স্বপ্ন জুড়ে তুমি পর্ব-২৪

0
127

#স্বপ্ন_জুড়ে_তুমি
#পর্ব_২৪
#সামসুন_নাহার

ড্রয়িং রুমে বসে পেপার পড়ছেন ফিরোজ ইসলাম।পাশে বসে আছে ফাতেমা বেগম,তাহসিন এবং ফিজা।ফিরোজ ইসলাম একটু একটু করে পেপার পড়ছেন আর সবার সাথে আড্ডা দিচ্ছেন।এই বাড়ির সকালটা ভিন্নরকম। অন্যবাড়ির চেয়ে অন্যরকম। সকালের এইসময় আড্ডা দেওয়া হয়।তবে কাউকে জোর করা হয় না।তারপরও সবাই নিজ ইচ্ছেয় আড্ডা দেয়।কারন কিছুক্ষণ পরে সবাই নিজের নিজের কাজে চলে যাবে আর সবার একসাথে থাকা হবে না।তাই সকালে ও রাতে আড্ডা দেওয়া হয়।

প্রতিদিনের মত আজও আড্ডা দেওয়া হচ্ছে।তরী ও প্রিয়শা রান্নাঘরে।কিছুক্ষণ পর তরী এসে সবাইকে চা দিল।ফিরোজ ইসলাম চা খেয়ে তরীর উদ্দেশ্যে বলল,

“তরী মা আজ তো চা অনেক সুন্দর হয়েছে।অন্যদিনের চেয়ে অন্যরকম হয়েছে।বেশ ভালো।”

ফিরোজ ইসলামের কথা শুনে তরী হাসল মিটমিটিয়ে। হেসে বলল,

“আব্বু আজ আমি চা বানায় নি।আজ প্রিয়শা চা বানিয়েছে।যেহেতু চা সবার ভালো লেগেছে তাহলে আজ থেকে প্রতিদিন প্রিয়শা চা বানাবে।কি বলো প্রিয়শা পারবে তো।”

প্রিয়শা মাথা উপর নিচ করল।যার অর্থ পারবে।তরী ফাতেমা বেগমের উদ্দেশ্যে বলল,

“আম্মু চা কেমন হয়েছে।বলতে না তো।”

ফাতেমা বেগম সত্যকে সত্য বলার ক্ষমতা রাখেন তাই তিনি বেশি কিছু বললেন না শুধু বললেন,

“ভালো হয়েছে।”

প্রিয়শা হাসল শ্বাশুড়ি আম্মুর কথা শুনে।তিনি যে ভালো বলেছেন এটাই অনেক তার কাছে।আস্তে আস্তে তিনি ঠিক মেনে নিবেন এটা বিশ্বাস প্রিয়শার। এখন মিশন শুধু শ্বশুর শ্বাশুড়ির মন জয় করা।আর প্রিয়শার পাশে আছে তরী।তরীর কথা মত আজ প্রিয়শা চা বানিয়েছে।যদিও প্রিয়শা চা বানাতে পারে না।তরী বলে দিয়েছে সবকিছু তারপর চা বানিয়েছে।প্রিয়শা কৃতজ্ঞতার দৃষ্টিতে তাকাল তরীর দিকে।তরী হাসল সামান্য।

তরী প্রিয়শার উদ্দেশ্যে করে বলল,

“প্রিয়শা তুমি দাঁড়িয়ে আছো কেন বসো।”

প্রিয়শা হাসল।এদের সবাইকে দেখে নিজের পরিবারের কথা মনে পরল।কি করছে আদিল,তার মা ও বাবা নামক মানুষটি।তাদের কি মনে পরছে না প্রিয়শার কথা।সাইদুর রহমান কি কখনো মেনে নিবেন তাকে।মনে মনে ভাবল এখানে সাইদুর রহমান থাকলে তাকে ও আদিলকে বকা দিত।বকা দিয়ে নিজের রুমে যেতে বলত।ওরা মন খারাপ করে নিজের রুমে যেত।যাওয়ার সময় আদিল ঠিকই প্রিয়শাকে বলত,বুবু আব্বু সবসময় এইরকম করে।শুধু নিজেরটা দেখে।আমাদের ভালোইবাসে না।
এসব ভেবে প্রিয়শার মন খারাপ হলো কান্না পেল।তবে সেটা প্রকাশ করল না।মিথ্যে হেসে তরীর পাশে বসে পরল।তাহসিন হেসে প্রিয়শার উদ্দেশ্যে বলল,

“প্রিয়শা তোমাদের বাসায় নিশ্চয় এভাবে আড্ডা হয়।।তোমাদের পরিবার ছোট কিন্তু মজা নিশ্চয় বেশি হত তাই না।”

প্রিয়শা তাচ্ছিল্যের হাসি হাসল।হেসে ভাবল পরিবার জিনিসটা তো ভালোকরে উপভোগ করতেই পারেনি।সেখানে আড্ডা বিলাসিতা ছাড়া কিছু না।যেখানে সাইদুর রহমানের এসব পছন্দ না।আচ্ছা তাদের যদি এইরকম হাসিখুশি পরিবার থাকত তাহলে কি খুব ক্ষতি হত।প্রিয়শা মন খারাপ করে হালকা হেসে বলল,

“না আমাদের বাসায় এসব হতো না।আব্বু এসব পছন্দ করত না।তাই আমরা এউভাবে কোনোদিন সবাই মিলে আড্ডা দেয়নি।”

প্রিয়শার কথা শুনে সবাই অবাক হলো।প্রিয়শা বলে কি তারা নাকি কোনোদিন আড্ডা দেয়নি।ফাতেমা বেগম ভাবলেন,”তাহলে সবাই যা বলছে সব ঠিক। এসবের জন্য সাইদুর রহমান দায়ী।তিনি নিজের সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিতেন।”রাগ রাগল প্রচুর সাইদুর রহমানের প্রতি।ফাতেমা বেগম প্রিয়শার দিকে পূর্ণ দৃষ্টি দিলেন।দেখলেন প্রিয়শা মুখ কালো করে আছে।ভালো লাগল না তার।তিনি গম্ভীরমুখে তরীর দিকে তাকিয়ে বললেন,

“তরী তুমি আমাকে বলেছিলে আমি যেন মেনে নেই।কিন্তু সে কি এই পরিবারকে নিজের মনে করছে।যদি নিজের মনে করত তাহলে পুরনো কথা ভেবে মন খারাপ করত না।”

ফাতেমা বেগমের কথায় সবাই অবাক হওয়ার সাথে সাথে খুশি হলো।যে তিনি প্রিয়শাকে দেখছেন।তার ভালো-মন্দ এই অনেক।প্রিয়শা খুশিতে তাকাল শ্বাশুড়ি আম্মুর দিকে।তিনি প্রিয়শার দিকে তাকিয়ে ছিলেন এতক্ষণ। কিন্তু প্রিয়শা তাকানোতে তিনি অন্যদিকে তাকালেন।

……………………………..

সাইদুর রহমান বাসায় থাকছেন আর মা-ছেলের কান্ড দেখে যাচ্ছেন।মা-ছেলে ভালোই মজা করেই যাচ্ছেন।নিজের যা ইচ্ছে তাই করে যাচ্ছেন।তারা এমন ভাব করছে যেন সাইদুর রহমান বাসায় নেই।তবে ওরা যাই করুক তায়ে সাইদুর রহমানের মাথাব্যথা নেই।তিনি নিজের মত থাকছেন।আর আদিল আর আতিফা নিজের মত থাকছে।আতিফা আর আদিল ড্রয়িং রুমে বসে আড্ডা দিচ্ছে। সকাল সকাল আড্ডা দিচ্ছেন।আদিল হঠাৎ মন খারাপ করে বলল,

“আপু থাকলে মজা হতো।আপুকে ছাড়া ভালোই লাগছে না।”

আতিফা বেগম বুঝলেন ছেলের মনের কথা।তার নিজেরও তো খারাপ লাগছে এভাবে মেয়ের কাছ থেকে দূরে থাকতে।তবে নিয়মের বাইরে তো হতে পারেনা।তাই মেয়ের থেকে দূরে থাকতেই হবে।তিনি ছেলের উদ্দেশ্যে মাথায় হালকা হাত বুলিয়ে বললেন,

“মন খারাপ করে কি হবে।মেয়েদের বিয়ে হলে শ্বশুর বাড়িতেই থাকতেই হয়।জানি একটু কষ্ট হবে তবে সময়ের সাথে ঠিক হয়ে যাবে।মেয়েটার জীবন আরো সুন্দর হতে পারত তবে একজনের জন্য হলো না। না জানি একজনের জন্য মেয়েটাকে ভুক্তভোগী হতে হচ্ছে না-কি।”

আতিফা বেগমের এমন কথা শুনে সাইদুর রহমান রাগান্বিত হলেন তবে সেটা প্রকাশ করলেন না।তিনি জেদ ধরেই আছেন আর যাই হোক তিনি কারোর সাথে কথা বলবেন না।তিনি নিজের রাগ সংবরণ করলেন।।আদিল নিজের বাবাকে দেখে আস্তে করে বলল,

“মা আব্বু আমাদের সাথে থাকলে আরো ভালো হতো।আমরা কি কোনোদিনও একসাথে আনন্দে মজা করে থাকতে পারব না।”

“অবশ্যই পারবে।আমরা সবাই একসাথে থাকব।তবে সময় লাগবে।সেই সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।”

“হুম।এই অপেক্ষা যে পবে শেষ হবে।”

আদিল মুখে খুশি থাকলেও বাবার জন্য খারাপ লাগে।তিনি আদিলদের সাথে কথা বলেন না,একসাথে খান না।আদিল মন থেকে চায় তার আব্বু যেন তাদের সাথে কথা বলুক।আদিল বাবার দিকে চেয়ে আছে অবিরত। হয়তো কিছু শোনার দেখার জন্য।কিন্তু আদিলকে নিরাশ করে দিয়ে সাইদুর রহমান নিজের রুমে চলে গেলেন।আর আদিল মন খারাপ করে বসে রইল।

——————-

প্রিয়শা তরীর হাতে হাতে কাজ করে নিজের রুমে আসল ডাকার জন্য।আজ থেকে তাহমিদ ভার্সিটি যাবে।প্রিয়শা আরো কয়েকদিন পর থেকে যাবে।প্রিয়শা রুমে এসে দেখল তাহমিদ এখনো বেঘোরে ঘুমাচ্ছে।খালি গায়ে ঘুমাচ্ছে।প্রিয়শা লজ্জা পেল রাতের কথা মনে পরে।লজ্জায় লাল হলো মুখখানি।প্রিয়শা নিজেকে ধিক্কার জানাল, আজব লজ্জার কি আছে।কেউ তো দেখছে না।প্রিয়শা তাহমিদের মাথার কাছে বসে নিম্নস্বরে ডাকল,

“তাহমিদ।তাহমিদ উঠো।”

তাহমিদের কোনো সারা শব্দ না পেয়ে প্রিয়শা নিজের মুখ তাহমিদের কানের কাছে গিয়ে ফিসফিস করে বলল,

“তাহমিদ,এই উঠো।সকাল হয়ে গেছে।আর কত ঘুমাবে।”

তাহমিদ হাসল নিরবে।যা শুধু তাহমিদ জানল।প্রিয়শা জানলও না দেখলোও না।প্রিয়শা আবার ডাকল,

“তাহমিদ।”

তাহমিদ এক ঝটকায় প্রিয়শাকে নিজের উপর ফেলল।প্রিয়শা লজ্জা পেল কিন্তু সেটা প্রকাশ করল না।নিজেকে সরানোর জন্য চেষ্টা করল।কিন্তু শেষ পর্যন্ত না পেরে বলল,

“কি করছ কি তাহমিদ।”

তাহমিদ দুষ্টু হেসে বলল,

“কি করছি দেখতে পারছ না।নাকি আবার দেখায় দিব কি করছি।”

প্রিয়শা লজ্জা পেল।তাহমিদ হেসে বলল,

“তোমার এই লজ্জা রাঙা মুখ আমার অনেক ভালো লাগে।এইভাবেই লজ্জা পাবে।”

প্রিয়শা আরো লজ্জা পেল।কিন্তু সেটা প্রকাশ না করে চাপা রাগ নিয়ে বলল,

“তাড়াতাড়ি আমাকে ছেড়ে উঠে ফ্রেশ হও।ভার্সিটি যাওয়ার সময় হয়ে গেছে।”

তাহমিদ প্রিয়শা গালে গাঢ় চুমু খেল।প্রিয়শা সেসবে পাত্তা না দিয়ে বলল,

“কি করছ কি তাহমিদ দরজা খোলা আছে।কেউ দেখে ফেললে কি হবে।”

তাহমিদ দুষ্টু হেসে বলল,

“কেউ দেখে ফেললে কি হবে। দেখবে আমি আমার বউকে আদর করছি। আর কেউ ডিস্টার্ব করতে আসবে না।”

“উফ! উঠো তোমার আর কোনো কথা শুনতে চাচ্ছি না।রেডি হয়ে আসো তাড়াতাড়ি। ”

“উহু!তোমার মত এইরকম বউ থাকলে কোথাও যেতে ইচ্ছে করে না।তাই ভাবছি আজ ভার্সিটি যাব না।তোমার সাথেই কাটিয়ে দিব।কি বলো।”

“আমি আর কোনো কথা শুনতে চাচ্ছি না।তুমি এখন..”

প্রিয়শা কথার মাঝখানে থেমে গেল।দেখল তাহমিদ প্রিয়শার দিকে নেশাক্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।নিজের অধর প্রিয়শার অধরের কাছে নিয়ে আসছে।চোখ বন্ধ করে।প্রিয়শার মাথায় দুষ্টু বুদ্ধি খেলল।তাহমিদ আস্তে আস্তে প্রিয়শার অধরের কাছে আনতেই যখন অধর ছোঁয়াবেপ্রিয়শা জোরে বলে উঠল,

“ফিজা তুমি এখানে।”

প্রিয়শা মুখে এমন কথা শুনে তাহমিদ প্রয়শাকে ছেড়ে দিল।প্রিয়শা ছাড়া পেয়ে উঠে দাঁড়িয়ে হাসতে লাগল।তাহমিদ সেই হাসির দিকে তাকিয়ে বলল,

“এভাবে আমার রোমান্টিক মুড নষ্ট করে দিলে।দাঁড়াও দেখাচ্ছি তোমাকে।”

বলে তাহমিদ প্রিয়শার কাছে যেতেই প্রিয়শা হাসতে হাসতে দৌড়াতে দৌড়াতে বলল,

“আমাকে ধরা তুমি পাবে না।নিচে এসো তাড়াতাড়ি। ”

“কতক্ষণ পাবো না।শেষ পর্যন্ত আমার কাছেই আসতে হবে।”

প্রিয়শা তাহমিদের কথা শুনে দৌড়ে ড্রয়িংরুমে এসে আসল।এসে একজনকে দেখে দাঁড়িয়ে গেল।বিষ্ময় ধরা দিল চোখে মুখে।চোখ দিয়ে পানি বের হলো।

#চলবে……