সে আমার অপরাজিতা পর্ব-২৮

0
122

#সে_আমার_অপরাজিতা
#পর্ব_২৮(ক)
#সারা মেহেক

আশরাফের দলের লোকগুলো আতঙ্কিত চাহনিতে একে অপরের দিকে চাইলো। মাতাল, অর্ধ মাতাল সকলের মস্তিষ্ক সজাগ হলো। আশরাফ কয়েক সেকেন্ড হতভম্ব দৃষ্টিতে চেয়ে অতঃপর আতঙ্কিত গলায় চিৎকার দিলো,
” কু** বাচ্চা, বুকের পাটা কত বড় তোর! আমার উপর অ্যাটাক করিস!”

আশরাফের এ কথা বলতে দেরি কিন্তু প্রতিপক্ষের দ্বিতীয় আক্রমণের সূচনা ঘটতে বিলম্ব হলো না। লোকটি দ্বিতীয় বার হকিস্টিক দিয়ে সোজা আশরাফের বাহুতে মা’র’লো। ফলস্বরূপ নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বাইক নিয়ে সেসহ পিছনের ছেলেটিও পড়ে গেলো। বাকি ছেলেগুলোও সজাগ হলো। বাইক দাঁড় করিয়ে নেমে পড়লো। প্রত্যেকেই নিরস্ত্র। এজন্য ভয়টা আরোও বেশি জেঁকে বসেছে তাদের মাঝে। প্রত্যেকেই নিজেদের শরীর খানিকটা ঝাড়া দিয়ে প্রতিপক্ষের উপর আক্রমণ করতে এগিয়ে গেলো। কিন্তু তারা এ বিষয়ে অজানা যে সামনের মানুষগুলো পূর্ণ প্রস্তুতি নিয়ে এসেছে। হকিস্টিক সহ প্রত্যেকে এগিয়ে গেলো। আশরাফের দলের লোকেরা যেখানে হাত দিয়ে আক্রমণ করছে সেখানে ঐ লোকগুলো হকিস্টিক দিয়ে ইচ্ছে মতো মারছে।
মাঝের লোকটি কারোর উপর আক্রমণ করছে না। তার তীক্ষ্ণ সূঁচালো দৃষ্টিজোড়া আশরাফের উপর নিবদ্ধ। যেনো এই দৃষ্টি দিয়েই আশরাফকে ভস্ম করে দিবে সে। আশরাফ কালো মাস্কের উপরে ঐ দৃষ্টিজোড়া দেখলো। বেশ চেনা মনে হচ্ছে। তার কোনো পরিচিত শত্রু কি এমন কাজ করলো?
আশরাফ উঠে দাঁড়ালো। শরীর ঝাড়া দিয়ে হাতের মুঠো শক্ত করে দেহে উদ্যম ফিরিয়ে আনতে চাইলো। কিন্তু মাতাল শরীরে অপরাগ হলো সে। তবুও শক্ত হাতে এগিয়ে গেলো প্রতিপক্ষের দিকে। দাঁত কিড়মিড় করে অশ্রাব্য ভাষায় কিছু গালি দিয়ে প্রথমবার আক্রমণ করলো। কিন্তু কালো পোশাকে আবৃত লোকটির হকিস্টিকের আঘাতে দূরে ছিটকে পড়লো আশরাফ। প্রথমবারের মতো লক্ষ্য করলো, কপালের সাইড বেয়ে রক্ত গড়িয়ে পড়ছে। রক্ত দেখে আশরাফ বিড়বিড় করে বললো,
” কোন হা*** বাচ্চার এত সাহস যে আমার শরীর থেকে রক্ত ঝড়াবে!”
বলেই সে পুনরায় উঠে লোকটির মাস্ক খুলতে উদ্যত হলো। কিন্তু লোকটি বেশ শান্ত ও শীতল ভঙ্গিতে আশরাফের বাহুতে সজোরে আঘাত করলো। যেনো সামনের জন মানুষ নয়, কোনো বস্তু৷ নিকৃষ্ট, অচ্ছ্যুত একটি বস্তু। ব্যাথায় চিৎকার করে উঠলো আশরাফ। রাস্তায় পড়ে হাতের ব্যাথায় কাতরাতে লাগলো।
লোকটি দু হাতের মাঝে হকিস্টিক ঘুরাচ্ছে। এ হাত থেকে ও হাতে নিচ্ছে। এভাবে অপ্রস্তুত অবস্থায় সে আবারও আশরাফের উপর আক্রমণ করলো। এবার মারলো একদম হাঁটুতে। এরপর ক্রমান্বয়ে কোমড়ে, পিঠে, হাতেসহ আশরাফের পুরো শরীর পিটিয়ে জখম করে দিলো৷ লোকটি এভাবে মারতে বেশ মজা পাচ্ছে। যেনো হাজার বছরের কোনো রাগ ক্ষোভ মেটানোর এই-ই শেষ সুযোগ। সুতরাং, এ সুযোগের সদ্ব্যাবহার করতে কোনো কৃপণতা করা যাবে না। তাই সেও ঠাণ্ডা ভঙ্গিতে শক্ত হাতে নিজের সকল ক্ষোভ মেটালো আশরাফের উপর।
আক্রমনের পর রক্তাক্ত অবস্থায় ব্যাথা, যন্ত্রণায় কাতরাতে লাগলো আশরাফ। অনুনয়ের স্বরে হাতজোড় করে সামনের ব্যক্তিটির কাছে বললো,
” কি ভুল করেছি আমি? আমাকে ক্ষমা করে দিন। আর কখনো করবো না সে ভুল। এবারের মতো ছেড়ে দিন। আমার শরীর আর মা’র সহ্য করতে পারছে না। ”
মাস্কের আড়ালে লোকটি আশরাফের ঠিক সামনে বসলো। তার এ করুন পরিণতি দেখে ঠোঁট বাঁকিয়ে হাসলো। অতঃপর কালো গ্লাভস পরা হাত দিয়ে আশরাফের বিধ্বস্ত মুখমণ্ডলের থুঁতনি ধরলো। দৃষ্টিজোড়ায় রাজ্যের প্রশান্তি এনে বললো,
” আহ, বেশ ভালো লাগছে এমন রিকুয়েস্ট শুনতে। শোন, আরেকটু কষ্ট মিশিয়ে রিকুয়েস্ট কর। এরপর যদি গলে যাই, তাহলে তো নিস্তার পেলি। না হয় এর চেয়েও খারাপ অবস্থা করতে পারি। ”

কণ্ঠস্বর শোনা মাত্র মাস্কের ওপাশের ব্যক্তিটির পরিচয় জানতে দেরি হলো না আশরাফের। সে দূর্বল কণ্ঠে বললো,
” আমি জানতাম, তুই-ই হবি বৃত্ত। তোর চোখ দেখেই বুঝতে পেরেছি। ”

বৃত্ত হাসলো৷ তবুও মাস্ক খুললো না। বরং ঘন ভ্রুজুগলের ঐ তীক্ষ্ণ দৃষ্টি আশরাফের উপর প্রতিস্থাপন করে বললো,
” চিনতে একটুখানি দেরি করে ফেলেছো বন্ধু। তবে আরেকটু দেরি করলে বোধহয় এখানে তোমার লাশ পড়ে থাকতো। তুমি যে কাজ করেছে তাতে তোমার লাশ কুকুরকে দিয়ে খাওয়ালেও মনের সাধ মিটতো না। ”

আশরাফ তেজি গলায় বললো,
” কি চাস তুই বৃত্ত? ”

আশরাফের এহেন স্বর শুনে বৃত্ত পুনরায় হকিস্টিক দিয়ে বাহুতে আঘাত করলো। দাঁতে দাঁত চেপে বললো,
” শরীরের এখনও তেজ আছে! এতো মার খাওয়ার পরও!”
বলেই সে উঠে দাঁড়ালো। শক্ত হাতে হকিস্টিক ধরে বেধড়ক পেটালো আশরাফকে। এদিকে তার পিছে বাদলসহ তাদের দলের ছেলেপেলে আশরাফের লোকদের পিটিয়ে জখম করে রাস্তায় ফেলে রেখেছে।

বৃত্তর বেধড়ক পেটানোর পর নিস্তেজ শরীর নিয়ে রাস্তার ধুলোর সাথে মিশে রইলো আশরাফ। দূর্বল ভাঙা কণ্ঠে বললো,
” আর মারিস না বৃত্ত। দোহাই লাগে। মরে যাবো আমি। দয়া করে আর মারিস না।”

আশরাফের এহেন অনুরোধে বৃত্ত হাসলো। গলা ফাটিয়ে আত্মতুষ্টিতে হাসলো সে। এই, এই মুহূর্তটুকুর জন্য সে পথ চেয়ে বসে ছিলো। আশরাফের এই করুন অবস্থা দেখে সে ভীষণ তৃপ্তি পাচ্ছে।

#চলবে

#সে_আমার_অপরাজিতা
#পর্ব_২৮(খ)
#সারা মেহেক

ক্লান্ত শরীর নিয়ে বাড়ি ফিরলো বৃত্ত। তার পাশাপাশি ফিরলো বাদলও। আশরাফকে ইচ্ছেমতো পিটিয়ে শরীরে বেশ ক্লান্তিভাব চলে এসেছে। কিন্তু মনের ভেতরে শান্তিরা বাসা বেঁধেছে। দুজনের বাহ্যিক শারীরিক অবস্থা বলা চলে প্রায় বিধ্বস্ত। দেখলে মনে হবে কারোর সাথে ক্ষণিকের জন্য ধ্বস্তাধস্তি করে এসেছে।

বাদল গিয়ে আগে প্রধান দরজার সম্মুখে দাঁড়ালো। সতর্ক কণ্ঠে বৃত্তকে জিজ্ঞেস করলো,
” দরজা কি খুলবো ভাই?”

বৃত্ত কয়েক কদম পিছিয়ে এলো। মাথা তুলে দৃষ্টি মেললো আফতাব হোসাইনের রুমের জানালায়। লাইট বন্ধ। এর মানে ঘুমিয়ে পড়েছে। অবশ্য জেগেও থাকার কথা নয়। কারণ ঘড়িতে বাজে রাত দুটো। বৃত্ত এবার এগিয়ে এলো। বাদল জিজ্ঞেস করলো,
” বাবা ঘুমিয়ে পড়েছে? ”

বৃত্ত নিরুদ্বেগ কণ্ঠে বললো,
” হ্যাঁ। লাইট অফ। তুই বর্ষাকে দরজা খুলে রাখতে বলেছিলি না?”

” হ্যাঁ ভাই। ও খুলে রেখেছে। ”

” আচ্ছা, দরজা খোল।”

বাদল অতি সাবধানে মন্থর গতিতে দরজা ঠেলে ভেতরের দিকে পাঠালো, যেনো কোনো প্রকারের শব্দ না হয়। এরপর শ্লথগতিতে পা এগুলো। তার পাশাপাশি একই ভঙ্গিমায় পা এগুলো বৃত্ত। সিঁড়ির নিকটে এসে বৃত্ত সতর্ক স্বরে বললো,
” ধীরে সুস্থে রুমে যা। ঠোঁটের ঐ জায়গাটা বেশ কেটে গিয়েছে। গিয়ে স্যাভলন লাগিয়ে নিস। আর হাতে পায়ে যেসব জায়গায় ব্যাথা পেয়েছিস, সাবধানে থাকিস। আর হ্যাঁ, মনে করে নাপা খেয়ে নিস।”

” আচ্ছা ভাই। তুমিও ড্রেসিং করিয়ে নিও। ”

” হ্যাঁ, তুই রুমে যা। ”

বাদল আর কথা বাড়ালো না। চোরের ন্যায় পা টিপে টিপে রুমে ঢুকলো। বাদল রুমে ঢুকতেই বৃত্ত বা হাত ঝাড়া দিলো। আশরাফকে মা’র’তে গিয়ে এ হাতে হুট করে টান খেয়েছিলো। বাদলকে বলেনি এ ব্যাপারে। এতক্ষণ যাবত খুব একটা ব্যাথা উঠেনি। তবে সিঁড়ি দিয়ে উঠতে গিয়ে আবারো ব্যাথায় টনটন করে উঠে বা হাতটা।
বৃত্ত রুমের দরজা খুলতে নিলে দেখলো দরজা আগে থেকেই খোলা ছিলো। ভেতর থেকে ভিড়ানো ছিলো। সে ধীর ও সতর্ক পায়ে রুমে ঢুকলো। রুমে প্রবেশ মাত্রই তার ক্লান্ত দৃষ্টিজোড়া আবদ্ধ হলো বিন্দুর পানে। বিছানায় আধ শোয়া অবস্থায় বুকের উপর বই রেখে ঘুমিয়ে পড়েছে সে। একদম নিশ্চিন্তে নির্বিঘ্নের ঘুম যাকে বলে। বিন্দুকে এহেন অবস্থায় দেখে বৃত্তর সকল ক্লান্তি যেনো নিমিষেই মিটে গেলো। এই মেয়েটার জন্যই তো আজ এত ক্লান্তি। আর এই মেয়েকে দেখেই সকল ক্লান্তি মিটে গেলো! পৃথিবীর সকল প্রেয়সীর মাঝে বোধহয় এই জাদু আছে!
বিন্দুকে দেখে মৃদু হাসলো বৃত্ত। নিঃশব্দে দরজা আটকে দিলো। অতঃপর গিয়ে বিন্দুর সম্মুখে দাঁড়ালো। খানিক সময় দূর হতে দেখলো। অতঃপর বিন্দুর উপর খানিকটা ঝুঁকে বেশ নিকট হতে পর্যবেক্ষণ করলো তাকে। বিন্দুর মুখশ্রীতে প্রশান্তি বিরাজ করছে। তার এই রূপ যেনো বৃত্ত’র জন্য চক্ষু শীতলকারী এক রূপ। হৃদয় বিগলিত করা এক রূপ। মেয়েটা যে তার জীবনের এতোটা জুড়ে নিজের প্রভাব জুড়ে দিবে কে জানতো! প্রথম দেখায় যে তাকে এতো ভালোবাসবে কে জানতো! বৃত্ত মুগ্ধতায় জড়ানো হাসি দিয়ে বিন্দুর কপালের উপর হতে এক গোছ চুল সরিয়ে দিলো। প্রগাঢ় গলায় মৃদুস্বরে বললো,
” তুমি আমার ভীষণ শখের তোলা ইচ্ছে। যাকে সারাজীবনের জন্য পেতে রোজ দোয়া করেছি আমি।”
বলেই কয়েক সেকেন্ড নিষ্পলক বিন্দুর পানে চেয়ে রইলো সে। অতঃপর সযত্নে বিন্দুর হাত থেকে বইটি নিয়ে সাইড টেবিলে রেখে ফার্স্ট এইড বক্স বের করলো সাইড টেবিল থেকে। কিন্তু বক্সটা হাতে নিতেই অসাবধানতাবশত হাত থেকে পড়ে গেলো৷ তৎক্ষনাৎ সশব্দে সকল ওষুধ আশেপাশে ছড়িয়ে পড়লো। অকস্মাৎ আওয়াজে আচমকা ঘুম ভেঙে গেলো বিন্দুর। হুড়মুড়িয়ে উঠলো সে। তবে ঠিক সম্মুখেই বৃত্তকে দেখে ভূত দেখার ন্যায় চমকে উঠলো সে। অতটস্থ অবস্থায় বললো,
” আপনি!”

বৃত্ত অপ্রস্তুত হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। তার কারণে বিন্দুর ঘুম ভেঙে যাওয়ায় মনে মনে নিজেকে দু চারটা গালি দিলো। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে দ্রুত নিচে ঝুঁকে ওষুধ তুলতে তুলতে বললো,
” ঘুমিয়ে পড়ো বিন্দু। ”

বিন্দু প্রত্যুত্তর করলো না। তটস্থ হলো সে। তার তন্দ্রাভাব পুরোপুরি কেটে গিয়েছে। এরই মাঝে সে কয়েক সেকেন্ডের জন্য বৃত্তর মুখশ্রীতে দৃষ্টিপাত করেছিলো। খেয়াল করেছিলো কালো কালো কিছু ঠোঁটের কোনে ও কপালের এক কোনে লেগে আছে।
বৃত্তকে ওষুধ গোছাতে দেখে বিন্দু উদ্বিগ্ন স্বরে জিজ্ঞেস করলো,
” ওষুধের বক্স কেনো? কিছু হয়েছে আপনার?”

বৃত্ত নিজের আঘাতপ্রাপ্ত স্থানগুলো বিন্দুর দৃষ্টি হতে লুকাতে চাইছে। সেই চেষ্টায় সে যথাসম্ভব নত মস্তকে ওষুধগুলো গুছিয়ে বক্সে পুরে নিচ্ছে। বিন্দুর প্রশ্নের উত্তরে সে বললো,
” সামান্য একটু গ্যাস্ট্রিকের প্রবলেম হয়েছে তো তাই ওষুধ নিতে এসেছিলাম। ”

বিন্দু বিশ্বাস করলো না। সন্দিহান কণ্ঠে জিজ্ঞেস করলো,
” সত্যি?”

” হ্যাঁ, সত্যি। ”

” আচ্ছা, আমার দিকে তাকান তো।”

বৃত্ত তাকালো না। দ্রুত হাতে ওষুধ গুছিয়ে বক্স বন্ধ করতে যাবে তখন আবারও বিন্দু বললো,
” কি শুনছেন না? আমার দিকে তাকাতে বললাম আপনাকে।”

বৃত্ত এবারও তাকালো না। বক্স নিয়ে উঠে যেতে নিবে তখনই বিন্দু বিছানা হতে পা নামিয়ে বৃত্তর মুখখানা জোরপূর্বক নিজের দিকে ফেরালো। হ্যাঁ, সে যা সন্দেহ করেছিলো সেটাই হয়েছে। বৃত্তর কপালে ও ঠোঁটের কোনে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। বিন্দুর উদ্বিগ্নতা বৃদ্ধি পেলো। সে উৎকণ্ঠিত গলায় শুধালো,
” এগুলো কি বৃত্ত! কিভাবে হলো এসব? ”

বৃত্ত নীরবে দৃষ্টি নামালো। নিরুত্তর রইলো। তার এ নীরবতায় বিন্দু কড়া গলায় শুধালো,
” এতো রাতে কার সাথে গু’ ণ্ডা’ মি’ প’ না করে এসেছেন?”

বৃত্ত অপরাধী দৃষ্টিতে বিন্দুর পানে কয়েক সেকেন্ডর জন্য চাইলো। ফের দৃষ্টি নামিয়ে নিলো। নাহ, বিন্দুর সাথে দৃষ্টি মেলাতে পারছে না।
বিন্দু আর দ্বিতীয় প্রশ্ন করলো না। নিজে উঠে দাঁড়ালো। বৃত্তকে হুকুমের স্বরে বললো,
” বসুন এখানে। ”
বলেই সে বৃত্তর হাত থেকে ফার্স্ট এইড বক্স নিজের হাতে নিলো। বৃত্ত জোর করলো না। সভ্য শিশুর ন্যায় হুকুম মেনে বিছানায় বসলো। বিন্দু বৃত্তর থুঁতনি ধরে তার মাথাটা তুললো। পুরো মুখশ্রী ভালোভাবে দেখলো। কপালে ও ঠোঁটে রক্ত জমাট বেঁধে শক্ত হয়ে গিয়েছে। আশরাফকে মা’রা’র সময় আশরাফ দুবার বৃত্তর উপর আক্রমণ করে ফেলে। সেই থেকেই দু জায়গায় আঘাত পেয়েছে। তবে এ আঘাত যৎসামান্য।
বৃত্তর আঘাতপ্রাপ্ত স্থানগুলো একনজর দেখে বিন্দু নিঃশ্বাস ছাড়লো। সাইড টেবিলে বক্স রেখে সেখান থেকে তুলো ও স্যাভনল নিয়ে বৃত্তর ক্ষত পরিষ্কার করতে আরম্ভ করলো। বৃত্ত বিছানায় বসে আছে আর বিন্দু তার সম্মুখে দাঁড়িয়ে আছে।

বিন্দু সযত্নে বৃত্তর ক্ষত পরিষ্কার করছে। আর বৃত্ত নিষ্পলক বিন্দুর পানে চেয়ে আছে। পূর্বে কখনও বিন্দুকে এতো নিকটে পাওয়ার সুযোগ হয়নি। আজ এভাবে বিন্দুকে দেখে বুকের ভেতর উথাল-পাতাল ঢেউ উঠেছে। কিন্তু সেই ঢেউয়ের প্রতিফলন তার চেহারায় দেখা যাচ্ছে না। বিন্দুর জন্য নিজের অনুভূতি লুকিয়ে রাখতে বাধ্য হচ্ছে।

ক্ষত পরিষ্কার করার এক পর্যায়ে বিন্দু তাচ্ছিল্যের সুরে বললো,
” নেতাদের জীবন বুঝি এমন হয়? সবাই কি রাত বিরাতে এভাবে মা’র’পি’ট করে বাড়ি ফেরে?”

বৃত্ত মোলায়েম সুরে বললো,
” সব নেতারা এমন হয় না। যারা নিজের প্রিয়জনের মান সম্মান বাঁচিয়ে রাখতে চায় তারা এভাবে মা’র’পি’ট করে বাড়ি ফেরে।”

বিন্দু থমকে গেলো। কয়েক সেকেন্ডের জন্য তার হাত আকস্মিক বিরতি নিলো। মস্তিষ্কে বৃত্তর কথাগুলো গভীর ছাপ ফেললো। ক্ষণিক সময় নিলো কথাগুলোর অর্থ পুনরুদ্ধার করতে। অতঃপর যখন সে বুঝলো তখন বিস্মিত কণ্ঠে শুধালো,
” আমার জন্য আপনার এ অবস্থা বৃত্ত! ”
#চলবে
®সারা মেহেক