সে আমার মায়াবতী পর্ব-২৭+২৮

0
800

#সে_আমার_মায়াবতী
#লেখনিতে_ঈশা_ইসলাম
#পর্ব_২৭
সেই কখন থেকে বেডে পা তুলে বসে আছি। মিঃ চৌধুরী সোফায় বসে আমার দিকে তাকিয়ে মিটমিটিয়ে হাসছে। এবার আরও রাগ লাগছে। সবাই আমাকে বকে গিয়েছে, কেন আমি ভর সন্ধায় সাওয়ার নিয়েছি? কিন্তু কেউ তো জানে না এই ভদ্র লোকের জন্যই এসব হয়েছে।

— ঈশা আম্মু খেয়ে নে। আর বকবো না। দেখ তোর জন্যই তো বকলাম। আম্মু খেয়ে নে। ( চাচিমা)

— তুমি ইভেন তোমরা সবাই আমাকে শুধু শুধু বকেছো। এখন খাবো না। আমার আরও ঘুম পাচ্ছে। ( মুখ ফুলিয়ে) ( আমি)

আমার কথায় এবার মিঃ চৌধুরী আমার দিকে তেড়ে এসে বলে-

— চাচি আম্মু তুমি আমার কাছে দাও। আমি খায়িয়ে দিচ্ছি। মেয়েটা বড্য জ্বালায়। ( মিঃ চৌধুরী)

ওনার কথায় চাচিমা হেসে ওনার হাতে খাবার দিয়ে চলে গেলেন। আমি দ্রুত কম্বল দিয়ে মুখ ঢেকে নিলাম। উনি খাবার রেখে আমার কম্বল টান দিয়ে সরিয়ে দিলেন। আমি আরও জোরে চেপে ধরলে, এবার গম্ভির কন্ঠে বলে-

— ঈশা আমি তোমাকে খেতে ডাকছি। তুমি কি আসবে নাকি আমি নিজে টেনে আনবো। আমি কিছু করলে তুমি ব্যথা ছাড়া কিছুই পাবে না। ( মিঃ চৌধুরী)

এই প্রথম উনি আমাকে রুডলি ভাবে ডেকেছে তাও ঈশা আমার নাম নিয়ে। ভালোবেসে ডাকে নি। হুট করেই মনটা অভিমানে ছেয়ে গেলো।

— এই মেয়ে তোমাকে ডাকছি আমি। খাওয়া নিয়ে তুমি এত ইরেন্সপসেবল কেন? ( ধমকে) ( মিঃ চৌধুরী)

এবার খুব অভিমান হলো। মিঃ চৌধুরী কি আগের মতো আমাকে ভালোবাসে না?এইভাবে তো আমার সাথে কথা বলে না উনি। অভিমানের অনূভতি গুলো এক জোট হয়ে মিঃ চৌধুরীর কাছে ভিরে গেলো। তাই আর কিছু না বলে নিজেই কম্বল সরিয়ে উঠে গেলাম। মুখ কালো করেও বুঝতে দিলাম না। ওনার হাত থেকে বাটি কেড়ে নিজেই মুখে পুরে নিলাম কনফ্লেক্স। উনি ঘার কাত করে আমার দিকে তাকিয়ে ফোন নিয়ে উঠে গেলেন। এবার মনে হচ্ছে কষ্টরাও আর চেপে থাকতে চাইছে না। একটি বার আমার দিকে ফিরেও তাকালো না- আমি হয়তো ওনাকে খুব জ্বালিয়েছি। নাহ আর পারলাম না এবার ফুপিয়ে ফুপিয়ে কেঁদে উঠলাম। এক হাত দিয়ে চোখ মুছছি আর এক হাতে খাচ্ছি। হাতের বাটিতে টান পরায় নিজের খেয়াল ফিরে পাই।

— কি হয়েছে আমাকে দেখিয়ে দেখিয়ে কাদঁছো কেন? একদম আমার সামনে ন্যকা কান্না করবে না। নাহলে আমার থেকে কেউ আর খারাপ হবে না। ( ধমক দিয়ে)(মিঃ চৌধুরি)

এবার সব সিমানা পেরিয়ে গেলো। ভালোবাসার মানুষ গুলোর এতটুকু অবহেলা আমাদের সহ্য হয় না। আর সেখানে উনি আমাকে বকছে। রীতিমত মারবে বলছে। তাই আর না পেরে এবার জোরে কেঁদে উঠলাম। কাদঁতে কাদঁতে বেড থেকে নেমে গেলাম। ওয়াশ রুমে পা বাড়ানোর আগেই উনি কোলে তুলে নিলেন। নিজের কোলে বসিয়ে ওনার দিকে ফিরিয়ে নিলেন। চোখের পানি মুছতে মুছতে বললেন-

— আহারে আমার পরি রে। জান তুমি এতটা বাচ্চা কিভাবে হও। পাখি তুমি কি জানো তুমি আমার জান।বোঝো তুমি এই আরাভ এর জিবনে কতটুকু জায়গা জুড়ে আছো, যার পরিমাপ করা যাবে না। ( মিঃ চৌধুরী)

আমার কপালে চুমু দিয়ে কথাগুলো বললেও আমি কান্না থামাই নি। ওনার বুক থেকে সরে যাওয়ার চেষ্টা করলেও এক চুল নড়তে পারি নি। বুকের মাঝে আরও চেপে ধরলেন। এবার আমি ফুপিয়ে কেঁদে বলে উঠলাম –

— আমি জা জানি আপনি আ আমাকে আর ভালোবাসেন না। আমি কাল আপনাকে খুব জ্বালিয়েছি তাই না? আপনার গায়ে বমি ক করেছি, তা তাই এভাবে বকলেন তো? আচ্ছা আর আমি আপ! (আমি)

— হুস জান একদম না। আমি তোমাকে খুব ভালোবাসি পাখি। আর আমি তো আমার ঈশু পাখিকে একটু কাঁদাতে চেয়েছি। দেখতে চেয়েছি যে আমার অভিমানিটা কিভাবে রেগে যায়। সরি জান। ( মিঃ চৌধুরী)

— ক কথা বলবো না আপনার সাথে, আমার নাম ঈশা কোন পাখি বা জান না। আপ আপনি এসব নামে আর ডাকবেন না। আর আপনি আমাকে মারবেন ও বলেছেন। এ্য এ্য এ্য (আমি)

কথা শেষ করেই কেঁদে দিলাম। উনি আরেকটু গভির ভাবে জড়িয়ে নিলেন৷ গালে নাক ঘষে বললেন-

— এতটুকু সামান্য বকাতেই এই অবস্থা আর যদি অন্যকিছু বলতে যেতাম তাহলে তো আজ এখানে সাগড় বয়ে যেতো। সরি পাখি আমি রেগে যাওয়ার অভিনয় করেছি মাত্র। কিভাবে আমার জানকে আমি সজ্ঞানে কষ্ট দিবো। (মিঃ চৌধুরী)

— তা তাহলে এভাবে আমাকে ডাকলেন কেন? ( আমি)

— ওহহহ এবার বুঝেছি এজন্যই মহারানির মুড অফ হয়েছে। জান তোমাকে ভালোবাসি। এভাবে আর বলবো না। সরি বেবি। (মিঃ চৌধুরি)

উনি কানে হাত দিয়ে ইনোসেন্ট ফেস করে সরি বলাতে আমি খিলখিল করে হেসে দেই। উনি কামিজের ভেতর হাত ঢুকিয়ে আরেকটু কাছে টেনে নেন। আমার টোলে চুমু খেলেন। আমি স্থির হয়ে বসে আছি। ওনার স্পর্শে। এবার আমার ঠোঁটের কাছে এসে চুষে নিতে লাগলেন।প্রথমে বাধা দিলেও, পরে রেসপন্স করতে লাগলাম। প্রায় পাঁচ মিনিট পর ছেড়ে আমার ঠোঁট মুছিয়ে দিলেন। দু-জনেই হাপাচ্ছি।
কিছু বলার জন্য মুখ খুলবো তার আগেই চিৎকার শুনে আশেপাশে তাকিয়ে দেখি রাইসা আর এনা আপু দড়জার কাছে মুখ লুকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। প্রথমে ব্যপার টা মাথায় না এলেও পরে মাথায় আসে। তারাহুরো করে
ওনার কোল থেকে উঠে গেলাম। উনি ফোন কানে নিয়ে বেলকনিতে চলে গেলেন। রাইসা এবার আমার দিকে তাকিয়ে চলে গেলো। এনা আপুর দিকে তাকাতেই দেখলাম কিছু বলার জন্য এদিক সেদিক তাকাচ্ছে তাই জিজ্ঞাস করলাম-

— এনা আপু কিছু বলবে? এসো ঘরে এসো। ( আমি)

— আব না মানে ঈশা আসলে- ( এনা)

বুঝতে পেরেছি আপুর মনের কিছুর ঝড় চলছে তাই আমি মুচকি হেসে আপুর হাত ধরে বললাম-

— কিছু বললে তুমি নিরধিধায় বলতে পারো।(আমি)

— আসলে ঈশা আমাকে ক্ষমা করে দিও আমি শুরু থেকেই তোমাকে জ্বালিয়ে আসছি তোমার ক্ষতি করার চিন্তায় আছি। আ আমাকে প্লিজ ক্ষমা করে দাও। আমি তোমার লাইফ থেকে চলে যাবো।( এনা)

— আপু তুমি এজন্য মন খারাপ করে আছো। আমি জানতাম তুমি ভুল বুঝতে পারবে তাই বিশ্বাস ছিলো, আর দেখো আজ তুমি বুঝতে পেরেছো। আপু আমি মিঃ চৌধুরীকে ভালোবাসি কিনা জানি না কিন্তু ওনাকে ছাড়া যে এক মুহুর্ত চলতে পারি না সেটা আমি বুঝতে পেরেছি। উনি যে আমার অভ্যাস হয়ে গিয়েছে। ( আমি)

— চিন্তা করো না আমি আর তোমাদের মাঝে আসবো না। চলে যাবো। আরাভ যে তোমাকে খুব ভালোবাসে তার প্রমান আমি প্রতি পদে পেয়েছি। তাই আমি খুব করে সরি। ( এনা) ( মন খারাপ করে)

— আপু প্লিজ আমাদের ছেড়ে চলে যেও না। তুমি তোমার ভুল বুঝতে পেরেছো। প্লিজ আপু যেও না। একটা ভালো পাত্র দেখে তোমার বিয়ে দিয়ে দিবো। ( মুচকি হেসে)( আমি)

— তুমি সত্যি অনেক ভালো। আমি তোমাকে চিনতে পারি নি। তুমি খুব ভালো থেকো অনেক সুখে থেকো ঈশা। (এনা)

আমি আপুকে গিয়ে জড়িয়ে ধরলাম। আপু চমকালেও পরে বুঝতে পেরে আমাকে জড়িয়ে ধরলেন।

— আপু কথা দাও যাবে না। আমি খুব মিস করবো তোমায়। আমরা আজ থেকে বন্ধু আগে তো শত্রু ছিলাম। (হেসে দিয়ে)( আমি)

— এবার বুঝলাম আরাভের ঈশা পরি কেন এত পাগল করেছে তাকে। আমি থাকবো আর তোমাদের জ্বালাবোও। (এনা) ( হেসে দিয়ে)

এনা আপুর কথা শেষ হলে মিঃ চৌধুরী বেরিয়ে আসে। আপু আমাকে চোখ টিপ দিয়ে চলে যায়। মিঃ চৌধুরী আমাকে দেয়ালের সাথে চেপে ধরে কপালে চুমু খেয়ে নিলেন। আমার দিকে তাকিয়ে বললেন –

— ভালোবাসি পরি৷ তুমি এতটা নিস্পাপ যে খারাপ মানুষ গুলো তোমার সংস্পর্শে
এলে ভালো হয়ে যায়। ভালোবাসি জান। ( মিঃ চৌধুরী)

— মিঃ চৌধুরী একটা কথা বলি- ( আমি)

— বলো জান। পারমিশন নিচ্ছো কেন? বরটা তো তোমারই। ( মিঃ চৌধুরী)

— আ আমাকে ফুচকা খেতে নিয়ে যাবেন প্লিজ। ( চোখ বন্ধ করে)(আমি)

— ওয়াট? ( মিঃ চৌধুরী)

হায় আল্লাহ এই লোকটা কি এখন বকবেন আমায়? মায়া তো বলেছিলো উনি বাহিরের এসব এলাও করে না। তাহলে কি এবার বকবেন?

— নিয়ে যাবো জান। আজ সারাটাদিন তোমার জন্য। তুমি যা চাইবে তাই পাবে। ( মুচকি হেসে)

আমি ওনার বুকে মুখ বুজে বললাম –

— আপনি আমার লাইফের একজন ফেরেস্তা মিঃ চৌধুরী। আমি চাই খুব করে চাই এই ভালোবাসার কাঙাল হয়ে থাকতে। ( আমি)

— পাবে জান। এই জিবনে ভালোবাসা গুলো তোমার জন্য বরাদ্ধ। সময় মতো সব পাবে। এবার আদর করি আমি। ( বাকা হেসে) ( মিঃ চৌধুরী)

— চৌধুরী সাহেব। ( চিল্লিয়ে) ( আমি)

#চলবে____________

#সে_আমার_মায়াবতী
#লেখনিতে_ঈশা_ইসলাম
#পর্ব_২৮
আয়নায় দাঁড়িয়ে মিঃ চৌধুরী কান্ড দেখছি। এই নিয়ে একশত বার কপালে চুমু দিচ্ছেন আর ভালোবাসি শব্দটা বলছেন। কালো শাড়ি, কালো চুঁড়ি আর কালো গোলাপে আমাকে মুড়িয়ে দিয়েছেন। মেচিং পাঞ্জাবি পরে আমার চোখে কাজল দিয়ে দিলেন। শাড়িতে সেফটিপিন দিতে দিতে বলে উঠলেন-

— আমার পরি যে এত আগুন সুন্দরি সেটা তো আমি খেয়াল করি নি। দেখো মেয়ে আমি এখন কিন্তু বের হবো,তাই একদম সিডিউস করবে না। ( মিঃ চৌধুরী)

আমি অবাক হয়ে গিয়েছি লোকটার এই কথায়।বলে কি লোকটা। এতক্ষন তো নিজেই শাড়ি পড়ানো নিয়ে এত জ্বালাতন করলো আমাকে।

— মিঃ চৌধুরী আপনি কিন্তু আমাকে ব্লেইম করছেন। আ আপনি তো আমাকে আব মানে আপনি নিজেই তো। (আমি)

— হুম বলো তোমাকে কি? নাহলে আমি বুঝবো কিভাবে কি করেছি আমি। এই ভোলা ভালা ছেলেকে তুমি এখন ফাসাচ্ছো? ( মিঃ চৌধুরী)

উনি ঠোঁট কামড়ে হেসে কথাগুলো বলছেন। আমি বুঝেছি এই লোকটা আমাকে জ্বালিয়ে ভিসন মজা পায়। তাই রেগে বলে উঠলাম-

— কিছু না। আপ আপনি একটা অসভ্য। ( আমি)

— অনলি ফর ইউ জান। তুমি চাইলে আরেকটু অসভ্য হতে পারি। ( বাঁকা হেসে)( মিঃ চৌধুরী)

আমি আর কিছু না বলে মুখ ভেংচি দিয়ে চলে এলাম, লোকটা বুকে হাত দিয়ে মুচকি হেসে বললেন –

— এই মেয়েটা আমাকে পাগল করে ছাড়বে। মাই কুইন। মাই ব্ল্যাক রোজ। (মিঃ চৌধুরি)

সবার থেকে বিদায় নিয়ে চলে গেলাম আমি আর মিঃ চৌধুরী ঘুরতে। লোকটা আমাকে সত্যি অনেক ভালোবাসে তার প্রমান আমি পদে পদে পাচ্ছি।কেউ এত বলার পরেও এক মুহুর্ত থাকতে রাজী হয় নি। কিন্তু আমি ছোট একটা চাওয়া আমার প্রেমিক পুরুষ এর সাথে একটা দিন কাটাবো। উনি সেই কথা রাখতেই আজকে থাকতে রাজী হয়েছে। আপু আর সায়ন ভাইয়া ও বের হয়েছে। কিন্তু ওরা আলাদা বের হয়েছে। নদীর পারে ইচ্ছে মতো ঘুরে যেই না গাড়ির কাছে যাবো ওমনি শাড়ির কুঁচি এলোমেলো হয়ে গিয়েছে। কিন্তু আমি বলার আগেই মানুষটা আমার পায়ের সামনে হাঁটু গেরে বসে পরেন।

রাস্তার মানুষ সব হা করে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে। কারন মিঃ চৌধুরী আমার শাড়ির কুঁচি ঠিক করে দিচ্ছেন। কেউ কেউ দূর থেকে ভিডিও করছে। কাছে ঘেসার সাহস আপাদত কারো নেই কারন চারিপাশে ওনার গার্ড এ ভর্তি।

— মিঃ চৌধুরী শুনছেন ( আমি)

— হুম জান, (মিঃ চৌধুরি)

— হয়েছে। এবার তো উঠুন। সবাই কিভাবে তাকিয়ে আছে,
(আমি)

— আহ পাখি তুমি শাড়ি সামলাতে পারো না তাহলে কেন পরলে। দেখলে তো মাঝরাস্তায় এলোমেলো হয়ে গেলো। (মিঃ চৌধুরি)

— এখন আমার দোষ দিচ্ছেন আপনি? আপনি নিজেই শাড়ি পড়াবেন বলে জোর করে অত্যাচার করলেন। (অসহায় ফেস) ( আমি)

— ওয়াট? অত্যাচার? ( মিঃ চৌধুরী)

কথাটা বলেই উনি হু হা হা করে হেসে দিলেন। দাঁড়িয়ে আমার চুলে হাত বুলিয়ে দিয়ে বলতে আরম্ভ করলেন-

— লাইক সিরিয়াসলি জান? আমি তোমায় অত্যাচার করি? মানে আমি এই আরাভ আমার জান কে কষ্ট দেই? (মিঃ চৌধুরি)

— হুমম এই যে আপনি শাড়ি পরানোর সময় আমাকে জ্বালিয়ে অত্যাচার করেন। (ইনোসেন্ট ফেস করে)( আমি)

— ওহহ রে জান এটা তো রোমেন্টিক অত্যাচার। তুমি চাইলে আমি এখানেও! (মিঃ চৌধুরি)

— নায়ায়ায়া, প্লিজ আপনি আমাকে ঘুরতে নিয়ে চলুন।
এসব বাজে কথা বলবেন না।
( আমি)

— ওকে মিসেস আপনি যা বলেন। আজকের দিনটা তো আপনার জন্যই। ( মিঃ চৌধুরী)

মুচকি হেসে হাত বাড়িয়ে দেয়। আমি ভরসার হাত পেয়ে জড়িয়ে যাই ওনার হাতে। রাস্তার অনেকেই এখনো একি ভাবে তাকিয়ে আছে,কিন্তু আমি তাকিয়ে আছি আমার দেখা সুদর্শন কেয়ারিং চৌধুরী সাহেব এর দিকে। যে একমাত্র আমার সামনেই এতটা নরম মানুষ। ঘুরাঘুরির এক পর্যায়ে ফুচকা স্টল দেখে ওনার হাত খামচে ইশারা করি। উনি ভ্রু কুচকে কিছুক্ষন আমার দিকে তাকিয়ে নিয়ে গেলেন ফুচকা স্টলে। দোকানিকে উনি এমন ভাবে ইনস্ট্রাকসেন দিচ্ছে মনে হয় দোকানটা আজ আমার জন্য খোলা হয়েছে।

— এই মামা ফুচকা দিন। ঝাল বেশি দিয়ে মজা করে বানিয়ে দিবেন। (আমি)

— নো নো তুমি এত ঝাল খেতে পারবে না। জান শরির খারাপ করবে, এমনিতেই তুমি অসুস্থ।

— এই যে শুনুন মিঃ চৌধুরী আপনি চুপচাপ বসে থাকুন। আপনি আজ কথা দিয়েছেন সাড়াদিন আমার তাই আমি যা ইচ্ছা যেভাবে খুশি খাবো।

আমি ফুচকা দেখলে মাথা ঠিক থাকে না। তাই এত বাধা না মেনে ফুচকা খাওয়া শুরু করলাম।নিজে মুখে দেয়ার আগেই একটা ফুচকা হাতে নিয়ে মিঃ চৌধুরীর সামনে ধরলাম, জানি উনি খাবে না, তবুও ইচ্ছে ছিলো ওনাকে নিজের হাতে খায়িয়ে দেই। মানুষটা তো আমাকে কত যত্ন নিয়ে খাওয়ায়। কিন্তু আমাকে অবাক করে দিয়ে উনি আমার হাত থেকে ফুচকা খেয়ে নিলেন। আমি অবাক হলেও মুচকি হেসে খাওয়াতে মন দিলাম। এতটুকু বুঝতে পেরেছি মিঃ চৌধুরী মুগ্ধ নয় নয়নে এদিকেই তাকিয়ে আছে। ৩/৪ টা মুখে পুড়তেই বুঝলাম নাগা মরিচ এর পরিমান টা একটু বেশি। কিন্তু খাওয়া অফ না করে একের পর এক খেতে লাগলাম। চোখ মুখ লাল হয়ে এলেও মিঃ চৌধুরীর বকার ভয়ে খেতে লাগলাম। এবার আর না পেরে রেখে দিলাম। চোখ দিয়ে অনবরত পানি ঝরে পরছে। সামনে আইস-ক্রিম দেখতে পেয়ে তাকিয়ে দেখলাম মিঃ চৌধুরী হাতে নিয়ে ইশারা দিচ্ছে।

— জান তোমার ঝাল লেগেছে, এটা খাও একটু বেটার লাগবে। (মিঃ চৌধুরি)

আর কিছু না বলে উনি এগিয়ে এলেন আমাকে নিজের হাতে খায়িয়ে দিলেন। মুখের অংশ শেষ করে মিঃ চৌধুরীর গাল স্পর্শ করে বললাম-

— আ আপনি আমাকে বকলেন না কেন? ( আমি)

— আমি বকলে কি তার আদরি স্পর্শ টা পেতাম। এই যে তার এতটুকু ছোঁয়া আমাকে পাগল করে দেয়, সেটা তো আমার পরি জানে না। ( মুচকি হেসে)( মিঃ চৌধুরী)

আমার হাতে চুমু খেয়ে উঠে এলেন৷ মেলা হচ্ছে শুনে বায়না ধরলে উনি বিনা বাক্য আমাকে নিয়ে যায়। চুঁড়ির দোকানে গিয়ে কাঁচের চুঁড়ি কিনে নিজের হাতে পড়িয়ে দিলেন। দূর থেকে কেউ কেউ অবাক চোখে তাকিয়ে আছে ওনার দিকে। কারন বাহিরে এখনো কেউ জানেই না তাদের ক্রাশ সয়ং আয়ান আরাভ চৌধুরী বিয়ে করেছে৷ যে কিনা এসব প্রেম বিয়ে আর মেয়েদের থেকে দশ হাত দূরে থাকে। পুরো মেলা ঘুরে উনি রেস্টুরেন্টে এ নিয়ে গেলেন৷ পছন্দের ডিস অর্ডার করলে উনি নিজের হাতে আমাকে খায়িয়ে দেয়। বাহিরে বের হলে শীত শীত অনূভতি হতেই, হাতের ওপর হাত দিয়ে মালিশ করতে থাকি। মিঃ চৌধুরী কাছে এসে গাড়ির থেকে চাঁদর নিয়ে আমার গায়ে জরিয়ে দেয়। আমি অবাক চোখে তাকিয়ে চাঁদরে আঙুল তাক করে বলি-

— লেডিস চাঁদর কোথায় পেলেন? (আমি)

— আমি জানি জান তুমি নিজের জন্য এতটুকু খেয়াল রাখো না। এই যে এখন শীত এ কষ্ট পাচ্ছো কে ভুগছে আমি না তুমি? ( মিঃ চৌধুরী)

— আ আমি আসলে বুঝতে পারি নি। ( আমি)

— না জান হুস আমি আছি তোমার খেয়াল রাখার জন্য। (মিঃ চৌধুরি)

কথা শেষ করেই উনি আমাকে আরেকটু কাছে টেনে নিলেন। গালে গভির চুম্বন লেপ্টে দিলেন। কানের কাছে রিনিঝিনি আওয়াজ পেয়ে চোখ খুলে দেখি, মেলায় দেখা সেই ঝুমকো গুলো। যা আমি মুগ্ধ নয়নে দেখেছি কিন্তু মিঃ চৌধুরীর ফোন আসায় তিনি কলে ব্যস্ত ছিলেন। তাই আর মুখ ফুঁটে বলি নি৷ কিন্তু মানুষটা সেটার নজর ও রেখেছে? এতটা খেয়াল কি কেউ কারো জন্য রাখতে পারে। ঝু্মঁকো গুলো আমাকে পরিয়ে দিলেন নিবির যত্নে। দু-হাতে আগলে নিলেন বুকের গভিরে। আমিও মুখ গুজে দিলাম আমার নামে লিখিত
মানুষটার বুকে। শাড়ি ভেদ করে পেটে স্লাইড করতে করতে বললেন-

— আমার গভির যতনে তোমাকে বুকে লুকিয়ে রাখবো পরি। আমার সব সুখ তোমার হোক। ভালোবাসি। আজিবন ভালোবেসে যাবো। তোমার জন্য এই মিঃ চৌধুরীর জিবন আর তার ভালোবাসা সারাজীবন লিখিত থাকবে।
#চলবে____________

ভূল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।