#সুখ_অমৃত
#পর্ব_২৩
#লেখিকাঃদিশা_মনি
কারাগারের অন্ধকার কুঠুরি থেকে মুক্তি পেল জাদ। দীর্ঘ তিনটা বছর তাকে কাঁটাতে হয়েছে কারাগারের কালো অন্ধকার ঘরে। আজ আবার অনেক দিন পর নতুন সূর্যদয় দেখল সে। একটা বড় দীর্ঘ শ্বাস ফেলে কারাগারের বাইরে পা রাখলো জাদ। জাদকে দেখেই দৌড়ে এসে জড়িয়ে ধরল তার বড় ভাই জাইন। জাদকে জড়িয়ে বলল,
“কত দিন পর তোকে দেখলাম ভাই আমার! আজ আমি বড্ড হাসি।”
জাদ যেন এসবের কিছুতে কোন প্রতিক্রিয়া দেখানোর অবস্থাতে নেই৷ সে এদিক ওদিক তাকায়। তার দুচোখ খুঁজছে অন্য কাউকে। জাদের এই অমনোযোগী আচরণ দেখে জাইন বলে,
“কি হয়েছে জাদ? তুই কি কাউকে খুঁজছিস?”
জাদ মলিন স্বরে বলে,
“আমার মানতাশা আর আমার সন্তান কোথায়?”
জাইন পুরোপুরি স্তব্ধ হয়ে যায় জাদের প্রশ্নে। এর উত্তর দেয়ার মতো কোন ভাষা সে খুঁজে পাচ্ছে না। জাইনকে চুপ দেখে জাদ অস্থির হয়ে ওঠে। জাদের ইচ্ছা ছিল জেল থেকে বেরিয়ে সবার প্রথমে মানতাশা এবং নিজের সন্তানের সাথে দেখা করবে। কিন্তু তার সব ইচ্ছা অপূর্ণ থেকে গেলো। আশেপাশে তাকিয়ে সে কোথাও মানতাশাকে দেখতে পেল না। উপরন্তু জাইনকে চুপ দেখে অস্থির হয়ে বলে উঠল,”বল না ভাইয়া, আমার মানতাশা কোথায়?”
জাইন কিছু বলতে যাবে তার আগেই পিছন থেকে একটি নারী কন্ঠস্বর বলে ওঠে,”এই দেখ তোমার ভাতিজা উসমান।”
জাদ সেদিকে তাকাতেই হাফসা বেগমকে দেখতে পায়৷ তার কোলে বছর তিনেকের ছোট্ট এক শিশু। ভীষণ সুন্দর দেখতে। এক কথায় যাকে কিউট বলে৷ হাফসাকে দেখে জাদ নাখোশ হলো৷ কিন্তু উসমানের টানে ছুটে গেল। হাফসার কোল থেকে উসমানকে একপ্রকার টেনে নিয়ে বললো,
“আপনি এখানে কেন এসেছেন? আমার মানতাশা কোথায়?”
হাফসা বেগম জাদের দিকে একপলক তাকিয়ে বলে,
“আমি জানি, তুমি আমাকে পছন্দ করো না। কিন্তু আমি আজ যা বলছি তা একদম সত্য। মানতাশা…মানতাশা তোমার গ্রেফতারের পরেই এই দেশ ছেড়ে আমেরিকায় চলে গেছে৷ তারপর ওখানে গিয়ে সে আরেক লোককে বিয়ে করে নিয়েছ..”
জাদ ক্ষেপে গিয়ে বলে,
“একদম আমার মানতাশার বিরুদ্ধে কোন কথা বলবেন না। ও এমনটা করতেই পারে না। ও আমাকে অনেক ভালোবাসে। তাছাড়া ওর গর্ভে আমার সন্তান ছিল!”
হাফসা বেগম একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলেন,
“তোমার বাচ্চাটাকে তো ও পেটে থাকতেই এভোশন করে নষ্ট করে দিয়েছে। আমার কথা বিশ্বাস না হলে তোমার ভাইয়াকে জিজ্ঞেস করো।”
হাফসার কথা শুনে জাদ জাইনের দিকে তাকায়। জাইনের কাছে গিয়ে বলে,
“আমি এই মহিলাকে একদম বিশ্বাস করি না৷ আমি জানি, এই মহিলা সব মিথ্যা বলছে। আমার মানতাশা কখনো এমন করতে পারে না। আমি তোমাকে অনেক বিশ্বাস করি ভাইয়া। তুমি আমাকে সত্যটা বলো।”
জাইন একপলক হাফসার দিকে তাকিয়ে বলে,
“হাফসা যা বলছে তা একদম সত্যি। তুমি জেলে যাবার পরই মানতাশা তার আসল রূপ দেখিয়ে দেয়। সে..সে একজন আমেরিকান নাগরিকের হাত ধরে এই দেশ ছেড়ে চলে যায়। তারপর…”
জাদ চিৎকার করে বলে ওঠে,
“এমনটা হতে পারে না। এই মহিলা তোমাকে এসব বলতে শিখিয়ে দিয়েছে তাই না? এনার একটা কথাও আমি বিশ্বাস করি না। আমার মানতাশা এমন মেয়ে নয়।”
জাইন বলে,
“তুই হাফসাকে ভুল বুঝছিস ভাই। আজ ওর জন্যই তুমি কারাগারের বাইরে আসতে পেরেছিস!”
“মানে!”
জাদের কন্ঠে বিস্ময়।
জাইন বলে,
“হাফসা ওর চাচাতো ভাই মানে দুবাইয়ের বাদশাকে বলে তোকে বিশেষ ক্ষমার ব্যবস্থা করে কারাগারের বাইরে এনেছে।”
জাদ হতবাক হয়ে যায় একথা শুনে। সে তো সবসময় হাফসাকে খারাপই জেনে এসেছে। যে সবসময় নিজের স্বার্থ আর কতৃত্বের জন্য অন্যের ক্ষতি করতে দুবার ভাবে না। নিজের স্বার্থের জন্য যে সবকিছু করতে পারে। সেই হাফসাই কিনা তাকে এত বড় বিপদ থেকে রক্ষা করল। এটা বিশ্বাস করা কঠিন। হাফসা জাদের উদ্দ্যেশ্যে বলল,
“আমি জানি, তুমি এত সহজে হয়তো আমায় বিশ্বাস করবে না। কারণ তোমার মনে আমাকে নিয়ে অনেক ভুল ধারণা আছে। কিন্তু এখনো তোমার আরো অনেক সত্য জানা বাকি আছে মানতাশার ব্যাপারে। ঐ মানতাশা কোন সাধারণ মেয়ে ছিল না৷ ও একজন আমেরিকান এজেন্ট ছিল।”
জাদ হতবাক স্বরে বলে,
“এসব কি বলছ টা কি তুমি? মানতাশা আর আমেরিকান সিআইএ এজেন্ট..এটা হতে পারে না৷ ও তো একজন বাংলাদেশী মেয়ে ছিল ওর শৈশব কৈশোর সব বাংলাদেশে কেটেছে তাহলে…”
হাফসা বেগম বলে,
“তুমি ঐ মেয়ের ছলনা কিছুই বুঝে উঠতে পারো নি। আমার সাথে বাড়িতে ফিরে চলো। তোমার চাচি মানে মানতাশার ফুফুর মুখ থেকেই সবকিছু শুনো। এখন চলো আমার সাথে।”
জাদ সিদ্ধান্ত নিলো সে সব জেনে ছাড়বে। তাই হাফসা ও জাইনের সাথে নিজের বাড়ির দিকে রওনা দিলো।
★★
লস এঞ্জেলেস, USA
বিশাল এক ডুপ্লেক্স বাড়ির এক বিলাসবহুল ঘরে অবস্থান করছে একজন নারী। তার পরনে জিন্স এবং টপস তবে মাথায় হিজাব বিদ্যমান। সে স্ক্রিনে কোন একটা ছবি দেখছে। এক পুরুষের ছবি। সেই ছবির উপর হাত বুলিয়ে বলতে থাকে,
“তাহলে তুমি জেল থেকে মুক্তি পেয়েই গেলে! কিন্তু আমার প্রতিশোধের আগুন থেকে তোমার কোন মুক্তি নেই৷ এবার তোমায় সেই প্রতিশোধের আগুনে জ্বলতে হবে।”
বলেই সে ক্রোধে কাপতে লাগল৷ ক্রোধের আগুন ফুলকির মতো জ্বলছে তার চোখে। যেই ক্রোধ যেন সব কিছু ধ্বংস করে দেয়ার সংকেত দিয়েছে। এমন সময় কেউ তার পেছন থেকে তার কাধে হাত রাখলো। নারীটি পেছনে ফিরে কাউকে দেখে আশ্বস্ত হলো। তার উদ্দ্যেশ্যে বলল,
“আমাকে প্রতিশোধ নিতেই হবে ভাইয়া। আমাকে আমার সন্তানের জন্য প্রতিশোধ নিতেই হবে..ও আমার সন্তানকে আমার থেকে কেড়ে নিয়েছে আমি সবকিছুর প্রতিশোধ নেব।”
“হ্যাঁ, তুমি সবকিছুর প্রতিশোধ নেবে। প্রস্তুত হও আগামীকাল আমরা দুবাইতে যাচ্ছি।”
“অবশেষে।”
★★
বাড়িতে ফিরে নিজের বাড়ি হুসনেয়ারা বেগমের সামনে বসে আছে জাদ। হুসনেয়ারা বেগম বলছেন,
“মানতাশা আমাদের সবার সাথে মিথ্যা অভিনয় করেছে। ও সম্পূর্ণ মিথ্যা একটা গল্প বানিয়েছে। মানতাশা আবু সুফিয়ানের দ্বারা অত্যাচারিত ছিল না৷ ওরা দুজনেই একসাথে মিলিত ছিল। মিথ্যা অভিনয় করে ও এই বাড়িতে আশ্রয় নেয়। ওরা আমেরিকান গোয়েন্দা সংস্থা CIA হয়ে কাজ করত। ও এখানে এসেছিল আমাদের এবং দুবাই রাজপরিবারের উপর নজরদারি করতে। এখানে এসে ও এসব অভিনয় চালিয়ে তোমার মন জিতে নিয়ে তোমায় বিয়ে করে। আর তারপর প্ল্যান করে তোমার মা এবং আমার মেয়ে হুমায়রাকে…জানি না এসবের পেছনে ওর কোন স্বার্থ ছিল। কি কারণে আমার এই ছোট্ট নাতিটাকে মাতৃহীনা করল। তোমাকে জেলে পাঠানোর ক্ষেত্রেও ওরই ষড়যন্ত্র ছিল।”
জাদের মাথা কাজ করা বন্ধ করে দেয়। সে বলে,
“যদি এমনই হয় তাহলে মানতাশা আবু সুফিয়ান কে আমার হাতে মরতে দিল কেন?”
“এজেন্টদের জীবন কোন গুরুত্বপূর্ণ কিছু না। তারা কাজে নেমেই পড়ে নিজের জীবনের মায়া ছেড়ে। তাদের উদ্দ্যেশ্য পূরণের জন্য তারা সব করতে পারে।”
“কিন্তু আমার এসব কিছু বিশ্বাস হচ্ছে না।”
“বিশ্বাস না হলেও এটা সত্যি।”
এসব শুনে জাদ ভীষণ হতবাক।
চলবে….