#স্বপ্ন_জুড়ে_তুমি
#পর্ব_২০
#সামসুন_নাহার
তাহমিদ প্রায় অনেকক্ষণ ধরে চেষ্টা করছে ছেলেগুলোর কাছ থেকে নিজেকে সরানোর জন্য।কিন্তু একাই এতগুলো ছেলের সাথে পেরে উঠছে না।প্রিয়শারা যাওয়ার প্রায় আধ ঘন্টা পর ছেলেগুলো তাহমিদকে ছেড়ে দিল।ছেলেগুলো চলে যেতেই তাহমিদও বেড়িয়ে পরল।তাহমিদ সাথে সাথে কল করল তাহসিনকে।তাহসিনকে নিয়ে প্রিয়শার বাড়ি যাবে আজ একটা হেস্তনেস্ত করেই ছাড়বে।এভাবে সে প্রিয়শাকে কাছে পেয়েও হারাতে পারবে না।
তাহসিন আসতেই ওরা বেড়িয়ে পরল। গাড়িতে করে আসছে তাহসিন আর তাহমিদ।তাহসিন তাহমদের হাত ধরে বিশ্বাস ভরা আশ্বাস দিয়ে বলল,
“ভাই টেনশন করিস না।সব ঠিক হয়ে যাবে।আমরা প্রিয়শাকে নিয়েই বাড়ি ফিরবি।”
তাহমিদ ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে বলল,
“প্রিয়শাকে তো নিয়ে ফিরতেই হবে।প্রিয়শাকে আমি ওখানে রেখে আসবোই না।অনেক কষ্টে ওকে নিজের করে পেয়েছি।”
তাহসিন ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে তাকে আশ্বস্ত করল।তাহমিদ নিজে নিজেকে সাহস দিচ্ছে যে প্রিয়শাকে ওখান থেকে আনতেই হবেই।যে করেই হোক।তাহমিদের ভাবনার মাঝেই তাহমিদের মোবাইলে কল আসল।আননোন নাম্বার দেখে তাহমিদ প্রথমে রিসিভ করল না।কিন্তু আবার কল আসায় তাহমিদ কল রিসিভ করতেই অপাশ থেকে বলে উঠল,
“হ্যালো ভাইয়া। আমি আদিল বলছি।”
ফোনের অপাশ থেকে আদিলের কথা শুনে যেন হৃৎপিণ্ডের শ্বাষ প্রশ্বাস বেড়ে যাচ্ছে।তাহমিদ ক্ষানিকটা উত্তেজিত হয়ে বলল,
“প্রিয়শা কেমন আছে।তুমি প্রিয়শাকে কান্না করতে মানা করো।আমি নিতে আসছি।আমি ওকে নিয়েই যাব।”
“ভাইয়া শান্ত হোন।আপু ঠিক আছে।আম্মু তোমাকে আমাদের বাড়ি আসতে বলল।এসে আপুকে নিয়ে যেতে বলল।”
তাহমিদ অবাক হলো আদিলের কথায়।এইটুকু সময়ের মধ্যে সব ঠিক হয়ে গেল যে তাকে যেতে বলছে।
“আর তোমার আব্বু কি এত সহজে মেনে নিল।”
“না আব্বু মানেনি।”
তারপর আদিল সবকিছু তাহমিদকে খুলে বলল।তাহমিদ বলল,
“আচ্ছা আমি আসছি।যত তাড়াতাড়ি সম্ভব। ”
——————-
সাইদুর রহমান রাগে ফুসছেন আতিফা বেগমের সাহস দেখে।তিনি রাগের সাথে আশ্চর্য হচ্ছেন।তিনি আতিফা বেগমের দিকে তাকিয়ে বললেন,
“তুমি কি বলতে চাচ্ছ। ভালো করে বলো।”
আতিফা বেগম হাসলেন।হেসে বললেন,
“তোমার করা সবকিছুতেই তোমার অহংকার তাই না।তোমার ভালো-মন্দ দেখে এসেছ এতদিন ধরে।কিন্তু আর না।এখন আমরা তোমার সাহায্য ছাড়াই আমাদের জীবন কাটাব।যেখানে সবকিছুর স্বাধীনতা থাকবে সাথে থাকবে অনেক ভালোবাসা। ”
“এইগুলো কথা শুধু মুখেই মানায়।নিজে চলা আর সন্তানকে নিয়ে ভালো থাকা, তাদের সবকিছু ইচ্ছা পূরণ করা এত সহজ না তুমি বলতেই তো আর পারবে না।”
“ওহ তাই বুঝি।কিন্তু তুমি তো তোমার ইচ্ছে পূরণ করেছ আমার ছেলে-মেয়েদের না।তাই এখন আমাদের ভালো-মন্দ আমাদের দেখতে দাও।”
সাইদুর রহমান আতিফা বেগমের কথা শুবে রাগে ফুসছে।রাগে গিজগিজ করতে করতে চেঁচিয়ে বলল,
“আতিফা তুমি কিন্তু বেশি করছ।আমিও দেখব তুমি কিভাবে প্রিয়শাকে এখান থেকে পাঠাতে পারো।”
“তুমি যেভাবে প্রিয়শাকে হলুদে যাওয়ার জন্য রাজি করেছিলে সেভাবে।তুমি ওকে শুধু ভয় দেখিয়েছ কিন্তু তুমি যদি আমাকে বাধা দাও তাহলে আমি সত্যি পুলিশ ডাকব।একজন প্রাপ্তবয়স্ক ও বিবাহিত মেয়েকে জোর করার জন্য।”
“তুমি আমাকে ভয় দেখাচ্ছ।”
“ধরে নাও তাই।”
সাইদুর রহমান রাগে ফেটে যাচ্ছেন।আর সহ্য করা যাচ্ছে না।তিনি হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে বলে ফেললেন,
“যা করার করো।কিন্তু কোনো বিপদ হলে আমাকে বললে আমি কোনো সাহায্য করব না।”
বলেই তিনি গটগট করে চলে গেলেন নিজের ঘরে।আতিফা বেগম আদিল ও প্রিয়শার উদ্দেশ্যে বললেন,
“তোরা ভয় পাস না।এতদিন তোদের অন্য মা’কে দেখে এসেছিস।আজ থেকে অন্য মা’কে দেখবি যে তোদের ভালো-মন্দ দেখবে।”
আদিল ও প্রিয়শা মা’কে জড়িয়ে ধরল।প্রিয়শা জানে না এই জল কতদূর পর্যন্ত যাবে।কিছুক্ষণ পর কলিং বেল বাজলে আদিল দরজা খুলে দিল।দরজা খুলে দিতেই তাহমিদ দৌড়ে এসে প্রিয়শার কাছে গিয়ে বলল,
“তুমি ঠিক আছো প্রিয়।তোমার কিছু হয়নি তো প্রিয়। ”
প্রিয়শা না-সূচক মাথা নাড়ল। যার অর্থ ওর কিছু হয়নি।আতিফা বেগম তাহমিদের উদ্দেশ্যে বললেন,
“তোমরা এসেছ ভালো করেছ।প্রিয়শাকে নিয়ে যাও।তোমাদের ভালোভাবে বিদায় দিতে পারব না।এমন মা আমি।তবে তোমরা নিশ্চিন্ত থাকতে পারো প্রিয়শার আব্বু আর কিছু করবে না।”
তাহমিদ আতিফা বেগমের উদ্দেশ্যে বলল,
“আন্টি এভাবে বলবেন না প্লিজ।আপনার জন্য তো আজ আমি প্রিয়শাকে এত সহজে এখান থেকে নিয়ে যেতে পারছি।আপনার কাছে আমি ঋনি থাকব।”
আতিফা বেগম হুহু করে কেঁদে দিলেন।মনে হচ্ছে সেইদিনেই প্রিয়শা হলো আজ বিয়ে হয়ে মেয়েকে বিদায় দিতে হচ্ছে।প্রিয়শা মা-কে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দিল।আদিলও এসে জড়িয়ে ধরল।আতিফা বেগম কান্না করতে করতে বললেন,
“প্রিয়শা মা মন দিয়ে সংসার করবে।সবার মন জয় করার চেষ্টা করবে।মনে রাখবি তোর মা সবসময় তোর সাথে আছে।”
আদিল বোনকে জড়িয়ে ধরে বলল,
“আপু আমি তোমাকে অনেক মিস করব।”
প্রিয়শাও কান্না করতে করতে বলল,
“যখন আমাকে দেখতে মন চাইবে তখন আসবি।আমিও তোকে অনেক মিস করব।”
আতিফা বেগম নিজেক চোখের পানি মুছে নিজেকে শক্ত করলেন।এভাবে কান্না করলে মেয়েকে বিদায় দেওয়া সম্ভব না।তিনি বললেন,
“তাহমিদ তুমি প্রিয়শাকে নিয়ে যাও।অনেক রাত হয়ে গেছে।”
তাহমিদ প্রিয়শাকে ধরে বলল,
“দোয়া করবেন আন্টি যেন আমরা যেন সুখে সংসার করতে পারি।”
তারপর আদিলে উদ্দেশ্যে বলল,
“আদিল বোনকে দেখার ইচ্ছে হলে চলে আসিও। ”
প্রিয়শা এখনো কেঁদে যাচ্ছে।নিজের বাড়ি থেকে শ্বশুর বাড়ি যাওয়া অনেক কষ্টকর। অনিশ্চিত একটা ভবিষ্যতের দিকে পা বাড়াচ্ছে।তাহমিদ অনেক কষ্টে প্রিয়শাকে নিয়ে বেড়িয়ে গেল।সঙ্গে পিছনে রেখে গেল আতিফা বেগম ও আদিলের কান্না মাখা মুখ।
……………………………..
ফাতেমা বেগম তরীকে অর্থাৎ তাহসিনের বউকে দেখেই যাচ্ছে।মেয়েটা কিছু একটা চিন্তা করছে আর পায়চারি করছে।ফাতেমা বেগম আর সহ্য করতে না পেরে বলল,
“তরী কি হয়েছে বলবে।তোমাকে অনেক চিন্তিত দেখাচ্ছে।আর তাহসিন এত রাতে কই গেল এর তাড়াতাড়ি করে।”
“জানি না।শুয়ে ছিল হঠাৎ করে একটা কল আসল।চিন্তিত হয়ে কথা বলল।আমি যখন জিজ্ঞেস করলাম কি হয়েছে।বলল আমাদের সবার জন্য না-কি সারপ্রাইজ আছে।”
“কি সারপ্রাইজ। ”
“জানি না।শুধু অপেক্ষা করতে বলল।”
এবার তরীর সাথে ফাতেমা বেগম চিন্তা করতে লাগলেন।এক ছেলে বাড়ি ফেরার নাম নেই। আর এক ছেলে মাঝ রাতে না-কি সারপ্রাইজ দিবে।তিনি দুই ছেলের চিন্তায় আর পারেন না।
হঠাৎ করে তরী কিছু দেখায় মুখ হা হয়ে গেল।নিজেকে ঠিক করে ফাতেমা বেগমের উদ্দেশ্যে বললেন,
“আম্মু দেখো।”
ফাতেমা বেগম তরীর দেখানো জায়গায় দেখতেই তিনি নিজেকে আর ধরে রাখতে পারলেন না।
#চলবে…………………
#স্বপ্ন_জুড়ে_তুমি
#পর্ব_২১
#সামসুন_নাহার
তাহমিদের পাশে প্রিয়শাকে বউ রুপে দেখে ফাতেমা বেগম রাগান্বিত হলেন।তিনি এখনো সাইদুর রহমানের অপমান ভুলতে পারেননি।তাদের এই অপমানের জন্য তিনি প্রিয়শাকেও দায়ী ভাবছে।তিনি রেগে বললেন,
“এই মেয়ে এখানে কি করছে।”
তাহসিন মায়ের দিকে তাকিয়ে হেসে বলল,
“এখন এই মেয়ে তোমার আরেকটা মেয়ে। তরী যেমন তোমার মেয়ে তেমন প্রিয়শাও তোমার মেয়ে।মানে প্রিয়শা এখন তোমার বাড়ির ছেলের বউ।তাহমিদ ও প্রিয়শা বিয়ে করেছে।”
তাহসিনের কথা শুনে ফাতেমা বেগম আশ্চর্যান্বিত হলেন।কিন্তু তিনি তা প্রকাশ না করে রাগান্বিত হয়ে বললেন,
“বিয়ে করেছে মানে। কখন বিয়ে করল।এভাবে বিয়ে কি হয়।যেখানে মেয়ে আমার পছন্দ না।আমি এই বিয়ে মানি না।”
তাহসিন গা মোড়াতে মোরাতে বলল,
“আম্মু ভেতরে ঢুকি আগে তারপর সব বলছি তোমাকে। এভাবে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে সবকিছু বলা যায় নাকি।ভেতরে আসি।”
ফাতেমা বেগম অনেক গম্ভীরমুখে রগড় গলায় বললেন,
“না।তোমরা কেউ ভেতরে আসবে না।।ওখানে দাঁড়িয়ে থাকো।”
“কেন আম্মু ভেতরে ঢুকতে দিবে না।”
“কেন ঢুকতে দিচ্ছি জানো না।এই মেয়েটা এখানে কি করছে। এই মেয়েটাকে যেখানে পেয়েছ সেখানে রেখে আসো।আমি এই মেয়েটাকে দেখতে চাইনা।”
ফাতেমা বেগমের কথায় প্রিয়শার আঁখিদ্বয় থেকে অশ্রু গড়িয়ে পরল।যা দেখে তাহমিদ কিছু বলতে চাইলে তাহসিন মানা করে দিল।এবং তরীকে কিছু ইশারা করল।তরী এসে প্রিয়শার কাছে দাঁড়িয়ে প্রিয়শার মুখ তুলে চোখের পানি মুছে দিয়ে বলল,
“ওমা কি সুন্দর দেখতে।তাহমিদের পছন্দ আছে বলতে হয়।পাগলি মেয়ে কান্না করতেছ কেন।এত সুন্দর মুখে কান্না মানায় না। আর কান্না করিও না।আর মায়েরা এইরকম কথা বলেই তাই বলে কি কান্না করতে হয় নাকি।”
ফাতেমা বেগম কাঠকাঠ গলায় তরীর উদ্দেশ্যে বলল,
“তরী ভেতরে চলে আসো।এই মেয়েকে সোহাগ দেখাতে হবে না।আর এই মেয়েকে রেখে আসতে বলো।”
“তা বললে কিভাবে হয় আম্মু।আমি আর তাহসিন যখন এইভাবে বিয়ে করে এসেছিলাম তখন তো আমাকে রেখে আসতে বলো নাই।তাহলে প্রিয়শাকে রেখে আসতে বলছ কেন।প্রিয়শা কি দোষ করেছে।”
“কি করে নাই বলো।ওদের বাসায় আমাদের অপমান করা হয়েছে।ওর বাবার করা অপমান আমি এখনো ভুলতে পারিনি।আমাদের বের হয়ে যেতে বলা হয়েছিল।আমরা কি সেখানে অপমানিত হতে গেছিলাম না থাকতে।”
“আম্মু সেটা তো প্রিয়শার আব্বু করেছে।প্রিয়শা তো করেনি।তাহলে প্রিয়শার আব্বুর জন্য প্রিয়শা কেন কষ্ট পাবে।আর প্রিয়শার যদি এইরকম উদ্দেশ্য থাকত তাহলে বিয়ের আসর থেকে পালিয়ে তাহমিদের সাথে বিয়ে করত না।”
কিছুক্ষণ থেমে তরী আবার বলল,
“আম্মু তুমি আমাকে শিখিয়েছ ঠান্ডা মাথায় কাজ করতে হয়।যদি সেই কাজ পরিবারের সদস্যদের জন্য তাহলে আরো ভালোভাবে করতে।আর এখন থেকে তো প্রিয়শা এই বাড়ির সদস্য। আর এই বাড়ির নতুন সদস্যকে কিভাবে বের করে দিব।এটা তো আমার শ্বাশুড়ি আম্মু শেখায়নি।আমার শ্বাশুড়ি আম্মু যেটা শিখিয়েছে আমি সেটাই করব।তাই না শ্বাশুড়ি আম্মু।”
তরীর কথা শুনে ফাতেমা বেগম থতমত খেলেন।তরী তাকে তার কথা অনুযায়ী মাত দিল।এই জন্য বাড়ির বউদের মাথায় তুলতে নেই।
তরী প্রিয়শার হাত ধরে বলল,
“আসো প্রিয়শা। তোমাকে স্বাগতম তোমার নতুন পরিবারে।”
তরী প্রিয়শাকে নিয়ে ভেতরে প্রবেশ করিয়ে বসাল।তা দেখে ফাতেমা বেগম নিজের ঘরে চলে গেল।তরী প্রিয়শাকে বলল,
“আমি কিন্তু সম্পর্কে তোমার ভাবি হই কিন্তু তুমি আমাকে আপু বলে ডাকবে।”
প্রিয়শা এখনো মাথা নিচু করে আছে।তরী হেসে বলল,
“আম্মুর জন্য মন খারাপ করতেছ।মন খারাপ করিও না।আমরা যখন বিয়ে করে এসেছিলাম আম্মু তখনও এইরকম করেছিল কিন্তু এখন সব ঠিক হয়ে গেছে।এখন আমাদের সম্পর্ক কেমন জানো।মা-মেয়ের সম্পর্ক। কেউ আমাদের দেখে বলতেই পারবে না আমরা শ্বাশুড়ি বৌমা।তোমারও দেখবে ঠিক হয়ে যাবে। আর এই পরিবারের মানুষ অনেক ভালো।অনেক বন্ধুত্বপূর্ণ তুমি নিজ চোখে না দেখলে বিশ্বাস। এখন এসে গেছ দেখতে পারবা।”
ফিজা এসে প্রিয়শার কাছে এসে বলল,
“ওয়াও আপু তোমাকে তো বউ সেজে অনেক সুন্দর দেখাচ্ছে।আমি যেরকম ভেবেছিলাম তার চেয়েও তোমাকে অনেক সুন্দর দেখাচ্ছে। ”
প্রিয়শা হাসল সামান্য ফিজার কথা শুনে।তাহমিদ এসে তরীকে বলল,
“ভাবিপু প্রিয়শাকে খেতে দাও।অনেক রাত হয়েছে।প্রিয়শা দুপুর থেকে কিছু খায়নি।”
তাহমিদের কথা শুনে তরী অবাক হলেও রাগ হলো। প্রিয়শা দুপুর থেকে না খেয়ে আছে আর তাহমিদ কি-না এখন বলছে।তরীর কিছু বলার থাকলেও না বলে রান্নাঘরে গেল।কিছুক্ষণ পর খাবার নিয়ে এসে তাহমিদ ও প্রিয়শাকে খেতে দিল।কিন্তু প্রিয়শা কিছু খাচ্ছে না।তা দেখে তরী বলল,
“এই এত বেশি ভাবতে নেই।আমরা সবাই তোমার সাথে আছি।আর আব্বু আম্মু শুধু একটু অভিমান করে আছে তাই এমন করছে।যখন অভিমান ভাঙ্গবে তখন দেখবে এভাবে খাবার সামনে রেখে না খাওয়ার জন্য তোমাকে অনেক বকত।আসো আমি তোমাকে খাইয়ে দেই।”
তরী প্রিয়শাকে খাইয়ে দিল।খাওয়া শেষে তরী ফিজার উদ্দেশ্যে বলল,
“ফিজা প্রিয়শাকে নিয়ে তোমার রুমে যাও।মেয়েটার উপর অনেক ধকল গেছে রেস্ট প্রয়োজন। ”
তরীর কথা শুনে তাহমিদ বলল,
“ভাবিপু প্রিয়শা ফিজার রুমে কেন থাকবে। আমার রুমে…”
এইটুকু বলে তরীর দিকে তাকিয়ে চুপ হয়ে গেল।তরী কড়াভাবে বলল,
“আমি যেটা বলেছি সেটাই হবে।নাহলে আমিও আম্মুর মত বলব বেড়িয়ে যাও।”
তরীর কথা শুনে তাহমিদ অসহায়ের মত মুখ করল।তা দেখে তাহসিন হেসে ফিসফিস করে তাহমিদকে বলল,
“কি ভাই আজ তোর বাসর করাও হবে না।রোমান্স করাও হবে না।সবাই তোর সাথে শত্রুতা করছে।সাথে আমার বউটাও। ”
তাহমিদের কথা শুনে তাহমিদ দাঁত কিড়মিড় করে বলল,
“মজা নিও না। তোমার ব্যবস্থা করছি আমি।”
তারপর তাহমিদ তরীর উদ্দেশ্যে বলল,
“ভাবিপু ভাইয়ার সাথে আমার কিছু জরুরী কাজ ছিল।কিন্তু ভাইয়া আসতে চাচ্ছে না।”
তরী ভ্রু-কুচকে জিজ্ঞেস করল,
“কেন যেতে চাচ্ছে না।”
তাহমিদ শয়তানি হাসি হেসে তাহসিনের দিকে তাকিয়ে বলল,
“তুমি না-কি ভাইয়াকে আসতে দিচ্ছ না।যখনই বলতেছি তখনই বলতেছে তোর ভাবিপু যেতে দিবে না।তুমি কি সত্যি এমন করো।আমার কিন্তু বিশ্বাস হয়না।”
তাহমিদের কথা শুনে তরী অবাকের সাথে রাগ হলো।তরী রাগে ফুসতে ফুসতে বলল,
“আমি তোমাকে মানা করি তোমার ভাইয়ের কাছে যেতে।আমি এতই খারাপ তাইনা।আসবে না তুমি ঘরে। আমি খারাপ তাই না আমার কাছে আসবে না।”
তারপর তরী ফিজার উদ্দেশ্যে বলল,
“তোমাকে যেতে বলেছি না।প্রিয়শাকে নিয়ে যাও।ওর রেস্টের প্রয়োজন। ”
ফিজা চলে যেতেই তরী নিজের রুমে যেতে লাগল।তা দেখে তাহমিদ হাসল।তাহসিন তাহমিদের তাকিয়ে বলল,
“এভাবে আমাকে ফাঁসানো তোকে দেখে নিব।”
তাহমিদ গা ছাড়াভাবে বলল,
“আমাকে পরে দেখিও আগে বউয়ের রাগ ভাঙ্গিয়ে দেখাও।”
তাহসিন তাহমিদের দিকে শকুনির মতো তাকিয়ে দেখল।তারপর তরীর উদ্দেশ্যে বলল,
“তরী সোনা শোনো আমার কথা।”
কিন্তু ততক্ষণে তরী চোখের আড়াল হয়ে গেছে।যা দেখে তাহমিদ উচ্চস্বরে হাসল।
……………………….
সকাল নয়টা বাজে।সবাই জেনে গেছে তাহমিদ পালিয়ে বিয়ে করেছে প্রায় সবাই জেনে গেছে। তাই সবাই নতুন বউ দেখতে আসছে।কিন্তু আসে কেউ এখনো নতুন বউয়ের দেখা পেল না।বউ দেখতে আসা থেকে একজন তরীকে বলল,
“কি গো তরী নতুন বউ কই তাকে তো দেখছি না।”
তরী সবাইকে নাস্তা দিতে দিতে বলল,
“ওকে এখনই ঘরে পাঠিয়ে দিলাম।নতুন বউ লজ্জা পাচ্ছে।”
“ওহ তাই বুঝি।তাহলে ঘরে গিয়ে দেখে আসি নতুন বউকে।”
তরী তরিঘরী করে বলল,
“আপনি বসুন আমি ডেকে নিয়ে আসছি।আপনি কেন কষ্ট করতে যাবেন।চা ঠান্ডা হয়ে যাবে।আপনি চা খান আমি নিয়ে আসছি প্রিয়শাকে।”
“আচ্ছা যাও তাহলে।”
তরী যেন প্রাণ ফিরে পেল।প্রিয়শা তো এখনো উঠেই নাই যদি প্রতিবেশী আন্টি দেখত প্রিয়শা উঠে নাই তাহলে এরা যে কি করত।এমনিতে এরা তিলকে তাল বানাতে জানে।এমনিতে ফাতেমা বেগম রেগে আছেন।তারপর এই মহিলাগুলো তো আছেই আরো সংসারে আগুন লাগানোর জন্য।তাই তরী একটু মিথ্যে কথা বলল।
তরী ফিজার রুমে গিয়ে দেখল প্রিয়শা ঘুমাচ্ছে।নিশ্চয় মেয়েটার অনেক ক্লান্তি গেছে এই কয়েকদিনে তাই আজ নিশ্চিন্তমনে দিবানিদ্রার মগ্ন।ঘুমন্ত চেহারায় কি মায়াবী লাগছে।মায়াবী তো লাগবেই প্রিয়শা তো এমনিতেই সুন্দর ঘুমন্ত অবস্থায় আরো সুন্দর দেখাচ্ছে।কিন্তু এখন প্রিয়শাকে এই সুন্দর ঘুম থেকে জাগাতে হবে।তরী প্রিয়শার কাছে গিয়ে প্রিয়শার মাথায় হাত দিয়ে বলল,
“প্রিয়শা। প্রিয়শা বোন ওঠো অনেক বেলা হয়েছে।”
প্রিয়শা ঘুমের ঘোরে অন্যদিকে ঘুরে ঘুম ঘুম কন্ঠে বলল,
“আম্মু ঘুমাতে দাও।এমনিতে কয়েকদিন থেকে ঘুমাতে পারিনি।”
প্রিয়শার কথা শুনে তরী হাসল।মেয়ে এখন শ্বশুর বাড়িতে আছে কিন্তু তার মনে হচ্ছে এখনো বাপের বাড়িতে আছে।তরীর মায়া হলো ইচ্ছে করল প্রিয়শাকে না ডাকতে।কিন্তু ডাকতে তো হবেই।তাই তরী আবার বলল,
“প্রিয়শা তুমি তোমার বাপের বাড়িতে নাই তুমি তোমার শ্বশুরবাড়ি তে আছো।ওঠো তাড়াতাড়ি। ”
এই কথা শুনে প্রিয়শা তাড়াতাড়ি উঠে বসল।ঘড়ির দিকে তাকিয়ে অপরাধবোধের সঙ্গে বলল,
“স্যরি আপু।আমি প্রথমদিন এসেই ভুল করে ফেললাম।আম্মু নিশ্চয় অনেক রাগ করেছে।আমি ইচ্ছে করে করিনি।”
তরী হাসল প্রিয়শার কথা শুনে । হেসে বলল,
“আরে ধুর বোকা।আম্মু এমন না। উঠো এখন তোমাকে প্রতিবেশীরা দেখতে আসছে।ফ্রেশ হয়ে আসো।তোমাকে শাড়ি পড়িয়ে দেই।”
প্রিয়শা আর দিরুক্ত করল না।ফ্রেশ হতে গেল।আর তরী নিশব্দে হাসল।প্রিয়শাকে তার অনেক ভালো লেগেছে।দেখতে কি মিষ্টি।
………………………….
তরী প্রিয়শাকে এক নীল রাঙ্গা শাড়ি পড়িয়ে নিয়ে আসল।দেখতে অনেক সুন্দর দেখচ্ছে।প্রতিবেশী সবার মুখ দেখে পছন্দ হয়েছে কিন্তু তারপরও তারা অনেক খুত ধরবে এই জন্য তরীর এই প্রতিবেশীদের ভালো লাগে না।
ফাতেমা বেগমও মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে আছে প্রিয়শার দিকে।হয়তো মনে মনে ভাবছে তার ছেলের পছন্দ আছে।কিন্তু হঠাৎ করে সেইদিনের কথা মনে পড়তেই তিনি তার চোখ ফিরিয়ে নিলেন।মন আবার বিষিয়ে গেল সেইদিনের অপমানের কথার জন্য।
তরী প্রিয়শাকে বসিয়ে দিল।প্রতিবেশীরা খুটিয়ে খুটিয়ে দেখছে প্রিয়শাকে।একজন বলে উঠল,
“মেয়েটা তো সুন্দর আছে।কিন্তু রুপ দিয়ে কি সব হয়।তা মেয়ে কাজ পারো তো।ভালো বাড়িতেই বিয়ে করেছ।এই বাড়ির বড় বউ মানে তোমার জা এইরকম করে পালিয়ে বিয়ে করেছে।আর তোমরাও বিয়ে করলেনা জানি আর কি কি করে।কি মিল তোমাদের।তোমাদের পরিবারে এসব হয়ই।”
প্রতিবেশীর এমন কথা শুনে একজন অগ্নিমূর্তির ন্যায় করতে লাগলেন।বউ দেখতে এসে তারা বাড়ির বদনাম করছে।তিনি প্রতিবেশীর উদ্দেশ্যে এমন কথা বললেন যে প্রতিবেশীর মুখ চুপছে গেল।
#চলবে……………………………..