সুপ্ত প্রেমের অনুরাগে পর্ব-১৪ এবং শেষ পর্ব

0
11

#সুপ্ত_প্রেমের_অনুরাগে🕊️
#পর্ব:চৌদ্দ(শেষ)
#তামান্না_ইসলাম_কথা

কেটে গেল আরো সপ্তাহ দুয়েক। আদভিন এবং আমার সম্পর্ক দিন দিন আরো গভীর থেকে গভীর হচ্ছে। আর্দ্র এবং রোদ্র দু’জন ছোট ছোট করে হাঁটতে শুরু করেছে। ছেলে দুটো হয়েছে ভারি বজ্জাত। সব সময় আমাকে জ্বালিয়ে পাগল করে দিবে।

“তরু তোমার জন্য দুটো খবর আছে। একটা ভালো আরেকটা খারাপ। এখন তুমি বলো কোনটা শুনবে!”

সোফায় গা এলিয়ে দিতে দিতে কথাটা বললো আদভিন। এই ভর দুপুরে আদভিনকে বাড়িতে দেখে কিছুটা অবাক হয়ে গেলাম। আর্দ্রকে মুখে ভাত দিয়ে আদভিনের সামনে পানির গ্লাস এগিয়ে দিয়ে তাকিয়ে রইলাম তার দিকে।

“শোনো, অন্তু গতরাতে এক্সিডেন্ট করেছে। পায়ের উপর দিয়ে গাড়ি যাওয়ায় তার দুই পা আঘাত লাগে। আর পায়ের বাজে অবস্থার জন্য দুই পা কেটে ফেলতে হয়েছে।”

কথাটা বলেই সামনে থাকা পানির গ্লাস এগিয়ে নিয়ে সম্পূর্ণ পানি শেষ করে নিলো। আমি তখনও তার দিকে তাকিয়ে আছি পরের কথা শুনব বলে। অন্তুর জন্য আমার কোন খারাপ লাগা কাজ করছে না করার কথাও না। খারাপ মানুষের জন্য খারাপ লাগে না।

“তোমার এক্স বয়ফ্রেন্ড মানে সামিন তাকে পুলিশ ধরে নিয়েছে। অন্তুকে বেল করিয়ে নিয়ে আসার সময় ডিউটিরত অফিসারকে হুমকি দিয়েছিল এবং তাকে মারতে কিছু লোক পাঠিয়েছিল তার জন্য শশুর বাড়ি নিয়ে গিয়েছে।”

আদভিনের কথা শুনে মুখটা শক্ত করে নিলাম। এই অসভ্য লোকটা প্রায় আমাকে খোঁচা মেরে কথা বলবে। কি এক প্রেম করেছিলাম এখন তার জন্য এই অসভ্য লোকটা খোঁচা দিচ্ছে।

“অসভ্য লোক একটা।”

কথাটা বলেই আর্দ্রর কাছে চলে গেলাম। পিছন থেকে আদভিনের হাসির শব্দ শোনা গেল।

🍁🍁🍁🍁🍁🍁

রাত যেন কেমন অলস। জানালার পর্দা হালকা বাতাসে দুলছে, বাইরে শহরের আলো-আঁধারি ছায়ার মধ্যে সবকিছু নিস্তব্ধ। আয়নায় দাঁড়িয়ে চুলে আঙুল চালিয়ে নরম কণ্ঠে নিজের প্রতিচ্ছবির সঙ্গে কথা বলছি আমি। যেন আত্মার গোপন গল্পগুলো সেখানেই লুকিয়ে রাখা।
পেছন থেকে ধীর পায়ে হেঁটে আদভিন এসে দাঁড়াল আমার থেকে কয়েক ইঞ্চি দূরে। তার চোখে অদ্ভুত কিছু চাওয়া, আর কিছু পাওয়ার গভীরতা। ঠোঁটে অল্প হাসি। এই ঠোঁট এবং চোখ যেন বলে দিচ্ছে আজকে খুব গভীর কিছু হতে যাচ্ছে।

“তুমি এখনও তৈরি হওনি?”

আমার পিছনে এসে দাঁড়িয়ে আদভিন প্রশ্ন করলো। আদভিনের কথা শুনে মাথা নিচু করে নিলাম। কেমন যেন লজ্জা লাগছে।

“এই যে হচ্ছি! এক বুড়ো ব্যাটার জন্যই তো তৈরি হচ্ছি।”

ঠোঁটে হালকা হাসি নিয়ে আয়নার দিকে তাকিয়ে আদভিনকে কথাটা বললাম। আদভিন ধীরে ধীরে এগিয়ে এসে একদম পেছনে দাঁড়িয়ে গেল। দূরত্ব এখন নেই বললেই চলে। আমার পিঠ গিয়ে ঠেকেছে আদভিনের বুকে। আদভিন হাত বাড়িয়ে পিঠে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা আমার চুল গুলো সরিয়ে কাঁধে হালকা চুমু দিল। আদভিনের কোমল ছোঁয়ায় যেন গায়ে শিহরণ খেলে গেল। পরম আবেশে চোখ বন্ধ হয়ে এলো আমার।

“তুমি কি জানো, এই শাড়িটা তোমাকে কী ভয়ানক রকমের সুন্দর লাগাচ্ছে?”

কথাটা বলে আবারো আমার কাঁধে ছুঁয়ে দিলো আদভিন। আদভিনের কথা শুনে একটু হাসলাম। প্রিয় মানুষের সব কিছু যেন সুন্দর লাগে।

“আপনি কি শুধু শাড়িটাকেই বাহবা দিচ্ছেন, নাকি এই শাড়ি পরিহিত রমনীকে?”

“তোমাকে। প্রতিটা বাঁকে, প্রতিটা নিঃশ্বাসে, আমি তোমাকেই খুঁজি।”

আমার প্রশ্নের সহজ স্বীকারোক্তি দিলেও তার কথার গভীরতা ছিল অনেক। সে যেন নিজের কথা দিয়ে বুঝিয়ে দিচ্ছে তার করা সব প্রশংসা যেন আমার জন্য। হঠাৎ করে আদভিনের হাত এসে জড়িয়ে ধরল আমার কোমর। সেই স্পর্শে আমার বুকের ভেতর কেমন যেন এক ঝড় ওঠে। চোখদুটো ধীরে ধীরে ভিজে গেল অনিমিষেই।

“তুমি কাঁদছো?”

“না, আবেগে ভরে উঠছি। এই অনুভবটা অচেনা ছিল আমার কাছে।”

আদভিন আমাকে ঘুরিয়ে তার দিকে ফেরাল। আমার দুই হাত গিয়ে ঠেকলো আদভিনের বুকে। আমার মুখে এসে লাগছে আদভিনের উত্তাপ নিঃশ্বাস। সে-ই সাথে বুকের ধুকপুকানি বেড়ে গেল। আমার চোখে ওঠে গেল গভীর আবেগ, আর ঠোঁটে কাঁপন।

“তুমি জানো, তরু… আমি আগে কখনো কাউকে এতটা চাইনি, এতটা ভালোবাসিনি। তোমার স্পর্শ, তোমার গন্ধ, সবকিছুতে আমার অস্তিত্ব মিশে যাচ্ছে।”

কথা গুলো বলতে বলতে আদভিন তার গাল দিয়ে আমার সমস্ত মুখ স্পর্শ করে যাচ্ছে। আদভিনের কাজ এবং কথাতে কিছু না বলে আদভিনের গলা জড়িয়ে ধরলাম। হালকা গন্ধের মধ্যেও একধরনের উষ্ণতা ছিল, আর ছিল ভালোবাসার। আদভিনের ঠোঁট আমার কপালে এসে আলতো ভাবে ছুঁয়ে গেল। একটানা চুমু যেখানে ছিল আশ্রয়, নিরাপত্তা, আর একান্ত ভালোবাসা।

হঠাৎ আদভিন আমার চিবুকে হাত রেখে মুখটা উপরে তুলল। আমার আর আদভিনের চোখে চোখ এক হয়ে গেল। আদভিনের সেই চাহনিতে লুকিয়ে থাকা শত অনুরাগ, ব্যথা, কামনা সবকিছু যেন আমি পড়তে পারলাম।
আদভিন ধীরে ধীরে আমার ঠোঁটের খুব কাছে মুখ নিয়ে এলো।

“তোমার ঠোঁট আমার ধৈর্য পরীক্ষা নেয় জানো তরু?”

আদভিনের প্রশ্নে আমার সারা শরীরে যেন এক কম্পন শুরু হলো। গলা দিয়ে কোন কিছু বের হচ্ছে। সব কথা গুলো গলায় আটকে আছে যেন। আদভিনের প্রশ্নে কিছু বললাম না, শুধু ঠোঁটের মাঝে নিঃশ্বাস ফেললাম উষ্ণ কাঁপানো।

চুম্বনের শুরুটা ছিল কোমল। তারপর তা গভীর হয়ে উঠল। ঠোঁটের ছোঁয়া থেকে ঘাড়ে, ঘাড় থেকে গলার নিচে আদভিনের ঠোঁট নেমে এলো। আবেশে আমার চোখ বন্ধ হয়ে এলো, বুক কেঁপে উঠল। শরীরের প্রতিটি কোষ জেগে উঠল আদভিনের স্পর্শে।

শাড়ির আঁচল ধীরে ধীরে খুলে নিচে পড়ে গেল। স্লিভলেস ব্লাউজের গায়ে আদভিনের আঙুল ছুঁয়ে গেলে আমার গা শিউরে উঠল।

“তুমি জানো, এই মুহূর্তটাকে আমি থামিয়ে রাখতে চাই।”

“আমিও।”

কাঁপা কাঁপা কন্ঠ নিয়ে নিঃশব্দে কথাটা বললাম আদভিনকে।

আদভিনের হাত আমার পিঠ বেয়ে নিচে নামল। তার আঙুলের খেলা আমার শিরায় শিরায় আগুন জ্বালিয়ে দিল। আমি যেন থর থর করে কাঁপতে শুরু করলাম। আমার কন্ঠ কেঁপে উঠছে বারবার।

“আপনি আমাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন আদভিন?”

“আমার ভেতরে। তোমার ঠাঁই সেখানে সারাজীবন।”

কথাটা শেষ করেই কোলে তুলে নিলো আদভিন। ভয় এবং লজ্জায় আদভিনের গলা জড়িয়ে তার বুকে মুখ গুঁজে নিলাম। আদভিন ধীরে ধীরে বিছানার দিকে টেনে নিল আমাকে। শরীরের ওজন আমাদের দু’জনের মাঝে কোনো প্রতিবন্ধকতা ছিল না, বরং একে অপরের ঘামে, গন্ধে, উষ্ণতায় আমরা জড়িয়ে পড়েছি।

আমার শরীর তখনও থেমে থেমে একটু কাঁপছিল, চোখে ছিল মৃদু ভয় আর চরম আকাঙ্ক্ষার মিশেল। আদভিন তার ঠোঁট দিয়ে আমার গাল ছুঁয়ে নিলো।

“ভয় পেয়ো না। আমি কোনো তাড়াহুড়ো করবো না। শুধু তোমাকে অনুভব করতে চাই…”

আদভিনের কথা শুনে চোখের পানি মুছে হাসলাম।

“আমি আপনার হতে চাই আদভিন। পুরোপুরি ভাবে। আমার প্রতিটি অঙ্গপ্রত্যঙ্গে আপনার ছোঁয়া লেগে থাকবে আদভিন।”

আদভিনের গলা জড়িয়ে ধরে কথাটা বললাম আমাদের সেই রাত ছিল দীর্ঘ, কিন্তু মনে হল যেন একটুও সময় গেল না। আদভিন ধীরে ধীরে আমার ব্লাউজ খুলে ফেলল, তারপর এক এক করে শরীরের সমস্ত বাধা সরিয়ে ফেলে আমাকে আঁকড়ে ধরল নিজের বাহুডোরে।

আমার বুক আদভিনের বুকে ঠেকতেই একধরনের কম্পন সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ল। আদভিন বুকের মাঝখানে চুমু দিল, তার হাতের আঙুল বুলিয়ে দিল কোমরের পাশ দিয়ে উরুর ওপরে। আমার তার হাত শক্ত করে চেপে ধরল তার শক্ত হাত ধারা।

নিঃশব্দে একে অপরকে অনুরণনে ভরিয়ে তুললাম আমরা। প্রতিটি স্পর্শ, প্রতিটি চুমু যেন আমাদের মেলবন্ধনের প্রতীক হয়ে উঠলো।

” আমার পৃথিবী আপনি আদভিন…”

ফিসফিস করে আদভিনকে কথাটা বললাম।

“তুমি আমার নিঃশ্বাস, তরু।”

রাতের বুকে জেগে ছিল চাঁদের আলো, একটানা বৃষ্টি হচ্ছিল যেন জানলার ওপাশে প্রকৃতিও আমাদের প্রেমকে আশীর্বাদ জানাচ্ছিল। স্বাক্ষী হয়ে থেকে গেল বৃষ্টির জল কনা গুলো।

আমাদের শরীরগুলো এক হয়ে উঠলো, একে অপরের ভালোবাসা আর কামনার মিশ্রণে। সেই ভালোবাসা ছিল পবিত্র, সেই কামনা ছিল শ্রদ্ধাপূর্ণ। আবেগে পরিপূর্ণ, গভীর ভালোবাসায় মোড়া।

“এই রাতটুকু আপনি আমার হয়ে থাকেন আদভিন। পরের রাত গুলোর দায়ও আমি নেব।”

ঘুম আসার আগে আদভিনের বুকের উপর মাথা রেখে তাকে জড়িয়ে কথা গুলো বললাম।

“আমি চিরকাল তোমার, তরু। শুধু আজ না—চিরকাল।”

আলতো করে আমার ঠোঁটে চুমু খেয়ে কথাটা বললো আদভিন।

🍁🍁🍁🍁🍁🍁

ভোরের প্রথম আলোটা যেন মাটির উপর একরাশ সোনালি চুমু এঁকে দেয়। পূর্ব আকাশটা একটু একটু করে লালচে হতে থাকে, যেন রঙ তুলিতে কেউ আলতো করে রঙ মেখে দিচ্ছে। ঘুম থেকে জেগে ওঠা পাখিরা ডাকে, পাতাগুলো শিশিরে ভিজে চিকচিক করে ওঠে। বাতাসে থাকে এক ধরনের কাঁচা কোমলতা যেটা কেবল ভোরেই পাওয়া যায়।

ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে হালকা ঘুমচোখে চারপাশটা দেখছিলাম। আদভিন এখনো ঘুমাচ্ছে। যদিও আসার আগে আদভিনকে ডেকে ছিলাম কিন্তু বিশেষ লাভ হলো না।
এলোমেলো চুল আর মুখে একটু রাগ-ঘুম-মাখা ভাব নিয়ে দাঁড়িয়ে আছি। আমার পরনের রাতের সেই নরম কাপড়টা বাতাসে একটু একটু করে ওড়ছিল।

“ভোরটা এত সুন্দর কেন জানো? কারণ এটা তোমার মত লাজুক।”

হঠাৎ পিছন থেকে আদভিন এসে খুব আস্তে করে আমার কানে ফিসফিসিয়ে কথাটা বললো। হঠাৎ করে আদভিনের চলে আসায় কিছুটা চমকে উঠলেও নিজেকে সামলে নিয়ে হাসলাম। কিন্তু নিজের হাসি লুকিয়ে চোখে মুখে বিরক্তিকর ভাব ফুটিয়ে তুলে আদভিনের দিকে তাকালাম।

“আদি আপনিও না! এভাবে কেউ ভয় দেখায়? আরেকটু হলেই তো প্রাণপাখি যাচ্ছিল”

ভয় পাওয়ার ভান করে কথাটা আদভিনকে বললাম। কিন্তু আমার কথা শুনে আদভিন হাসে। লোকটার হাসি এত সুন্দর কেন?

“ভোরে লজ্জা পেলে কি ক্ষতি? আমি তো শুধু বললাম, তুমি সুন্দর।”

আদভিনের কথাতে আমি লাজুক হয়ে গেলাম। আদভিনের বুকে আবার মুখ লুকিয়ে নিলাম।

#সমাপ্ত