#হাওয়ায়_ভাসা_উড়ো_চিঠি (৯)
উষার বিয়ের দিন সব থেকে বেশি খুশি দেখাল আবৃত্তিকে। মেয়েটি খুব বেশিই সুন্দর। অতিরিক্ত সুন্দরীদের বেশি সাজলে নাকি খুব ই বাজে দেখায়। সেই জন্যেই মেয়েটি সাজল না খুব। সন্ধ্যায় যখন উষার বিদায় হলো সকলের ই মন খারাপ। তবে অদ্ভুত ভাবে কেউ কাঁদল না। সবাই যেন অনুভূতি হারিয়ে ফেলেছে। গেট থেকে বিদায় দিয়ে ফিরছিল উন্মেষ। তখনি ওদের এক ক্লাইন্ট এসে বললেন,”হ্যালো মিস্টার উন্মেষ।”
“হায় মিস্টার রহমান। ভালো আছেন?”
“জী খুব ভালো আছি।”
“কোনো অসুবিধা হয় নি তো?”
“কি যে বলেন। আপনাদের বাড়ি মানে আমাদের নিজস্ব ঠিকানা। এখানে চোখ বন্ধ করে থাকা যায়।”
“ধন্যবাদ।”
টুকটাক কথার মধ্যে হঠাৎ ই মিস্টার রহমান বললেন,”ঐ মেয়েটা কে?”
আবৃত্তি কে দেখাল লোকটা। উন্মেষ কথা না বলায় ফের বললেন, “আসলে আগের বার যখন এসেছি তখন তো দেখি নি।”
“আমার ওয়াইফ এর ছোট বোন।”
সন্তুষ্ট হলেন তিনি। মুখে একটা আলাদা ভাব চলে এসেছে। উন্মেষ ইগনোর করার ট্রাই করছে। তখনি ভদ্রলোক বললেন, “আমার শ্যালক কে তো চিনেন ই। গত বছর পরিচয় হলো না? তো ওর জন্য মেয়ে দেখা হচ্ছিল। আপনার শ্যালিকা কে খুব পছন্দ করেছে।”
ধাক্কা খেল উন্মেষ। আবৃত্তি কারো সাথে হেসে হেসে কথা বলছে। ভদ্রলোক আরো কিছু বলতেই উন্মেষ বলল, “হতাশাজনক ভাবে বলতে হয় ও বিবাহিতা।”
“কি বলেন! ঐ টুকু মেয়েটা বিবাহিতা। খুব ই খারাপ লাগল।”
“কোথায় ঐ টুকু মেয়ে! ওর দু বছরের একটা বাচ্চা ও আছে। আপনি বড়ো এডভান্স হয়ে গেছেন। একটু পিছিয়ে আসুন। জানেন তো আগে আগে বিয়ে করা উচিত।”
উন্মেষের মতো মানুষের থেকে এমন কথা আশা করেন নি মিস্টার রহমান। গম্ভীর হয়ে এল মুখশ্রী। সেসব পাত্তা না দিয়ে অন্যদিকে এল উন্মেষ। কি দিন এল!
লেখার নিকটস্থ হতেই লেখা বলল, “শোনো আবৃত্তির পেটে পেইন হচ্ছে কিছু দিন। পেইন কিলার শেষ হয়ে এসেছে। একটু এনে দিবে?”
“ঠিক আছে। আমি যাচ্ছি।”
রাতে খাবারের সময় আবৃত্তির সাথে দেখা হলো উন্মেষের। মেয়েটি আজ শাড়ি পরে নি। নর্মাল সালোয়ার কামিজ পরেছে তবে আজ ও ওড়নাটা মেঝে ছুঁই ছুঁই। অভ্যেসটা গেল না আর! দিতিয়া আবার টপস পরা পছন্দ করেন না। শাড়িতেই নারী। এ কথাটা অন্তরে গেঁথে রেখেছেন। আবৃত্তি চেষ্টা করে তবে সামাল দিতে হিমশিম। ডাইনিং এ কথা বলার মতো সুযোগ ছিল না। তাই উন্মেষ ব্যলকনিতে এসে দাঁড়াল। রাতের আকাশ দেখতে ভালো লাগে আবৃত্তির। বড়ো জানালা না থাকাতে খোলা ব্যলকনিতে এসে দেখে। বিষয়টা জানা ছিল উন্মেষের। আজ আবৃত্তি এল না। অপেক্ষা করতে করতে সিগারেট ধরাল উন্মেষ। তখনি কাশতে লাগল আবৃত্তি। হতবুদ্ধি হারিয়ে উন্মেষ তাকায় সিগারেটের দিকে। চটপট ফেলে দেয় ফিল্টার। আবৃত্তির কাশি থামে, “মা রা র প্ল্যান করলেন নাকি?’
“জানতাম না তুমি বসে আছ।”
“যা তা। একটুর জন্য আমার প্রাণটা চলে যাচ্ছিল।”
“লেখা বলল তোমার পেটে পেইন হচ্ছে আজকাল।”
“হুম। পেইন কিলারটা ফুরিয়ে গেল কাল। আজ আর যাওয়া হয় নি বাহিরে।”
“শোনো।”
তাকাল আবৃত্তি। পকেট থেকে ঔষধ এর পাতাটা বের করে উন্মেষ বলল, “এটাই তো নিতে আগে,এখন কি অন্যটা নাও?”
“উহু।”
হাত বাড়িয়ে দিল উন্মেষ। ব্যলকনির কাছ ঘেষে খানিকটা নিচু হয়ে ঔষধের পাতাটা নেয় আবৃত্তি। মেয়েটির উজ্জ্বল মুখটায় চাঁদের আলো পড়ে ছিটকে। এক অদ্ভুত দ্যুতি খেলে যায় মুখে। হাতের সাথে স্পর্শ লাগতেই শুধু শরীর নয় বুকের মধ্য ভাগ ও কেঁপে উঠে দুজনার।
বিয়ের দুই মাস যেতে না যেতে খবর এল উষা প্রেগনেন্ট। বাচ্চা মেয়ে। অল্প বয়সে মা হওয়া টা স্বাস্থ্য ঝুঁকির। দিতিয়া প্রায় ফোনের মধ্যেই মেয়েকে বকা দিলেন। তবে সব শেষে খুশি বোধ ও করলেন। নানি হতে যাচ্ছেন তিনি। ওনার প্রথম নাতি বা নাতনি আসতে চলেছে। উষার শশুড় বাড়ি থেকে দাওয়াত এসেছে। বিকেলে যাবে সকলে। এদিকে আবৃত্তি কিছুটা অসুস্থ। থেকে যেতে চাইল লেখা। তবে থাকতে দিল না আবৃত্তি। ওর ভাষ্য মতে লেখার ঘুরাঘুরি প্রয়োজন। মন সতেজ হবে। তাছাড়া কলি তো আছেই। এসব কথা বলে লেখাকে পাঠিয়ে দিল সে। উন্মেষ আজ বাসায় নেই। ব্যবসায়িক কাজে ব্যস্ত। আলমাস সাহেব হাত ভর্তি করে মিষ্টি এনেছেন। মেয়ের শশুড় বাড়ি যাবেন বলে কথা। কোনো কমতি যেন না থাকে। শরীর খারাপ থাকা সত্ত্বেও আবৃত্তি উঠে এল। লেখার পা এখন অনেকটাই ঠিক ঠাক। স্ক্র্যাচে ভর করে হাঁটতে হয় না। তবে হাঁটতে একটু অসুবিধা হয়। লেখা এক হাত আবৃত্তির গালে ছোঁয়ায়। “কিছু প্রয়োজন হলে কলি কে ডেকে নিবি।”
“ঠিক আছে আপু। তোরা সাবধানে যাস।”
“হুম।”
“আর আপু পৌছে ফোন দিবি।”
“দিব। তুই এখন ঘরে যা রেস্ট কর।”
“তোরা যা তারপর না হয় যাই।”
“না আগে তুই যাবি।”
“যাচ্ছি।” বলেই চলে গেল আবৃত্তি। লেখা গাড়িতে উঠে বসল। সা সা গতিতে যাচ্ছে গাড়িটা। এর ই মধ্যে উষার কল এল। বহু দিন পর দুজনে আজ কথা বলছে। বিগত দিন গুলোতে সাধারণ সখ্যতা যেন হ্রাস পেয়েছিল। উষা হঠাৎ ই বলল, “আমার মেয়ে হলে যেন তোমার মতো হয় ভাবি।”
হেস উঠল লেখা। তারপর বলল, “কেন বল তো?”
“তোমার নাকটা আমার ভীষণ ভালো লাগে।”
“নাক ভালো লাগে!”
“হ্যাঁ গো ভাবি। জানো তোমার মুখের দিকে তাকালে প্রথমেই তোমার নাকটা ভাসে। মনে হয় একদম খেয়ে ফেলি।”
“ছিই উষা! কি ভাষা তোর। অশ্লীল হয়ে গেছিস।”
ঠোঁট টিপে হাসল উষা। এদিক ওদিক তাকিয়ে বলল,”শোনো ভাবি, আমি খুব পেকে গেছি। তবে এই লাইফটা দারুণ। খুব বেশি ইনজয় করছি।”
“তাই?”
“একদম।”
“বাহ আমার ননদিনীর মুখে লাজ লজ্জা সব হারিয়ে গেছে দেখছি। সে তো এখন মা হতে চলেছে। বরের ভালোবাসায় দিশেহারা।”
এবার লজ্জা হাসল উষা। লেখা দেখল পৌছে গেছে। হাত নাড়িয়ে বলল, “এসে গেছি।”
সবাই কে দেখে, না নেমে পারল না উষা। ইয়াস দ্রুত ধরল মেয়েটির হাত। আজকাল মেয়েটি ভুলে যায় তাঁর পেটের মধ্যে অন্য একজনের বাস। খালি ছটফট করে। ইয়াস চোখ রাঙায়, “সাবধানে চলো। কখন না পড়ে টরে দূর্ঘটনা ঘটিয়ে ফেলবে।”
“সরি।”
“থাক,এবার আসো আমার হাত ধরে।”
উষা লক্ষ্য করল ইয়াসের যত্ন বেড়েছে হাজার গুন। আগে ও যত্ন করত খুব। তবে বাচ্চাটা আসার খবর যেই না শুনেছে আদর সোহাগ বেড়ে গেছে। মনে মনে খুশি হয় উষা। সাথে একটু আপসোস করে ভাবে ‘ইস কেন আগে আমি মা হলাম না।’
লেখা এসেই উষার গাল টেনে দিল। এই টুকু নি মেয়ে। লেখার যখন বিয়ে হয় তখন ও উষা ফ্রক এর সাথে ছোট ছোট প্যান্ট পরে ঘুরত। আর সেই মেয়েটা মুহূর্তেই এত বড় হয়ে গেল! মেয়েদের বড় হওয়ার সাথে সত্যিই বয়স নামক সংখ্যার যোগ নেই। প্রায় প্রতিটি মেয়ের ই লড়াই করে বাঁচতে হয়। তাদের সংগ্রাম শুরু হয় মায়ের গর্ভ থেকে বের হয়েই। কথার ফাঁকে আবৃত্তির কথা ভুলে গিয়েছিল লেখা। হঠাৎ যখন মনে হলো তখনি কল করল। “হ্যাঁ আবৃত্তি আমরা পৌছে গেছি। তুই ঠিক আছিস?”
“হুম আপু। তোদের সব ঠিক ঠাক আছে তো আপু?”
“হুম সব ভালো।”
“আচ্ছা সাবধানে চলিস। তোর পা টা কিন্তু এখনো রিক্সে আছে।”
“ঠিক আছে আমার বনু। আপনার কথা মাথায় থাকব।”
আবৃত্তি হাসল শুধু। ওর গলাটা কেমন যেন শুনায়। লেখা অবশ্য খুব একটা আমলে নিল না। ফোন রাখার আগে শুধু বলল,”কোনো সমস্যা হলে কল করিস।”
চলবে…
কলমে~ফাতেমা তুজ নৌশি