সে আমার অপরাজিতা পর্ব-২২

0
127

#সে_আমার_অপরাজিতা
#পর্ব_২২
#সারা মেহেক

বিন্দুর এহেন প্রশ্নে বৃত্ত হতভম্ব হয়ে চেয়ে রইলো। সে ঘুণাক্ষরেও টের পায়নি বিন্দু অকস্মাৎ এমন জটিল একটা প্রশ্ন করে বসবে। সে আশ্চর্যান্বিত কণ্ঠে বললো,
” এসব কি বলছো বিন্দু! এটা কি ধরণের প্রশ্ন?”

বৃত্ত’র বিস্মিত ভাব দেখে বিন্দুর প্রতিক্রিয়ার কোনো পরিবর্তন হলো না।বরঞ্চ সে পূর্বের ন্যায় বললো,
” স্বাভাবিক প্রশ্ন। কি? পারবেন এমনটা করতে?”

বৃত্ত এবার খানিকটা শক্ত কণ্ঠে বললো,
” রাজনীতি ছাড়া আমার পক্ষে অসম্ভব। ছোট থেকেই রাজনীতির ছায়ায় আমার বেড়ে ওঠা। বাবাকে দেখেছি রাজনীতিতে সবটা দিয়ে দিতে। আমিও বাবার চেয়ে আলাদা নই। রাজনীতি আমার রক্তে মিশে আছে বিন্দু। তুমি যেমন আমার প্রিয়, রাজনীতিও আমার প্রিয়। এ দুজনকে ছাড়া আমার বাকিটা জীবন কল্পনা করা অসম্ভব। ”

বৃত্ত’র পুরো বক্তব্য শুনে বিন্দু কয়েক মুহূর্ত বৃত্ত’র পানে চেয়ে রইলো। অতঃপর অকস্মাৎ তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে বললো,
” এই যে দেখেছেন, আমার প্রতি আপনার অনুভূতি কতটুকু? আমি চাই না রাজনীতির সাথে জড়িত থাকতে। অথচ সেই আপনিই আমাকে স্বেচ্ছায় রাজনীতির সাথে মিশিয়ে দিচ্ছেন!”

” বিন্দু, তুমি হয়তো আমার পরিস্থিতি বুঝতে পারছো না। আমি এখন নিজেকে না রাজনীতি ছাড়া কল্পনা করতে পারি, না তোমাকে ছাড়া। এক প্রিয়কে ছেড়ে কখনও আরেক প্রিয়কে নিয়ে সুখে থাকতে পারবো না আমি। ”

” দুই প্রিয় কখনোই একসাথে চলতে পারে না। কাউকে একটু ছাড় দিতেই হয়।”

” কিন্তু আমি পারবো না ছাড় দিতে।”

” তাহলে আমিও পারবো না ভবিষ্যতে আপনার সাথে থাকতে। আমি চাই না এ কালো অধ্যায় আমার বাকিটা জীবনের সাথেও এভাবে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে পড়ুক।”

” বিন্দু! তুমি নিজেকে পুরোপুরিভাবে প্রকাশ না করলে আমি কিভাবে তোমার পরিস্থিতি বুঝবো? তুমি অর্ধেকটা কথা বলে আমাকে শর্ত দিচ্ছো। আমাকে পুরো সত্য বলতে সমস্যা কোথায়?”

” সমস্যা আছে বলেই তো বলতে পারবো না। আমি চাই না সবাই এসব সম্পর্কে জানুক।”

” সবাই না জানলেও শুধু আমাকে বলতে পারো বিন্দু। আমাকে কি বিশ্বাস করো না?”

বিন্দু কয়েক সেকেন্ড বৃত্ত’র ব্যাকুল চাহনির দিকে চেয়ে রইলো। অতঃপর অন্যদিকে দৃষ্টি ফিরিয়ে বললো,
” যে রাজনীতি আমার অতিতের সাথে বাজেভাবে জড়িয়ে আছে, সে রাজনীতিকে আমি কোনোভাবেই আমার ভবিষ্যত নষ্ট করার সুযোগ দিবো না৷ ”
বলেই সে ছোট্ট নিঃশ্বাস ফেলে বললো,
” আমার উত্তর জানা হয়ে গিয়েছে। আশা করি আপনার উত্তরও জানা হয়ে গিয়েছে। সুতরাং, এখন আমার পিছনে সময় নষ্ট করা বন্ধ করুন। আর নিজের জন্য অন্য কাউকে খুঁজুন। যে আপনার জন্য সবদিক দিয়ে পারফেক্ট। যে আপনার রাজনীতিকে একসেপ্ট করে আপনার সাথে সারাজীবন কাটাতে পারবে। আশা করছি, আমাকে দ্রুতই ভুলে যাবেন৷ কারণ এ অধ্যায়ের কোনো ভবিষ্যত নেই।”
বলেই বিন্দু উঠে গেলো। বৃত্ত এতক্ষণ যাবত নীরবে বিন্দুর প্রতিটি কথা শুনলো। সে জানে না বিন্দুর কি অতিত আছে। এ রাজনীতির সাথে কিভাবে জড়িয়ে আছে বিন্দুর অতিত তা তার অজানা। কিন্তু এ মুহূর্তে বিন্দুর বলা প্রতিটি কথা তার বুকে কাঁটার মতো বিঁধলো। মনে হচ্ছে যেনো গোলাপের সুভাসের সাথে কাঁটা উপহার দিচ্ছে কেউ।
বৃত্ত এ নিয়ে ভীষণ ব্যথিত হলেও নিজ সিদ্ধান্তে অটল রইলো। অবিচলতা নিয়ে হাতের মুঠো শক্ত করলো। সে কাউকে ছাড়বে না। বিন্দু ও রাজনীতি, দুটোই চাই তার। যেকোনো মূল্যে।

বিন্দু যেতে চাইলে বৃত্ত বিনা অনুমতিতে বিন্দুর হাত আঁকড়ে ধরলো। দৃঢ় কণ্ঠে বললো,
” রাজনীতি আমি কখনও ছাড়বো না। আর তোমাকে আমি কখনো চোখের আড়াল হতে দিবো না৷ আমার তোমাকেই চাই। এট এনি কস্ট, বাট নট পলিটিক্স।
জেনে রেখো বিন্দু, যেকোনো মূল্যে তুমি আমার হবে। হোক তোমার অনিচ্ছায়। কিন্তু আমার ভবিষ্যতের সাথে তোমার নাম জুড়ে দিতে কারোর কথা ভাববো না। তোমার কথাও না। তুমি শুধু এখন আমার এক টুকরো অনুভূতি নও বিন্দু তুমি আমার জিদে পরিণত হয়েছো। ”
বলেই বৃত্ত বিন্দুর হাত ছেড়ে দিলো। পুনরায় শক্ত কণ্ঠে বললো,
” সবরকম ঘটনার জন্য প্রস্তুতি নিয়ে রেখো বিন্দু। আর হ্যাঁ, ভুলেও আমার সাথে যোগাযোগ বন্ধ করার চেষ্টা করবে না। মনে থাকে যেনো।”

বৃত্ত’র এহেন কঠোর আচরণ ও কথার ধরণে বিন্দু বিস্মিত হলো। হতভম্ব হয়ে বললো,
” আপনি আমাকে থ্রেট দিচ্ছেন!”

বৃত্ত ঈষৎ হাসলো। বললো,
” থ্রেট মনে করলে থ্রেট। যেহেতু সোজা আঙুলে ঘি উঠছে না সেহেতু আঙুলকে একটুখানি বাঁকা তো করতেই হবে। ”

বিন্দু আর কথা বাড়ালো না। ক্রোধে প্রায় ফুলে ফেঁপে উঠে রেস্টুরেন্ট থেকে বেরিয়ে এলো সে।
তবে বৃত্ত এখনও রেস্টুরেন্টে বসে রইলো। মনের অন্তরালে বিন্দুকে উদ্দেশ্য করে বললো,
” জানি না অতিত নিয়ে আমাকে মিথ্যে বলছো নাকি সত্যি। তবে এটুকু বুঝতে পেরেছি আমার জন্য তোমার মনে এখনও কোনো অনুভূতি তৈরী হয়নি। তাই তো তুমি সর্বাত্মক চেষ্টা করছো আমার থেকে পিছু ছাড়ানোর জন্য। কিন্তু তোমার এ চেষ্টা বিফল করতে আমিও সর্বাত্মক চেষ্টা করবো। যেভাবেই হোক, আমার বউয়ের নামের ঘরে তোমার নামটাই থাকবে মিস বিন্দু তাসনীম। কেননা এখন তুমি বৃত্ত হোসাইনের জিদে পরিণত হয়েছো। ”
বলেই বাঁকা হাসলো বৃত্ত।

—————

জুবায়ের ও তার বন্ধু সাইফ সুপার শপে এসেছে কিছু কেনাকাটার জন্য। মূলত আজ সাইফের বোনের জন্মদিন। তাই এ উপলক্ষে সে তার বোনের বহু আকাঙ্ক্ষিত একটা লিপস্টিকের প্যাকেজ সারপ্রাইজ হিসেবে কিনতে এসেছে। তবে লিপস্টিক কিনতে এসে সে আর জুবায়ের মহা যন্ত্রণায় পড়লো। কেননা একই ব্র্যান্ডের লিপস্টিকের হরেক রকমের শেড রয়েছে। এখন সাইফের বোন আসলে কোন শেডের লিপস্টিক চেয়েছে তা তার অজানা। এজন্য জুবায়েরের কাছ থেকে বেশ কথাও শুনলো সে। তবে শেষমেশ কসমেটিক কাউন্টারের সেলারের কাছে পরামর্শ চেয়ে একটা রঙ বাছাই করলো সাইফ। কিন্তু বিপত্তি বাঁধলো যখন জুবায়ের সাইফের কানে কানে বললো,
” এ কোনো কালার হলো? কিছু কালার দেখে মনে হচ্ছে ঠোঁটে দিলে আস্ত এক মৃ’ ত মানুষে পরিণত হবে। আর কিছু কালার ঠোঁটে দিলে মনে হবে কাদামাটি মেখেছে ঠোঁটে। এই মহিলার চয়েস একেবারেই বাজে।”

সাইফ ফিসফিস করো বললো,
” তাহলে নিজে একটা চুজ করে দে। আমিও তো চুজ করতে পারছি না। ”

” আমিও পারছি না। মেয়েদের এসব মেকআপ প্রোডাক্ট নিয়ে আমার কোনো আইডিয়া নেই।”

জুবায়ের ও সাইফের এমন কানাকানি ফিসফিস দেখে সেলস গার্ল বললো,
” এক্সকিউজ মি স্যার, এ শেডের কালার কি পছন্দ হয়েছে? আমার মনে হয় এটা পারফেক্ট হবে উনার উপর। ”

জুবায়ের কৃত্রিম হাসি দিয়ে বললো,
” আসলে একটু কনফিউজড আমরা। আরেকটু দেখি।”
বলেই জুবায়ের ও সাইফ লিপস্টিকগুলোর শেড খুঁটাখুঁটি করলো। এরই মধ্যে জুবায়েরের পাশে এক মেয়ে এসে দাঁড়ালো। সেলস গার্লকে ফাউন্ডেশন বের করতে বললো সে। মেয়েটির কণ্ঠ বেশ পরিচিত শোনালো বিধায় জুবায়ের পাশ ফিরে দেখলো তাকে।
অকস্মাৎ পাশে বর্ষাকে দেখে চমকিত হলো জুবায়ের। বিস্মিত কণ্ঠে সহাস্যে বললো,
” আরে, মিস বর্ষা আপনি!”

বর্ষা চকিতে ফিরে তাকালো। জুবায়েরকে দেখে সে কিঞ্চিৎ বিস্মিত হলো। বললো,
” মিস্টার জুবায়ের, রাইট?”

” জি। কেমন আছেন?”

” এই তো আলহামদুলিল্লাহ। আপনি?”

” আমিও আল্লাহর অশেষ রহমতে ভালো আছি। ”

” কি কিনতে এসেছেন এখানে? গার্লফ্রেন্ডের জন্য শপিং নাকি?”

জুবায়ের সশব্দে হেসে উঠলো। বললো,
” আরে না! কিসের গার্লফ্রেন্ড। আমার বন্ধু তার বোনের বার্থডে সারপ্রাইজ হিসেবে লিপস্টিক নিতে এসেছে। কিন্তু কোনো শেড পছন্দ হচ্ছে না। আসলে আমরা বুঝতেই পারছি না যে ওর উপর কোন কালারটা মানাবে ভালো। ”
বলেই জুবায়েরের মাথায় চট করে একটা ব্যাপার খেলে গেলো। সে তৎক্ষনাৎ বর্ষাকে বললো,
” যদি কিছু মনে না করেন, মিস বর্ষা, আপনি একটু হেল্প করবেন কালার চুজ করতে?”

বর্ষা মুচকি হেসে বললো,
” আচ্ছা!
ওর গায়ের রঙ কেমন?”

সাইফ তার বোনের গায়ের রঙ বললো। তারপর বর্ষা কিছুটা সময় নিয়ে কয়েক শেডের কালার পছন্দ করে দিলো। তার পছন্দকৃত কালারগুলো দেখে জুবায়ের ও সাইফ, দুজনেই বেশ পছন্দ করলো। অবশেষে বর্ষার পছন্দ করে দেওয়া লিপস্টিকের শেডই নিলো সাইফ। এর মাঝে বর্ষার কেনাকাটাও হয়ে গেলো। ফলে তিনজনে একত্রে সুপার শপ থেকে বের হলো।

সুপার শপ থেকে বেরিয়ে সাইফ নিজের গন্তব্যে চলে গেলো। বাকি রইলো জুবায়ের ও বর্ষা। বর্ষা একা হাঁটছে দেখে জুবায়েরও তার পাশাপাশি হাঁটতে লাগলো। কি মনে করে খানিক খাতির জমানোর জন্য জুবায়ের বললো,
” দুদিন দেখা হলো আমাদের। কিন্তু নামটা বাদে আর কিছুই জানি না আমরা একে অপরকে নিয়ে।”

বর্ষা বললো,
” দুদিনের দেখায় এর চেয়ে বেশি কিছু জানতে নেই অপরিচিতদের। ”

জুবায়ের হাসলো। বললো,
” বেশি কিছু জানবো না তো। শুধু কোথায় পড়েন, কি করেন, এটুকুই। এর চেয়ে বেশি না। ”

” এটুকু বললেই তো অনেক কিছু জানা হয়ে যায়। আচ্ছা, আমি ভার্সিটিতে পড়ি। ফার্স্ট ইয়ার।”

জুবায়ের বিস্মিত হলো। বললো,
” আপনি কেবল ফার্স্ট ইয়ার! আমি ভেবেছিলাম আপনি জব করেন বোধহয়। ”

” কেনো? আমাকে দেখে বড় মনে হয়?”

” আপনাকে না। আপনার এটিটিউড দেখে মনে হয়। ”

” আচ্ছা! আপনি কিসে পড়েন?”

” হা হা। আমি পড়ি না। জব করি। পড়াশোনার পাট চুকিয়েছি আরোও বহু আগে। ”

এবার বর্ষা বিস্মিত হলো। বললো,
” মনেই হয় না জব করেন। আসলে আপনাকে দেখে মনে এখনও অনেক ছোট আপনি। ”
বলেই বর্ষা হেসে উঠলো। হাসলে জুবায়েরও।

————

শেষ বিকেলের অস্তমিত সূর্য উপভোগ করতে করতে অনিমন্ত্রিত অতিথির ন্যায় বৃষ্টির আগমন ঘটলো। বিন্দু ও মারিয়া কিছু শপিং শেষে বাজার থেকে একটু দূরে বসে ফুচকা খাচ্ছিলো। অকস্মাৎ এ বৃষ্টির আগমনে থতমত খেয়ে গেলো দুজনে। এ বৃষ্টি মাথায় নিয়ে কোনোমতে একটা দোকানের সামনে আশ্রয় নিলো দুজন।

ধীরগতির বৃষ্টির তেজ ধীরেধীরে বৃদ্ধি পাচ্ছে। রাস্তাঘাটে যানবাহনের চলাচল তুলনামূলক কমেছে। ইতোমধ্যে অকস্মাৎ বিন্দু ও মারিয়ার সামনে বৃত্ত গাড়ি নিয়ে হাজির হলো। ফ্রন্ট সিটের জানালা খুলে বললো,
” দ্রুত গাড়িতে উঠে পড়ো। এখন আশেপাশে অটো বা রিকশা পাবে না। ”

বৃত্ত’র কথা শোনা মাত্রই বিন্দু বিরক্ত নিয়ে বিড়বিড় করে বললো,
” এই বদ লোকটার জন্য আজকাল সাধের বৃষ্টিও অসহ্য লাগে।”
বলেই সে বৃত্তকে বললো,
” সমস্যা নেই। আপনি চলে যান। আমরা বৃষ্টি শেষ হলে যেতে পারবো।”

মারিয়া তখন বিন্দুর হাত ধরে টেনে বললো,
” এ অপেক্ষায় আর থাকছি না। দ্রুত গাড়িতে উঠ।”
বলেই সে বিন্দুর জন্য ফ্রন্ট সিটের ডোর খুলে নিজে ব্যাক সিটে বসে পড়লো। বসতেই সে দেখলো পাশে বাদল বসে আছে। অকস্মাৎ বাদলকে দেখে সে চমকিত হয়ে বললো,
” আপনিও আছেন!”

বাদল বিস্তৃত হাসি দিয়ে বললো,
” জি। তোমার পাশেই আছি।”

এদিকে বিন্দু এখনও গাড়িতে উঠেনি। বৃষ্টিতে ভিজছে সে। সে জিদ ধরেছে বৃত্তর গাড়িতে উঠবে না। এর চেয়ে ভিজে রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকুক সে! বিন্দুর এমন একগুঁয়েমি দেখে বৃত্ত গাড়ি থেকে নামলো। বিন্দুর হাত ধরে এক প্রকার জোর করে গাড়িতে বসিয়ে নিজেও ড্রাইভিং সিটে এসে বসলো। তারপর দেরি না করে গাড়ি স্টার্ট দিলো।

বিন্দু কোনো কথা বলছে না। গাল ফুলিয়ে তিক্ত মেজাজ নিয়ে বসে আছে। তার এ অবস্থা দেখে বাদল পিছন থেকে বললো,
” আল্লাহ একটা জুটি বানিয়েছে! দু’জনই একে অপরের থেকে কম জেদি না। এতো জেদ দেখিয়ে কি হয় বুঝি না। ”

বৃত্ত হাসতে হাসতে বললো,
” জেদ দেখিয়ে নিজের পছন্দের জিনিস হাসিল করা যায়। বুঝলি?”

বাদল আর কথা বাড়ালো না। কিছুদূর যেতেই বাদল মারিয়াকে নিয়ে গাড়ি থেকে নেমে গেলো। উদ্দেশ্য বৃত্ত ও বিন্দুকে কিছু একান্ত সময় দেওয়া।

মারিয়াকে গাড়ি থেকে নেমে যেতে দেখে বিন্দুও তৎক্ষনাৎ নেমে যেতে চাইলো। কিন্তু গাড়ির ডোর খুলার পূর্বেই বৃত্ত দ্রুততার সহিত ডোর লক করে দিলো। বললো,
” জেদ দেখিয়ো না বিন্দু। তোমার সাথে শান্তভাবে কিছু কথা বলবো। তারপর হোস্টেলে রেখে আসবো। ”

বিন্দু ক্রোধান্বিত গলায় বললো,
“, এমন জোর দেখিয়ে কি বলতে চান আপনি?”

” জোর ইচ্ছা করে দেখায়নি। তোমার কারনেই দেখিয়েছি। দুদিন হলো ফোন ধরছো না আমার। কেনো জানতে পারি?”

” আর কি জানতে চান আপনি? সেদিনই সব ক্লিয়ার করে এসেছি আমি। ”

” আমিও সেদিন ক্লিয়ার করেছিলাম বিন্দু। আমার তোমাকে ছাড়া আর কাউকে লাগবে না। ”

” সেদিন আমিও বলেছিলাম, হয় আমাকে না হয় রাজনীতিকে বাছুন। কিন্তু আপনি তো রাজনীতিকে বেছে নিলেন। আমাকে না।”

” এখনও তোমার মনে হচ্ছে আমি তোমাকে বেছে নেইনি?”

” একে স্বেচ্ছায় বেছে নেওয়া বলে না। জোর দেখিয়ে বেছে নেওয়া বলে। এমনটা তো চাইনি আমি।”

বৃত্ত এবার গাড়ি থামালো। বললো,
” তোমার কারনেই এমনটা করতে বাধ্য হয়েছি বিন্দু। হয় তুমি সব সত্য বলো। না হয় আমি যা করছি তা মুখ বুজে সহ্য করো। ”

” আমি পারবো না সত্যি বলতে। ”
বলেই বিন্দু গাড়ি থেকে বেরিয়ে গেলো। বৃত্ত গাড়ির লক খুলে দিয়েছিলো কিছুক্ষণ পূর্বেই।

বিন্দু বেরিয়ে গাড়ি হতে কিছুদূর সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। বৃষ্টি কমেছে মাত্রই। বৃত্ত এক লোকালয়ে গাড়ি থামানোয় আশেপাশে বেশ কয়েকটা বাড়ি দেখলো।
বিন্দু গিয়ে সামনে দাঁড়িয়েছে বিধায় বৃত্ত তার কাছে গেলো না। ভাবলো বিন্দুকে একান্তে কিছু সময় দেওয়া দরকার। তাই বৃত্ত নীরবে গাড়ির সামনে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। এদিকে বৃত্তর কথা ও কাজে বিন্দুর মেজাজ খিটখিটে হয়ে আছে। মন বলছে এক্ষুনি এখান থেকে চলে যেতে। কিন্তু এ জায়গা যে তার চেনা নেই। যেতে হলে বৃত্তর সাথেই যেতে হবে। কিন্তু বৃত্তর প্রতি যে তার মারাত্মক রাগ জমে আছে! আচ্ছা, লোকটা এতো জেদি কেনো? সে কি বুঝছে না বিন্দুর নিজ চাওয়া সত্ত্বেও বৃত্তর সাথে নিজের ভবিষ্যত কল্পনা করতে পারছে না! নিজের অনিচ্ছায় বৃত্তর সাথে কঠোর ব্যবহার করছে,এসব কি এই লোকটার গায়ে লাগছে না!
এসব ভাবতে ভাবতে বিন্দুর দৃষ্টি গিয়ে ঠেকলো সামনের বকুল গাছের দিকে। সাঁঝের আধো আধো আলোয় দেখলো গাছ থেকে ঝড়ে পড়া বকুল পড়ে আছে ইটের রাস্তায়। বকুল ফুল দেখেই সব ভুলে বিন্দু ছুটে গেলো। বকুলতলায় ঝুঁকে বকুল কুঁড়াতে লাগলো। এ ফুল তার ভীষণ পছন্দের। কলেজে নিজের হাতে গেঁথে রাখা একটা শুকনো বকুলের মালা এখনও তার কাছে আছে।

অকস্মাৎ বিন্দুকে বকুলতলায় দেখে খানিকটা বিস্মিত হলো বৃত্ত। আরে, এই মেয়েটা না মাত্রই তার সাথে ঝগড়া করে গেলো! আর এত দ্রুত তার মেজাজ বদলে গেলো! কি অদ্ভুত!

বিন্দু মনের আনন্দে বকুল ফুল কুড়চ্ছে। বৃত্ত কয়েক কদম দূরে দাঁড়িয়ে মুগ্ধ নয়নে দেখছে তাকে। কিন্তু তার এ মুগ্ধতার রেশ কেটে গেলো মুহূর্তেই। যখন বাদল ফোন করে ওপাশ থেকে বললো,
” ভাই, কোথায় তুমি? মস্ত বড় এক কেলেঙ্কারি ঘটে গিয়েছে।”

বৃত্ত উদ্বিগ্নতা নিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
” কি হয়েছে? কি কেলেঙ্কারি ঘটলো?”

বাদল ওপাশে সবটা খুলে বললো। বৃত্ত কল্পনাও করতে পারেনি অকস্মাৎ কালবৈশাখী ঝড়ের ন্যায় এমন এক সংবাদ শুনতে হবে। সে কয়েক সেকেন্ড সময় নিলো ভাববার জন্য। অতঃপর বাদলকে আদেশ দিলো,
” কাবিননামা নিয়ে চলে আয় বাদল।”

#চলবে