স্বপ্ন জুড়ে তুমি পর্ব-০৫

0
60

#স্বপ্ন_জুড়ে_তুমি
#পর্ব_৫
#সামসুন_নাহার

“আমি আমার গত ক্লাসে বলেছিলাম আমার ক্লাসে অনুপস্থিত থাকা যাবে না।যদি একান্ত ছুটির প্রয়োজন হয় তাহলে ফোন করতে বলেছিলাম।কালকে ক্লাসে কে কে আসো নাই দাঁড়াও।”

উপরক্ত কথাটি বলে ফাইয়াজ পুরো ক্লাসে নিজের দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো।পুরো ক্লাস একবার ভালো করে দেখে নিয়ে গাম্ভীর্য বজায় রেখে আবার বলল,

“কালকে কে কে আসো নাই ভদ্রলোকের মত দাঁড়াও।”

ফাইয়াজের কথা শুনে প্রিয়শা দাঁড়াল।প্রিয়শা দাঁড়ানোর পর সামনে থেকে হুমায়রা দাঁড়াল।হুমায়ারার দাঁড়ানো দেখে প্রিয়শা ফিসফিস করে সুফিয়াকে জিজ্ঞেস করলো,

“কি রে এই আবার আসে নাই কেন।”

সুফিয়াও ফিসফিস করে বলল,

“আমি কিভাবে জানবো কেন আসে নাই।আমাকে বলছে নাকি যে আমি জানব।”

“এই মেয়েটার সাথে আমার সবকিছু মিলে যায় কিভাবে।”

সুফিয়া হেসে বলল,

“তোর শুভাকাঙ্ক্ষী হয় তাই সবকিছু মিলে যায়।তোদের সবকিছু মিলে যায়। তাই তোরা যদি ফ্রেন্ড হোস তাহলে বেস্ট ফ্রেন্ডশিপ পুরস্কার পাবি।তাই ঝটপট ফ্রেন্ডশিপ করে ফেল।”

সুফিয়ার কথা শুনে প্রিয়শা দাঁত কিড়মিড়িয়ে বলল,

“হু তোর শখ কত।আমি কি-না আবার তার সাথে ফ্রেন্ডশিপ করব।প্রথমে করেছিলাম কিন্তু সেই তো ইগো দেখালো। আর আমি করব তার সাথে ফ্রেন্ডশিপ। সে করতে চাইলেও করবো না।আর তার সম্পর্কে আমাকে আর বলবি না ক্লাসে মন দে।”

প্রিয়শার কথা শুনে সুফিয়া হাসলো।সুফিয়ার হাসি শুনে প্রিয়শা সুফিয়ার পিঠে দিল এক ঘা মেরে।প্রিয়শা ক্লাসে মনোযোগ দিল।ফাইয়াজ বলল,

“তোমরা দুইজন কালকে কেন আসো নাই।”

হুমায়রা হেসে বলল,

“স্যার আমি অসুস্থ ছিলাম।তাই আসতে পারিনি।কিন্তু স্যার আমি কালকে আপনাকে ফোন করে জানিয়ে ছিলাম।”

“হুম।ফোন করেছিলে।কিন্তু পরবর্তীতে আর মিস দিও না।বসো এখন।”

“জ্বি স্যার।আর এইরকম হবে না। ”

হুমায়রা বসতেই ফাইয়াজ প্রিয়শাকে বলল,

“তুমি কালকে আসো নাই কেন।”

প্রিয়শা মুখভঙ্গি স্বাভাবিক রেখে বলল,

“স্যার কালকে ঘুরতে গিয়েছিলাম তাই আসতে পারিনি।”

“বাহ!দারুণ তো তুমি ক্লাস বাদ দিয়ে তুমি ঘুরতে যাচ্ছো।আর ছুটি নেওয়ার প্রয়োজন মনে করছো না।কালকে তুমি আমাকে ফোন দিয়েছিলে আমাকে।”

ফাইয়াজের কথা শুনে প্রিয়শা দাঁত কিড়মিড় করলো।ফাইয়াজ যে তাকে নাজেহাল করতে এমন করছে তা প্রিয়শার বুঝতে বাকি রইলো না।প্রিয়শা বলল,

“স্যার কালকে তো আমি আপনাকে…..”

প্রিয়শার কথার মাঝখানে ফাইয়াজ প্রিয়শাকে বলল,

“তুমি আমাকে ফোন করোনি।ক্লাস বাদ দিয়ে ঘুরতে গেছ।তাই শাস্তি হিসেবে তুমি কালকের মধ্যে এসাইনমেন্ট করে নিয়ে আসবা।”

ফাইয়াজের কথা শুনে প্রিয়শা অবাক হলো।প্রিয়শা বলল,

“স্যার আমি তো আপনাকে ফোন করে…”

“আমি আর কোনো কথা শুনতে চাচ্ছি না।এমনিতে আজ ক্লাসের দেরি হয়ে গেল।বসো এখন।”

প্রিয়শা বসে গেল।রাগে শরীর গিজগিজ করছে।প্রিয়শাকে রাগতে দেখে ফাইয়াজ হাসলো। ফাইয়াজের হাসি দেখে প্রিয়শা বিরক্তিতে জ্বলে উঠলো।

………………………………

“আমি কোনো এসাইনমেন্ট করতে পারব না।দিলেও করব না।”

প্রিয়শার কথায় ফাইয়াজ হেসে বলল,

“তা কি বললে হয় নাকি।তুমি কালকে ক্লাসে আসো নাই শাস্তি হিসেবে এসাইনমেন্ট করে নিয়ে আসতেই হবে তোমাকে।আর কোনো উপায় নেই।”

“করব না এসাইনমেন্ট কি করার আছে করো।”

ফাইয়াজ দুষ্টু হেসে বলল,

“কিছু করব না শুধু তোমার বাবাকে ফোন করে বলব যে তুমি ছেলেদের সাথে ঘুরতে যাও।আর আমি জানি তুমি তোমার বাবাকে কত ভয় পাও।তাই সাবধান তোমাকে এসাইনমেন্ট করে আনতেই হবে।”

ফাইয়াজের কথা শুনে প্রিয়শা দাঁত কিড়মিড় করল।অতীতের কথা মনে পরে গেল।আগে যখন ক্লাসে প্রিয়শা ক্লাসে এসাইনমেন্ট পেত তখন সব ফাইয়াজকে দিয়ে করিয়ে নিত।ফাইয়াজ করতে না চাইলেও প্রিয়শা জোর করে করিয়ে নিত।তাহলে কি ফাইয়াজ প্রতিশোধ নিচ্ছে।প্রিয়শা ভ্রুদয় কুঞ্চিত করে বলল,

“তুমি কি প্রতিশোধ নিচ্ছো।আগে তোমাকে দিয়ে এসাইনমেন্ট করাতাম বলে।”

ফাইয়াজ হেসে বলল,

“প্রতিশোধ ভাবো আর যাই মনে করো তোমাকে এসাইনমেন্ট করে আনতেই হবে।না করে আনলে তোমার কপালে দুঃখ আছে।”

ফাইয়াজের কথা শুনে প্রিয়শা পড়ল মহা বিপাকে।এই এসাইনমেন্ট করা বিরক্তিকর। আসলে যারা খুব অলস শিক্ষার্থী তাদের কাছে তো আরো বিরক্তিকর। একটা এসাইনমেন্ট হলে সে করত কিন্তু ফাইয়াজ তাকে অনেকগুলো এসাইনমেন্ট দিছে।প্রিয়শা ভাবতে লাগল কি করা যায়।হঠাৎ করে মাথায় কিছু আসতেই প্রিয়শা হেসে কন্ঠে নমনীয়তা বজায় রেখে ফাইয়াজকে বলল,

“দেখ তাহমিদ তুমি তো জানো আমি এসব লেখালেখি পছন্দ করি না।”

ফাইয়াজ ভ্রু কুচকে বলল,

“তো কি হইছে। ”

“তো তুমি আমাকে এসাইনমেন্ট দিও না।তুমি তো খুব ভালো তাই বলছি। আমার কষ্ট হোক সেটা তো তুমি চাবে না।তাই না বলো তাহমিদ।”

ফাইয়াজ পূর্ণ দৃষ্টি দিল প্রিয়শার দিকে। বোঝার চেষ্টা করছে প্রিয়শার মতিগতি।প্রিয়শা তো এত সুন্দর করে কথা বলার মেয়ে না।প্রিয়শাকে স্বাভাবিক দেখে ফাইয়াজ বলল,

“যতই তুমি সুন্দর করে কথা বলো কিছু লাভ হবে না তোমাকে এসাইনমেন্ট করতে হবেই।”

প্রিয়শা নিজের রাগ নিয়ন্ত্রণ করে বলল,

“তাহমিদ আমার কথা শুনো।”

প্রিয়শার সব আশা-ভরসা জলাঞ্জলি দিয়ে ফাইয়াজ বলল,

“তাড়াতাড়ি করে বাড়ি যাও।বাড়ি গিয়ে লেখা শুরু করো।আর খবরদার কারো থেকে লিখে নিতে চেষ্টা করবা না।আমি লেখা মেলাব ”

প্রিয়শা ফাইয়াজের দিকে রাগান্বিত চেহারা নিয়ে তাকিয়ে রাগে গিজগিজ করতে বেড়িয়ে গেল।প্রিয়শা বেড়িয়ে যেতেই ফাইয়াজ উচ্চস্বরে হাসা শুরু করলো।

………………………………

সুদীর্ঘ মাঠ জুড়ে ছোট ছোট ঘাস বিদ্যমান।সেই ঘাসের উপর বসে আছে কিছু কিছু শিক্ষার্থী। প্রিয়শা ও সুফিয়াও বসে আছে মাঠের মধ্যে।প্রিয়শা বসে বসে মাঠের ঘাস ছিড়ছে আর রাগে ফিসফাস করছে।তা দেখে সুফিয়া হেসে বলল,

“যেভাবে ঘাস ছিড়ছিস মনে হচ্ছে তোদের বাসায় কোনো গরু আছে।আর সে না খেয়ে আছে তাই এভাবে ঘাস ছিড়ছিস।”

সুফিয়ার কথা শুনে প্রিয়শা তাকালো সুফিয়ার দিকে।প্রিয়শার তাকানোকে গুরুত্ব না দিয়ে সুফিয়া আবার বলল,

“ওহ স্যরি তোদের বাসায় তো গরু নেই। তাহলে তুই নিশ্চয় এগুলো বিক্রি করে ব্যবসা করতে চাচ্ছিস।ভালো বুদ্ধি আমাকেও তোর পার্টনার বানাস হ্যাঁ। ”

সুফিয়ার কথা শুনে প্রিয়শা জোরে বলল,

“দেখ সুফিয়া মাথা গরম আছে।এখন তোর ফালতু কথা বলে আরো মাথা গরম করাস না।”

“আমি তো সেটাই জানতে চাচ্ছি কি হয়েছে।মাথা গরম কেন।আমাকে খুলে বল।”

প্রিয়শা কান্নার মত করে বলল,

“আমাকে অনেকগুলো এসাইনমেন্ট দিছে।আমি অনেক অনুরোধ করলাম তারপরও একটু কম করে দিল না।”

“ওহ!এই ব্যাপার। সেই জন্য তুই বেচারা ঘাসদের কষ্ট দিচ্ছিস।আমি অর্ধেক করে দিব।আর বাকি অর্ধেক তুই নিচে করিস।”

প্রিয়শা কাঁদোকাঁদো গলায় বলল,

“স্যার বলছে অন্য কেউ করে দিলে আব্বুর কাছে কল দিবে।”

“এই স্যার তো মহা চালাক।এইভাবে আমার জান্টুসকে কষ্ট দিচ্ছে। আমি অভিশাপ দিচ্ছি স্যারের যেন খাটাস গার্লফ্রেন্ড যেন যে তাকে নাকে দড়ি দিয়ে ঘোরাও।আর দেখতে পেত্নিদের মত হবে আর..”

সুফিয়ার মুখে এসব কথা শুনে আশ্চর্য হলো।সুফিয়া তাকে তার সামনে তার সম্পর্কে এসব বলছে।প্রিয়শা বলল,

“থাম বইন আমার।আমার সমস্যার কথা না ভেবে তুই স্যারের গার্লফ্রেন্ড নিয়ে পরলি।”

“আমি স্যারের গার্লফ্রেন্ড নিয়ে কথা বলছি তাতে তোর কি সমস্যা হচ্ছে।”

“চুপ করে থাক আমার মাথা ব্যাথা করছে।”

সুফিয়া আর কোনো কথা না বলে চুপ করে গেল।তখন একটা ছোট একটা ছেলে এসে প্রিয়শাকে বলল,

“আপু এটা তোমার জন্য।”

বলেই প্রিয়শার হাতে একটা গিফট বক্স দিয়ে দৌড়ে চলে গেল।একমুহূর্তেই কি থেকে কি হলো প্রিয়শা ও সুফিয়া বুঝল না।তারা দুইজনেই উৎসুক হয়ে তাকিয়ে আছে।সুফিয়া বলল,

“দোস্ত যদি ভেতরে যদি বোমা থাকে।তাহলে কি হবে।”

সুফিয়ার বোকা বোকা কথা শুনে প্রিয়শা বিরক্ত হয়ে বলল,

“ফালতু কথা বলা বাদ দিয়ে খুলে দেখ কি আছে।”

“আমিই কেনো।”

“দেখবি কি-না বল।”

“আচ্ছা দেখতেছি। ”

সুফিয়া র‍্যাপিং পেপার খুলে বক্সের ভেতরে দেখল অনেকগুলো চকলেট আর কলম।সুফিয়া অবাক হয়ে বলল,

“চকলেট এর সাথে আবার কলম ব্যাপার কি।”

“জানি না।”

“দ্বারা ভালো করে দেখি ভেতরে আরো কিছু আছে নাকি।”

সুফিয়া ভালো করে দেখে একটা ছোট চিরকুট পেল।সেটা সুফিয়া পড়ে হেসে বলল,

“প্রিয় প্রিয়,
আমার মন বলছে তোমার এগুলো খুব প্রয়োজন তাই তোমাকে দিয়ে পাঠালাম।আমার সাথে রাগ করে থাকিও না।কয়েকদিন কথা বলিনি তাই বলে এত অভিমান করে থাকতে হবে না।স্যরি। আর চকলেটগুলো খেও।”

ইতি তোমার ”

সুফিয়া হেসেই চলছে সমানতালে। আর প্রিয়শা রাগে আরো গিজগিজ করছে।সুফিয়া হেসে বলল,

“আহা! কত প্রেম তোদের।”

“চুপ কর।”

“চুপ কেন করব।ভাইয়া তোকে কত ভালোবাসে।তোর জন্য গিফট আর চিরকুট পাঠালো তারপরও আর রাগ করে থাকিস না।তাকে মাফ করে দে।ইশ তোকে কত ভালোবাসে। ”

“ওইগুলো ভালোবাসা না ছাই।”

“চুপ কর।ইশ ভাইয়ার মত কেউ ভালোবাসতে পারেইনা।উফ!যদি একবার দেখা করতে পারতাম।”

প্রিয়শা রাগের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বলল,

“দেখবি তুই তাকে।তাকে দেখার এত শখ তোর চল।”

সুফিয়াকে কোনো কথা বলার সুযোগ না দিয়ে প্রিয়শা তাকে টানতে টানতে ফাইয়াজের কাছে গেল।হঠাৎ করে সুফিয়া আর প্রিয়শা আসায় ফাইয়াজ খানিকটা অবাক হলো।সুফিয়া প্রিয়শাকে আস্তেধীরে বলল,

“তুই এখানে স্যারের কাছে নিয়ে আসলি কেন।বিনা পারমিশন ছাড়া।”

প্রিয়শা জোরে বলল,

“তোর ইচ্ছে ছিল তাহমিদকে দেখার।দেখ এই হচ্ছে সেই মহান ব্যক্তি যে নিজে এসাইনমেন্ট দিয়ে পরে শান্তনা গিফট দিচ্ছে।এখন বলবি, কত ভালো ভাইয়া।”

প্রিয়শার কথা শুনে সুফিয়া হা করে রইলো। মস্তিষ্ক বোঝার চেষ্টা করছে প্রিয়শার কথাগুলো।যখন কথাগুলো মস্তিষ্ক ধারন করে বুঝতে পারল তখন সুফিয়া ফাইয়াজের দিকে তাকিয়ে রইল।

ফাইয়াজ আর কি করবে। ফাইয়াজ ভাবেনি প্রিয়শা আসে এভাবে বলবে সে তো ভালো মানুষ হিসেবে গিফট পাঠিয়েছিল।কিন্তু তার পরিমান যে এতটা হবে ভাবে নি।ফাইয়াজ সুফিয়ার দিকে তাকিয়ে বোকা বোকা হেসে বলল,

“কিছু বলবে সুফিয়া।”

সুফিয়া কোনো কথা না বলে শুধু তাকিয়ে রইল প্রিয়শা আর ফাইয়াজের দিকে।তার অবাকতা যেন কাটছেই না।মানতেই চাচ্ছে না তার ক্রাশ বান্ধুবীর প্রেমিক।ক্রাশ নামক বাঁশ।সুফিয়া মনে মনে তওবা করল যে আর কারো উপর ক্রাশ খাবে না।”

“চলবে………………