সুখের ঠিকানা পর্ব-৬+৭

0
182

#সুখের_ঠিকানা
#শারমিন_হোসেন
০৬+০৭
#পর্ব০৬

বাসে উইন্ডোর পাশের সিটে কোনো মেয়েকে বসে থাকতে দেখে জারিফের ভ্রু যুগল কুঁচকে যায়।কোনো মেয়ের পাশে বসতে হবে,এটা ভেবেই জারিফের অস্তিত্ববোধ আকাশসম হয়।জারিফ প্যান্টের পকেট হতে একহাতে টিকিটটা বের করে সিট নম্বর চেক করে। উফ্!সিট নম্বর ঠিকই আছে।এটাই জারিফের সিট।জারিফ সিটে বসতে খানিকটা ইতস্তত বোধ করে। আশেপাশে ঘাড় ঘুরিয়ে বাকি সিটগুলোতে নজর বুলায়। নাহ্,আর একটাও ফাঁকা সিট মিলছে না।এদিকে গাড়ি স্টার্ট দিয়েছে।জারিফ কোনো উপায় না পেয়ে নিজের সিটে বসে পড়ে। ঠোঁট গোল করে ফোঁস করে নিঃশ্বাস ছেড়ে ফোনটা হাতে নিয়ে স্ক্রল করতে থাকে।

জানালা দিয়ে বাইরে দৃষ্টি লিয়ার।নিজের পাশে করিডোরের সিটে কারো উপস্থিতি বুঝতে পেরেও নির্বিকার থাকে।ঘাড় ঘুরিয়ে পাশে বসা মানুষটাকে দেখার কোনো আগ্রহও কাজ করছে না নিজের মধ্যে।লিয়ার এখন শুধু একটাই টেনশন হচ্ছে।বাসায় গিয়ে কপালে প্রচন্ড দুঃখ আছে। আম্মুর বকুনি শুনতে হবে।এবার ব’কুনির সাথে চ’ড় থা”প্প”ড় না পড়ে।এটা ভাবতেই লিয়ার একহাত আপনাআপনিই ফর্সা গালে চলে যায়।লিয়া নজরজোড়া বড়বড় করে
বারকয়েক শুকনো ঢুক গিলে নেয়।লিয়ার চোখের সামনে ভাসছে,ঠা ‘স ঠা’স করে আম্মুর হাতের থা’প্প’ড়।হাতটা আলতোকরে গালে বুলাতে বুলাতে লিয়া মনেমনে আওড়ায়, ওহ্!নো।অনেকদিন বাদে আজকে নির্ঘাত লিয়া তোর টসটসে দুইগালে আম্মুর পাঁচ আঙ্গুলের ছাপ পড়বে।এসব ভেবে লিয়ার ফর্সা মুখে অন্ধকার নেমে আসে।
কারন এইতো গাড়িতে উঠার আগে রাজিয়া সুলতানা ফোনে শাসিয়েছেন,কে বলেছিলো এভাবে জিদ করে যেতে। আবার জিদ করে একরোখা গো ধরে চলে আসতে।এখন যদি কোনো সমস্যা হয়।তাহলে লিয়ার কপালে শনি আছে।একদম রক্ষা থাকবে না।এতক্ষণের কঠোর মনটা ধীরে ধীরে নরম হতে থাকে।লিয়া ভাবে,মোটেও একরোখা গো ধরে এভাবে চলে আসা ঠিক হয়নি।কালকে মামার সাথে আসলেই ভালো হতো। উফ্!নানুভাই কতো করে বললো,মামীও বললো।সবার কথা না শুনে বড্ড ভুলই হলো।এখন একা একা এতটা পথ জার্নি করতে কেমন জানি আনইজি লাগছে।যতই মনকে শক্ত করতে বলছি,কোনো ভ’য় নেই। কিচ্ছু হবে না।ততই যেনো ভ’য় এর পাহাড় বাতাসের গতিতে মনে জেঁকে বসছে। উফ্!বাতাসের বললে ভুল হবে,আলোর গতিতে আসছে। ভ’য় আর টেনশন দুইটাই।এইজন্য মহাজ্ঞানীরা বলেছেন,,ভাবিয়া করিও কাজ,করিয়া ভাবিও না।আমার হয়েছে সেই দশা।হুটহাট মনের ইচ্ছাকে প্রায়োরিটি দিয়ে কোনো কিছু করে ফেলি।পরে মাশুল দিতে হয়, টেনশন করতে করতে। ‌আর নয়তো আম্মু আব্বুর ব’কুনি খেতে হয়।

জানালা দিয়ে হুহু করে শীতল বাতাস আসছে।জারিফ পাশে বসা মেয়েটার দিকে আড়চোখে একবার তাকায়।মনে হচ্ছে মেয়েটা একহাত বাইরে দিয়ে কি সুন্দর প্রকৃতি বিলাশ করছে।এদিকে শীতের দিনের ঠান্ডা বাতাস পাশে বসা ব্যক্তির ভালো নাও লাগতে পারে।সেদিকে তার কোনো হুঁশ নেই।জারিফের কপালের ভাঁজ প্রগাঢ় হয়।জারিফ ঠোঁট কামড়ে ধরে ভাবে,,এই হলো মেয়েদের ছেলেমানুষী।শীতে লোমকূপ শিহরিত হবে তবুও তাদের কোনো হেলদোল হবে না।জানালা দিয়ে হুহু করে প্রচন্ড ঠান্ডা বাতাস আসছে।আর এ আছে প্রকৃতি বিলাশ করতে।জারিফের একবার ইচ্ছে করলো মেয়েটাকে ডেকে বলতে,উইন্ডোটা বন্ধ করুন। ঠান্ডা বাতাস আসছে তো। পরক্ষনে ইতস্তত বোধটা জেগে উঠতেই জারিফের বলার ইচ্ছাটাও ওখানেই দমে যায়।জারিফ সোজা হয়ে বসে ফোনে মুখ ডুবিয়ে থাকে।

শহরের পিচঢালা পথ ফেলে গাড়ি যখন হাইওয়ে দিয়ে যেতে লাগলো।শীতল বাতাসের প্রকোপ অনেকটাই বেড়ে গেলো।লিয়ার সমস্ত লোমকূপ শিহরিত হয়ে উঠল।লিয়ার পাতলা গোলাপী ওষ্ঠ মৃদু কম্পিত হলো।লিয়া একহাতে গায়ের উপর দেওয়া শালটা একটু ভালো করে জড়িয়ে নিলো।অবশেষে ঠান্ডা বাতাসের কাছে পরাজিত হয়ে। অনিচ্ছা সত্ত্বেও লিয়া একহাতে উইন্ডোটা টেনে দিল।লিয়া সোজা হয়ে বসে।সময় কাটানোর জন্য হ্যান্ড ব্যাগ থেকে ফোন আর ইয়ার ফোন বের করে।ইয়ার ফোনটা কানে গুজার সময় লিয়ার দৃষ্টি যায় পাশে বসা মানবের দিকে।যেকিনা ফোনে মুখ ডুবিয়ে রেখেছে। প্রায় আধা ঘন্টা হবে গাড়ি চলছে।এই সময়টা ধরে লিয়া খেয়াল করেছে।পাশের মানুষটা না লিয়াকে কোনো ডিস্টার্ব করেছে।আর না কথা বলার ট্রায় করেছে। এটা ভেবে লিয়ার খানিকটা কৌতুহল হলো একনজর পাশে বসা মানুষটাকে দেখতে।ইয়ারফোন কানে গুজতে গুজতে লিয়া আড়চোখে একপলক তাকায়।একপলক তাকাতেই লিয়ার পলক থমকে যায়।পাশে বসা সুদর্শন পুরুষটাকে দেখে লিয়া ঘনঘন পলক ঝাপটায়।অফ হোয়াইট টিশার্ট এর উপরে ব্ল্যাক জ্যাকেট।জ্যাকেটের চেইনটা খোলা।এ্যশ কালারের ডেনিম প্যান্ট।পায়ে ব্ল্যাক কেডস। আকর্ষণীয় ভঙ্গিমায় বসে ফোন স্ক্রল করছে।লিয়া অবাক চাহনিতে চেয়ে আশ্চর্যান্বিত হয়ে আমতা আমতা করে বলে উঠলো,,

“আ আ আপনি।আপনি এখানে।আমি স্বপ্ন দেখছি নাতো।আমার পাশে আপনি।অবশ্য সেদিনের পর এর আগে যে কয়বার আপনাকে দেখেছি সেটা স্বপ্নেই। এখন গাড়িতে বসে জেগে জেগেও স্বপ্ন দেখছি নাতো।আই ক্যা’ন্ট বিলিভ মাই আইস।”

লিয়া এতক্ষণ এক্সাইটেড হয়ে গড়গড় করে একনাগাড়ে কথাগুলো বলে ফেলে।জারিফ মাথাটা তুলে ঘাড় ঘুরিয়ে উপরের দাঁত দিয়ে নিচের ঠোঁট কামড়ে ধরে শীতল চাহনিতে লিয়ার দিকে তাকায়।জারিফের শীতল চাহনিতে লিয়ার নজর পড়তেই লিয়া থমথমে মুখাবয়ব করে চুপ হয়ে যায়। লিয়া ঠোঁটে ঠোঁট চেপে বলে,এইরে এক্সাইটেড হয়ে একনাগাড়ে কতকি বলে ফেললাম।উনি কি ভাববে?লিয়া এক আঙ্গুল দিয়ে মাথা চুলকিয়ে হালকা হাসার চেষ্টা করে।লিয়া দৃষ্টি সরু করে কাঁপাকাঁপা গলায় বলতে থাকে,,

“নাহ্।ইয়ে মানে।সাইকোলজির ভাস্যমতে শুনেছি, কেউ যখন কাউকে নিয়ে ভাবে।অপর প্রান্তের মানুষটা তখন তাকে স্বপ্নে দেখতে পায়।আপনিও বোধহয় আমাকে নিয়ে ভেবেছিলেন।তাই হয়তো আমার স্বপ্নযোগে আপনাকে দেখতে পেয়েছিলাম।ঠিক বলেছিনা না?”

কথাটা শেষ করে লিয়া দাঁত কেলিয়ে হাসে।কি সুন্দর সুক্ষভাবে অন্যর ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে দিয়ে।লিয়ার মনে খানিকটা প্রশান্তি বইতে থাকে।লিয়া মনেমনে আওড়ায়,যাক গে বাবা।আমার স্বপ্নে উনি এসেছেন।তারমানে দোষটা উনারই।এতে আমার কোনো দো’ষ নেই,হু।

লিয়ার কথা শুনে জারিফ অবাকের উপর অবাক হচ্ছে।এই মেয়ে নাকি জারিফকে স্বপ্নে দেখে। স্ট্রেইন্জ!আর এর কারন নাকি জারিফ নিজে।আমি আবার কখন?কবে?কোনকালে?এই মেয়েকে নিয়ে ভাবলাম। উফ্!মাথা ঠিক আছে তো এর।কি যাতা বলে চলছে।এসব কথা মনেমনে বললেও জারিফ মুখে কিছুই বললো না।জারিফ নির্বিকার থাকে।

জারিফের থেকে কোনো উত্তর না পেয়ে লিয়া কিছুটা হতাশ হয়।লিয়া আহত দৃষ্টিতে জারিফের দিকে তাকিয়ে ম্লান স্বরে ফের বলে,,”বাসায় ফিরছেন বোধহয়?”

জারিফ দৃষ্টি ফোনে রেখেই জবাবে বললো,,”হুম।ঢাকাতে কাজ ছিলো।কাজটা শেষ করে এখন ময়মনসিংহ ফিরছি।”

লিয়া ঠোঁট উল্টে ছোট করে বলে,,”ওহ্।”

কিয়ৎকাল থেমে লিয়া ফের বলে,,”আমি নানুবাসায় আসছিলাম।একাই ফিরছি।যাক ভালোই হলো কো-ইন্সিডেন্সলি হলেও আপনার সাথে দেখা হয়ে।”

“হুম।”

জারিফের এক শব্দের জবাব শুনে লিয়ার মেজাজটা খা’রাপ হতে থাকে।লিয়ার ভীষণ ভীষণ কান্না পাচ্ছে।লিয়ার এই এক দোষ। রা’গ হলে সাথে কান্নাও পায়।লিয়ার চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে করছে, এনাবুল জান্নাত খাঁন লিয়া কারো সাথে আগ বাড়িয়ে কথা বলতে চাইছে।আর সে কিনা ইগনোর করছে।নিজের ওয়েট দেখাচ্ছে। ব্যস,আমিও আর কথা বলবো নাহ্,হু।লিয়া এসবভেবে নিজের সিটে গা এলিয়ে দেয়। ফোনে গান অন করে দেয়। চোখ বন্ধ করে গান শুনতে থাকে।মাঝে মাঝে চোখ মেলে চোরাচোখে জারিফকে পরখ করছে।

গাড়ি চলছে তার আপন গতিতে। ঘন্টা দুইয়েক হবে গাড়ি চলছে। সন্ধ্যা হয়ে আসছে। এরমধ্যে না জারিফ কিছু বলেছে।আর না লিয়া কোনো কথা বলার চেষ্টা করেছে।এমনিতে পিছনে বসার ফলে ঝাঁকুনিটা একটু বেশিই লাগছে।লিয়ার শরীরটা খা’রাপ করতে শুরু করছে।এরমধ্যে হঠাৎ করে গাড়ি ব্রেক চাপে। রাস্তায় আরো ছোটবড় অনেক গাড়ি সারি সারি দাঁড়িয়ে আছে। এরমধ্যে লোক মুখে শোনা গেলো। বাস আর ট্রাক মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়েছে।বাসের অনেক যাত্রী ইনজুর হয়েছে। ঘটনাস্থলে পুলিশ এসে পথ আটকে দিয়েছে।পুলিশ ইনভেস্টিগেশন হয়ে রাস্তা ক্লিয়ার হতে অনেক সময় লাগবে।এটা শুনতেই লিয়ার মাথায় আকাশ ভে”ঙ্গে পড়ে।টেনশনে লিয়ার হাতপা জমে আসছে। বাসের যাত্রীরা অনেকে নেমে গিয়ে হাঁটাহাঁটি করতে থাকে। উৎসুক জনতা আবার দূর্ঘটনা কবলিত স্থান সচোখে দেখতে যায়।অনেক সময় বসে থাকায় জারিফের নিজেরও বসে থাকতে ভালো লাগছিলো না।তাই নিচে নেমে গিয়ে রাস্তার একপাশে দুইহাত পকেটে গুঁজে দাঁড়ায়।

লিয়ার নিজের উপর নিজেরই রাগের পারদ বাড়তে থাকে।আর একঘন্টার মধ্যে বাসায় পৌছে যাওয়ার সম্ভবনা ছিলো। সেখানে কিহলো? আম্মু তো আছেই।এবার আব্বু নিশ্চয় রক্ষে রাখবে না।নিজের খুশিমতো সব কিছু করা শেষ।পাকনামি করে আসার ফল এমন হবে।তা জানলে লিয়া ভুল করেও এভাবে আসতে চাইতো না।

অনেকক্ষণ বসে থাকায় লিয়ার কোমড় লেগে গিয়েছিল।তাই একটু হাঁটাহাঁটি করার জন্য নিচে নেমে দাঁড়ায়।বাস থেকে নামতেই খানিকটা দূরে জারিফকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখতে পায়। চারিদিক অন্ধকার হয়ে গিয়েছে। বিভিন্ন গাড়ির হেডলাইটের আলোয় আলোকিত হয়ে আছে রাস্তাটা। লিয়া একপা দু পা করে জারিফের পাশে গিয়ে দাঁড়ায়।হালকা কেশে এহেম এহেম। শব্দ করায়।জারিফ ঘাড় ঘুরিয়ে লিয়ার দিকে তাকায়।লিয়া চিন্তিত মুখাবয়ব করে মৃদুস্বরে শুধালো,,

“গাড়ি কখন ছাড়বে?অনেক লেইট হবে কি?”

জারিফের স্পষ্ট উত্তর এলো,,”শিওর জানিনা।লোকমুখে শুনলাম,এক দুই ঘন্টার বেশিও লাগতে পারে।”

লিয়ার মাথা ঘুরে যাওয়ার উপক্রম।লিয়া যথাসাধ্য নিজেকে স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করছে।এই সময় অতিরিক্ত টেনশনের ফলে যদি জ্ঞান হারায়। তাহলে কি হবে? আল্লাহ মালুম।তাই টেনশন মুক্ত রাখার জন্য নিজের সাথে একপ্রকার যু”দ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে।এমন সময় কেউ একজন জোরে বলছিলো,, অনেকেই আহত হয়েছে। রাস্তা র>ক্তে লাল হয়ে আছে।

কথাটা শ্রবণ হওয়ার সাথে সাথেই লিয়ার মাথা ঘুরে যায়।এমনিতেই শরীরটা অসুস্থ লাগছিলো।আবার ব্লাড এর কথা শুনে।লিয়ার মাথা চক্কর দিয়ে উঠলো।লিয়া আচমকা একহাতে জারিফের বাহুর জ্যাকেটের অংশ খামচে ধরে।অন্যহাত নিজের মাথায় চেপে ধরে।জারিফ অবাক হয় সাথে বিরক্ত। জারিফ কড়া করে লিয়াকে উদ্দেশ্য করে কিছু বলতে যাবে তখন জারিফের নজর পড়ে লিয়ার ফ্যাকাসে বিবর্ণ মুখে। লিয়ার কোনো সমস্যা হয়েছে সেটা বুঝতে পেরে জারিফ চিন্তিত হয়ে শুধালো,,

“এ্যনি প্রবলেম? সামথিং হ্যাপেন্স?”

লিয়া জোরে জোরে কয়েকবার নিঃশ্বাস ফেলে।লিয়ার দুচোখে সবকিছু ঝাঁপসা হয়ে আসছে।লিয়া কোনোরকমে নিজেকে সামালে নেয়।লিয়া বুকভরে নিঃশ্বাস নেয়। অতঃপর লিয়ার নজর যায় নিজের হাতের দিকে। এখনো জারিফের জ্যাকেট খামচে ধরে আছে।এটা দেখে লিয়ার অস্বস্তি হয়। লিয়া দ্রুত হাত ছাড়িয়ে নিয়ে মাথা নুইয়ে বলতে থাকে,,”তেমন কিছু নয়।ঠিক আছি।”

কথাটা শেষ করে লিয়া ধীর পায়ে হেঁটে গাড়িতে এসে সিটে গা এলিয়ে দেয়।লিয়ার ভীষণ ক্লান্ত লাগছে।সাথে প্রচন্ড মাথা ব্যাথা শুরু হয়েছে।আজকেই যেনো একসাথে সব সমস্যা হওয়ার ছিলো।লিয়ার গাড়িতে উঠা পর্যন্ত জারিফ লিয়াকে লক্ষ্য করে।মেয়েটা অসুস্থ তা বুঝে আসতেই জারিফ বাইরে থেকে গাড়িতে চলে আসে।লিয়া চোখ বন্ধ করে আছে।

প্রায় দুই ঘন্টা খানেক পর রাস্তা ছেড়ে দেয় পুলিশ। অতঃপর সকল গাড়ি চলতে শুরু করে। প্রচন্ড মাথা ব্যাথায় লিয়ার মাথা ছিঁড়ে আসছে এমন অবস্থা হয়েছে।পেছনে ঝাঁকুনির জন্য মাথা ব্যাথাটাও বাড়তে থাকে।সাথে লিয়ার গা গুলিয়ে আসছে। লিয়ার মনে হচ্ছে বমি হবে।এমন সময় হঠাৎ করেই লিয়া গড়গড় করে সব উগড়ে দিতে থাকে।লিয়া বমি করে নিজের গা ভাসিয়ে দেয়।মেয়েটার যে শরীর খা’রাপ করছে এটা জারিফ তখনই বুঝতে পেরেছিলো। কিন্তু এতটা হবে ভাবতে পারেনি।জারিফ গাড়ির সিটের সাথে রাখা নিজের মামের ওয়াটার বোটলটা লিয়ার দিকে বাড়িয়ে দেয়।লিয়া জারিফের দিকে ক্লান্তিভরা চোখে মুখে তাকাতেই।জারিফ কন্ঠে শীতলতা নিয়ে বলে উঠলো,,

“কুলি করে নিন।আর চোখে মুখে পানির ছিটা দিন।”

লিয়া একহাতে জারিফের থেকে বোতল নেয়।সব বমি লিয়ার গায়ে জড়ানো শালের উপর পড়েছে। গন্ধে লিয়ার আরো বেশি বমি পেতে থাকে। অবশেষে লিয়া অন্যহাতে শালটা গা থেকে ছড়িয়ে নেয়।তারপর জানালা দিয়ে ফেলে দেয়।বমি টমি এমনিতেই লিয়ার সয্য হয়না।আবার এর গন্ধ নাকে আসা মানেই আরো বমিকে ইনভাইট করা।বমির গন্ধে গা গুলানো আরো বাড়বে।তাই লিয়া এমন কান্ড করে বসে। জারিফ লিয়ার পুরো কাজকর্ম পর্যবেক্ষণ করছে।লিয়া কুলি করে চোখে মুখে পানির ছিটা দেয়।ঢকঢক করে কয়েক ঢোক পানি খায়।জারিফ পকেট থেকে টিস্যু বের করে লিয়াকে দেয়।লিয়া নিয়ে মুখ মুছতে থাকে।এদিকে লিয়ার ভীষণ শীত করতে থাকে।গায়ে কোনো শীতের পোশাক না থাকায়।লিয়া দুইহাত কচলাতে থাকে। জারিফ পুরো বিষয়টা বুঝতে পেরে লিয়াকে বলে,,

“শালটা তো দিলেন সোজা জানালা দিয়ে ফেলে।আর ওটা দিয়ে এখন কিই বা করতেন।যাইহোক, এক্সট্রা শীতের পোশাক থাকলে পড়ে নিন।এমনিতেই আপনি অসুস্থ।”

লিয়া করুন দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে,,” এক্সট্রা কিছুই আমার কাছে নেই।ব্যাগে আছে।আর ব্যাগ তো বক্সে আছে।”

জারিফ কন্ট্রাকটরকে ডেকে বলে বিষয়টা। কিন্তু কন্ট্রাকটরের,এক গেয়ে কথা শুনে জারিফের মেজাজ খা’রাপ হয়ে গেলো।এখন নাকি গাড়ি থামানো সম্ভব হবে না। এমনিতেই অনেক লেইট হয়ে গিয়েছে।শীতের দিন যাত্রীরা রেগে যাবে দেরি হলে।গাড়ি দাঁড় করিয়ে বক্স থেকে ব্যাগ বের করতে হবে।অনেকের ব্যাগ আছে। সেখানে টোকেন দেখে দেখে নামানো।সময় সাপেক্ষ তাই কিচ্ছুতেই রাজি হলো না।

পাশের মানুষটা লিয়াকে নিয়ে ভাবছে এটা দেখে এত অসুস্থতার মাঝেও কোথাও যেনো ভালোলাগা কাজ করছে লিয়ার মধ্যে।শরীর খা’রাপের মাঝেও লিয়ার সুন্দর ফিলিংস হতে থাকে।শীত সেই ফিলিংস টাকে টিকতে দিচ্ছে না।শীতে লিয়া জুবুথুবু হয়ে আসছে।লিয়া হাতের তালু ডলতে থাকে।লিয়ার পাতলা ওষ্ঠদ্বয় শীতে কাঁপছে। কোল্ড এলার্জি থাকায়।লিয়ার হাত হালকা লাল হতে থাকে।সাথে চুলকাতে থাকে।লিয়ার এহেন অবস্থা তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে পর্যবেক্ষণ করে জারিফ। লিয়ার অসুস্থতা দেখে জারিফের মায়া হয়।একটা মানুষ অসুস্থ।তাকে হেল্প করা মানবতার ব্যাপার।মেয়েটা এমনিতেই অসুস্থ।তার উপরে শীতে কাঁপছে।যদি সিরিয়াস কিছু হয় ‌।এটা মনে হতেই জারিফ নিজের গায়ের জ্যাকেট খুলে লিয়ার দিকে বাড়িয়ে দেয়।লিয়া এটা দেখেও নির্বিকার থাকে। সেইসময় জারিফ কন্ঠে একরাশ শীতলতা নিয়ে বললো,,

“এটা পড়ে নিন।শীতে কাঁপছেন তো।আর আপনার মেবি কোল্ড এলার্জি আছে।তাই এভাবে থাকা আপনার জন্য রিস্ক হবে।”

লিয়া অবাক চাহনিতে চেয়ে পাল্টা প্রশ্ন করে বসলো,,”আপনি আমাকে দিচ্ছেন।আর আপনার শীত করবে না?”

জারিফের থেকে সোজাসুজি উত্তর এলো,,”আমার থেকেও এটা আপনার বেশি প্রয়োজন। কারনটা তো বললাম।আপনি অসুস্থ।আর আমার পাশে আপনি।আপনার কিছু হলে উৎসুক জনতা আমাকেই প্রশ্ন করবে।কি হয়েছে? আমি কেনো খেয়াল করিনি,হেনোতোনো।সাহায্য কেউ করবে না।অথচ দোষ ধরার বেলায়,একধাপ এগিয়ে থাকবে।সো লেইট না করে জলদি পরে নিন।”

জারিফের কথাটা লিয়ার মনোঃপুত হলো না।লোকজনের কথা ভেবে জারিফ লিয়াকে হেল্প করছে।এরকমটা শুনে লিয়া আশাহত হয়।ইশ!নিজে থেকে অদৃশ্য টান থেকে যদি কেয়ার করতো।তাহলে কি এমন ক্ষতি হতো।শুধু হিউম্যানিটি ছাড়া যদি বেশি কিছু হতো।তবে আমি নিজেকে লাকী মনে করতাম।রিজন,আই হেভ লস মাই সেন্স টু সী ইউর এটিটিউটড।লিয়াকে চুপচাপ দেখে জারিফ আর দ্বিতীয় কথা না বলে সোজা জ্যাকেটটা লিয়ার কোলের উপর দেয়।লিয়া কিছুক্ষণ জিদ ধরেই থাকে পড়বে না বলে।তবে শীত বোধহয় লিয়ার সেই জিদটাকে টিকতে দিলো না।তাইতো লিয়া হাড়কাঁপানো শীতের কাছে পরাজিত হয়ে জ্যাকেটটা গায়ে জড়িয়ে নিলো।জ্যাকেটের থেকে কড়া পারফিউমের স্মেইল আসছিলো।লিয়া নাক টেনে সুঘ্রাণ নিতে থাকে।দুইহাতে জ্যাকেটটা আরেকটু ভালোভাবে জড়িয়ে নেয়।বমি করার জন্য লিয়ার শরীর অনেকটা দুর্বল হয়।শরীর দুর্বল হওয়ার জন্য চোখ বন্ধ করে থাকার একপর্যায়ে লিয়া ঘুমিয়ে পড়ে। গাড়ি আবার চলার আগে লিয়া বাসায় ফোন করে বলেছিলো,গাড়ি চলছে।শরীর খা’রাপ লাগছে সেসব আর বলেনি ‌এমনিতেই অনেক রাত হয়ে যাবে।এই নিয়ে বাসার সবাই অনেক টেনশন করছে।তার উপর অসুস্থতার কথা বলা মোটেও সমীচিন হবে না।লিয়া মনে করে।তাই অসুস্থতার কথা বলেনি।

জারিফের গায়ে টিশার্ট।হালকা শীত করছে।তবে সেসবে পাত্তা নেই।জারিফ বেশ স্বাভাবিক ভাবেই আছে।এমন সময় জারিফের কাঁধের উপর কিছু পড়ে।জারিফের বুঝতে বাকি থাকে না।লিয়া ঘুমিয়ে পড়েছে।আর ঝাঁকুনির ফলে লিয়ার মাথাটা নিজের সিট থেকে সরে জারিফের দিকে ঝুঁকে পড়ছে।জারিফ লিয়ার ঘুমন্ত ফেসের দিকে তাকিয়ে দেখে। মনে হচ্ছে নিশ্চিতে প্রশান্তিতে বিভোরে ঘুমাচ্ছে।ডাকতে গিয়ে জারিফ থেমে যায়।ভাবে,থাক অসুস্থ যেহেতু কি আছে ডেকে ঘুমটা ভেঙে দেওয়ার।তাইভেবে জারিফ একহাতে আলতোকরে লিয়ার মাথাটা সিটে ঠিক করে দেয়। ঝাঁকুনির দরুন এরকম মাঝে মাঝেই হতে থাকে।আর প্রতিবার লিয়ার মাথাটা সিটে ঠিক করে দেয়। তিন-চার এরকমটা হওয়ার পর।জারিফ তপ্ত নিঃশ্বাস ফেলে। অবশেষে জারিফ চুপচাপ থাকে।লিয়ার মাথাটা জারিফের কাঁধের উপর থাকে।জারিফের কাঁধে মাথা রেখে লিয়া প্রশান্তিময় ঘুমাচ্ছে।জারিফ যদিও প্রচন্ড বিরক্তবোধ করছে। নেহাত-ই অসুস্থ মানুষ দেখে কিছু বলতেও পারছেনা।আর মেয়েটা তো ঘুমিয়ে আছে।তারও বা দোষ কিসের?দোষ সব তো সিচুয়েশনের।

[চলবে…ইন শা আল্লাহ]

(আগামী পর্বে বর্তমানে চলবে আসবো। আজকেই চেয়েছিলাম তা হলো না।আর আগামীকালকে আরেক পর্ব দেওয়ার চেষ্টা করবো ইন শা আল্লাহ)

#সুখের_ঠিকানা
#শারমিন_হোসেন
#পর্ব০৭

“হ্যালো মিস?উঠুন এবার।বাসায় যাবেন?নাকি এভাবেই গাড়িতে ঘুমিয়ে রাত পার করে দিবেন।আমার কাঁধটাকে তো একদম শিমুল তুলার বালিশ বানিয়ে নিয়েছেন।”

লিয়া ঘুমের মধ্যে একটু নড়েচড়ে উঠে। পিটপিট করে চোখ মেলে তাকানোর চেষ্টা করে। টেনেটুনে চোখের পাতা খুলে নিজের মাথাটা জারিফের কাঁধে দেখতে পাওয়ার সাথে সাথেই লিয়া দ্রুত ছিটকে দূরে সরে বসে। লজ্জায় মাথা নুইয়ে রাখে।

জারিফ সিট থেকে উঠে দাঁড়িয়ে লিয়ার দিকে শান্ত চাহনিতে চেয়ে ফের বলে উঠলো,,”গাড়ি চলে এসেছে।তা নামবেন?নাকি এভাবেই থাকবেন?যদিও আপনার ঘুম ভাঙ্গানোর আমার কোনোই ইচ্ছে ছিলো না।তথাপি না ভাঙ্গিয়ে উপায়-ও ছিলো না।আমাকে নামতে হবে।আর গাড়ি শহরে পৌঁছে গিয়েছে।এটাই লাস্ট স্টপেজ।”

কথাটা শেষ করেই জারিফ বাস থেকে নামার প্রস্তুতি নিতে থাকে। লিয়া ভাবে, কতক্ষন এভাবে ছিলাম? আল্লাহ মালুম। বিষয়টা কি বাজে আর বিশ্রী। উফ্!লজ্জায় আর অস্বস্তিতে লিয়ার গলা কাঁপছিলো কথা বলতে।তবুও লিয়া স্বাভাবিকভাবে বলার চেষ্টা করে।লিয়া মৃদুস্বরে বলে উঠলো,,”হ্যা।আমিও নামবো।”

জারিফ দ্বিতীয় কথা না বলে নিজের মতো নামতে থাকে।লিয়া জারিফের পিছু পিছু নামতে থাকে।জারিফ বাস থেকে নামতেই লিয়া পেছন থেকে ডেকে বলে উঠলো,,”এই শুনুন ,শুনুন।”

জারিফ থেমে যায়।ঘাড় ঘুরিয়ে লিয়ার দিকে তাকিয়ে ডান ভ্রু নাচিয়ে ইশারায় বোঝায়,”কি সমস্যা?”

লিয়া নিজের গায়ে থাকা জ্যাকেটের দিকে ইশারা করে বলে,,”এটা ফেলে যাচ্ছেন যে।”

কথাটা শেষ করেই লিয়া জ্যাকেটটা খুলতে যাবে। সেই মূহূর্তে জারিফ বললো,,”থাক লাগবে না।”

লিয়া ঠোঁট প্রসারিত করে কিছু বলতে যাবে।তার আগেই অতিপরিচিত কন্ঠস্বরে রাস্তার ওপাশ থেকে ডেকে উঠলো লিয়াকে। কন্ঠটা শুনে লিয়ার এক সেকেন্ডও দেরি হলো বুঝতে।কে ডাকছে।লিয়ার আব্বু মোটা গলায় লিয়াকে ডেকে রাস্তা পার হয়ে এ পার আসতে থাকে।জারিফকে কিছু বলার ইচ্ছা থাকলেও এনামুল খানের উপস্থিতি নজরে আসতেই লিয়া থেমে যায়। এনামুল খানের দিকে এগিয়ে যেতে থাকে লিয়া। ড্রাইভার আঙ্কেল এসে লিয়ার ব্যাগটা গাড়িতে তুলতে থাকে। রাস্তার পাশের হলুদ রঙের সোডিয়ামের আলো জ্বলছে।তাতে সবকিছু স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে।লিয়া খানিকটা ভ’য় পাচ্ছিলো আব্বু কড়াকরে কিছু বলবে হয়তো। কিন্তু লিয়াকে অবাক করে দিয়ে এনামুল খাঁন গাড়ির দরজা খুলে কন্ঠে একরাশ স্নেহ মিশিয়ে বললেন,,

“লিয়া তোমাকে ভীষণ ক্লান্ত দেখাচ্ছে।তোমার শরীর খা’রাপ করছে কি?চোখ মুখ কেমন জানি ফ্যাকাশে লাগছে।তুমি ঠিক আছো?”

লিয়ার মনটা উসখুস করছিলো জারিফের থেকে বিদায় নিয়ে আসতে।আর মিষ্টি করে একটা থ্যাংকস দিতে। কিন্তু সেসব আর হলো কই।তার আগেই আব্বু চলে আসলো।লিয়া তপ্ত নিঃশ্বাস ফেলে বলে,,”হুম।গাড়িতে বমি হয়েছিলো।এখন ঠিক আছি।তারপরেও খুব টায়ার্ড লাগছে।”

এনামুল খাঁন গম্ভীর কন্ঠে বললেন,,”বাসায় চলো।তোমার আম্মু খুব টেনশন করছে।”

লিয়া ঘাড় ঘুরিয়ে জারিফের দিকে একনজর তাকায়।দুইহাত প্যান্টের পকেটে গুজে দাঁড়িয়ে আছে।হয়তো রিকশার জন্য ওয়েট করছে।লিয়া পিছন দিকে তাকিয়ে হাঁটতে গিয়ে হোঁচট খায়।মৃদু আওয়াজে আহ্ শব্দ উচ্চারণ করে। তারপর দ্রুত গাড়িতে উঠে বসে।

শীতের কুয়াশাচ্ছন্ন রাতে রিকশার দেখা মেলা ভার। প্রায় মিনিট পাঁচেকের মতো দাঁড়িয়ে থেকে কোনো রিকশা বা অটোর দেখা না পেয়ে জারিফ হেঁটে সামনে এগোনোর কথা ভাবে।কয়েকপা এগিয়ে যেতেই জারিফের দৃষ্টি পড়ে পিচের রাস্তায় জ্বলজ্বল করে জ্বলে থাকা বস্তুতে।জারিফ কৌতুহল বশত ভালো করে নজর দেয়।একটা পায়েল দেখতে পায়।জারিফের তীক্ষ্ণ নার্ভ জানান দিচ্ছে এই পায়েলটা সে কোথাও দেখেছে। প্রায় দশ সেকেন্ড পর জারিফের মস্তিষ্ক স্থির করে,পায়েলটা বাসে বসা মেয়েটার। আজকে বাস যখন থেমে ছিলো।ঐসময় লিয়া গাড়িতে উঠছিলো।তখন জারিফ লিয়াকে লক্ষ্য করতে গিয়ে পায়েলটা নজরে পড়েছিলো।জারিফ একহাতে পায়েলটা তুলে নেয়।তারপর আলগা ময়লা ঝাড়তে ফু দেয়। সযত্নে নিজের পকেটে রেখে দেয়।
.
দুইদিন পর,,
নাতাশা ওর মিসের সাথে গেইটের সামনে দাঁড়িয়ে আছে।এমন সময় নাতাশা ঘাড় উঁচু করে সুমি মিসের দিকে তাকিয়ে বললো,,”মিস মামা এখনো আসছে না কেনো?”

সুমি স্মিত হেসে বলে,,”চলে আসবে এখনই।আমি ফোন করে বলেছি তো।আসতে একটু সময় লাগছে।এই আরকি।কেনো নাতাশা বেবি। তোমার কি কোনো সমস্যা হচ্ছে?”

নাতাশা ঘাড় নাড়াতে নাড়াতে বলে,,”উহুম।সমস্যা হচ্ছে না। উফ্!তবে প্রচন্ড পানি পিপাসা পেয়েছে।”

“তাহলে ভিতরে চলো। ততক্ষণে পানি খেয়ে আসবে।আর এরমধ্যে তোমার মামা চলে আসবে।”

নাতাশা কিছু ভেবে ঠোঁট উল্টিয়ে বলে,,”নাহ্ ,মিস।থাক।বাসায় গিয়েই খাবো। মামা তো এখনই চলে আসবে বলছো।”

নাতাশা আবার ভিতরে যেতে রাজি না হওয়ায় সুমি বলে,,”আচ্ছা।ঠিক আছে,বাবা।তুমি এখানে চুপটি করে দাড়িয়ে মামার জন্য অপেক্ষা করো।আমি বাসার ভিতর থেকে তোমার জন্য ওয়াটার নিয়ে আসছি।কেমন?”

সুমি ভিতরে যায়। নাতাশা চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকে।একহাতে জামার সামনে থাকা কাপড়ের ফুলটা নাড়তে থাকে।লিয়া প্রাইভেট পড়তে আসছিলো। গেইট দিয়ে ঢুকে সামনে নাতাশাকে দেখে কাছে এগিয়ে যায়। নাতাশার সামনে দাঁড়িয়ে মিষ্টি হেসে বলে,,”হ্যালো কিউটি পাই!কেমন আছো?”

নাতাশা কোনো উত্তর না দিয়ে কপাল কুঁচকে লিয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে।কোনো উত্তর না পেয়ে লিয়া অবাক হয়।লিয়া নাতাশার দিকে ঝুঁকে একহাতে নাতাশার গাল ছুঁইয়ে দিয়ে বলে,,”কিউটি পাইয়ের কি মন খা’রাপ?কথা বলছো না যে।তোমার মামার জন্য ওয়েট করছো বুঝি?”

মামা কথাটাশুনে নাতাশার কপালের ভাঁজ প্রগাঢ় হয়।নাতাশা ভাঙ্গা ভাঙ্গা স্বরে সুন্দর করে বলে উঠলো,,”তুমি মামাকে চেনো?কে তুমি?আর আমি অপরিচিত কারো সাথে কথা বলি না,হু।”

লিয়া অবাক চোখে তাকিয়ে ঠোঁট উল্টে বলে,,”বাব্বাহ!”

নাতাশার কপালের উপর আসা চুলগুলো একহাতে সরিয়ে দিয়ে লিয়া মিষ্টি হেসে ফের বলে,,”আমি তোমার মামাকে চিনি।খুব ভালো করে।তোমার মামা আমার পরিচিত।তাহলে এবার আমাকে অপরিচিত বলো না, প্লিজ।”

নাতাশা ঠোঁট মেলে হাসে।তারপর উচ্ছ্বসিত কন্ঠে বলে,,”ওহ্!তাই বুঝি।তুমি মামার পরিচিত। আচ্ছা আগে বলো,কিকরে মামাকে চিনো তুমি?”

“কিউটিপাই সেসব নাহয় পরে বলবো। তার আগে তুমি বলো,এখানে একা একা দাঁড়িয়ে আছো যে।”

নাতাশার এখানে একা দাঁড়িয়ে থাকার কারন শোনার সাথে সাথেই লিয়া পিঠ থেকে নিজের ব্যাগটা নামিয়ে ওয়াটার বোটলটা বের করে নাতাশাকে পানি খাইয়ে দেয়।জারিফ গেইট দিয়ে ভেতরে আসতে গিয়ে এটা দেখতে পায়।লিয়া সুন্দর করে নিজের ওড়না দিয়ে নাতাশার মুখটা মুছে দেয়।নাতাশা মিষ্টি হেসে বলতে থাকে,,”তুমি আমার খালামনির মতো মিষ্টি।আমার খালামনিও আমাকে এভাবে আদর করে খাইয়ে দেয়। আবার মুখ মুছে দেয়।তুমি জানো আমার আরেকটা ভালো আন্টিও আছে।সেও আমায় খুব আদর করে।”

লিয়া মৃদু হাসে। অতঃপর বলে,,”আমাকেও তোমার আরেকটা আন্টি ভাবতে পারো।”

নাতাশা কয়েক সেকেন্ড ভেবে নিয়ে ফের বলে উঠলো,,”তোমাকে কি বলে ডাকা যায়।উমম!মিষ্টি আন্টি।তুমি অনেক মিষ্টি দেখতে।তাই তোমাকে মিষ্টি আন্টি বলবো,কেমন।”

লিয়া নাতাশার গালে টুপ করে একটা চুমু খেয়ে নিঃশব্দে হেসে বলে,,”ওকে সোনা।”

এমন সময় পরিচিত গলার আওয়াজ শুনে লিয়া পেছন ঘুরে তাকায়।জারিফ ডেকে বলে,,”নাতাশা।”

নাতাশা জারিফের দিকে তাকিয়ে ঝকঝকে দাঁত বের করে হাসে।একদৌড়ে জারিফের কাছে চলে যায়।জারিফ নাতাশার হাত ধরে চলে যেতে নেয়।কয়েক পা সামনের দিকে অগ্রসর হতেই।জারিফ থেমে যায়।নাতাশাকে বলে এখানে দাঁড়াও।আমি আসছি ওয়ান মিনিট। নাতাশা মাথা ঝাঁকিয়ে হ্যা সম্মতি দিতেই জারিফ লিয়ার দিকে এগিয়ে আসে। জারিফ যতই লিয়ার দিকে এগিয়ে আসছে।আর ক্রমশ লিয়ার হার্টবিট বেড়ে চলছে।লিয়ার হৃদযন্ত্রটা বোধহয় ছিটকে বাইরে বেড়িয়ে আসার উপক্রম। কেনো জানি না এই মানুষটাকে দেখলে লিয়ার চিন্তা ভাবনারা এলোমেলো হয়ে যায়।সেদিনের পর থেকে চোখ বন্ধ করলেই সুদর্শন আকর্ষণীয় ফেসটা মনের আয়নায় ভেসে উঠে।লিয়া ওড়নার কোনা হাতের মুঠোয় পাকিয়ে নিজেকে স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।জারিফ লিয়ার সামনে এসে থামে। বিষয়টাতে লিয়া আশ্চর্যান্বিত হয়।লিয়ার অবুঝ মন নানান কিছু ভেবে চলছে।সেই মুহূর্তে জারিফ পকেট হতে কিছু একটা বের করে লিয়ার সামনে মেলে ধরে। জারিফের হাতে নিজের পায়েলটা দেখে লিয়া অবাক হয়।পায়েলটার আশা দুইদিন আগেই লিয়া ছেড়ে দিয়েছিলো।সেদিন রাতে বাসায় গিয়ে ফ্রেশ হতে বসেই লিয়ার নজরপড়ে পায়ে পায়েল নেই।পায়েলটা বাইরে পড়েছে এটা লিয়া শিয়র হয়।তাই এটা পাওয়ার আশাও রেখেছিলো না। এইমূহুর্তে জারিফের কাছে পায়েল দেখে লিয়ার নিটোল কপালে সুক্ষ্ম ভাঁজের সৃষ্টি হয়।

“এটা বোধহয় আপনার। আমার যদি ভুল নাহয় তাহলে এটা আপনার-ই হবে।কি হলো কথা বলছেন না যে। আপনার নয় এটা?”

লিয়া নিজেকে ধাতস্থ করে।অবাক হয়ে বলে,,”হ্যা। এটা আমার।আপনি কোথায় পেলেন?”

জারিফের একশব্দে স্পষ্ট উত্তর,,”রাস্তায়।”

জারিফ একটু থেমে ফের বলে,,”আপনি পড়তে আসবেন।এটা ভেবেই সাথে করে নিয়ে এসেছিলাম।বাই দ্যা ওয়ে,কালকে বোধহয় আপনি পড়তে আসেননি?”

জারিফের কথার পিঠে লিয়া চঞ্চল কন্ঠে বলে উঠলো,,”কেনো আমায় খুজেছিলেন বুঝি? এছাড়া তো জানার কথা নয়।আমি যে কাল পড়তে আসিনি।”

“হুম।”

জারিফের হ্যা সূচক উত্তরে লিয়ার মনে খুশিতে লাড্ডু ফোঁটে।লিয়ার অবুঝ মন সেকেন্ডেই রঙিন স্বপ্ন দেখতে শুরু করে।লিয়া মনেমনে আওড়ায়, তাহলে কি আমার মতো উনিও আমাকে মিস করছিলেন?আমার কথা ভাবছিলেন?আমাকে দেখার জন্য ওনার মনটা ছটফট করছিলো?

লিয়ার আকাশ কুসুম ভাবনার মাঝেই জারিফ গম্ভীরভাবে বলে উঠলো,,”পায়েলটা আপনাকে ফেরত দেওয়ার জন্য আপনার খোঁজ করেছিলাম।”

কথাটা শেষ করেই লিয়ার হাতে পায়েলটা ধরিয়ে দিয়ে জারিফ পিছন ফিরে চলে যেতে থাকে।জারিফের যাওয়ার দিকে লিয়া আহত দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে।জারিফের শেষের কথা লিয়ার মনমতো না হওয়ায় লিয়ার মুখভার হয়ে আসে।তবে পায়েলের দিকে নজর দিয়ে লিয়ার ঠোঁটের কোণে এক চিলতে হাসি ফোটে।লিয়া ভাবে,সামান্য একটা পায়েল এত সযত্নে নিজের কাছে রেখেছেন।আবার ব্যাক করার জন্য সাথে করে নিয়ে দুইদিন ঘুরছে।বিষয়টা কি এমনি এমনি?এই এমনি এমনির মাঝে কি কোনো কিছুই নেই?

এমন সময় সুমি এসে লিয়াকে নাতাশার ব্যাপারে জিগ্গেস করে বলে,,”এখানে একটা বাচ্চা মেয়ে ছিলো।লিয়া তাকে দেখেছো?”

লিয়া কিছু বলার আগেই সুমির ফোনে মেসেজ আসে।জারিফ টেক্সট করেছে। টেক্সট টা পড়ে সুমি বলে উঠলো,,”ওহ্।ওর মামা নিয়ে গিয়েছে।আমার একটা কল আসায় আসতে আসতে দেরি হয়ে গেলো।”

কথাগুলো শেষ করে সুমি প্রস্থান করে। লিয়া পায়েলটা হাতের মুঠোয় শক্ত করে ধরে ঠোঁটের কোণে বিস্তৃত হাঁসি রেখে গুনগুনিয়ে গাইতে থাকে,
মার ভি গায়ি তো মে তুঝে,কারতি রাহুঙি পেয়ার।সাতো জনম মে তেরা,সাত রাহুঙি ইয়ার।

এরমধ্যে রুপন্তী এসে লিয়াকে পরখ করে। সন্দিহান দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে,,”কি ব্যাপার লিয়া।মুখে গ্লুকোজ মার্কা হাসি।তারপর গুনগুনিয়ে গাইছিস।ব্যাপার স্যাপার কি দোস্ত?”

লিয়া এতক্ষণ খেয়ালই করেনি রুপন্তীকে। রুপন্তীর কথায় লিয়া হকচকিয়ে উঠে।লিয়া নিজেকে তটস্থ করে আমতা আমতা করে বলতে থাকে,,” ক কই কিছু নাতো।এমনি। রুপু তোর শুধু আজগুবি কথাবার্তা।”

রুপন্তী অবাকের সুরে বলে,,”আমি আবার আজগুবি কি এমন বললাম? অদ্ভুত! আচ্ছা হয়েছে। এখানে দাঁড়িয়ে থাকবি নাকি ভেতরে যাবি।”

রুপন্তী সামনের দিকে এগিয়ে যেতে থাকে।সেই মুহূর্তে
লিয়া পিছু ডেকে বলতে থাকে,,
“ওয়েট,ওয়েট।এই রুপু।”

রুপন্তী পিছন ফিরে তাকিয়ে ইশারায় বোঝায়,,”কি হয়েছে?”

লিয়া এগিয়ে যায়।এক আঙ্গুল নাকের দিকে ইশারা করে বলে,,”দেখতো আমার নাকটা কি চাইনিজদের মতো বোচা?আমার চোখ কি ব্যাকা?দেখতে কি আমি খুব কুৎসিত?”

লিয়ার এহেন প্রশ্নে রুপন্তী অবাকের উপর অবাক হয়।বিস্ময়কর চাহনিতে চেয়ে রুপন্তী শুধায়,,”হঠাৎ এমন প্রশ্ন করছিস? আশ্চর্য!তোর এমন কথার ধরণ সবকিছু আমার মাথার দশ ইঞ্চি উপর দিয়ে গিয়ে বারি খেয়ে গেলো।এমন বোকা বোকা প্রশ্ন কেনো দোস্ত।মাথা টাথা ঠিক আছে তোর?তুই সুন্দরী এটা বলার অপেক্ষা রাখে না।তবে এরকম বো”কা প্রশ্ন শুনে আমি আশ্চর্যান্বিত হচ্ছি।”

“মাথা আমার অলওয়েজ ঠিক থাকে।আর এখনও আছে।তবে মনটা ঠিক নেই।ভাবছি আমার প্রতি কারো ফিলিংস না আসার কারন কি হতে পারে?আমার মায়ায় না পড়ার কারন কি হতে পারে?”

রুপন্তী ঠোঁট কামড়ে ধরে বলে,,”কেউ কেউ সৌন্দর্যের মায়ায় পড়ে।কেউ আবার কারো কথার মায়ায় পড়ে।কেউ কারো চোখের মায়ায় পড়ে।কেউ আচরণের মায়ায় পড়ে।বুঝলি।”

“হুম। বুঝলাম।তবে আমি চাই আমার প্রিয় মানুষ আমার সব কিছুর মায়ায় জড়াবে।তার চোখের নীলাভাকার জুড়ে আমার বসবাস হবে।তার রাজ্য জুড়ে আমার রাজত্ব চলবে। সেখানে অন্যকারো ছায়াও থাকবে না।হাজারো ব্যস্ততার মাঝে আমার মুখটা তার দুচোখে ভেসে উঠবে। দিনশেষে সে আমাকেই খুঁজবে।সকল সমস্যার মাঝেও তার সুখের ঠিকানা আমি হতে চাই।জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত সে একটি কথাই বলবে,তুমিই আমার সুখের ঠিকানা।”
.
.
বর্তমান,,,,,
লিয়া অস্পষ্ট স্বরে বিড়বিড় করে বলে,সেই স্বপ্ন আমার স্বপ্ন-ই রয়ে গেলো। উফ্!সেটাকে এখন আর আমি স্বপ্ন মনে করি না।সেটা শুধুই আমার জন্য দুঃস্বপ্ন ছিলো।আমার স্বপ্নগুলোকে নদীর শেষে নীল আকাশের কিনারায় ফেলে দিয়েছি।সময়ের বালু ঝরে সবকিছু কেমন এলোমেলো হয়ে গেলো।আমি আপনাকে নিয়ে সুখের ঠিকানার রঙিন স্বপ্ন দেখলেও।আপনিতো অন্য কাউকে নিয়ে স্বপ্ন দেখেছেন।সব কিছুকে অমিট করা গেলেও ভাগ্যকে কখনো অমিট করা যায়না।

তুলি সরু নজরে তাকিয়ে একহাতে লিয়াকে ধাক্কা দিয়ে বলে,,”এই লিয়া, লিয়া।কোথায় হারিয়ে গেলি?আর কিসব বিড়বিড় করে বলছিস?কি হয়েছে?কোন জগতে আছিস তুই,হ্যা?”

তুলির ধা”ক্কায় লিয়ার হুঁশ ফেরে। লিয়া নিজেকে ধাতস্থ করে দীর্ঘশ্বাস ফেলে ঘনঘন বলতে থাকে,,”কই কিছু নাতো।”

লিয়া চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ায়। ভেতরে যেতে থাকে।তুলি একহাত উঁচু করে ডেকে বিরক্তিকর কন্ঠে বলে,,
“এই লিয়া।তোকে কি বললাম।তুই কিছুই তো বললি নাহ্।ইভেন জারিফ ভাইয়া আর বাচ্চা মেয়েটার ছবি দেখালাম।তবুও কিছুই বললি না যে।কিছু তো একটা বল।”

লিয়া রুমের ভেতর যেতে যেতে বলে,,”তোকে অতো ভাবতে হবে না।আর বাচ্চাটার নাম নাতাশা। ওনার বোনের মেয়ে।”

তুলি জিহ্বায় কামুড় দিয়ে ঠোঁট আওড়ায়।এইরে না জেনেশুনে কতকি বলে ফেললাম।
.
.
ওদিকে জারিফরা বাসায় যাওয়ার পর নাতাশা এসে গাল ফুলিয়ে বলতে থাকে,,”তোমাদের সবার সাথে আমার আড়ি আড়ি আড়ি।তোমরা আমাকে নিয়ে যাওনি কেনো?খালামনি বললো তোমরা মামার জন্য বউ দেখতে গিয়েছো?আর আমার জন্য মামী আনতে।”

নীল এসে ধপ করে সোফায় বসে পড়ে।নাতাশাকে উদ্দেশ্য করে মুচকি হেসে বলে উঠে,,”এইযে নাতাশা তোমার জন্য তো বাতাসা আনি নাই।তাই বুঝি গাল ফুলিয়ে টমেটো বানিয়ে রেখেছো।মন খা’রাপ করো না।এর পরের বার ঠিকই বাতাসা নিয়ে আসবো।”

নাতাশা নাকমুখ কুঁচকে বলে,,”নীল মামু তোমাকে কতবার বলবো,আমি বাতাসা খাইনা।”

নাতাশা জারিফের হাত ঝাঁকিয়ে ভাঙ্গা ভাঙ্গা গলায় ফের বলতে থাকে,,”মামা তুমি কেনো আমাকে নাওনি বলো।আমি মামীকে দেখতে চাই চাই চাইই।”

জারিফ একহাতে নাতাশার চুলগুলো ঠিক করতে করতে বলে,,”সরি।তোমাকে না নিয়ে যাওয়ার জন্য।অতদূর জার্নি করলে তোমার শরীর খা’রাপ করবে তাই নেওয়া হয়নি।উম!সোনা তুমি খুব শীঘ্রই তোমার হবু মামীকে দেখতে পারবে কেমন। তোমার জন্য সারপ্রাইজ আছে।”

নাতাশা অবাক হয়ে বলে,,”সারপ্রাইজ!ওয়াও!কিসের সারপ্রাইজ মামা?”

জারিফ হাঁটু ভেঙ্গে নাতাশার সামনে বসে বলে,,”বললে তো সারপ্রাইজ থাকবে না সোনা। সিক্রেট থাকলো কেমন ‌। কয়দিন পর তোমার বার্থডে সেখানে তোমার মামীকে দেখতে পাবে।আর আমি শিয়র দেখে তুমি একদম সারপ্রাইজড হয়ে যায়। এবং খুব খুশি হবে।”

নাতাশা জারিফের গালে চুমু খেয়ে হাসিমুখে বলে,,”ঠিক আছে।”
.
.
তুলি তুষার লিয়াদের বাসায় এসেছে আজকে দুপুরে।আজকে নাতাশার জন্মদিন উপলক্ষে জারিফদের বাসায় সবার দাওয়াত আছে ‌।সবাইকে দাওয়াত দিলেও বিভিন্ন কাজের জন্য বড়রা যেতে পারবে না।তবে ইনভাইট রক্ষার্থে ছোটরা যাবে। সন্ধ্যার পর যাবে।এখন সন্ধ্যা হয়ে আসছে।তুলি আসার পর থেকে লিয়াকে বলে চলেছে।অথচ লিয়ার এক-ই কথা।সেখানে কোনো নড়চড় নেই।লিয়ার একটিই কথা।শরীর খা’রাপ লাগছে।সো এখন কোথাও যাওয়া সম্ভব নয়।লিয়া ওর রুমের বিছানার একপাশে বসে আছে।তুলি পা ঝুলিয়ে বেডে শুয়ে আছে।লিয়ার আবারো একই জবাবে তুলি শোয়া থেকে উঠে বসে। দাঁতে দাঁত চেপে বলে,,

“এই লিয়া কখন থেকে বুড়ো মানুষের মতো একই কথা বলে চলেছিস,হ্যা।বুড়ো মানুষের মতো তোর কি জয়েন্টে জয়েন্টে পয়েন্টে পয়েন্টে ব্যাথা নাকি?যে কোথাও গেলে শরীরের ব্যাথা বাড়বে।সেই ভ’য়ে কোথাও যেতে চাইছিস না?ঘরকুনো হয়ে থাকতে চাইছিস।”

ব্যাথাটা শরীরের নয়।ব্যাথাটা মনের।শরীরের ব্যাথার জন্য মেডিসিন আছে।মেডিসিন নিয়ে শরীরের ব্যাথা কি’ল করা যায়।তবে মনের ব্যাথার কোনো মেডিসিন নেই কেনো? পৃথিবী তো এখন অনেক এগিয়ে গিয়েছে। পৃথিবী ছেড়ে মানুষ হাজার হাজার আলোকবর্ষ দূরের নাম নাজানা গ্রহ উপগ্রহের তথ্য কালেক্ট করছে।কত কিছু আবিষ্কার হয়েছে।সেখানে বিজ্ঞানীরা আজও কেনো মনের ব্যাথার মেডিসিন আবিষ্কার করতে সক্ষম হয়নি?”

উফ্!লিয়া আড়ালে তপ্ত নিঃশ্বাস ফেলে ফের মনেমনে আওড়ায়, উফ্!আমি যেতে চাচ্ছি না।এর পিছনে কারন একটাই।ঐ মানুষটার মুখোমুখি হলেই।না চাইতেও আমার হৃদয়ে ব্যাথা অনুভব হয়।যাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখছিলাম।আমার প্রথম ভালোলাগা আর প্রথম ভালোবাসার অনুভূতির মানুষ।সে কিনা আমারই বড় বোনের উডবি।আমি মনকে শত বোঝানোর চেষ্টা করছি।নিজেকে স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করছি।তবুও বেহায়া মন।আমার বেহায়া নজর ঘুরেফিরে ঐ মানুষটাতেই নিবদ্ধ হয়।কিকরে আমি আমার বেহায়া মনকে বোঝাই?বোঝানোর কোনো ভাষা নেই। প্রেমে পড়লে সবাই কি আমার মতোই এতটা বেহায়া হয়?নাকি আমি নিজেই এতটা বেহায়া?তার থেকে পাওয়া অপমান নিয়েও আমার মনটা বারংবার তাকেই খোঁজে।তবে যাইহোক না কেনো।আমার অনুভূতিগুলোকে আর জাগ্রত করা মোটেও ঠিক হবে না। যতদ্রুত সম্ভব তাকে নিয়ে সৃষ্টি হওয়া আমার সব ফিলিংস ধুয়ে মুছে সাফ করতে হবে।তবে আদৌ কি কখনো সম্ভব হবে?

এসব কথা মনেমনে ভেবে লিয়া মাথা ঝাড়া দিলো।লিয়ার একরোখা জবাব ফের এলো,,”তোরা সবাই তো যাচ্ছিস যা।আমার ভালো লাগছে না।তাই যেতে পারবো না।”

তুলি দাঁত পিষে ফের বললো,,”আঠারো বছর বয়স কবিতা পড়েছিস কখনো?কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য কি বলেছেন,আঠারো বছর বয়সীরা সব কিছু করতে পারে,হুম।শুধু এরজন্য মনে জোড়,উদ্দামতা আর সাহস থাকতে হবে।এই বয়সে কোনো না শব্দ মানায় না।তাই বলছি এই শরীর ভালো লাগছে না। হেনোতোনো কথা বাদ দিয়ে ফাস্ট রেডি হয়ে নে।তুই না গেলে আপুও ভীষণ মন খা’রাপ করবে।এমনিতেই আব্বু অসুস্থ আবার চাচ্চুরা অফিসের কাজে ব্যস্ত থাকায় যেতে পারছেন না।”

রাজিয়া সুলতানাও লিয়াকে কয়েকবার বলার পর অবশেষে লিয়া অনিচ্ছা সত্ত্বেও রেডি হয়।লিয়ার চাচাতো ভাই তুষার ড্রাইভ করছে।সামনে রাহবার বসেছে। পিছনে তুলি আর লিয়া। তাসনিম মেডিকেলে আছে।ওখান থেকে ওর যাওয়ার কথা আছে।”
.
পুরো বাড়ি জাঁকজমকপূর্ণভাবে সুন্দর করে ডেকোরেশন করা হয়েছে।নাতাশা পিংক কালারের বার্বি লং ড্রেস পড়েছে। উপরের চুলগুলো প্রজাপতি ক্লিপ দিয়ে আটকানো।বাড়ির সবাই এটাসেটা কাজে ব্যস্ত। গেস্টরা আসতে শুরু করেছে। এরমধ্যে নাতাশা জারিফের পাশে এসে দাঁড়িয়ে বলে,,”মামা সবাই আসছে তো।মামী কই?মামী এখনো আসছে না যে।আর আমার সারপ্রাইজ?”

জারিফ স্মিত হেসে বলে,,”ওয়েট করো সোনা মামী এখনি চলে আসবে।আর তুমি তোমার মামীকে আগে থেকেই চেনো।উম!দেখলেই তুমি আশ্চর্য হবে।”

নাতাশা বড়বড় চোখ করে বলে উঠলো,,”তাই।ওয়াও!”

জারিফ পকেট থেকে ফোন বের করে তাসনিমের কাছে কল করতে থাকে।

[চলবে…ইন শা আল্লাহ]