#সুগন্ধি_ফুল
#পর্ব_১২
#জান্নাত_সুলতানা
[পর্ব টা একটু রোমান্টিক। পড়তে না চাইলে স্কিপ করতে পারেন।]
-“লিভ মি আবরাজ। ছাড়ুন।”
আবরাজ ছাড়লো না। বরং হাত বাড়িয়ে বাথটাবের পানির লাইন চালু করে। গড়গড় করে পানি আসতে শুরু করে সেখানে। ফিজার রাগে শরীর কাপে। একটু আগে শাওয়ার নিয়েছে সে। মাত্র ড্রেস চেঞ্জ করে ওয়াশ রুমের দরজা খুলতে এসছিলো। আর তক্ষুণি আবরাজ তাকে টেনে আবার ওয়াশ রুমে নিয়ে এসছে। আর দরজা লক করে বাথটবে ফেলে দিয়েছে।ফিজা রেগেমেগে বলে উঠলো,
-“সমস্যা কোথায় আপনার? এমন গায়ে পড়া স্বভাব কেনো ন্যাকা মেয়েদের মতো?”
-“আমি ন্যাকা নই সুগন্ধি ফুল।”
আবরাজ ন্যাকা সুরে বলে। ফিজার ভ্রু কুঁচকে আসে। গম্ভীর স্বরে বলে,
-“আমার নাম ফিজা।”
-“হ্যাঁ আর আমার সুগন্ধি ফুল।”
আবরাজ ফিজার কাঁধে পানি দিতে দিতে বলে। ফিজা ঝট করে হাত সরিয়ে দেয়। আবারজ ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে বলে উঠলো,
-“তুমি জানো তোমার শরীর থেকে দারুণ একটা স্মেল আসে।”
-“সেইজন্য রাতে ঘুমের ভান করে গলায় মুখ গুঁজে পড়ে থাকেন।”
আবরাজ ঠোঁট কামড়ে হাসে। ফিজার বুকে চিনচিন করে। সুদর্শন এই পুরুষ টা এভাবে হাসতে পারে! কত চমৎকার সেই হাসি। অথচ মুখ টা সব সময় হুতোমপেঁচার মতো করে রাখে। ফিজার একটু ইমোশনাল হয়ে আবরাজ এর ঠোঁটের দিকে তাকিয়ে আছে। আবরাজ তখন দুষ্ট হেঁসে বলে উঠলো,
-“এভাবে ঠোঁটের দিকে তাকিয়ে আছো কেনো? চুমু কি তুমি খাবে না-কি আমি দেব?”
ফিজার যেন হুঁশ এলো। ঠান্ডায় শরীর কাপে। পানি গরম তারপরও রাতের বেলায় দুই দুই বার গোসল দেওয়া মুখের কথা নয়। শরীর কাপে মেয়ে টার। দৃষ্টি এলোমেলো ঘুরিয়ে অস্ফুটে বলে,
-“ছাড়ুন আমায়।”
-“ঠান্ডা লাগছে তোমার?”
আবরাজ এর মুখে তখনও দুষ্ট হাসি। পানির মধ্যে মেয়ে টার শরীর চেপে ধরে রেখে আবার কেমন অবুঝের মতো প্রশ্ন করছে! ফিজার রাগে চোয়াল চেপে আসে। দাঁত চেপে রাগ নিয়ন্ত্রণ এর চেষ্টা করে। তখন আবরাজ এর ফোন বাজে। আবরাজ ফিজা কে ছেড়ে এক হাতে পকেট থেকে ফোন বেড় করলো। ফিজা কল কে করেছে এটা দেখার জন্য সামান্য ঘাড় বাঁকিয়ে তাকালো। তৃণা নাম টা দেখে তাচ্ছিল্য হাসে। আবরাজ কে তাচ্ছিল্য করে বলে উঠলো,
-“আমার ঠান্ডা লাগছে না। আপনার গার্লফ্রেন্ড গরম হয়ে আছে। যান মেয়ে টাকে গিয়ে ঠান্ডা করুন। এসেছেন পর থেকে তো কল করেই যাচ্ছে।”
আবরাজ কল টা রিসিভ করে না। ফিজা ভাবে হয়তো সে এখানে রয়েছে সেইজন্য রিসিভ করছে না। তাই আবরাজ কে সরানোর চেষ্টা করে আবার জানতে চাইলো,
-“আচ্ছা সাথে কেনো নিয়ে আসেন নি বলুন তো? তাহলে ভালো হতো আপনার।”
ফিজা আবরাজ কে অল্প একটু সরাতে সক্ষম হলো। তবে বেশি সময় এর জন্য নয়। স্বল্প সময়ের এর ব্যবধানে নিজের হাতে উলটো টান অনুভব করে ধপাস করে পিছিয়ে আবার বসে পড়লো। কিন্তু এবার আর শুধু বাথটবে নয়। আবরাজ নিজের উরুর উপর বসিয়েছে বউ কে। ফিজা ভ্রু জোড়া কুঁচকে আবরাজ এর দিকে তাকাতে আবরাজ গম্ভীর স্বরে বলে উঠলো,
-“এটার জন্য তো। ওকে হেপ্পি?”
নিজের হাতের ফোন টা আবরাজ বাথটাবের পাশে রাখা গোলাপের পাপড়ি আর পানি ভর্তি পাত্র টাতে ডুবিয়ে রাখলো। শান্ত স্বর অথচ ফিজার শরীর শিরশির করে। আবরাজ এর দিকে আঁড়চোখে তাকাতে আবরাজ বলে উঠল,
-“অনেক টা বেশি দোষ করেছি আই নো। আমি এটার জন্য অনুতপ্ত। বাট সরি এখন যেটা করছি সেটার জন্য তো নয়।”
ফিজা কিছু বুঝে উঠার আগেই আবরাজ ফিজার গায়ের গেঞ্জি টার কাঁধ টা টেনে নিচের দিকে নামিয়ে নিলো। শরীর ভিজে চুপসে আছে দু’জনের। আবরাজ এর সেদিকে খেয়াল নেই। অধর সুধাপান করতে ব্যাস্ত হলো। বেহায়া হাত জোড়াও ফিজার শরীরে বিচরণ করছে। ফিজার ঠান্ডায় আর এতোটা গভীর ভাবে আঁকড়ে রাখার ফলে শ্বাস যেন আঁটকে আছে। কোনো রকম নাকে দিয়ে অল্প নিঃশ্বাস নিতে পারছে। তবে এভাবে কিছু সময় থাকলে মেয়ে টা নিশ্চয়ই জ্ঞান হারাবে। ফিজার হাত দু’টো আবরাজ এর পিঠে ঢিলে হতে আবরাজ একটু থামলো। অবাক হয়ে চোখ মেলে তাকিয়ে দেখলো ফিজা পিটপিট করে তাকিয়ে আছে। ফিজা হাসছে। আবরাজ এর ঠোঁটের উপর বাঁ হাতের তর্জনী আঙুল টা ছুঁয়ে দিয়ে ফিসফিস করে বলে,
-“যখন ইচ্ছে ছিলো না, সত্যি টা জানার জন্য তখন নিজ থেকে সরে গিয়েছে। আর আজ আপনার জন্য একটু অনুভূতি এলো। আর দেখুন না আমার দেহ টা আমায় সঙ্গ দিলো না।”
ফিজার চোখের পাতা বন্ধ হচ্ছে। আবরাজ বুঝতে পারছে। রাতে নিশ্চয়ই মেয়ে টা খাবার ও খায় নি। তারউপর এতো সময় ঠান্ডার মধ্যে। আবরাজ এর মনে পড়তে দ্রুত ফিজার গেঞ্জি টা এক টানে খুলে নিলো। নিজের গায়ের শার্ট ব্লেজার এক হাতে বোতাম খুলে একদম উন্মুক্ত লোমশ বুকে চেপে রাখলো। এরপর গা থেকে কোনো রকম নিজের ভেজা কাপড় টা সরিয়ে এভাবে বসা থেকে ফিজার কে জড়িয়ে রেখে উঠে দাঁড়ালো। মেয়ে টার গায়ে এখন ইনার আর একটা প্লাজু। বাঙালী পোশাক ছিলো এতো সময়। ঢিলেঢালা গেঞ্জি আর প্লাজু। আবরাজ ওয়াশ রুমে বাথটব থেকে নেমে রুমের ভেতর যাওয়ার পর আগে টাওয়াল নিলো। ফিজার গায়ে পেছন থেকে জড়িয়ে দিলো।
থম মেরে বসে আছে আবরাজ। মস্তিষ্কে কিছু সময় পূর্বে ঘটনা স্মরণে এসে সব এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে। কম্ফর্টার এর নিচে বিড়াল ছানার ন্যায় গুটিয়ে শুয়ে আছে ফিজা। চুল এলোমেলো অল্প ভেজা। আবরাজ এর শরীরে শিহরণ বয়ে যায়। মেয়ে টা জেগে থাকলে কথা বললে একদম কঠিন পাথর। অথচ এখন ঘুমের মধ্যে মনে হচ্ছে কত সহজসরল। আবরাজ এর হাত টা বাড়িয়ে ফিজার মাথায় রাখে। ভেজা চুলে হাত চালায়। দরজায় নক পড়তে আবরাজ উঠে গেলো। একজন সার্ভেন্ট। খাবার একটা ট্রেতে দুই টা স্যুপ এর বাটি। আবরাজ সেগুলো নিয়ে ফিরতে আসে। কিছু সময় ডাকাডাকি করে ও ফিজার কোনো রেসপন্স নেই। আবরাজ নিচু হয়ে ফিজার কানের লতিতে আলতো করে কামড়ে ধরে। ফিজা ব্যাথাতুর শব্দ করে শোয়া থেকে সাথে সাথে উঠে বসতে গিয়ে আবরাজ এর মাথার সাথে ধাক্কা খেলো। কিন্তু আবরাজ একটু ও নড়ে না। বরং ফিজার বাহুতে হাত রাখে। নিজের মুখ টা ফিজার কাঁধের কাছে রেখে ফিসফিস করে বলে,
-“লজ্জা পাবে। ওঠো না।”
ফিজা সাথে সাথে শক্ত করে গায়ের কম্ফর্টার চেপে ধরে। অনুভব করে শরীর উন্মুক্ত। শুধু কম্ফর্টার দেওয়া। ভীতু হওয়ার বদলে মেয়ে টা রাগে গজগজ করতে করতে বলে,
-“আপনার সাহস দেখে অবাক হচ্ছি আমি। আপনার একটু ও লজ্জা নেই?”
-“না তোমাকে দেখার পর থেকে লজ্জা কি জিনিস সেটা আমি ভুলে গিয়েছি।”
আবরাজ সেভাবে থেকে জবাব দিলো। ফিজার ইচ্ছে করছে আবরাজ এর সিল্কি চুল গুলো ইচ্ছে মতো টেনে দিতে। আজেবাজে কথা ভালোই শিখেছে আবরাজ বুঝতে পারে ফিজা।
আবরাজ ফিজা কে ড্রেস এনে দেয়। এরমধ্যে আবার কেউ বাড়ির সদর দরজায় কলিং বেল বাজাচ্ছে। আবরাজ গেলো। সাব্বির এসছে। হাতে একটা দামি ফোনের বক্স। আবরাজ সেটা নিলো। এরপর রুমে চলে এলো। সাব্বির পেছন থেকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে থাকে। স্যার এর কি বাসর পালিয়ে যাচ্ছে! এতো তাড়া দেখিয়ে চলে গেলো কেনো? সাব্বির নিজের ভাবনায় বিরক্ত। ঘরে এতো সুন্দরী বউ রেখে এতো রাতে যে তার স্যার ফোন টা নিতে এসেছে এটাই তো অনেক।
#চলবে…
[ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।]