#হিমাদ্রিণী – ১৪
লেখনীতে – আয্যাহ সূচনা
হেমা গাঢ় খয়েরি রঙের টপ পরিধান করেছে।কাপড় পরিবর্তন এবং গোসল সে নিজে থেকে অদ্ভুতভাবে করতে পারে।সেই সময় কাউকে কাছে ঘেঁষতে দেয় না।লজ্জা লাগে তার, অস্বস্তি হয়।সে নিজেই জানিয়েছে।কিন্তু দরজার বাহিরে দাঁড়িয়ে তাকে ইন্সট্রাকশন দিতে হয়। দাঁড়িয়ে থাকতে হয় তার জন্য।
সাদা স্কার্ফটি গলায় পেঁচানোর চেষ্টা করছে হেমা। মাশুক নিজেই স্কার্ফটি ঠিক করে দিলো।সাথে ইউটিউব দেখে দেখে চুলের বেণী বাঁধার চেষ্টা করছে।নিখুঁত না হলেও বেশ মানানসই লাগছে। মাশুক হেমাকে পুতুলের মতো ঘুরিয়ে সামনের চুলগুলো ঠিক করছিল। মাঝে মাঝে তার ইচ্ছে করে হেমাকে “পুতুল” বলে ডাকতে, কিন্তু কেমন যেনো সংকোচ বোধ হয়, সে কিছুতেই পারে না।
হেমা আকস্মিক প্রশ্ন করে তার আদুরে কণ্ঠে,
-“আমাকে তুমি খুব খুউউব ভালোবাসো তাই না?তাই আমার সব কাজ করে দাও?আমার সাথে থাকো?”
মাশুক হেমার নরম হাতকে স্থান দিলো তার বক্ষে।প্রগাঢ় দৃষ্টি সহিত বললো,
-“বাসি। তোমার পূর্বে একজন আসতে চেয়েছিলো।তুমি আসবে বলে সে চলে গেছে।”
হেমা হাত সরায়।চোখ বুলায় মাশুকের মুখে।চোখে চশমা, গালে দাড়ি।সবসময় ফিটফাট অবস্থায় বের হয় এই সময়।হয়তো স্নিগ্ধতার অর্থ হেমা জানেনা।কিন্তু তার নয়ন জুড়ায়।মাশুকের গাল টেনে দিয়ে বললো,
-“আমিও কিন্তু ভালোবাসি হ্যাঁ? তোমার সাথে থাকলে আমার ভয় করেনা জানো।”
মাশুক আগ্রহী হয়ে জানতে চাইলো, -“আর? আর কেমন অনুভূতি হয়?”
-“তুমি আমাকে জড়িয়ে ধরলে,আর চুমু খেলে আমার সুড়সুড়ি লাগে।”
সরল বাক্যে মুখ ঘুরিয়ে খানিক হাসলো মাশুক। সুড়সুড়ি অনুভব করে? নিজের অনুভূতিকে যে একটা নামে বিশ্লেষণ করতে পেরেছে সেটাই অনেক।
মাশুক বিছানা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে এপ্রোন গায়ে দিলো।আরো মুগ্ধতা ছড়ালো হেমার নেত্রে।সেও ঠোঁট কামড়ে হাসি মুখে দাঁড়ায়।
-“কোথায় যাচ্ছি জানো?”
-“কোথায়?”
-“তোমাকে আমার আরেকটা বাড়িতে নিয়ে যাচ্ছি।আমার সেকেন্ড হোম।সেখানে তোমাকে নিয়ে একটা গেম খেলবো।খেলবে তুমি?”
হেমা মাথা উপর নিচ দুলিয়ে সম্মতি দেয়, – “হ্যাঁ হ্যাঁ খেলবো।”
হেমাকে বুঝিয়েছে।কিন্তু আকস্মিক হাসিটা উধাও হয়ে গেলো। এমআরআই মেশিন যেকোনো সাধারণ মানুষের জন্য ভয়ানক দানবীয় একটি যন্ত্র। হেমা কিভাবে রিয়েক্ট করবে কে জানে?
হেমা এক হাতে অ্যালবামটা ধরে,আরেক হাতে মাশুকের উষ্ণ স্পর্শ আঁকড়ে আছে। মাশুককে বারবার দৃষ্টি ঘুরিয়ে দেখছে।কি অপূর্ব লাগছে তাকে সাদা এপ্রনে! প্রশংসা করার ভাষা হারিয়ে ফেলেছে যেন, মুখ ফুটে কিছুই বলতে পারছে না।
গাড়িতে বসে অ্যালবাম খুলে বাবা-মায়ের ছবিতে হাত বুলিয়ে ফিসফিসিয়ে বলে,
– “বাবা মা, মাশরুম আমাকে ভালোবাসে।”
এই ভালোবাসা যেনো হেমার মস্তিষ্কের প্রতিটি কোষে গেঁথে গেছে।তার একমাত্র প্রার্থিত সাধনা, যা মাশুকের কাছ থেকে পূর্ণমাত্রায় পেয়ে সে আজ দিশেহারা।
হেমা পূনরায় বললো, “মাশরুম একটা ডাক্তার বুঝলে। ও অনেক সুন্দর দেখতে।”
রৌদ্রের তীব্র কিরণ গাড়ির কাঁচ ভেদ করে এসে হেমার উজ্জ্বল মুখকে আলোকিত করলো। মাশুকের তা সহ্য হলো না, দ্রুত উইন্ডশিল্ড নামিয়ে দিলো। আলতো করে হেমার গালে আঙুল ছুঁয়ে দেয়। হেমা কেঁপে উঠলো ক্ষণিকের জন্য।
মাশুক প্রশ্ন করে, – “ তা,তোমার বাবা-মা কি বললো? আমাকে কি পছন্দ হয়েছে তাদের?”
মাশুকের কণ্ঠে ছিলো এক ধরনের মৃদু অনুরাগ, যা মুহূর্তেই হেমার হৃদয় ছুঁয়ে যায়। হেমা মাশুকের শার্ট টেনে কাছে নিয়ে এসে কানে কানে বললো,
-“বাবা মা আমাকে সিক্রেট বলেছে গতকাল রাতে জানো?”
মাশুকও হেমার ফিসফিসানি নকল করে ধীর কণ্ঠে বললো,
-“কি সিক্রেট আমাকে বলো?”
-“বলেছে কি… তোমার সাথে থাকতে।নাহয় ওই খারাপ লোকগুলো আমাকে ধরে নিয়ে যাবে।মেরে ফেলবে।তোমাকে অনেক ভালো বলেছে আমার স্বপ্নে এসে।বলেছে তুমি অনেক কিউট।”
মাশুক হেসে সোজা হয়ে বসে।বলে,
-“ওই খারাপ লোকগুলো আর কখনও আসবে না।তাদের আমি জেলে রেখে এসেছি।যদি আবার আসতে চায় ওদের আচ্ছামত লাঠিপেটা করবো,ওকে?”
হেমা জ্বলজ্বল চোখে চেয়ে বলে, -“আমিও করবো।”
হাস্যোজ্জ্বল চেহারার প্রদীপ যেন হুট করে নিভে গেলো। হেমা MRI মেশিনের সামনে বিস্মিত হয়ে দাঁড়িয়ে, মাশুকের এপ্রন শক্ত করে ধরে আছে। ভীত চোখে তাকিয়ে আছে চারপাশে, সাদা মেশিনের শীতল উপস্থিতি তার মনে ভীতি জাগিয়েছে। মাশুক অন্য দুজনের সাথে কথোপকথনে মগ্ন, কিন্তু হেমার মনোযোগ তাতে নেই, তার পুরো সত্ত্বা ভীত আর কৌতূহলে আচ্ছন্ন।
হুট করেই মাশুক বলে উঠে, – “তাহলে গেম শুরু করা যাক হেমা?”
হেমার ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় জানান দিলো এই গেমটা হয়তো ভয়ঙ্কর। তোতলিয়ে বললো,
-“ক..কি গেম?”
মাশুক ঠান্ডা মাথায় হেমাকে বলে, – “এইযে মেশিনটা দেখছো?এটা খুব ভয়ানক তাই না?”
-“হুম”
-“এটা শুধু দেখতে ভয়ানক হেমা।দেখবে এটা কিভাবে কাজ করে?”
হেমা কি জবাব দিবে বুঝে উঠতে পারছে না।এক মন চাইছে দেখুক কিভাবে কাজ করে। আরেক মন তাড়না দিচ্ছে।ভয় ভয় অনুভূতি কাজ করছে।হুট করে মাশুক হেমার কাছ থেকে সরে গিয়ে শুয়ে পড়লো।মেশিন ওন করা হয় কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে। হেমা অবিচল চেয়ে রইলো।চোখ বুজে আছে মাশুক।হুট করেই মেশিন চলতে শুরু করে।মাশুকের দেহ কিছুটা ভিতরের দিকে চলে গেলো। হেমা দৌঁড়ে আসে।মাশুকের পা টেনে হন্তদন্ত ভঙ্গিতে বলতে লাগলো,
-“আমার মাশরুমকে ছেড়ে দাও। কোথায় নিয়ে যাচ্ছো?ওকে বের করো।”
পরিস্থিতি আরো যেনো বেগতিক হলো। মাশুক ভেবেছিলো হেমার জন্য সহজ হবে। মাশুককে সুস্থ স্বাভাবিক দেখে সেও সাহস পাবে।হলো উল্টো।
মাশুককে বাহিরে বের করে আনা হলো। হেমা তড়িৎ গতিতে এসে লেপ্টে যায় তার বুকে।বলে,
-“চলো এখান থেকে।এই জায়গা ভালো না।”
মাশুক কিছুটা কঠোর হয়ে বললো,
-“এটা ভালো জায়গা।এই মেশিন তোমাকে আঘাত দিবে না।আমি যেভাবে শুয়েছি তুমিও সেইভাবেই শুবে।”
হেমা জবাব দিলো, – “না না না!”
-“কোনো না নয়।তুমি কি চাও আমি তোমার সাথে রেগে যাই?কথা না বলি? বলো,চাও এটা?”
হেমার ঠোঁট কাঁপছে। টলমলে নয়নে চেয়ে আকস্মিক বলে উঠে,
-“তুমি আমাকে কষ্ট দিচ্ছো”
কুঁচকে থাকা কপাল হুট করেই সমান হয়ে যায়।কথাটির মধ্যে অদ্ভুত মায়া জড়ানো।মাশুকের হৃদয়ে তীরের মত বিধলো।আশপাশে সবাই যারযার কাজে ইচ্ছেকৃত ব্যস্ত। মাশুক হেমার গালে হাত রেখে বললো,
-“আ’ম সরি হেমা। আমি তোমাকে কষ্ট দিতে চাইনি।কিন্তু আমার কথাটা রাখো প্লীজ।এরপর তুমি যা বলবে আমি শুনবো।শাস্তি দিতে চাও?দিও।কিন্তু এখন আমার কথাটা শুনো।”
-“আমার ভয় করে”
-“কিচ্ছু হবেনা। আই প্রমিস, তুমি শুধু চোখ বন্ধ করে শুয়ে থাকবে দেখবে কাজ শেষ।ম্যাজিকের মতো।আমি ওয়ান থেকে টেন গুনবো।”
হেমা বললো, – “আমি গুনবো।”
মাশুক হাসলো এবারে।বললো, -“আচ্ছা তুমি গুনবে।রেডি তাহলে?”
হেমা আবার শঙ্কিত গলায় প্রশ্ন করে, -“আমাকে যদি ব্যাথা দেয়?”
-“ব্যাথা দিলে আমি এই মেশিন ভেঙে ফেলবো।তুমি সাহসী মেয়ে।শুয়ে পড়ো।আমি আছিতো।”
হেমার শরীরে একরকম কম্পন স্পষ্ট, তবুও এক অদ্ভুত সাহসে ভর করে সে শুয়ে পড়লো। একবার মাশুকের দিকে তাকালো।তার চোখে ভরসার প্রতিচ্ছবি ফুটে উঠেছে। মাশুকই তার একমাত্র ভরসা। কে জানে, কতদিন এই ভরসার হাতের অপেক্ষায় হেমা তৃষ্ণার্ত থেকেছে?
_____
“মায়ের চেয়ে মাসীর দরদ বেশি” -এই প্রবাদের যথার্থ প্রমাণ হলো রিমার মায়ের অসহায় আহাজারি। ছোট মেয়েকে বোনের বাড়ি পাঠিয়েছেন কিছুদিন আগে।আবারও তাকে নিয়ে হাজির হলেন। বড় মেয়েকে দেখার নাম করে, শান্তা বেগমের সামনে বসে নানান উপদেশ দিচ্ছেন। যেনো তার চিন্তার ভার ভাগ করে নেওয়ার জন্যই এসেছেন।তিনি বললেন,
-“বিয়ে শাদী ধর্মীয় আর সামাজিক নীতি।অনেককিছু বুঝবার আর শুনবার আছে।পাগল মেয়ে কি সংসার করতে পারে আপা?সংসারের কি বুঝে ওরা?বাচ্চা কাচ্চাওতো জন্ম দিতে পারবো না।”
শান্তা বেগম মাথা দোলান।বলেন,- “হুম”
-“বাচ্চা না থাকলে কি জামাই বউয়ের সম্পর্ক শক্ত হয়?মাশুক বাবা দেখবেন দুইদিন পর বিরক্ত হয়ে গেছে। এই মেয়েতো জামাইকে খুশি রাখে কিভাবে ওইটাই জানে না।”
কপালের রগগুলো ফুটে উঠছে বেশ সময় নিয়েই।দরজার দ্বারে দাঁড়িয়ে আছে মাশুক।আলাপের ব্যস্ততায় হয়তো তাদের খেয়াল করা হয়নি।রিমার মা আবার বললেন,
-“আমরা জামাই, শ্বশুরবাড়ির মানুষের মন জয় করে চলছি আপা।দেখেন আমার মেয়ের বাচ্চা পেটে।কই বড় জা’কে আরাম আয়েশে রেখে ঘরের সব দায়িত্ব নিবে?উল্টো ওর দায়িত্ব সবার নিতে হচ্ছে।”
শান্তা বেগম এক গ্লাস শরবত এগিয়ে দিলেন তার দিকে।তার মুখে এই মুহূর্তে কোনো জবাব নেই।বললেন,
-“আপা শরবত খান।”
রিমার মা থামলেন না তারপরও।বলে উঠেন,
-“ছেলেটার জীবন নষ্ট হলো,আর কিছুই না।”
মাশুক হেমার হাত ধরে ভেতরে চলে এলো। উপস্থিত উভয়েই তাকালেন তাদের দিকে।মাশুক সালাম দিলো রিমার মা’ কে।তার নকল করে হেমাও হাসি মুখে সালাম দেয়।মাশুক শান্তা বেগমের উদ্দেশ্যে বললো,
-“মা আমি ভাবছি আমাদের বাড়িতে নতুন হেল্পিং হ্যান্ড রাখলে ভালো হয়।চব্বিশ ঘন্টা থাকবে আমাদের সাথে।যা যা করা প্রয়োজন সব করে দিবে।যেনো ভাবীর কোনো প্রকার কষ্ট না হয়।তোমার সম্মতি থাকলে জানিও।”
রিমার মা হেসে বললেন, -“আমাদের কথা চুপিচুপি শুনছো বুঝি?”
মাশুক জবাব দিলো, -“না আন্টি। অনিচ্ছাকৃত শুনেছি।দুঃখিত সে জন্যে”
ঘরে এসে নির্বোধের মত বসে আছে হেমা।ভয় আগেই দূর করেছে মাশুক।কিন্তু বাড়ি ফিরে তার চালচলন অদ্ভুত লাগলো হেমার কাছে।সে বুঝতে চায় মাশুককে।সে কি রেগে আছে? মাশুককে জিজ্ঞাসা করলো,
-“মাশরুম তুমি ছটফট করছো কেনো?”
মাশুক জবাব দিলো না।শার্ট বিছানার একদিকে ফেলে এসে উপুড় হয়ে শুয়ে পড়লো।মাথা গুঁজে দিলো হেমার কোলে। হেমা বিষম খেয়ে বসে।মাশুক অস্পষ্ট আওয়াজে আওড়ায়,
-“পুরুষ মানুষের চাহিদা থাকে, সত্য।তাই বলে শুধুই চাহিদা থাকে? পুরুষত্ব ফলাতেই হবে?তাদের মধ্যে ভালোবাসা,আবেগ,অনুভূতি থাকেনা?থাকতে পারেনা? স্ত্রী কি শুধু ভোগ করার সামগ্রী?যত্ন করা যায় না তাকে?”
হেমা মনোযোগ দিয়ে শুনলো।শুনে গেলো মাশুকের কথা।বারান্দা চিরে শেষ বিকেলের মৃদু আলো আসছে।সেই আলো ধারণ করতে চাইছে হেমা।মাশুকের চুলের গভীরে হাত গুঁজে দিলো।কোনো জবাব দিলো না।
_______
-“বহু কষ্টে আপনার খোঁজ পেয়েছি মিস্টার।এবার বলুন কি কি অপরাধ করেছেন?”
নাসির মোল্লা হচকচিয়ে উঠলেন।স্বল্প সময়ের জন্য থমকে দাঁড়ান।পুলিশের পোশাকে এক প্রৌঢ়, বলিষ্ঠ ব্যক্তির সামনে উপস্থিতি যেন তার বুকের ভেতর আতঙ্কের ঢেউ তুললো। উত্তরা এলাকার উন্নয়নাধীন এক কোণে, নাম পরিচয় পাল্টে তিনি নিজের বসতি গড়ে তুলেছেন। দশ বছর আগের ছবির সাথে তার আজকের চেহারার মিল নেই বললেই চলে। তবু সত্য ধরা পড়েছে।খবর পাকা।এই লোকটিই সেই ব্যক্তি, যিনি খায়রুল সরোয়ারকে সুদের বিনিময়ে দশ লক্ষ টাকা দিয়েছিলেন।
শান্তনু বসে পড়লো কোনো প্রকার অনুমতি না নিয়েই।বললো,
-“বসুন,আর বলতে শুরু করুন আপনার আর আপনার বন্ধুর গল্প।এসেছি যখন গল্প না শুনে যাবো না”
-“বলবো!সব বলবো” উদ্যমী পুরুষালি কন্ঠস্বর নাসির মোল্লার।শান্তনু আশ্চর্যচকিত।
শান্তনু বললো, – “সাহস ভালো।শুরু করুন”
নাসির মোল্লা দম ফেলে বলতে শুরু করলেন,
-“জব্বার একটা বিশ্বাসঘাতক! মিথ্যুক,প্রতারক আর খুনিও।”
শান্তনু ঠান্ডা মাথায় শুনলো বাক্যগুলো।পরপর প্রশ্ন করলো,
-“তারপর?”
নাসির সাহেব বললেন, -“আমার কাছ থেকে দশ লক্ষ টাকা নেয়।কাছের আত্মীয়র দরকার বলে।আমি সুদখোর না।কিন্তু সে তারই আত্মীয়র কাছ থেকে প্রতিমাসে সুদ নিয়ে নিজের পকেটে ভরেছে।আমি জানতাম না।একদিন এসে বললো তার আত্মীয় নাকি টাকা পরিশোধ করতে পারবে না।তাদের ফ্যাক্টরিতে লস হয়েছে পুরো টাকাই।ততদিনে দেড় বছরের মতো হয়ে গেছে।আমি জব্বারের পুরোনো বন্ধু।বিপদে আপদে সাহায্য করতাম।আমি যখন টাকার জন্য মরিয়া হয়ে উঠলাম অদ্ভুত এক সমাধান দিলো আমাকে।”
-“কি সমাধান?” শান্তনু দ্রুত প্রশ্ন করে।
-“বললো সে আত্মীয়দের বাড়ি দেখিয়ে দেবে।সেখানে গিয়ে কেনো চাপ প্রয়োগ করা হয়।টাকার জন্য তাগাদা দেওয়া হয় তাদের।আমি অবাক হলাম,নিজের আত্মীয়দেরকেই চাপের মুখে ঠেলে দিচ্ছে?”
শান্তনু ঝড়ো নিঃশ্বাস ফেলে বলে,- “হুম! এরপর?এরপর কি হলো?”
-“আমি বললাম যেহেতু লস হয়েছে টাকা পাবোই বা কি করে?চাপ প্রয়োগ করলে কি হবে?আমি বরং লিখিত নেই।মাসে মাসে আমার টাকা পরিশোধ করার।জব্বার বললো ঠিক আছে।সেখানে গিয়ে জানতে পারি ওই লোক নাকি প্রতিমাসে সুদসহ টাকা দিয়েছে।আমি কিছুতেই তখন তাকে বিশ্বাস করিনি।জব্বারকে ধরলাম।সে বললো ওই লোক মিথ্যা কথা বলছে।এর আগেও সে প্রতারণা করেছে অনেকের সাথে।আমাকে নানান প্রমাণ দেখিয়ে বিশ্বাস করায়।ততদিনে আমার রাগ বাড়লো।আমি বারবার লোকটিকে ফোন করছি।সে তার কথায় অটল,টাকা অর্ধেক পরিশোধ শেষ।বাকি অর্ধেক পাঠাবে দুয়েক মাসে।তার নিজেরই ছোটখাটো গার্মেন্টস আছে।”
শান্তনু থামালো নাসির মোল্লাকে।বলে উঠলো, -“ওয়েট ওয়েট! গার্মেন্টসের নাম কি?”
-“কি যেনো..হ্যাঁ সারোয়ার ব্রাদার্স নাম ছিলো।”
শান্তনু বুঝতে পারলো একই গার্মেন্টস এর দুইভাই মালিক।শান্তনু ফের প্রশ্ন করে,
-“খুন করেছেন?”
নাসির মোল্লা কপাল কুচকায়।বলে,
-“সবাই ভাবে আমি খুনি….কিন্তু আমাকে ব্যবহার করে খুন করিয়েছে জব্বার।আমার গার্মেন্টস কর্মীদের টাকা দিয়ে করিয়েছে।আজ তারা জেল খাটছে,আমি নিঃস্ব,পালিয়ে বেড়াচ্ছি নাম পরিচয় লুকিয়ে”
শান্তনু উপহাসের সুরে হাসলো।বললো,
-“কেনো বিশ্বাস করবো?”
-“বিশ্বাস করলে করুন, নয়তো হাত পেতে দিচ্ছি এরেস্ট করে নিয়ে যান।অপরাধ না করেও এভাবে চোরের মতো থাকতে পারছি না আমি আর।”
-“ধুরন্ধর লোকেরা এই পন্থা অবলম্বন করে প্রায়ই”
-“হয়তো করে,যেমনটা জব্বার করেছে।আপনিতো পুলিশ চোখের দেখায় আসামি চিনেন। দাঁড় করান আমাকে আর জব্বারকে কাঠগড়ায়।ভালোমত তদন্ত করুন।আমি আশা রাখি জব্বার ব্যক্তিগত ক্ষোভে খায়রুল আর তার স্ত্রীকে হ ত্যা করেছে।”
চলবে…..