হয়তো তোমারি জন্য পর্ব-১২ এবং শেষ পর্ব

0
105

#হয়তো_তোমারি_জন্য ( শেষ পর্ব )
#ঈপ্সিতা_মিত্র
যাইহোক, এরপর দিনগুলো এগিয়ে যাচ্ছিল নিজের মতন করে। কিন্তু এর কটা দিন পরেই একটা ঝড় এলো আনন্দ আশ্রমে। এই আনন্দ আশ্রমের মালিক দেবাংশুবাবু এখানকার আবাসিকদের এক মাসের নোটিশ ধরিয়ে দিয়েছে এসে এই বুধবার। উনি আনন্দ আশ্রমটা বিক্রি করে দেবেন এখানকার লোকাল কাউন্সিলর প্রমথ চৌধুরীকে। সেই প্রমথ চৌধুরীর আবার পারিবারিক ব্যাবসা। অনেক প্রতিপত্তি। উনি এই আনন্দ আশ্রমের জায়গায় একটা শপিং কমপ্লেক্স খুলবেন।
কথাটা শুনেই ওই বয়স্ক মানুষদের যেন মাথাটা ঘুরে গেছিল। এত তাড়াতাড়ি একটা নতুন বৃদ্ধাশ্রম খুঁজে পাওয়াও তো মুশকিল! তার ওপরে এতদিন ধরে সবাই একসাথে আছে; একটা পরিবারের মতনই হয়ে গেছে সবাই। এরপর এইভাবে হঠাৎ আলাদা হয়ে কে কোথায় যাবে এই বয়সে! কথাগুলো ওনারা একসঙ্গে মিলে বলেছিলেন দেবাংশু বাবুকে। কিন্তু উনি এত কথা বুঝেও না বোঝার ভান করে বলেছিলেন,
——-” দেখুন, এই বৃদ্ধাশ্রমটা আমার বাবা খুলেছিল। আমার এটাতে কোন ইন্টারেস্ট নেই। তাও আমি এটা চালাতাম কারণ ভালোই ইনকাম হতো প্রত্যেক মাসে। কিন্তু প্রমথ বাবু তিরিশ লাখ টাকার যখন এত ভালো একটা ডিল দিলেন এই জায়গার বদলে; তখন আর না করা আমার পক্ষে সম্ভব না। আফটার অল টাকার দিকটাও তো দেখতে হবে আমাকে! আর আপনাদের কাছে তো এক মাস টাইম আছে। তার মধ্যে দেখুন, ঠিকই অন্য কোন ওল্ডেজ হোমের ব্যাবস্থা করে ফেলতে পারবেন আপনারা। ”
কথাগুলো বেশ রোয়াব দেখিয়ে বলে দেবাংশুবাবু আর সেদিন দাঁড়ায়নি। চলে গেছিল মুখ ঘুরিয়ে। কিন্তু এই আশ্রমের বয়স্ক মানুষগুলো চোখের পাতা এক করতে পারছিল না এরপর চিন্তায়। একটা অনিশ্চিত ভবিষ্যতের আশঙ্কায়।
সেদিন রাতে কেয়ার টেকার জয় উজান আর শারদীয়াকে ফোন করে জানিয়েছিল সব কিছু। আসলে ওরা এই আশ্রমে এত বেশি আসে যে এই আশ্রমের একটা সদস্যের মতন হয়ে গেছে দুজন। এই খবরটা পেয়ে পরেরদিনই উজান আর শারদীয়া এসেছিল আশ্রমে। কিন্তু সেদিন বৃদ্ধাশ্রমে প্রত্যেকের মুখ অন্ধকার ছিল। একটা চিন্তা অনিশ্চয়তা যেন ঘিরে ধরেছিল সবাইকে। এই দৃশ্য দেখে শারদীয়ার চোখ দুটোও ছলছল করে উঠেছিল জলে। ও যেন নিজের মনেই এই মুহূর্তে বলে উঠেছিল,
——-” তাহলে কি এই আনন্দ আশ্রমটা আর থাকবে না! এই মানুষগুলো সবাই সবার থেকে আলাদা হয়ে যাবে! ”
কথাটা সেদিন উজানের কানে গেছিল। তবে উজান আজ খুব দৃঢ় গলায় সবার দিকে তাকিয়ে বলে উঠেছিল,
——-” আমি থাকতে এটা কখনোই হতে দেব না। আনন্দ আশ্রম এত সহজে শেষ হবে না। কক্ষনো না। ”
কথাগুলো বলেই সেদিন উজান বেরিয়ে গেছিল। শারদীয়া যদিও এই কথার ঠিক কোন মানে খুঁজে পায়নি! বুঝতে পারছিল না কি করবে উজান! আর কি ই বা করার আছে! যখন এই আশ্রমের মালিক নিজেই প্রপার্টিটা বিক্রি করার ডিসিশন নিয়ে নিয়েছে, তখন উজান একজন বাইরের লোক হয়ে কি আর করতে পারবে! যাইহোক, তবে এরপর তিন সপ্তাহ উজান আর আশ্রমে আসেনি। আশ্রমের প্রত্যেকেই এটা দেখে বেশ অবাক হয়েছিল! শারদীয়াও বুঝতে পারছিল না যখন এই মানুষগুলো সব থেকে বেশি অসহায় তখন কেন উজান একবার আসছে না এখানে! এর মধ্যে আশ্রম খালি করার দিনটাও এগিয়ে আসছিল ক্যালেন্ডারের পাতায়। সবাই একটু একটু করে প্যাকিং শুরু করে দিয়েছিল। কেউ কেউ বাড়ি ফিরে যাবে, যতোদিন না নতুন কোন বৃদ্ধাশ্রম পাচ্ছে, কেউ কেউ আবার অন্য আশ্রম খুঁজে নিয়েছে। এর মধ্যেই সেই রবিবার হঠাৎ শারদীয়ার ফোনে উজানের নাম্বারটা ভেসে উঠেছিল অনেকদিন বাদে। তবে শারদীয়া আজ ফোনটা না ধরে পারেনি। দুবার রিং হওয়ার পরই শারদীয়া ফোনটা ধরে বেশ রেগেই বলেছিল,
——-” কি ব্যাপার তোমার? এতদিন একবারও আনন্দ আশ্রম এলে না? জানো সবার মনের কি অবস্থা! সবাই কতবার তোমার কথা বলছিল! ”
কথাগুলো শুনে উজান দু সেকেন্ড চুপ ছিল। হঠাৎ মনে মনে ভাবছিল সবার ওর কথা মনে পড়লেও শারদীয়ার তো কিছুই যায় আসেনি নিশ্চয়ই। উজান তো ওর জন্য এগজিস্টই করে না! যাইহোক, এই ভাবনার ভিড়েই উজান বলে উঠলো,
——-” আজ পারলে একবার সকাল এগারোটার দিকে আনন্দ আশ্রম এসো। একটা কথা বলার আছে। তুমিও তো এই আনন্দ আশ্রমের খুব ক্লোজ, তাই সবার মতন তোমারও কথাটা জানা উচিত। চলে এসো। ”
কথাগুলো বলেই উজান ফোনটা রেখে দিয়েছিল। শারদীয়া যদিও এই কথার কোন মানে খুঁজে পায়নি! তবে পরেরদিন আশ্রমে যেতেই সবটা পরিষ্কার হয়ে গেছিল। উজান আজ দেবাংশুবাবু, আর একজন উকিলকে নিয়ে এসেছিল আশ্রমে। প্রথমে এইসব দেখে কেউই কিছু বোঝেনি। সবাই খুব অবাক চোখে তাকিয়েছিল ওদের দিকে। তখন দেবাংশুবাবুই নিজে থেকে বলে উঠেছিল সবার সামনে,
——” আমি এই আশ্রমটা এখানকার কাউন্সিলর প্রমথবাবুকে নয়, মিস্টার উজানকে বিক্রি করে দিয়েছি। আজ সবার সামনে এই কথাটাই বলতে এসেছিলাম এখানে। ”
কথাটা শুনে প্রত্যেকেই কেমন চমকে উঠেছিল যেন! শারদীয়াও বাকরুদ্ধ হয়ে গেছিল। সেই সময় উজান হাসি মুখে বলেছিল,
——-” এতদিন আসতে পারেনি তার জন্য সরি। আসলে এই লিগ্যাল ফর্মালিটিজ গুলো নিয়ে খুব চাপে ছিলাম। যাইহোক, আর কাউকে কোথাও যেতে হবে না। সবাই এখানেই থাকবে যেরকম আগে ছিল। আর একটা কথা, আনন্দ আশ্রম টাকা দিয়ে আমি কিনেছি মানে এটা না যে আশ্রমটা শুধু আমার, আমি এখানকার মালিক! এসব ভাবার কিন্তু কোন কারণ নেই। আশ্রমটা আজ থেকে আমাদের প্রত্যেকের। যারা যারা এখানে থাকে, তাদের সবার। ”
কথাগুলো খুব দৃঢ় গলায় বলেছিল উজান। আর এইসব শুনে আশ্রমের প্রত্যেকে আনন্দে প্রায় লাফিয়ে উঠেছিল। সবার মুখে একটা স্বস্তির হাসি। এতদিন বাদে যেন একটা কালো মেঘ সরলো মাথার ওপর থেকে। তাই সবাই আনন্দে জড়িয়ে ধরেছিল উজানকে। প্রত্যেকে ওর গালে মাথায় হাত দিয়ে অনেক আশীর্বাদ করেছিল, ভালোবেসেছিল।
শারদীয়াও এই মুহূর্তে কেমন শব্দহীন হয়ে তাকিয়েছিল ছেলেটার দিকে! বিশ্বাস হচ্ছিল না উজান শেষে এত বড় একটা কাজ করলো সবার জন্য! এইভাবে বাঁচিয়ে দিল আনন্দ আশ্রম। ভেবেই কেমন চোখ দুটো ভিজে যাচ্ছিল জলে। নিজের মনের হাজার বারণ সত্বেও পুরনো ভালোবাসা এসে জমা হচ্ছিল মনে।
এর মধ্যেই উজান সবার সামনে দেবাংসুবাবুকে টাকায় চেকটা দিয়েছিল। আর দেবাংশু বাবুও সবার সামনে উকিলের থ্রু দিয়ে উজানের হাতে আনন্দ আশ্রমের দলিলটা দিয়ে দিয়েছিল।
তবে ওরা চলে যাওয়ার পর জয় সবার সামনে বলে উঠেছিল,
——-” তুমি পঞ্চাশ লাখ টাকা দিয়ে এই আনন্দ আশ্রমটা কিনে নিলে ঠিকই! কিন্তু এখানকার কাউন্সিলর প্রমথ চৌধুরী কিন্তু ভালো লোক নয়! ও ব্যাপারটাকে ভালো চোখে দেখবে না। উজানদা তুমি কিন্তু সাবধানে থেকো। ”
কথাটা সবার মতন শারদীয়ার কানেও পৌঁছেছিল। আর অদ্ভুত একটা ভয় হয়েছিল যেন। তবে উজান এই মুহূর্তে খুব সহজ ভাবেই বলেছিল,
——–” রিয়াল এস্টেট এর ব্যাবসা আমার। এরকম প্রপার্টি নিয়ে ডিল আমি হাজারটা করি। এত ভয় পাওয়ার কোন কারণ নেই! ”
কথাগুলো বেশ দৃঢ় ভাবে বললেও কেউই ঠিক নিশ্চিন্ত হতে পারেনি আনন্দ আশ্রমে।
যাইহোক, এরপরের দিন খুব বৃষ্টি নেমেছিল শহরে। আকাশ কালো মেঘে ঢেকে গেছিল। এর মধ্যে শারদীয়া তিনটে টিউশনি শেষ করে যখন নাগেরবাজারের মোড়ে দাঁড়িয়েছিল বাসের অপেক্ষায়, তখন ঘড়িতে সাড়ে আটটা। এই সময় বৃষ্টিটা যেন আরো জোরে নেমেছিল হঠাৎ। ছাতা নিয়েও শারদীয়া প্রায় ভিজে যাচ্ছিল! সেই সময় ওর সামনে একটা গাড়ি এসে থামলো নিজে থেকে। তারপর সেই গাড়ির দরজা খুলে সেই চেনা মুখটা ওর খুব কাছে এসে বললো,
——” এখানে এইভাবে দাঁড়িয়ে থেকো না। গাড়িতে বসো। আমি পৌঁছে দিচ্ছি হোস্টেলে। ”
কথাটা শুনে শারদীয়া দু সেকেন্ড সময় নিয়ে একটু ইতঃস্তত হয়ে বললো,
——–” বাস চলে আসবে এক্ষুণি। আমি চলে যাবো। তুমি যাও। ”
কথাটা শুনে উজানের মুখটা কেমন কঠিন হয়ে গেল যেন। ও কিছু না বলে শারদীয়ার হাতটা ধরলো হঠাৎ, তারপর প্রায় জোর করেই ওকে ধরে গাড়িতে বসালো।
কিন্তু এই মুহূর্তে শারদীয়া কিরকম হকচকিয়ে গেল যেন। তবে উজান গাড়িতে এসে গাড়িটা স্টার্ট দিতেই শারদীয়া বললো কিছুটা অস্থির হয়ে,
——–” এইসবের দরকার ছিল না। আমি চলে যেতাম একা একা। কোন প্রব্লেম হতো না। ”
কথাগুলো শুনে উজান এবার অনেকদিন বাদে নিজের নিঃস্তব্ধতা ভেঙে বললো,
——” ডোন্ট ওরি.. আমি একদিন তোমাকে গাড়ি করে হোস্টেল ছেড়ে দিলে আমাদের মধ্যে কোন কিছু ঠিক হবে না! যেরকম চলছিল, সেরকমই থাকবে। আমি তোমার কাছে আসবো না! কখনো তোমাকে ডিস্টার্ব করবো না। আসলে এতদিনে আমি বুঝে গেছি খুব ভালোভাবে যে আমি তোমাকে ডিসার্ভ করি না। আমার মতন খারাপ স্পয়েল্ড একটা ছেলে সত্যিই তোমাকে ডিসার্ভ করে না। আর আমাদের রিলেশনটা ভাঙার জন্যও আমিই দ্বায়ী ছিলাম। আমিই বিশ্বাস রাখতে পারিনি। খুব বড় ভুল করেছি। আর সেই ভুলের শাস্তি তো সারা জীবন আমাকে পেতে হবে। আমি জানি। আর আমি মেনেও নিয়েছি সেটা। ”
কথাগুলো অনেকদিনের জমা কষ্ট থেকে বলে উঠলো উজান। শারদীয়া এই মুহূর্তে কিছুই উত্তর দিতে পারলো না যেন। হঠাৎ উজানের এই থমকে থাকা চেহারাটা দেখে ওরও কষ্ট হলো খুব। মনে হলো অনেক বেশি কঠিন হয়েছিল কি এতদিন! ছেলেটা কি ওর জন্য খুব হার্ট হয়েছে! আসলে সেদিন উজানের বাড়িতে ওই তিস্তা বলে মেয়েটার সাথে ওকে দেখেই সবটা এলোমেলো হয়ে গেছিল শারদীয়ার। তারপর আর এই সম্পর্কটাকে নিয়ে ভাবার কোন জায়গা ছিল না। কিন্তু শারদীয়ার কি কিছু ভুল হয়েছে উজানকে বুঝতে! ওর কি একবার উজানের দিকটাও শোনা উচিত ছিল! এইসব কথাই ভাবছিল শারদীয়া আনমনে। কিন্তু সেই মুহূর্তেই উজান গাড়িটা জোরে ব্রেক কষে থামিয়ে দিল হঠাৎ। শারদীয়া কিরকম হকচকিয়ে গেল যেন। তারপর বেশ অবাক হয়ে সামনের দিকে তাকাতেই খেয়াল করলো একটা সাদা রঙের এম্বাসেটর গাড়ি এসে ওদের সামনে দাঁড়িয়ে পড়েছে। আর সেই গাড়ি থেকে এক দল গুন্ডা নেমে এই বৃষ্টির মধ্যে লাঠি ছুরি হাতে নিয়ে ওদের দিকেই এগিয়ে আসছে দল বেঁধে। শারদীয়া তো এইসব দেখে ভয়ে আঁতকে উঠেছিল যেন। এরা কারা! হঠাৎ এইভাবে ওদের দিকে আসছে কেন! কি চায় ওরা! কথাগুলো ভাবতে ভাবতেই উজান আর শারদীয়ার কিছু বোঝার আগেই গুন্ডা গুলো লাঠি দিয়ে গাড়ির কাঁচ ভাঙতে শুরু করেছিল। তখন উজান আর শারদীয়া বাধ্য হয়েছিল গাড়ি থেকে নামতে। এরপরই ওই গুন্ডাগুলো যেন হুমড়ি খেয়ে পড়েছিল উজানের ওপর। ওদের মুখে শুধু একটা কথাই ছিল,
——-” এত সাহস তোর! আমাদের দাদার পছন্দের জায়গা কিনে নিস! খুব দরদ আনন্দ আশ্রমের প্রতি! তাই না? দেখাচ্ছি আজ দরদ। ”
কথাগুলো শুনে শারদীয়া উজান দুজনেই পরিষ্কার বুঝেছিল এই হামলাটা কে করিয়েছে। কিন্তু শারদীয়া তো এইসব দেখে ভয়ে মূর্তির মতন স্থির হয়ে গেছিল যেন। কিন্তু উজান ভয় না পেয়ে ওর যথাসাধ্য সামর্থ দিয়ে ওই লোকগুলোর সাথে লড়ে যাচ্ছিল। যদিও উজানের হাত খালি ছিল। তবুও ওদের ওই লাঠি ছুরির সামনেও উজান নিজের হাতের জোর দেখাচ্ছিল। আসলে কলেজ লাইফে অনেকদিন মার্শালাট ক্যারেটের ট্রেনিং করেছিল। সেই স্কিল গুলোই কাজে আসছিল আজ। তবে এর মাঝেও উজান চিৎকার করে শারদীয়াকে বার বার বলছিল চলে যেতে। পালিয়ে যেতে এখান থেকে। কিন্তু শারদীয়া যেন প্রথমে কিছুক্ষণ ভয়ে পাথরের মতন দাঁড়িয়েছিল। চিৎকার করার মতনও শক্তি ছিল না ওর। তারপর খেয়াল হলো এই জায়গাটা তো বেশ অন্ধকার। একটা লোকও নেই। ওকে লোক জড়ো করার জন্য কিছুটা দূরে যেতে হবে। উজানকে এরকম একটা বিপদ থেকে বাঁচাতেই হবে যেভাবেই হোক। কথাটা ভেবেই ও দৌড়ে কিছুটা দূরে গিয়ে একটা চায়ের দোকানের কিছু লোককে দেখে সাহায্য চেয়েছিল। তারপর ওদের নিয়ে প্রায় দৌড়ে উজানের কাছে আসতে আসতে দেখেছিল ছেলেটা একা খালি হাতে পাঁচজনের সাথে লড়ছে। তবে এইভাবে লড়তে লড়তেই একটা গুন্ডা হঠাৎ একটা লোহার রড নিয়ে খুব জোড়ে উজানকে মারলো মাথায় পিছন থেকে। আর শারদীয়ার চারিদিকটা যেন অন্ধকার হয়ে গেল এক মুহূর্তে। ছেলেটা শারদীয়ার সামনেই যন্ত্রণায় চিৎকার করে লুটিয়ে পড়লো মাটিতে।
যদিও এর মধ্যেই ওই চায়ের দোকানের লোকগুলো এগিয়ে এসেছিল উজানের কাছে, আর এত লোক দেখে ওই গুন্ডার দলও পালানোর চেষ্টা করছিল তাড়াতাড়ি। কিন্তু তার মধ্যেই সবাই মিলে দুজন গুন্ডাকে চেপে ধরেছিল কোনভাবে।
তবে এইসবের মাঝে শারদীয়া ছুটে এসেছিল উজানের কাছে, তারপর ওকে মাটি থেকে তুলে ধরেছিল নিজের মধ্যে, কিন্তু তখনই খেয়াল করেছিল ছেলেটার মাথার পিছন থেকে রক্ত পড়ছে অঝোরে, আর উজান কিরকম নিস্তেজ হয়ে গেছে ওর সামনে। সেই মুহূর্তে ছেলেটাকে দেখে শারদীয়ার হঠাৎ একটা ভয় চেপে ধরেছিল মনে, উজানকে হারিয়ে ফেলার ভয়। এইভাবে এই অবস্থায় ছেলেটাকে দেখবে কোনদিন ভাবেনি আসলে। শারদীয়া সেই মুহূর্তে কেমন আগলে ধরেছিল উজানকে। তারপর নিজের মনেই বলে উঠেছিল,
——–” উজান, আমি এসে গেছি। কিছু হবে না তোমার। প্লিজ, প্লিজ একবার তাকাও আমার দিকে, প্লিজ!”
কিন্তু আজ উজান একবারও শারদীয়ার ডাকে সাড়া দেয়নি আর। ও পুরোপুরি নিস্তেজ হয়ে গেছিল শারদীয়ার কোলে মাথা রেখে।
যাইহোক, এরপর কোনভাবে সবার হেল্প নিয়ে একটা ট্যাক্সি জোগাড় করে শারদীয়া ছেলেটাকে নিয়ে হসপিটাল গেছিল। এই পুরো রাস্তাটা ও বার বার উজানের সেন্স ফেরানোর চেষ্টা করে গেছে। নিজের ওড়না দিয়ে ওর মাথাটা চেপে রেখে কোনভাবে রক্তটা বন্ধ করার চেষ্টা করেছে। কিন্তু কোন লাভ হয়নি। উজান একবারও চোখ খুলে তাকায়নি এই সময়।
এরপর প্রায় আধ ঘন্টা বাদে যখন ওরা হসপিটাল পৌঁছেছিল, তখন শারদীয়ার সাদা চুড়িদারটা রক্তে লাল হয়ে গেছিল। শারদীয়া কেমন থমকে গেছিল যেন এটা খেয়াল করে। এর মধ্যে উজানকে কোনভাবে হসপিটালে ভর্তি করেছিল ও। ছেলেটাকে সঙ্গে সঙ্গে আই.সি.ইউ তে শিফ্ট করা হয়েছিল। তারপর অক্সিজেন মাক্স, স্যালাইনের চ্যানেলের ভিড়ে উজান একটা নতুন লড়াই শুরু করেছিল। বেঁচে থাকার লড়াই।
<১৮>
শারদীয়া এইসব দেখে কিরকম স্তব্ধ হয়ে গেছিল যেন। মনে হচ্ছিল এই তো ছেলেটা ঠিক ছিল! ওর সাথে ছিল। কথা বলছিল। আর এতটুকু সময়ের মধ্যে উজানের এ কি অবস্থা হলো! সামান্য শ্বাস টুকু অব্দি নিজে থেকে নিতে পারছে না! কিরকম নিস্তেজ হয়ে পড়ে আছে। কোন সাড় নেই! আই. সি. ইউর ভিতরে যন্ত্রণায় শেষ হয়ে যাচ্ছে আস্তে আস্তে! কথাগুলো ভেবেই কান্নায় ভেঙে পরেছিল শারদীয়া। এই মুহূর্তে কেমন পুরনো কথাগুলো মনে পড়ে যাচ্ছিল ওর। উজান এতদিন ধরে কতবার কথা বলার চেষ্টা করেছে শারদীয়ার সাথে। কিভাবে আশ্রমে এসে ওর দিকে তাকিয়ে থাকতো ছেলেটা। একটু সময় চাইতো শুধু ওর থেকে। কিন্তু শারদীয়ার এত রাগ, যে একবারও তাকাতো না উজানের দিকে! একটা শব্দও বলতো না কখনো। এতটা শাস্তি ও কিভাবে দিয়ে ফেললো উজানকে! এতটা কঠিন কি করে হলো! কথাগুলো ভেবেই কান্না পাচ্ছিল খুব। তার মধ্যেই মনে পড়ছিল এই হামলার সময়ের কথাগুলো। উজান ওরকম বিপদের মধ্যেও বার বার শারদীয়ার কথাই চিন্তা করেছে। চিৎকার করে ওকে পালিয়ে যাওয়ার কথা বলেছে। একবারও নিজের কথা ভাবেনি। এইসব ভাবনার ভিড়েই সেদিন অমিত এসেছিল খবর পেয়ে হসপিটালে। সেদিন অমিত শারদীয়াকে সমস্ত সত্যি কথা বলেছিল। বলেছিল যে কিভাবে তিস্তা প্ল্যান করে শারদীয়াকে উজানের কাছ থেকে সরিয়েছে। বিশু কাকা কিভাবে টাকার জন্য সেদিন ওই নোংরা কাজটা করেছিল। কথাগুলো শুনে শারদীয়া কেমন পাথরের মতন স্থির হয়ে গেছিল যেন। ও কিছুটা সময় নিয়ে নিজের মনেই বলে উঠেছিল,
——–” তুমি এইসব কথা আমাকে আগে বলোনি কেন অমিত? আমি এতদিন ধরে উজানকে এতটা খারাপ ভেবেছি! আসল সত্যিটা না জেনেই! ”
কথাগুলো শুনে অমিত আস্তে গলায় বলেছিল,
——-” আপনি মনে করে দেখুন ম্যাডাম, আমি আপনার হোস্টেলে গেছিলাম দেখা করতে একদিন এইসব বলার জন্য। কিন্তু উজান স্যারের নাম শোনার পরই আপনি আর কথাটাকে এগোতেই দিলেন না। আপনি তখন এতটাই রেগে ছিলেন যে এইসব নিয়ে কোন কথা কোন আলোচনাই করতে চাইতেন না। তাই কথাগুলো আপনাকে বলা হয়নি। তবে আজ স্যারের এই অবস্থায় সত্যিটা না জানিয়ে থাকতে পারলাম না। স্যারের জীবনে আপনি ছাড়া আর কেউ কখনো ছিল না! আর কোনদিন কেউ আসবেও না। এটাই সত্যি। ”
কথাগুলো এক নিঃশ্বাসে বলেছিল অমিত। কিন্তু এইসব শুনে শারদীয়া পুরোপুরি নিরুত্তর ছিল। মনে হচ্ছিল বহুদিন ধরে একতরফা বিচার করে গেছে শুধু। উজানের দিকটা তো কোনদিনও জানার চেষ্টাই করেনি ও!
যাইহোক, এরপর সেদিন কয়েক ঘন্টা বাদে ডাক্তার এসে বলেছিল যে ইন্টারনাল কোন ইঞ্জুরি নেই উজানের। এটা একটা ভালো দিক। কিন্তু এতটা ব্লাড লস হয়েছে যে সেন্স আসতে সময় লাগবে। আর ব্রিদিং প্রব্লেমও আছে।
এইসব শুনে শারদীয়া যেন ক্লান্ত শরীরে বসে পড়েছিল সামনের বেঞ্চটায়। মনে হচ্ছিল শরীরটা ছেড়ে দিয়েছে হঠাৎ। উজানকে এই অবস্থায় আর দেখতে পারছে না ঠিক!
যাইহোক, এর মধ্যে খবরটা আনন্দ আশ্রমে গিয়েও পৌঁছেছিল। উজান এই প্রপার্টিটা কিনেছে বলে ওই কাউন্সিলর প্রমথ চৌধুরী যে গুন্ডা লাগিয়ে এই হামলা করিয়েছে উজানের ওপর, সেটা বুঝতে কারোর বাকি ছিল না। তবে আজ যেন সহ্যের সীমা পেরিয়ে গেছে কেমন ওই বয়স্ক মানুষ গুলোর। যেই ছেলেটা ওদের পাশে থাকবে বলে এত কিছু করলো, আজ সে ই হসপিটালে শুয়ে বেঁচে থাকার লড়াই করছে, এটা জেনে সবাই যেন কিরকম এলোমেলো হয়ে গেছিল। তাই আর চুপ করে বসে না থেকে আনন্দ আশ্রমের সবাই মিলে গেছিল পুলিশ স্টেশনে। তারপর এতটা প্রটেস্ট করেছিল যে পুলিশ বাধ্য হয়েছিল প্রমথ চৌধুরীকে এরেস্ট করতে। এর মধ্যে পরেরদিন খবরটা মিডিয়াতেও বেরিয়ে গিয়েছিল। বিজনেসম্যান হিসাবে উজানের ভালোই নাম আছে শহরে। তাই পুলিশের ওপর আরো প্রেশার এসেছিল এই কেসটার জন্য।
এর মধ্যে উজানের একবার সেন্স এসেছিল কিছুক্ষণের জন্য। তবে চোখ খুলেই ও প্রথম শারদীয়ার কথা জিজ্ঞাসা করেছিল। ওর চোখের সামনে যেন ভাসছিল সেই সময়কার দৃশ্য গুলো! ওই লোকগুলো শারদীয়ার কোন ক্ষতি করে দেয়নি তো! কথাটা ভেবেই উজান ওই শরীরেও খুব হাইপার হয়ে গেছিল। স্যালাইনের চ্যানেল খুলে ও উঠতে যাচ্ছিল। তার মধ্যেই শারদীয়া কেবিনে এসে ওকে আগলে ধরেছিল নিজের মধ্যে। ছেলেটা এই স্পর্শটা পেয়ে যেন প্রাণ ফিরে পেয়েছিল। ও ওই যন্ত্রণার মধ্যেও শারদীয়াকে জিজ্ঞেস করে উঠেছিল,
——” তুমি ঠিক আছো তো? কিছু হয়নি তো তোমার? ওরা কিছু করেনি তো?”
কথাগুলো শুনে শারদীয়া উজানকে আগলে রেখেই বলেছিল,
——” কিছু হয়নি আমার। আমি একদম ঠিক আছি। কিছু হয়নি। ”
কথাগুলো শুনে যেন উজান শান্ত হয়েছিল। তারপর আবার কেমন একটা ঘোরের মধ্যে চলে গেছিল শারদীয়ার সামনে। এতটা উইক আসলে ও! তাই শারদীয়ার বুকে মাথা রেখেই আবার সেন্সলেস হয়ে গেছিল।
এইভাবে প্রায় তিনদিন ছিল উজান। শারদীয়ার এই সময় বার বার শুধু একটা কথাই মনে হয়েছে, যে এত যন্ত্রণার মধ্যে অবচেতন মনেও উজান শুধু ওর কথা ভাবে; তাকে কি করে এতদিন ভুল বুঝলো শারদীয়া! কিভাবে দূরে সরিয়ে রাখলো নিজের থেকে! এই সময় সারাক্ষণ ও হসপিটালে ছিল। উজানের কাছে দিন রাত বসে ছিল ও, ছেলেটার হাতটা শক্ত করে ধরে। যেভাবেই হোক, উজানকে ও ফিরিয়ে আনবেই নিজের কাছে। এটাই ভেবে গেছিল সারাক্ষণ।
এরপর অবশেষে তিনদিন বাদে উজান কিছুটা সুস্থ হয়েছিল। চোখ খুলে তাকিয়েছিল ছেলেটা। তবে সেই মুহূর্তে ও কেবিনের সোফাটায় শারদীয়াকে ঘুমিয়ে থাকতে দেখে যেন অবাক হয়ে গেছিল ভীষণ! তারপর দেয়ালের ঘড়িটার দিকে চোখ যেতে দেখেছিল ভোর চারটে বাজে। উজান যদিও জানে না ও কদিন ধরে এই হসপিটালে আছে! তবে এইটুকু বুঝেছে শারদীয়া এই সময় ওকে ছেড়ে যায়নি। দিন রাত এই হসপিটালেই থেকেছে ওর পাশে। কথাটা ভেবে কেন জানে না মনে হলো তাহলে কি ফিরে পাওয়া সম্ভব! সেই অদৃশ্য কাঁচের দেয়ালটা ভেঙে মেয়েটার কাছে আসা সম্ভব! কথাগুলো ভেবেই উজান বেশ অনেকক্ষণ নিস্পলক ভাবে তাকিয়েছিল শারদীয়ার দিকে। না, ওকে ডাকেনি। কি মিষ্টি লাগছে এই সময় শারদীয়াকে ঘুমের মধ্যে। কতদিন বাদে উজান ওকে এত কাছ থেকে দেখতে পাচ্ছে আজ! এই নিষ্পাপ সরল মুখটা। তাই ও নিঃশব্দে ওর দিকে তাকিয়েছিল শুধু। কিন্তু তারপর হঠাৎ গলাটা শুকিয়ে আসতে ও নিজেই টেবিল থেকে জলের গ্লাসটা নেয়ার জন্য ওঠার চেষ্টা করেছিল। তখনই শারদীয়ার ঘুমটা ভেঙে গেছিল হঠাৎ। কিন্তু এই মুহূর্তে উজানকে উঠতে দেখে ও কিরকম অস্থির হয়ে এসেছিল ছেলেটার কাছে। তারপর কেমন চিন্তা নিয়ে জিজ্ঞেস করেছিল,
——-” কি হয়েছে তোমার? কোন কষ্ট হচ্ছে না কি? আমি ডাক্তার কে ডাকবো? যন্ত্রণা হচ্ছে মাথায়? ”
কথাগুলো কিরকম শুকনো মুখে অস্থির গলায় বলেছিল শারদীয়া। উজান এই মুহূর্তে বুঝেছিল মেয়েটা ভীষণ ঘাবড়ে আছে। তাই ওকে শক্ত করে ধরে শান্ত করে বলেছিল,
———” কিছু হয়নি আমার। কোন প্রব্লেম নেই। জল তেষ্টা পেয়েছিল জাস্ট। তাই উঠে জল নিচ্ছিলাম। ডোন্ট ওরি..”
কথাগুলো শুনে শারদীয়া সাথে সাথে বলে উঠেছিল,
——-” তাহলে আমাকে ডাকলে না কেন! আমি দিতাম জল। তুমি এই শরীর নিয়ে উঠলে যদি কিছু একটা হয়ে যায়! আর আমারই দোষ। আমি কিভাবে ঘুমিয়ে পড়লাম এখানে! আমার তো জেগে থাকা উচিত ছিল! ”
প্রায় এক নিঃশ্বাসে শারদীয়া বলে গেল এইসব। কিন্তু উজান শারদীয়াকে এরকম এলোমেলো দেখে বুঝেছিল মেয়েটা একদম ঠিক নেই। প্রচণ্ড চিন্তা করছে ওকে নিয়ে। তাই কিছু না বলে এই মুহূর্তে খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরেছিল উজান ওকে হঠাৎ; আর শারদীয়ার যেন ঘোরটা কেটেছিল উজানের স্পর্শে। এ-কদিন উজানকে ওইভাবে নিস্তেজ হয়ে পড়ে থাকতে দেখে শারদীয়া আসলে শেষ হয়ে যাচ্ছিল ভিতরে ভিতরে। ছেলেটার গলার আওয়াজ, ওর হাসি মুখটা, ওর চেনা স্পর্শ পাওয়ার জন্য কেমন অস্থির হয়ে উঠছিল ও। মনে হচ্ছিল অনেক দেরি করে ফেলেনি তো উজানের কাছে আসতে! ছেলেটাকে আবার আগের মতন করে ফিরে পাবে তো ও! না কি হারিয়ে ফেলবে সারা জীবনের মতন! কথাগুলো ভেবেই এই কদিন মনে একটা অদ্ভুত ভয় এসে জমা হয়েছিল। কাছের মানুষকে হারিয়ে ফেলার ভয়। তাই সেদিন উজান যখন ওকে জড়িয়ে ধরলো, শারদীয়াও নিজের সমস্তটা দিয়ে ভীষণ শক্ত করে আঁকড়ে ধরলো উজানকে। সেই মুহূর্তে কেঁদেও ফেলেছিল শারদীয়া ভীষণভাবে। নিজের মনেই বলে উঠেছিল,
——–” কিছু যদি একটা হয়ে যেত তোমার, কি করতাম আমি! কিভাবে থাকতাম! এন্ড এম সরি.. আমি জানি আমি অনেক হার্ট করেছি তোমাকে, এতদিন কথা না বলে! আমি সত্যিই খুব খারাপ। খুবই খারাপ। ”
কথাগুলো কাঁদতে কাঁদতেই বলেছিল শারদীয়া। কিন্তু উজান এই মুহূর্তে আর চুপ না থেকে ওকে ভীষণ আদর করে বলেছিল,
——–” একদম না। সরি যদি বলার থাকে, তাহলে সেটা আমি বলবো। কারণ ভুলটা আমার ছিল। তোমার মতন মেয়েকে বিশ্বাস করিনি আমি! যে আমাকে সব থেকে বেশি ভালোবাসলো; তাকে ওইভাবে এক রাতে ছেড়ে দিয়েছিলাম! একবার তোমার দিকটা শুনিনি। আমি জানি, আমি সারা জীবন ধরে সরি বললেও এই ভুলটা কখনো ঠিক হবে না। ”
কথাগুলো বলতে বলতে উজানের গলাটাও ধরে এসেছিল কেমন। একটা অদ্ভুত কষ্ট হচ্ছিল মনে। সেই মুহূর্তে শারদীয়া ওকে আগলে ধরেছিল ভীষণ ভাবে। তারপর ওর ঠোঁটে নিজের ঠোঁটটা ছুঁয়ে দিয়েছিল আলতো করে।আসলে উজানকে বোঝাতে চেয়েছিল ভালোবাসে। পুরনো সব কিছু ভুলে শারদীয়া শুধুমাত্র ওকে ভালোবাসে।
সেদিন উজানের চোখেও জল চলে এসেছিল এই মুহূর্তে। এতদিন বাদে শারদীয়া কে এতটা কাছে পেয়ে কিরকম অবিশ্বাস্য লাগছিল যেন সব কিছু। তখন শারদীয়াই আস্তে গলায় বলে উঠেছিল,
——-” আরেকবার নতুন করে শুরু করা যায় না? একটা নতুন গল্প, আমাদের? ”
এই প্রশ্নে উজানের ঠোঁটে হাসি। একটা ভাঙাচোরা গল্প যে এইভাবে জুড়ে যাবে, এটা ভাবেনি আসলে। তাই এর উত্তরে শারদীয়াকে নিজের সবটা দিয়ে আঁকড়ে ধরেছিল উজান। নতুন ভাবে ভালোবেসেছিল আরেকবার; সমস্ত পুরনো ভুলগুলোকে ভুলে গিয়ে। একটা নতুন শুরুর জন্য!
এরপর কদিন বাদে মালা বদল সিঁদুর দান সবই হয়েছিল দুজনের। আনন্দ আশ্রমেই বিয়ের অনুষ্ঠান হয়েছিল শারদীয়া আর উজানের। ওই বয়স্ক মানুষগুলোর আশীর্বাদ নিয়েই একটা নতুন জীবন শুরু করেছিল দুজন। জীবনের ভাঙা গড়ার খেলার মধ্যেই গল্পটা এগিয়ে চলেছিল এরপর, নিজের মতন করে।
——–< সমাপ্ত >——–