#হয়তো_তোমারই_জন্য
#পর্বসংখ্যা_২
#সাদিয়া_তাসনিম
‘ গাধী তুই এভাবে বাহিরে গিয়েছিলি এই বৃষ্টি মাথায়?’
সাঁঝ যখন সৌহার্দ্যের শার্টটা খুলে তা নিচে রেখে হাতে থাকা ছাতাটা বন্ধ করছিলো ঠিক তখনই হঠাৎ ল্যাভেন্ডা কালারের একটা কামিজ পরে কাক ভেজা হয়ে বাড়িতে প্রবেশ করলো তাসনিয়া আর বাড়িতে প্রবেশ করতে করতে সাঁঝকে উদ্দেশ্যে করে কথাগুলো বলে উঠলো সে। সাঁঝ তাসনিয়ার কথাটা শুনে নিজের হাতের কাজটা করতে করতে একবার ঘাড় ঘুরিয়ে তাসনিয়াকে দেখে নিলো। সে তাসনিয়ার কথা শুনে নিজের মুখে বিরক্তি ফুটিয়ে তুলে বলে উঠলো,
‘জানিস সৌহার্দ্য ভাই আজ কী করেছে? ‘
তাসনিয়া ফ্লোরে ঝুঁকে তার ছাতাটা নিচে রেখে। নিজের পায়ের জুতাটা খেলে নির্দিষ্ট স্থানে রাখতে রাখতে বলে উঠলো,
‘জানি সব। এই ঝড়বৃষ্টির মধ্যে ভাই যে ওদের এমন শোচনীয় অবস্থায় করবে ভাবিনি আমি। ‘
ঠান্ডা বাতাসে সাঁঝের শরীরে কাঁপুনি দিয়ে উঠছে। হিমজড়ানো ঠান্ডা হাওয়াই সাঁঝের মুখশ্রী একদম ছোট হয়ে গেছে। তাসনিয়া সাঁঝকে একবার ভালো ভাবে লক্ষ্য করলো। বৃষ্টির পানিতে সাঁঝ একদম ভিজে গেছে সে।যার ফলে তার গায়ের সাদা রংয়ের কামিজটাই সবকিছু ভালো করে বোঝা যাচ্ছে। এই মেয়েটাকে নিয়ে যে কী করবে? মনে মনে কথাটা ভেবে তাসনিয়া নিজের মুখ কুঁচকে সাঁঝের হাতের দিকে তাকাতেই নিজের ভ্রুঁ কুঁচকে নিলো। তার সাদা কামিজটার হাতের কাছে হালকা লাল লাল ছাপ। সাঁঝের বাঁশের মতো সরু দু’হাতে এমন লালচে দাগ দেখে তাসনিয়া অবাক হলো। সে সাঁঝের হাত টেনে নিজের হাতের উপর রেখে মৃদু কন্ঠে জিজ্ঞাসা করে উঠলো ,
‘ এটা কী করো হলো সাঁঝ?হাত কেটেছিস কী করো?’
সাঁঝ এতোক্ষণ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে নিজের জগতে ডুব দিয়েছিলে কিন্তু হুট করে তাসনিয়ার কথা শুনে সাঁঝ নিজের হুঁশে আসলো এবং নিজের কাটা স্থান ঢেকে রাখার অক্ষুণ্ণ চেষ্টা করতে করতে বলে উঠলো ,
‘ তেমন কিছু না ভাই, পরে গিয়ে চোট পেয়েছি।’
তাসনিয়া সাঁঝের কাছ থেকে এমন একটা উত্তর শুনে চুপ করে দাঁড়িয়ে রয়লো। এখন তার সত্যি সত্যি মেয়েটার উপরে রাগ হচ্ছে। এই মেয়েটাও না! তাসনিয়ার সাথে সাঈদও বাড়িতে প্রবেশ করছিলো। এই ঝড়বৃষ্টির মধ্যে তাসনিয়াকে সে কলেজ থেকে আনতে গিয়ে ছিলো কিন্তু বাড়ির কাছে আসলে হঠাৎ তার ফোন বেজে ওঠলে সে বাহিরে দাঁড়িয়ে কারোর সাথে কথা বলছিলো কিন্তু কথা শেষ হয়ে গেলে সাঈদ যখন তাসনিয়াদের সামনে চলে আসলো তখন তাসনিয়া ঘাবড়ে গেলো। তাসনিয়া সাঈদকে তাদের দিকে আসতে দেখে এই বৃষ্টি বাদলের দিনেও শুকনো ঢোক গিললো। কী করবে বুঝতে না পেরে সে তাড়াতাড়ি সাঁঝের সামনে দাঁড়িয়ে পরলো। সাঁঝের কামিজ ভিজে তার শরীরের অধিকাংশ জায়গায় স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে তাই সাঁঝকে যেনও সাঈদের সামনে কোনো লজ্জাজনক পরিস্থিতিতে পরতে না হয় তাই সে সাঁঝের সামনে এসে দাঁড়িয়ে পরলো।সাঈদ একবার তাদের দুইজনের কান্ড দেখে কোনো কথা না বলে বাড়ির ভিতরে ঢুকে গেলো৷ তারপর সাঁঝ আর তাসনিয়া এভাবে এখনও ভেজা অবস্থায় বাহিরে দাঁড়িয়ে আছে বলে পিছনে না ফিরতে সামনের দিকে যেতে যেতে কর্কশ কন্ঠে বলে উঠলো,
‘ তোরা দুই হাঁদা এখানে দাঁড়িয়ে আছিস কেন? যা তাড়াতাড়ি তোদের রুমে গিয়ে জামা পাল্টে নে। ‘
সাঈদ আর কোনো কথা না বলে তাড়াতাড়ি নিজের রুমে চলে গেলো পোশাক পরিবর্তন করার জন্য। সাঈদের কথা শুনে সাঁঝ আর তাসনিয়া নিজেদের রুমে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালেও পথিমধ্যে তাদের দুইজনের পা থমকে গেলো।
তাসনিয়া সাঁঝের হাতের দিকে তাকিয়ে মৃদু কন্ঠে বলে উঠলো,
‘ রুমে গিয়ে জায়গাটা পরিষ্কার করে মলম লাগাবি সাঁঝ।’
সাঁঝ তাসনিয়াকে নিজের জন্য চিন্তা করতে দেখে মুখে হাসি নিয়ে মৃদু কন্ঠে বলে উঠলো,
‘ আরে তুমি এতো চিন্তা করছো কেন আমি দেখছি বিষয়টা।’
সাঁঝের কথাটা শেষ হতে না হতেই তাসনিয়া ব্যঙ্গ করে বলে উঠলো,
‘ তুই আর নিজের খেয়াল রাখবি? আমাকে কী বোকা পেয়েছিস? ‘
তাসনিয়ার কথাটা শুনে সাঁঝ চোখ ছোট ছোট করে বলে উঠলো,
‘ তাসনিয়া।’
‘ চুপ যা বেয়াদব মহিলা। আচ্ছা, দাদামশাই দেখেছে তোকে এই অবস্থা? ‘ নিজের মনে বিশাল কৌতূহল নিয়ে জিজ্ঞাসা করলো তাসনিয়া। সাঁঝ তাসনিয়ার কৌতুহল মিটিয়ে মৃদু কন্ঠে বলে উঠলো,
‘ হুম।’
সাঁঝের ছোট করে হুম বলাটা শুনে তাসনিয়া নিজের চোখ বড় বড় করে নিলো তারপর মৃদু কন্ঠে বলে উঠলো,
‘ হায় আল্লাহ! মেয়ে তোর কপালে দুঃখ আছে দেখিস।’
সাঁঝ তাসনিয়ার কথাটা শুনে নিজের ঠোঁটের কোণে হাসির রেখা ফুটিয়ে তুলে বলে উঠলো,
‘ দাদামশাই আর আমাকে শাস্তি দেবে? নো বেবস তেমন কিছুই হবে না দেখিস।’
‘ ওভার কনফিডেন্স মহিলা।’
‘ সাঁঝ তালুকদার বলে কথা! ‘
‘ যা দূর হ। রুমে গিয়ে পোশাক পাল্টে আয়। আমি সুবহাকে তোর রুমে পাঠিয়ে দিচ্ছি।’
‘ এই, না! না। ও গিয়ে কী করবে? আমি নিজের জামা নিজ পাল্টাতে পারি। বা* ও গেলে তোমার মতো অনেক কথা শোনাবেনি আপা।ওকে পাঠানোর বদলে তুমি আমাকে এক গ্লাস পানিতে ডুব দিতে বলো, এই সাঁঝ সেখানেও কোনো ভাবে এডজাস্ট হয়ে যাবেনি কিন্তু ওকে পাঠালে আম্মুর থেকে বেশি পকপক করবেনি। ‘
‘ এতো ঢং করতে পারিস না তুই সাঁঝ। আর তোর এই শোনাবেনি,যাবেনি,করবেনি গেলো না? সৌহার্দ্য ভাইয়া এবার শুনলে তোর কানের নিচে লাগায় দিবে।’
‘ কানের নিচে আবার কী লাগানো যায় ভাই?’
‘ দাঁড়া সৌহার্দ্য ভাইয়া আসুক তাকে প্র্যাকটিকালে করে দেখাতে বলছি।’
‘ এতো প্র্যালটিকাল দেখা শখ হলে নিজে কান পেতে ঐই জিরাফের হাতের নিচে দাঁড়াস।’
‘ ভাইয়াকে আবার জিরাফ বললি? ভাইয়া শুনলে রেগে যাবে সাঁঝ।’
‘ জিরাফকে জিরাফ বলবো না তো বাটুল বলবো নাকি? ‘
‘ আরে আল্লাহ এই মেয়েটা এতো কথা বলে না! যা, রুমে যা আর আমাকে ছাড়,তা নাহলে দুই জনেরই ঠান্ডা লেগে যাবে।’
‘ শোন তাসনিয়া এই সাঁঝকে কখনো এসব জ্বর ঠান্ডার ভয় দেখাবি না।শোন আমি নিজেই একটা ভাইরাস তাহলে অন্য ভাইরাস দ্বারা কীভাবে আক্রান্ত হবো বল?’
তাসনিয়া সাঁঝের কথাটা শুনে সাঁঝের মাথায় একটা চাটি মরলো। সে সাঁঝকে উদ্দেশ্য করে কিছু বলতে যাবে তার আগেই সাঈদ নিজের পোশাক পরিবর্তন করে নিচে নামতে নামতে সাঁঝ আর তাসনিয়াকে এখনও ভেজা পোশাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে গম্ভীর কণ্ঠে বলে উঠলো,
‘ তোরা দুইটা এখনো ভেজা পোশাক পরে দাঁড়িয়ে আছিস? আমি কী বলে গেলাম তা কানে ঢোকেনি? দাঁড়া তোদের আম্মুকে ডাক দিচ্ছি।’
সাঈদ নিজের কথাটা শেষ করে দম নেওয়ার সাথে সাথে তাসনিয়া আর সাঁঝ এক দৌড়ে উপরে উঠে গেলো। সাঁঝ উপরে যাওয়ার সময় চিৎকার করে বলে উঠলো,
‘ ভাইয়া সব তাসনিয়া মুরুব্বির দোষ।বিশ্বাস করো পিও।’
উল্টো দিকে তাসনিয়া দৌড়ে উপরে যাওয়ার সময় চিৎকার করে বলে উঠলো,
‘ ভাইয়া সব সাঁঝ বেটির দোষ।আমি নির্দোষ বিশ্বাস করো পিও।’
সাঈদ তাসনিয়া আর সাঁঝের এমন কান্ড দেখে মুচকি হেসে সেখান থেকে চলে গেলো।
.
.
সন্ধ্যা বেলায় সাঁঝ নিজের রুমে ঘুমিয়ে ছিলো ঠিক তখনই ঘুমের মধ্যে হাতের কাটা স্থানটা ব্যথায় অনুভূত হওয়াই সে নিজের চোখ মুখ কুঁচকে নিলো। তারপর সাঁঝ আস্তে আস্তে নিজের চোখ খুলে সামনে তাকালো। সামনের দিকে তাকাতেই সাঁঝ স্তব্ধ হয়ে গেলো। কখন সৌহার্দ্য এখানে কী করছে ভেবে না পেয়ে সে লাফ দিয়ে ওঠবার চেষ্টা করলো তার আগেই সৌহার্দ্য সাঁঝের হাত চেপে গম্ভীর কণ্ঠে বলে উঠলো,
‘কুম্ভকর্ণ একটা অন্যদিনতো ট্যাঙ্কির সব পানি আপনরা গায়ে ঢেলে দিলেও ঘুম ভাঙ্গে না তাহলে আজ এতো তাড়াতাড়ি ঘুম কীভাবে ভাঙ্গলো?’
সাঁঝ সৌহার্দ্যের কোনো কথা শুনলো না। সৌহার্দ্য তাকে কুম্ভকর্ণ বলেছে এটা ভেবেই ঘুমের ঘোরে নিজের চোখমুখ কুঁচকে নিলো। তারপর সৌহার্দ্যের বলা কথাগুলোর প্রতিবাদ করে ঘুম জড়ানো কন্ঠে বলে উঠলো,
‘ আল্লাহ! আপনি এতো মিথ্যা কথা কোন মুখ দিয়ে বলেন ভাইয়া?’
‘ যে মুখ থেকে ঘুম থেকে ওঠার পর দুগ্ধ বের হয় না।’
সৌহার্দ্যের কথাটা শুনে সাঁঝ চেতে উঠলো। সে নিজের মুখটা আরো একটু খুলে, মুখের বাতাস সৌহার্দ্যের দিকে ঠেলে গম্ভীর কণ্ঠে বললো উঠলো,
‘ আমি তো জানতাম আপনি মানুষ?আপনি ফেরেশতা হলেন কবে? ওরা সব ধরনের না-পাকি থেকে মুক্ত কিন্তু আপনি তো ইবলিশ একটা।’
‘ আর তুই হলি এই ইশবিলের বউ।’
সাঁঝ সৌহার্দ্যের কথাটা শুনে নিজের মুখের বিরক্তির ছাপ নিয়ে কিছু বলতে যাবে তার আগেই সৌহার্দ্য সাঁঝের হাতটা কোমলভাবে তুলে নিয়ে নিজের হাতে উপর রেখেছে মলম লাগাতে লাগলো। কিন্তু হঠাৎই সাঁঝের কাটা স্থানে জ্বালা করে উঠলে সে বিদ্যুৎ বেগে তার সামনে বসে থাকা মানুষটার দিকে চোখ বড় বড় করে তাকালো। সৌহার্দ্য সাঁঝের কাটা স্থানে ফুঁ দিতে দিতে মলম লাগিয়ে দিচ্ছে। সৌহার্দ্যকে ফ্লোরে এক হাঁটু ভর দিয়ে বসে থাকতে দেখে চমকে উঠে সাঁঝ, সাথে একটু অবাকও হলো যার ফলে তার ঘুম ঘুম ভাবটা কেটে গেলো। সৌহার্দ্য সাঁঝের কেটে যাওয়া স্থানটা আস্তে আস্তে পরিষ্কার করে মলম লাগিয়ে দিলো। সাঁঝ এখনও কেমন যেনও বাকরুদ্ধ হয়ে বসে আছে সৌহার্দ্যের এমন ভালো মানসিকতা দেখে। আজ সৌহার্দ্য এতো পাল্টে গেলো কেন? অন্য সময় হলে তো সৌহার্দ্য তার কাটা স্থানে পারলে লবণ, মরিচ ছড়িয়ে দিতে পারলে বাঁচে। সাঁঝ স্তব্ধ হয়ে গেছে সৌহার্দ্যের স্পর্শ পেয়ে। সাঁঝ স্তব্ধ হয়ে বসে থাকলেও ভালো করেই ধারণা করতে পারলো সৌহার্দ্য রুদ্রমূর্তি ধারণ করেছে তা। হঠাৎ সৌহার্দ্যের কী হলো তাই ভাবতে লাগলো সাঁঝ। এদিকে সৌহার্দ্য সাঁঝে ডান হাত ছেড়ে বাম হাত শক্ত করে চেপে ধরে রাগান্বিত কন্ঠে জিজ্ঞাসা করে উঠলো ,
‘ ঢাকায় থেকে এসে প্রতিবার শুনি তুই কী কী অকাজ করে বসে আছিস। তুই এতোসব অকাজ কখন করে বসিস সাঁঝ বল তো?’
সৌহার্দ্য শক্ত ভাবে সাঁঝের কনুই চেপে ধরেছে বলে সাঁঝ ব্যাথা পেলো। সৌহার্দ্যের এমন ভয়ংকর রুপ দেখে সে যেনও ভয়ে হালকা কাঁপতে থাকলো।কাঁপার ফলে সাঁঝের হাত সাথে সাঁঝের ছোট দেহটাও কম্পিত হতে থাকলো। সাঁঝ অল্পতেই ভয় পেয়ে যায়। তাই সে সৌহার্দ্যের এমন রুপ দেখে অতন্ত্য কষ্টের সাথে বলে উঠলো,
‘ হাত ছাড়েন আমার, লাগছে । ‘
সাঁঝের কথা শুনে সৌহার্দ্যের যেনও কোনো পরিবর্তন হলো না। বরং সে আরো সুদৃঢ় হাতে সাঁঝের কনুই চেপে ধরলো। সৌহার্দ্যের হাতেই বাঁধন আগের থেকে আরো দৃঢ় হলে সাঁঝ ব্যাথায় মুচড়িয়ে ওঠলো।আবারও সৌহার্দ্য কর্কশ কন্ঠে সাঁঝকে জিজ্ঞাসা করে উঠলো ,
‘ ওই বুড়ো লোকের প্রেম প্রস্তাবে রাজি হলি কেন? তোর মা জানে তোর কীর্তিকলাপ ? জানাবো আমি?’
সৌহার্দ্যের একটা কথায় মাথা ভোঁ ভোঁ করতে থাকলো সাঁঝের। তার মা যদি জানতে পারে, সে এই বুড়োর সাথে এমন ভালতু মজা করেছে তাহলে যে তার মা তাকে মেরে চামড়া ছুলে রোদে শোঁকাতে দেবে তা ভালো ভাবেই জানে সে। সাঁঝ সৌহার্দ্যের দিকে ভয় ভয় চোখে তাকিয়ে বলে উঠলো ,
‘ আম্মুকে কিছু বলেন না ভাইয়া।বললে আমার শরীরে আর ছাল চামড়া থাকবে না। ‘
সাঁঝে মৃদু কন্ঠস্বর শুনে সৌহার্দ্যের মেজাজ এখন আগের থেকে অনেকটা ঠান্ডা হলো। আজ সাঁঝের জন্য তার হাত পায়ে ব্যাথা হয়েছে এর প্রতিশোধ তো সে নিয়েই ছাড়বে মনে মনে ভাবলো সৌহার্দ্য। সাঁঝকে একটু ভয় দেখানোর জন্য সৌহার্দ্য বলে উঠলো ,
‘ এতো বড় কাজ করে আবার নির্লজ্জের মতো বলছিস আম্মুকে বলো না ভাইয়া। ‘
সাঁঝ পরে গেছে ঝামেলার মধ্যে সে কাল একটু বেশিই উত্তেজিত হয়ে কাদির সাহেবের গালে দু খানা চুমু দিয়ে বসেছিলো। কাদির সাহেব তাদের গ্রামের একজনই সম্পর্কে সাঁঝের দাদা হয়। বয়স তার আশির কাছাকাছি। ছোট বেলা থেকে কাদির সাবেহ সাঁঝকে, সুবহাকে আর তাসনিয়াকে দেখলে বড় বউ ছোট বউ করে ডাকতো। কিন্তু ইদানীং কাদির সাহেব কোথা থেকে আউ লাভ ইউ শিখেছে আর সাঁঝকে দেখলেই ছোট বউ আউ লাভ ইউ বলে উঠে। সাঁঝ হেঁসে উড়িয়ে দিলোও কাল যখন তাদের গাছ থেকে কাঁচা আম চুরি করতে গিয়ে ধরা খেয়েছিলো তখন সাঁঝ কাদির সাহেবের হাত থেকে বাঁচতে গিয়ে তাকেও ঢং করে আউ লাভ ইউ বলে ফেলে। এই পর্যন্ত ঠিক ছিলো, কিন্তু যখন কাদির সাহেব হেঁসে সাঁঝদের আম পারতে অনুমতি দেন তখন সাঁঝ অতিরিক্ত আনন্দ-উত্তেজনার ফলে কাদির সাহেবের গালে দু খানা চুম্মা দিয়ে দেয়। কিন্তু এঘটনা কী ভাবে সৌহার্দ্য জানতে পারলো? জানতে পেরে সে এসেছে এখন তাকে ভয় দেখাতে। কথাটা ভেবে সাঁঝ বিরক্তিতে নিজের মুখ কুঁচকে নিলো।তারপর সাঁঝ সৌহার্দ্যের শক্ত বাঁধন থেকে নিজের হাত সরিয়ে চোখ ছোট ছোট করে বলে ওঠলো,
‘ ভাইয়া এবারের মতো ক্ষমা করে দেও আর হবে না ‘
‘ হুট দূর হ তো, তোর ভাইয়াটা কে আবার? বুড়ো খানদানি টাকাওয়ালা আছে বলো ওর প্রস্তাবে রাজি হয়ে গেলি সাঁঝ?’
‘ কে কীসে রাজি হয়েছে কেলা? আমি তো ভুলে চুমু দিয়ে দিছি আর কাদির দাদা ভালো অনেক, সে বুঝেছে আমার ব্যপারটা। ‘
সৌহার্দ্য যখন সাঁঝের রুমে এসেছিলো তখন সৌহার্দ্য রেগে ছিলো কিন্তু এখন তার রাগটা কমলেও সে সাঁঝের দিকে তাকিয়ে কর্কশ কন্ঠে বলে উঠলো ,
‘ দেখ সাঁঝ তুই এখন বড় হয়েছিস,ছোট নেই আগের মতো। তোর যা মন চাই তা করতে পারিস না। জানিস তোর এই ঘটনা কাল বাজারে কিছু লোক কিভাবে তুলেছে?তোকে নিয়ে রামুরা পর্যন্ত কাদির দাদুকে বাজে কথা শুনিয়েছে।কাদির দাদু তার প্রতিবাদ করলে ওরা কাদির দাদাকে খুব খারাপ ভাবে ছোট করেছে ।তারপর আবার শুনলাম কাদির দাদার ছোট ছেলে নাকি তাকে বিশ্রী ভাবে কথা শুনিয়েছে। আমি জানি তুই কাদির দাদাকে কতটা সম্মান করিস। এটাও জানি তুই তাকে চুমু দিয়েছিস কোনো খারাপ উদ্দেশ্যে নয় কিন্তু এই গ্রামের আর পাঁচটা লোক তো সেটা ভাববে না। তারা তিলকে টেনে তাল করে ছাড়বে। তোর আব্বু যদি যদি গ্রামের লোকজনের মুখ থেকে তোর নামে এমন খারাপ কথা শোনো তাহলে সে বেশি কষ্ট পাবে না? তুই আজ-কাল বড্ড বেশি ভুল করিস সাঁঝ৷ দাদাভাই সব সামলে নিয়েছে হয়তো কিন্তু এখন থেকে একটু বুদ্ধি করে কাজ করিস প্লিজজ। ঘুম থেকে উঠে এখনও তো হাতমুখ ধুয়ে আসিস নি। ছ্যাদারে যা হাত মুখ ধুয়ে নিয়ে নেমে আয়। সকলে নিচে অপেক্ষা করছে। ‘
সৌহার্দ্য আর কোনো কথা না বলে সাঁঝের রুম থেকে বেরিয়ে আসতে নিবে তখনই সে লক্ষ্য করলো সাঁঝ এক মনে তার কথা গুলো শুনে চুপ হয়ে দাঁড়িয়ে রয়লো। তার মাথাটাও নিচু হয়ে গেলো। সৌহার্দ্য বিষয়টা বুঝতে পেরে রুম থেকে বের হলো না সে স্বাভাবিক কন্ঠে বলে উঠলো,
‘ আমার কথা বুঝতে পেরেছিস বালতি আক্তার বদনা?’
সৌহার্দ্যের মুখ থেকে নামটা শুনে সাঁঝ নিজের চোখ মুখ কুঁচকে নিলো। সে নিজের চোখ মুখ কুঁচকে বলে উঠলো,
‘ ছিঃ কী বিশ্রী নাম। ‘
‘ আবার যদি তোর মুখ থেকে কেলা শব্দটা শুনি তাহলে এই নামেই ডাকবো আর এতোও যদি কাজ না হয় তখন বারান্দায় নিয়ে গিয়ে এক লাথি মেরে বাড়ির নিচে ফেলে দিবো।’
‘ ভাইয়া তুমি না দুইদিন পরে ডাক্তার হবা আর তোমার ভাষা এমন?’
‘ হবা নাকি হবে?’
‘ দূর তোমার সাথে আর কোনো কথায় বলবো না।সব সময় ভুল ধরতেই থাকে।’
‘ এতো বকবক না করে ফ্রেশ হয়ে নিচে আয়। সকলে মিলে গেইম খেলার প্রস্তুতি করছে।’
সৌহার্দ্য নিজের কথাটা শেষ করে সাঁঝকে কোনো কথা বলার সুযোগ না দিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো। সাঁঝ সৌহার্দ্যের কথাগুলো শুনে একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো ফ্রেশ হওয়ার জন্য।
চলবে…