#হারানো_হিয়া (পর্ব ১১)
১.
ডব্লিউ এন্ড ডব্লিউ ফার্মের চিফ আর্কিটেক্ট ওয়াকার ভাই মীরার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞাসু গলায় বলে, ‘ভাবি কেমন আছেন?’
ওয়াহিদ ছিল সিভিল ইঞ্জিনিয়ার আর ওয়াকার ভাই আর্কিটেক্ট। ওদের ইংরেজি নামের আদ্যাক্ষর নিয়ে এই ফার্মের নামটা। ওয়াকার ভাইয়ের সঙ্গেই সবচেয়ে বেশি খাতির ছিল মানুষটার। মাঝে মাঝে বাসায় আসতেন ভাবি বাচ্চাসহ।
মীরা ম্লান হেসে বলে, ‘এই তো ভাইয়া। ভালো আছি। আপনারা ভালো তো?’
ওয়াকার মাথা নাড়ে। তারপর একটা সাদা খাম বের করে বলে, ‘ভাবি, এখানে অফিস থেকে ওর পাওনা পুরো টাকাটা আছে। একটা লাইফ ইন্স্যুরেন্স করা ছিল সেটার টাকাও আছে। আর অফিস থেকে আলাদা করে কিছু টাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে।’
মীরা খামটা নিয়ে খুলে দেখে। বিশ্বাস হয় না। বেশ বড়ো অংকের একটা চেক। এটা দিয়ে অনায়াসে ওর বাকি জীবনটা পার করে দিতে পারবে৷
মীরা কৃতজ্ঞ গলায় বলে, ‘অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া। টাকাটা ভীষণ দরকার ছিল।’
ওয়াকার মন খারাপ গলায় বলে, ‘ভাবি, আপনি এমন করে বলছেন সত্যিই ভীষণ খারাপ লাগছে। এই টাকাটা দিয়ে আপনি সঞ্চয়পত্র কিনে ফেলেন। তাতে প্রতিমাসে যা আসবে তা দিয়ে আশা করি আপনাদের ভবিষ্যতে চলতে কোনো সমস্যা হবে না।’
মীরা মাথা নাড়ে, ‘হ্যাঁ তাই করব। আমি নিজেও কিছু একটা করার চেষ্টা করব।’
ওয়াকার একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে। ওয়াহিদ চুপচাপ ধরনের মানুষ ছিল। বাবা, মা, ভাইবোন সবাইকে নিয়ে থাকত। কিন্তু এখন ও না থাকাতে ভাবি ওই বাসাতেই থাকতে পারল না।
একটু নাস্তা আসে। মীরা না করলেও ওয়াকার জোর করে। বাসায় ফিরে যেতে হবে তাড়াতাড়ি। ও স্যান্ডউইচটা একটু খেয়ে কফি নেয়। তারপর খাওয়া শেষ করে বলে, ‘ভাইয়া, আমি তাহলে আজ যাই।’
ওয়াকার মাথা নাড়ে। তারপর বলে, ‘ভাবি, কিছু যদি মনে না করেন একটা কথা বলতাম।’
মীরা মনে মনে সতর্ক হয়। ইদানিং পরিচিত, অপরিচিত সবাই ওর সঙ্গে আলাদা করে কথা বলতে চায়। হাসব্যান্ড ছাড়া থাকতে ওর কত কষ্ট হচ্ছে সেই কথা বলে। ভীষণ রাগ হয়। ওয়াকার ভাইও কি তাই বলবেন?
ওয়াকার গলাখাঁকারি দিয়ে বলে, ‘ভাবি, ইহান এখনও অনেক ছোট। আপনার বয়সও কম। আমার মনে হয় আপনার আবার বিয়ের কথা ভাবা উচিত। একা একা থাকায় অনেক সমস্যা।’
মীরা থমকায়। ভাইয়া যে বিয়ের কথা বলবেন ও ভাবেইনি। এই সমাজে সিংগেল মাদারদের যে কত কত বিপত্তি। সবাই খুব সহজলভ্য ধরে নেয়।
মীরা অপ্রস্তুত গলায় বলে, ‘ভাইয়া ভেবে দেখি।’
ওয়াকার ওর অস্বস্তিটা বুঝতে পারে, ‘আচ্ছা সমস্যা নেই। আমার খুব কাছের একজন আছেন, ভালো মানুষ, ডিভোর্সড। আপনার কখনও মনে হলে আমাকে জানাবেন। আপনি তো সেই মামার বাসাতেই উঠেছেন?’
মীরা মাথা নাড়ে, ‘হ্যাঁ ভাইয়া। মামার বাসাতেই আছি।’
কী মনে হতে ওয়াকার বলে, ‘ভাবি আপনার বাসার ঠিকানাটা দিয়ে যান।’
মীরা বাসার ঠিকানা দিয়ে বিদায় নেয়। ফেরার পথে বাসে উঠে ভাবতে বসে। কদিন আগে মামিও বিয়ের কথা বলছিলেন। আচ্ছা, মামা, মামি মারা গেলে ও কোথায় গিয়ে উঠবে? আজকের পাওয়া টাকাগুলো দিয়ে কোনোমতে দিন পার হয়ে যাবে৷ ছেলে মানুষ হবার অপেক্ষায় থাকতে হবে৷ কিন্তু ও যদি ভালো কিছু করতে না পারে? ভাবনাটা ভাবতেই কেমন একটা দমবন্ধ হয়ে আসে।
বাসার কাছাকাছি এসে পৌঁছাতেই মামির ফোন আসে। ফোন ধরতেই ওপাশ থেকে উদবিগ্ন গলা পাওয়া যায়, ‘তুই কতদূর?’
মীরা উত্তর দেয়, ‘এই তো মামি, আর পাঁচ মিনিট লাগবে।’
মামি উতলা গলায় বলে, ‘তাড়াতাড়ি বাসায় আয়৷ ইহান সাইকেল এক্সিডেন্ট করে হাত ভেঙেছে৷ ভীষণ ফুলে গেছে। হাসপাতালে নিতে হবে।’
মীরার মনে হয় কেউ ওর কলিজাটা টেনে ধরেছে। ও আকুল গলায় বলে, ‘কী বলছ মামি! কেমন করে হলো? মামাকে বলো শীগগির একটা গাড়ির ব্যবস্থা করতে।’
মামি অসহায় গলায় বলে, ‘তোর মামা সাথে সাথেই বের হয়েছে। গাড়ি পেলেই চলে আসবে।’
মীরা ফোন রেখে স্তব্ধ হয়ে বসে থাকে। ছেলেটা এক্সিডেন্ট করল?
বাস থেকে নেমেই ও রিক্সা নেয়। তারপর আবার ফোন দিয়ে যখন জানতে পারে এখনও গাড়ির ব্যবস্থা হয়নি ওর কেমন দিশেহারা লাগতে থাকে। হঠাৎ করেই সুমনের কথা মনে হয়। ফোন দেবে? মনের দ্বিধা ঝেড়ে ফোন দেয়। প্রথমবার রিং হতেই সুমন ধরে।
মীরা আকুল গলায় বলে, ‘সুমন প্লিজ একটা গাড়ির ব্যবস্থা কর তাড়াতাড়ি। ইহান সাইকেল এক্সিডেন্ট করে হাত ভেঙেছে। মামা গাড়ি আনতে গিয়েছে কিন্তু এখনো পায়নি।’
সুমন ওকে আশ্বস্ত করে বলে, ‘তুই বাসায় যা। আমি এখুনি গাড়ি নিয়ে আসছি, একটুও ভাবিস না।’
মীরা বাসায় এসে দেখে ইহানের মুখটা ব্যথায় মুখ নীল হয়ে আছে। বাম হাত ভাঁজ করা, কনুইয়ের কাছটায় ফুলে গেছে৷ ও আর্তনাদ করে ওঠে, ‘ইহান!’
ইহান চোখমুখ শক্ত করে বলে, ‘আম্মু, আমার কিছু হয়নি তো। একটু ফুলে গেছে।’
একটু পরেই সুমন গাড়ি নিয়ে আসে। মীরার মামি কেমন একটা চোখে তাকায়। সুমনের মনে পড়ে ইনি মাকে বলেছিল ওদের নিজস্ব বাড়ি নেই। ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার তাও তখনও পাশ করে বের হয়নি। সে সময়কার তিক্ত ব্যাপারগুলো অনেকটাই সহজ এখন।
সুমন আর দেরি করে না। ইহানকে ধরে নিচে নামায়। বেচারা ব্যথায় গুংগিয়ে ওঠে। মামাকে বাসায় থাকতে বলে ওদের নিয়ে ও হাসপাতালে রওনা দেয়।
বিকেল হয়ে গেছে। হাসপাতালে নিয়ে যেতেই ওরা প্রথমে এক্সরে করে আনতে বলে। তারপর ডাক্তার সাহেব ভালো করে দেখে বলেন, ‘জোর বেঁচে গেছে। ভাঙেনি, চিড় ধরেছে। প্লাস্টার করে দিচ্ছি, তাতেই ঠিক হয়ে যাবে।’
মীরার যেন ঘাম দিয়ে জ্বর ছাড়ে।
সুমন দুষ্টুমি করে বলে, ‘ইহান, আরও ভালো করে সাইকেল চালানো শিখতে হবে।’
মীরা হেসে বলে, ‘হ্যাঁ, তোর এই আংকেল কিন্তু খুব ভালো সাইকেল চালাতে পারে।’
সুমন মৃদু হেসে একবার নরম চোখে মীরার দিকে তাকায়।
প্লাসটার শেষ হতে সন্ধ্যা হয়ে যায়। এর মাঝে নাফিসা একবারও ফোন দেয়নি। অন্যান্য দিন সাধারণত ফোন দেয়। আজ কেন দিল না? যাক ভালোই হয়েছে, অযথা মিথ্যা বলতে হলো না।
ফেরার পথে মীরা কৃতজ্ঞ গলায় বলে, ‘আমি খুব ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। তুই থাকাতে খুব সাহস পেলাম।’
সুমন ইহানের মাথায় হাত বুলিয়ে বলে, ‘ভয় পাবারই তো ব্যাপার। আংকেল এই ক’টা দিন কিন্তু হাত নাড়ানো যাবে না। চুপটি করে বাসায় বসে থাকবে।’
সুমন বিদায় নিয়ে নেমে পড়ে। কেন যেন ভালো লাগছে। মীরার বিপদে পাশে দাঁড়াতে পারল, এই ভাবনাটা স্বস্তি দেয়।
বাসায় ঢুকতেই দেখে নাফিসার মুখ গম্ভীর। ওকে দেখেই জিজ্ঞেস করে, ‘কোথায় গিয়েছিলে তুমি?’
সুমন ভ্রু কুঁচকে তাকায়। সাধারণত নাফিসা তো এমন প্রশ্ন করে না। ও গলা খাঁকারি দিয়ে বলে, ‘কোথায় গিয়েছিলাম মানে? একটা কনস্ট্রাকশন সাইটে গিয়েছিলাম।’
নাফিসা এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে বলে, ‘তুমি আজকাল মোটরসাইকেল বাদ দিয়ে গাড়িতে করে যাও বুঝি?’
সুমন মনে মনে প্রমদ গোনে। কৃত্রিম অবাক হবার ভান করে বলে, ‘মানে?’
নাফিসা এবার কাছে এসে তীব্র গলায় বলে, ‘আজকে বিকেলে তোমার বন্ধুর সঙ্গে কোথায় গিয়েছিলে গাড়িতে করে?’
সর্বনাশ! নাফিসা জানল কী করে? কেউ কি দেখেছে ওদের? হঠাৎই একটা কথা মনে হয়। মীরাদের বাসা থেকে বেরিয়ে গলিটা পেরোতেই রিপা ভাবিকে দেখেছিল। গাড়ির সামনে বসাতে ওকে ভাবি ঠিক দেখতে পেয়েছিল। উনি জানাল?
না এবার মিথ্যে বলে আর লাভ নেই। সত্যটা বলতেই হবে, না হলে আরও ঝামেলা হবে। সুমন ঢোঁক গিলে বলে, ‘ও আচ্ছা। ওই যে মীরার ছেলেটা হঠাৎ করে সাইকেল এক্সিডেন্ট করেছিল, হাত ভেঙে গেছে। তাই আমাকে ফোন দিয়েছিল একটা গাড়ি ঠিক করে দেবার জন্য। পরে আমি ওদের নিয়ে গেলাম হাসপাতালে, ভাগ্য ভালো হাত ভাঙ্গেনি, প্লাস্টার লেগেছে।’
নাফিসা বাঁকা হাসি হেসে বলে, ‘হাত ভাঙলে বুঝি ওদের বাসাতেই থাকতে যতদিন ভালো না হয়?’
সুমন কপাল কুঁচকে বলে, ‘কী সব আজেবাজে কথা বলছ।’
নাফিসা চিৎকার করে বলে, ‘তুমি বাইরে আজেবাজে কাজ করবে আর আমি বললেই দোষ। বলেছিলাম না ওই মেয়েটার সাথে মিশবে না, কথা বলবে না। পুরনো প্রেম বুঝি উথলে উঠেছে একেবারে। আমাকে অসহায় ভেব না আমি কিন্তু স্বাবলম্বী একজন মেয়ে। কোন বাড়াবাড়ি দেখলে আমি সহ্য করব না। আমার দুই ছেলে মেয়ে নিয়ে আমি আলাদা হয়ে যাব।’
জুঁই আর তূর্য ভেতরের রুম থেকে এসে সামনে দাঁড়ায়। নাফিসা কড়া গলায় ধমক দেয়, ‘যাও পড়তে বসো তোমরা।’
সুমন ব্যথিত গলায় বলে, ‘বাচ্চাদের সামনে কী বলছ এসব কথা। ওদের জন্য তুমি আমাকে ছেড়ে যাবে?’
নাফিসা হিসহিসিয়ে বলে, ‘প্রয়োজনে যাব। আমার কথাটা মনে থাকে যেন।’
নাফিসা রান্নাঘরে ঢোকে। সশব্দে হাড়ি পাতিল নামাতে থাকে। আর সুমন একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ভাবে, নাহ, মীরাকে সব খুলে বলতে হবে৷ ব্যাপারটা দিন দিন গুরুতর হয়ে যাচ্ছে।
২.
ইদানিং নাফিসার মন বিষণ্ণ থাকে। বর্ষাকাল শুরু হয়ে গেছে৷ নাফিসা বাসার ব্যালকনিতে বসে আকাশ দেখছিল। এখন বেশিরভাগ সময়ই আকাশ মেঘলা থাকে। ঠিক যেন ওর মনের মতো। কখনও হাস্যোজ্জ্বল রৌদ্র উঠে না। সুমনের সঙ্গে কথা কম হয়। ব্যাপারটা নিয়ে ও ভেবেছে। পুরনো প্রেম, যাকে বিয়েও করতে চেয়েছিল তাকে অগ্রাহ্য করা বুঝি খুব কঠিন? আচ্ছা, মাহিন যদি এখন অসুস্থ হয় আর ও তখন ময়মনসিংহ শহরেই থাকে, তাহলে কি ও না গিয়ে পারবে?
প্রশ্নটা মনের ভেতর কদিন ধরেই ঘুরপাক খাচ্ছে। আচ্ছা, মাহিন ভালো আছে তো?
মাঝে মাঝে মেসেজ দেয়। সেদিন অদ্ভুত একটা কথা লিখল। এদেশেই নাকি পাকাপোক্তভাবে থেকে যাবে। তাই ওখানেই নিজের চেম্বার দিয়েছে। এখন পর্যন্ত তার মেসেজের কোনো উত্তর করেনি। কী মনে হতে নাফিসা মোবাইলটা হাতে নেয়। তারপর লিখে, ‘কেমন আছ? শরীর ভালো তো?’
একটু পরেই ওপাশ থেকে উত্তর আসে, ‘শেষ পর্যন্ত তুমি লিখলে! হ্যাঁ, ভালো আছি। তুমি?’
নাফিসা লিখে, ‘এই তো আছি একরকম। তা তোমার চেম্বার কেমন চলছে?’
মাহিন উত্তর দেয়, ‘প্রথম প্রথম এক দুজন আসত। এখন প্রতিদিন নয় দশজন রোগী আসে। বেশ ভালোই এগুচ্ছে। কিন্তু তুমি ভালো নেই কেন?’
নাফিসা থমকায়, ‘ভালো নেই কে বলল?’
মাহিন উত্তরে লিখে, ‘কারণ তুমি বললে এই তো আছি একরকম। তার মানে ভালো নেই। কী হয়েছে বলো তো?’
নাফিসা টের পায় বুকের ভেতর একটা অভিমান দলা পাকিয়ে উঠছে। ও একটু চুপ থেকে লিখে, ‘বলব একদিন। এখন বলো তো তুমি কি আসলেই এই দেশে থেকে যাবে? আমেরিকা ফিরে যাবে না?’
এই প্রশ্নটা ইদানিং খুব বেশি শুনতে হয়। মাহিন টাইপ করে, ‘এই দেশেই থেকে যাব। মাঝে মাঝে ব্রহ্মপুত্র নদের পাশে গিয়ে বসে থাকি। সেই বোটানিক্যাল গার্ডেনের ভেতর।’
নাফিসা এক মুহুর্তে সুদূর অতীতে ফিরে যায় যেখানে ও চঞ্চল এক তরুণী, চুলগুলো বাতাসে উড়ছে, চোখে রঙিন ভালোবাসা। মনের দিক থেকে কোনো পিছুটান নেই, সবটুকু দিয়ে একজনকে চাওয়া।
নাফিসা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে লিখে, ‘মাহিন, অতীত ফিরিয়ে আনা যায় না। তুমি একটা বিয়ে করো। চাইলে আমি পাত্রী দেখতে পারি।’
মাহিন হাসির ইমোজি দেয়, তারপর লিখে, ‘বেশ তো। সবাই মিলে আমাকে বিয়ে দেবার জন্য উঠে পড়ে লেগেছে। চাচি দুদিন পর পর একটা পাত্রী ধরে নিয়ে আসে। আমাকে দেখায়, আমেরিকার পাত্র। এখন তুমিও।’
নাফিসাও একটা হাসির ইমোজি দিয়ে লিখে, ‘কারণ একা থেকে তুমি শুধু শুধু নিজেকে বঞ্চিত করছ। ভালো দেখে একটা মেয়ে বিয়ে করে নাও।’
মাহিন একটু চুপ থেকে লিখে, ‘আচ্ছা, যদি জীবন কখনও সুযোগ দেয়, তবে তুমি কি আমার কাছে ফিরে আসবে?’
নাফিসা থমকে যায়। চেয়ে থাকে মেসেজটার দিকে। মাহিন এটা কী লিখল! ও কাঁপা হাতে টাইপ করে, তাতে দুচারটা শব্দ ভুল টাইপ হয়। তারপর মেসেজটা পাঠায়, ‘মাহিন, জীবন এমন সুযোগ দেওয়া মানে বোঝ? এর মানে হলো আমার হাসব্যান্ড আমার জীবন থেকে চলে যাওয়া। আমার ছেলে মেয়ে দুটো তাদের বাবাকে হারিয়ে ফেলা।’
মাহিন দ্রুত টাইপ করে, ‘সরি, তুমি ভুল বোঝ না৷ আমি বলতে চেয়েছি, যদি কখনও এমন হয়, কারও কোনো ক্ষতি হলো না, তাহলে কি তুমি আমার কাছে ফিরে আসবে?’
নাফিসা ধন্দে পড়ে যায়। এভাবে তো কখনও ভেবে দেখেনি। কী লিখবে ও? ভাবতে ভাবতে সময় পেরিয়ে যায়। একটা সময় নিজের কাছে কোন উত্তর খুঁজে না পেয়ে মোবাইলটা বন্ধ করে দেয়।
(চলবে)