সীমাহীন ভালোবাসার নীড় পর্ব-১৩

0
713

#সীমাহীন_ভালোবাসার_নীড়
#লেখিকাঃনওশিন আদ্রিতা
#পার্টঃ১৩
,
,
,
,
দূর থেকে কেউ আদ্রির সমস্ত কিছু ফলো করছে যেটা আদ্রি ঘুনক্ষরেও টের পাচ্ছেনা।আদ্রি একমনে তাকিয়ে আছে তার থেকে কিছু দূরে দারিয়ে থাকা এক মিষ্টি কাপল এর উপর দেখেই বুঝা যাচ্ছে নতুন বিয়ের। মেয়েটার মুখে কেমন বউ বউ একটা ভাব আছে।নাকে চকচক করছে ছোট নাক ফুল। গালে লজ্জার গোলাপি বর্ণ।হাতে লাল চুড়ি রিনঝিন করছে।

বউ এর দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ছেলেটা। হয়তো বউ এর রুপ দেখছে লাজুক রাঙা হাসির প্রেম পরছে। মাঝে মাঝে ছেলেটার ঠোঁট জোড়া কেপে উঠছে হয়তো কিছু বলছে মেয়েটাকে।ছেলেটার মুখে ভেসে উঠেছে দুষ্টু হাসি। আর মেয়েটার চোখে মুখে এক অন্যরকম আভা যে আভা তে রয়েছে লজ্জা আর প্রিয় মানুষ এর কাছাকাছি থাকার তৃপ্তি।

আদ্রি চোখ জোড়া বন্ধ করে নিলো।আর সাথে সাথেই ভেসে উঠলো নির এর বিদ্রুপ হাসি। চোখ জোড়া থেকে বেরিয়ে এলো দুই ফোটা অশ্রু।

অজানা অভিমান এ পুরো মন ভরে উঠেছে।কেন সেটা সে এখন পর্যন্ত ঠাওর করতে পারছে না। সে জানে নির কথাটা মজার ছলে বলেছে কিন্তু মন সে কথা ধরে বসে আছে কেন নির ওই ভাবে বললো কেন বলবে সে।

আদ্রি চোখ জোড়া ভরে আসতেই চোখ দুইটা বন্ধ করে ফেললো।অনেক কষ্টে চোখের পানি পরা থেকে আটকালো সে।

নির সিড়ি দিয়ে নেমে এদিক ওদিকে তাকিয়ে একটা বার আদ্রিকে খুজলো।কিন্তু কোথাও আদ্রির কোন দেখা পেলোনা।

নির এর চোখের সামনে ভেসে উঠলো কিছুক্ষন আগের ঘটনা মুখের কোণে ফুটে উঠলো চমৎকার হাসি। তার আদর পাখির যে অভিমান হয়েছে তার কথায় সেটা তার বুঝার বাকি ছিলোনা।

নির নিচে নেমে একটা ছেলেকে দেখে ড্রিংকস সাইডের দিকে তাকায়ে আছে। নির এগিয়ে যেয়ে ছেলেটার পিছনে যেয়ে দাড়ালো আর ছেলেটার দৃষ্টি অনুসারে তাকালো। আর তাকাতেই মেজাজ বিগরে গেলো। আদ্রি বসে আছে আর তার পেটের কাছে কিছু অংশ দেখা যাচ্ছে যেটা দেখে নির এর মাথা রাগে ফেটে পরার মতো অবস্থা।

নির এর ইচ্ছা করছিলো ছেলেটার চোখ দুইটা তুলে ফেলতে আর সে সেটা করবেও কিন্তু এখন না। তার আদ্রির দিকে কু দৃষ্টি দিবে সেটা নির মানবে কোন দিন সম্ভব না। কিন্তু তার আগে আদ্রিকে শাস্তি দেওয়া প্রয়োজন শাড়ি যেহেতু ঠিক রাখতে পারেনা সেটা পরে কেনো।

নির হনহন করে আদ্রির সামনে যেয়ে দাঁড়ায়। আদ্রি এক নজর নির এর দিকে তাকিয়ে অভিমানী দৃষ্টিতে তাকিয়ে চোখ জোড়া নামিয়ে সেখান থেকে চলে যেতে নিলেই আদ্রির হাত ধরে নেয় নির।আর তাকে টানতে টানতে অন্যদিকে নিয়ে যায় ফাঁকা জায়গায় যেখানে কেউ নাই।

আদ্রিঃছাড়ুন স্যার কি সমস্যা আপনার যখন তখন এই ভাবে টাচ করেন কোন অধিকারে হ্যা কে সাহস দিয়েছে আপনাকে আমাকে টাচ করার মানছি আমি আপনার অফিসে জব করি তার মানে এই নয় আপনি আমাকে টাচ করার লাইসেন্স পেয়ে গেছেন জাস্ট লিভ মাই হেন্ড(রাগে অভিমানে কষ্টে মুখে যা আসে বলে ফেলে)

নিরঃচুপ একদম চুপ আর একটা শব্দ উচ্চারণ করলে এখানেই জীবন্ত পুতে ফেলবো বলে ফেললাম কিছু না বলায় মাথা উঠে গেছিস হ্যাঁ।আমার ধরা তোর সহ্য হচ্ছেনা আর এতোক্ষন যে ওই ছেলেটা যে তোকে চোখ দিয়ে গিলে খাচ্ছিলো সেটা ভালো লাগছিলো নাকি ওকে দেখানোর ব্যাঘাত ঘটায়ে দেখে ম্যাডামের এতো দেমাগ হয়েছে কোনটা।

আদ্রিঃ(নির এর কথায় অবাক হয়ে একবার নিজের শাড়তে হাত দিয়ে দেখে সত্যি পেটের কাছে শাড়টা সরে গেছে তবুও সেটা বুঝতে না দিয়ে চওড়া গলায় বলতে শুরু করলো)হ্যা তাই আমি চায়ছিলাম যে উনি দেখুক ভালো করে দেখুক শুধু ওকে কেন দুনিয়ার সবাই কে দেখাবো আপনার কি হ্যা বলেন কি সমস্যা আপনার।আমাকে যে খুশি দেখুক তাতে আপনার এতো মাথা কেন ঘামাছেন।

নির নিজের রাগ কন্ট্রোল করতে না পেরে শরীরের সর্ব শক্তি দিয়ে আদ্রির গালে থাপ্পড় মেরে দেয়।
দুই গালে দুইটা থাপ্পড় মেরে দেয় আরেকটা মারতে যেয়ে হাত নামায় নেয় নির।

আদ্রিঃকি হলো থামলেন কেন মারুন। আপনি যা খুশি বলতে পারবেন। আমাকে অপমান করতে পারবেন আর আমি বলতে পারবোনা কি পেয়েছেন আমাকে আপনারা হাতের পুতুল যে আসবে অপমান করবে চলে যাবে আর আমি দাড়ায় দাঁড়ায় দেখবো ইউ নো হোয়াট দেটস ইউর ড্রিম।
(ঠোঁটের কোনে লেগে থাকা রক্ত মুছে)

নিরঃদেখো তুমি ভুল বুঝছো।
আদ্রিঃআই নো স্যার আমি ওল টাইম ভুল বুঝা এটা নতুন কিছুনা এন্ড আই লাইক ইট বেশি বুঝা আর ভুল বুঝা দুইটাই আমার খুব প্রিয়।
নিরঃদেখো একদম ত্যাড়ামো করবা না আমার সাথে।
আদ্রিঃইয়াহ এন্ড আই ডোন্ট ওয়ান্ট দেট গট ইট।

বলে সেখান থেকে দৌড়ে চলে গেলো বাহিরের দিকে যাওয়ার সময় ওয়েটার এর কাছ থেকে একটা ওয়াইন এর বোতল তুলে নিলো সে জানে এটা হারাম কিন্তু আজকে কষ্ট টা যে দ্বিগুন এতো দিন শুধু বাবা মা ভাই ছিলো আর এখন তার স্যার যাকে সে অনেক ভালো ফ্রেন্ড ভাবতো আজকে সেও তাকে অপমান করতে ছাড়লোনা নিজের উপর ই ভিষন রাগ হচ্ছে তার সে সবাইকে প্রায়োরিটি দেয় দেখেই আজকে তার এই অবস্থা।

নির আদ্রির পিছনেই আসছিলো কিন্তু তার আগে তার চোখ যায় সে ছেলেটার উপরে একটা মেয়েকে বাজে ভাবে টাচ করছে মেয়েটা যতো ওর থেকে দূরে সরার চেষ্টা করছে ছেলেটা ততোই ওর ক্লোজ হয়ে যাচ্ছে রাগে ছেলেটার কলার ধরে তাকে পিছনে ঘুরায়ে নাক বরাবর দেয় ঘুষি বসায়ে একটার পর একটা ঘুষি মারতে থাকে ছেলেটা ব্যাথায় আর্তনাদ করে উঠে। ছেলেটার চিৎকারে মিউজিক ওফ করে দেয় ডিজে সবার নজর এখন ওদের দুইজনার দিকে।

এক পর্যায়ে মারতে মারতে ফ্লোরে ফেলে দেয়। রিয়াজ আর আদ্রিয়ান এগিয়ে এসে ওকে আটকানোর চেষ্টা করে কিন্তু কিছুতেই থামাতে পারছেনা তাকে।

অনেক কষ্টে আদ্রিয়ান আর রিয়াজ নির কে সরায়ে আনে। কিন্তু ততোক্ষনে আধমরার মতো অবস্থা হয়ে গেছে ছেলেটার।একটা লোক পুলিশ কে কল করতে যায় কিন্তু সেখানে নির এর গার্ড এসে সবাইকে বের করে দেয় আর পার্টি ক্লোজ বলে ঘোষনা করে দেয়।

নির আদ্রিয়ান আর রিয়াজ এর কাছ থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে ছেলেটা আরেকটা লাত্থি মেরে সেখান থেকে চলে যায়। আদ্রিকে খুঁজতে হবে।

আদ্রি পুরো বোতল ওয়াইন শেষ করে এখন টাল খাচ্ছে আর হেটে যাচ্ছে কোন দিক দিয়ে কোন দিকে যাচ্ছে সেটা তার নিজের ও হুস নাই। নির বাসা থেকে বের হয়ে কিছু দূর এগোতেই পেয়ে যায় আদ্রিকে।তখন আদ্রি একটা কুকুর এর সাথে ভাউ ভাউ খেলছে।

একবার কুকুর টা ভাউ করে উঠছে তো একবার আদ্রি। এক পর্যায়ে কুকুরটা বিরক্ত হয়ে সেখান থেকে দৌড়ে চলে গেলো।
আদ্রি সেটা দেখে খিলখিল করে হেসে দিলো

আদ্রিঃওও কুকুর মামা দাড়া কই পালাচ্ছিস ভয় পেলি বুঝি হাহা আই আমার সাথে ভাউ ভাউ জানিস আমি কে আমি হলাম মিস্টার খান এর মেয়ে ছোট বাঘিনী আমি। আইসে হু
(ভেংচি কেটে। তার পর পুনরায় হো হো করে হেসে দেয় আদ্রি।)

আদ্রিঃমে তো হু পানছি উরু মাসতে গাগান মে(আমি পাখি হয়ে উড়বো সুন্দর আকাশে)
নাচি নাচি।

গান বলছে আর এদিকে ওদিকে দৌড়া দৌড়ি করছে।নির মাথায় হাত দিয়ে আদ্রির পাগলামো দেখছে।এক পর্যায়ে আদ্রি মাঝ রাস্তাই বসে গলা ফাটিয়ে কাদতে শুরু করে দেয় হঠাৎ আদ্রির এমন রিয়েকশনে নির অবাক হয়ে যায়।।

চলবে!!!