#স্বপ্ন_জুড়ে_তুমি
#পর্ব_১২
#সামসুন_নাহার
মানুষ যখন অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে কোনোকিছু পেয়ে যায় তখন মানুষ খুব আশ্চর্যজনক অবাক হয়ে যায়।আবার কোনোভাবে অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে নিজের পছন্দের কিছু পেলেই কোনো কথায় নেই।তেমনিভাবে প্রিয়শা অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে দেখা পেল এক মানবীর।
প্রিয়শার মুখ দিয়ে কথায় বের হচ্ছে না।প্রিয়শা হঠাৎ করে তার বিছানায় অবস্থানরত মানবীর উপর ঝাপিয়ে পরল।অপর পাশের ব্যক্তিও প্রিয়শাকে আগলে নিল।পাঁচ মিনিট অতিবাহিত হওয়ার পর প্রিয়শা মানবীকে ছেড়ে দিয়ে অতি উৎসাহের সহিত মুখে হাসির রেখা টেনে এক নিশ্বাসে বলল,
“মনি তুমি কখন আসছ।এতদিন পরে কেউ আসে।তুমি তোমার প্রানের প্রিয়কে ভুলে গেছ।তুমি শুধু মুখেই বলো যে তুমি আমাকে ভালোবাসো।আমাকে ভালোবাসলে তুমি এতদিন পর আসতে না।আমাকে তুমি সত্যিই ভুলে গেছ।”
প্রিয়শার কথায় আয়শা হাসলেন।হেসে প্রিয়শার মাথায় হাত রেখে হেসে বললেন,
“নাটক কম কর।এত কথা বাদ দিয়ে বল কেমন আছিস?”
“তোমাকে দেখে এখন দারুণ হয়ে গেছি।”
“কেমন লাগল আমার সারপ্রাইজ? ”
প্রিয়শা তার মনির কাঁধে মাথা রেখে হেসে বলল,
“তোমার মত দারুণ লেগেছে সারপ্রাইজ। আর তোমাকে দেখে আমি তরতাজা ভালো হয়ে গেছি।কিন্তু তুমি অনেক দিন পর আসলে কেন?জানো তোমাকে কত্ত মিস করেছি।”
“আমি জানি তো আমার প্রিয় আমাকে অনেক মিস করেছে। তাই তো তার জন্মদিনের দিন ছুটে চলে এলাম।তোর আনন্দকে বাড়িয়ে দেওয়ার জন্য।ভালো করেছি না বল।”
“অনেক ভালো করেছ।এইরকম মাঝে মাঝে আসবে।তোমাকে তো আমরা অনেক মিস করি।আচ্ছা তোমার পাকনা মেয়ে কই।”
“সে তো এখন তোর মায়ের কাছে।তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে হয়ে আয়। আদিলের সাথেও কথা হয়নি এখনো। তোর সাথে আগে দেখা করতে আসলাম।আজকে তোর আর আদিলের পছন্দের সব রান্না হবে।”
প্রিয়শা কিছুটা মুখ ভার করে বলল,
“আব্বু বাসায় আছে।আব্বু করতে দিবে না।”
“তোর আব্বু বাসায় আছে তো কি হয়েছে। তোর মা তোর আব্বুকে ভয় পেতে পারে তবে আমি না।আমিও দেখব তোর আব্বু আমাকে কিভাবে রান্না করা বাধা দেয়।আজ যদি তোদের পছন্দের সব খাবার না খাওয়াতে পারি তো আমি তোদের মনি না।”
“মনি তুমি পারবে।”
“কোনো সন্দেহ। আজ আমরা অনেক মজা করব।তোর আব্বু আমাদের মানা করতেও পারবে না।আমরা আমরা অনেক মজা করব। তোর আব্বু দেখিবে আর লুচির মত ফুলবে।তোর আব্বু আমাকে চিনে না।হু!”
“আচ্ছা তুমি আব্বুকে কেন ভয় পাওনা।”
“যে ভয় পায় তাকে সবাই ভয় দেখায়।তাই কখনো ভয় পেতে হয়না।”
প্রিয়শা আয়শাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলল,
“ইউ আর দ্যা বেস্ট মনি।এইজন্য আমি তোমাকে এত্ত এত্ত ভালোবাসি।”
আয়শাও প্রিয়শাকে জড়িয়ে ধরলেন।প্রিয়শা ও আদিলের হাসিমুখ তার অনেক পছন্দের। নিজের ভাগ্নীর জন্য তিনি এতটুকু করতেই পারেন।
“এই তুমি আমার আম্মুকে জড়িয়ে ধরছ কেন।”
হঠাৎ করে উপরক্ত কথাটি শুনে আয়শা ও প্রিয়শা দরজার দিকে তাকালো। দেখল মাথায় দুই ঝুঁটি করা সুন্দর একটি মেয়ে কোমরে হাত ধরে আছে।আয়শা ও প্রিয়শা মায়াকে দেখে একসঙ্গে হেসে উঠল।প্রিয়শা আয়শাকে আবার জড়িয়ে ধরে বলল,
“আমি আমার মনিকে জড়িয়ে ধরব।তোমাকে কেন বলতে যাব।আমার মনি এটা।আমার মনিকে ছাড়ব না।”
মেয়েটি প্রিয়শার কাছে এসে প্রিয়শাকে সরিয়ে দিয়ে নিজের মা’কে জড়িয়ে ধরে বলল,
“না এটা তোমার মনি না।এটা আমার আম্মু।আমার আম্মুকে তুমি মনি বলে ডাকবে না।”
প্রিয়শা বিজ্ঞদের মত করে গালে এক আঙ্গুল দিয়ে বলল,
“জানো মায়া তুমি যখন ছিলে না।তখন আমার মনি আমাকে আর আদিলকে অনেক ভালোবাসতো।অনেক অনেক খাবার আনত,ঘুরতে নিয়ে যেত আরও অনেক কিছু।একদিন আমি, আদিল ও মনি ঘুরতে গেছিলাম। তখন দেখলাম রাস্তায় ছোট মিষ্টি একটা মেয়ে কান্না করতেছে। মেয়েটির কি সুন্দর মায়াময় মুখ।আমরা মেয়েটিকে কোলে নিয়ে বাসায় নিয়ে এসে মেয়েটির নাম রাখলাম মায়া।এখন মেয়েটি আমার সামনে দাঁড়িয়ে। ”
প্রিয়শার কথা শুনে মায়া ঠোঁট ফুলিয়ে কান্না শুরু করে দিল।কান্না করতে করতে বলল,
“আম্মু আপি কি সত্যি বলছে।”
আয়শা প্রিয়শাকে হালকা চাপর মেরে বললেন,
“তোমাকে কান্না করানোর জন্য তোমার আপি মিথ্যে কথা বলছে। আর তুমি সত্যি সত্যি কান্না করতেছ।তুমি যদি কান্না করো তাহলে সবাই তোমাকে বেশি করে ভয় দেখাবে।তাই কখনো অযথা ভয় পেওনা।”
মায়ের কথা শুনে মায়া নিজের চোখের পানি মুছে প্রিয়শাকে কিছু বলবে তার আগেই আয়শা বললেন,
“তোমরা দুইজন এখন আর কোনো কথা বলবে না।একজন জার্নি করে আসছ, আর একজন ঘুম থেকে উঠছ কিন্তু কেউ ফ্রেশ হওনি।আগে ফ্রেশ হবে তারপর কথা বলবে।যাও দুইজনেই।”
আয়শার কথা শুনে প্রিয়শা ও মায়া কেউ কোনো কথা না বলে ফ্রেশ হতে গেল।আর আয়শা নিজের কাজে গেল।
…………………………………..
“আমি বলে দিচ্ছি।তুমি আজ কোথাও যাবে না।”
সাইদুর রহমানের কথায় প্রিয়শা কিছুটা মুখ ভার করে বলল,
“আব্বু আজকে একটা ইম্পর্ট্যান্ট ক্লাস আছে ও পরীক্ষাও আছে।যাই না আব্বু।”
সাইদুর রহমান তেজ নিয়ে গম্ভীর কন্ঠে বললেন,
“একবার বলেছি না।এক কথা কয়বার বলতে হবে শুনি।”
প্রিয়শা মুখ ভার করে মন খারাপ করল।সে তো মিথ্যে বলছে।কারন বাসা থেকে বের না হলে ফাইয়াজের সাথে যেতে পারবে না।তাই একটু মিথ্যে বলা।প্রিয়শা মুখ ভার করে নিজের ঘরে যাচ্ছিল তখন আয়শা প্রিয়শাকে থামিয়ে সাইদুর রহমানের উদ্দেশ্যে বলল,
“প্রিয়শা তো বলল ওর পরীক্ষা আছে। ও তো আর এমনি এমনি যেতে যাচ্ছে না।প্রিয়শা যখন যেতে চাচ্ছে তখন প্রিয়শা যাবেই।”
তারপর আয়শা প্রিয়শাকে উদ্দেশ্য করে বলল,
“প্রিয় তুই যা। আমি দেখি তোকে কে বাধা দেয়।”
প্রিয়শা কি করবে ভেবে পাচ্ছে না।একবার নিজের আব্বুর রাগ্বানিত চেহারা দেখল আর একবার নিজের মনির তেজের মুখ দেখে প্রিয়শা মিনমিন করে বলল,
“থাক মনি।আব্বু যখন চাচ্ছে না তখন আমি আজ ভার্সিটি যাব না।আমি আজ বাসায় থাকি।”
আয়শা তেজের সাথে একটু জোরে প্রিয়শার উদ্দেশ্যে বললেন,
“বেশি কথা বলা শিখে গেছিস।আমি তোকে তোর কাজে যেতে বলেছি।তুই যাবি।তোর পড়া আগে তারপর বাকি কিছু। ”
তারপর তিনি সাইদুর রহমানের উদ্দেশ্যে বললেন,
“দেখছ দুলাভাই তুমি বলছ দেখে তোমার মেয়ে যেতে চাচ্ছে না।কিন্তু তুমি তোমার মেয়ের জন্য সামান্য পারমিশন দিতে পারছ না।তবে আজ তোমার অনুমতির প্রয়োজন পরবে না।আমি ওকে যেতে বললাম আজকে দেখি প্রিয়শাকে আজ কে বাসায় রাখতে পারে।”
সাইদুর রহমান গম্ভীর স্বরে বললেন,
“আয়শা তুমি আমার মুখের উপর কথা বলছ।যেখানে তোমার বোন আমার মুখের উপর কথা বলার সাহস পায়না।”
“আমি সবসময় এভাবেই কথা বলি।আমাকে আপার মত মনে করে ভুলে করিও না।আপা সবকিছুতে চুপ থাকে বলে আমিও চুপ থাকব তা নয়।আপা যদি আগে থেকে প্রতিবাদ করত তাহলে তুমি আমার আপার সাথে এভাবে কথা বলার সাহস করতে না।”
“কি বলতে চাচ্ছ তুমি।আমি তোমার আপার সাথে কিভাবে কথা বলি।ডাকো আতিফাকে বলুক সে তার সাথে আমি কেমন করে কথা বলি।”
“আপাকে ডাকতে হবে কেন।আমাদের কি চোখ নেই। আমরা কি চোখে দেখি না।আপার সাথে তুমি এমনভাবে কথা বলো যেন আপা এই বাড়ির কেউ না।মতামতের কোনো গুরুত্ব নেই।তবুও আপা তোমার বিরুদ্ধে কোনো কথা কোনোদিন বলবে না।এতই ভালো আমার আপা।”
নিজের বয়সের ছোট মেয়ের কাছে এইরকম কথা শুনে সাইদুর রহমানের রাগ তরতর করে বেরে যাচ্ছে।এই বাড়িতে কেউ তার মুখের উপর কেউ কথা বলেনা সেখানে আয়শা কয়েকদিনের মেহমান হয়ে আসে তাকে অপমান করছে।সাইদুর রহমান ত্যাড়াভাবে বললেন,
“মেহমান হয়ে আসছ মেহমান হয়ে থাকো।পরিবারের বিষয়ে কথা বলবে না।”
আয়শা তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে বললেন,
“অবশ্যই আমি মেহমান হয়ে থাকতে চাই।যদি তুমি তোমাদের পরিবারের ঝামেলা আমার সামনে করতে না।আমার সামনে এসব কিছু হয়েছে তাই আমি কথা বলেছি।নাহলে আমার মত মেয়ে কথা বলত না।”
তারপর তিনি প্রিয়শার উদ্দেশ্যে বললেন,
“চল প্রিয়।এখানে দাঁড়িয়ে থেকে কোনো লাভ হবে না।”
প্রিয়শা অবাক নয়নে এতক্ষণ তাকিয়ে ছিল তার মনির দিকে। তার মনি কি সাহসের সাথে তার আব্বুর সাথে কথা বলল কিন্তু সে এই জায়গায় থাকলে কিছু বলতে পারত না।
সাইদুর রহমান অপমানিত হয়ে হতবাক হয়ে গেলেন।তিনি রাগে ফেটে যাচ্ছেন।ক্রোধের সাথে নিজের স্ত্রীকে দেখে রাগে গিজগিজ করতে করতে নিজের রুনে চলে গেলেন।
পিছনে রেখে গেলেন আতিফা বেগমের অসহায় মুখ।তিনি স্বামীর পক্ষে যেতে পারেন না।আবার বোনের পক্ষেই না।দুইজনেই একসাথে হলে এই রকম কথা কাটাকাটি হয়।কেউ কাউকে ছেড়ে কথা বলে না।আয়শা আসলে আতিফা বেগম ভয়ে ভয়ে থাকেন। কারন যখন তখন দুইজনের মধ্যে তর্ক লেগে যায়।আতিফা ভেবে পায়না তার মত শান্তশিষ্ট মেয়ের বোন এত বাঁচাল ও চঞ্চল হয় কিভাবে।তিনি এসব ভেবে দীর্ঘশ্বাস ফেললেন।
……………………………………..
ফাইয়াজ অনবরত কল দিয়ে যাচ্ছে প্রিয়শাকে।প্রিয়শা বিরক্ত হয়ে কল রিসিভ করতেই ফাইয়াজ ফোনের অপাশ থেকে বলে উঠল,
“মনে আছে তো আজ আমরা ঘুরতে যাব।”
প্রিয়শা বিরক্ত হয়ে গেল ফাইয়াজের কথা শুনে। এইবার সহ ফাইয়াজ যে কয়বার এই কথাটি বলেছে তার হিসেব নেই।প্রিয়শা বিরক্তি দমন করে বলল,
“হ্যাঁ মনে আছে।আর কতবার জিজ্ঞেস করবে।আর একবার এই কথা জিজ্ঞেস করলে আমি আর যাব না।”
ফাইয়াজ ঠোঁট উলটে বলল,
“এভাবে বলে না প্রিয়।তুমি এভাবে বললে আমার হার্ট কষ্ট পায়।তুমি বুঝো না কেন।এত নিষ্ঠুর তুমি।”
“তুমি এই পর্যন্ত কতবার কল করেছ আমাকে।”
“হবে হয়তো দুই-তিনবার।”
“দুই-তিনবার না পুরো ছয়বার।”
“আচ্ছা আর করব না কল।তবে চলে আসো সময় মত।কোথায় আছো এখন তুমি। ”
“আমি মাঠে আছি।ক্লাস শেষে তোমার জন্য অপেক্ষা করব। ঠিক আছে।”
“তোমার জন্য সুন্দর সময় অপেক্ষা করছে প্রিয়।আমাদের অপেক্ষা যেন পূর্ণতা পায়।তোমাকে নিজের করে পাওয়ার স্বপ্ন পূরন না হওয়া অব্ধি আমি শান্তি পাচ্ছি না প্রিয়।”
“ভবিষ্যতের কথা বলতে পারছি না।তবে আমরা আমাদের অপেক্ষাদের পূর্ণতা দিবই।কেউ আমাদের আলাদা করতে পারবে না।”
“ওকে ম্যাডাম। ভালোবাসি অনেক প্রিয়।আমার থেকেও বেশি।আমার প্রিয়’র যত্ন নিও।”
“হুম রাখি এখন।”
প্রিয়শা মাঠে হাঁটছিল আর ফোনে কথা বলছিল।হঠাৎ করে কারো সাথে ধাক্কা লাগায় প্রিয়শা পরে যেতে ধরতেই সামনের ব্যক্তি প্রিয়শার হাত শক্ত করে ধরল।
প্রিয়শা ভয়ে চোখমুখ বন্ধ করে থাকল।কিছুক্ষণ পর প্রিয়শা চোখ খুলে সোজা হয়ে দাঁড়াল।সামনে দাঁড়ানো ব্যক্তিকে দেখে প্রিয়শা অবাক হয়ে গেল।তার মন জানান দিচ্ছে তুই ভুল দেখছিস।কিন্তু না সে ভুল দেখছে না।কিন্তু ব্যক্তিকে এই মুহূর্তে এইখানে কি করছে ভেবে পাচ্ছে না প্রিয়শা।
কিন্তু এই ব্যক্তিকে এই মুহুর্তে একটুও আশা করেনি প্রিয়শা।
#চলবে……………………
#স্বপ্ন_জুড়ে_তুমি
#পর্ব_১৩
#সামসুন_নাহার
প্রিয়শা তার জন্মদিনে অবাকের পর অবাক হচ্ছে।প্রথমে ফাইয়াজের কাছ থেকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা। তারপর কিছুক্ষণ তাদের সুন্দর জ্যোৎস্নাময় ক্ষণ। আদিল ও তার মনির কাছ থেকে অনেক অনেক সুন্দর মুহূর্ত কাটিয়েছে।আবার এই যে এখন এই মুহুর্তে সামনে দাঁড়ানো ব্যক্তিকে দেখে আবার অবাক হলো।আজকে শুধু প্রিয়শার বিষ্ময় হওয়ার দিন।
প্রিয়শার ভাবনার মাঝেই সামনের ব্যক্তিটি অনেক উচ্ছাসের সাথে বলে উঠল,
“শুভ জন্মদিন প্রিয়শা।” ”
প্রিয়শা নিজের অবাকতাকে দূরে রেখে হেসে বলল
“ধন্যবাদ।কিন্তু তুমি এখানে।”
“তোকে সারপ্রাইজ করতে আসলাম। কেমন লাগল আমার সারপ্রাইজ। ”
“দারুণ লাগল তোমার সারপ্রাইজ। ”
“আরও সারপ্রাইজ বাকি আছে।”
প্রিয়শা উৎসুকের মত চেয়ে বলল,
“কি সারপ্রাইজ। ”
“আব্বু আম্মু আসছে। ”
প্রিয়শা খুশি হয়ে বলল,
“কোথায় আছে আঙ্কেল আন্টি।”
“সেটা দেখলে বুঝতে পারবে।চলো এখন আমার সাথে বাড়ি যাবে।”
বাড়ি যাওয়ার কথা শুনে প্রিয়শার মুখ চুপসে গেল। এখন বাড়ি গেলে ফাইয়াজের সাথে যাওয়া হবে না।ফাইয়াজের সাথে না গেলে ফাইয়াজ মন খারাপ করবে।তাছাড়া ফাইয়াজ এই ঘুরতে যাওয়া নিয়ে খুবই উত্তেজিত খুশি হয়ে আছে।এই পর্যন্ত ফাইয়াজ অনেকবার প্রিয়শাকে বলেছে।প্রিয়শা কিভাবে ফাইয়াজকে মানা করবে।প্রিয়শা মুখাবয়ব স্বাভাবিক রেখে বলল,
“আচ্ছা তোমাকে কে বলল আমি এখানে আছি।”
“আঙ্কেল বলল।তাই আমরা তোমাদের বাড়ি না গিয়ে সোজা তোমাকে নিতে আসলাম।”
“তোমরা মানে।আর কে কে আছে?”
“আমি আর আব্বু-আম্মু আর আনিসা।আব্বু-আম্মু গাড়িতে অপেক্ষা করছে আমাদের জন্য।তাড়াতাড়ি চলো।”
প্রিয়শা কি করবে ভেবে পাচ্ছে না।কাকে মানা করবে।আর কার সাথে যাবে।হঠাৎ প্রিয়শার ফোনে কল আসলে প্রিয়শা নিজের ভাবনা থেকে বের হয়ে কল রিসিভ করতেই প্রিয়শার আব্বু থমথমে গলায় বলে উঠল,
“আরহান গেছে তোমাকে আনতে। চলে আসবে তার সাথে।সকালে তোমার মনির কথা শুনে ভার্সিটি গেছ। কিছু বলিনি।তাই ভেব না কিছু বলব না।আরহানের সাথে চলে আসবে।রাখছি এখন।”
উপরক্ত কথাটি বলে কল কেটে দিলেন।প্রিয়শা ভাবনায় পড়ে গেল।তার আব্বু ঝড়ের গতিতে কল দিল আর ঝড়ের গতিতে কথা নলে কল কেটে দিল।এখন তার আর কোনো উপায় নাই।যেতেই হবে এদের সাথে।আর ফাইয়াজকে সে কিভাবে ম্যানেজ করবে।এমনিতে ফাইয়াজ অনেক ভয়ে আছে তাকে নিয়ে তাদের সম্পর্ক নিয়ে।এখন এখান থেকে যাবে কিভাবে।
প্রিয়শা এসব ভাবতে ভাবতে সুফিয়াকে দেখল।
সুফিয়া শুধু বোকার মত এতক্ষণ দুইজনের কিথা শুনেই যাচ্ছিল।কিছু বুঝতেছিল না।হঠাৎ করে প্রিয়শার মাথায় কিছু বুদ্ধি খেললে প্রিয়শা সুফিয়াকে উদ্দেশ্য করে বলল,
“সুফিয়া এই হচ্ছে আমার আব্বুর বন্ধুর ছেলে আরহান শেখ।আমাকে নিতে আসছে।তোকে বলেছিলাম না।”
প্রিয়শা আরহানের উদ্দেশ্যে বলল,
“আরহান ভাইয়া এই হচ্ছে আমার বেস্টু সুফিয়া রাত্রী।তোমরা কথা বলো আমি আসছি একটু।”
বলেই প্রিয়শা দিলে এক দৌড়। আরহান ও সুফিয়া প্রিয়শার দৌড় দেখল শুধু কিছু বলার সুযোগ পেল না।”
…………………………………..
“প্রিয় কিছু বলবে।বলার থাকলে বলো। এভাবে চুপ করে থেকো না।”
প্রিয়শা কিছু না বলে পানি খেল।প্রিয়শার গলা শুকিয়ে যাচ্ছে।ভেবে পাচ্ছে না সে ফাইয়াজকে মানা করবে কিভাবে।ফাইয়াজ শুনে হয়তো রিয়েক্ট করবে অনেক।মনে কষ্ট পেতে পারে।কিন্তু ফাইয়াজকে তো বলতে হবেই।হাতে সময় কম। প্রিয়শা নিজেকে শক্ত করে সাহস জুগিয়ে বলল,
“তাহমিদ আমি একটা কথা বলতে চাই।”
ফাইয়াজ কাজ করতে করতে বলল,
“তোমাকে তো বলতে বলছি। বলো কি কথা বলার জন্য তোমাকে এতবার ভাবতে হয়।”
“তাহমিদ আমি আজ তোমার সাথে যেতে পারব না।”
ফাইয়াজের বুক ধ্বক করে উঠল।হৃৎপিণ্ডের গতি বেড়ে গেল।নিশ্চয় প্রিয়শা মজা করছে।তাই ফাইয়াজ নিজের কাজ করতে করতে মুখ গম্ভীর করে বলল,
“এসব মজা করিও না।এসব মজা আমার ভালো লাগে না।”
“আমি মজা করছি না। আমি সত্যিই যেতেই পারব না।”
“দেখো প্রিয়।আমি কিন্তু আর তোমাকে ফোন দেয়নি। তাই তুমি এসব বলতে পারো না।”
“আমি সত্যিই যেতে পারব না তাহমিদ।”
ফাইয়াজ তড়িৎ গতিতে প্রিয়শার দিকে তাকাল।প্রিয়শা তৎক্ষনাৎ চোখ নামিয়ে নিল।ফাইয়াজ বুঝল প্রিয়শা সত্যি বলেছে।কিন্তু কেনো যেতে পারবে না।তবে কথা কেন দিল।কেন এভাবে তাকে কথা দিয়ে কথা রাখল না।ফাইয়াজ কোনোরকমে নিজেকে শক্ত করে রাখল।লম্বা একটা নিশ্বাস ফেলে ফাইয়াজ প্রিয়শাকে জিজ্ঞেস করে বলল,
“কেনো যেতে পারবে না।যখন যেতে পারবেই না আমাকে কথা কেনো দিয়েছিলে।আমাকে আশা কেনো দেখিয়েছ।”
প্রিয়শা কোনো কথা বলল না।কি’বা জবাব দিবে।প্রিয়শা কি জানত আরহান তাকে নিতে আসবে।প্রিয়শা কোনো কথা বলছে না দেখে ফাইয়াজ অসহায়ের মত আবার বলল,
“বলো কেনো যাবে না।”
প্রিয়শা মাথা নিচু করেই বলল,
“আমাকে নিতে আসছে।আমাকে বাড়ি যেতে হবে।”
“কে তোমাকে নিতে আসছে।নিতে আসলে যেতে হবে নাকি তোমাকে।তাকে বলে দাও তুমি যাবে না।”
“বললেই তো আর হয় না।আমি কিভাবে তাদেরকে বলব যে আমি তোমাদের সাথে যেতে পারব না।আমি বলতে পারব না।”
ফাইয়াজ অসহায়ের মত চেয়ে বলল,
“তুমি এইটুকু বলতে পারবে না।”
প্রিয়শা আবার কোনো কথা বলল না।প্রিয়শার মৌনতাকে তার বাড়ি ফেরার লক্ষণ হিসেবে ধরে নিয়ে ফাইয়াজ বলল,
“কে তোমাকে নিতে আসছে।”
“আরহান ভাইয়া।”
ফাইয়াজের ভ্রুদ্বয় কুঞ্চিত হলো।কে এই আরহান। আগে তো কখনো নাম শোনেনি। ফাইয়াজ ভ্রু কুঞ্চিত রেখেই বলল,
“কে এই আরহান।”
“আব্বুর বন্ধুর ছেলে।আমাদের পরিবারেরে সাথে তাদের ভালো বন্ডিং। ”
“আব্বুর বন্ধুর ছেলে আসছে তোমাকে নিতে তাই তুমি তার সাথে যেতে চাচ্ছ।আমি এত আশা করে আছি আমাকে তুমি মানা করে দিলে অথচ তোমার আব্বু বন্ধুর ছেলেকে মানা করতে পারবে না।দারুণ ব্যাপার না।”
প্রিয়শা জানত ফাইয়াজ এমন কথা বলবে।যেখানে ফাইয়াজ অনেক আশা নিয়ে ছিল তখন হঠাৎ করে না যাওয়ার কথা শুনলে এইরকম করাটা স্বাভাবিক।
ফাইয়াজ আবার বলল,
“তুমি সত্যি এখন চলে যাবে।যেও না প্রিয়।আমি অনেক আশা নিয়ে ছিলাম।এভাবে সবকিছু মিথ্যে করে দিও না।”
“আমরা অন্যদিন যাব।অবশ্যই আমাদের আশা পূরণ হবে।”
ফাইয়াজ তাচ্ছিল্যের সাথে বলল,
“হ্যাঁ সেদিনও কেউ আসবে আর তুমি তার ইচ্ছে পূরণ। আমার ইচ্ছের কোনো দাম দিবে না।”
প্রিয়শা কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না।ফাইয়াজ যে অভিমানে এসব কথা বলছে।প্রিয়শা ফাইয়াজকে আশ্বাস দিয়ে বলল,
“আমি বুঝতে পারছি তোমার খারাপ লাগছে।আমি জানি তুমি খুবই খুশি ছিলে।আমার নিজেরও খুব ইচ্ছে ছিল যাওয়ার। কিন্তু হঠাৎ করে আরহান ভাই চলে আসছে আমাকে নিয়ে যাওয়ার জন্য।আর আব্বুও কল দিচ্ছে বারবার। তাই আমি বাধ্য হয়ে যাচ্ছি। নাহলে আমি আজ তোমার সাথে যেতাম।”
“তুমি একা যাবে আরহানের সঙ্গে। ”
“না।ওদের পুরো পরিবার আসছে।আমার জন্য অপেক্ষা করছে।”
ফাইয়াজ কোনো কথা না বলে চুপ করে বসে গেল।মাথা কাজ করছে না।কত আশা নিয়ে ছিল।এভাবে আশা ভঙ্গ হবে ভাবতেই পারেনি।প্রিয়শাকে হারানোর ভয় তার মনে তীব্রভাবে জেঁকে ধরছে। কথা বলার ভাষা খুঁজে পাচ্ছে না।কিছুক্ষণ চুপ করে থাকার পর ফাইয়াজ খুব অনুনয়ের সঙ্গে বলল,
“প্রিয় তুমি সাথে যেও না।তুমি চলে গিয়ে আমার মনের ভয়টাকে বৃদ্ধি করে দিও না।আমাদের প্রনয়নের পূর্ণতা নিয়ে দিন দিন ভয় আমার বেড়ে যাচ্ছে।আরও জেঁকে ধরছে।আমি তোমাকে ছাড়া শেষ হয়ে যাব।তুমি ছাড়া আমার অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যাবে।”
কথাটি বলে ফাইয়াজ প্রিয়শার দিকে তাকাল।তাকিয়ে দেখল প্রিয়শা ফোনে কথা বলছে।তারমানে প্রিয়শা এতক্ষণ ধরে ফাইয়াজের কথা বলা শুনেনি।বৃথা গেল তার কথা।তার প্রিয় যে তার কষ্টের কথা শুনেইনি।এর চেয়ে কষ্টের কি হতে পারে।ফাইয়াজ বুকে কষ্ট নিয়ে প্রিয়শার দিকে তাকিয়ে আছে।
প্রিয়শা ফাইয়াজের দিকে তাকিয়ে ফোন কানে রেখেই বলল,
“আসছি।”
ফাইয়াজের আর কোনো কথা বলার সুযোগ না দিয়ে প্রিয়শা চলে গেল।আর ফাইয়াজ অসহায়ের মত বসে রইল।তার সামনে দিয়ে তার প্রিয় চলে গেল আর সে কিছুই করতে পারল না।আচ্ছা এভাবেই কি প্রিয় হারিয়ে যাবে তার স্বপ্ন থেকে।
ফাইয়াজ আর ভাবতেই পারছে না।ভীষণ কষ্ট হচ্ছে।বুক ফেটে যাচ্ছে।যেন সমুদ্রের কিনারায় আসেও যেন কিনারায় উঠতে না পেরে আবার সমুদ্রের ঢেউয়ে হারিয়ে যাওয়ার মত।সবকিছু হারিয়ে যাওয়ার ভয় হচ্ছে।
তবে ফাইয়াজ সিদ্ধান্ত নিল এবার সে প্রিয়শার আব্বুর কাছে প্রস্তাব নিয়ে যাবেই।প্রিয়শা যতই মানা করুক না কেন।তার বুকের মধ্যে যে ক্ষরণ চলছে।সেই ক্ষরণ নিয়ে বেশিদিন অপেক্ষা করা তার জন্য দুষ্কর।
……………………………….
প্রিয়শা সুফিয়া আর আরহানকে গল্প করতে বলে গেল।গল্প করতে বলে গেলেও কি অচেনা মানুষের সাথে সহজে গল্প করা যায়।সুফিয়া শুধু আরহানকে দেখে যাচ্ছে।আরহান প্রথমে নিজের চুল স্লাইড করে ঠিক করল।তারপর নিজের হাত ঘড়িতে সময় দেখে মোবাইল বের করে দেখছে।সুফিয়া খুটিয়ে খুটিয়ে আরহানকে দেখল।দেখে বুঝল আরহান মারাত্মক রকমের সুদর্শন পুরুষ।উফ!কি সুন্দর তার লুক।আর হাসি সেটা দেখে তো সুফিয়া ফিদা হয়ে গেছে। যে কেউ প্রথম দেখায় পছন্দ করতে পারে।
সুফিয়ার ভাবনার মাঝেই আরহান থমথমে গম্ভীর গলায় সুফিয়ার উদ্দেশ্যে বলল,
“এই মেয়ে এভাবে কি দেখছ।এই মেয়ে তুমি কি জানো প্রিয় কই গেছে জানো।”
আরহানের কথা বলার ধরন দেখে সুফিয়া অবাক হলো।প্রথম কথায় কেউ এভাবে কথা বলতে পারে।আর একটু দেরি হলেই তো সুফিয়া ক্রাশ খেত।তওবা করেছিল আর জীবনে ক্রাশ খাবে না।আবার আরহানকে দেখে ক্রাশ খেতে খেতে বেঁচে গেছ।এইরকম তিতা লোকের উপর ক্রাশ খায় কে।নিজেকে ধিক্কার জানাল সুফিয়া।সুফিয়ার ভাবনার মাঝেই আরহান বলল,
“এই মেয়ে আমি তোমাকে কিছু জিজ্ঞেস করেছি।তার উত্তর না দিয়ে তুমি ভাবনার জগতে কি করছ।”
সুফিয়া কটমট দৃষ্টিতে আরহানের দিকে তাকিয়ে বলল,
“এই মেয়ে কি।আমার একটা সুন্দর নাম আছে।বলার হলে সেই নাম ধরে ডাকবেন।”
আরহান নিজের রোদ চশমাটা চোখের একটু নিচে নামিয়ে বাকা হেসে সুফিয়ে দেখে বলল,
“প্রিয় কি যেন বলল তোমার নাম।অন্ধকার। হ্যাঁ অন্ধকার অনেক সুন্দর নাম তোমার।”
নিজের নামের এমন বিকৃতিভাষ্য শুনে মেজাজ খিটখিটে হলো।মুখের ভাব রাগ্বত করে সুফিয়া বলল,
“আমার নাম অন্ধকার না।আমার নাম হলো রাত্রী বুঝলেন মিস্টার তিক্ত মানুষ।”
আরহান অবাক হলো নিজের নাম শুনে।সে তো শুধু একটু মজাই করেছিল তাই বলে মেয়েটি তাকে এভাবে বলবে।
“আমার নাম আরহান শেখ বুঝেছ মেয়ে।
” আমার নামও রাত্রী।বুঝলে মিস্টার শেখ।কোনো অন্ধকার না।”
“প্রিয় কই গেছে জানো।”
“আমি কিভাবে জানব।আমাকে কি বলে গেছে যে আমি জানব।”
আরহানের এখন কথা বলার মুড নেই।ভালো কাজে এসেছে সে।বহুদিনের কাঙ্ক্ষিত স্বপ্ন পূরন করতে আসছে। তাই সে আর কথা বাড়াল না নাহলে দেখিয়ে দিত আরহানের নামের বিকৃতি করার আর এভাবে কথা বলার ফল।আরহান আর কোনো কথা না বলে প্রিয়শার অপেক্ষা করতে লাগল।
কিছুক্ষণ পর প্রিয়শা এসে আরহানকে বলল,
“চলো।আমার হয়ে গেছে।”
তারপর সুফিয়ার উদ্দেশ্যে বলল,
“চল সুফিয়া তুইও আমাদের সাথে।”
“না’রে যেতে পারব না আজ।জানিস তো আজকে গ্রামের বাড়ি যেতে হবে।”
তারপর সুফিয়া প্রিয়শাকে ফিসফিস করে বলল,
“তাছাড়া আমি এই খারুজ লোকের সাথে যাব না।যে কি-না আমার সুন্দর নামকে বিকৃত করে।”
প্রিয়শা আর কোনো কথা না বলে সুফিয়াকে বিদায় জানিয়ে চলে গেল।যাওয়ার পথে আরহান প্রিয়শাকে জিজ্ঞেস করে বলল,
“কি হয়েছে প্রিয়।মন খারাপ দেখাচ্ছে।”
প্রিয়শা দীর্ঘশ্বাস ফেলল। আরহানকে কি আর বলা যায় যে তোমার সাথে যাচ্ছি বলে মন খারাপ। প্রিয়শা নিজেকে অনেকটা স্বাভাবিক করে বলল,
“কিছু হয়নি।মন খারাপ হবে কেন।”
“মন খারাপ না হলেই ভালো।তবে তোমার জন্য একটা দারুণ সারপ্রাইজ আছে।যেটা তুমি ভাবতেও পারবে না।”
“কি সারপ্রাইজ আরহান ভাই।”
আরহান প্রিয়শার মাথায় মেরে বলল,
“পাগল।সারপ্রাইজ কি বলা যায়।আগে বলে দিলে সেটা কি সারপ্রাইজ হয় নাকি।”
প্রিয়শা নিজের করা প্রশ্নেই নিজেই হাসল।সেই হাসির দিকে প্রিয়শার অগোচরে মনোমুগ্ধকরভাবে চেয়ে আছে একজন। তবে সেটা প্রিয়শা বুঝতেও পারল না।
………………………………….
প্রিয়শাদের বাড়িতে মানুষে গমগম করছে।যদিও মানুষের সংখ্যা কম তবুও প্রিয়শার কাছে মনে হচ্ছে অনেক মানুষ। বাড়ির ড্রয়িং রুমে আরহানের পুরো পরিবার আছে।সেখানে তাদের সাথে আদিল ও মায়া যোগ হয়েছে।তার প্রিয়শার মা আর মনি ব্যস্ত অতিথিদের আপ্যায়ন করতে।এলাহি আয়োজন হয়েছে।তার মনিও এই বাড়ির অতিথি। তবে যে কেউ দেখলে বলবে এই বাড়ির সদস্য।
প্রিয়শার এসব কোলাহল ভালো লাগছে তাই নিজের ঘরে আসল।হয়তো ফাইয়াজের জন্য কেমন লাগছে।নিশ্চয় ফাইয়াজ মন খারাপ করে বসে আছে।প্রিয়শা নিজের মোবাইল হাতে নিল উদ্দেশ্য ফাইয়াজকে কল করে তার অভিমান ভাঙ্গানো। তখন প্রিয়শার রুমে তার মা আর মনি প্রবেশ করল।তাদের দেখে প্রিয়শার ভ্রুদ্বয় কুচকে গেল।তাদের সাথে তার আব্বুও প্রবেশ করে প্রিয়শার ঘরের দরজা লাগিয়ে দিল।
প্রিয়শার বুক ধরফর করে উঠল।তার আব্বু সচরাচর তার ঘরে আসে না।আজ হঠাৎ ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিল।অজানা ভয় জেঁকে ধরল প্রিয়শাকে।মনে প্রশ্ন জাগল আব্বু কেন দরজা বন্ধ করল।তবে কি তিনি প্রিয়শার ব্যাপারে সব জেনে গেছে।অজানা ভয়ে প্রিয়শা ঘামতে লাগল।
আয়শা সাইদুর রহমানের উদ্দেশ্যে বললেন,
“কি হয়েছে দুলাভাই।এভাবে প্রিয়শার রুমে ডেকে আনলেন। আবার দরজা বন্ধ করলেন।”
আয়শার কথার প্রেক্ষিতে সাইদুর রহমান এমন কথা বললেন যা শুনে প্রিয়শার মা ও মনি খুশি হলেও প্রিয়শা খুশি হতে পারল না।
প্রিয়শার কায়া যেন নড়ে উঠল।সবকিছু বোধহয় থমকে গেছে ক্ষনিকের জন্য।শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে চোখ দিয়ে আপন গতিতে পানি বের হচ্ছে।এই কথায় যেন তার চোখের পানির কারণ।
#চলবে…………….