সুখ অমৃত পর্ব-০৩

0
112

#সুখ_অমৃত
#পর্বঃ৩
#লেখিকাঃদিশা_মনি

মানতাশা অসহায় চোখে তাকিয়ে আছে মঞ্জুয়ারা বেগমের দিকে। মঞ্জুয়ারা বেগম মানতাশাকে ভরসা দিয়ে বলেন,
“তুই একদম চিন্তা করবি না, তোর আম্মু আছে তোর পাশে। আমি জানি, তুই এমন কিছু করতে পারিস না।”

এদিকে এলাকার লোক মানতাশার দিকে কাঁদা ছুড়তে ব্যস্ত। একজন বলে ওঠে,
“আমার মনে হয়,মা-মেয়ে দুজনেই এই ব্যবসার সাথে জড়িত। এদের এখানে আর রাখা যাবে না।”

আরেকজন সমর্থন জানিয়ে বলে,
“ঠিক বলেছেন, এটা ভদ্রলোকের এলাকা। এখানে এসব নোংরামী চলবে না।”

সবাই যে যার মতো তর্ক বিতর্ক করতে ব্যস্ত। এরইমধ্যে কয়েকটা যুবক এগিয়ে আসল মানতাশার দিকে। উদ্দ্যেশ্যে মানতাশাকে টেনে ছেছড়ে বের করবে। মঞ্জুয়ারা বেগম তাদের আটকে বলে,
“আমার মেয়ের পরনে কিছু নেই..ও কোনরকমে একটা চাঁদর জড়িয়ে আছে। ওর কাছে এসো না তোমরা।”

একটা যুবক বিটঘুটে হাসি দিয়ে বলে,
“মা**র আবার সম্মান আছে নাকি? থাকলে দেহ বেঁচে খেত না।”

মানতাশা নিজের নামে এসব জঘন্য কথা আর সইতে পারছিল না। কান চেপে কাঁদতে লাগলো। যুবকরা আরো এগোতে যাবে তার আগেই সেখানে চলে আসল আবু সুফিয়ান। সে এসেই হুংকার দিয়ে বলল,
“কেউ আর এক পা সামনে আগালে তার পা আমি কে*টে ফেলবো।”

যুবকদের পা থেমে গেলো। মানতাশা অশ্রুসিক্ত নয়নে তাকালো। আবু সুফিয়ান এগিয়ে এসে মানতাশার দিকে একবার তাকিয়েই চোখ ফিরিয়ে নিলো। অতঃপর সকলের উদ্দ্যেশ্যে বলল,
“আপনারা যা ভাবছেন, তা সঠিক নয়। মানতাশা কোন খারাপ কাজের সাথে যুক্ত নয়।”

একজন মহিলা বলে উঠলেন,
“আপনি কে? আর এই মেয়ের হয়ে ওকালতি করছেন কেন? এই মেয়ের আসল রূপ তো সবার সামনে বেরিয়ে এসেছে।”

“সবসময় চোখের দেখা সত্য নাও হতে পারে।”

“আপনি এই বে**র হয়ে এত তরফদারি করতে আসছেন কেন? আপনি কি ওর খদ্দের।”

সুফিয়ান হাত মুষ্টিবদ্ধ করে নিলো। রাগে তার পুরো শরীর কাপছে।

“খবরদার, না জেনে ওর নামে আর একটা বাজে কথাও বলবেন না। ও কোন অন্যায় করে নি।”

“মেয়েটাকে দেখুন,যদি কোন অন্যায় না করে তাহলে এমন বিবস্ত্র কেন ও?”

আবু সুফিয়ান চোখ বন্ধ করে নিলো। রাগে তার শিরা উপশিরা ফুলে যাচ্ছে। অনেক কষ্টে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করে বললো,
“মানতাশা আমার স্ত্রী। আর আমরা কিছুক্ষণ আগে..বুঝতেই পারছেন স্বামী-স্ত্রীর ব্যাপার। এরমধ্যে আমি বাইরে গেছিলাম আর ফিরে এসে দেখি এই অবস্থা।”

মানতাশা থমকে যায়। এ কিসব বলছে এই লোকটা? এর কোন কথাই তো সত্য নয়। মানতাশার মনে হচ্ছিল কিছু ভুল হচ্ছে। এটা হতে দেওয়া ঠিক না। কিন্তু নিজের সম্মানের ব্যাপারে ভেবে সে কিছু বলতেও পারল না।

একজন লোক বলে উঠল,
“তোমরা যে বিবাহিত সেটা তো আগে শুনিনি। আমরা তো মানতাশাকে অবিবাহিত বলেই জানেন।”

“এসব আষাঢ়ে গল্প। ধরা পড়া গিয়ে এখন মিথ্যা নাটক করছে।”

সুফিয়ান তীক্ষ্ণ স্বরে বলল,
“কোন নাটক নয়। আমি যা বলছি তা সম্পূর্ণ সত্য। আমাদের গোপনে আকদ হয়েছে, তাই হয়তো কেউ জানেন না। আগামীকালই বড় অনুষ্ঠান করে আমাদের বিয়ে হবে। তখন নিজের চোখেই সমস্তটা দেখতে পারবেন।”

লোকের কানাঘুষা শুরু হলো। সুফিয়ান হঠাৎ সবার উদ্দ্যেশ্যে বলল,
“কিন্তু আপনারা সবাই কিভাবে হঠাৎ ঘরে ঢুকে গেলেন? আপনাদের তো এখানে আসার কথা না।”

একজন প্রবীণ ব্যক্তি বলল,
“আমাকে কে যেন ফোন করে বলল, এই বাড়িতে অনৈতিক কাজ চলছে।”

সবাইক একে একে এই কথাটাই বললো। সব শুনে মানতাশা চুপসে গেলো। তাহলে তাকে প্ল্যান করেই এভাবে ফাসানো হয়েছে। ঐ লোকটাকেও তাহলে প্ল্যান করেই পাঠানো হয়েছিল। তবে এসবের পেছনে কে রয়েছে? মানতাশার দৃষ্টি গেলো আবু সুফিয়ানের দিকে। তাহলে কি সব এই লোকেরই সাজানো নাটক!

আবু সুফিয়ান এবার সবার উদ্দ্যেশ্যে বলল,
“এমন কেউ হয়তো আছে যে, আমাদের ভালো চায় না। তারাই মানতাশাকে সবার সামনে খাটো করার জন্য এমন করেছে। তবে আমি যেমনটা বললাম সেটাই সত্যি। ও আমার স্ত্রী এবং ওর চরিত্রেও কোন দাগ নেই। তাই আপনারা ওকে নিয়ে অযথা সমালোচনা বন্ধ করুন আর যান এখান থেকে। নাহলে আমি পুলিশ ডাকতেই বাধ্য হবো। তারা এসে সিনক্রিয়েট করার অপরাধে আপনাদের সবাইকে কোমড়ে দড়ি পড়িয়ে জেলে নিয়ে যাবে। সেটা কি আপনাদের ভালো লাগবে? নিশ্চয়ই, না।”

এখানে উপস্থিত অনেকের মাঝে বিভিন্ন প্রবণতা দেখা গেলো। কেউ ভাবলো, আবু সুফিয়ানের কথাই সত্য। আবার কেউ ভাবলো ধরা খাওয়ার পর এখন নাটক করছে। কিন্তু পুলিশের টোটকাটা কাজে দিলো। কিছুক্ষণের মধ্যেই সবাই স্থানত্যাগ করলো।

সবাই চলে যাবার পর আবু সুফিয়ান মঞ্জুয়ারা বেগমের উদ্দ্যেশ্যে বলেন,
“মানতাশাকে কোন পোশাক পড়িয়ে দিন। আমি বাইরে যাচ্ছি।”


মানতাশা অনবরত কেঁদে চলেছে। ইতিমধ্যেই মঞ্জুয়ারা বেগম তাকে একটি নীল রঙের প্লাজু ও একটা টিশার্ট পড়িয়ে দিয়েছে। মানতাশা মঞ্জুয়ারা বেগমকে সব ঘটনাও খুলে বলেছে। সাথে এও বলেছে সে মনে করে সবটা আবু সুফিয়ানের সাজানো চক্রান্ত। কিন্তু মঞ্জুয়ারা বেগম সেটা মানতে নারাজ। এরমধ্যে আবু সুফিয়ান সেখানে চলে আসলো। মানতাশা সুফিয়ানকে দেখেই বলে উঠলো,
“দেখুন না, মানতাশা কেমন করছে।”

সুফিয়ান মানতাশার কাছে এসে বললো,
“আমি বিশ্বাস করি তোমায়। জানি তোমাকে ফাঁসানো হয়েছে তুমি কোন অন্যায় করো নি।”

মানতাশা সুফিয়ানের শার্টের কলার চেপে ধরে রাগী কন্ঠে বলল,
“আপনার এসব নাটকে মা ভুলতে পারে কিন্তু আমি না। আমি জানি এসব কিছু আপনারই মস্তিষ্কপ্রসূত। আপনিই প্ল্যান করে আমায় ফাসিয়েছেন। কি ভেবেছেন,এমনটা হলে আমি বাধ্য হয়ে আপনাকে বিয়ে করবো? জীবনেও না। আমি আপনাকে ঘৃণা করি মিস্টার আবু সুফিয়ান। আমি মরে যাবো, তবুও আপনাকে বিয়ে করবো না।”

সুফিয়ান মানতাশাকে নিজের থেকে দূরে সরিয়ে বলে,
“তোমার যা ভাবার তুমি ভাবতে পারো। আমি কিছু করিনি এটাই সত্য। আর কালকেই আমাদের বিয়ে হবে। আমি তোমাকে জোর করতে চাইনি কিন্তু এখন ব্যাপার‍টা তোমার সম্মানের। তাই তোমার সম্মান বাঁচাতে আমাকে এই বিয়েটা করতেই হবে। তা যদি জোরপূর্বক হয় তবুও অসুবিধা নেই।”

মঞ্জুয়ারা বেগম মানতাশার উদ্দ্যেশ্যে বলে,
“তুই নিজের ভালো টা বুঝতে পারছিস না কেন? আজ যা হলো এরপর যদি তুই বিয়েটা না করিস তাহলে সবাই ভাববে তুই সত্যিই..খারাপ কাজে জড়িত। একটা মেয়ের সম্মান কত গুরুত্বপূর্ণ তুই তো জানিস।”

মঞ্জুয়ারা বেগমের কন্ঠে অসহায়ত্বের ছাপ স্পষ্ট।

“এরপর কে বিয়ে করবে তোকে? আজীবন দূর্নাম বয়ে নিয়ে বেড়াতে হবে!”

মানতাশা নাছোড়বান্দা। সেও মাথা উঁচু করে বলে,
“আমি জানি, আমি কোন অন্যায় করিনি। আমার রবও জানেন। ব্যস, আমার আর কিছুর প্রয়োজন নেই। সমাজের মানুষের কাছে ভালো সাজার জন্য আমি নিজেকে বিসর্জন দিব না। আমি কাউকে পরোয়া করি না।”

সুফিয়ান মানতাশার হাত শক্ত করে ধরে বলল,
“তোমার কোন কথাই আর গ্রাহ্য করা হবে না। কাল আমাদের বিয়ে হচ্ছে আর এটাই ফাইনাল।”

মানতাশাও বলল,
“আমি এই বিয়ে কিছুতেই করব না। আর এটাই আমার চ্যালেঞ্জ। আমি চ্যালেঞ্জে হারতে শিখিনি। সবাইকে চ্যালেঞ্জে হারিয়ে দিতেই শিখেছি, এবারও আপনাকে হারিয়ে দিব।”

“বেশ, তবে দেখা যাক, এবার কার জয় হয়।”

চলবে ইনশাআল্লাহ ✨