স্বপ্ন জুড়ে তুমি পর্ব-০৭

0
72

#স্বপ্ন_জুড়ে_তুমি
#পর্ব_৭
#সামসুন_নাহার

পুরো ক্লাস শিক্ষার্থীরা বিদ্যমান।সবাই চুপ হয়ে ক্লাস করছে। আর ক্লাস করাচ্ছে তাহমিদ ফাইয়াজ। সবাই মনোযোগ দিয়ে ক্লাস করছে।তখন হঠাৎ করে হুমায়রা বলল,

“স্যার আপনি প্রিয়শাকে এসাইনমেন্ট করে আনতে বলেছিলেন।জমা নিবেন না স্যার।”

হুমায়রা দাঁড়িয়ে কথাটা বললে ক্লাসের সবার দৃষ্টি এখন হুমায়রার দিকে।হুমায়রার কথা শুনে প্রিয়শা তেতে উঠল।হুমায়রা সবসময় প্রিয়শার পিছনে লাগে।ফাইয়াজ কিছু করাবে তার আগেই প্রিয়শা দাঁড়িয়ে ঝাঁঝালো কণ্ঠে বলল,

“স্যার এসাইনমেন্ট করে আনতে বলছিল। স্যার এসাইনমেন্ট যখন দিতে বলবে তখন দিব তোকে কে বলতে বলছে।”

প্রিয়শার কথা শুনে হুমায়রাও ঝাঁঝালো কণ্ঠে বলল,

“অবশ্যই স্যার এসাইনমেন্ট দিছে স্যার জমা নিবে।আমি শুধু মনে করিয়ে দিলাম।”

“কেন রে স্যার কি তোকে বলছে স্যারকে বলার জন্য।আসলে জানিস কি প্রত্যেকটা ক্লাসে একজন থাকে যে সবসময় বেশি কথা বলে।আমাদের ক্লাসে তুই সেরকম। ”

“বেশি কথা বলবি না প্রিয়শা। নিশ্চয় এসাইনমেন্ট করে আনিস নাই তাই এত কথা বলতেছিস।”

“তুই জানিস আমি এসাইনমেন্ট করছি কি করি নাই।তোকে বলতে হবে নাকি। ”

“প্রয়োজনে বলতে হবে।”

“তোকে কেন…”

এদের কথার মাঝে ফাইয়াজ গাম্ভীর্য বজায় রেখে বলল,

“চুপ করো তোমরা দুইজন।কি শুরু করেছ।”

ফাইয়াজ অবাক হলো দুইজনের ঝগড়া দেখে।মেয়েরা এত ঝগড়া করতে পারে এদের না দেখলে বুঝতো না।ফাইয়াজের কথার মাঝেই হুমায়রা বলল,

“স্যার আমি কিছু করি নাই।”

ফাইয়াজ রাগ নিয়ে বলল,

“চুপ করো।আমি মানা করলাম তারপরও তোমরা কথা বলতেছ।তোমাদের সাহস দেখে আমি অবাক না হয়ে পারছি না।আমার ক্লাসে এভাবে কথা বলার সাহস কে দিল তোমাদের।”

ফাইয়াজের কথা শুনে হুমায়রা ও প্রিয়শা মাথা নিচু করল।ফাইয়াজ কিছুক্ষণ থেমে হুমায়রাকে বলল,

“তোমাকে বলেছি আমি এসাইনমেন্ট এর কথা জিজ্ঞেস করতে।তোমাকে বলেছি আমি বেশি কথা না বলতে তারপরও তুমি।”

ফাইয়াজ প্রিয়শার দিকে তাকিয়ে বলল,

“আর প্রিয়শা তোমাকে কে কথা বলতে বলেছি আমি।হুমায়রা আমাকে জিজ্ঞেস করেছে আমি উত্তর দিতাম।তোমাকে কি আমি উত্তর দিতে বলেছি।”

ফাইয়াজ লম্বা একটা শ্বাস ফেলে আবার বলল,

“তোমরা আজ যা করলে তোমাদের শাস্তি না দিলে ক্লাসের সবাই এইরকম করার সাহস পাবে।তাই তোমরা দুইজন ক্লাসের বাইরে দাঁড়িয়ে পুরো ক্লাস করবে।”

হুমায়রা বলল,

“কিন্তু স্যার।”

“কোনো কথা শুনতে চাচ্ছি না।বাইরে যাও দুইজনই কোনো কথা আর শুনতে চাচ্ছি না।”

হুমায়রা আর প্রিয়শা বাইরে গিয়ে দাঁড়ালো। দুইজন দুইজনকে দেখে দুইদিকে মুখ করে দাঁড়িয়ে পুরো ক্লাস করল।

ক্লাস শেষ হয়ে গেছে তবুও প্রিয়শার অনেক রেগে আছে।হুমায়রার জন্য তো রাগ লাগতেছে কিন্তু বেশি লাগতেছে ফাইয়াজের জন্য।কই ফাইয়াজ তো তার পক্ষ নিল না উল্টো ক্লাস থেকে বের করে দিল।

প্রিয়শা বাড়ির উদ্দেশ্য হাঁটছে তখন প্রিয়শার ফোনে ম্যাসেজ ফাইয়াজ বার্তা পাঠাল,

“আমার গাড়ির কাছে অপেক্ষা করো।আমরা লাঞ্চ করব।”

“পারব না।”

“শর্তর কথা ভুলে গেছ।তিনটে শর্তর মধ্যে এটা একটা শর্ত।নাহলে জানো তো কি হবে। ”

শর্তর কথা শুনে প্রিয়শার আরও রাগ উঠলো। কিন্তু তা নিয়ন্ত্রণ করে গাড়ির কাছে গিয়ে দাঁড়ালো। কিছুক্ষণ পর ফাইয়াজ আসলে দুইজনেই গাড়িতে উঠল।গাড়িতে উঠার পর ফাইয়াজ দেখল প্রিয়শা মুখ ফুলিয়ে আছে।ফাইয়াজ হেসে প্রিয়শাকে বলল,

“কি হয়েছে প্রিয়।তোমার মুখ এইরকম দেখাচ্ছে না।রাগ করে আছো।”

প্রিয়শা কোনো কথা না বলে চুপ করে আছে।ফাইয়াজ আবার বলল,

“আচ্ছা থাক বলতে হবে না।”

গাড়ি আপন গতিতে চলতে লাগলো। কিছুক্ষণ পর গাড়ি এসে একটা রেস্টুরেন্ট এর সামনে থামল।প্রিয়শা ও ফাইয়াজ ভেতরে ঢুকল।ফাইয়াজ খাবার অর্ডার দিল।প্রিয়শা সবকিছু চুপ করে দেখছে।প্রিয়শা শর্তর জন্য রাজি নাহলে আজ অন্তত আসতো না।ফাইয়াজ ও প্রিয়শা পাশাপাশি বসেছে।ফাইয়াজ প্রিয়শার দিকে ঘুরে বলল,

“প্রিয় তুমি অযথাই রাগ করে আছো।”

“আমি কি বলেছি আমি রাগ করে আছি।”

“সবকিছু বলতে হয়না প্রিয়।বুঝতে হয় কিছু কথা।

” সবাই বুঝে না।”

“আমি জানি তুমি আমার উপর রাগ করে আছো।আচ্ছা তুমি একটা কথা ভাবো তো আজকে ক্লাসে হুমায়রা যখন প্রথমে কথা বলল তখন আমিই তাকে কিছু বলতাম।কিন্তু তুমি আমাকে কোনো কথা বলার সুযোগ না দিয়ে তুমি ঝগড়া করলে।ক্লাসে কি এইরকম করে কথা বলার নিয়ম আছে।একবার আমার দিক বিবেচনা করো আমি তোমাদের শাস্তি না দিলে সবাই এইরকম করার সাহস পেত।”

প্রিয়তা কোনো কথা না বলে চুপ করে আছে। ফাইয়াজ আবার বলল,

“বুঝছো তুমি।”

“আমি অবুঝ না। আমি বুঝি সবকিছু।”

প্রিয়শার কথা শুনে ফাইয়াজ মুচকি হাসলো। মুচকি হেসে বলল,

“হুম শুধু আমাকে বুঝনা।”

খাবার চলে আসায় প্রিয়শা আর কোনো কথা বলল না।খেতে খেতে প্রিয়শা বলল,

“তোমার বাসায় সবাই কেমন আছে।”

“সবাই ভালো আছে।”

“তোমার বাবা।”

“আমার বাবাও ভালো আছে।হঠাৎ বাবার কথা জিজ্ঞেস করলে।”

“তুমি তো তোমার বাবা-মায়ের ভালো ছেলে তাহলে তোমার আব্বুর কথা শুনলে না কেন।”

ফাইয়াজ ভ্রু কুচকে বলল,

“কি বলতে চাচ্ছো ভালো করে বলো।এত ঘুরিয়ে পেচিয়ে বলার কি আছে।”

“তোমার আব্বু তো তোমার জন্য অনেক সুন্দর মেয়ের সাথে তোমার বিয়ে ঠিক করছিল।তাহলে রাজি হলে না কেন।”

“তোমাকে এসব কথা কে বলেছে।”

“বলেছে কেউ একজন।”

“নিশ্চয় ফিজা বলেছে। তাছাড়া তুমি তো আমাদের পরিবারের কাউকে চিন না।”

“জানোই যখন কে বলেছে তাহলে আবার কেনো জিজ্ঞেস করতেছ।আমি যেই প্রশ্ন করেছি সেই প্রশ্নের জবাব দাও।”

“তুমি জানতে চাও কেন আমি আমার আব্বুর প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছি।”

“হুম। জানতে চাইলে বলে তো জিনিস করেছি।”

“বেশ বলব। তবে আগে খেয়ে নেই।”

প্রিয়শা আর কোনো কথা না বলে খাওয়ায় মনোনিবেশ করল।দুইজনের খাওয়া শেষ হলে ফাইয়াজ বলল,

“তাহলে বলি এখন। ”

“বলো।”

ফাইয়াজ প্রিয়শার দিকে ঘুরে নিজের দুই হাত প্রিয়শার গালে রাখল।প্রিয়শা আবেশে চোখ বন্ধ করলো। ফাইয়াজ নেশাক্ত কন্ঠে মোহময় কন্ঠে বলল,

“আমার আব্বুর প্রস্তাবকে প্রত্যাখ্যান করেছি কারন আমি প্রিয় নামক এক মেয়েকে অসম্ভব ভালোবাসি।যে আমার সবকিছু জুড়ে বিদ্যমান।আমার #স্বপ্ন_জুড়ে_তুমি।আমি তোমাকে ভালোবাসি প্রিয়।”

ফাইয়াজের কথা শুনে প্রিয়শার শরীরে এক হিমশীতল বাতাশ বয়ে গেল।বুকের মধ্যে দিরিম দিরিম শব্দ বেড়ে যাচ্ছে।প্রিয়শা নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে নিজের হাত মুষ্টিবদ্ধ করল।ফাইয়াজ আবার নেশাক্ত কন্ঠে আবার বলল,

“আমি তোমাকে ভালোবাসি আর আজীবন ভালোবাসব।আমি জানি তুমি আমার উপর রাগ করে আছো।তবে সেই রাগ তুমি বেশিদিন টিকবে না।আমি তোমার রাগ ভাঙ্গিয়ে নিজের করে নিব।এখন বুঝছো কেন আমি আমার আব্বুকে মানা করেছিলাম।”

#চলবে…………..