#হিমাদ্রিণী – ১২
লেখনীতে – আয্যাহ সূচনা
-“হেমার মা নয় তার চাচী তাকে নিয়ে যেতো। ছাদের বাহানায় রোজ রাতে চার তলায় আটকে রাখতো। নির্মম চিত্র তাকে দেখানো হতো। হেমা হ্যালুসিনেট করে।রাতে ওকে যে মেডিসিন দেওয়া হয় সেই মেডিসিনের রিয়েকশন চলে রাতভর।আমি ওর ব্লাড টেস্ট করেছি।সেখানেও সবটা স্পষ্ট।এইযে রিপোর্ট।”
ডিউটি শেষ করে থানায় ছুটে এসেছে মাশুক, তার সঙ্গী শান্তনুও। ডাক্তারি কিছু রিপোর্টের প্রয়োজন ছিলো, যা এই মামলার জন্য অত্যন্ত জরুরি।আদালত কেস পুনরায় খোলার চূড়ান্ত অনুমতি দিয়েছে।
শান্তনু থানার ওসির উদ্দেশ্যে বললো,
-“স্যার আমি জানতে পেরেছি যারা এই হত্যার সাথে জড়িত ছিলো তারা সকলেই শ্রমিক।পুরোনো কোনো মার্ডার হিস্ট্রি না থাকলেও ওদের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য তেমন একটা ভালো না।উগ্র, মাদক আসক্ত।ফরিদা বেগমের ছেলের খবর নিয়েছি।ছুটিতে আসে দেশে,এখন বিদেশী মেয়ে বিয়ে করে দিব্যি আছে। আসামীদের সবার পরিবারকে খুঁজে পাওয়া সম্ভব হয়নি।যেহেতু দশ বছর অনেক সময়।”
মাশুক বললো,
-“শুধুই কি লোন পরিশোধ করতে না পারায় তাদের হত্যা করা হলো?আমি বিশ্বাস করতে পারছি না।”
শান্তনুর ভীষণ রাগ হচ্ছে।রাগটা জায়েজ নয় তারপরও।বারবার মন একই কথা বলে।সে সেটি প্রকাশ করলো,
-“খতিব সাহেব যদি বলে যেতেন তার চিঠিতে!”
মাশুক শান্তনুর দিকে চাইলো।ওসি সাহেব মনোযোগ দিয়ে ফাইল দেখছেন।মাশুক বললো,
-“আসামী বাহিরের কেউ হলে নিশ্চয়ই নাম উল্লেখ করতো।কিন্তু খতিব সাহেব সেটা করেননি।বিষয়টা পুরোপুরি ক্লিয়ার।”
শান্তনু বললো,
-“এক্স্যাক্টলি! আপনজনের মায়ায় নাম লুকিয়ে গেছেন।এটাও একটা প্রমান।কিন্তু ওই জাহিল জব্বার দোষ সমস্তটা খতিব সাহেবের ঘাড়ে চাপাতে ব্যস্ত।শুনলাম লইয়ার হায়ার করেছেন।”
মাশুকের কপালের রগ ফুটে উঠে।ঘৃণা লাগছে এই বিষয়টি শুনতেও,যে একজন মৃত মানুষকেও তারা ছাড়ছে না।হেমাকে এতটা কষ্ট দিয়েছে।মাশুক রূঢ় গলায় বললো,
-“একবার শুধু প্রমাণিত হোক! তারপর তাদের সব অন্যায়ের শাস্তি তারা ভোগ করবে।”
শান্তনু বলে,
-“সেটাতো পাবেই।আমি এর আগে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলবো না।তাছাড়া আমি রূপগঞ্জে মানুষ পাঠিয়েছিলাম।তারা জানালো মালিক হিসেবে খুবই জঘন্য একজন লোক জব্বার সাহেব।”
হুট করেই মস্তিষ্ক জ্বলে উঠলো।মাশুক তড়িঘড়ি করে শান্তনুর দিকে চেয়ে বললো,
-“শান্ত! হেমার বাবা জব্বার সাহেবের কাছ থেকে লোন নেয়নি তো?”
শান্তনু চুল খামচে ধরলো।এই কথাটা এখনও তার মাথায় আসেনি কেনো?অধম হয়ে গেলো নাকি?শান্তনু উঠে দাঁড়ায়।ওসি সাহেবকে সালাম এবং বিদায় জানিয়ে মাশুকের কাঁধে হাত রাখলো,
-“ভালো একটা জিনিস মনে করিয়েছিস।চল!”
শান্তনু এখন পুরোপুরি কেসে নিমগ্ন। তার একমাত্র লক্ষ্য সত্য উদঘাটন করা। বুদ্ধি কাজে লাগিয়ে জানতে হবে, হেমার বাবা কি আসলেই জব্বার সাহেবের কাছ থেকে ঋণ নিয়েছিলেন? মনে হচ্ছে ঠিক তাই। তার আগে হেমাদের পুরোনো বাড়িতে যাওয়াটা জরুরি।
ঠিক তখনই ফোনে মেসেজ এলো,
-“নেটওয়ার্ক পাচ্ছি না,তোমাকেও পাচ্ছি না”
শান্তনু হাসলো।সুদূর পার্বত্য চট্টগ্রামে একজন রয়েছে তার অপেক্ষায়।পাহাড়ের রাণী যার নাম দিয়েছে শান্তনু।হেসে মেসেজের জবাব দিলো,
-“আমার জন্য বড্ড উতলা তুমি,মালা”
______
-“ওকে একটু সাজিয়ে দিবে মা?”
শান্তা বেগম জিজ্ঞাসু নয়নে চেয়ে রইলেন।মাশুকের হাতে হেমার কাপড়।মাশুকের মুখটা মলিন।মাশুক হেমার কাপড় শান্তা বেগমের দিকে এগিয়ে দিলো।তিনি দেখলেন ছেলের মুখটা।কিছু বলতে চায় হয়তো।মাশুক ঠিক তখনই বলে উঠে,
-“তোমরা যেভাবে সাঁজগোজ করো ওকেও একটু সাজিয়ে দাও। হেমাতো এসব পারেনা।”
মাশুকের কণ্ঠে দ্বিধা,ভারী আওয়াজ।মাকে এসব বলতেও যেনো তার অস্বস্তি হচ্ছে।বউকে সাজিয়ে দেওয়ার আবদার নিয়ে এসেছে।চোখে এলোমেলো দৃষ্টি।
-“কোথাও যাবি?”
অপ্রস্তুত মাশুক জবাব দেয়, -“হুম? না… মানে হ্যাঁ ওকে নিয়ে বের হবো।”
শান্তা বেগম এখনো মাশুকের সিদ্ধান্তে পুরোপুরি মন থেকে রাজি নন।আজকাল তার মুখে ভার হয়ে থাকে। পরিস্থিতি মেনে নিয়েছেন, কিন্তু মন সম্পূর্ণ সায় দেয়নি। আজ ছেলের মুখ দেখে তার বুকের গভীর থেকে মায়া জাগলো। মাশুক ঠোঁট চেপে, চোখ ঘুরিয়ে বললো,
-“আমি তাহলে ওকে পাঠাচ্ছি?”
মাশুক বেরিয়ে গেলো বিড়বিড় করতে করতে,
-“ওকে প্রতিদিন দেখি।পেশেন্ট রূপে দেখি…একদিন বউ রূপে দেখতে চাই…”
শান্তা বেগম গলা উঁচু করে প্রশ্ন করেন, -“কিছু বললি?”
মাশুক দাঁড়ালো।ফিরে এলো আবার মায়ের ঘরে।বললো,
-“না তেমন কিছু বলিনি.. হেমার সাজসজ্জার কিছুই নেই.. তুমি…”
শান্তা বেগম কথা দোলালেন।হেমার কাপড় হাতে তুলে বললেন,
-“এত চিন্তা করতে হবেনা তোর।ওকে পাঠা আমার কাছে”
মাশুক আরো একবার দরজায় পা বাড়ায়।কিন্তু এবারও ফিরে এলো।ঠোঁট ভিজিয়ে বললো,
-“মা ওকে সংসার কি?বিষয়টা বুঝাও।আমার অর্থ হচ্ছে ওকে তোমাদের শিখিয়ে নিতে হবে।”
শান্তা বেগম অবাক হলেন ছেলের অগোছালো বাক্যগুলো শুনে।অল্প শব্দে কাটকাট কথা বলা ছেলের কথায় কম্পন।তিনি বললেন,
-“ওকে সংসার করতে শেখাবো?”
-“হ্যাঁ,কেনো নয়?আর পাঁচজন সাধারণ মানুষের মতো ওর জীবনটাও হওয়া উচিত।”
মাশুকের মায়ের উপর ছিলো পূর্ণ আস্থা, কিন্তু মন অস্থির। বারবার পায়চারি করতে করতে মায়ের ঘরের দিকে পা বাড়ায়, যদিও সেটি তার স্বভাবের সাথে মানায় না। হঠাৎ বিছানায় বসে পড়ে গভীর চিন্তায় মগ্ন হয়।হেমাকে কেমন লাগবে, তার বউ রূপে?
-“দেখো দেখো আমি সেঁজেছি”
হেমার কণ্ঠ সুর শুনে মাশুকের বিচলিত দৃষ্টি তার দিকে ঘুরে তাকালো। দু’জনের চোখের মিলনেই যেন সব অধীরতা মিলিয়ে আসে।হৃদয়ে নামে এক শান্ত শীতল বৃষ্টি।
গোলাপি বস্ত্র হেমার অঙ্গে প্রত্যঙ্গের সাথে মিশে আছে,চুলগুলো পরিপাটি আর কপালের মাঝখানে সাদা পাথরের টিপ উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে। ঠোঁটেও গোলাপি আভা। সেইসঙ্গে তার নির্ভেজাল হাসি।সবকিছু মিলে মাশুক নিস্তব্ধ হয়ে গেলো, একেবারে প্রতিক্রিয়াহীন। হেমা কাছে এসে, দু’হাতে মাশুকের টিশার্ট টেনে বললো,
-“আমাকে নতুন মা সাজিয়ে দিয়েছে। বলেছে তোমাকে সবার আগে দেখাতে।”
কোমর জড়িয়ে বুকের উষ্ণতায় মিশিয়ে নেয় মাশুক।হেমার নেত্র প্রসারিত হয় নীরবে।অজ্ঞাত কোনো অনুভূতি স্নায়ুতে ঝড় তুললো যেনো।মাশুকের কাছে আসা ধোঁয়াশার মত তার কাছে।শিরদাঁড়া বেয়ে বয়ে চলা অস্বচ্ছ অনুভূতি।
হেমাকে আরো খানিক বিস্মিত করে কপালে ঠোঁট রাখে।সেভাবেই অস্পষ্ট স্বরে আওড়ায়,
-“সরলতার স্নিগ্ধ মূর্তি, হৃদয়ের উচ্ছল ঝড়, নিঃশ্বাসের গভীরতম ব্যাকুলতা।হেমা সরোয়ার নয়,হেমা মাশুক মৃধা রূপে অনুভব করছি।”
হেমা বরফখণ্ডের মতো নিথর ও শীতল। চারিপাশে এক অলীক স্তব্ধতা। কেন এমন হচ্ছে? বুকের ভেতর ধড়ফড়, নিঃশ্বাসের অঙ্গীকার আটকে গেছে। কেন এই অনভিপ্রেত অবস্থা? নিজেই তা উপলব্ধি করতে পারছে না সে।
মাশুক বিষয়টি খেয়াল করলো।দ্রুত কপাল থেকে মুখ সরিয়ে হেমার দিকে চাইলো।অনুভূতির সাগরে ভাসতে ভাসতে জ্ঞান হারায়নি। থুতনিতে হাত ঠেকিয়ে বললো,
-“নিঃশ্বাস আটকে রেখেছো কেনো তুমি?”
হেমা স্তব্ধ বিভ্রান্ত মুখে চেয়ে বললো, -“হুম?”
অভ্যন্তরে এক অশান্ত তরঙ্গ বয়ে যাচ্ছিলো তার মাঝে।বুঝে উঠতে পারেনি।নিজেও জানেনা শ্বাস আটকে রাখার কারণ।উদাসীন নেত্র আবার নুইয়ে ফেলে।মাশুক হেমার গালে হাত ছুঁয়ে দিয়ে বললো,
-“আমি তোমার কাছে দাঁড়িয়ে আছি বলে তোমার খারাপ লাগছে?”
-“ভ..ভয় লাগছে..”
-“আমাকে ভয় পাচ্ছো?” চকিত গলায় জানতে চায় মাশুক।
হেমা ধীরে মাথা দুলিয়ে বলে, -“উহু”
-“তাহলে?”
হেমার অন্তঃস্থলে সবটা গুলিয়ে এলো।সে মাশুকের চোখে চোখ রাখতে পারলো না। মস্তিষ্ককে কাজে লাগিয়ে আওয়াজ নত করে বলে,
-“ঘুরতে যাবো”
চাপা হাসে মাশুক।জবাবে বলে,
-“তুমি তো বাহিরে যেতে ভয় পাও। আজ নিজে থেকে কেনো বের হতে চাইছো হেমা?”
-“এমনিই”
-“এমনিই? কিন্তু আমার মনে হচ্ছে তুমি আমার কাছ থেকে ছাড়া পেতে বাহানা দিচ্ছো”
হেমা হচকচিয়ে উঠে। সত্যিইতো! মাশুকের কাছে ধরা পড়ে যাওয়ায় তার অধিরতা বাড়লো।আকুল চোখে চেয়ে বলে,
-“শুনো..”
মাশুক রাশভারী কণ্ঠে জবাব দেয়, -“বলো শুনছি”
-“আমাকে ছেড়ে দাও…”
মাশুক আর কিছু বলল না। হেমার কাছ থেকে খানিকটা দূরত্ব বজায় রেখে সরে দাঁড়ালো, তবে পুরোপুরি দূরে নয়। তাকে সময় দিতে হবে এই নতুন অনুভূতি বুঝতে এবং শেখার জন্য। ধীরে ধীরে সে এ অস্থিরতার অর্থ খুঁজে পাবে।নাম দিতে পারবে এই অনুভবের।মাশুক যেটায় ধীরেধীরে মজেছে।নিঃশব্দে বিছানায় সোজা হয়ে বসে পড়লো।হেমার উদ্দেশ্যে বললো,
-“হেমা আলমারি খুলো”
হেমা সং সেজে দাঁড়িয়ে ছিলো।মাশুকের কথায় হুশ ফিরলো।ঘুরে তাকালো মাশুকের দিকে।মাশুক আবার বলে উঠে,
-“আলমারি খুলো।”
হেমা কিছু না বলেই আলমারি খুলে দাঁড়ায়।মাশুক এবার বললো,
-“আমার কাপড়ের সেকশন থেকে আমার শার্ট আর প্যান্ট বের করো।”
হেমা বোকার মত দাঁড়িয়ে রয়। কোনটা বের করবে?এখানেতো অনেক কাপড়। দিশেহারা মুখে মাশুকের দিকে আবার দৃষ্টি দেয় হেমা।মাশুক বলে,
-“তোমার যেটা পছন্দ সেটা বের করো।তোমার চুজ করা কাপড় পড়ে আমরা বের হবো কেমন?”
হেমা আগ্রহ প্রকাশ করে প্রশ্ন করে, -“সত্যিই? তুমি আমার পছন্দের কাপড় পড়বে?”
মাশুক উঠে এসে হেমার কাছে দাঁড়ায়।হেমার মুখের দিকে কিছুটা ঝুঁকে বলে,
-“অবশ্যই পড়বো।তুমি আমার স্ত্রী।স্ত্রী অর্থ জানো?স্ত্রী অর্থ হচ্ছে তোমার ভাষায় বেস্ট ফ্রেন্ড।আমি কি বলোতো?”
-“কি?”
-“আমি তোমার বর,স্বামী, অর্ধাঙ্গ।যার সাথে তুমি হয়তো বাকিটা জীবন কাটিয়ে দেবে।যে তোমাকে একটি ফুলের টোকাও লাগতে দিবে না।আমি তোমার প্রটেক্টর,তোমার বেস্ট ফ্রেন্ড।”
মাশুকের কথাগুলো শুনে হেমার ঠোঁট ধীরে ধীরে প্রসারিত হয়।হাসি ফুটে উঠে সেখানে। হেমা জিজ্ঞাসা করে,
-“বেস্ট ফ্রেন্ডকে চুমু খাওয়া যায়?তাই তুমি আমাকে চুমু খেয়েছো?”
হেমা এমন একটা প্রশ্ন করবে মাশুক ভাবেনি।ঠোঁট কামড়ে ক্ষুদ্র চোখে চাইলো মাশুক। তীক্ষ্ণ তার দৃষ্টি। হেমা জবাবের আশায়।মনের ইচ্ছেকে প্রাধান্য দিয়ে মাশুক বলে ফেললো,
-“হ্যাঁ যায়।”
হেমা কিছু ভাবলো না।হুট করেই পা উঁচু করে মাশুকের কপালে অধর ছোঁয়ায়। উচ্ছ্বাসের সাথে বলে উঠে,
-“আমিও খেয়েছি। শোধবোধ!”
মাশুকের হৃদয় অধৈর্য হয়ে উঠতে চাইলো হেমার মিষ্ট প্রথম স্পর্শে।প্রশান্তি ছুঁয়ে যাচ্ছে অন্তরে। নিজেকে দমিয়ে রাখার চেষ্টা করলো মাশুক।এই সম্পর্কে ধৈর্যহারা হলে বিপদ।এদিকে হেমা ধীরে ধীরে আলমারি তছনছ করে খুঁজে বের করল খয়েরি রঙের শার্ট মাশুকের দিকে বাড়িয়ে দিলো হাসিমুখে।
মাশুক শার্ট হাতে নিয়ে হেমার অকস্মাৎ কপোলে আরেকদফা ঠোঁট ছুঁইয়ে দিয়ে কানের কাছে ফিসফিসিয়ে বলে উঠে,
-“থ্যাংকস”
_____
বাহিরে পা দিতেই আকাশ বৃষ্টির ঝাপটায় ভিজে উঠলো চারিদিক।ধূসর মেঘে ঢাকা নীলিমা, বাতাসে ভেজা মাটির মিষ্টি গন্ধ। শহরের ভেজা রাস্তা যেনো এক মোহময় চিত্রকল্প।
হেমা গাড়ির কাঁচে আঙুল বাড়িয়ে বৃষ্টির ফোঁটাগুলো ছুঁতে চেষ্টা করছে।আর মাশুক কখনো সামনে, কখনো পাশে চেয়ে দেখছে হেমার কর্মকাণ্ড।নিরবে তার এই শিশুসুলভ খেলা দেখে মৃদু হাসছে। এমন স্নিগ্ধ পরিবেশে তাকে নিয়ে বের হওয়া ভালো সিদ্ধান্ত ছিলো।
মাশুক একহাতে স্ট্যারিং সামলে অন্যহাতে হেমার একহাত আলতো করে ধরে বললো,
-“বৃষ্টি কেমন?”
হেমা মাশুকের হাতের দিকে চাইলো। ঘন লোমে ঢাকা ফর্সা হাত।পছন্দ হলো বিষয়টা তার।মাশুকের প্রশ্নের জবাবে বললো,
-“খুব খুব সুন্দর…”
-“আর আমি?”
হেমা এই প্রশ্নের জবাব দিলো না তৎক্ষণাৎ।মাশুকের হাত টেনে কামড় বসিয়ে দিলো।আচমকা আক্রমণে গাড়ি গতি হারাচ্ছিলো।মাশুক দুহাতে সামলে দেয়।অন্যদিকে হেমা খিলখিল করে হেসে উঠে।মাশুক হতভম্ব চোখে তাকিয়ে বললো,
-“এটা কি করলে?”
-“তোমার হাতের লোমগুলো ভালো লাগছিলো।তাই কামড়ে দিয়েছি।”
বলে সিটে পিঠ ঠেকিয়ে উন্মাদের মত হাসতে লাগলো হেমা।যেনো ভীষণ আনন্দ পেয়েছে কাজটি করে।সেখানে মাশুকের আত্মা উবে যাওয়ার উপক্রম। ধারালো দন্তের আক্রমণে হাতে রক্ত জমাট বেঁধে গেছে।তার চেয়ে বেশি ভয় ছিলো গাড়ির নিয়ন্ত্রন হারাবার।হতাশ গলায় মাশুক বলে উঠে,
-“কবে বুঝ হবে তোমার?”
হেমার হুট করে মনে পড়লো তার ক্ষিদে পেয়েছে।সোজা হয়ে বসলো।বললো,
-“আমার ক্ষিদে পেয়েছে গাড়ি থামাও।”
-“বাহিরে বৃষ্টি।গাড়ি থামানো যাবে না।”
হেমা মাশুকের কলার টেনে ধরে বলে,
-“আমার কথা শুনো না তুমি মাশরুম!”
মাশুক বলে উঠে, -“আমিতো তোমার কাছে একটা মাশরুম,আমাকে ফ্রায় করে খেয়ে ফেলো।”
হেমা বললো, -“তোমাকে কিভাবে খাবো?তুমি কি খাবার?”
মাশুক হাসলো।বললো, -“বাদ দাও ওসব।কলার ছাড়ো আমি দেখছি।”
-“কি দেখবে মাশরুম?”
নিজের কলার নিজেই ছাড়িয়ে নেয় মাশুক।অসভ্যের মত চিন্তা ভাবনা মাথায় আসছে।নিজেকে শায়েস্তা করে চলেছে আনমনে।হেমার বোধগম্যতার আড়ালে।মাশুক জবাব দিলো,
-“মাশরুম ফ্রায়ই খাওয়াবো তোমাকে আজ,ওয়েট।”
-“তোমাকে খেয়ে ফেললে তুমি ব্যথা পাবেনা?”
-“এই মাশরুম সেই মাশরুম না বোকা মেয়ে।”
-“তাহলে কোন মাশরুম?”
হেমার উল্টোপাল্টা প্রশ্নের উত্তর দিতে থাকলে গাড়ি চালানো দায় হয়ে পড়বে। হেমা মাশুকের কাছ থেকে উত্তর না পেয়ে মুখ ফুলিয়ে নিলো।হুট করেই চোখ গেলো তার হাতের দিকে।রক্ত লাল হয়ে আছে জায়গাটা।তার রাগ,অভিমান নিমিষেই উধাও।হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো আঘাতপ্রাপ্ত স্থানে।চুমু খেলো কয়েকবার।বললো,
-“তোমার ব্যথা হচ্ছে?”
-“হ্যাঁ”
-“আমি আর করবো না…”
-“সরি বলো”
-“সরি মাশরুম”
মাশুক ঘুরে তাকায়।হেমার হাত পুরে নিলো নিজের হাতের মুঠোয়।স্মিত হাসি সহিত সামান্য মাথা ঝুঁকে আসে।শীতল স্বরে বলে উঠে,
-“এন্ড আই লাভ ইউ”
চলবে….