#স্বপ্ন_জুড়ে_তুমি
#পর্ব_২৫
#সামসুন_নাহার
প্রিয়শা ও আদিল একে অপরকে জড়িয়ে ধরে আছে।দুইজনের চোখে পানি চিকচিক করছে।প্রায় অনেকক্ষণ পর প্রিয়শা আদিলকে ছেড়ে দিয়ে আদিলের গালে হাত রেখে আদুরে স্বরে বলল,
“কেমন আছিস ভাই।কত শুকিয়ে গেছিস।”
“ভালো আছি বুবু।তুই কেমন আছিস।”
“আমিও ভালো আছি।আম্মু কেমন আছে।”
“আম্মুও ভালো আছে।”
প্রিয়শা কিছুটা মন খারাপ করে বলল,
“আব্বু কেমন আছে?আমার কথা বলে।আমাকে মনে পড়ে।কিছু জিজ্ঞেস করে আমার সম্পর্কে ।”
আদিল ও প্রিয়শার মত মন খারাপ করে বলল,
“আব্বু আমাদের সাথে কথা বলে না।সবকিছু এখন আলাদা হয়ে গেছে।আব্বু বাইরে থেকে খেয়ে আসে।আমার যা ইচ্ছে তাই করছি আব্বু দেখেও কিছু বলছে না।আমার ভালো লাগছে না একদম।আব্বু কি আমাদের সাথে আর কথা বলবে না।”
প্রিয়শা মুখ ছোট করে বলল,
“ওহ।দেখিস ভাই সব ঠিক হয়ে যাবে।আব্বু আমাদের অনেক ভালোবাসবে।আমাদের আর কোনো আক্ষেপ থাকবে না।শুধু সঠিক সময়ের অপেক্ষা। ”
“ঠিক হলেই ভালো।তোকে দেখার ইচ্ছে করছিল তাই চলে আসলাম।এখান থেকে সোজা স্কুল যাব।”
প্রিয়শা হেসে বলল,
“ঠিক করেছিস।বাড়ির কথা মনে পরছিল আজ।বিশেষ করে তোর।এসে ভালো করেছিস।”
“তোর এই হাসিমুখ দেখেই আমার ভালো লাগল।সবসময় হাসিখুশি থাকবি।”
“বড় হয়ে গেছিস।বড় বড় কথা শিখে গেছিস।”
“হুম আমি এখন বড় হয়ে গেছি।আর আমি বড় ছিলাম তুই বুঝতে পারিসনি।”
প্রিয়শা আদিলের মাথায় হালকা চাপড় মেরে বলল,
“হু!বড় হয়ে গেছে। পাগল একটা।”
আদিল হাসল শব্দ করে। আদিলের সাথে হাসল প্রিয়শা।দুই ভাইবোনের হাসিখুশি কথাবার্তা শুনে বাড়ির সবাই নিরবে হাসল।আদিল হাসি থামিয়ে বলল,
“আজ আসি।নাহলে দেরি হয়ে যাবে।অন্যদিন আসব আবার।”
আদিলের যাওয়ার কথা শুনে প্রিয়শা মন খারাপ করল।যে ভাই আগে সারাদিন তার কাছে থাকত।আজ সে ভাই কিছু সময়ের জন্য আজ তার কাছে।সময় মানুষকে কোথা থেকে কোথাও নিয়ে যায়।প্রিয়শা মন খারাপ করে বলল,
“এখনই যাবি।থাক আর কিছুক্ষণ। তারপর যাবি।”
আদিল হেসে বলল,
“না আপু এখন না গেলে দেরি হয়ে যাবে।আমি অন্যদিন আসব।”
“আচ্ছা।”
প্রিয়শা মন খারাপ করল।তা দেখে আদিল প্রিয়শাকে জড়িয়ে ধরে বলল,
“মন খারাপ করিস না।আমি আবার আসব তো।এভাবে মন খারাপ করলে আমার আর আসতেই ইচ্ছে করবে না।”
প্রিয়শা মন খারাপের মাঝেও একটু হাসল।হেসে বলল,
“আচ্ছা আর মন খারাপ করব না।বাসায় গিয়ে ফোন করবি আমায়।”
“আচ্ছা।”
বলেই আদিল যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে তখন ফাতেমা বেগক আসলেন।তিনি এতক্ষণ দূরে দাঁড়িয়ে ভাইবোনের মিষ্টি মুহুর্ত দেখছিল।তিনি নিজেকে যতটা খারাপ দেখাচ্ছেন তিনি ততটাও খারাপ না।তিনি সহাস্যে হেসে বলল,
“এই ছেলে নাম কি তোমার।”
আদিল ফাতেমা বেগমকে দেখে ক্ষানিকটা ভীতু হলেও সেটা প্রকাশ না করে বলল,
“আদিল।”
“সুন্দর নাম।তো বোনকে দেখতে এসে শুধু বোনকেই দেখবা।আমাদের সাথে কথা বলবা না।”
ফাতেমা বেগমের কথা শুনে আদিল অপ্রস্তুত হলো।অপ্রস্তুত হেসে বলল,
“হুম বলব।কেমন আছেন আন্টি।”
আদিলের এমন কথা শুনে ফাতেমা বেগম হাসলেন।হেসে বললেন,
“ভালো।প্রথমবার বাড়িতে আসলে এভাবে না খেয়ে যেতে দিব না।খেয়ে যেতে হবে।”
“না আন্টি আজ কিছু খাব না।খেয়ে আসছি।আজ যাই নাহলে দেরি হয়ে যাবে।”
ফাতেমা বেগম নিজের হাস্যজ্বল মুখ গম্ভীর করে বললেন,
“কেন খাবে না।তোমার খাবারে কি কিছু মিশিয়ে দিব ভেবেছ।”
“না আন্টি আমি কখ..।”
আদিলের কথার মাঝখানে ফাতেমা বেগম হাত দেখিয়ে আদিলকে চুপ করিয়ে বলল,
“না খেয়ে গেলে বোনকে দেখার ইচ্ছে বাদ দাও।”
আদিল বিচলিত হয়ে বলল,
“না আন্টি এভাবে বলবেন না।আমি খেয়ে যাব।”
আদিলের এই কথা শুনে বাড়ির সবাই হেসে উঠল।আদিল লজ্জায় পরে গেল।এইভাবে এতজনের সামনে লজ্জা পাওয়া অনেক বিব্রতকর। ফাতেমা বেগম আদিলের অবস্থা বুঝে বললেন,
“হাসি বাদ দিয়ে সবাই নিজের কাজ করো।আর আদিল তুমি চিন্তা করিও না। তাহমিদ তোমাকে পৌঁছে দিয়ে আসবে।”
আদিল সামান্য হাসল।ফাতেমা বেগম নিজের কাজে চলে গেল।প্রিয়শা এসে আদিলকে নিয়ে বসে গল্প করতে লাগল।
————————–
তাহমিদ আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজের চুল ঠিক করছে।পরনে প্রিয়শার পছন্দ করা শার্ট।যেভাবে কল্পনা করেছিল সেভাবে সব হচ্ছে।তাহমিদের চুল ঠিক করা হয়ে গেলে তাহমিদ প্রিয়শার সামনে দাঁড়াল। প্রিয়শা ভ্রু কুচকে বলল,
“কি চাই।এভাবে আমার সামনে দাঁড়ালে কেন।”
তাহমিদ নিজের হাতের টাই দেখিয়ে বলল,
“পরিয়ে দাও।আজ থেকে এটা তোমার দায়িত্ব। ”
প্রিয়শা হাসল।মাঝেমধ্যে সামান্য কিছুর মধ্যেই অনেক আনন্দ জড়িত থাকে।তেমনিভাবে এই কাজে প্রিয়শা খুশি সাথে তাহমিদ।প্রিয়শা খুশি মনে মুখে হাসির রেখার টেনে তাহমিদকে টাই পরিয়ে দিতে লাগল।প্রিয়শা নিজ মনে টাই পরিয়ে দিচ্ছে।তাহমিদ প্রিয়শার কোমড় চেপে ধরে নিজের সাথে মিশিয়ে নিল।প্রিয়শা কিছু বলল না।টাই পরিয়ে তাহমিদের চোখে চোখ রাখল।তাহমিদ হেসে প্রিয়শার কপালের চুলে ফু দিয়ে আদুরে কন্ঠে বলল,
“প্রিয় মনে আছে একদিন তুমি রাগ করেছিল। ”
প্রিয়শা ভ্রু কুচকে জানতে চেয়ে বলল,
“কখন আমার তো মনে পরছে না।”
তাহমিদ দুষ্টু হেসে বলল,
“সেইদিন যেদিন আমি সুন্দর শার্ট পরে গিয়েছিলাম আর সব মেয়েরা আমার দিকে তাকিয়ে ছিল সেদিন।”
সেদিনের কথা মনে পরতেই প্রিয়শা মন খারাপ করে বলল,
“সবাই তোমার দিকে তাকিয়ে ছিল।”
তাহমিদ হেসে বলল,
“সবাই আমার দিকে তাকিয়ে থাকলেও আর আমি তোমার দিকে তাকিয়ে ছিলাম।আমি তোমাতে মুগ্ধ ছিলাম আর তোমাতেই মুগ্ধ হবো।বুঝেছ আমার অর্ধাঙ্গিনী প্রিয়।”
তাহমিদের কথা শুনে প্রিয়শার মুখে আবার হাসি ফুটে উঠল। তাহমিদ আবার বলল,
“সেদিন আমি তোমাকে বলেছিলাম।আমার ঘরে স্থায়ীভাবে আসো।তোমার পছন্দের শার্ট পরে আসব প্রতিদিন। তোমার পছন্দের সব হবে।দেখো আজ সবকিছু পূরণ হয়ে গেল।আজ তোমার পছন্দের শার্ট আমার গায়ে।তুমি আমাকে রেডি করতে সাহায্য করছ।যা আমি এতদিন যা কল্পনা করে এসছি তা সব সম্ভব হলো।আর সব স্বপ্ন পূরন হবে এখন।”
তাহমিদের কথা শুজে প্রিয়শা আবেশে তাহমিদের বুকে মাথা রাখল।মোহময় কন্ঠে বলল,
“ভালোবাসি।ভালোবাসি।”
তাহমিদ ঠোঁটের কোণে হাসির রেখা টেনে বলল,
“উহু! এত সহজে চিড়ে ভিজবে না।সকালে কি করেছ ভুলে গেছ।তোমাকে এখন শাস্তি পেতে হবে।”
প্রিয়শা মাথা তুলে তাহমিদের দিকে তাকিয়ে ভ্রু কুচকে বলল,
“কি বলতে চাচ্ছ তুমি।”
তাহমিদ কন্ঠে দুষ্টুমির রেশ ধরে বলল,
“অনেকগুলো আদর করে দাও।তাহলে তোমার শাস্তি মাফ হবে।”
“পারব না আমি।”
“তাহলে আর কি।আমিও আজ যাব না।বউকে জড়িয়ে ধরেই পার করে দিব সময়।কি বলো বউ ভালো হবে না।”
তাহমিদের কথা শুনে প্রিয়শা মুখ কুচকে বলল,
“উফ! তাহমিদ কি বলছ।আগে তো তুমি এইরকম ছিলে না।”
তাহমিদ প্রিয়শার গালে নিজের হাত স্লাইড করতে করতে বলল,
“আগে বউ ছিল না।তাই আগে এইরকম করিনি।এখন বউ আছে।এখন আমার যা ইচ্ছে সব বউয়ের সাথে করব।তাড়াতাড়ি করো নাহলে তোমার ভাইয়ের দেরি হয়ে যাবে।”
প্রিয়শা পরল বিপাকে।তাহমিদ যা বলছে তা করেই ছাড়বে।আর এইদিকে আদিলের দেরি হয়ে যাচ্ছে। তাই প্রিয়শা কিছু বলল না।তাহমিদের গালে,কপালে,নাকের উপরে গাঢ় করে চুমু খেল।প্রিয়শা বলল,
“হয়ে গেছে যাও এখন।আর পারব না।”
প্রিয়শার কথা শুনে তাহমিদ ভ্রু কুচকে বলল,
“এভাবে বলছ যেন তোমার কাছে বিষ চেয়েছি আর তুমি আমাকে তা দিতে চাচ্ছ না।”
“হয়েছে যাও এখন।”
“উহু!হয়নি এখনো। ”
বলেই তাহমিদ নিজের অধর প্রিয়শার অধরের কাছে নিয়ে গেল।কিছু সময়ের ব্যবধানে প্রিয়শার অধর নিজের দখলে নিয়ে নিল।একে অপরের ভালোবাসা আদান প্রদান করল।কিছু সময় পর প্রিয়শা তাহমিদকে ছেড়ে দিয়ে উল্টো পাশ ফিরে বলল,
“যাও এখন।”তাহমিদ হেসে বলল,
” যেভাবে বলছ মনে হচ্ছে এই প্রথম..। ”
তাহমিদকে থামিয়ে প্রিয়শা বলল,
“যাও তো।”
তাহমিদ আর কোনো কথা না বাড়িয়ে হেসে নিজের কাজে চলে গেল।
——————
আজ প্রায় এক সপ্তাহ পর তাহমিদ ভার্সিটিতে আসল।সেদিনের মিটিং বাদ দিয়ে সেদিন পুরো মিসিং ছিল।তারপর তাহমিদ এক সপ্তাহের জন্য ছুটি নিয়েছিল অবশ্য। তবে তাহমিদের ধারণা এতদিনে তাদের বিয়ের ঘটনা সবাই জেনে গেছে।তবে সেই বিষয় নিয়ে তাহমিদ বেশি ভাবল না।সে তো বিয়েই করেছে খারাপ কাজ তো করেনি।কেউ জিজ্ঞেস করলে বলে দিবে।এত সংসয়ের কি আছে।
তাহমিদ এসব ভেবে ক্লাসের দিকে যাচ্ছিল। তখন একজনের ডাকে থেমে গেল।
#চলবে…………………