হয়তো তোমারি জন্য পর্ব-০১

0
120

#হয়তো_তোমারি_জন্য ( প্রথম পর্ব )
#ঈপ্সিতা_মিত্র
এখন রাত এগারোটা। তবে এই নাইটক্লাবে পার্টি এখন সবে শুরু হয়েছে। লাউড মিউজিকের মধ্যে উদ্দাম নাচ চলছে ছেলে মেয়েদের। উজান এর মধ্যে বেশ কিছুক্ষণ ডান্স ফ্লোরে এনজয় করে এই এলো বার সেকশনে। তিন চারটে পেগ আগেই খাওয়া হয়ে গেছে। তবে এখন আরেকটা পেগ অর্ডার করে বসলো একটু। কিন্তু এই রাতটায় বার বার চোখ চলে যাচ্ছে ডান্স ফ্লোরে থাকা ওই গোলাপী ড্রেস পড়া মেয়েটার দিকে। মেয়েটাও অনেকক্ষণ চোখের ঈশারায় ওকেই সিডিউস করার চেষ্টা করছে। কখনো ডান্স ফ্লোরে ওর কাছে এসে নিজের কোমরে ওর হাতটা রেখে ডান্স মুভ করে, তো কখনো নাচতে নাচতে ওকে জড়িয়ে ধরে এটাই বোঝাতে চাইছে ও কতটা ইন্টারেস্টেড উজানের প্রতি। উজানও ব্যাপারটা বেশ এনজয় করছিল। আসলে এইসব ঘটনা ওর কাছে খুব সাধারণ। উজান গুড লুকিং, রিয়াল এস্টেডের ব্যাবসা ওর। মেয়েরা ওর একটু এটেনশন পাওয়ার জন্য সব সময় মুখিয়ে থাকে। আর উজানেরও এইসব ভালোই লাগে। মেয়েদের নরম শরীর, ঠোঁটের উষ্ণতা, আলতো ছোঁয়া, এগুলোকে খুব এনজয় করে উজান। যদিও এর বাইরে কোন মেয়ের সাথেই এর থেকে বেশি জড়িয়ে পড়ে না। আসলে ওই প্রেম ভালোবাসা কমিটমেন্ট এইসব ওর দ্বারা সম্ভব না। এগুলোতে ঠিক বিশ্বাসও করে না কখনো। সেই ছোটবেলা থেকে তো দেখেছে, বাবা মারা যাওয়ার পর মা কিভাবে দিন রাত পার্টি করতো। মদের নেশায় চুর হয়ে বাড়ি ফিরতো। উজানের সামনেই বয়ফ্রেন্ডকে নিয়ে অন্য ঘরে ঢুকে যেত। শুধু প্রপার্টি ব্যাবসা সমস্ত কিছু বাবা মারা যাওয়ার আগে উজানের নামে করে দেয়ায় মা সেগুলোতে হাত দিতে পারেনি। তারপর একদিন ওই বয়ফ্রেন্ডের সাথে ডায়মন্ড হারবার ঘুরতে গিয়ে একটা এক্সিডেন্ট হয় আচমকা। সেই রাতেই সব শেষ। তবে ব্যাপারটা নিয়ে পেপারে লেখালেখি হয়েছিল খুব। উজানের এখনও মনে আছে স্কুলে বাড়ির আত্মীয় স্বজনের মধ্যে এই ঘটনাটাকে নিয়ে সব সময় চর্চা হতো। এই মুহূর্ত গুলোতে ঘেন্না হতো ভীষণ মা কে। মনে হতো এত স্বার্থপর একজন মহিলা খুব কম হয় পৃথিবীতে। উজানকে শুধু জন্ম দেয়া ছাড়া আর কোন দায়িত্ব নেয়নি ওর। বাবা বেঁচে থাকার সময়ও সব সময় ঝামেলা করেছে ওই মানুষটার সাথে। কোনদিন মা বাবার মধ্যে একটা সুন্দর সম্পর্ক দেখেনি উজান। তাই হয়তো এই বিয়ে রিলেশনশিপ কমিটমেন্ট এইসব ব্যাপারে কোন বিশ্বাস কোন ভরসা তৈরি হয়নি ওর! আর মা বাবা মারা যাওয়ার পর হোস্টেলে একা একা দিনগুলো কাটাতে কাটাতে একা থাকারই অভ্যাস তৈরি হয়ে গেছে উজানের। আর সেই অভ্যাসটাকে বদলানোরও প্রয়োজন মনে করে না ও। আর এই তো বেশ ভালো আছে। সকাল হলে বিজনেসের কাজ নিয়ে থাকে, আর রাতে নাইটক্লাব, পার্টি, সেক্স এইসবের মধ্যে হারিয়ে থাকে। ব্যাস, দিন শেষ।
যাইহোক, বর্তমানে ওই গোলাপি ড্রেস পড়া মেয়েটাকে বেশ পছন্দ হয়েছে উজানের। যদিও নাম জানে না। আর জিজ্ঞেস করার ইচ্ছাও নেই। ইচ্ছে আছে শুধু এক রাতের এনজয়মেন্ট। ওই শরীরটার মধ্যে হারিয়ে যাওয়ার। কথাটা ভেবেই উজান এগিয়ে গেল ড্রিঙ্কটা নিয়ে ডান্স ফ্লোরের দিকে। তারপর ওই মেয়েটার খুব কাছে গিয়ে ওর কোমরটা শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। এরপর কানের কাছে এসে ধীর গলায় বললো,
——–” ডু ইউ ওয়ান্ট টু হ্যাভ সম ফান টুনাইট? ”
এই কথায় মেয়েটা আলতো হেসে বললো,
——–” ইয়েস.. ইউ জাস্ট রিড মাই মাইন্ড.. আই হ্যাড এন আই অন ইউ..”
কথাটা বলেই ও নিজের ঠোঁটটা মিশিয়ে দিল উজানের ঠোঁটে। আর একটা মিষ্টি পারফিউমের গন্ধের মাঝে উজান ওই ঠোঁটের উষ্ণতায় গভীরভাবে নেশার মধ্যে চলে গেল।

পরেরদিন এরপর উজানের ঘুম যখন ভাঙলো, ঘড়িতে সকাল দশটা। পাশে সোনালী চুলের ফর্সা মুখের মেয়েটা এখনো অঘোরে ঘুমিয়ে। উজান আলগোছে তাকালো ওর দিকে! কাল রাতের ওই সুন্দর গোলাপি ড্রেসটা এখন অযত্নে মাটিতে পড়ে। আসলে রাতটা ভীষণ ভালো কেটেছে এর সাথে। ওর নরম শরীরের মধ্যে যেই নেশাটা ছিল, তাতে বুঁদ হয়ে ছিল উজান।
যাইহোক, সকাল হয়ে গেছে, নেশাটাও কেটে গেছে। তাই আর দেরি না করে তাড়াতাড়ি উঠে পড়লো ও বিছানা থেকে। তারপর শার্ট প্যান্টটা পড়ে বেরিয়ে যাচ্ছিল রুম থেকে। এটা ফাইভ স্টার হোটেলের একটা লাক্সারিয়াস রুম। এই রুমটা বারো মাসই বুকড থাকে উজানের জন্য। এই হোটেলে নিচে লবিতে গিয়ে এখন ব্রেকফাস্ট করে বেরিয়ে যাবে অফিসে। আজ একটা প্রপার্টির ফাইনাল ডিলিং আছে। কোর্টে ঠিক সময়ে পৌঁছতে হবে। কথাটা ভেবেই ও তাড়াহুড়ো করে বেরোচ্ছিল, তখনই ঘুমটা ভেঙে গেল বিছানায় শুয়ে থাকা মেয়েটার। ও চাদরটা দিয়ে কোনভাবে নিজেকে ঢেকে উজানের সামনে এসে বললো,
——-” ইউ আর আ স্ট্রেঞ্জ ম্যান আই হ্যাভ টু সে.. তুমি আমাকে ঘুম থেকে অব্দি ডাকলে না! এন্ড কালকে উই স্পেন্ট আ রিয়ালি গুড টাইম.. বাট তুমি ফোন নাম্বারটা এক্সচেঞ্জ না করেই চলে যাচ্ছো! ”
কথাটায় উজান অল্প হেসে পার্স থেকে নিজের অফিসের কার্ডটা বার করে ওর হাতে দিয়ে বললো,
——–” এই যে আমার কার্ড.. এখানে আমার নাম, অফিসের নাম্বার সব আছে। কালকে রাতের বদলে তোমার যদি কোন ফেভার লাগে প্রফেশনালি অর সামথিং, এই নাম্বারে কল করলে সব পেয়ে যাবে। বাট সরি.. আমার পার্সোনাল নাম্বার শেয়ার করতে পারবো না। এক রাতের বদলে অতটা হেডেক নেয়া সম্ভব না। এনিওয়েজ আই অ্যাম লেট ফর মাই ওয়ার্ক.. সো বাই.. টেক কেয়ার.. এন্ড আই হ্যাভ টু সে, ইউ আর রিয়ালি হট.. ”
কথাগুলো একসাথে বলে আর অপেক্ষা না করে উজান বেরিয়ে গেল রুমটা থেকে। একটা নতুন দিনের শুরুর জন্য; খুব ফ্রেশ মাইন্ডে।

তবে দিনটা ভীষণ সহজভাবে শুরু হলেও সেদিন রাতটা একটু অন্য রকম ছিল উজানের জন্য। সেদিন রাতে নাইট ক্লাব থেকে বাড়ি ফিরছিল ও। আজ একটা নতুন ফ্ল্যাটের ইনোগ্রেশন হয়েছে। সেই জন্যই উজান পার্টি করছিল ক্লোজ ফ্রেন্ডসদের নিয়ে। রাত তিনটে অব্দি চলেছিল সেই পার্টি। এরপর উজান নিজেই ড্রাইভ করে ফিরছিল বাড়ি। কিন্তু সেদিন ভোর রাত্রে নিউটাউনের রাস্তা দিয়ে গাড়ি চালাতে চালাতে হঠাৎ একটা ঘটনা ঘটলো। একটা মেয়ে রাস্তা দিয়ে দৌড়াতে দৌড়াতে প্রায় হুমড়ি খেয়ে ওর গাড়ির সামনে এসে পড়লো। যদিও উজান মেয়েটাকে দেখে জোড়ে ব্রেক মেরে গাড়িটা থামিয়ে ছিল, কিন্তু তাও গাড়ির ধাক্কা থেকে মেয়েটাকে বাঁচাতে পারেনি। মেয়েটা উজানের সামনেই লুটিয়ে পড়েছিল রাস্তায়। উজান এই মুহূর্তে কয়েক সেকেন্ড যেন থমকে গেছিল এইসব দেখে। তারপর তাড়াতাড়ি গাড়িটা থেকে নেমে রাস্তায় এসে দেখেছিল কনের সাজে বেনারসি পড়ে একটা মেয়ে অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছে রাস্তায়। লাল রক্ত চুঁইয়ে পরছে তার কপাল থেকে। কালো রঙের একটা ব্যাগ প্যাক ছিটকে পড়ে আছে একটু দূরে।
উজান এইসব দেখে দু সেকেন্ড স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে পড়লেও তারপর কোনভাবে নিজেকে সামলে মেয়েটার কাছে গেছিল। না, মেয়েটার কোন সেন্স নেই এখন। উজান তবে আর অপেক্ষা না করে ওকে ধরে তুলেছিল গাড়িতে। দূরে পড়ে থাকা ওই ব্যাগ প্যাকটাও নিয়ে গাড়িতে এনে রেখেছিল। তারপর আর কোনদিকে না তাকিয়ে গাড়ি স্টার্ট করেছিল নিজের। ভাগ্যিস এখন রাস্তায় কোন লোক নেই! তাহলেই একটা ভালো রকম কেস খেত উজান। কথাটা ভেবেই বেশ জোড়ে গাড়ি চালিয়ে বাড়ি এসেছিল নিজের।

চলবে।