সুপ্ত প্রেমের অনুরাগে পর্ব-০৮

0
15

#সুপ্ত_প্রেমের_অনুরাগে🕊️
#পর্ব:আট
#তামান্না_ইসলাম_কথা

উত্তাপ রোদের মাঝেও ভার্সিটির খোলা মাঠের মধ্যে সব বন্ধুরা বসে আছি। না সবাই বসে না বরং ছেলেরা আধশোয়া হয়ে বসে আছে। আর আমরা মেয়েরা গালে হাত দিয়ে বসে আছি তো কেউ কেউ ঘাস ছিঁড়ে ছিঁড়ে উঠাতে ব্যস্ত। সবার মাঝেই নিরবতা এবং চাপা উত্তেজনা। এর মূল কারণ হচ্ছে, আদভিন এবং বাচ্চা। বিয়ের সময় তারা সবাই উপস্থিত থাকলেও কেউ বাচ্চাদের কথা জানে না। যেটা জানার পর থেকেই সবাই এভাবে বসে আছে। তার থেকেও বেশি নিয়ে চিন্তায় মশগুল হয়ে আছে, শাশুড়ি মায়ের আদ্র এবং রোদ্রকে “নানু ভাই” সম্বোধনের জন্য।

” এতো সুন্দরী হইয়া কি লাভ হইল যদি কি-না কপালে একটা বুইড়া ব্যাটা জুটে?”

নিরবতা ভেঙ্গে ইতি ব্যাঙ্গ করে কথা গুলো বললো। কিন্তু তার চোখে মুখে দুঃখের হাহাকার কিন্তু সে এখনো আগের মতই গাল হাত দিয়ে বসে আছে।

“শুধু কি বুইড়া ব্যাটা? দুইটা পোলার বাপ ভাই বাপ! আবার তো মনে হলো, ভুড়িও আছে।”

তীর্থ কপাল চাপড়াতে চাপড়াতে কথাটা বললো। দুজনের এমন কাহিনী দেখে মনে হচ্ছে বিয়ে আমার না ওদের হয়েছে। একজনের বুড়ো ব্যাটা আরেক জনের বুড়ো বেডি কপালে জুটেছে। আর আদভিনের ভুঁড়ি আছে? এইটা শুনলে নির্ঘাত আদভিনের ভুঁড়ির জন্য আফসোস হবে।

” দুই ছেলের বাপ হলেও কিন্তু দেখতে হ্যান্ডসাম আছে।”

“তা ঠিক বলেছিস।

প্রভার কথার প্রতিত্তরে কথাটা বললো মৌনি। এদের কথার শুনে আমার মাথা খারাপ হয়ে যাওয়ার অবস্থা। এরা কি আমার বন্ধু?

“তোরা কি একটু থামবি? আমি তোদের হেল্প করতে বলেছি আর তোরা এখানে এসব শুরু করলি? আর তীর্থ তুই আগে নিজের ভুঁড়ি সামলা। দিন দিন তো গোপাল ভাঁড় হয়ে যাচ্ছিস।”

“তীর্থ আর গোপাল ভাঁড়? ওর শুধু গোপাল ভাঁড়ের মতো ভুঁড়িটা আছে আর কিছু না।”

আমার কথা শেষ হতে না হতেই উক্ত কথা গুলো বললো প্রভা। আর প্রভার কথা শুনে মূহুর্তের মাঝেই সেখানে হাসির রোল পড়ে গেল। এদের মাঝে থাকলে আমার কাজের কাজ কিছুই হবে না মাঝখান থেকে সময় যাবে।

“তোরা থাক আমি আজ আসি। আর আদভিন তোদের যেতে বলেছে। আর!
“যদি সব কিছু জানতে চাও তাহলে এই ঠিকানায় চলে এসো।”

সবাইকে কথা গুলো বলে বিদায় নিচ্ছিলাম কিন্তু একটা আননোন নাম্বার ফোনে মেসেজ আসতেই থেমে গেলাম। সবার দিকে তাকিয়ে দেখি ওরা আমার দিকেই তাকিয়ে আছে। তবুও তাদের কিছু না বলে ভার্সিটি থেকে বের হয়ে গেলাম। হ্যাঁ সত্যিটা আমার জানা দরকার তবে সেটা আমি অনেক কিছু জানতে পেরেছি বাকিটা আমি নিজে থেকেই জেনে নিবো।

🍁🍁🍁🍁🍁🍁

দুই কাপ কোল্ড কফি নিয়ে বসে আছি পঁচিশ মিনিট ধরে। পেটে ক্ষুধা এবং তীব্র রোদে গলা শুকিয়ে গেলেও সামনে বসে থাকা লোকটাকে দেখে খাওয়ার ইচ্ছে জাগছে না। ইচ্ছে করছে এখান থেকে উঠে চলে যায়। কি কারণে যে, দেখে করতে এলাম সেটাও জানিনা। নিজের কৌতুহল দমন করতে না পেরে কেন আসতে গেলাম? এখন মজা বুঝতে হচ্ছে।

“তুমি চুপ করে বসে আছো কেন তরু? কিছু তো বলো।”

সামনে কালো শার্ট এবং নেভি ব্লু কালারের জিন্স পড়া ছেলেটির কথা শুনে একবার তার দিকে তাকালাম। সুন্দর, স্মার্ট গুড লুকিং ছেলেটা আমার বরাবরই অপছন্দের তালিকায় ছিল। কিন্তু বয়সের দোষে না কি মোহ আমাকে এই ছেলেটার দিকে এগিয়ে দিয়েছিল সেটা আমার জানা নেই। তবে সেটা যে আমার মস্ত বড়ো ভুল ছিলো তা আমি ভালো লাগার মাস ছয়েক পর বুঝতে পেরেছিলাম।

“আমাকে এখানে কি জন্য আসতে বলেছেন? আর আপনি আমার পিছু ছাড়ছেন না কেন?”

টেবিলের উপর দুই হাত রেখে বিরক্তের সাথে প্রশ্ন করলাম আমার সামনে বসে থাকা সামিনকে।

“আরে এতো রেগে যাচ্ছ কেন তুমি? কফিটা শেষ করো। তারপর না হয় আমরা আরাম করে বসে কথা বলব! আমি জানি তুমি এখনো আমাকে ভালোবাসো। নয়তো আমার এক ডাকে এখানে আসতে না।”

কফির কাপে চুমুক দিতে দিতে কথাটা বললো সামিন। বড্ডো বিরক্ত লাগছে সামিনকে।

“ভালোবাসা আমার জুতা। আপনাকে আমি ভালোবাসি না সামিন। আর আমি এখানে আপনার সাথে কফি খেতে আসিনি আর না তো আপনার ভালোবাসার টানে এসেছি। যদি আমি ভুলেও টের পেতাম মেসেজ আপনি করেছেন তবে কখনোই এখানে আসতাম না।*

দাঁতে দাঁত চেপে কথা গুলো বললাম সামিনকে। কিন্তু আমার কথা শুনে সামিন চমৎকার করে হাসলো। আমার অপমান যেন তার গায়ে লাগেনি এমন ভাব।

“তুমি আমার বাড়িতে গিয়েছিলে কেন?'”

কফিতে পুনরায় চুমুক দিতে দিতে কথাটা বললো সামিন। সামিনের কথা শুনে আবারো সব কিছু এলোমেলো হতে শুরু করলো। সে-ই সাথে অবাক তো হয়েই গেলাম। কি বলছে এই ছেলে?

” আপনার বাড়ি মানে?”

“তুমি এবং আদভিন চৌধুরী ঝড় বৃষ্টির মাঝে যে বাড়িতে গিয়েছিলে। যে বাড়িতে গিয়ে অন্তু সিকদারকে আদভিন চৌধুরী মেরে এসেছিল সে-ই বাড়ির কথা বলছি। কিন্তু তোমাকে কিন্তু হট লাগছিল। ভেজা শাড়িতে তোমাকে কাছে পেতে ইচ্ছে করছিল।”

প্রথম কথা গুলো একটু রাগি ভাবে বললেও পরের কথা গুলো কুৎসিত দৃষ্টি নিয়ে কথা গুলো বললো সামিন। সামিনের প্রথম কথা গুলো শুনে যতটা না অবাক হয়েছি তার থেকেও ঘৃণায় গা ঘিন ঘিন করে উঠলো শেষ কথা গুলো শুনে।

“এই থাপ্পড় তোকে অনেক আগেই দেওয়া উচিত ছিল। সে-ই সাথে তোর পরিবারের পারিবারিক শিক্ষার অভাব অনেক আছে। তোর মা হয়তো তোকে সঠিক ভাবে শিক্ষা দিতে পারেনি তাই একটা মেয়েকে নিয়ে এমন কথা বলতে তোর লজ্জা করলো না। এরপর যদি কোন মেয়েকে এমন কুৎসিত কথা বলতে যাস তার আগে আমার এই থাপ্পড়ের কথা মনে করবি।”

নিজের সর্ব শক্তি প্রয়োগ করে সামিনকে থাপ্পড় মেরে কথা গুলো বললাম। আচানক গালে থাপ্পড় পড়া নিজেকে সামলে উঠতে পারেনি সামিন। যখন কি হয়েছে তা অনুধাবন করতে পারলো তখন রক্ত চক্ষু নিয়ে আমার দিকে তাকালো।

” তুমি আমার গায়ে হাত তুললে? এর পরিনতি তোমার জন্য খুব একটা ভালো হবে না তরু বেবি। জাস্ট ওয়েট এন্ড ওয়াচ।”

কথা গুলো বলেই সামিন কফিশপ থেকে বের হয়ে গেল। এদিকে আমার গা ঘিন ঘিন করতে শুরু করলো।

🍁🍁🍁🍁🍁🍁

“আজকে আমার ভার্সিটিতে কী হয়েছে জানিস? আমার দুষ্টু দুষ্টু ফ্রেন্ড ওরা বলেছে তোর বাবার না কি ইয়া বড়ো ভুঁড়ি আছে ঠিক গোপাল ভাঁড়ের মতো।”

আদ্র এবং রোদ্রকে কথা গুলো বলে হাসতে শুরু করলাম। বাচ্চারা আমার কথা কতটা বুঝতে পেরেছে জানিনা কিন্তু আমার হাসির সাথে সাথে ওরাও এক সাথে হাসতে শুরু করলো।

” আজ কোথায় গিয়েছিলে তরু?”

আমার কথা শেষ করার পরপরই আদভিনের কন্ঠ ভেসে এলো। মূহুর্তের মাঝেই আমার হাসি বন্ধ হয়ে গেল। আদ্র, রোদ্রর সাথে বিছানায় বসে বসে গল্প করছিলাম। ছেলে দু’জন এখন আমার কাছে থাকে বেশি সময়। এমন সময় আমার সামনে আদভিন এসে দাঁড়িয়ে প্রশ্ন করলো।

“আপনার কি আমার মত ভুলে যাওয়ার রোগ আছে?”

কোমরে দুহাত রেখে ভ্রু নাচিয়ে আদভিনকে প্রশ্ন করলাম। আমার কথা শুনে আদভিন আগের মতো দাঁড়িয়ে থাকলেও কপালে সামান্য পরিবর্তন হলো।

“মানে?”

” মানে আবার কি জানেন না? সকালে আপনি নিজেই তো আমাকে ভার্সিটিতে নামিয়ে দিয়ে গেলেন।”

” হ্যাঁ! আমি একদম ভুলে গিয়েছিলাম। স্যরি! কিন্তু তোমার ফ্রেন্ড আমাকে গোপাল ভাঁড় বলেছে? আমার ভুঁড়ি আছে?”

নিজের পেট আয়নায় দেখে আমাকে প্রশ্ন করলো আদভিন। আদভিনের কথা শুনে আমার প্রচন্ড পরিমানে হাসি পেয়ে গেল। নিজের হাসি দমন করতে না পেরে হাসতে শুরু করলাম।

🍁🍁🍁🍁🍁🍁

“আদ্র এবং রোদ্র আদভিনের না বরং আমার সন্তান।”

#চলবে