হয় নিরাপত্তাহীন ভাবে। প্রাইভেট হাসপাতাল আপনজন, সম্মান চেনে না। তাহির মনে হয় এখানেই রাশেদ আছে,থাকবে।

– পুরোনো স্মৃতি ভুলার চেষ্টা কর ছুটকি। যত মনে রাখবি তত কষ্ট পাবি।

পেছন ফিরে শাহাদকে দেখে টইটই করা অশ্রুধারা ছেড়ে দিয়েছে নেত্রযুগল। ক্রন্দনরত গলায় বললো,

– ভাইজান আমি কি নিয়ে বাঁচি বলোতো। আমার তো সব ছিলো মানুষটা। এত সুখ আমার কপালে কেনো সইলোনা। কেনো ওরা কেড়ে নিলো আমার প্রাণ।এখন তো আমি জীবন্ত লা*শ।

– রাশেদের চিঠিটা পড়িস। তোকে এভাবে ও কখনোই চায়নি। তোকে ভালো রাখতেই ছেড়ে চলে গেলো।তুই যদি ভালো না থাকিস হবে?

– ভাইজান সত্যি কি ছেড়ে চলে গিয়েছিলো? নাকি বাধ্য হয়েছিলো?

– জানিনা। বাদ দেয় এসব। আমাকে বাসায় যেতে হবে। লিমনকে নিয়ে যাচ্ছি। তুই ও বাসায় যা।বিশ্রাম নে।

শাহাদ একা ছেড়ে দিলো তাহিকে। এই অবস্থায় এই মেয়েকে সামলানো বড্ড কঠিন।নিরব থেকে ঠিক হয়ে যাবে। মাঝে মাঝে একা থাকা যথেষ্ট ভালো। মন শক্ত হয়।

___

আধঘন্টার মাঝে দশবার ফোন দিয়েছে শাহাদকে। একবার ও রিসিভ করেনি। মনে সন্দেহের উদ্রেক হলো। শেফালীর ফোন ও বন্ধ। ও বাড়ির সাথে যোগাযোগ বন্ধ সম্পূর্ণভাবে। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে ঘড়িতে রাত সাড়ে এগারোটা। ব্যাগ কাঁধে নিয়ে বেরিয়ে পড়লো ওই বাড়ির উদ্দেশ্যে।

রুমে ঢুকে ফ্রেশ হয়ে চুপ করে বিছানায় বসে আছে শাহাদ। লিমনকে যত্ন করে খাওয়াচ্ছে সুলতানা কবির। বাইরে থেকে আসার পর মাথা কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে। দিয়া নির্দোষ ব্যাপারটা শাহাদ মেনে নিতে পারছেনা। বার বার মনে হচ্ছে কেনো একটা বছর বিনা দোষে শাস্তি পেলো এই মেয়ে? অস্বস্তি কাজ করছে ভেতরে। বারান্দার শো শো করা বাতাসে চোখ বুজে এলো। ভাবনায় আসে সেদিনের কথা গুলো, যা দিয়াই বলেছিলো,

– উনার বয়স অনেক বেশি। আমি কখনোই চাইনি উনার মত কাউকে।

আর শাহাদ দাঁড়ায় নি সেদিন। এই কথা গুলোর বাকিটুকু কেনো এত বছর জানার আগ্রহ হয়নি। তাহি আজ সেই ভুল ভেঙে দিয়েছে। তাহি,শেফালী,মনি সকলে গল্প করছিলো তখনই মনি প্রশ্ন করেছিলো,

– শাহাদ ভাইয়ের বয়স তো অনেক বেশি। উনার সাথে আপনার এডজাস্ট হতে কষ্ট হয়না?

– উনার বয়স অনেক বেশি। আমি কখনোই চাইনি উনার মত কাউকে।তবে এখন মনে হয় উনি আমার জন্য শ্রেষ্ঠ জীবনসঙ্গী।আমাকে উনার চেয়ে ভালো কেউ সামলাতে পারেনা,পারবে ও না। আমি উনাকে পেয়ে ধন্য আপু।

মানুষ মাত্রই ভুল তবে শাহাদের জানা নেই এই ভুল কি করে শুধরাবে! সকলে ভেবেছে নোমানের ঘটনায় শাহাদ-দিয়ার দূরত্ব।দিয়া বার বার নিজেকে নির্দোষ বলেছে। শাহাদের মন বলেছে দিয়া নিরপরাধ কিন্তু ওই যে, এতদিন ভেবে এসেছে দিয়া শাহাদকে মন থেকে চায়নি। হয়তো কোনো সুদর্শন কাউকে চেয়েছে যার বয়স নিজের সাথে মিলে। দিয়ার রূপে মজে যেকেউ তাকে আপন করে নিতে দ্বিধাবোধ করতোনা। আর সেই চোখ ধাঁধানো রূপটাই একসময় অসহ্যকর হয়ে উঠে শাহাদের জন্য। এত চিন্তা,এত চাপ আজ মাথায় প্রচন্ড প্রদাহ সৃষ্টি করেছে। একটা গভীর পীড়া এই রহস্য ইচ্ছে করেই ভেদ করতে চাইতোনা। ইচ্ছে করে পুষে রাখা দূরত্বটা ঘুঁচে ফেলতে মন চায়।দরজায় কড়া নড়ার আওয়াজে রুমের বাতি জ্বালিয়ে দেখে শিফা দাঁড়িয়ে।

– কিছু বলবে?

– ভাইজান মনি আপু এসেছে?

শাহাদ ভ্রু কুঞ্চিত করে প্রশ্ন করে,

– কেনো?

-জানিনা।

– যাও আসছি।

হাতের মুঠোফোনে দেখে বারোটা পনেরো। ডাইনিং পর্যন্ত আসতেই দেখতে পেলো লিমন,মা,শিফা এবং মনি। মনি শাহাদকে সালাম দিলো। পানির গ্লাসে পানি ঢেলে শাহাদ তিন ঢোকে পান করলো। সালাম নিয়ে শিফাকে বললো,

– তোমার ভাবীজানকে ডেকে আনো।

শেহজার কান্না শুনতে পাচ্ছে। রুম থেকে ভেসে আসছে সেই আওয়াজ।আজ মেয়েকে দেখতেই পায়নি একটিবারের জন্য। দিয়া ফুলো ফুলো চোখ, গাল নিয়ে বেরিয়ে আসে শেহজাকে নিয়ে। মনির দিকে তাকিয়ে মেজাজ খারাপ হলেও নিজেকে সংযত করে একপাশে দাঁড়ায়। শেহজা ঝাঁপিয়ে পড়ে বাবার কোলে। মেয়েকে আদর করছে শাহাদ। বাবার কোলে আসতে না আসতেই শান্ত শেহজা। সুলতানা কবিরের দিকে তাকিয়ে বললো,

– আম্মু আপনি মনির আপ্যায়ন করা শেষ করেছেন কি?

সুলতানা কবির চমকালেন। এভাবে তো শাহাদ কথা বলে না। তবুও জানালেন,

– কিসের আপ্যায়ন, মেয়েটা মাত্র আসলো।ওর নাকি বাসায় মন টিকছেনা তাই চলে এলো।

– বুঝলাম।আচ্ছা মনিকা থাক। আমার সকালে উঠতে হবে।আমি যাই।

শেহজাকে নিয়ে রুমের পথে পা বাড়ালো। থমকে গিয়ে পেছন ফিরে দিয়ার দিকে তাকিয়ে উচ্চ বাচ্যে বললো,

– দাঁড়িয়ে আছো কেনো? নিমন্ত্রণ পত্র দিতে হবে?

– এই তো যাচ্ছি।

– কোথায়?

– জ্বি… আমার রুমে।

শাহাদ প্রচন্ড বিরক্ত হয়ে পিছিয়ে এসে দিয়ার হাত নিজের মুষ্টিতে নিয়ে হাঁটা ধরলো রুমে। দিয়া চমকে উঠলো।শিফা,সুলতানা কবির বিস্মিত। এ যেন সর্বোচ্চ আশ্চর্যজনক ঘটনা শতাব্দীর। শাহাদ ইমরোজ দিয়াকে নিজের কামরায় নিয়ে যাচ্ছে। শিফা মায়ের দিকে তাকিয়ে বলে,

– আম্মু আমি যা দেখলাম,আপনি ও কি তাই দেখলেন?

সুলতানা কবির মুচকি হেসে মাথা নেড়ে বলে,

– আল্লাহ ভালো রাখুন আমার সন্তানদের।

মনি হেসে বলে উঠলো,

– শাহাদ ভাইয়ের আবার কি, দেখবেন এক্ষুনি বের করে দিবে।

তৎক্ষনাৎ রুমের দরজা খুলে শাহাদ বেরিয়ে আসলো। সকলের সামনে দিয়ে ফ্রিজ খুলে পেস্ট্রির বক্সটা বের করে রুমের দিকে এগিয়ে যাওয়ার সময় শিফাকে বললো,

– তোমার আর লিমনের চকলেট ফ্লেভার আছে খেয়ে নিও। এটা তোমার ভাবীজানের রেড ভেলভেট।

চোখে মুখে উচ্ছ্বাস নিয়ে ভাইকে জড়িয়ে ধরে বলে,

– ভাইজান ইউ আর গ্রেট, আমার আজ খুব খেতে মন চেয়েছিলো।

শাহাদ মুখে তাচ্ছিল্যভরা হাসি দিয়ে বলে,

– মিষ্টি মুখ করো, আম্মু আপনিও খাবেন।আজ অনেক বড় সমস্যার সমাধান হলো। শুধু দোয়া করবেন কোনো ভূত- পেত্নীর কুনজর যেন না লাগে। আর শেফালীরে একটু বেশি করে দিবেন যেনো সাঙ্গু পাঙ্গু নিয়ে শোধরায়,নতুবা আজ যে থাপ্পড় ওর গালে দিয়েছি দুদিন পর কার না কার গালে পড়বে বলা যায়না। শুভ রাত্রি।

তখনি সুলতানা কবির এগিয়ে এসে ছেলের মাথায় ফুঁ দিয়ে বলে উঠলেন,

– বিসমিল্লাহি আরকিকা মিন কুল্লি শাইয়িন ইউজিকা মিন শাররি কুললি নাফসিন আউ আইনিন হাসিদিন, আল্লাহু ইয়াশফিকা বিসমিল্লাহি আরকিকা। (আল্লাহর নামে আপনাকে ফুঁ দিচ্ছি; যেসব জিনিস আপনাকে কষ্ট দেয়, সেসব প্রাণের অনিষ্ট কিংবা হিংসুকের বদ নজর থেকে আল্লাহ আপনাকে শিফা দিন; আল্লাহর নামে আপনাকে ফুঁ দিচ্ছি।)

শিফা বলে উঠলো,

-আমিন।

শাহাদের যাওয়ার দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে চেয়ে রইলো মনি। মনে হলো যেন কথাগুলো ওকেই বলা।তবে শেফালীকে আজ মে*রেছে কেনো? তাই শেফালীর ফোন বন্ধ? রহস্য উদঘাটন করতে হবে তো! নতুন করে প্ল্যান করতে হবে। শেফালীর সাথে দেখা করাটা ভীষণ ভাবে জরুরি হয়ে পড়েছে। হয়তো সব উত্তর পেয়ে যাবে সেখানে।

চলবে…

#সায়রে_গর্জন
#নীতি_জাহিদ
১৭.
( অনুমতি ব্যতীত কপি করা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ)

রক্তে নীল কালশিটে পড়েছে নাকের পাশটাতে, চোখ মুখ অনেকটাই ফোলা।এত ঘটনা ঘটে গেলো অথচ বিশ্বাস আসছেনা।বিশ্বাস বড্ড ভয়ংকর জিনিস। যেখানে বিশ্বাস দৃঢ় সেখানে কোনো যুক্তি ঠেকে আর, দূর্বল বিশ্বাস স্থানে কখনো স্থায়িত্ব আসেনা। নোমানকে অনেকটা নিরাপত্তা দিয়েই পাভেলসহ নিজের উত্তরার ফ্ল্যাটে পাঠিয়েছে শাহাদ। পাভেলের মনে অজস্র প্রশ্ন। করবে কি করবে না ভেবে নোমানের দিকে লক্ষ্য করতেই দেখলো নোমান টেবিলে রাখা কেকটার একটু একটু করে খাচ্ছে। খেতেও কত সংকোচ। প্রথমে নোমানই বলে উঠলো,

– জানিস পাভেল, বস আমারে নিজের থেকেও বেশি বিশ্বাস করতো। আমি বসের বিশ্বাস রাখতে পারিনাই। সবাই আমারে দোষ দেয় অথচ কেউ শেফালীর দোষ টা দেখলো না। এই মেয়েটা আমারে যে কেমনে ঠকাইলো…

– এত প্রশ্ন করি নাই, সুরাইয়ারে কেমনে পটাইলি?

– পটানো শব্দটা বাজে শুনায়।সুরাইয়া অনেক পবিত্র। ওর সাথে আমার সম্পর্ক হয় চার বছর আগে। কলেজ থেকে আসার সময় শেফালীকে একটা ক্যাফেতে দেখতে পায় অন্য পুরুষ নিয়ে ঢুকতে।রাস্তায় দেখা হওয়ার পর আমাকে জানিয়েছিলো। সেদিনের পর সুরাইয়া প্রায় নজর রেখেছিলো সেই ক্যাফেতে।শেফালী প্রায় যেত। বিশ্বাস কর আমি সুরাইয়াকে ধমকেছি,বকেছি, অপমানও করেছি শেফালীকে নিয়ে এসব বলাতে। যেদিন নিজের চোখে দেখলাম সেদিন নিজের উপরই আস্থা উঠে গেলো। অনেকটা রাগে জেদে জড়িয়ে পড়ি সুরাইয়ার সাথে। বসকে বলার সাহস হয়নি। সময় গড়ায়। অপেক্ষা করি শেফালীকে হাতে নাতে ধরার কিন্তু তার আগেই আমি ধরা পড়ে যাই ওর কাছে। শেফালী সে কথা জেনে শুরু করে ব্ল্যাকমেইল করা। কত টাকা যে সরিয়েছি ভাইজানের কাছ থেকে শেফালীর জন্য। ওর কথাতেই সেদিন ভাবীমার সাথে নিজেকে জড়িয়েছে। কিডন্যাপ করা হলে পালিয়ে আসি। পালিয়ে এসে বড্ড ভুল করেছি। অনুশোচনাতে জীবন আমার অতিষ্ঠ। দু দু বার সু*ইসা/ইড কমিট করতে গিয়েছিলাম।প্রথম বার আমাকে সুরাইয়া বাঁচিয়েছিলো, দ্বিতীয় বার ওর মুখটা ভেসে উঠে চোখের সামনে। বসের একাউন্ট থেকে এত টাকা আত্নসাৎ করার পর আর সাহস হয়নি মানুষটার মুখোমুখি হয়ে সাফাই দেয়ার।তবুও চেয়েছিলাম কিন্তু চারদিকে শেফালী শত্রু দিয়ে ঘিরে রেখেছে।আমাকে পেলেই যেন শ্যুট করে।

পাভেল নিরব প্রশ্ন করলো,

– সুরাইয়াকে চাইলেই তো বিয়ে করতে পারতি করলি না কেনো?

– তোকে আর বসকে কে লাগবে ভরসাযোগ্য স্থান হিসেবে। সুরাইয়া তোকে ছাড়া বিয়ে করবে ভাবলি কি করে?

পাভেল নিরুত্তর।আরেকবার বিশ্বাস করতে মন টানছে। প্রতিটি মানুষই দ্বিতীয়বার সুযোগ আশা করে, নোমান কেকের দিকে দৃষ্টি ফেলে বসে আছে। শাহাদ আজ সবাইকে কেক কিনে দিয়েছে।পাভেল কিছুটা অবাক হয়ে ভাবে, বস কেক ও খাওয়ায় তাও আবার সকলের পছন্দের ফ্লেভার। কাঁধে পাভেলের হাত পড়াতে সেদিকে তাকালো। পাভেল মুখোমুখি চেয়ার টেনে বসে বললো,

– শেফালীকে আগে ডিভোর্স দিতে হবে সেটার কি করবি? ও তো দিবেনা।

– জানিনা।

কথা না বাড়িয়ে বাইরে থেকে আনা খাবার দুজনই খেয়ে নেয়। রাত একটা পঞ্চাশ, শাহাদের ফোন পেয়ে ঘাবড়ে গেলো দুজনই। নোমান তো থতমত খেয়ে বলেই ফেললো,

– দোস্ত আবার কি হইছে?

– চুপ থাক,আগে দেখি রিসিভ করে।

– হ্যালো বস আসসালামু আলাইকুম।

ও পাশ থেকে প্রতিউত্তর আসলো। কথা হচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ। পাভেলের মুখ ভঙ্গি গম্ভীর। খুব মনোযোগপূর্ণ কোনো আদেশ পালন করার নির্দেশ এসেছে। নোমান ঘনঘন ঢোক গিলছে। পাভেল ফোনটা রেখে নোমানের দিকে তাকিয়ে বলে,

– বস বলছে আগামীকাল এখানে বিয়ে পড়াতে।

– কিভাবে সম্ভব?

– আমিও অবাক। আচ্ছা দেখা যাক। বস এমন কোনো ডিসিশন নিবেনা যাতে আমাদের ক্ষতি আছে।

– আল্লাহ ভরসা।

___

রুমের পরিবেশ থমথমে। দিয়া বসে আছে শাহাদের বিছানায়। শেহজা ঘুমাচ্ছে। রুমে আসার পর থেকে চারপাশ নিস্তব্ধ। শাহাদ বারান্দায়। একবারের জন্য ও রুমমুখী হয়নি। দিয়া নিজেও বুঝতে পারছেনা আজ কি হয়েছে। সকালের ব্যাপারের পর শাহীন বাসা থেকে বেরিয়ে গিয়েছে। মাকে ফোন দিয়ে জানিয়েছে প্রয়োজন হলে বাসায় আসবে। লজ্জ্বায় দিয়ার মুখোমুখি হতে চাইছেনা। ভাইয়ের মত একজন শ্রদ্ধাভাজন মানুষের চরিত্রকে কিভাবে দূষিত করতে পারলো শেফালী। যেই মেয়েকে পছন্দ করে সেই মেয়ে যদি শুনে এমন কথা পরিবারে কি আসবে তবে? ঘন্টার কাঁ/টা পেরিয়ে তিনটে। রুমের মাঝে নিভু নিভু করে ঝাঁড়বাতিটা জ্ব/লছে। এসির কনকনে বাতাস গায়ে লাগছে। রিমোট টা পেয়ে টেম্পারেচার বাইশ করে দিলো। কোথায় শোয়া উচিত বুঝতে পারছেনা। ফোস করে দম ফেলে উঠে দাঁড়ায়, ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে একটা টিস্যু নিয়ে মুখটা মুছে নিলো। রেড ভেলভেট কেকটা টেবিলের উপর। অনেক দিন পর দেখে লোভ সামলাতে পারলো না। এছাড়া মানুষটা তো বলেই গেলে খেয়ে নিতে। সেই যে গেলো আর রুমে আসলো না। কি বলে ডাকবে তাও বুঝতে পারছেনা। সোফায় বসে প্লেট টা হাতে নিলো। খাওয়া শেষ করতেই মানুষটা বারান্দার দরজা আটকে ভেতরে আসলো। এসে সরাসরি মেঝেতে বসে পড়লো দিয়ার পায়ের কাছে। এমতাবস্থায় বিহবল হয়ে দিয়া দাঁড়াতে চাইলে হাত ধরে বসিয়ে দেয়। দিয়া হাতের প্লেট টা টেবিলে রেখে শুকনো ঢোক গিলছে।যদি জানতে চায় সকালে শাহীনের সাথে কি কথা হয়েছে! তবে কি উত্তর দিবে? শাহীন তো এভাবে কথাটা বলতে বলেনি শাহাদকে। উনি কি বিশ্বাস করবে সত্যি টা বললে। দিয়া ভীতসন্ত্রস্ত নেত্রে অপলক তাকিয়ে আছে। শাহাদ জোরে জোরে দুবার শ্বাস টেনে দিয়ার দুহাত ধরে দিয়ার চোখের দিকে তাকালো। এভাবে মানুষটা মেঝেতে বসে আছে দেখতে কেমন দৃষ্টিকটু লাগছে। দিয়ার দুহাত নিজের মুষ্টি বদ্ধ করে বললো,

– অপরাধবিহীন সাজা গত দু বছর ভোগ করার জন্য এই অযোগ্য,অসহিষ্ণু স্বামীকে কেমন শাস্তি দেয়া উচিত?

দিয়া বিস্ময়কর দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো। হৃদকম্পন বেড়ে গিয়েছে। উনি কি বলছে আবোলতাবোল। তোতলানো স্বরে বললো,

– মা আ আ নে…

– যেভাবে,যে উপায়ে,যে নিয়মে ক্ষমা চাইলে মঞ্জুর হবে, ঠিক সেই নিয়মে চাইবো। আদেশ করো।

ভুল শুনলো কি? শাহাদ ইমরোজ বলেছে তাকে আদেশ করতে!পূর্বের মত বাক্যহীনভাবে বসে আছে দিয়ার পায়ের কাছে।ঘটনা এতটুকু আঁচ করা যাচ্ছে হয়তো শাহাদ কিছু জানতে পেরেছে। দিয়ার দু হাত কাছে নিয়ে নিজের অধর ছোঁয়ালো। ভাষা হারিয়ে দিয়া স্তব্ধ। শব্দহীন দিয়া যুদ্ধ করছে শব্দের সাথে, অনুনয়-বিনয় জানাচ্ছে ভোকাল কর্ডকে যেন শব্দ উচ্চারনে সহযোগিতা করে। ধীর গলায় বললো,

– সময় হারিয়েছি আমি, বাবাজান-আম্মিজানকে হারিয়েছি,দাদাজানকে হারিয়েছি, আর কিছু হারানোর শক্তি সামর্থ্য কোনোটাই নেই। যেভাবে বসে আছেন আমার পায়ের সামনে আমার গুনাহের খাতা ভারী করছেন তো। উঠুন। বাকি জীবনে মানসিক যন্ত্রণাটা না হয় পুষিয়ে দেয়ার মতো শাস্তি আপনার জন্য আরোপ করা হলো।

দিয়ার হাত ছেড়ে দিলো শাহাদ। মাথা তুলছেনা দেখে দিয়া আঁই ঢাঁই করে সাহস নিয়ে শাহাদের মুখটা ধরলো।নরম হস্তযুগলের স্পর্শ পেয়ে মাথা তুললো মানুষটা। আঁৎকে উঠলো দিয়া। দু চোখের বর্ন রক্তিম।

প্রস্তর কঠিন মানব উঠে দাঁড়ায় বিনা বাক্য ব্যয়ে। অনুসরন করে দিয়াও দাঁড়িয়ে পড়ে। সবটুকু দূরত্ব কমিয়ে এগিয়ে এলো শাহাদ। সবচেয়ে সুন্দর, মনোমুগ্ধকর, আবেগপ্রবণ ঘটনাটি আজ ঘটে গিয়েছে। যার মাঝে ছিলো অশেষ রহমতে পূর্ণ ভালোবাসা। শাহাদ ইমরোজ তার একমাত্র সহধর্মিণী ফারহানা মেহতাব দিয়াকে জড়িয়ে ধরে বুকে আগলে নিলেন। উষ্ণ অধর ছোঁয়ালেন প্রণয়িনীর ললাটে। কখনো কাঁপে নি ওষ্ঠ।অথচ আজ নিজের নারীকে ছুঁতেই অধর কম্পিত হলো। গভীর ভাবে জড়িয়ে ধরেছে নিজস্ব তনয়াকে। প্রশান্ত হলো ভেতরে তোলপাড় করা করা হৃদয়স্রোট। এই মাত্র কিছু কাট কাট শব্দ উচ্চারিত হলো মানুষটার মুখ থেকে,

– শাহাদই শুরু শাহাদই শেষ। রসকষহীন মানবের প্রশস্ত বক্ষ যেন বিদেশীনির শেষ আশ্রয়স্থল হয়।

দিয়া মিষ্টি হাসি দিলো। অনেকটাই স্পষ্ট হলো, এই মানুষটার কাছে কোনো তথ্যই লুকানো রইলোনা। দিয়া দুটো দেশের নাগরিক এই কথা তিনজন মানুষ ছাড়া বাকিদের অজানা ছিলো। ইরানী মায়ের ইরানী কন্যা ফারহানা মেহতাব দিয়া। মুরাদ বরাবর চেয়েছিলো মেয়েকে লুকিয়ে রাখতে। মুরাদের মৃত্যুতে সেই ভার পড়ে হামিদ মজুমদারের উপর। মুরাদ,আমিরা এবং মোতালেব মজুমদার ব্যতিত এই তথ্য সকলের অজানা।কোলে তুলে নিলো দিয়াকে। বিছানায় শুইয়ে দিয়ে বুকে জড়িয়ে নিলো। শক্ত,পোক্ত,হাট্টা কাট্টা মানুষটা এতটা ভালোবাসার ধরনও অন্যদের চেয়ে ভিন্ন।আকস্মিক এতদিনের দূরত্ব এভাবে ঘুঁচবে কল্পনাতীত ছিলো। দিয়া ভাবে বাবাজানের সেই কথা,

– তুমি যদি পাপহীন,বিনয়ী এবং স্বচ্ছ হও তবে মহান রব তোমার ঝুলিতে থাকা তোমার প্রাপ্য অংশ টুকু বুঝিয়ে দিবেন। ধৈর্য্য ধরবে। আল্লাহ পছন্দ করেন ধৈর্য্যশীলদের।

মনে মনে আওড়ায়,

– বাবাজান তুমি সত্য ছিলে। মহান রব আমার প্রাপ্য সম্মান টুকু আমাকে ফিরিয়ে দিতে শুরু করেছেন তোমাদের দোয়ায়।

শাহাদ দু চোখ বুঁজে আছে। হৃদনন্দিনীকে করা প্রতিটি আঘাত ভাসছে চোখের সামনে। মানুষ ভুলের উর্ধ্বে নয়। তবে যে ভুল করেছে এই মেয়ে এত সহজে মাফ করে দিলো! এত ভালোবাসে! নাকি পারিবারিক শিক্ষার জেরে স্বামীকে অসম্মান করতে চায়নি তাই ফিরিয়ে দেয় নি। দিয়া শাহাদকে নিজের দুহাতে আকড়ে ধরেছে আজ। ছোট্ট দেহটা কেমন গুটিশুটি মে*রে আছে। কতটা যত্ন দরকার, ভালোবাসা দরকার সেকথার খেয়াল কি রেখেছিলো এই রসকষহীন কঠিন মানব। শাহাদ ধীর গলায় বললো যেন শেহজা উঠে যায়,

– ফারাহ সোনা!

ফারাহ চমকিত।এত আদুরে ডাক। জবাব না দিয়ে পারলো না,

-জ্বি…

– ক্ষমা করে দিলে?

– হুম

– কেনো?

– কাছে টেনে নিলেন কেনো?

– অগোচরে থাকা সত্য উন্মোচিত হল বলে

– আমার মনে দৃঢ় বিশ্বাস ছিলো আপনি আমার চরিত্র নিয়ে সন্দেহ করেন নি,তবে কেনো এত অবিশ্বাস ছিলো আমার প্রতি? কেনো আমাকে বেঈমান বলতেন?

– ভালোবাসার বেঈমান ভাবতাম। আমার কঠিন সময়টা পাশে ছিলে। আমার বড্ড বেমানান বয়সটাকে নিজের ভবিতব্য মেনে নিলে। মনে ঘোর সন্দেহ ছিলো কেউ এত ভালোবাসে কি করে? ভেবেছিলাম নিয়তিকে মেনে অভিনয় করেছিলে…

থেমে গেলো শাহাদ। ফ্যাল ফ্যাল নেত্রে চেয়ে আছে দিয়া। অভিনয়! কোনটা। তবে কি শাহাদ দিয়ার নিখুঁত ভালোবাসাকে অভিনয় বলছে।দিয়া প্রশ্ন করলো,

– কোনটা অভিনয়!

– ওটা আমার ভ্রম ছিলো।বাদ দাও সেসব। শেষ বারের মতো বলো, ভালোবাসো??

– হুম, তবে শেষবার কেনো?

– আর বলতে দিবনা।

– কেনো?

– সারপ্রাইজ।

দিয়া ফিরতি প্রশ্ন করেনি। তবে মুখ তুলে শাহাদের দিকে তাকাতেই দেখে দিয়ার দিকে তাকিয়ে মিট মিট করে হাসছে। এই হাসি যেন আকাশের চাঁদ। দিয়া উত্তর পেয়ে গিয়েছে।পুনরায় মুখ লুকায় শাহাদের বুকে। ধীর হস্তে প্রেয়সীর কালো কেশে বিলি কাটে এমপি সাহেব।

____

ফযরের আজান হয়েছে। শাহীন নামাজ পড়ে জায়নামাযে বসে আছে। অপরাধবোধে মাথা হেট হয়ে আছে। ভাবীমার মুখোমুখি হওয়ার সাহস নেই। বন্ধুর বাসায় অবস্থান করছে। ভোরে কর্কশ শব্দ করে যন্ত্রটা বেজে উঠলো। সারা রাত মেয়েটা মেসেজ করেছে।প্রতিউত্তর দিতে পারেনি। ফোন রিসিভ করতেই ও পাশ থেকে ক্রন্দনের আওয়াজ কর্ণকূহতে বাজলো। নিজেকে শান্ত করে প্রতিউত্তর করলো,

– নিরা জান কাঁদে না। জানো তো মাথা ব্যাথা অনেক বেশি। বলতে পারবোনা ঘুমিয়ে পড়েছিলাম।

– একটা মেসেজ করা যেত না?

– আচ্ছা বের হও। মিষ্টি সকালটা না হয় মিষ্টি পরীর সাথে কা/টাবো।

অল্প আলাপনে কথা শেষ হতেই দুজন রেডি হয়ে গেলো বের হওয়ার জন্য। নিরাকে মাঝে মাঝে হুমায়ুন আহমেদের অকর্মক নায়কের নায়িকা মনে হয়। নিজেকে মনে হয় হিমু আর নিরা হলো রূপা। আজব চিন্তা ভাবনা বাদ দিয়ে প্ল্যান করলো আজ সকাল থেকে সন্ধ্যা শুধু নিরাময় দিন কা/টাবে। সব দুশ্চিন্তা বাদ।

___

সকাল দশটা। শাহাদের ফ্ল্যাটে সকলে হাজির। সুরাইয়াকে নিয়ে এসেছে পাভেল। নোমান, সুরাইয়া, হামজা, কাজী, শাহীন,নওরীন, দিয়া এবং শেহজা।শাহীন অত্যাশ্চর্য হয়ে থম মেরে বসে আছে। নওরীনকে নিয়ে প্রাতঃ নাস্তা সেরে দুজনই লেকের দিকে বসলো।তৎক্ষনাৎ ফোন গেলো শাহাদের। এই বাসায় নোমানকে দেখে বিস্মিত। তাও আবার এখন ভাইজান বলছে সুরাইয়ার মত নিষ্পাপের সাথে নাকি বিয়ে দিবে। বোনকে কি করে সতীনের সংসার করতে দিবে এটাই মাথায় খেলছেনা শাহীনের৷ প্রশ্ন করছেনা আজ। দিয়া হতবাক হয়ে নোমানকে দেখছে।মুখে কোনো বুলি নেই শাহাদের দিকে কয়েক পলক তাকিয়ে নিশব্দ হয়ে বসে আছে। শেহজাকে ঘুম পাড়িয়ে দিয়েছে পাশের কামরায়। সকাল সকাল বউ বাচ্চা নিয়ে বেরিয়ে যেতে দেখে সুলতানা কবির জানতে চেয়েছিলো।উত্তরে শাহাদ বলেছে ওদের নিয়ে ঘুরতে মন চেয়েছে। সুলতানা আর বাঁধা দেয়নি। শাহাদ কাজীর দিকে তাকিয়ে বলে,

– কাজী সাহেব বিয়ে পড়ান।

মানব- মানবী প্রত্যেকে একে অন্যের দিকে তাকিয়ে আছে। অত্যন্ত চমকপ্রদ ভাবে কিছুক্ষনের মাঝে সম্পন্ন হয়ে গেলো বিয়ে। সুরাইয়া নোমান জুটি একদম অস্বাভাবিক। কেউ যেন মেনে নিতেই পারছেনা ব্যাপারটা সুরাইয়া এগিয়ে এসে শাহাদকে সালাম করতে চাইলে শাহাদ ইশারায় বারণ করে দেয়। কাজী সাহেব মিষ্টি মুখ করে চলে যেতেই এবার আলোচনায় বসে সবাইকে নিয়ে। নোমানের দিকে তাকিয়ে বলে,

– বলো এবার কি করতে চাও?

ছলছল চোখে নোমান প্রতিউত্তর করে,

– ভালো থাকতেই চাই নিরাপদভাবে।

– কিভাবে?

– আগের মত।

– শাহাদের সর্বোচ্চ সাহায্যকারী যোদ্ধা নোমান সিদ্দিকী বেঈমানী করেছে তার বসের সাথে। আগের মত অবাধে কি করে ফিরবে?

– কম শা/স্তি তো পাইনি বস। নারী শক্তি,নারী ধ্বং/স। আপনার নারী আপনার শক্তি।আমার সাবেক আমার ধ্বং/স।

– মন থেকেই সাবেক মেনে নিলে?

– না মেনে উপায় কি?

শাহাদ একপেশে হেসে বললো,

– তোমরা সাবেক দম্পতি মিলে যে চাল চেলেছো এতে আমার নারী আমাকে ধ্বং/স করার আগে নিজেই
ধ্বং/স হতে গিয়েছিলো। পাপের শাস্তি ভোগ করেছো। আগে থেকে জানালে এমন হতোনা। তুমি মুক্ত,সমাজে লড়াই করে বাঁচো। প্রয়োজনে আমাকে পাবে তবে বড় ভাই হিসেবে আর পাবেনা।

মাথা নত নোমানের। পাভেলের দিকে একটা চেক এগিয়ে দিয়ে শাহাদ জানালো,

– এখানে কিছু এমাউন্ট আছে এটা সুরাইয়ার একাউন্টে রেখে দিস। ওর বিপদে বড় ভাইজানের সাহায্য ওর জন্য সব সময় থাকবে।

শাহীন উৎসুকভাবে বললো,

– ভাইজান শেফালী?

শাহাদ উচ্চবাচ্যে বললো,

– ডিভোর্স পাবেনা নোমান। আমার বোন তো, আমি চিনি। ভাঙবে মচকাবে না। ইসলামে চিরতরে বিচ্ছেদের একটা নিয়ম আছে যা হালাল। সরাসরি তালাক দিবে। নোমান কি কাপুরষ?

আজ অবাকের পর অবাক হওয়ার দিন। শাহীন প্রশ্ন ছুড়লো,

– ভাইজান কি বলেন এসব? শেফালী আমাদের বোন?

– শেফালীর সাথে রক্তের টান। বেঈমানী করেছে রক্তের সাথে। রীতিমত আব্বুর কানে ও নওরীনকে ছোট করে ফেলেছে। যে ন*ষ্ট,জঘন্য উপাধি ফারাহকে দিয়েছিলো গতকাল, দু লাইন বাড়িয়ে আব্বুকে বলেছে নওরীন সম্পর্কে। অথচ সে আজ অবধি নওরীনকে দেখেনি। আব্বু ফোনে জানিয়েছে সেই কথা।এবার আমার সাথে গেম খেলুক। দেখি কতদূর আগায়।

– এতটা নিচে নেমেছে?

– প্রমাণ দেখাবো তোমাকে পরে।

পুনরায় দিয়ার দিকে তাকিয়ে বলে,

– সবার সব টুকু শাস্তি আমার ঝুলিতে না হয় রেখো।নোমানকে মাফ করে দাও।

দিয়া সকলের সামনে থেকে উঠে চলে গেলো রুমের দিকে। পিছু নিলো শাহাদ। কিছুতেই ভুলতে পারছেনা সেদিনের কষ্ট। এত সহজে প্রত্যেকে মাফ করে দিবে? এও কি সম্ভব। শাহাদ পাশে দাঁড়িয়ে বললো,

– এই অযোগ্য মানুষকে ক্ষমা করেও লাভ নেই ফারাহ। তোমার রূহ কষ্ট পেয়েছে।সেই শাস্তি খুব শীঘ্রই পেতে হবে। হয়তো সর্বোচ্চ অপমানিত করবে আল্লাহ তা আলা। আল্লাহ ছাড় দেন,ছেড়ে দেন না। ঝড় উঠবে ফারাহ। থামাতে পারবেনা সেই ঝড়। কষ্ট দিয়েছি সহধর্মিণীকে,সেই ভুলের ক্ষমা হয়না। আমি কখনোই উত্তম পুরুষ হতে পারবোনা।

চলবে…