সুখের নেশায় পর্ব-৩৯+৪০+৪১

0
553

#সুখের_নেশায়
#লেখিকাঃআসরিফা_সুলতানা_জেবা
#পর্ব___৩৯

আকাশে ঘনঘটা অন্ধকার। তারাদের উপস্থিতি নেই। মাঝে মাঝে গুড়ুম গুড়ুম শব্দে ডেকে চলেছে অন্তরিক্ষ। মেঘেরা গলে বৃষ্টিরূপে পৃথিবীতে ঝরে পড়ার তোরজোর চালাচ্ছে। চৈত্রিকা শাড়ি সামলে দ্রুত বেরিয়ে এলো। মায়ের বুকে পড়ে বধূবেশে সজ্জিত লাল টুকটুকে বেনারসি পড়া মেয়েটাকে কাঁদতে দেখে ওর চক্ষু কোল ভিজে উঠল। শূণ্যতায় খা খা করে উঠে মন। কত দ্রুত হয়ে গেল সবকিছু। পিচ্চি বোন টা আজ অন্য কারো বউ হয়ে বিদায় নিচ্ছে। খুশিতে অশ্রু ভিড় জমিয়েছে চৈত্রিকার নেত্রযুগলে। সবকিছু এত সুন্দর হচ্ছে কেন?বুঝ হওয়ার পর থেকে একটু একটু করে ভিতরে ভিতরে প্রতিনিয়ত দুঃখ নিয়ে বাড়ন্ত মেয়েটার আজ মনে হচ্ছে জীবনটা সুন্দর। সুন্দর!জীবনে এক ফালি সুখ নিয়ে আগমন করা ব্যক্তি টা। সামান্য দূরে দৃষ্টি স্থির করল চৈত্রিকা। সাফারাত পাঞ্জাবির হাতা গুটিয়ে দাঁড়িয়ে আছে গাড়িতে হেলান দিয়ে। নিমিষেই তার অপলক চাহনিতে দৃষ্টি নিক্ষেপ করল ধূসর রঙা দু’টো চোখ। ভ্রুঁ উঁচিয়ে তাকালো মানুষ টা। চৈত্রিকা হতভম্ব হয়ে পড়ল। লজ্জায় অল্প সল্প আড়ষ্ট হয়ে চোখ দুটো সরিয়ে ফেলল তৎক্ষনাৎ। তড়িৎ বেগে হেঁটে এলো গাড়িগুলোর কাছে। ফাহমিদার বুক থেকে মাথা তুলে মিম ঝাপসা দৃষ্টিতে তাকালো পিছনে দাঁড়ানো বোনের দিকে। মায়ের কাছ থেকে সরে হামলে পড়ল সে বোনের বুকে। শাড়ি আঁকড়ে ধরে ফুপিয়ে উঠল। কেঁপে উঠল শরীর খানা। চৈত্রিকা মিম কে জড়িয়ে ধরল। মাথায় ঠোঁট ছুঁয়ে মৃদু হাসল। বললো,

‘ কেঁদে মুখের অবস্থা খারাপ করে ফেলছিস মিমু। দিহান কিন্তু অনেক মজা করবে পরে তোকে নিয়ে। কান্না থামা। কাল যাব তো তোকে দেখতে। আর মা তোর কাছেই থাকবে এখন থেকে। ‘

মিম তবুও ছাড়ছে না চৈত্রিকাকে। কেউ বুঝিয়েও ওকে গাড়িতে তুলতে পারছে না। দিহানের ইচ্ছে করছে নিজের কপালে ঠুকতে দেয়ালে। এই মেয়ে যে এত ছিঁচকাদুনে সে ঘুণাক্ষরেও টের পায় নি। পাশে দাঁড়ানো সাফারাতের দিকে অসহায় দৃষ্টি নিবদ্ধ করে। মিনমিন করে বললো,

‘ ভাই পুরো রাত এখানেই পেরিয়ে যাবে। একটা কিছু কর। বউ কিভাবে নিয়ে যাব?বেচারির কান্নাই আমার সহ্য হচ্ছে না। আমারও কান্না পাচ্ছে। একটা মাত্র বউ আমার। কেঁদে কে’টে দুর্বল হয়ে পড়ছে। যদি বেঁহুশ হয়ে যায়?’

সাফারাত মুখ দিয়ে ‘চ’ উচ্চারণ করতে গিয়েও করল না। বিরক্ত হয়ে একটা চাপড় মাড়ল দিহানের মাথায়। মাথা ঝিমঝিম করে উঠে দিহানের। সাফারাত রাগী গলায় বলে উঠল,

‘ হারা’মি লজ্জা শরম কর। আমার শালী সাহেবা তোর বউ। উল্টা পাল্টা বললেই মা’ইর খাবি। যা বউ কে কোলে তুলে নিয়ে গাড়িতে বসা। নয়ত এই রাত পার হয়ে যাবে বউ বিহীন। ‘

চৈত্রিকা মিম কে বুক থেকে সরিয়ে দিল। দিহান ইতস্তত হয়ে একবার তাকালো সাফারাতের দিক। ফলস্বরূপ চোখ রাঙানো দেখে ঝটপট কোলে তুলে নিল মিম কে। গাড়িতে বসিয়ে নিজে বসে পড়ল। লজ্জায়, শরমে মাথা কা’টা যাচ্ছে ওর। সাহস তো করল কিন্তু এখন লজ্জা লাগছে। মিম এক নাগাড়ে,অবিরত কেঁদেই যাচ্ছে। চলা শুরু হতেই আরো ডুকরে কেঁদে উঠল মেয়েটা। সহ্য করতে না পেরে দিহান টেনে বুকে নিয়ে এলো। শক্ত করে জড়িয়ে ধরে ব্যগ্র, উত্তেজিত স্বরে বলে উঠল,

‘ এই মিম-ডিম কাঁদবে না একদম। কষ্ট লাগে তো ভাই। কেঁদো না। কাল অথবা পরশু মা’কে আমাদের বাসায় নিয়ে যাব। কেঁদো না প্লিজ। ‘

বুক থেকে মুখ তুলে চোখ ছোট ছোট করে তাকায় মিম। আক্রোশে ফেটে পড়ে দিহানের দিকে চেয়ে।

‘ আমি আপনার ভাই লাগি?’

থতমত খেয়ে গেল দিহান। মিমের কপালে অকস্মাৎ চুমু খেয়ে মৃদু হেসে প্রতুত্তর করল,

‘ বউ লাগো। দিহানের একটা মাত্র, একমাত্র বউ। ‘

জবাবে হাসি পেল মিমের। হাসল ও স্মিত। বুকে মাথা এলিয়ে রেখে বিড়বিড় করল,

‘ সুখের মুহুর্ত গুলো দীর্ঘ হোক আমাদের সবার জীবনে। কষ্ট আমি ভীষণ ভয় পাই। আপুর মতো শক্ত হয়ে সামলে নেবার সামর্থ্য আমার নেই। ‘


ফাহমিদা জ্ঞান হারিয়েছেন মিমের বিদায় লগ্নে। এক সপ্তাহের মাঝে প্রাণপ্রিয় দুটো মেয়ের বিদায়ে ভেঙে পড়েছেন তিনি। চৈত্রিকা মলিন মুখে পানি ঢালল মায়ের মাথায়। তোয়ালে দিয়ে মুছে দিয়ে গালে হাত ছুঁয়ে ডাকতে লাগল,

‘ আম্মু,,এই আম্মু। চোখ খুলো। ভালো লাগছে না। খারাপ লাগছে আম্মু। আজ আমাদের জীবনে সুখের দিন। আমাদের মিমু কে ভালো একটা মানুষের হাতে তুলে দিতে পেরেছি। বাবা থাকলে হয়ত খুশিতে কেঁদে দিত। আমিও অনেক সুখী। তুমি তো আমার সুখের সংসার দেখতে চেয়েছিলে। আমি অনেক বেশিই সুখী। তোমার দোয়ায় আল্লাহ আমাকে এমন একজন জীবনসঙ্গী দিয়েছেন যার সান্নিধ্যে কোনো দুঃখ আমায় স্পর্শ করতে পারবে না। ‘

ফাহমিদার জ্ঞান ফিরতেই চৈত্রিকার গালে,কপালে এলোপাতাড়ি চুমু খেলেন তিনি। অতঃপর বসে রইলেন শান্ত হয়ে,নিরবে। মা’য়ের কাছে কিছুক্ষণ বসে দরজা ভিড়িয়ে চৈত্রিকা বেরিয়ে এলো। ড্রইং রুমে বসে ছিল সাফারাত। চৈত্রিকা কে বেরিয়ে আসতে দেখেই রুমে গেল বড় বড় পা ফেলে। পিছু পিছু ঢুকল চৈত্রিকা। বাড়িতে মেহমান নেই। আত্মীয় স্বজন না থাকায় বিল্ডিংয়ের সবাই উপস্থিত ছিল বিয়েতে। খুব বেশি আন্তরিক ছিল সকলে। মনে হচ্ছিল পুরো একটা পরিবার। বাড়িওয়ালা সাফারাত কে দেখে চৈত্রিকার মাথায় হাত রেখে বললেন তুমি খুব ভাগ্যবতী মা। তোমার হাসবেন্ড অনেক ভালো। বাড়িওয়ালার মুখে এমন কথা শুনে কিয়ৎক্ষণ ঘোরে ডুবে ছিল চৈত্রিকা। সাফারাতের কোনোদিন উনার সাথে সাক্ষাৎ হয় নি। বিয়েতে দেখলেও কথা হয় নি। তাহলে উনি এত প্রশংসা কেন করলেন?মিছে মিছে তো করেন নি। সাফারাতের অগোচরে চৈত্রিকা বাড়িওয়ালাকে চেপে ধরে। অনুরোধ করে বলার জন্য দু’মাসের ভাড়া তিনি কেন নিলেন না। কারণ ওর মনে খটকা লাগছিল। বাড়িওয়ালা যখন উত্তর দিল তখন সবটা ক্লিয়ার হয়ে যায়। ভাড়া না নেওয়ার কারণসহ। সাফারাত পিছে পিছে ঢাল হয়ে সব সামলেছে। এমনকি বাসা ভাড়া পর্যন্ত দিয়েছে। এই মানুষটা কে ধন্যবাদ জানানোর ভাষার অভাব চৈত্রিকার কাছে। দেওয়ার মতো কিছু নেই শুধুমাত্র ভালোবাসা ছাড়া। চৈত্রিকা মনে মনে পণ করে নিজের সবটুকু ভালোবাসা উজার করে দিবে সে। সাফারাত এর মতো করে ভালোবাসতে পারবে না তবে তাকে কখনও দুঃখ পেতে দিবে না। সুন্দর একটা পরিবার উপহার দিবে ও সাফারাতকে।

বাহিরে ঝড় বইছে। বাতাসে গাছের পাতা লড়ছে। মনে হচ্ছে গাছগুলো ভেঙে পড়বে বাতাসের দাপটে। চৈত্রিকা দৌড়ে জানালা বন্ধ করতে গেল। লাগাতে গিয়েও থেমে গেল। বৃষ্টির পানির ছটায় ঠান্ডায় বরফ হয়ে গেছে ফর্সা মুখশ্রী। শরীর টা কেঁপে কেঁপে উঠছে। প্রাণপুরুষের তপ্ত নিঃশ্বাস ঘাড়ে পড়তেই শীতল স্রোত নেমে যায় শিরদাঁড়া বেয়ে। বুকের উঠানামা অস্বাভাবিক হয়ে পড়ল। সাফারাত হ্যাঁচকা টানে সামনে দাঁড় করালো চৈত্রিকা কে। প্রগাঢ় দৃষ্টিতে খানিকক্ষণ চেয়ে মুখ গুঁজল গলার এক পাশে। ঠকঠক করে কম্পায়মান চৈত্রিকার এক হাত মুঠোয় পুরে দীর্ঘ একটা শ্বাস টেনে নিল সাফারাত। চৈত্রিকার শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থা। নিস্তব্ধ রুমে শীতল বাতাসের আনাগোনা। প্রিয় মানুষটার দু চক্ষে ভয়ংকর মাদকতা। প্রতিটি উষ্ণ ছোঁয়া গাঢ়,প্রখর,গভীর।


আজ বৃষ্টি বুঝি সকল দুঃখ ধুয়ে নিচ্ছে। নতুন করে প্রকৃতিতে আগমন ঘটাবে সুখের। মিমের নাসারন্ধ্রে প্রবেশ করছে ফুলের সুবাস। সুবাস টুকু মোহনীয়। তার চেয়েও মোহনীয় দিহানের নিষ্পলক দৃষ্টি। প্রায় মিনিট দশেক হবে এক নাগাড়ে চেয়ে আছে সে মিমের দিকে। মিম আজ রাগল না। লজ্জাও লাগছে। বরঞ্চ হাসি পাচ্ছে ওর দিহানের চাহনিতে। দিহান হাত বাড়িয়ে কাছে টেনে নিল। পাঁজা কোলা করে বারান্দায় নিয়ে এল। উন্মুক্ত বারান্দা। ছাদ নেই। বৃষ্টিতে ভিজে দু’জনের জুবুথুবু অবস্থা। তবুও তাতে হেলদোল নেই কারোই। দু’জন ডুবে আছে দু’জনের মাঝে। মিমের সামনের চুল গুলো থেকে কপাল,নাক, ঠোঁট ছুঁয়ে গড়িয়ে পড়ছে জল। দিহান চেয়ে থাকতে থাকতে শুকনো ঢোক গিলে। নিষিদ্ধ চাওয়াগুলো সজাগ হয়ে গেল। নিষিদ্ধ কেন হবে?সম্মুখে, বক্ষস্থলের কাছাকাছি উপস্থিত মেয়েটা তার অর্ধাঙ্গিনী, বউ। ওষ্ঠাধর এগিয়ে নিতে মিম চোখ বুঁজে ফেলে। মুখ সরিয়ে নেয়। দিহান চমকে যায়। মাথা তুলতে প্রস্তুত হওয়া মাত্র মিম পাঞ্জাবি খামচে ধরে। এতেই যেন প্রকাশ পেয়ে গেল মেয়েটার সম্মতি। অনতিবিলম্বে আঁকড়ে ধরল দিহান তুলতুলে দু’টো অধর। শুষে নেয় জল। বৃষ্টির মাঝে রচনা করে নতুন এক প্রেমময় মুহুর্ত,ভালোবাসায় সিক্ত অনুভূতি।
____________________

সুখের মুহুর্ত গুলো দীর্ঘ হয় না, লম্বা হয় দুঃখের সময়গুলো। সুখের ছন্দে কেটে গেছে তিনটে মাস। শশুড় বাড়ির মানুষগুলোর মাঝে মনের দূরত্ব বিশাল বিশাল হলেও এই তিনটে মাসে চৈত্রিকা কে কোনো ঝামেলা পোহাতে হয় নি। তবে সে চায় সুখ টা ধরে রাখতে। নতুন করে নতুন ছন্দে সুখ রচনা করতে। সাফারাত অফিসের জন্য বেরিয়ে যেতেই ফটাফট রেডি হয়ে নিল চৈত্রিকা। সুফিয়া বেগমের রুমে আসতেই তিনি ঠোঁট ছাড়িয়ে হাসলেন। বললেন,

‘ চিনবে তো?’
‘ চিনব দাদি। দোয়া করবেন। ‘

বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পথে শপিং মলের সামনে গাড়ি থেকে নেমে পড়ল চৈত্রিকা। নিজেদের গাড়ি আনে নি। কারণ ড্রাইভার বলে দিবে সাফারাতকে। ওই বাড়িতে যাওয়ার আগে কিছু নিয়ে গেলে ভালো হবে ভেবে শপিংমলে ঢুকল। ঢুকতে না ঢুকতেই যাকে দেখল তাতে বিস্ময়ের চরম পর্যায়ে পৌঁছে গেল চৈত্রিকা। মোবাইলের গ্যালারিতে সেভ করা ছবিটা ভালোভাবে দেখে লোকটার সাথে মিলিয়ে নিল। হ্যাঁ ইনিই সেই ব্যক্তি। উনার কাছেই তো যাচ্ছিল ও। এখানেই পেয়ে গেল। উল্কার গতিতে ছুটতে শুরু করে চৈত্রিকা দু’তলায় অবস্থান করা লোকটার দিকে। কিন্তু তার পূর্বেই মাঝ পথে বাঁধা হয়ে দাঁড়ায় কেউ। বাঁধা প্রদানকারীকে দেখে ঘৃণায় রি রি করে উঠল সমস্ত দেহ,কায়া। কন্ঠে তেজ ঢেলে বলে উঠল,

‘ আপনি আমার সামনে কেন দাঁড়িয়েছেন তাহাফ ভাই? ‘

তাহাফ হাসল। প্রশ্ন করল,

‘ কেমন আছো?’
‘ আপনার না জানলেও চলবে। পথ ছাড়ুন। নইলে?’
‘ নইলে?’
‘ আপনি কি শপিংমলে সিন ক্রিয়েট করতে চাইছেন?’
‘ যদি বলি হ্যাঁ? ‘

কথাটা বলেই বাঁকা হেসে চৈত্রিকার এক হাত চেপে ধরল তাহাফ। হিসহিসিয়ে বলে উঠল,

‘ সেদিন তোর প্রেমিক আমার সাথে যা করেছে তা আজ ভরা শপিংমলে করব আমি। নিজের মান সম্মানের পরোয়া করব না। সবার সামনে বদনাম করে দিব তোকে। তোর হাসবেন্ডের জন্য আমার জব চলে গিয়েছে। নারীদের হেন/স্তা করি কেস দিয়েছে। ‘

চৈত্রিকা জোর করে টেনে হাত ছাড়িয়ে নিল। সপাটে চ’ড় বসালো তাহাফের গালে। আঙ্গুল তুলে বললো,

‘ ভুলেও দ্বিতীয় বার সাহস করবি না। সাফারাতের কানে পৌঁছালে এবার আর শ্বাস টাও ফেলতে পারবি না। কিন্তু আমি উনার কানে পৌঁছানোর আগেই তোর শরীরের সব র’ক্ত ঝরিয়ে ফেলব। স্টে অ্যা ওয়ে ফ্রম মি। ‘

গালে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে পড়া তাহাফ কে পাশ কাটিয়ে উপরে উঠে এলো চৈত্রিকা। এত বাজে একটা পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হবে জানলে আজ কখনোই বের হতো না। উপরের সবগুলো দোকানে লোকটা কে তন্ন তন্ন করে খুঁজল। গেল কোথায়?ট্রায়াল রুমে যায় নি তো?চৈত্রিকা একপাশে দাঁড়িয়ে পড়ল। বড় বড় শ্বাস ফেলতে লাগল। হঠাৎই অন্ধকার হয়ে আসতে শুরু করে সবকিছু। নেত্র যুগল নিমীলিত হয়ে আসে। দেহের ভার ছেড়ে লুটিয়ে পড়ল শপিং মলের মেঝেতে।

#চলবে,,,!
(ভুল-ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।)

#সুখের_নেশায়
#লেখিকাঃআসরিফা_সুলতানা_জেবা
#পর্ব___৪০

ধীরে ধীরে পল্লব ঝাঁকিয়ে চক্ষু মেলে চৈত্রিকা। নিমিষেই নেত্রে ভাসমান হয় দু’টো রক্তিম চক্ষের রোষপূর্ণ চাহনি,তুখোড় দৃষ্টি। নড়েচড়ে উঠে বসার চেষ্টা করল সে। হাত বাড়িয়ে পাশে বসা মানুষটার বলিষ্ঠ হাত আঁকড়ে ধরতে চাইলে সে পিছিয়ে যায়। ধরতে দেয় না হাত টা। ভিতরে ভিতরে হু হু করে কেঁদে উঠে চৈত্রিকার মন। বিনা সাপোর্টে নিজেই উঠে বসল। দূরে দাঁড়ানো মানুষটার দিকে নির্নিমেষ চেয়ে ক্ষীণ স্বরে ডাকল,
‘ সাফারাত! ‘
মানুষ টা ফিরল না। একটা বার ঘাড় বাঁকিয়ে চাইল না পর্যন্ত। এত রাগ?এত ক্রোধ? সামান্য না বলে বাড়ি থেকে বের হয়েছে বলে এত রাগ করতে হয়?চৈত্রিকা গলা বাড়িয়ে আবারও ডেকে উঠল,
‘ শুনুন প্লিজ। সাফারাত? ‘
সঙ্গে সঙ্গে ঘুরে দাঁড়াল সাফারাত। নিক্ষেপ করল তীক্ষ্ণ চাউনি। ভরাট গলায় বললো,
‘ বলুন। ‘
কন্ঠে রাগের আভাস স্পষ্ট। প্রকাশ্যে তা বুঝাতে চাইছে না বলে চেপে রাখার প্রয়াস। তবুও একটু একটু বহিঃপ্রকাশ ঘটছে কন্ঠে, চেহারায়,আচরণে। চৈত্রিকা সূক্ষ্ম ব্যাথা অনুভব করল। নতজানু হয়ে বলতে শুরু করল,
‘ আপনি আমার সাথে রাগ করে থাকবেন না প্লিজ। আমার ভুল হয়েছে আপনাকে না জানিয়ে শপিংমলে যাওয়া। বাড়ি থেকে বের হওয়া। আমার সাথে কথা বলুন। ‘
সাফারাত ঝাঁঝালো দৃষ্টিতে তাকালো। বড় বড় পা ফেলে চৈত্রিকার অতিশয় নিকটে বসল। মাঝে দূরত্ব কিঞ্চিৎ পরিমাণ। দাঁতে দাঁত চেপে প্রশ্ন করল,
‘ শপিংমলে কেন গিয়েছিলেন?’
চৈত্রিকা তৎক্ষনাৎ জবাব দিতে ব্যর্থ হলো। কি বলবে সে আপনার বাবার পিছনে গিয়েছিলাম? এটা এই মুহুর্তে জানলে সাফারাত ধ্বংস করে দিব সবকিছু। কারণ তার মনে এখন বাবার জন্য ঘৃণা ছাড়া কিছুই নেই। চৈত্রিকা মিনাকে পুনরায় জিজ্ঞেস করেছিল সাফারাতের বাবার ব্যাপারে। প্রতুত্তরে সে পূর্বের মতোই বলে। তার মা এতটুকুই বলেছিল — মৃত্যুর সময় সাফারাতের মা প্রেগন্যান্ট ছিল। সাফারাতের বাবা অন্য কাউকে বিয়ে করে ফেলেছিল,সাফারাতের দিকে মুখ ফিরিয়েও তাকায় নি। খোঁজ নেয় নি। চাচা-চাচীরা অনেক বাজে ব্যবহার করেছে ওর সাথে। এতটুকুই জানে মিনা। চৈত্রিকা সবটা শুনল চুপ করে। শুনেও বিশেষ লাভ হয় নি। সবটাই ধোঁয়াশা রয়ে গেল। কে বলবে ওকে সবটা খোলামেলা করে?
বাহুতে চাপ অনুভব করতেই চৈত্রিকা সম্বিৎ ফিরে পেল। সতর্ক,স্থির দৃষ্টি নিবদ্ধ করে সাফারাতের দিকে। এক বাহুতে আলতো করে চেপে ধরেছে সাফারাত। অক্ষিপটে এখনও দাউদাউ করে আগুন জ্বলছে যেন। রাগের ছটায় ধরাস করে কেঁপে উঠল চৈত্রিকার সমস্ত দেহ। সাফারাত ঝাঁঝালো গলায় আওড়ালো,
‘ কথা বলছেন না কেন আপনি?উত্তর দিন চৈত্র। ‘
‘ আমি,,আমি কেনাকাটা করতে গিয়েছিলাম। ‘
চৈত্রিকা ভড়কে যাওয়া কন্ঠে আমতাআমতা করে উত্তর দিল। ক্লান্ত, হতাশাজনক নিঃশ্বাস ছাড়ল সাফারাত। দূরে সরে গিয়ে ঠোঁটে তাচ্ছিল্যের হাসি ফুটিয়ে বলে উঠল,
‘ এর জন্য কি লুকিয়ে বের হওয়া ভীষণ প্রয়োজন ছিল চৈত্র?’
চৈত্রিকার নয়ন যুগল বিস্ফোরিত হয়ে এলো। সাফারাত কপালে সূক্ষ্ম ভাঁজ ফেলতেই দ্রুত গতিতে চোখ সরিয়ে নিল ও। নয়ত ধরা পড়ে যাবার আশঙ্কা রয়েছে। কাঁপা কন্ঠে তেজের অস্তিত্ব ঢেলে দেওয়ার প্রয়াস চালায়,
‘ লু,,লুকিয়ে কেন যাবো? ‘
অথচ বিন্দু মাত্র তেজের চিহ্ন নেই কন্ঠে। বরং দেহের ন্যায় কন্ঠও যেন কাঁপছে ঠকঠক করে। মিথ্যা বলা যে কত কষ্টকর তা আজ হারে হারে টের পাচ্ছে চৈত্রিকা। তবে কিছু কিছু মিথ্যে যে জীবনে সুখ বয়ে আনে। আজ একটা মিথ্যা বলার দরুন ও বাবা-ছেলেকে এক তো করতে পারবে। সাফারাতের সুখের জন্য এমন হাজারটা মিথ্যে বলতে কখনও দ্বিধাদ্বন্দে ভুগবে না সে। মনে মনে ক্ষমা চাইল আল্লাহর নিকট।
সাফারাত হাত মুঠো করে ঠোঁট এলিয়ে হাসল। বললো,
‘ আমি বের হওয়ার সাথে সাথে বের হয়ে যাওয়া, তাও বাড়ির গাড়ি ছাড়া তা কি লুকিয়ে যাওয়া নয় চৈত্রিকা?আজ যদি দাদি কে ফোন না দিতাম তাহলে জানতেই পারতাম না আপনি বাহিরে গিয়েছেন। আপনার নাম্বারে কল না দিলে এটাও জানতে পারতাম না আমার বউ অতিরিক্ত স্ট্রেসের কারণে শপিংমলে বেহুশ হয়ে মেঝেতে পড়ে রয়েছে। কিসের এতো চিন্তা আপনার মিসেস চৈত্রিকা?’
কোনোদিন কঠিন কঠিন পরিস্থিতিতেও এক ফোঁটা অশ্রু বিসর্জন না দেওয়া মেয়েটার চোখ থেকে আজ অবাধে জল গড়িয়ে পড়ছে। এ যেন বাঁধ ভাঙা ঢেউ। সাফারাতের একেকটা তাচ্ছিল্যের তীর, চৈত্রিকা ডাক ওর কলিজায় গিয়ে বিঁধছে। শ্বাস চেপে ধরছে। নিষ্প্রভ স্বরে, ভাঙা কন্ঠে ডাকল চৈত্রিকা সাফারাতকে। বিছানা ছেড়ে ঝড়ের বেগে হামলে পড়ল শক্তপোক্ত প্রশস্ত বুক টায়। দু হাতে শার্ট খামচে ধরে বলে উঠল,
‘ আমায় চৈত্রিকা ডাকবেন না। ডাকবেন না আপনি চৈত্রিকা। আমি আপনার চৈত্র মাস সাফারাত। ‘
কথাগুলো বলেই বুকে মুখ গুঁজে স্তব্ধ হয়ে রইল। সাফারাত দু হাতে আবদ্ধ করে নিল চৈত্রিকাকে। গলায় মুখ গুঁজে অস্থিরমাখা স্বরে বলে উঠল,
‘ আমার কাছ থেকে কিছু লুকাবেন না চৈত্র। আপনি আমার সুখ। পৃথিবীতে আর কোনো সুখ চাই না আমার।শুধু আপনাকে চাই। আমার চৈত্র মাসকে চাই। ‘
কেউ কেউ জীবনে হাজারো ত্যাগের বিনিময়েও কারো জীবনের প্রিয় মানুষ হয়ে উঠতে পারে না। আবার কেউ কিছু না করেই কারো সুখের কারণ হয়ে যায়। প্রাণপণে সেই মানুষটা খুঁজে বেড়ায় তার প্রিয় মানুষটাকে সুখের নেশায়। সুখ কে না চায়। সবাই চায়। অবজ্ঞা, অবহেলিত হয় দুঃখ। চৈত্রিকার অন্তস্থলে অনাবিল প্রশান্তির হাওয়া,সমীরণ বয়ে যাচ্ছে। আরো একটা বার দ্বিধান্বিত হয়ে পড়ল সে। দাদি জেনেও কেন জানালো সাফারাতকে ও বাহিরে?আর যেই মানুষ টা বলছে ওর মাঝেই সকল সুখ নিহিত তার জন্য নতুন করে সুখ কেন খুঁজতে যাবে?হিতে বিপরীত হয়ে যাবে না তো?চৈত্রিকা মুখ তুলে কোনো কিছু না ভেবে অকপটে প্রশ্ন করে বসল,
‘ ডক্টর বলেছে আমি স্ট্রেসের কারণে বেহুঁশ হয়ে গিয়েছি। আর কিছু হয় নি?’
সাফারাত কপাল কুঁচকে চাইল। ভ্রুঁ যুগল কুঞ্চিত করে জিজ্ঞেস করে,
‘ আর কিছু হওয়ার কথা ছিল?’
চৈত্রিকা হকচকালো। দু’গালে হুট করে লাল বর্ণ ছেয়ে যায়। সাফারাত দেখার আগে ওর বুকে মুখ লুকিয়ে ফেলল। কি না কি ভেবেছিল ও গত কয়েকদিন ধরে!
______________

পাঁচ তলাবিশিষ্ট একটি ভবন। গাড়িতে বসে ভবন টার দিকে অপলক তাকিয়ে রইল চৈত্রিকা। সন্ধ্যের আকাশে লালচে কমলার সুমিষ্ট ছড়িয়ে আছে। পাখিরা নিজেদের নীড়ে ফিরে যাচ্ছে আকাশ পথ পাড়ি দিয়ে ডানা মেলে। মৃদু মৃদু বাতাস’ও বইছে। পরিবেশ টা অত্যাধিক মনোরম, নির্মল। কয়েক গাছি চুল উড়ে এসে পড়ছে চৈত্রিকার গলায়,গালে,ললাটে। ব্যস্ত হাতে চুলগুলো ঠিক করে গাড়ি থেকে নেমে পড়ল সে। সাফারাত নিঃশব্দে গাড়ি নিয়ে চলে গেল। মিনিট খানেক পর ফিরে এলো পার্কিং করে। চৈত্রিকা তখনও আগের অবস্থানে ঠাঁই দাঁড়িয়ে। নজর ফেলতেও যেন ভুলে গেছে ও। মুখ উপরের দিকে করে নিষ্পলক তাকিয়ে আছে। এত সুন্দর গাছ এর আগে কখনও দেখে নি ও। ছোট ছোট গোলাপি পাপড়ি ওর উপর ঝরে পড়ছে। চৈত্রিকা নিজের আঁচল পেতে দিল। পাপড়ি গুলো উড়ে এসে জড়ো হতে লাগল ওর আঁচলে। খুশিতে আটখানা হয়ে পড়ল সে। ভুলে গেল আশপাশ। চিকন চিকন অধরে ফুটে উঠল হাসি। মৃদু হাসি।

সাফারাতের হৃদয় জুড়িয়ে গেল এমন একটা মুহুর্ত দেখতে পেয়ে। হেঁটে এলো সে চৈত্রিকার কাছাকাছি। পিছন থেকে বলে উঠল,
‘ এটা চেরি ব্লসম। চিনেন?’
চৈত্রিকা মাথা নাড়ায়। বলে,
‘ চিনি। কিন্তু কখনও সরাসরি দেখি নি। এখানে কে লাগিয়েছে?আমার নজরই সরাতে পারছি না। ‘
‘ খালা মণি এনেছেন জাপান ঘুরতে গিয়ে। জাপানে চেরি ব্লসমের রাজ্য আছে। আমিও একবার গিয়েছিলাম। খালা মণির চেরি ব্লসম খুব পছন্দের। জার্মানিতে’ও বাড়ির বাগানে অনেকগুলো লাগিয়ে রেখেছেন। ‘
চৈত্রিকা চমকিত নয়নে তাকালো। প্রশ্ন করল,
‘ বাংলাদেশে চেরি ব্লসম হয়?’
‘ হয় তো। আমি সিলেটে চেরি ব্লসম দেখেছি কয়েক মাস আগে একটা মিটিং এটেন্ড করতে গিয়ে। তবে মাত্র একটা গাছ। এখন তো বিলুপ্ত প্রায়। ‘
চৈত্রিকা কথা বাড়াল না। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের যত তারিফ করবে ততই যেন কম হবে। প্রকৃতির সুন্দরের অভাব নেই। শুধু এতটুকুই বললো,
‘ আমি আঁচলের চেরি ব্লসমগুলো নেই? ‘
সাফারাত মাথা নাড়িয়ে সায় দিল।

চার তলায় থাকে আয়ান ও সিনথিয়ার ফ্যামিলি। পুরোটা এপার্টমেন্টই ওদের। কিন্তু সারা বছর জার্মানি থাকে বলে চার তলা ছাড়া বাকিগুলো ফ্ল্যাট ভাড়া দিয়ে রেখেছে। শুধু মাত্র মাতৃভূমির টানে মাঝে মাঝে এখানে এসে এক,দু’মাস কাটিয়ে যায়,নিঃশ্বাসে ভরিয়ে দিয়ে যায় নিস্তব্ধ হয়ে পড়ে থাকা চার তলার ফ্ল্যাটে। চৈত্রিকাদের এখানে আসার বিশেষ কারণ নেই। তবে সিনথিয়া সেই দুপুর থেকে ফোন দিয়ে জ্বালিয়ে মারছে সন্ধ্যার দিকে ওদের বাসায় উপস্থিত হতে। কেন জিজ্ঞেস করলে রেগেমেগে মেয়েটা বলে উঠে -আমার বাসায় আসতে কারণ লাগবে?এই তোর ফ্রেন্ড আমি?আর সাফারাত? ওর তো খালাতো ভাইয়ের বাসা। একটা বার আমার ছেলেটা কে দেখতেও আসলি না। পর হয়ে গেলাম তাই না?ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইলে আসতে বাধ্য হলো। তাছাড়া আয়মান কে দেখার ইচ্ছে ছিল চৈত্রিকার। সাফারাতকে বলিয়ে ওকে বাসায় নিয়ে যাবে ভেবে রেখেছিল।

লিফট এসে চার তলায় থামতেই ওরা বেরিয়ে এল। ফ্ল্যাটের দরজা খোলা। তাই কলিং চাপার কাজ টা করতে হল না ওদের। চৈত্রিকার হাত ধরে ভিতরে ঢুকতেই বিস্ময়কর দৃষ্টিতে তাকালো সাফারাত। সামনের মানুষটাকে দেখে চৈত্রিকা নিজেও অবাকের চরম পর্যায়ে। সুন্দর, ছিমছাম গড়নের একজন মহিলা দাঁড়িয়ে। মাথার চুলগুলো হালকা ব্রাউন কালার। ঠিক আয়মান ও আয়ানের মতো৷ কিন্তু চেহারা গড়ন দেখে চৈত্রিকার মনে হচ্ছে সে কোনো স্বপ্ন দেখছে। নিজের দু চক্ষে যেন সাফারাতের জন্মদাত্রী কে দেখতে পাচ্ছে ও। পুরো মিল না হলেও চেহারায় অনেক মিল। মহিলা টা এগিয়ে এসে সাফারাতের সামনে দাঁড়ালেন। সাফারাত হাসল। মাথা নুইয়ে মহিলাটা কে জড়িয়ে ধরে বললো,
‘ আ’ম সারপ্রাইজড খালা মণি। ‘

এটা সাফারাতের খালামণি?ওর মা’য়ের চাচাতো বোন। অথচ কি মিল দু’জনের চেহারার! কে বলবে দু’জন ভিন্ন দুই মা’র সন্তান?চৈত্রিকা সাফারাতের মা’র ছবি দেখেছে ওদের বেডরুমে। শুধু একটা নয় অনেকগুলো ছবি আছে কক্ষের দেয়ালের একাংশ জুড়ে। ছবিগুলো প্রমাণ করে দেয় সাফারাতের জীবনে ওর মা ঠিক কি ছিল,কতটুকু গুরুত্বপূর্ণ ছিল।

সাফারাতের খালা আলো চুমু খেল সাফারাতের কপালে। গালে হাত রেখে অশ্রুসিক্ত কন্ঠে বলে উঠলেন,
‘ কত মাস দেখি নি আমার ছেলেটা কে। জানিস তোকে দেখার জন্য তোর খালুকে ফেলে চলে এসেছি। তোদের ছাড়া আমার বাড়িটা শূন্য শূন্য লাগছিল। তুই তো আমার ছেলে। সিয়া তোকে গর্ভে ধারণ করলেও তুই আমার ছেলে। তোকে ছাড়া ভালো লাগে না। চল না আমার সাথে জার্মানি। ওইখানে থেকে বিজনেস আগেও করেছিস। এখনও চল। তোর বউকে নিয়ে চল। এখানে তো কেউ নেই। তোদের নিয়ে আমার ভয় হয়। আমার ছেলে আমার চোখের সামনে থাকলে ভালো থাকব আমি। ‘

কথাগুলো বলে আলো চৈত্রিকার দিকে তাকালেন। চৈত্রিকার হাত টা ধরে বলে উঠলেন,
‘ তুমি সেই মায়াবিনী? জানো তোমার জন্য আমার সাফারাত নিজের ধারে কাছে একটা বিদেশিনী কেও ঘেষতে দেয় নি। আমারই বান্ধবীর মেয়ে জাইফা ওকে অনেক পছন্দ করত। আমি তো বিয়ের কথাও পাকা করে ফেলেছিলাম। কিন্তু আমার ছেলেটা তোমার জন্য পাগল হয়ে ছুটে এল বাংলাদেশ। অপরুপ সুন্দর তুমি চৈত্র। ভালো রেখো সবসময় আমার ছেলেটা কে। ‘

চৈত্রিকা দুই অধর প্রসারিত করে উনাকে জড়িয়ে ধরলেন। খুশি হয়ে গেলেন আলো। আবেগাপ্লুত হয়ে বললেন,
‘ তুমি নিমিষেই মন কেড়ে নেওয়ার যোগ্যতা রাখো মিষ্টি মেয়ে। এখন তো আমি একদমই তোমাদের ছাড়া থাকতে পারব না। আমার সাফারাত, আয়মান,সিনথিয়া, আয়ান,চৈত্র সবাইকে চাই। পরিপূর্ণ চাই আমার বাড়িটা। ‘

সাফারাত আলো বেগমের গালে লেগে থাকা জল মুছে দিল। ক্লান্ত নিঃশ্বাস ছেড়ে সোফায় গা এলিয়ে দেয়। সিনথিয়া, আয়ানের দিকে চেয়ে বলে উঠল,
‘ তোর মা’কে বল বুড়ি হয়ে আবেগে জল না ভাসাতে। এখনও হানিমুন বাকি। এটা সাড়তে নাহয় জার্মানি যাবো। ‘

হু হা করে অট্টহাসিতে ফেটে পড়ল সিনথিয়া, আয়ান। আলো বেগমও হেসে উঠলেন। ছোট্ট আয়মান কোনো কিছু না বুঝলেও বল হাতে নিয়ে তাল মিলিয়ে হাসল সবার সাথে। খালার সঙ্গে সাফারাতের সম্পর্ক টা বন্ধুত্বপূর্ণ। নিজ হাতে নতুন করে গড়েছেন তিনি সাফারাত কে। চৈত্রিকা লজ্জায় নখ দিয়ে ফ্লোর আঁকড়ে ধরল। নতমস্তকে দাঁড়িয়ে রইল মেয়েটা। সিনথিয়া এগিয়ে এসে ওর কাঁধে হাত রাখে। উৎফুল্ল কন্ঠে বললো,
‘ অগ্রিম কংগ্রাচুলেশন ডিয়ার। ‘
চৈত্রিকা ফিসফিস করে বললো,
‘ কেন?’
সিনথিয়া কানের কাছে মুখ নিয়ে বলে উঠল,
‘ হানিমুনের জন্য। ‘
নিমেষে চৈত্রিকা আহাম্মক বনে গেল। মাথা টা আবারও চক্কর দিয়ে উঠল ওর।

#চলবে,,,!
(ভুল-ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। )

#সুখের_নেশায়
#লেখিকাঃআসরিফা_সুলতানা_জেবা
#পর্ব___৪১

ছাদে দাঁড়িয়ে ফানুস উড়ানো দেখছে চৈত্রিকা এক নজরে। আকাশের বুকে মিটি মিটি জ্বলছে দশ-বারোটা ফানুস বাতি। ছাঁদে ছুটাছুটি করে খেলে বেড়াচ্ছে কিছু বাচ্চা, সাথে আয়মান’ও। সিনথিয়া একটু পর পর ছেলেকে চোখ রাঙাচ্ছে,সাবধান করছে, দৌড়াতে নিষেধ করছে। তবুও নিরলস ভঙ্গিতে মায়ের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে আয়মান নিজের মন মতো চলছে। চৈত্রিকার অধরে হাসির রেখা প্রতীয়মান হলো। প্রচন্ড অবাক হলো ও মুহুর্তেই আয়মান নামক ছোট একটা বাচ্চা ছেলের এটিটিউড দেখে। একটা বাচ্চা মেয়ে ওদের এপার্টমেন্টেরই। মেয়েটা ওর পাশেই বসতে আয়মান উঠে সরে গিয়ে বসে। মেয়েটাকে গা পর্যন্ত ঘেঁষতে দেয় নি। এতটুকু একটা ছেলের এটিটিউড দেখে চৈত্রিকা নিজেই বিস্মিত, ফিদা। নিমেষে ওর মনে পড়ল সাফারাতের কথা। এ যেন পুরোই সাফারাতের অবিকল। কলেজ জীবন থেকেই চৈত্রিকা সাফারাতের এমন রূপের সাথে পরিচিত। সে ব্যতীত সাফারাতের সান্নিধ্যে যাওয়ার সাহস পেত না কোনো মেয়ে। সাফারাত নিজেই ভিড়তে দিত না। অনুৃমতি ছিল কেবল, কেবলই চৈত্রিকার। আয়মান হয়ত ছোট থেকে সাফারাতকে দেখে অভ্যস্ত। তাই তো ছোট এই ছেলেটা’ও সাফারাতের ব্যক্তিত্ব ধারণ করে চলেছে নিজের মাঝে।

আলো বেগমের দীর্ঘ এক বছর পর বাংলাদেশে আসা উপলক্ষে তিনি নিজেই এপার্টমেন্টের সবাইকে নিয়ে একটা গেট টুগেদারের আয়োজন করেছেন। ছাদে খাওয়া দাওয়া হবে। আড্ডা হবে। পুরোই যেন একটা ফ্যামিলি পিকনিক। ভাড়াটিয়ারা পরিবারের মতই একসাথে মিলেমিশে সব করছেন। মানুষ এতো মিশুক হয় আলো বেগমকে না দেখলে তার ধারণা আজীবন হয়ত ভুলই থেকে যেত। মনে দাগ কেটে সজীব হয়ে থাকত শুধু এত বছরের ধনী মানুষদের কাছ হতে লাঞ্চিত হওয়ার সময়গুলো, স্মৃতিগুলো। সিনথিয়ার গলার আওয়াজে নড়েচড়ে দাঁড়ায় চৈত্রিকা। সিনথিয়া দাঁতে দাঁত চেপে বলে উঠল,

‘ এই আয়ানের বাচ্চা আয়মান আমার কথা কানেই তুলে না। আয়ান তো এমন না। কত শান্তশিষ্ট আমার জামাই। আয়মান এত ত্যাড়া বাঁকা কেমনে হলো?নিজের মর্জিতেই চলে এতটুকু বয়সে। ‘

চৈত্রিকা স্মিত হাসল। মায়াময় কন্ঠে বললো,
‘ তোর ছেলের ত্যাড়ামি আমার খুব খুব পছন্দ হয়েছে। এরকম বিদেশি, এটিটিউডওয়ালা বাচ্চা দেখে আমি ফিদা। ‘

‘ একবার মেয়ের মা হ। আয়মান হবে তোর মেয়ের জামাই। তখন আমি দেখব তোরা মা, মেয়ে কেমন ফিদা হোস। আমার কাছে নালিশ করতে পারবি না একদম। এখনই সাবধান করে দিলাম। ‘

সিনথিয়ার কথায় হেসে কুটিকুটি চৈত্রিকা। ঠিক কতকাল পরে হাসল সে এমন করে?কি আশ্চর্য! নিজের হাসিতে সে নিজেই হতবাক, স্থবির। পাশ থেকে শোনা গেল একটা ভরাট কন্ঠ,

‘ কি হলো হাসি থামালেন কেন?’

চৈত্রিকা ঝটপট বিস্ময়কর দৃষ্টি নিক্ষেপ করল পাশে। সাফারাতের চোখে মুগ্ধতা। ঠোঁটে মুচকি হাসি। সহসা ধড়াস করে উঠল চৈত্রিকার বুক। হৃদপিণ্ড স্পন্দিত হচ্ছে তড়িৎ বেগে। এই গম্ভীরমুখো লোক টাও হাসতে পারে?লোকটা কি জানে তার হাসিতে চৈত্রিকার অভ্যন্তরে ঢাক-ঢোল বাজছে?হাতুড়ি পেটা শব্দ হচ্ছে?

সাফারাত গায়ের জ্যাকেট টা খুলে চৈত্রিকার হাতে ধরিয়ে দিল। তৎপরে দৃশ্যমান হয় তার বলিষ্ঠ দু’টো বাহু। পড়নের কালো টি শার্টে ফর্সা,সুঠাম দেহ টা দ্বিগুণ উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে। একটা চেয়ার টেনে এনে চৈত্রিকার হাত টা ধরে এনে বসিয়ে দিল। সুস্থির কন্ঠে উঠল,

‘ আপনি এত সময় ধরে দাঁড়িয়ে ছিলেন কেন?এখানে খারাপ লাগলে রুমে চলে যান। আয়োজন শেষে আমি ডেকে দিব আপনাকে। ‘

সত্যিই চৈত্রিকার ভালো লাগছে না। এতক্ষণ হাসি ঠাট্টায় সময় কেটে গেলেও এখন মনে হচ্ছে নিচে গিয়ে একটু রেস্ট নিলে সুস্থ অনুভব করবে। জ্যাকেট টা হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ল। সাফারাতের কপালে মৃদু মৃদু ঘাম জমে আছে। দ্বিধান্বিত চাহনি নিক্ষেপ করে ক্ষীণ স্বরে জিজ্ঞেস করে,

‘ আপনার কি গরম লাগছে?’
‘ একটু আকটু। চলুন আপনাকে নিচে দিয়ে আসি। ‘

চৈত্রিকা অবিন্যস্ত, এলোমেলো দৃষ্টিতে আশেপাশে তাকালো। সিনথিয়া আয়মানের সাথে বসে আছে। বাকি সকলে যে যার কাজে মগ্ন। সবার চক্ষু আড়ালে শাড়ির আঁচল তুলে চৈত্রিকা সাফারাতের কপালের ঘাম মুছে দেয়। হাত টা কাঁপতে থাকে অনবরত। সাফারাত ফিচেল হাসে। কানের কাছে মুখ নিয়ে গাঢ় স্বরে বলে,
‘ ধন্যবাদ বউ। ধন্যবাদ আমার চৈত্র মাস। ‘
চৈত্রিকা মাথা নুইয়ে লাজুক হাসল। মিনমিন করে বললো,
‘ আমি যেতে পারব। এদিকের কাজ শেষ হলে আমায় ডেকে দিবেন। ‘
____________

চৈত্রিকা বাসায় ঢুকে দেখে আলো বেগম ফোনে কথা বলছেন। ওকে দেখে হাত বাড়িয়ে কাছে ডাকল। সোফায় উনার পাশে গিয়ে বসল সে। আলো বেগম ফোন রেখে বললেন,

‘ তোমার খালুর সাথে কথা বলছিলাম। নিচে চলে এলে কেন?’
‘ মাথা ব্যাথা করছে একটু। তাই নিচে চলে এলাম। ‘
‘ আচ্ছা বসো। আমি চা করে আনি তোমার জন্য। ভালো লাগবে। ‘

চৈত্রিকা মাথা হেলিয়ে সায় জানাল। সত্যি এই মুহুর্তে এক কাপ চা ওর ভীষণ প্রয়োজন। আলো কিচেনে গেলেন চা বানাতে। কিছুক্ষণ,কিছু সময় নিরবে,নিশ্চুপে বসে থাকার পর চৈত্রিকার মাথায় একটা বিষয় উদয় হতেই ও দৌড়ে কিচেন রুমে গেল৷ আলো বেগমই পারবে ওর মস্তিষ্কে সৃষ্ট হওয়া প্রশ্নগুলোর উত্তর দিতে। সবকিছু স্পষ্টভাবে বলতে। আলো বেগম ওকে দেখে বললো,
‘ আর কিছু লাগবে মা?’
‘ কিছু প্রশ্নের জবাব লাগবে খালা মণি। ‘

সোজাসাপ্টা উত্তর দিল চৈত্রিকা। আলো ভ্রুঁ কুঁচকে সন্দিহান নজরে তাকালেন। কাপে চা ঢালতে ঢালতে বললেন,
‘ কেমন প্রশ্ন? ‘
চৈত্রিকা গলায় কথাগুলো দলা পাকিয়ে এল। তবুও প্রশ্ন করল,
‘ মা’য়ের মৃ*ত্যু কিভাবে হয়েছিল খালা মণি? ‘

আলো বেগমের মুখ টা মলিন হয়ে এল। নিকষ কৃষ্ণতে ছেয়ে গেল সুন্দর মুখশ্রী টা। শান্ত অথচ ব্যথিত কন্ঠে বলে উঠলেন,

‘ সাফারাত বলে নি?’
চৈত্রিকা মাথা নাড়িয়ে বলল,’ উঁহু। ‘

‘ আমি জানতাম ছেলেটা বলবে না। তোমার কাছেও নিজের কষ্টগুলো প্রকাশ করল না?এত চাপা স্বভাবের কেমন করে হলো ছেলেটা?হয়ত ওর কষ্টগুলো তোমাকে স্পর্শ করুক তা ও চায় নি। তোমার কষ্ট সহ্য করতে পারে না ছেলেটা। ‘

চৈত্রিকাকে নিয়ে ড্রইং রুমে আসলেন তিনি৷ সোফায় বসিয়ে দিয়ে বলতে শুরু করলেন,

‘ সাফারাতের নানা মানে আমার চাচা অনেক বিত্তশালী ছিলেন। কাকি মণি সিয়ার জন্মের সময় মা/রা যায়। তখন চাচা-চাচীর বিয়ের বয়স ছিল মাত্র দেড় বছর। চাচী মা/রা যাওয়ার পর চাচা সিয়ার দিকে চেয়ে আর বিয়ে করলেন না। নিজ হাতে বড় করেছেন সিয়া কে। চাচার অফিসে কর্মরত ফারুক মানে সাফারাতের বাবার সাথেই সিয়ার বিয়ে হয়। প্রেমের বিয়ে। ফারুক নিজের সবটা দিয়ে সবসময় সিয়াকে আগলে রাখে। সিয়ার যখন আঠারো বছর হয় তখনই চাচা ওর নামে সব সম্পত্তি লিখে দেয়। সিয়া ও ফারুকের বিয়ের কয়েক বছর পর চাচা গাড়ি এক্সিডেন্টে মা*রা যান। তখন ফারুক-ই সিয়া কে যত্ন করে আগলে রাখে। মাঝে মাঝে সিলেটে শশুর বাড়িতে যেত সিয়া। সবকিছুই ঠিকঠাক চলছিল। কোনোদিনও কোনো দুঃখ, কষ্ট,অশান্তি ওদের সংসারে আসে নি। স্কুল জীবনটা ঢাকাতে পাড় করে সাফারাত জেদ ধরে সিলেট দাদুর বাড়িতে থেকে কলেজে পড়বে। সিয়ার পুরো পৃথিবী ছিল সাফারাত। আর সাফারাতের কাছে?তার কাছে মা ছিল তার আত্মা। কলেজ জীবনের অর্ধেক সমাপ্তি না হতেই হুট করে সিয়া আমার কাছে মানে জার্মানি পাঠিয়ে দেয় সাফারাতকে। কারণ জিজ্ঞেস করলে এক এক করে সবকিছু খুলে বলে। সাথে পাঠায় একটা মেয়েকে।মেয়েটা হলো সিনথিয়া। ছেলেটা আমার কাছে গিয়ে একদম চুপচাপ থাকত। মাঝে মাঝে খুব রেগে থাকত। ওর সাথে আমার আগে থেকেই বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক হওয়ায় সবটা খুলে বলে আমাকে। চৈত্র নামের মেয়েটার কথা বলে। প্রত্যেক টা কথায় আমি স্পষ্ট বুঝতে পারছিলাম ওর আবেগি বয়সে প্রথম প্রেম ওর চৈত্র মাস। সেই সাথে উপলব্ধি করি মেয়েটার প্রতি জমে রয়েছে ওর এক আকাশ সমান অভিমান।

সাফারাতের জার্মানি আসার এক দু’য়েক মাস পর সিয়া জানায় সে প্রেগন্যান্ট। শুনে খুশি হব নাকি অবাক আমি বেশ দ্বিধাদ্বন্দে ছিলাম। কারণ সিয়া সেদিন কাঁদতে কাঁদতে জানায় সুফিয়া বেগম ব্যতীত পরিবারের সকলে নাকি ছি!ছি!করছে ওর উপর। যার একটা আঠারো বছরের ছেলে আছে এ বয়সে তার প্রেগন্যান্ট হওয়ার কি দরকার ছিল। সমাজের কথা ভাবল না। আরো নানান কটুক্তি। এসব কিছুতেই সিয়ার খারাপ লাগে নি। উল্টো ওকে ভেঙে দিয়েছে ফারুক,যা শুনে আমি মিনিট কয়েক স্তব্ধ ছিলাম। ফারুক বলেছে এবোরশন করাতে। যদি এবোরশন না করে তাহলে সে অন্য কাউকে বিয়ে করে ঘরে তুলবে। সিয়ার এই বয়সে সন্তান নেওয়া ওর সহ্য হচ্ছে না। এই বাচ্চা রাখলে সিয়ার দিকে মুখ তুলেও তাকাবে না সে। এসব শুনে সিয়া কিছু বলার আগেই আমার মনে প্রশ্ন জাগে ফারুক পরকীয়া করছে না তো?হ্যাঁ তা-ই সত্যি। আমার বোন টা কেঁদে কেঁদে বলে সাফারাত যেন জানে ওর মা প্রেগন্যান্ট। কিন্তু এটা যেন কখনও না জানে ওর বাবা পরকীয়া করে,নেশা করে। মানুষ টা শুরু থেকেই ভুল ছিল। সময়ের সাথে ভালোর খোলস ছেড়ে বেরিয়ে এসেছে। কি হাস্যকর ব্যাপার না?এ বয়সে বাচ্চার বাপ হতে পারবে না কিন্তু পর নারীর সঙ্গে তার অন্তরঙ্গ মুহুর্ত দিনের পর দিন সহ্য করে গিয়েছে আমার বোন। সিয়া সব খোঁজ নিয়ে জানতে পারে সুফিয়া বেগমের ভাইয়ের মেয়ের সাথে ফারুকের পরকীয়ার সম্পর্ক প্রায় চারটা বছর ধরে। মেয়েটা ডিভোর্সি। একদিন নেশার ঘোরে ফারুক এটাও জানায় কেবল আধিপত্য, টাকার জন্য সে সিয়াকে বিয়ে করে। সুফিয়া বেগমের ভাইয়ের মেয়ের বিয়ের পূর্বেও দু’জনের গভীর সম্পর্ক ছিল। শুধুমাত্র উনার ভাই রাজি হয় নি বলে বিয়েটা করতে পারে নি।

সিয়া এক এক করে সব সত্য জানতে পারে। ওর সেই খারাপ সময়ের সঙ্গী ছিল সুফিয়া বেগম। মা’য়ের মতো ওর যত্ন নেয়। মাঝে মাঝে ফারুক ওকে অনেক মারধর করত বাচ্চা টা এবোরশন করে নি বলে। আমি সাফারাতকে শুধু ওর মায়ের প্রেগন্যান্টের বিষয় টা জানায়। শুনেই খুব খুশি হয় ছেলেটা। কলেজ থেকে আসার পথে প্রতিদিন অনাগত ভবিষ্যত মেহমানের জন্য গিফট কিনে আনত।তন্মধ্যে একমাস পর জানতে পারি সিয়া আর নেই। আগুনে পুড়ে ম’রে গিয়েছে আমার বোন টা।

#চলবে,,,!
(ভুল-ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।)