#সীমাহীন_ভালোবাসার_নীড়২
#লেখিকাঃনওশিন_আদ্রিতা
#পার্টঃ১৩
,
,
,
,
নির টলমল পায়ে আদ্রির রুমে প্রবেশ করতেই সম্পূর্ণ রুম ফাকা দেখে অবাক হলো। ভিতরে ঢুকে বিছানার দিকে তাকাতেই দেখতে পেলো লাল রাঙ্গা চিরকুট পড়ে আছে আদ্রির পড়া পার্টি ড্রেসের উপরে। নির এর বুঝতে বাকি নেই আদ্রি এখানে নেই। চিরকুটের ভাজ খুলতে তার চোখে পড়লো গোটা গোটা অক্ষরের কিছু শব্দ।
**আমি বাধন হারা সে পাখি যে মানে না কোন খাচার শিকল। আমি উমুক্ত আমি বাধন হারা যার ঠিকানা খোলা আকাশে জাহাজে নই। সে কারো বিনোদনের বা ভোগের বস্তু নই। সূর্য কে বাধা এতো সহজ নই ডাক্তার সাহেব”
নির চিঠিটা দুমড়ে মুচড়ে দিলো।
—তুমি সে পাখি যার নীড় আমি। দিন শেষে তোমাকে নীড়েই ফিরতে হবে। যতোই উচুতে উড়াল দেও তোমার সীমানা আমিতেই তোমাকে থামতে হবে। তোমার সকল তাপ অন্যকে পুড়ালেও তোমার তাপে আমি সর্বদা শান্তি পাবো। তোমার উজ্জ্বলতা আমাতেই আটকাবে তুমি তাপ।দিলে আমি নিজের উষ্ণতাই তোমাকে কাবু করে দিবো তুমি আমাতেই শুরু আমাতেই শেষ হবা আদ্রু পাখি
কথাগুলো বলেই উচ্চস্বরে হেসে দিলো নির।তার হাসির আওয়াজে দরজার বাহিরে দাঁড়িয়ে থাকা রিয়াজ এর কানে যেয়েও ঠেকলো।দ্রুত পকেট থেকে ফোন বের করে কানে ধরলো।অন্য দিকে ফোন রিসিভ হতেই রিয়াজ দম না নিয়েই বলতে শুরু করলো
—যেটার ভয় পাচ্ছিলাম আমরা সেটাই হলো নির এর চেপে রাখা অসুখ পুনরায় মাথা চাড়া দিয়ে উঠছে অতি দ্রুত আমাদের কিছু একটা করতে হবে। নির এর পাগলামো বেরে গেলে থামানো সম্ভব হবেনা ৬ বছর আগের নির আবার ফিরতে চাচ্ছে
ওইপাশ থেকে সাড়া শব্দ না পেয়ে রিয়াজ উদ্বিগ্ন হয়ে গেলো। কই বার হ্যালো হ্যালো করে কেটে দিলো।
,
,
,
শুভ্র চাদরে লেপ্টে আছে দুই শরীর।রুমের চার দেওয়ালো জুড়ে রয়েছে হাস্যজ্বল এক জোড়া কপোত-কপোতীর ছবি।ঠান্ডা বাতাসে উড়ছে রুমের আকাশী রঙের পর্দা জোড়া সে সাথে চাদরে মুড়ানো রমনী ঠান্ডাই আরও চাদরের মাঝে নিজেকে লুকাতে ব্যাস্ত হয়ে পড়ছে একসময় না পেরে আখি জোড়া খুলে ফেললো সবার আগে চোখে এসে ঠেকলো লাল খয়েরি ঠোঁট জোড়া। চোখ আরেকটু নিচে নামাতেই চোখ গেলো শুভ্র বেন্ডেজ এর দিকে সেখানে হাত বুলাতেই আদ্রিয়ান চোখ খুলে তাকাই
—কি ব্যপার মিসেস মেরে টেরে এখন বুঝি আদর করা হচ্ছে।
আদ্রিয়ান এর কথা কুর্ণগহবরে প্রবেশ করতেই শক্ত হাতে আদ্রিয়ান এর ব্যাথা জায়গায় চেপে ধরলো ব্যাথায় ছোট ফোট করে উঠলো আদ্রিয়ান
—বউ ব্যাথা পাই না
—এই সামান্য ব্যাথাতে আপনার এতো কষ্ট হচ্ছে আর আপনি যে মাসের পরে মাস আমার থেকে দূরে থাকেন আমারো বুকের বাম পাশটাই রক্তক্ষরণ হয় সেটা কি আপনার চোখে পড়ে উহু পড়েনা। আমি যে আপনার তৃষ্ণায় প্রতিনিয়ত কাতরায় আপনার কানে যায় উহু যায়না। আমার আর্তনাদ আপনি শুনেন না আমি কেনো শুনবো। না কোন কল না কোন এসএমএস হাজার টা ম্যাসেজ করলে একটা রিপ্লাই। আপনি কি বুঝেন না যে আমার কষ্ট হয় নাকি এখন আমাকে আপনার প্রয়োজন নেই।
কথা গুলো বলতে বলতে কেদে উঠলো ব্যাথিত রমনীর আখী জোড়া। প্রিয় মানুষের বুক দখল করে নিজের অভিমান মিটাতে শুরু করলো
—তুমি জানো নওমি আমাদের সম্পর্কটা ঠিক কতোটা জটিল। আমি যে কর্মে জড়িত সে কর্মে হাজারো শত্রু পথে পথে মৃত্যু এইজন্য তোমার থেকে সর্বদা দূরে থাকতাম চায়নি তোমাকে নিজের জীবনের সাথে জরাতে কিন্তু তুমি আমাকে দূরে থাকতো দেও নি তাই তোমাকে বিয়ে করেছি কিন্তু ভুলেও যদি কারো কানে কথা টা যায় তাহলে শত্রুরা তোমাকে টার্গেট করবে আমাকে নিচু করতে যা আমি চায়না
—কেন এমন কর্মে জড়ায়েছেন আপনারা ঠিক এই কারণে ভাইয়াও আমাকে।সব সময় নিজের থেকে দূরে রাখতো আগে এটা নিয়ে ভাইয়ার উপরে জেদ থাকলেও আপনার সাথে দেখা হওয়ার পর থেকে ভাইয়ার উপর থেকে রাগ উঠে গেছে আমার কারন ভাইয়া যদি আমাকে নিজের থেকে দূরে রাখার জন্য চট্রগ্রাম না পাঠাতো তাহলে আমি আপনার ম্যাডিকালে ইন্টার্নি হিসেবে জয়েন করতে পারতাম না আর না আপনাকে স্বামি রুপে পেতাম কিন্তু এখন এই দূরত্ব সহ্য হয়না আমার
—পাগলীটা আচ্ছা আমি ২ দিনের লিভ নিচ্ছি এই দুই দিন শুধু আমার পিচ্চি বউটার আচ্ছা
নওমি খুশি হয়ে আদ্রিয়ান কে জড়ায় ধরলো। আদ্রিয়ান ও নিজের বাহুতে আগলে রাখলো প্রিয়সীকে।।
—আদ্রিতা আপু কই আদ্রিয়ান
—সে নিজের লক্ষ্যর কাছে হয়তো আজকে আরও একজনের খুনে তার হাত রাঙ্গাবে।
—যদি ওর কোন ক্ষতি হয়
—নির আছে ওকে সেভ করার জন্য
—আদ্রিতা আপু জানে আপনাদের সম্পর্কে
—নাহ আবার হ্যা। সে জানে কি না যে এখনো নির এর সাথে যোগাযোগ রয়েছে আমার তার সব খবর আমিই নির এর কাছে পৌছায়। সেজন্যই তো এর আগে আদ্রির উপরে হামলা হতে যাচ্ছিলো তার আগেই নির পথের কাটাকে উঠিয়ে দিয়েছে।
—মানে(প্রশ্নবোধক স্বরে)
—হামিদ খান মানে আমার বাবার ভাই টাকার লোভে পড়ে ডুবাইয়ের মাফিয়া ইনায়াত এর কাছে আদ্রিকে বিক্রি করতে চায়েছিলো রেয়ান সেটা জেনে যায় সেখানে আমি নির উভয় ই উপস্থিত ছিলাম। আমি রেগে কিছু করতে যাওয়ার আগেই নির আমাকে থামায় দেয়। আর প্ল্যান করে হামিদ খান কে আদ্রির সামনে মারে আদ্রি সেটা দেখে ক্ষেপে যায় কারন সবাইকে সে নিজে মারতে চেয়েছিলো আর এটাই ছিলো নির এর।আসল প্ল্যান আদ্রি রেগে নিশান চৌধুরী কে মেরে ফেলে।
—ভাই ভাবি দুইজনেই ডেঞ্জারাস বাবাগো কেউ কারো থেকে কম না একজন সূর্য তো আরেকজন চাঁদ। মেড ফোর ইচ আদার
—লাইক আস
নওমি হেসে আদ্রিয়ান এর অধর জোড়া নিজের অধর দাড়া ছুয়ে দেয়।
,
,
নিহাল চৌধুরী অফিস থেকে নিজের বর্ডিগার্ড এর সাথে বাসায় ফিরছিলেন এমন সময় প্রচন্ড আওয়াজ কানে আসতেই চমকে পিছনে তাকান সাথে সাথে চোখের সামনে জলন্ত গাড়ি দেখে ভয় পেয়ে যান। কপাল বেয়ে সুক্ষ্ণ ঘাম গরিয়ে পড়ে।রুমাল দিয়ে ঘাম মুছার জন্য কপালে হাত দিতেই সামনে থাকা গাড়িটাও।বিকট আওয়াজ করে ব্লাস্ট হয়ে যায়।
ড্রাইভার।তাড়াহুড়ো করে ব্রেক কষতেই নিহাল এর মাথা যেতে বাড়ি খাই গাড়ির কাচের সাথে মাথাটা সাথে সাথে ভন ভন করে উঠে। চোখের সামনে সব কিছু ধোয়াশা হয়ে যায়।
গাড়ি থেকে নামতে যেতেই একটা গুলি এসে লাগে ড্রাইভার এর কপালের মাজ বরাবর। একের পর এক হামলা হওয়াই নিহাল কিছু বুঝে উঠার সময় পায়না। দ্রু গাড়ি থেকে নামতেই কালো হুডি পরিহিত একজন এসে মোটা রোড দিয়ে বাড়ি মারে।নিহাল এর মুখে চোয়াল ভেংগে রক্ত বেরিয়ে পড়ে নিহালের। ব্যাথায় কাতরে উঠে গাড়ির সাথে হেলান দিয়ে বসে পড়ে।
লোহার রোড হাতে নিয়ে হুডি পড়া মেয়েটিও বসে পড়ে তার মুখের সামনে
—আমাকে মারার জন্য খুজে বেরাছেন শুনলাম তাই আমি নিজেই চলে আসলাম
নিহাল কাপা কাপা গলায় বলে উঠলো কে কে। নিহাল এর ভয়ার্ত কন্ঠ শুনে হাসলো হুডি পড়া মহিলাটি মাথার উপর থেকে হুডি সরাতেই নিহাল কেপে উঠলো আদ্রির ভয়ংকর রক্তিম আখিজোড়া দেখে।
—চিনতে পারলা বাবাই। হুম আমি তোমার সিন্ড্রেলা কিউট লিটেল সেই সিন্ড্রেলা। মনে আছে ছোট বেলায় কি করে তোমার কোলে উঠলে আর নামতে চাইতাম না ভুলে গেছো বুঝি। ও বাবাই বলোনা কেনো মারলা আমার মা আর মামনিকে কেন দূর করলা আমার পরিবার থেকে আমাকে কেন আমি হারালাম আমার সুখের নীড় টাকে বলোনা বাবাই
ছোট বাচ্চারা যেমন করে নালিশ করছে আজকে ঠিক সেভাবেই আদ্রি নালিশ করছে তার বাবাই কে। সে জানে এই লোকটা তার বাবাই না এই সে লোক যার জন্য তার ছোট বেলা খুব সুন্দর করে নিজ হাতে নষ্ট করেছে।কিন্তু সে জানতে চায় কেন হলো তার সাথে এমন কেন সবাই আড়ালে।রাখলো নিজের হিংস্রতা।
নিহাল কিছু বলতে যাবে তার আগেই একটা গুলি এসে লাগলো আদ্রির বুকের বাম পাশটার একটু উপরে।বুকে হাত দিয়ে হাটু ভেংগে।পড়ে গেলো। সাথে আদ্রি গার্ড এগিয়ে আসতে নিলেই নিহাল এর গার্ড এগিয়ে আসে নিহাল কে তুলে।
—সিন্ড্রেলা আজকের মতো তোকে ছেড়ে দিলাম এতো সহজে মারবোনা তোকে আরও কিছুদিন বেচে নে খুব জলদি তোকে তোর মা মামনির কাছে পাঠানোর ব্যবস্থা করবো সুইটহার্ট।
আদ্রি কপালে ভালোবাসাময় চুমু দিয়ে রক্তাক্ত অবস্থায় তালে রেখে চলে গেলো। ওরা জেতেই গার্ড রা আদ্রিকে নিয়ে হস্পিটালে রওনা দিলো সাথে ড্যানিকেও জানিয়ে দিলো,,,,,কিন্তু হঠাৎ মাঝরাস্তাই কালো দুই গাড়ি তাদের পথ আগলে ধরলো আদ্রি পারলোনা ততোক্ষন নিজের চোখ খোলা রাখতে ঘন ঘন নিশ্বাস মহূর্তের মধ্যে নিজের গতি কমিয়ে আনলো শূন্যের কোটায়।
চলবে!