সে আমার অপরাজিতা পর্ব-২৫

0
122

#সে_আমার_অপরাজিতা
#পর্ব_২৫
#সারা মেহেক

একটি মেয়ের জন্য তার সম্ভ্রম সকল কিছুর উর্ধ্বে। সে সম্ভ্রম হয় সাদা কাপড়ের ন্যায়। এই সাদা কাপড়ে একটুখানি দাগ পড়লেও তা যেনো সকলের দৃষ্টি কাড়তে সক্ষম হয়৷ আর এই দাগগুলোও কেনো যেনো স্থায়ী হয়৷ হাজারো চেষ্টা করলেও মেয়ে মানুষের চরিত্রের উপর হতে এ দাগ উঠানো অসম্ভব হয়ে পড়ে।

বিন্দুর চোখের কোন নোনাজলে টলমল করছে। কর্ণকুহরে যেনো মিছিল চলছে। সেই মহিলার বলা কথাগুলো হৃদয়ে বারংবার আঘাত করছে। বিন্দু ভাবতে পারছে সামনে তার পরিণতি কি হতে চলেছে। হোস্টেলের মেয়েরা ছিঃ ছিঃ করবে। ভার্সিটিতে মুখ দেখাতে পারবে না। আর, খালা ও খালু! তাদের সামনে কি করে যাবে সে! এসব ভাবতে ভাবতেই বিন্দু অকস্মাৎ বলে উঠলো,
” গাড়ি থামান এক্ষুণি। ”

বৃত্ত চমকে উঠলো। তবে বিন্দুর কথায় তৎক্ষণাৎ গাড়ি থামিয়ে দিলো সে। বৃত্ত গাড়ি থামাতেই বিন্দু ফোনটা সিটে রেখে গাড়ি থেকে নেমে পড়লো। কয়েক সেকেন্ড রাস্তায় দাঁড়িয়ে পরমুহূর্তেই সজোরে চিৎকার দিয়ে রাস্তায় বসে পড়লো সে। দু হাতে হিজাব ধরে চিৎকার করে কাঁদছে সে।ততক্ষণে বৃত্ত হুড়মুড়িয়ে গাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়লো। সে এসেই বিন্দুর সামনে দু হাঁটু গেঁড়ে বসে পড়লো। উদ্বিগ্ন স্বরে জিজ্ঞেস করলো,
” এভাবে কাঁদছো কেনো বিন্দু? ভিডিওটা ভাইরাল হয়নি। পাবলিশ হওয়ার কয়েক মিনিটের মাথায় সরিয়ে ফেলেছে ওটা।”

বিন্দু দৃষ্টি তুলে চাইলো। তার মায়াবী আঁখিজোড়া রক্তিমাভাব ধারণ করেছে। কাঁদতে কাঁদতে তার নাকটাও লাল টুকটুকে হয়ে এসেছে। বৃত্তকে বললো,
” আপনি কি করে জানেন ভাইরাল হয়নি? যতক্ষণ ভিডিওটা নেটে ছিলো ততক্ষণে তো আমার আশেপাশের মানুষজনও দেখে নিতে পারে! আপনি কি এটার নিশ্চয়তা দিতে পারেন যে উনারা কেউ দেখেনি? ”

বৃত্ত এবার নিরব রইলো। দৃষ্টিজোড়া কয়েক সেকেন্ডের জন্য নত করলো। অতঃপর পুনরায় বিন্দুকে সাহস জোগাতে বললো,
” এভাবে দূর্বল হচ্ছো কেনো বিন্দু? তুমি জানো ভিডিওতে প্রথম অংশ বাদে তুমি আর কোথাও নেই। নিজেকে শক্ত করো বিন্দু।”

” সেটা আমি জানি যে ভিডিওতে শেষের ঐ মেয়েটি আমি নই। কিন্তু কতজনকে বুঝাবো এ কথা? কতজনকে আমার আমি সাফাই দিবো? কতজনকে বলে বেড়াবো যে ঐ শেষের মেয়েটি আমি নই। আপনি কি পারবেন সবাইকে বলতে?”

বৃত্ত নিশ্চুপ। আসলেই সে কয়জনকে বলতে পারবে ভিডিওতে দেখানো ছেলেমেয়েটি ওরা কেউ নয়! জনে জনে গিয়ে আদৌ নিজের চরিত্রের সাফাই দেওয়া সম্ভব! বৃত্ত লম্বা নিঃশ্বাস নিলো। সে বুঝতে পারছে এখন বিন্দুর নিকট সবকিছু মিথ্যে সান্ত্বনার শামিল। প্রকৃতপক্ষে এ পরিস্থিতিতে সকল বাণীই মিথ্যে সান্ত্বনার ন্যায় বোধ হবে। বৃত্ত ভাবলো বিন্দুকে কিছুক্ষণের জন্য একা ছেড়ে দিবে। মেয়েটা কাঁদতে থাকুক। হয়তো এতে তার হৃদয় কিছুটা হলেও হালকা হবে! হয়তো এরপর সে তুলনামূলক শান্ত থাকতে পারবে!

বৃত্ত আর কথা বাড়ালো না। উঠে গিয়ে গাড়ির সামনে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। ওদিকে বিন্দু কান্না করেই যাচ্ছে। কিছুক্ষণ বাদে সে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে লাগলো। বৃত্ত’র সহ্য হচ্ছে না বিন্দুর এ পরিণতি। তার মন বলছে ছুটে গিয়ে বিন্দুকে বুকে জড়িয়ে ধরতে, বিন্দুর মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে। কিন্তু বিন্দুকে ছোঁয়ার অধিকার নেই যে!

বেশ কিছুক্ষণ পর বৃত্ত খেয়াল করলো বিন্দুর কান্নার আওয়াজ শোনা যাচ্ছে না৷ সে তৎক্ষনাৎ এগিয়ে গেলো বিন্দুর দিকে। সত্যি, বিন্দু এখন আর কাঁদছে না। নীরবে বসে আছে। তবে তার চাহনিতে বিধ্বস্ততা স্পষ্ট। যেনো তার পৃথিবীতে বিধ্বংসী কেউ এসে সব অগোছালো করে রেখে গিয়েছে।
বৃত্ত গিয়ে বিন্দুর সামনে বসলো। বিন্দু এক পলক বৃত্তর পানে চাইলো। তার মুখখানা শুকিয়ে এসেছে। আঁখি পল্লব এখনও অশ্রু জলে সিক্ত। বিন্দু অনুভূতিশূন্য কণ্ঠে বললো,
” আমাকে বাড়িতে দিয়ে আসতে পারবেন?”

বৃত্ত ঈষৎ বিস্মিত কণ্ঠে বললো,
” এখন!”

” হ্যাঁ। আমি এক্ষুণি যেতে চাই। আমি খালার কাছে যেতে চাই। প্লিজ আমাকে বাড়িতে
বৃত্ত ব্যস্ত কণ্ঠে বললো,
” হ্যাঁ, অবশ্যই। গাড়িতে বসো।”

বিন্দু প্রত্যুত্তর করলো না। নীরবে গিয়ে গাড়িতে বসলো। বৃত্তও দ্রুত গিয়ে গাড়িতে বসলো। গাড়ি স্টার্ট করেই স্পিড বাড়ালো।
বিন্দুকে নিয়ে বাড়িতে পৌঁছালো বৃত্ত। জুবায়ের উঠোনেই বসে ছিলো। বৃত্ত’র গাড়ি দেখে সে এগিয়ে এলো। বৃত্ত গাড়ি থামাতেই বিন্দু নেমে পড়লো। তার শুকনো মুখখানা দেখে জুবায়ের আঁতকে উঠলো। সে উৎকণ্ঠিত স্বরে বিন্দুর গালে হাত রেখে জিজ্ঞেস করলো,
” এ কি বিন্দু! কাঁদছিস কেনো? কি হয়েছে?”
পরক্ষণেই তার সেই ভিডিওর কথা মনে পড়লো। সে ভিডিও নিয়ে বিন্দুকে কিছু জিজ্ঞেস করতে যাবে এর পূর্বেই বৃত্ত বললো,
” জুবায়ের ভাই, আপনি বিন্দুকে ঘরে রেখে আসুন। আপনার সাথে কিছু কথা আছে।”

জুবায়ের গিয়ে বিন্দুকে ঘরে রেখে আসলো। উঠোনে এসে বৃত্তকে জিজ্ঞেস করলো,
” ভিডিওটা কি সত্যি বৃত্ত?”

” শুরুর অংশটুকুই সত্য। এরপর সবটা বানোয়াট। এ ভিডিওটা নিয়েছে আমার প্রতিপক্ষ দলের এক লোক। যেদিন আংকেল স্ট্রোক করে, এটা সেদিনের ভিডিও। গাড়ির পরের অংশগুলো সম্পূর্ণ বানোয়াট।”

জুবায়ের সিক্ত কণ্ঠে বললো,
“আমি জানি আমার বিন্দু এমন কিছু করবে না। বিন্দু নিজের মান সম্মানের আগে পরিবারের মান সম্মান রাখে। সেই মেয়ে এসব কিছুই করতে পারে না। ”

” জুবায়ের ভাই, আপনাকে আরোও কিছু বলার ছিলো।”

” কি?”

জুবায়েরের প্রশ্নে বৃত্ত আজকের সন্ধ্যার ঘটনা পুরোপুরি খুলে বললো। নকল কাবিননামার কথা শুনে জুবায়েরের মাথায় হাত উঠলো। সে উৎকণ্ঠিত স্বরে বললো,
” এটা কি করে এসেছো বৃত্ত! নকল কাবিননামা! এখন এ খবর প্রকাশ পেলে কি হবে! একদিকে বিন্দুর ঐ বানোয়াট ভিডিও, অপরদিকে নকল কাবিননামা! আমার মাথা কাজ করছে না। আম্মা এসব শুনলে কি করবে!”

ঠিক তখনই বাড়ির ভেতর থেকে সুফিয়া বেগমের কণ্ঠ ভেসে এলো। তাঁর কণ্ঠস্বর শুনে বৃত্ত ও জুবায়ের কাল বিলম্ব না করে বাড়ির ভেতরে ছুটে গেলো। দুজনে সুফিয়া বেগমের রুমে গিয়ে দেখলো বিন্দু সুফিয়া বেগমের হাঁটুতে মাথা রেখে কাঁদছে। তার কান্না দেখেই সুফিয়া বেগম চিন্তিত হয়ে জুবায়েরকে ডাক দেন। এদিকে জুবায়েরের সাথে বৃত্তকে দেখে বিস্মিত হলেন তিনি। তবে এ নিয়ে কিছু জিজ্ঞাসার পূর্বে তিনি জুবায়েরকে অসহায় কণ্ঠে জিজ্ঞেস করলেন,
” বিন্দুর কি হয়েছে রে জুবায়ের? বল না। আমার মা এভাবে কাঁদছে কেনো? আমাকে কিচ্ছু বলছে না। তুই বল না।”

জুবায়ের একবার বৃত্ত’র দিকে তাকালো। বৃত্তও জুবায়েরের দিকে তাকালো। অতঃপর জুবায়ের খানিকটা সাহস সঞ্চয় করে পুরো ঘটনা খুলে বললো। এমনকি কাবিননামার ঘটনাও বললো। পুরো ঘটনা শুনে সুফিয়া বেগম বাকহারা হয়ে বসে রইলেন কিছুক্ষণ। অতি আশ্চর্যে চোখের পলক ফেলতে ভুলে গেলেন তিনি৷ এ যেনো এক অবিশ্বাস্যকর খবর শুনলেন তিনি।

সুফিয়া বেগম হতভম্ব কণ্ঠে বললেন,
” জুবায়ের, এসব কি সত্য? নাকি মিথ্যা বলছিস আমাকে?”

বৃত্ত বললো,
” এ সবকিছুই সত্য আন্টি। নির্বাচন সামনে রেখে আমার প্রতিপক্ষের দলের সাজানো নাটক পুরোটি। এখানে আমাদের কারোর দোষ নেই।”

সুফিয়া বেগমের আঁখিজোড়া এবার অশ্রুসিক্ত হয়ে পড়লো। ক্ষীণ শব্দে কাঁদতে কাঁদতে বললেন,
” এ কি হলো বাবা! তোমার রাজনীতির জন্য আমার মেয়ের মান সম্মান এভাবে খুইয়ে গেলো! বাড়ির আশেপাশের লোকজন জানলে কি হবে আমাদের?”

জুবায়ের বললো,
” আশেপাশের তেমন কেউ হয়তো জানে না আম্মা। জানলেও অল্প বয়স্ক কিছু ছেলেপেলে জানতে পারে। এর বেশি কিছু না৷ ”

” বেশি কিছু না কিভাবে বলিস জুবায়ের? ভাবতে পারছিস সবার মধ্যে কোনো কারণে জানাজানি হয়ে গেলে আমাদের ইজ্জতের কি হবে? আমরা মুখ দেখাবো কি করে?”
বলেই তিনি অঝোরে কাঁদতে লাগলেন। বিন্দুর মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বললেন,
” আত্মীয়স্বজনের সামনে কি বলবো আমরা? আমাকে এ নিয়ে কেউ কিছু জিজ্ঞেস করলে কি বলবো আমি? আর বিন্দু ভার্সিটিতে চলাচল করবে কিভাবে? ”

এদিকে পুরো ঘটনা শুনে হুইলচেয়ারের উপর বাম কাত হয়ে নীরবে চোখের জল ফেলছেন আহসান সাহেব। কখনো আশা করেননি এমন সংবাদ শোনার জন্য তিনি বেঁচে থাকবেন। আজ হয়তো সুস্থ থাকলে তিনি চিৎকার করে বিন্দুকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতেন!

সুফিয়া বেগম পুনরায় বললেন,
” আচ্ছা, আশেপাশের লোকজনের কথা এখন না হয় বাদ দিলাম। কিন্তু বিন্দুর বিয়ে দিবো কি করে? সম্বন্ধ আসার পর ছেলেপক্ষ খোঁজখবর নিলো তো সব বেরিয়ে আসবে। তারা কি চাইবে চরিত্রে এমন দাগওয়ালা মেয়ে নিতে? আরোও যদি নকল কাবিননামার কথা জানতে পারে তাহলে তো সম্বন্ধ বাড়ির বাইরে থেকেই ফিরে যাবে। কে করবে আমার মেয়েকে বিয়ে? কে চাইবে এমন চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন তোলা মেয়েকে বিয়ে করতে!”
বলেই সুফিয়া বেগম ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে লাগলেন।

বৃত্ত অকস্মাৎ বলে উঠলো,
” আমি বিয়ে করবো বিন্দুকে। মিথ্যে বিয়ে নয়। সত্যিই ওকে আমার বউ করে ঘরে তুলবো আমি। ”

বৃত্ত আকস্মিক কথায় পুরো রুম পিনপতন নীরবতায় ছেয়ে গেলো। বিন্দুসহ সকলেই তব্দা মেরে বৃত্ত’র পানে চেয়ে রইলো।

———

বিন্দুকে বাড়িতে রেখে বৃত্ত দ্রুত ছুটে গেলো নিজের বাড়িতে। বাইরে বাদল দাঁড়িয়ে ছিলো। বৃত্তকে দেখে জরুরি কণ্ঠে বললো,
” ভাই,তোমার ধারণা সঠিক ছিলো। এসব কাজ আশরাফের। সেদিন তোমার গাড়িতে উঠার সময় আশরাফই বিন্দুর ভিডিও করে। আর হোটেলে যাওয়া ঐ ছেলেমেয়ে দুটোও ওর ভাড়া করা ছিলো। আমি নিশ্চিত, গ্রামের লোকদেরকে ও-ই জোগাড় করেছে।”

বৃত্ত প্রত্যুত্তর করলো না। তবে তার দৃষ্টিতে ক্রোধের ছাপ স্পষ্ট। এখন হয়তো আশরাফ সামনে থাকলে সে জীবিত থাকতে পারতো না! বৃত্ত স্বাভাবিক কণ্ঠে জিজ্ঞেস করলো,
” বাবার কি অবস্থা? মেজাজ কেমন?”

বাদলের কণ্ঠস্বর এবার পরিবর্তিত হলো। সে খানিক ভীত কণ্ঠে বললো,
” ঘরের বাইরের পরিবেশ যতটা ঠাণ্ডা, ভেতরের পরিবেশ ঠিক ততোটাই গরম। বাবার মেজাজ তুঙ্গে আছে। তোমার অপেক্ষায় ড্রইংরুমে বসে আছে।”

” তুই কিছু বলেছিস?”

” তোমার দেরি হওয়ার কারণ জিজ্ঞেস করছিলো। আমি বলেছি বিন্দুকে হোস্টেলে রাখতে গিয়েছো।”

” গ্রামের ঐ ঘটনা বলেছিস?”

” না, বলিনি।”

” ভালো করেছিস। ঐ ঘটনা পরে বলবো,যদি প্রয়োজন পড়ে তবে। এখন আগে বাড়ির ভেতরের পরিবেশ সামলে আসি।”
বলেই সে খানিক হাত, পা ঝাঁকালো। অতঃপর ঠোঁট দিয়ে লম্বা নিঃশ্বাস ছেড়ে ড্রইংরুমের দিকে পা বাড়ালো।

সোফায় বসে আছেন আফতাব হোসাইন, শাহানা হোসাইন ও জাহানারা বেগম। প্রত্যেকের চাহনিতে উদ্বিগ্নতা স্পষ্ট। তবে আফতাব হোসাইনের ঐ গম্ভীর চাহনিতে শুধু উদ্বিগ্নতা নয় বরং ক্রোধ ও সম্মানহানির এক লজ্জিত অনুভূতি জাজ্বল্যমান।

বৃত্ত ড্রইংরুমে প্রবেশ করলো। তার উপস্থিতি টের পাওয়া মাত্রই আফতাব হোসাইন গম্ভীর কণ্ঠে জিজ্ঞেস করলেন,
” কোথায় ছিলে এতক্ষণ? ”

বৃত্ত স্বাভাবিক কণ্ঠে বললো,
” বিন্দুকে বাড়িতে দিয়ে আসলাম। ”

বৃত্তর এহেন কথা শোনার সাথে সাথে আফতাব হোসাইন হাতের কাছে থাকা শোপিছটা ছুঁড়ে মারলেন মেঝেতে। উচ্চ গলার স্বরে চেঁচিয়ে উঠে বললেন,
” বিন্দু, বিন্দু, বিন্দু! এই মেয়ের জন্যই আজ আমার মান সম্মান সব শেষ৷ এখন প্রতিটি লোকের কাছে আমাকে এসবের কৈফিয়ত দিতে হবে?”

বৃত্ত বললো,
” ওর একার কাজ না বাবা। আমিও ছিলাম ওখানে। দোষী হলে আমিও হবো।”

” দোষ তোমারও আছে বৃত্ত। ঐ মেয়ের একার দোষ না। তুমি কি একবারো আমার কথা ভাবোনি? আমার মান সম্মান, তোমার মান সম্মানের কথা ভাবোনি? ভাবোনি যে সামনে নির্বাচন? এই একটা ঘটনা নির্বাচনের উপর কত বড় প্রভাব ফেলবে? নির্বাচনের আর তিন মাসও বাকি নেই, আর সেখানে তুমি এই কাজ করে আসলে!”

” বাবা, ভিডিওটা সত্য না। শুরু অংশ সত্য হলেও শেষের অংশটুকু আশরাফ তার লোক দিয়ে বানিয়েছে। ”

” সত্য না, সেটা আমিও জানি। কিন্তু কয়জনকে বলবে এ কথা? কয়জনকে বুঝাবো আমি যে আমার ছেলে পূতপবিত্র? আছে কোনো জবাব?”

” বাবা, তুমি একটু শান্ত হও প্লিজ। তোমাকে আরোও কিছু বলার আছে।”

” আর কি বলবে তুমি? বলার মতো,শোনার মতো কিছুই বাকি রখোনি তুমি। ঐ মেয়ের প্রেমে তুমি এতোটাই পাগল হয়ে গিয়েছো যে দিন দুনিয়া সব ভুলে বসেছো! ঐ মেয়ের কাছে পরিবারের কেউ কিছু না?”

” আমার পরিবার আমার কাছে সবচেয়ে বেশি প্রায়োরিটি পায়। কিন্তু আমি বিন্দুকেও ভালোবাসি।”

আফতাব হোসাইন চেঁচিয়ে উঠলেন,
” ভালোবাসা! এ শব্দটাই সকল সমস্যার মূল। একটা নগন্য মেয়ের ভালোবাসায় তুমি এতোটাই পাগল হয়ে গিয়েছো যে পরিবার, রাজনীতি সব ভুলে বসেছো।”

” আমি কিছুই ভুলিনি বাবা। কিন্তু বিন্দুকে দোষ দেওয়ার আগে এটুকু ভাবো যে একটা নির্দোষ মেয়ের গায়ে দাগ লেগেছে শুধুমাত্র এই রাজনীতিকে কেন্দ্র করে। আমার শত্রু আমার উপর শোধ তুলতে বিন্দুকে সবার সামনে বেইজ্জত করেছে।”

আফতাব হোসাইন এবার হাত দিয়ে বৃত্তকে থামিয়ে বললেন,
” ব্যস! হয়েছে। অনেক কথা বলেছো। এবার আমি শুধু বলবো। আর তুমি শুধু শুনবে।
আজকের পর থেকে বিন্দু নামটা এ বাড়িতে উচ্চারিত হবে না। তুমি যা ময়লা ছড়িয়েছো সব আমি নিজ দায়িত্বে সাফ করবো। কিন্তু তুমি বিন্দুকে চিরদিনের জন্য ভুলে যাবে।”

বৃত্ত তার বাবাকে জবাব দেওয়ার জন্য মোটেও দেরি করলো না। সে বলিষ্ঠ ও শক্ত কণ্ঠে বললো,
” এটা অসম্ভব বাবা। আমি বিন্দুকে বিয়ে করবো। এটাই আমার সিদ্ধান্ত। ”

আফতাব হোসাইনের ধৈর্য্যের বাঁধ এবার পুরোপুরি ভেঙে গেলো। ক্রোধে ফুলেফেঁপে ফুঁসে উঠলেন তিনি। কখনো যে কাজ করেননি তিনি, সে কাজ করতে উদ্যত হলেন তিনি। হৃদয়ের সবচেয়ে কাছের বড় ছেলের গায়ে হাত তুলতে হাত শূন্যে উঠালেন আফতাব হোসাইন।

#চলবে