সেই মেয়েটা চন্দ্রাবতী
শেষ পর্ব
জুয়েনা চলে গেলে মৃদুলা শুয়ে পড়ে। সারাদিনের কাজের ধকলে ঘুমিয়েও পড়ে। শুধু ঘুমাতে পারে না চন্দ্রা। বারবার মনে হচ্ছে মাহতাবের কী হলো। ও কি সত্যি বাইরে বসে আছে? ভালোই মেঘের গর্জন হচ্ছে। বৃষ্টির ফোঁটা নেমে আসতেই চন্দ্রা অস্থির হয়ে যায়। ফোন দেবে না দেবে না ভেবেও কল করে। কিন্তু কল ঢোকে না। কিছুক্ষণ ছটফট করে ছাতাটা বের করে চন্দ্রা পা টিপে নেমে আসে। একবার ভাবে ফিরোজ সরকারকে ডাক দেবে। কিন্তু এতরাতে চন্দ্রাকে যদি কেউ বাড়ির বাইরে আবিষ্কার করে তাহলে কেলেঙ্কারি হবে। তবু এই বৃষ্টিতে মাহতাব কোথায় আছে তা জেনে শান্তি পাবে না।
দরজা খুলে বাহির বারান্দায় আসতেই বৃষ্টির ছাট গায়ে আসে। হুট করে বাইরে জ্বলতে থাকা বাতিটা বন্ধ হয়ে যায়। বিদ্যুৎ চলে গিয়েছে। শীতল বাতাসের আরামে না, বরং ঘন-কালো অন্ধকার নেমে এসেছে বলেই চন্দ্রার গায়ে কাটা দেয়। মফস্বল শহরে এই এক যন্ত্রণা। বাতাস বইতে না বইতে বিদ্যুৎ চলে যায়। চন্দ্রা ফোনের আলোটা জ্বালানোর চেষ্টা করে। বারান্দার গ্রিলটা তালা মারা। এই আরামের আবহাওয়ায় ধনুও নিশ্চয়ই কাচারি ঘরে জম্পেশ ঘুম দিয়েছে। ঝড় বৃষ্টির শব্দে চন্দ্রার ডাক তার কানে যাবে না। তবু চন্দ্রা কয়েকবার নাম ধরে ডাকে। মোবাইল টর্চের আলোয় জায়গাটা আলোকিত না হয়ে কেমন ভূতুড়ে হয়ে আছে। তবু চন্দ্রা সাহস করে গেট খুলে। ছাতাটা মাথায় দিয়ে নিচে নেমে আসে। বৃষ্টি ভালোই পড়ছে।
হঠাৎ অন্ধকার ফুঁড়ে একটা হাত এসে চন্দ্রার হাত ধরে। চন্দ্রা ভয়ে একটা চিৎকার দিতে গেলেই আরেকটা হাত তার মুখের উপর এসে পড়ে।
“ভয় পেও না। আমি।”
বিদ্যুৎ চমকে মাহতাবের মুখটা একমুহূর্তের জন্য চন্দ্রার দৃষ্টিগোচর হয়। কেমন জানি একটা শান্তির প্রলেপ দিয়ে যায় মনে। পরমুহূর্তেই মাহতাবের হাত ধরে বারান্দার দিকে টেনে নিয়ে আসে।
“তুমি এখানে সত্যি বসে আছ! তোমার মাথা খারাপ মাহতাব?”
“না। আমি মেন্টালি একদম সুস্থ। না হলে চাকুরীর আগে স্বাস্থ্য পরীক্ষায় বাদ পড়ে যেতাম।”
“সুস্থ মানুষের কাজকর্ম এমন হয়? তুমি এর মধ্যে শোকজ খেয়েও বসে আছ। এমন আচরণ করলে চাকরি যাবে। দুই বছরের আগে সরকারি চাকরিও পার্মানেন্ট হয় না। আল্লাহর ওয়াস্তে তুমি আমার কথা বোঝার চেষ্টা কর। তুমি কত বড়ো পরিবারের ছেলে, কত পড়ালেখা করা বা কত ভালো চাকরি কর এসব কোনো কাজে আসবে না। এখানে তোমার সামাজিক সম্মান, পরিবারের সম্মান দেখার আগেই সবাই ফয়সালা করবে। মারধর করতে পারে।”
“আমাকে মারধর কেন করবে! আমি চোর না ডাকাত!”
“মারধর করতে চোর ডাকাত হওয়া লাগে না। আমাদের এখানে বেশিরভাগ মারামারি মহিলা ঘটিতই হয়। সালমার ঘটনা দেখেও তুমি বুঝ নাই? তোমার আমার কোনো নোংরা সম্পর্ক আছে এটা প্রচার হলেই যথেষ্ট তোমার মার খাওয়ার জন্য। বাকি বিচার বিবেচনা পরে করবে। এবার হয়তো দাদা আর বাবাও আটকাবে না। চারদিকে কী অস্থিরতা তুমি দেখ না?”
বৃষ্টি ধরে এসেছে। বারান্দায় এখন আর ছাট আসছে না। তবে থেকে থেকে বিদ্যুৎ চমকে আলোকিত হচ্ছে চারদিক। সেই আলোতে একদম ভিজে যাওয়া মাহতাবকে দেখে চন্দ্রার মনে দুশ্চিন্তা হয়। এই ছেলেটা শহুরে ছেলে, এই সব কাদামাটি জলে ভেজার অভিজ্ঞতা ওর নেই। ঠান্ডা বৃষ্টির পানিতে গায়ে শুকিয়ে নির্ঘাত জ্বর বাঁধাবে। মাথাটা মুছে দিতে পারলে ভালো হতো। ঘর থেকে একটা তোয়ালে নিয়ে আসবে নাকি? ব্যাগ কই এই পাগলের? বৃষ্টিতে সব ভিজেছে নিশ্চয়ই। মাহতাব কী জানি বলে যাচ্ছে, চন্দ্রা কিছু শুনছে, কিছু শুনছে না। তার মাথায় ঘুরছে মাহতাবের কাপড় বদলানো উচিত। এই ছেলে ঠান্ডা সহ্য করতে পারে না আগেও দেখেছে।
“চন্দ্রা, তুমি কি আমার কথা শুনতে পাচ্ছ?”
“না পাচ্ছি না। তুমি আমার কথা কেন শুনলে না? কোনো একটা হোটেল খোলা পেতে। এখন তো সব বন্ধ।”
“আমি তোমার দরজা খোলার অপেক্ষায় ছিলাম। বলেছিলাম তো, দরজা খুললেই আমাকে পাবে।”
“কী পাগলামি মাহতাব। তুমি বুঝতে পারছ না, এসব সাময়িক আবেগ। সকাল হলেই দিনের আলোতে তোমার রাতের ঘোর কাটবে। তখন মনে হবে যা ভেবেছ সব ভুল।”
“সব ভুল? ভুল হলে বিয়ের আগের রাতে তুমি এখানে কেন? তোমার তো কাঁথামুড়ি দিয়ে নতুন জীবনের স্বপ্ন দেখতে দেখতে ঘুমানোর কথা ছিল। একটা ভুল কী রোদে পুড়ছে না বৃষ্টিতে ভিজছে, তা দেখার জন্য রাত দুপুরে হলুদের শাড়ি পরে এখানে নেমে আসার কথা না। লোকলাজ, বিচার আচার, অপবাদের ভয় পার করে এই দরজা খুলে তুমি যখন বের হলে, আমার হাত ধরে যখন এই দরজা দিয়ে ভেতরে নিয়ে এলে। তখনই কি সব ভুলের সমাপ্তি হয়নি?”
“নাহ হয়নি। আমি আবারও বলছি, ‘যা কিছু ছিল ফুল, আজ সবই ভুল’। ভুলের বাগানে ফুল ফোটে না। এতে তোমার জীবনে হয়তো শুধু ক্ষতই বাড়বে, আরাম হবে না।”
“আর আমি যদি বলি বহুকাল ধরে মনের ভেতর জেগে থাকা দগদগে ক্ষতের ঔষধ হয়ে তুমি এসেছ? যে উপশম আর আরামের খোঁজে আমি শহর ছেড়েছি, কে জানতো সেই উপশমের খোঁজ আমি এখানে পাব।”
দূরে কোথাও তীব্র শব্দে বাজ পড়ে। মুহূর্তে আলোকিত হয় চারদিক। চন্দ্রার চোখের পানি এই সামান্য আলোতেও দৃষ্টি গোচর হয় মাহতাবের। এই চোখে পানি ওর সহ্য হয় না। কাছে টেনে নিয়ে গালে গাল ঘষে। মাহতাবের চুল বেয়ে নামা বৃষ্টির পানি চন্দ্রার চোখের পানি মুছে দেয়। একটু আগে যে উপশমের কথা মাহতাব বলছিল, তার অস্তিত্ব এবার চন্দ্রাও অনুভব করে। এত বৃষ্টি আর বাতাসও যে শীতলতায় জড়িয়ে ধরতে পারছিল না। মাহতাবের স্পর্শে তারচেয়ে শতগুণ বেশি শীতল অনুভূতি বুলিয়ে দেয় পোড়া বুকে। মাহতাবকে আটকাতে গিয়েও পারে না। নিজেকে এভাবে মাহতাবের কাছে দুর্বল করবে না ভেবেও ঠিকই তার কাছে ধরা দিয়েছে। ধাক্কা দিয়ে সরাতে পারছে না। অথচ মন বলছে এ অন্যায়, ঘোর পাপ। কাল ওর বিয়ে।
মুহূর্ত কেটে যায়। মাহতাবের ঠোঁট, চন্দ্রার ঠোঁট খুঁজে নেওয়ার আগেই ওরা আলোয় সতর্ক হয়। কেউ নেমে আসছে উপর থেকে। টর্চের আলো সদর দরজা দিয়ে বাইরে এসে পড়ছে। চন্দ্রা ভয় পায়। মাহতাব শক্ত করে ওর হাত ধরে। যেই আসুক, ও মুখোমুখি হবে। ফিরোজ সরকার সামনে এসে দাঁড়ান।
“চন্দ্রা, উপরে যা। শাড়ি পাল্টে শুবি। আর এই ছেলে লুঙ্গি পরা শিখতে তো পারো নাই। গিঁট বেঁধে পরে নাও যাও। কাপড় পাল্টে লাইব্রেরির কোনায় থাকা খাটে শুয়ে থাক। সকালেরটা সকালে দেখব।”
ফিরোজ সরকারের এত সাবলীল কথায় চন্দ্রা অবাকও হয়, ভয়ও পায়। বাবা জানতো মাহতাব এখানে?
“বাবা, তুমি জানতে… না মানে আমি ওকে চলে যেতে বলছিলাম। সকালে সবাই ওঠার আগে ও চলে যাবে।”
“কে কখন কোথায় যাবে, আসবে সেটা সকালে দেখা যাবে। তোকে উপরে যেতে বলি নাই?”
“ফুপুরা সকালে দেখলে কী অবস্থা হবে?”
“সেটা ভাবলে এত রাতে এখানে আসিস? যাহ শাড়ি পাল্টে শুবি। খবরদার কাল আমি না বলা পর্যন্ত নিচে নামবি না। যা।”
***
সারারাত আর চন্দ্রার ঘুম হয়নি। শাড়ি পাল্টে ধুয়ে বারান্দায় দিয়েছে। ফিরোজ সরকার যে ঘুমায়নি চন্দ্রা টের পেয়েছে। কারণ তিনি আর উপরেই উঠেননি। নিচে বৈঠকখানায় বসে ছিল। হলুদের সুতি শাড়ি সাধারণত একবারে বিয়ের গোসলের সময়ই খোলার রেওয়াজ এখানে। সকালে চন্দ্রা শাড়ি খুলে ফেলেছে দেখলে নিশ্চয়ই সবাই প্রশ্ন করবে। নানাবিধ ভাবনা ভাবতে ভাবতে এপাশ ওপাশ করে চন্দ্রা। ঘুমাবে না ভাবলেও শেষ রাতে ক্লান্তিতেই চোখে ঘুম নামে। ছাড়াছাড়া এলোমেলো স্বপ্ন দেখে। কিছু স্বপ্ন দেখে হাসে ঘুমের ভেতর, কিছু দেখে কাঁদে।
***
সকালে চোখ মেলে বাইরে কড়া রোদ দেখে তড়াক করে উঠে বসে চন্দ্রা। কে বলবে রাতে এত বৃষ্টি হলো! ঘড়িতে তাকিয়ে অবাক হয়ে যায়। দশটা বাজে প্রায়! এত বেলা হয়ে গেল অথচ কেউ ডাকেনি! নাকি এবাড়িতে শেষ দিন ওকে আরাম করে ঘুমাতে দিলো? মৃদুলা কই গেল? মাহতাবকে কি বাবা সবাই ওঠার আগে বাড়িতে পাঠিয়ে দিলো?
“বাপরে আপু, তোমাকে জীবনে এত গভীর ঘুম দিতে দেখি নাই। সারারাত কী স্বপ্নে যুদ্ধ করলা নাকি যে এত বেলা পর্যন্ত ঘুম?”
“মৃদুলা, বাড়িতে সব ঠিক আছে? মা কই? বাবা কই? ফুপুরা কই? বাইরে শোরগোল কিসের?”
“আস্তে আস্তে। বিয়ে বাড়িতে শোরগোল থাকবে না? মা রান্নাঘরে। ফুপুরা দাদির সাথে। বাবা সকালেই কাজে বের হয়েছে। তবে তুমি রুম থেকে বের হবা না। তোমার নাস্তা মা রুমে এনে দিতে বলছে। একবারে বিয়ের গোসলের জন্য তোমাকে নিয়ে যাব। আমার বান্ধবীরা সুন্দর করে ছাদ সাজাচ্ছে। বিয়ের আয়োজন ছাদে হবে। চিলেকোঠার রুমটায় বসবা তুমি বুঝেছ। আর ভাইয়া স্টেজে।”
মৃদুলার স্বাভাবিক কথা শুনে চন্দ্রা বুঝে ফিরোজ সরকার সবাই ওঠার আগেই মাহতাবকে নিয়ে বের হয়ে গিয়েছেন। হয়তো এতক্ষণে ঢাকার পথে রওনাও দিয়ে দিয়েছে মাহতাব। কী ভীষণ কষ্টে চন্দ্রার বুকটা ভেঙে আসে। হাতের এত কাছে এসেও হাতটা ছাড়তেই হলো। হয়তো এটাই নিয়তি ছিল।
“আপু, তুমি এখন থেকে কান্নাকাটি শুরু করেছ কেন? বিদায়ের দেরি আছে। আস্তেধীরে কাঁদবা।”
মৃদুলার রসিকতায় চন্দ্রার মৃদুলাকে সাক্ষাৎ শয়তানি মনে হচ্ছে এখন। জোর করে মুখটা শক্ত করে বসে।”
***
চন্দ্রার সাজ শেষ। পার্লার থেকে দুটো মেয়ে এসেছিল। তারাই সাজালো। বিয়ের সাজের ল্যাগেজ কাল চন্দ্রা দেখেনি। আসলে আগ্রহই বোধ করেনি। কিন্তু সবাই বলছিল খুব পঁচা শাড়ি দিয়েছে। অথচ শাড়িটা বেশ সুন্দর। পেটানো কাতান শাড়ি। আবহমান বাঙলার লাল বিষয়ে শাড়িতে সোনালি সবুজ মিনাকারী কাজ। গয়নাও কী চমৎকার রুচিশীল, খানদানি গয়না মনে হচ্ছে। এত মনের কষ্টের ভেতরও শাড়ি আর গয়না দেখে চন্দ্রা অবাক হয়। পার্লারের মেয়েগুলো প্রশংসা করে খুব। মৃদুলা বলে,
“ভাইয়ার পছন্দ কেমন দেখতে হবে না। আমার বোনটা কি কম মিষ্টি?”
বিয়ের সাজে চন্দ্রাকে আসলেই ভীষণ মিষ্টি লাগছে। খোঁপায় বেলীফুলের মালা দেওয়ায় সাজের সৌন্দর্য বেড়ে গিয়েছে বহুগুণ।
চন্দ্রাকে চিলেকোঠার ঘরে বসানো হয়েছে। ভালোই সময় পার হয়েছে। দুপুর গড়িয়ে বিকেল হচ্ছে। ওর পাশে এসে অপরিচিত একজন মধ্যবয়সী মহিলা বসেন। বেশ সুন্দরী মানুষ। কে চিনতে পারে না চন্দ্রা। মুরুব্বিরা হুজুরকে নিয়ে এসেছেন চন্দ্রার সম্মতি নিতে। কিন্তু পাত্রের নাম শুনেই চন্দ্রা চমকে উঠে। একবার, দু’বার, তিনবার একই নাম উচ্চারণেও চন্দ্রার ঘোর কাটে না।
“আমার ছেলেকে বিয়ে করবে না? অথচ তাড়াতাড়ি বিয়ে যেন হয়, সেজন্য আমি কত তাড়াহুড়ো করে ঢাকা থেকে রওনা দিলাম।”
চন্দ্রা এবার চিনতে পারেন, ইনি মাহতাবের মা! কী এক ঘোরে সম্মতি দেয় চন্দ্রা। চন্দ্রার কপালে মিষ্টি একটা চুমু একে দিয়ে বলেন,
“পরিবারে স্বাগতম।”
***
চন্দ্রা আর মাহতাবের বাসরটা এই বাড়িতেই হবে। মাহতাবের ইচ্ছায় চিলেকোঠার ঘরটাই সাজানো হয়েছে। এতক্ষণ মৃদুলা আর কাজিনরা সবাই হৈচৈ করলো। এখন ওরা চলে যেতে কেমন লজ্জা পেয়ে বসলো চন্দ্রাকে। চোখ তুলে মাহতাবকে দেখতেও যেন ভীষণ অস্বস্তি।
“এত লজ্জা পাচ্ছ কেন? না ভয় পাচ্ছ? ভয় নেই আমি তোমার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ব না।”
“আমি এমন কিছু বলেছি?”
“তুমি তো কিছুই বলছ না?”
“আগে বল এসব কী করে হলো?”
“এসব তোমার আমার দ্বারা হয় নাই তা তো বুঝেছ। আসলে ফিরোজ আঙ্কেল, মানে আমার শ্বশুর একজন মানুষ বটে। তিনি যে যৌবনে আসলেই প্রেম করে বিয়ে করেছেন আজ টের পেলাম। সকালেই আমাকে নিয়ে বের হয়ে গেলেন। শফিক সাহেবকে ফোন দিয়ে বাইরে ডেকে নিলেন। লোকটা সত্যি বলতে ভদ্রলোক। কোনো সিনক্রিয়েট করলেন না। বরং বললেন ওনার বাড়িতে বিয়ে হলে তুমি সুখী হবে না। অনেক সহজেই রাজি হলেন। তিনি যে তেমাকে সত্যি পছন্দ করতেন আমি তার প্রমাণ পেলাম। চাইলেই অনেক হাঙ্গামা করতে পারতেন। বিয়েতে ওনার খরচ হওয়া টাকাও আমরা দিতে চাইলাম। নিলেন না। বললেন আমাদের বিয়ের উপহার। আসলেই বড়ো মনের মানুষ। ওনার বাড়ির মানুষদেরও তিনিই সামলাবেন জানালেন। হয়তো সামলেছেনও। কেউ তো কোনো ঝামেলা করতে আসেনি। বাকি তোমার ফুপুদের আর দাদিকে শ্বশুর মশাই নিয়ন্ত্রণ করেছেন। আম্মু আর আমার দাদাভাই তো আগেই আমার ইচ্ছেতে সম্মত ছিলেন। কেননা আম্মু বিশ্বাস করেন বিয়েতে সবার আগে প্রয়োজন দু’জন মানুষের একে অপরকে চাওয়া। অন্য সবার চাওয়া না চাওয়ার ফলাফল শূন্য। তবে সমস্যা একটা আছে। সেটা হলো আমার শ্বশুর যে পরিমাণ লুঙ্গি ভালোবাসে, এবার আমাকে লুঙ্গি পরা শিখতেই হবে।”
মাহতাবের শেষ কথায় হাসি পেলেও চন্দ্রা মুখ টিপে হাসি আটকে জিজ্ঞেস করে,
“এই কথাটা আমাকে কেউ জানালো না কেন?”
“আপনি তো শফিক সাহেবকেই বিয়ে করতে রাজি ছিলেন। কী সুন্দর সেজেগুজে কবুল বলতে রেডি। বাহ্।”
চন্দ্রার রাগ হয়। কপট ভাব দেখিয়ে বলে,
“তো বেশ তো। করতাম। আটকালে কেন?”
এক ঝটকায় চন্দ্রাকে নিজের বুকের কাছে টেনে মাহতাব বলে,
“কারণ এই মেয়েটা চন্দ্রাবতী। এই চাঁদ শুধু আমার আকাশে উঠবে। তাকে আমি কারও সাথে ভাগ করব না।”
লাজুক চন্দ্রা মাহতাবের বুকে মাথা ঠেকায়, আর কিছু না বলে ওকে জড়িয়ে ধরে মুহুর্তগুলো রঙিন করতে মন দেয় মাহতাব। চন্দ্রাবতী এখন শুধুই তার। আর কিছু বলা বা ভাবার প্রয়োজন নেই।
সমাপ্তি।