হয়তো তোমারই জন্য পর্ব-০৩

0
6

#হয়তো_তোমারই_জন্য
#পর্বসংখ্যা_৩
#সাদিয়া_তাসনিম

তালুকদার বাড়ি যুদ্ধের ঠিক দুই বছর আগে তৈরি করা হয়েছিলো। যুদ্ধের সাথে তালুকদার পরিবার ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে ছিলো যার ফলে এই বাড়ির প্রতিটা ইটপাথর ইতিহাসের সাক্ষী বহন করে বেড়ায় । কালো কাঠের বিমে মোড়ানো ছাদের সাথে সাদা সিলিং ফ্যানটি ধীর গতিতে ঘুরছে, এই ঝড়-বৃষ্টিতে বাাহিরে হাওয়া রুমের ভিতরে প্রবেশ করার ফলে এমন ভাবে ফ্যানটা ধীরগতিতে দুলছে আর এই পরিবেশে তালুকদার বাড়ির বাচ্চা-কাচ্চারা ক্যারাম গেইম খেলার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে।
এই রুমের ডানপাশে থাকা লম্বা লাউঞ্জারটার উপর কামরুল তালুকদার সাধারণ বিশ্রাম নেন তবে আজ এঘরে সকলে খেলা করবে বলে তিনি আর এখানে আসেন নি।
সাঈদ আর সাদ ক্যারাম বোর্ডের পাশে বসে বোর্ডের গুঁড়ো দিচ্ছি যাতে খেলার সময় স্ট্রাইকার আর গুটিগুলো সহজে পিচলে চলে যেতে পারে।
সাঈদ আর সাদ নিজেদের মধ্যে কথা বলতে বলতে কাজ করছিলো ঠিক তখনই সৌহার্দ্য নিজের ফোনটা পকেটে রাখতে রাখতে তাদের কাছে এসে বলে উঠে,

‘ ভালো করে গুঁড়া দে ভাই যাতে আজ জিততে পারি।’

সৌহার্দ্যের কথাটা শেষ হতে না হতেই সাঈদ আর সাদও সৌহার্দ্যের দিকে চোখ ছোট ছোট করে বলে উঠলো,

‘ তোমাকে আজ আমরা কোনো ভাবেই জিততে দেবো না ভাই।’

সৌহার্দ্য তাদের কথা শুনে সে কিছুটা ঝুকে সাঈদ আর সাদের মাথায় হাত বোলাতে বোলাতে বলে উঠলো,

‘ আমিও দেখি সোনা কেমন করে তোমরা আমাকে জিততে না দেও।’

সাঈদ আর সাদ সৌহার্দ্যের এমন ঠান্ডা কন্ঠে ঠান্ডা হুমকি শুনে শুকনো ঢোক গিললো কিন্তু পরক্ষণেই সাঈদের মাথায় কিছু একটা খেলে যেতেই সে নিজের মুখে হাসির ঝিলিক ফুটিয়ে তুলে শয়তানি স্বরে সৌহার্দ্যকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলো,

‘ আমি আর সাদ না পারলেও আজ সাঁঝকে তোমার পিছনে লাগিয়ে দিবো ভাই। জানি ও কী করেছে?’

সাঈদের কথাটা শুনে সৌহার্দ্য কৌতুহল চোখে সাঈদের দিকে তাকালো। সে সাঈদের দিকে তাকিয়ে এক ভ্রুঁ উঁচু করে বলে উঠলো,

‘ ও কী করেছে আবার? ‘

সৌহার্দ্যের কৌতুহল ভরা মুখ দেখে সাঈদ হাঁসলো। সে সৌহার্দ্যের চেহারের দিকে নিজের দৃষ্টি নিক্ষেপ করে মৃদু কন্ঠে বলে উঠলো,

‘ আগের বার তোমার কাছে হেরে গিয়েছিলো না ও? ‘

সাঈদের কথাটা শুনে সৌহার্দ্য নড়েচড়ে উঠলো। নিজের পুরুষালি ওষ্ঠে হাসির রেখা ফুটিয়ে তুলে মৃদু স্বরে জিজ্ঞাসা করে উঠলো ,

‘ হুম তো?’

সৌহার্দ্যের কৌতুহল দেখে সাঈদ আবারও মৃদু কন্ঠে বলে উঠলো,

‘ তুমি চলে যাওয়ার পরে প্রতিদিন বিকাল বেলায় দাদুভাইকে নিয়ে ক্যারাম খেলতে বসেছে এই কয়েকদিন। সে দাদুভাইয়ের কাছ থেকে ক্যারাম খেলার সব খুঁটিনাঁটি জিনিস শিখে নিয়েছে তোমাকে এবার হারাবে বলে।’

সাঈদের কথাটা শেষ হতে না হতেই সৌহার্দ্য নিজের ঠোঁটের উপর আরেক ঠোঁট চাপা দিয়ে তাদের দুইজনের দিকে তাকিয়ে বহু কষ্ট নিজের হাসিটা চেপে রেখে ফিসফিস করে বলে উঠলো,

‘ তাই নাকি?ছোট্ট জল্লাদটার দেখি আমাকে হারানোর খুব শখ!’

সৌহার্দ্য কথাটা একেবার ফিসফিস করে না বলায় সাঈদ আর সাদ সেটা শুনে নিলো। সৌহার্দ্যের হাসিটা তাদের দুইজনের কারোরই পছন্দ হলো না। যা হয়েছে সব সৌহার্দ্যের জন্য হয়েছে। সৌহার্দ্যের জন্য তাদেরকে ঝামেলা পোহাতে হয়েছে তাই নিজের মনে জমে থাকা অভিমানটা সাদ এতোদিন পরে বড় ভাইকে কাছে পেরে মৃদু কন্ঠে বলে উঠলো,

‘ সব তোমার জন্য হয়েছে ভাই, তুমি যদি সেবার আপু হেরে যাওয়ার পরে এতোগুলো কথা না শোনাতে তাহলে ও এমন কিছুই করতো না।’

সাদের কথাটা শুনে সৌহার্দ্য দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছাড়লো তারপর মৃদু কন্ঠে বলে উঠলো,

‘ পাগল আমি তো মজা করছিলাম ওর সাথে। ‘

‘ আমরা জানি কিন্তু তুমি জানোই তো সাঁঝের তার ছ্যাড়া, এভাবে না বললেও হতো।’

‘ কেন? আমি যাওয়ার পরে কোনো ঝামেলা করেছে নাকি?’

‘ ঝামেলা বলে ঝামেলা! যে ঝামেলার কোনো শেষ নেই এমন ঝামেলা। ‘

‘ যেমন..?’

‘ উমম.. কোনটা যে আগে বলি। আচ্ছা এটাই শোনো, প্রতিটা দিন আমাকে না হলে সাদকে টেনে আনবে ক্যারাম খেলার জন্য। বেয়াদবটা আমাদের ঘুম থেকে টেনে তুলে আনবে এই ক্যারামের জন্য। তার নাকি প্র্যাকটিস করতে হবে তা না হলে সে তোমাকে হারাতে পারবে না। ‘

সাঈদের কথাগুলো শুনে সৌহার্দ্য মৃদু হাসলো। তারপর সাঈদের পিছনে লাগতে বলে উঠলো,

‘ একটু না হয় ওর সাথে তোরাও প্র্যাকটিস করে নিতিস।’

‘ মজা করো না তো ভাই! ঘন্টার পর ঘন্টা কে বসে ওর সাথে গেইম খেলবে? আমাদের আর কোনো কাজ নেই নাকি?’

‘ জল্লাদটা কেমন খেলে এখন?’

‘ আগের থেকে অনেক ভালো। আজই দেখে নিও। তোমার প্রতিদ্বন্দ্বী হিসাবে ভালো।’

‘ তোরাও না, সবগুলো পাগল।আচ্ছা তোরা এই কাজটা শেষ করতে থাক আমি রুম থেকে আসছি।’

সৌহার্দ্য নিজের কথাটা শেষ করে সাঈদ আর সাদের উত্তরের অপেক্ষা করলো না। সে দ্রুত পায়ে রুমে চলে গেলো আর সৌহার্দ্য চলে যেতেই বাকি দুইটা নিজেদের কাজে মনোযোগ দিলো।

.
.

শ্রাবণ মাসের সূচনা। মেঘেরা যেন পুঞ্জীভূত ক্রোধ নিয়ে দল বেঁধে আকাশজুড়ে জমাট বেঁধেছে। আকাশের বুকে মেঘের গর্জনে পৃথিবী যেন স্তব্ধ হয়ে আছে। মেঘমালা কখনো রুদ্ররূপে বজ্রপাত ঘটাচ্ছে, আবার কখনো নিঃশব্দে চারপাশ ঢেকে দিচ্ছে কালো আঁধারে। জানালার পাশে দাঁড়িয়ে একদৃষ্টে প্রকৃতির এই ভয়াল রূপ পর্যবেক্ষণ করছে সুবহা।তাদের গর্জন মাঝে মাঝে ভয়ংকরভাবে আছড়ে পড়েছে আর সুবহা কেঁপে কেঁপে উঠছে।মেঘের ভারে সন্ধ্যার আলো যেন গভীর রাতের মায়াবী কালিমায় মিশে গেছে।
দোতলার জানালা থেকে সুবহা দেখল সামনের খালটা বৃষ্টির অশান্ত ধারা গায়ে মেখে উথাল-পাথাল করছে। তাদের ছোট্ট গ্রামের পিচঢালা রাস্তাটিও বৃষ্টির জলধারায় ধুয়ে গিয়েছে, আর তার ওপরের কাদামাখা ঘাসগুলো বৃষ্টির ছোঁয়ায় যেন নতুন জীবন পেয়েছে। চারপাশে বৃষ্টির মৃদু গুঞ্জন।

সুবহা জানালার পাশে থমকে দাঁড়িয়ে ছিল। হঠাৎ পেছন থেকে কয়েকটি পদশব্দ তার মনোযোগ আকর্ষণ করল। সে ধীরে পেছন ফিরে তাকালো। পিছনে ফিরে দেখতে পেলো তার রুমে ঢুকে দাঁড়িয়ে আছে বাড়ির ক্ষুদে সদস্যরা। তাদের কোলাহলমুখর উপস্থিতি সুবহার চিন্তাধারাকে বিঘ্নিত করল। সুবহা ধীরে ধীরে তাদের দিকে তাকালো নিজের চোখে স্পষ্ট কৌতূহল নিয়ে । এই চারজনের একসঙ্গে আসা তার কাছে একেবারে অপ্রত্যাশিত লাগলো কারণ তারা সচরাচর একসাথে হয় না। আজ যখন হয়েছে তখন যে এর পিছনে কোনো কারণ আছে তা সুবহা ভালো করে বুঝতে পারলো তাও সুবহা জানালার পাল্লা বন্ধ করতে করতে মৃদু স্বরে তবে মনে অদ্ভুত এক কৌতূহল নিয়ে জিজ্ঞাসা করে উঠলো,

‘ কী হয়েছে তোমাদের? সবার মুখ এমন রামগরুদের ছানার মতো করে রেখেছো কেন?’

সুবহার কথাটি শেষ হতে না হতেই,সাড়ে তিন বছরের ছোট্ট আলিফ তার মুখ ফুলিয়ে আধো-আধো গলায় সে বলে উঠলো,

‘ আম্মু কেক দিবে বলছিল, দেয় না। তুমি বানাও না, সুহা তুমি দেও।’

আলিফের সরল আবেদন যেন এক মুহূর্তে সুবহার হৃদয়ে নরম স্পর্শ এনে দিল। ক্ষুদ্র এই মানবশিশুর ঠোঁটের কোণে জমে থাকা অভিমান তাকে এক অদ্ভুত কোমলতায় আচ্ছন্ন করে দিল। আলিফের কথা শেষ হতে না হতেই বাকিরাও সুবহার ওড়না টেনে একই দাবি জানাতে থাকল। সুবহা বুঝতে পারল, আজ তাদের এই দাবি না মিটানো পর্যন্ত তার জন্য কোনো শান্তি নেই। তাই সে ক্ষুদে সদস্যদের এমন নির্ভীক আবদারে মৃদু হাসি ফুটিয়ে আলিফকে কোলে তুলে নিল। আলিফকে কোলে তুলে তার গোলাপি গালে একটুখানি চুমু খেয়ে বলে উঠলো,

‘ এখনই বানাতে হবে?’

সুবহার কোলের আলিফ আর নিচে দাঁড়িয়ে থাকা বাকি তিনজন একসঙ্গে মাথা নাড়ল। তাদের এমন একসঙ্গে সম্মতি দেখে সুবহা মৃদু হেসে ফেলল। তারপর তারা সুবহাকে আর কোনো কথা বলার সুযোগ না দিয়ে টেনে নিচে নিয়ে যেতে লাগল। সুবহাও ভদ্র মেয়ের মতো বাধ্য হয়ে তাদের সঙ্গে নিচে নেমে গেল।

তালুকদার পরিবারের বর্ষাকাল যেন এক উৎসবমুখর সময়। ঘরের ছোটরা বৃষ্টির দিনে নিজেদের খেলায় মেতে থাকে। আর রান্নাঘরে ব্যস্ত থাকে মেয়েরা ও বউরা। তারা খিচুড়ি, ইলিশ ভাঁপা, আর সোনালি আলুভাজির সুগন্ধে ঘর ভরিয়ে তোলে। কিন্তু সবচেয়ে মজার বিষয় হলো, এই পরিবারের পুরুষরাও রান্নাঘরে সাহায্য করতে কোনো দ্বিধা করে না।বাড়ির ড্রয়িং রুম আর ডাইনিং রুম ইতোমধ্যেই বাড়ির সদস্যদের কোলাহলে পরিপূর্ণ হয়ে উঠেছে ।

সুবহা রান্নাঘরের দিকে এগিয়ে গেল। সেখানে গিয়ে দেখল, তার মেজ চাচি রান্নার কাজে ব্যস্ত।সে গুটিগুটি পায়ে তার কাছে গিয়ে দাঁড়াতেই তার চাচি বিরক্তিভরা কণ্ঠে বলে উঠলো,

‘ তোর আবার কী হলো? এখানে কী চায়? সেই ধরে একের-পর এক এসেই চলেছে।’

সুবহা তার চারপাশে ঘুরঘুর করা ঈশা, আলিফ, এলিজা আর আয়রার দিকে তাকিয়ে চোখ ছোট করে মৃদু স্বরে বলে উঠলো ,

‘ এই নুড়িপাথরগুলো কেক খাওয়ার বায়না ধরেছে। কী করব বলো? কেক না বানালে এরা আমাকে ছাড়বে না। তাই কেক বানাতে এসেছি।’

সুবহার মা তখন রান্নাঘরের এক কোণে নিজের কাজে ব্যস্ত ছিলেন কিন্তু মেয়ের কথা শুনে তিনি কিছুটা কঠোর স্বরে বলে উঠলো,

‘এখন না সুবহা। রান্না শেষ হয়নি। পরে বানাও। তোমার দাদামশাই আর কাকারা একটু পরেই খেতে আসবে।’

মায়ের কথা শুনে সুবহা একটু হতাশ হয়ে রান্নাঘর ছেড়ে বেরিয়ে গেল। কোনো কথা বাড়াল না। ক্ষুদে সদস্যরাও তার পিছু পিছু নীরবে রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে এল। সুবহার পিছন পিছন এসে ঈশা বলে উঠলো,

‘ খালামণি কেক বানাবে না? ‘

ঈশার কথাটা শুনে সুবহা দাঁড়িয়ে পরলো। দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে বলে উঠলো,

‘ বানাবো সোনা। তোমার নানিরা রান্না ঘরের কাজগুলো শেষ করে ফেলুক তারপর আমরা পাঁচ গিয়ে বিশাল বড় একটা কেক বানিয়ে আনবো।’

সুবহার কথা এতোক্ষণ বাকিরা মনোযোগ সহকারে শুনছিলো। সুবহার কাছ থেকে কথাটা শুনে বাড়ির ক্ষুদে সদস্যরা খুশি লাফিয়ে উঠলো। সুবহা বাচ্চাগুলোর খুশি দেখে নিজের মুখের হাসির রেখা ফুটিয়ে তুললো তারপর মৃদু কন্ঠে বললো,

‘ তোমরা উপরে গিয়ে খেলা করো আমি একটু দাদুর রুম থেকে আসছি।’

বাড়ির ক্ষুদে সদস্যরা খুবই শান্ত ভাবে সুবহার কথাগুলো শুনলো তারপর তারা কোনো বায়না না করেই উপরের রুমে চলে গেলো। বাড়ির বাচ্চাগুলো উপরে যাওয়া পর্যন্ত সুবহা তাদের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়লো।
সুবহা তার দাদুর রুমের দিকে যাওয়ার জন্য পা বাড়াবে তার আগেই লুবনা তার কাছে এসে মৃদু কন্ঠে বলে উঠলো,

‘ আপু ক্যারাম খেলবি? সৌহার্দ্য ভাই বলেছে সকলকে ডেকে আনতে, খেলবি কিনা তাড়াতাড়ি বল।’

সুবহা লুবনার কথা শুনে মৃদু হাসলো। তারপর সে লুবনাকে মাথা নাড়িয়ে খেলবে বলে হ্যাঁ উত্তর দিলো।

.
.
সৌহার্দ্য সারা রুম জুড়ে পায়চারি করে বেড়াচ্ছে আর ফোনে কারোর সাথে কথা বলছে। সৌহার্দ্যের বলিষ্ঠ পায়ের শব্দ সজোরে প্রতিধ্বনিত হচ্ছে সারা ঘরজুড়ে। সাঁঝ সৌহার্দ্যকে ডাকতে এসেছিলো। ডাকতে এসে সৌহার্দ্যের রুমে থেকে ভালোবাসি শব্দটা শুনে সাঁঝ নিজের কৌতুহল ধরে রাখতে না পেরে নিজের মনের কৌতূহল নিয়ে সৌহার্দ্যের রুমের দরজায় আড়িপেতে শুনছিলো রুমের মধ্যে থাকা সৌহার্দ্য কার সাথে কথা বলছে। আর কথাগুলো ভালো করে বুঝতে চেষ্টা করছিলো। সৌহার্দ্য কথা বলা শেষ করে নিজের ফোনটা পকেটে রেখে রুম থেকে বের হয়ে নিচে আসার জন্য যখনই রুমের দরজাটার কাছে এসে তা খুলে দিলো তখনই নিজের চোখ মুখ কুঁচকে নিলো। হঠাৎ করেই রুমের খুলে যাওয়ার কারণে সাঁঝ নিজের তাল সামলাতে না পেরে সৌহার্দ্যের রুমের ফ্লোরের উপর পরে গেলো। সাঁঝ নিচে পরে যাওয়ার সাথে সাথে হকচকিয়ে উঠলো।
সে নিজের শরীরের ভারসাম্য হারিয়ে ধপ করে মাটিতে পড়ে গেলো, নিচে পড়ে যাওয়ার সাথে সাথে সাঁঝ হাতে ব্যথা পেলো।সে ব্যথায় নিজের চোখ মুখ কুঁচকে ব্যথা পাওয়া স্থানটা ডলতে লাগলো। সাঁঝ ব্যথার মাঝেই কী যেনও ভেবে তার সামনের দিকে তাকাতেই দেখলো সৌহার্দ্য সটান তারই সামনে দাঁড়িয়ে আছে। সাঁঝ লক্ষ্য করলো সৌহার্দ্যের গম্ভীর মুখে কোনো নড়াচড়া ছাড়াই তার দিকে তাকিয়ে আছে। সৌহার্দ্যের ভ্রূ সামান্য কুঁচকে গভীর দুচোখ তার দিকে তাকিয়ে আছে। সাঁঝ সৌহার্দ্যের মুখের একরকম নির্লিপ্ত ভাব দেখে ভয়ে শুকনো ঢোক গিললো যে কী করবে বুঝতে না পেরে ধীরে ধীরে কাতর স্বরে বলে উঠলো ,

‘ সরি, আমি… মানে..’

সাঁঝের নিজের কথা শেষ করতে না দিয়ে সৌহার্দ্য গম্ভীর কণ্ঠে জিজ্ঞাসা করে উঠলো,

‘ কী করছিলে এখানে?’

সৌহার্দ্যের প্রশ্নের ভারে সাঁঝের মুখটা আরও ছোট হয়ে গেলো । তার ভেতরে একধরনের অনিশ্চয়তা সাথে লজ্জা ঢেউয়ের মতো ছড়িয়ে পড়তে লাগলো কিন্তু সৌহার্দ্য সাঁঝের এমন অবস্থা দেখে নিজের প্রশ্ন করা থেকে থামলো না। সে সাঁঝের দিকে নিজের দৃঢ় ভঙ্গিতে তাকিয়ে তবে কন্ঠে এক ধরণের অভিভাবকসুলভ ছায়া মিশিয়ে জিজ্ঞাসা করে উঠলো,

‘ কী করছিলি এখানে? আড়িপাত ছিলি? ‘

চলবে….

( কপি করা নিষেধ)