সুখ অমৃত পর্ব-০৯

0
90

#সুখ_অমৃত
#পর্বঃ৯
#লেখিকাঃদিশা_মনি

মানতাশা নিজের জন্য বরাদ্দ গেস্টরুমে এসে চুপচাপ বসে আসে। গতকাল রাতে হাফসার করা অপমান সে এখনো ভুলে উঠতে পারে নি। মানতাশা এটুকু ঠিকই বুঝতে পেরেছে হাফসা এখন প্রতি পদে তার পেছনে লেগে থাকবে। তবে মানতাশাও খুব বাড়াবাড়ি সহ্য করবে না। প্রতিবাদ করতে জানে সে। এসব ভাবনার মাঝেই উমায়রা মানতাশার কক্ষের বাইরে থেকে বলল,
“ভেতরে আসব?”

মানতাশা চকিতে ফিরে তাকায় উমায়রার দিকে। মিষ্টি হাসি দিয়ে বলে,
“নিশ্চয়ই।”

উমায়রা মানতাশার কক্ষে প্রবেশ করে বিরস মুখে বলে,
“গতকালকের ঘটনার জন্য দুঃখিত। তুমি আমাদের মেহমান অথচ হাফসা উখতুন তোমার সাথে এমন করল!”

মানতাশা সাথে সাথেই বলে,
“তোমাকে ক্ষমা চাইতে হবে না উমায়রা আপু। ঐ হাফসা বেগম তো তোমার উপরেও কম জুলুম করে না৷ তুমি একদম চিন্তা করো না, আমি আসি তোমার পাশে। ঐ মহিলাকে আমি ঠিক শায়েস্তা করব, দেখে নিও।”

উমায়রার চেহারায় হঠাৎ আতংক এসে ভড় করে। সে বলে ওঠে,
“একদম না। ভুলেও এমন কিছু করতে যেও না৷ আবুন(বাবা) অনেক কষ্টে আম্মুন(চাচা) কে রাজি করিয়েছে তোমাকে এখানে রাখার জন্য। এখন তুমি যদি হাফসা উখতুনের সাথে কিছু করতে যাও তো বিপদে পড়তে হবে।”

“আমাকে নিয়ে তুমি চিন্তা করো না। আমার কিছুই হবে না।”

উমায়রা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলে,
“এখন এসব কথা রাখি। যেই কাজের জন্য এখানে আসা সেটা বলি। হাফসা উখতুন আজ কিছু জরুরি কাজে বাইরে গেছেন, তাই মা বলছিল আজ তুমি আর আমি বাইরে থেকে ঘুরে আসলে ভালো হয়। দুবাই শহরে তুমি প্রথম এলে। মামা তো তোমাকে এখানে ঘোরার জন্যই নিয়ে আসতে চাইছিল। কিন্তু..”

মানতাশা বলে,
“আচ্ছা, ঠিক আছে। চলো আমরা আজ দুবাই শহরটা ঘুরে আসি।”


একটি মার্টিজ গাড়ি নিয়ে দুবাই শহর ঘুরে দেখতে বেরিয়েছে উমায়রা এবং মানতাশা। মানতাশা খুব আগ্রহ নিয়ে চারিদিকে তাকাচ্ছে। যেদিকে চোখ যায় শুধু গগণচুম্বী অট্টালিকা। এখানকার সড়কও বেশ প্রস্তত এবং পরিছন্ন। উমায়রা মানতাশার উদ্দ্যেশ্যে বলে,
“এখন আমরা কোথায় যাচ্ছি জানো? দুবাইয়ের সবথেকে বিখ্যাত স্থান বুর্জ খলিফায়।”

মানতাশার ভীষণ আগ্রহ জন্মে। সে বুর্জ খলিফা সম্পর্কে অনেক শুনেছে, ফোনে দেখেওছে। তবে এই প্রথম সামনাসামনি দেখবে। মানতাশা ভীষণ আগ্রহ নিয়ে জানতে চায়,
“তুমি কি আগে কখনো এসেছ এখানে?”

“হ্যাঁ, অনেকবার। আমার কাছে এটা স্পেশাল কিছু না। তবে তুমি অবশ্যই আনন্দিত হবে।”

কথা বলতে বলতেই তারা বুর্জ খলিফার কাছে পৌঁছে যায়। গাড়ি থেকে নেমে অবাক চোখে তাকিয়ে থাকে মানতাশা। তার সামনে এই পৃথিবীর উচ্চতম ইমারত বুর্জ খলিফা। যা বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু ভবন হিসেবে পরিচিত। মোট উচ্চতা ৮২৯.৮ মিটার, ১৬৩ ফ্লোরের সমন্বরে গঠিত।

উমায়রা মানতাশাকে বলে,
“এই বিল্ডিংয়ের কিছু ফ্লোর আমার শ্বশুর মশাই কিনেছেন। চলো আমরা সেখানে যাই। উঁচু থেকে গোটা শহরের দৃশ্যপট দেখতে অনেক সুন্দর হবে।”

মানতাশা সহমত জানালো। দুজনে বুর্জ খলিফায় প্রবেশ করলো। অতঃপর লিফটে করে ১৩৭ তম ফ্লোরে উঠল দুজনে। অতঃপর একটি রুমে প্রবেশ করল। এখান থেকে পুরো শহরের দৃশ্য স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে। মানতাশা মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে রইলো। উমায়রা যতটা বলেছিল তার থেকে অনেক বেশি সুন্দর এখানকার দৃশ্য। উমায়রার ফোন হঠাৎ বেজে ওঠায় সে কথা বলতে বলতে বাইরে চলে গেল। মানতাশা শহরের অন্যদিকের দৃশ্য দেখার জন্য উল্টোদিকের রুমে যাওয়ার কথা ভাবলো। যেই ভাবা সেই কাজ।

মানতাশা পাশের রুমটিতে প্রবেশ করল। রুমটা খোলাই ছিল। ব্যাপারটায় প্রথমে একটু অবাক হলো সে। যাইহোক, রুমে প্রবেশ করে সামনে এগোতে যাবে তখনই বাথরুম থেকে বেরিয়ে এলো জাদ। তার পরণে শুধুই একটি তোয়ালে, বাকিটা উদোম শরীর। হঠাৎ এমন কিছু ঘটে যাওয়ায় দুজনে অপ্রস্তুত হয়ে পড়লো। মানতাশা লজ্জা এবং ভয় দুটোই পেল। সে চিৎকার করতে যাবে তার আগেই জাদ এসে তার মুখ চেপে ধরে বলল,
“যদি একটা শব্দ উচ্চারণ করো তাহলে বুর্জ খলিফার ছাদ থেকে তোমায় একদম নিচে ফেলে দেব।”

মানতাশা তবুও উম উম করতে লাগল। জাদ রাগী কন্ঠে বলল,
“তোমার সমস্যাটা কি?”

মানতাশা তার মুখের উপর থাকার জাদের হাতের দিকে ইশারা করতেই জাদ হাত সরিয়ে নিলো। মানতাশা বেশ ধীর স্বরে বলল,
“আপনি এখানে কি করছেন?”

জাদ বিরক্ত হয়ে বলল,
“আমার রুমে এসে আমাকেই এটা প্রশ্ন করছ তুমি?”

“আপনার রুম মানে?”

“এই রুমটা আমার জন্য বরাদ্দ।”

মানতাশা এবার রুমের দেয়ালের দিকে তাকালো৷ দেয়ালে জাদের ছবি টাঙানো। জাদ তখনো বিরক্তির সাথে তার দিকে তাকিয়ে। মানতাশা নত মাথায় বলল,
“দুঃখিত, আমি বুঝতে পারিনি এটা আপনার রুম।”

“তুমি তো কিছুই বোঝো নি। গত রাতেও নিশ্চয়ই না বুঝেই আমার উপর নোংরা পানি ফেলেছিলে?”

মানতাশা কিছু বলতে পারে না। জাদ বলে,
“এখনো দাঁড়িয়ে আছ কেন? আমাকে এভাবে দেখে বুঝি ভীষণ ভালো লাগছে? আরো কিছু দেখতে চাও?”

মানতাশার গাল লজ্জায় লাল হয়ে গেলো। মনে মনে জাদকে অনেক গালি দিয়ে সে রুম থেকে বেরিয়ে এলো। জাদ তার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে বিরক্তির সহিত বলল,
“এই মেয়েটাকে অতি সত্তর পাগলা গারদে রেখে আসা দরকার। কি যে করে নিজেই জানে না।”

মানতাশা মলিন মুখে রুম থেকে বের হতেই উমায়রার মুখোমুখি হয়। উমায়রা মানতাশাকে দেখে বলে,
“কোথায় চলে গিয়েছিলে তুমি? আমি তোমায় কতক্ষণ থেকে খুঁজে চলেছি।”

মানতাশা নিজের রাগ নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে বলে,
“ভুলক্রমে একটা রক্তচোষা বাদুরের গুহায় ঢুকে পড়েছিলাম।”

“কিসব বলছ? তোমার মাথা ঠিক আছে তো?”

তখনই জাদ নিজের রুম থেকে বের হয়ে বলে,
“একদম ঠিক নেই ভাবি। তুমি তোমার বোনকে পাগলা গারদে পাঠানোর ব্যবস্থা করো।”

মানতাশা পিছু ফিরে রক্তিম চোখে জাদের দিকে তাকায়। পোশাক বদলে একটা জিন্সের প্যান্ট এবং টিশার্ট পড়ে নিয়েছে সাহেবদের মতো৷ উমায়রা বলে ওঠে,
“জাদ তুমি এখানে?”

“আমি এসেছিলাম এখানে একটু কোয়ালিটি টাইম স্পেন্ড করতে। হুট করে কোথা থেকে একটা পাগলা বাঁদর আমার রুমে ঢুকে পড়লো।”

মানতাশা ক্রোধিত দৃষ্টিত তাকাতেই জাদ শুধরে নিয়ে বলে,
“দুঃখিত পাগলী বাঁদরিনী হবে।”

উমায়রা ব্যাপারটা বুঝতে পেরে হেসে ফেলল। মানতাশা উমায়রার দিকে তাকিয়ে অসহায় কন্ঠে বলল,
“আপু তুমিও!”

উমায়রা অনেক কষ্টে নিজের হাসি থামিয়ে বলে,
“তুমি কি তাহলে জাদকে রক্তচোষা বাঁদূর বলছিলে? কাজটা ঠিক করো নি, আমার এত হ্যান্ডসাম দেবর কিভাবে রক্তচোষা বাঁদুর হবে?”

মানতাশা সম্পূর্ণ বাংলায় বলে,
“হ্যান্ডসাম না ছাই! ছবিশ লোক একটা।”

উমায়রা এবং জাদ দুজনেই তার কথার মানে বুঝতে না পেরে অবাক চেয়ে থাকে। মানতাশা বিরক্ত হয়ে আরবিতে বলে,
“আমি বাংলায় তোমার হ্যান্ডসাম দেবরের প্রশংসা করলাম আপু।”

উমায়রা ঠিকই বুঝতে পারছে মানতাশা নিশ্চয়ই বাংলায় জাদের গোষ্ঠী উদ্ধার করেছে। ব্যাপারটা ভেবে আবারো সে হেসে ফেলল।

★★★
আবু সুফিয়ান সোফায় বসে আছে চিন্তিত ভঙ্গিতে। মানতাশার নিখোঁজ হবার ৩ দিন পেরিয়ে গেলো। অথচ এখনো তার খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। ব্যাপারটা ভাবতেই তার চোয়াল শক্ত হলো। এই মেয়ে তাকে আর কতদিন নাকে দড়ি দিয়ে ঘোরাবে ভেবে পায়না সে। ঠনঠনে স্বরে বলে,
“তুমি আমাকে যত জ্বালা দেবে তার থেকে দ্বিগুণ জ্বালা তোমায় ফেরত পেতে হবে মানতাশা। আমি ভেবেছিলাম বিয়ে করে তোমায় নিজের রাণী করে রাখব কিন্তু তুমি যা করলে এরপর আর না। আর সম্মানের যোগ্য নও তুমি। এবার তোমার খোঁজ পেলে আজীবনের জন্য নিজের রক্ষিতা বানিয়ে রাখব।”

চলবে ইনশাআল্লাহ ✨