হৃদকোঠোরে রেখেছি তোমায় পর্ব-৩৬+৩৭+৩৮

0
433

#হৃদকোঠোরে_রেখেছি_তোমায়🖤(৩৬)
#Maisha_Jannat_Nura (লেখিকা)

(৯২)
তাহিরের মা রেবেকা তালুকদার তার বোনের মেয়ে হুমায়রাকে নিয়ে তাহিরের রুমের দরজার সামনে এসে দাঁড়াতেই দেখে তাহির বিছানায় উপুর হয়ে গভীর ঘুমে ডুবে আছে। হুমায়রা কানাডাতে থেকে বড় হলেও ওর সম্পূর্ণ শরীর আবৃত হয়ে আছে শালীন পোশাক দ্বারা। নরম জর্জেটের তৈরি গাড় নীল রংয়ের ভাড়ি কাজ করা কামিজ, সাদা রংয়ের চুড়িদার পাজামা ও সাদা রংয়ের ওড়না পড়ে আছে হুমায়রা। রেবেকা তাহিরকে ডাকার জন্য উদ্যত হলে হুমায়রা তাকে বাঁধা দিয়ে কিছুটা লজ্জা ভাব নিয়ে শান্ত স্বরে বললো…..

—“খালা তোমার ছেলেকে ঘুম থেকে উঠানোর দায়িত্ব কি তুমি তোমার হবু বউমাকে দিতে পারবে?”

হুমায়রার কথায় রেবেকা যে খুশিই হয়েছেন তা তার চেহেরায় ফুটে উঠা আনন্দের ছাপ দেখেই বোঝা সম্ভব৷ রেবেকা হুমায়রার কথায় সায় জানিয়ে বললেন…..

—“ঠিক আছে মা…তুমি ওকে ঘুম থেকে উঠাও আমি নিচে যাচ্ছি। তোমাদের নাস্তা তৈরি করি।”

—“আচ্ছা খালা।”

অতঃপর রেবেকা নিচে চলে যান। হুমায়রা ধীরপায়ে রুমের ভিতর প্রবেশ করে বিছানার কাছে গিয়ে দাঁড়িয়ে তাহিরের মুখশ্রী পানে দৃষ্টি স্থির করে বললো….

—“আমি আমার রাতের ঘুম হা*রা*ম করে কানাডা থেকে বাংলাদেশে আসলাম আর মশাইকে দেখো কেমন শান্তিতে ঘুমাচ্ছেন। তোমার শান্তির ঘুম এবার আমি ন*ষ্ট করতে যাচ্ছি মি. তওকির তালুকদার তাহির।”

এই বলে হুমায়রা বেডসাইড টেবিলের উপর থেকে পানির গ্লাস থেকে একটু পানি হাতে নিয়ে তাহিরের ঘুমন্ত মুখের উপর ছিটিয়ে দিয়ে বিছানার পাশে বসে লুকিয়ে রয়। ঘুমের মাঝে মুখের উপর পানির ছিঁটে পড়ায় তাহির বিরক্তিতে চোখ-মুখ কুঁচকে ফেলে। পরক্ষণে শোয়াবস্থাতেই নিজের চারপাশে চোখ বুলাতেই কাওকে দেখতে না পেয়ে বিরক্তির স্বরে বললো….

—“রুমে তো কেউ নেই তাহলে আমার মুখের উপর পানি ছিটিয়ে দিয়ে ঘুম ন*ষ্ট করলো কে? মা তো কখনও এভাবে আমার ঘুম নষ্ট করবেন না। আর কোনো সার্ভেন্টেরও সাহস এতো বড় হবে না। তাহলে কে করলো এই কাজ?”

তাহিরকে কনফিউজড হতে দেখে হুমায়রা ওভাবে থেকেই মুখ চেপে নিজের হাসি নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করছে। রুমের ভিতর কারোর হাসির হালকা শব্দ শুনতে পেয়ে তাহির এর ভ্রু যুগল কুঁচকে আসে। তাহির শোয়াবস্থা থেকে উঠে বসে নিজের হাতের বাম পার্শের দিকে একটু ঝুঁকতেই হুমায়রাকে উপুর হয়ে বসে থাকতে
দেখে কিছুটা অবাক হয়। হুমায়রা উপুর হয়ে বসে থাকার কারণে তাহির মুখ দেখতে পারে নি তাই ওকে চিনতেও ব্য*র্থ হয়েছে। পরক্ষণেই তাহির ধমকের স্বরে হুমায়রাকে উদ্দেশ্য করে বললো…….

—“এই মেয়ে…কে তুমি? কার অনুমতি নিয়ে আমার রুমে প্রবেশ করেছো তুমি? আর আমার মুখের উপর পানি ছিটিয়ে দিয়ে ঘুম ভাঙানোর সাহস ই বা কোথায় পেলে তুমি হ্যা!”

আকস্মিক তাহিরের ধমকের স্বরে বলা কথাগুলো শুনে হুমায়রা কিছুটা ভ*য় পেয়ে যায়। পরমূহূর্তে নিজেকে সামলে নিয়ে হুমায়রা বসাবস্থা থেকে উঠে তাহিরের দিকে ঘুরে কমোরের দুই হাত রেখে দাঁড়িয়ে বললো….

—“এইরকম ষা*ড়ে*র মতো চিল্লিয়ে জিঙ্গাসা করার কি আছে শুনি! আমাকে কি তোমার ঠ*সা বলে মনে হয় নাকি?”

দীর্ঘ ৬বছর পর হুমায়রাকে নিজের সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে তাহির কিছুটা অবাক হয়ে বললো…..

—“হিমু তুইইইইই….?”

—“হুম আমি। কেনো আমার উপস্থিতি বুঝি তুমি এক্সপেক্ট করো নি?”

—“৬বছর আগে তো কেমন পুঁচকিদের মতো দেখতে ছিলি এতো তাড়াতাড়ি এতো বড় হয়ে গিয়েছিস যে তোকে চিনতে পারাটাও মুশকিল বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।”

—“এই হিমু এখন আর সেই পুচকি হিমু নেই তাহির। ২১ এর ঘরে পা দিয়ে চলেছি সামনের মাসের ১০ তারিখে।”

তাহিরে ভ্রু কুঁচকে বললো….
—“এই…তুই আমাকে নাম ধরে ডাকলি কেনো? তুই জানিস আমি তোর থেকে গুণে গুণে ৮ বছরের বড়। আর বড়দের যে সম্মান দিয়ে কথা বলতে সেই খেয়াল কি নেই তোর! এরপর আর কখনও যদি আমাকে ভাইয়া বলে সম্বোধন না করে নাম ধরে ডেকেছিস তাহলে তোর কানের নিচে দিবো একটা থা*প্প*ড়।”

হুমায়রা চোখ ছোটছোট করে তাহিরের দিকে তাকিয়ে নাক ছিঁ*টকে বিরবিরিয়ে বললো….

—“আরে ব্যটা তোকে আমি আমার হবু সন্তানদের একমাত্র পিতা বানাবো বলে মনঃস্থির করেছি আর তুই কিনা আমাকে তোকে ভাইয়া বলে সম্বোধন করতে বলছিস! জামাইকে কেও ভাইয়া বলে সম্বোধন করে নাকি আজব তো।”

তাহির বিছানা থেকে নেমে দাঁড়িয়ে হুমায়রার মাথার বাম পার্শে আলতো করে একটা চা*টি মে*রে বললো….

—“কি এতো বিরবির করছিস?”

হুমায়রা নিজের মাথার ঐ অংশে হাত বুলাতে বুলাতে বললো….
—“তাহির..ভালো হচ্ছে না কিন্তু।”

হুমায়রার মুখে আবার নিজের নাম শুনে তাহির হুমায়রার বাম কান টেনে ধরে বললো…..

—“তোকে বললাম না আমায় ভাইয়া বলে সম্বোধন করবি কথা কি কানে ঢুকে নি তোর!”

হুমায়রা নিজের কান ছাড়ানোর চেষ্টা নিয়ে বললো….
—“আহহহ…লাগছে তো…ছাড়ো ছাড়ো…বলছি!”

তাহির কান ছেঁড়ে দিতেই হুমায়রা এক দৌড়ে তাহিরের পাশ থেকে সরে দরজার কাছে গিয়ে দাঁড়িয়ে তাহিরকে একবার জিহ্বা বের করে দেখিয়ে বললো….

—“আমার বয়ে গিয়েছে তোমাকে ভাইয়া বলে ডাকতে! এই হুমায়রা রেহমান হিমু ম*রে গেলেও তোমাকে ভাইয়া বলে ডাকবে না হুহ।”

হুমায়রার মুখে এমন কথা শুনতেই তাহিরে চোখ পাঁকিয়ে ওর দিকে তাকিয়ে বললো…

—“তবে রেএএএএ….!”

হুমায়রা “খালা বাঁচাও ষাঁ*ড়*টা ক্ষেপেছে” এই বাক্যটি উচ্চারণ করে এক দৌড়ে নিচে চলে যায়। তাহির বললো…

—“তোকে তো পরে দেখে নিবো আমি।”

এই বলে তাহির টাওয়াল হাতে নিয়ে ড্রেসিং টেবিলের পাশ কাটিয়ে ওয়াশরুমে যেতে নিয়ে আবারও পিছনের দিকে পিছিয়ে ড্রেসিং টেবিলের সামনে এসে দাঁড়িয়ে আয়নার উপর পড়া নিজের প্রতিচ্ছবির দিকে তাকিয়ে বললো….

—“আমাকে ঠিক কোন এঙ্গেল থেকে দেখলে ষাঁ*ড় বলে মনে হয়! হিমুর বাচ্চা তোকে আমি কাঁচা চিঁ*বি*য়ে খাবো।”

এই বলে তাহিরে ওয়াশরুমে চলে যায়।

(৯৩)
অনন্যা নিজরুমে বিছানায় বসে আছে। সেইসময় অনন্যার শ্বাশুড়ি সাবরিনা চৌধুরী ও ১জন মহিলা সার্ভেন্ট হাসিমুখে অনন্যার রুমে প্রবেশ করে। মহিলা সার্ভেন্টটির হাতে একটা ট্রে রয়েছে যা নীল চাদরে ঢাকা। অনন্যা বসা অবস্থা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে হাসিমুখে বললো…

—“মা….আপনি?”

সাবরিনা হাসিমুখে অনন্যার দিকে অগ্রসর হতে হতে বললেন….
—“বসো তুমি বউমা। আমার সামান্য একটু কাজ ছিলো তোমার সাথে তাই আসতে হলো।”

অনন্যা আগের ন্যয় বিছানায় বসে। সাবরিনা অনন্যার সামনা-সামনি বিছানার উপর বসে সার্ভেন্টের হাত থেকে ট্রে টা নিয়ে অনন্যার সামনে বিছানার উপর রেখে ট্রের উপর থেকে নীল চাদরটি সরিয়ে ফেলে। চাদরটি সরাতেই অনন্যা দেখতে পায় ট্রেটির উপর একটা ভাড়ি কাজের বেনারসি ও বেশ কিছু স্বর্ণালংকার রাখা রয়েছে। সাবরিনা শান্ত স্বরে সার্ভেন্টকে উদ্দেশ্য করে বললেন…..

—“তুমি এখন চলে যাও।”

সার্ভেন্টটি চলে যেতেই সাবরিনা অনন্যাকে উদ্দেশ্য করে বললেন…….
—“আমাদের চৌধুরী বংশের একটা নিয়ম আছে। পরিবারের মূল কর্তা-কর্তীর ছেলেদের সংখ্যা যে কয়জনই হোক না কেনো তাদের ভিতর বড় ছেলের সম্মান ও ক্ষমতা বাকিদের তুলনায় বেশি থাকে। তারপর মেজো ছেলের জায়গা, তারপর সেজো ছেলে এভাবে করে বাকি সব ছেলেদের সম্মান ও ক্ষমতার মূল্যায়ন নির্ধারণ করা হয়ে থাকে। তোমার দাদী শ্বাশুড়ি অর্থ্যাৎ আমার শ্বাশুড়ি মায়ের ছেলে সন্তান হলেন ৩জন। রায়হানুল ভাই হলেন সবার বড় তারপর তোমার শ্বশুড় মশাই এবং শেষ সন্তান হলেন রিজভী। নিয়ম অনুযায়ী রায়হানুল ভাই এর সম্মান ও ক্ষমতা সবথেকে বেশি হওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু আফসোসের বিষয় হলো, রায়হানুল ভাইয়ের স্ত্রী সন্তান জন্মদেওয়ার সময় মৃ*ত সন্তান জন্ম দিয়ে মা*রা গিয়েছিলেন। কনকের বয়স যখন ২বছর তখন কুশল আমার গর্ভে আসে। কিন্তু পরবর্তী বংশধর হিসেবে কনকের সম্মান ও ক্ষমতা কুশলের থেকে একটু হলেও বেশি। এরপর রিজভীর ছেলে রাজবীর এর জায়গা। এগুলো বলার কারণ হলো তোমার কোল আলো করে আমাদের চৌধুরী বংশের আগামীদিনের নতুন ও প্রথম বংশধর আসতে চলেছে তাই তোমার সন্তানের সম্মান ও ক্ষমতা সবথেকে বেশি হবে। কিন্তু যদি তোমার ১ম সন্তান মেয়ে হয় আর এরপরই যদি ছোট বউমার ১ম সন্তান হয় তাহলে ওর সম্মান ও ক্ষমতাই সবথেকে বেশি হবে। আশাকরি আমার কথাগুলো তুমি বুঝতে পেরেছো বড় বউমা।”

অনন্যা স্মিত হাসি দিয়ে বললো…..
—“মা সন্তান ছেলে হোক কিংবা মেয়ে দুইজনই তো আল্লাহর দেওয়া রহমতের একটা বড় অংশ। তাই আমার সন্তান ছেলে হোক কিংবা মেয়ে হোক এতে আমার কোনো স*মস্যা নেই। আর রইলো বংশগত ক্ষমতা ও সম্মান লাভের কথা! আমার সন্তান মেয়ে হলে আমি ওকে সুশিক্ষায় শিক্ষিত করে একজন আদর্শবান, সৎচরিত্রের মানুষ হিসেবে গড়ে তুলবো। আর তখন আমার মেয়ে বংশগত ক্ষমতা ও সম্মান না পেলেও দুনিয়ার মানুষের মাঝে নিজের এমন একটা জায়গা তৈরি করবে যার জন্য দুনিয়ায় বসবাসরত লক্ষ লক্ষ মানুষ আমার মেয়েকে অনেক সম্মান করবে এবং ভালোবাসবে। বংশগত ক্ষমতা ও সম্মান তো আপনা-আপনি পাওয়া সম্ভব। তাই সেই সম্মান ও ক্ষমতার থেকে নিজ অর্জিত সম্মানের জায়গা ও ক্ষমতা লাভের মান অনেক বেশি হবে।”

অনন্যার মুখে এরূপ কথা শুনে সাবরিনা স্মিত হাসি দিয়ে বললেন….
—“তোমার এতো সুন্দর চিন্তা-ভাবনা দেখে আমি মুগ্ধ না হয়ে পারলাম না বড় বউমা। সবসময় এমনই থেকো। নিজের মানসিকতা ও চিন্তা-ভাবনায় কোনোরূপ পরিবর্তন এনো না কখনও।”

—“জ্বি মা…দোয়া করবেন আমাদের জন্য।”

—“সন্তানদের জন্য বাবা-মায়েদের দোয়া সবসময়ই থাকে বড় বউমা। আর হ্যা…এই যে বেনারসি শাড়ি আর স্বর্ণালংকার গুলো দেখছো! এগুলো আমাকে আমার শ্বাশুড়ি মা দিয়েছিলেন। আজ সন্ধ্যার পার্টিতে তুমি এই শাড়ি আর স্বর্ণালংকার গুলো তুমি পড়বে কেমন!”

—“ঠিক আছে মা।”

—“আচ্ছা..এখন তুমি বিশ্রাম করো। আমি আসছি।”

এই বলে সাবরিনা বসাবস্থা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে অনন্যার রুম থেকে বেড়িয়ে যান।

#চলবে ইনশাআল্লাহ……..

#হৃদকোঠোরে_রেখেছি_তোমায়🖤(৩৭)
#Maisha_Jannat_Nura (লেখিকা)

(৯৪)
তরুনিমা আলমারী থেকে ওর নতুন কয়েকটা শাড়ি আর তার সাথে ম্যচিং করে জুয়েলারি গুলো বের করে বিছানার উপর সারিবদ্ধ ভাবে রেখেছে। বিছানার মাঝ বরাবর দাড়িয়ে শাড়িগুলোর উপর দৃষ্টি স্থির দেখে বামহাত কমোরে ও ডান হাতের কনিষ্ঠ আঙুলের নখ মুখে নিয়ে দাঁত দিয়ে কা*ট*তে কা*ট*তে বলছে…..

—“সবগুলো শাড়ি আর জুয়েলারিই তো আমার কাছে একই রকম সুন্দর লাগছে কিন্তু সব গুলো তো আর একসাথে পড়া সম্ভব না যেকোনো একটা বাছাই করতে হবে। কিন্তু কোনটা রেখে কোনটা যে পড়বো!”

তরুনিমা আর ভেবে না পেয়ে ঘাড় বাকিয়ে বেলকোনির দিকে একবার লক্ষ্য করতেই দেখে কুশল বেলকনিতে বসে এমন মনে ফাইল চেইক করছে। তরুনিমা বিরবিরিয়ে বললো…..

—“ওনার চিন্তাভাবনার মতোই কি ওনার পছন্দ ও ততোটাই সুন্দর হবে! ওনাকেই কি একটাবার বলবো এর ভিতর থেকে আমাকে একটা শাড়ি পছন্দ করে দিতে? হুম এটাই করতে হবে, তরু নিজের ভিতরে কাজ করা সব সং*কো*চ বোধকে কিছুসময়ের জন্য চাপা দিয়ে রেখে ওনাকে নিজের সমস্যার কথা বলেই ফেল।”

অতঃপর তরুনিমা জোরে একবার নিঃশ্বাস ফেলে বেলকনির দিকে অগ্রসর হয়। বেলকনির দরজার সামনে এসে দাঁড়িয়ে তরুনিমা আস্তে করে একবার গলা ঝাড়া দেয়। কিন্তু এতে কুশলের কোনোরূপ রেসপন্স তরু পায় না। পরমুহূর্তে একটু জোরের সাথে পরপর কয়েকবার গলা ঝাড়া দিতেই কুশল ভ্রু কুঁচকে তরুর দিকে তাকিয়ে শান্ত স্বরে বললো….

—“তোমার গলায় কিছু আটকে গিয়েছে নাকি?”

তরু কুশলের এমন প্রশ্নে অবাক হয়ে বললো…..
—“না তো!”

—“তাহলে বারবার এভাবে গলা ঝাড়া দেওয়ার কারণ কি?”

—“আ-আব-কিছু না, এমনিই করেছি।”

কুশল আর কিছু না বলে আবারও নিজের কাজে মনোনিবেশ করে। তরু চোখ ছোট ছোট করে কুশলের দিকে তাকিয়ে বিরবিরিয়ে বললো….

—“এই খা*রুশ ব্যডার আজ হলো টা কি! এমনি সময় তো মুখে কিছু বলার আগেই বুঝে যেতো আমার এইটা প্রয়োজন ঐটা করতে ইচ্ছে হচ্ছে তাহলে আজ বুঝতে পারলো না কেনো? নাকি আমি নিজ থেকে ওনার সাথে কথা বলতে এসেছি জন্য ভাব নিচ্ছেন! হুহ…কি ভেবেছেন উনি ওনার এতো ভাব দেখার জন্য আমার হাতে অফুরন্ত সময় আছে? একদমই না। চল তরু যেই কাজের কথা বলতে এখানে এসেছিস সেটা বলে ফেল জলদী।”

পরক্ষণেই তরুনিমা বললো…

—“আব…শুনুন!”

কুশল তরুনিমার দিকে শান্ত দৃষ্টি স্থির করে বললো….
—“হুম বলো!”

—“আজ সন্ধ্যায় বড় ভাবীর প্রেগন্যান্সির আনন্দে যে পার্টির আয়োজন করা হয়েছে ঐ পার্টিতে আমি কোন শাড়িটা পড়বো সেটা সিলেক্ট করতে পারছি না। আপনার সাথে কিছুদিন ধরে থাকার পর আমার মনে হয়েছে আপনার চিন্তা-ভাবনা করে যেকোনো সমস্যার সমাধান করার ক্ষমতা অনেক ভালো। সেইরকম আপনার পছন্দ-অপছন্দও হয়তো সুন্দরই হবে। তাই আপনি কি আমাকে নির্দ্রিষ্ট একটা শাড়ি পছন্দ করে দিতে পারবেন?”

এই প্রথম তরুনিমার মুখ থেকে নিজের সামান্যতম প্রশংসা শুনে কুশল কিছুটা অবাক এর পাশাপাশি খুশিও হয়। ঠোঁটের কোনে এক চিলতে হাসির রেখা ফুটিয়ে বললো…..

—“হুম চলো, দিচ্ছি পছন্দ করে।”

কুশল বসাবস্থা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে তরুনিমার সাথে রুমের ভিতরে প্রবেশ করে বিছানার কাছে এসে দাঁড়ায়। কুশল বিছানার উপর রাখা শাড়িগুলো হাত বুলিয়ে একে একে দেখছে। কিছুসময় পর সবগুলো শাড়ির ভিতর থেকে গাড় নেভি ব্লু রংয়ের হাতের কাজ করা ফুলগুলোর ভিতর সাদা স্টোন বসানো একটা শাড়ি হাতে নিয়ে তরুর কাঁধ থেকে কমোর পর্যন্ত ফেলে ওর থেকে একহাত দূরে দাঁড়িয়ে কুশল তরুর দিকে শান্ত দৃষ্টি স্থির করে। তরুও কুশলের দিকে তাকিয়ে আছে। পরক্ষণেই কুশল তরুর বাম হাত ধরে ড্রেসিং টেবিলের সামনে এনে দাঁড় করিয়ে ইশারায় ওকে আয়নার দিকে লক্ষ্য করতে বললো। তরু আয়নার দিকে লক্ষ্য করতেই কুশল হাসিমুখে বললো…..

—“আজকের পার্টিতে এই শাড়িটাই পড়িও।”

এই বলে কুশল রুম থেকে বেড়িয়ে যায়। তরুর ঠোঁটে শান্ত হাসির রেখা ফুটে উঠে।

(৯৫)
তালুকদার ভিলায় গেইট থেকে কিছুটা দূরে রাখা তাহিরের নিজের গাড়ির ড্রাইভিং সিটের দরজাটি সে খুলতেই অপর পার্শের সিটে হুমায়রাকে বসে নিজের নখে নেইলপালিশ লাগাতে দেখে তাহির অবাক স্বরে বললো…

—“তুই এখানে কি করছিস?”

হুমায়রা নেইলপালিশ লাগানো নখ গুলোতে ফুঁ দিতে দিতে স্বাভাবিক ভঙ্গিতেই বললো….

—“অকালে চোখের সম্পূর্ণ পাওয়ার কি নষ্ট হয়ে গেলো নাকি তোমার?”

—“মানে?”

—“দেখছো না নখে নেইলপালিশ লাগাচ্ছি!”

—“হুম দেখছি তো।”

—“তাহলে আবার কি জিজ্ঞাসা করছো কেনো আমি এখানে কি করছি?”

হুমায়রার এমন উত্তরে তাহির দাঁতে দাঁত পি*ষে বললো…
—“আমার গাড়িটা কি তোর নখে নেইলপালিশ লাগানোর জন্য আমি কিনেছিলাম?”

—“গাড়িটা তুমি আসলে কেনো কিনেছো তা আমি জানি না। কিন্তু এখন গাড়িতে বসে নখে নেইলপালিশ লাগাতে আমার অনেক ভালো লাগছে।”

—“আমার গাড়ি থেকে এইমূহূর্তে নাম তুই। বাড়ির ভিতরে গিয়ে আমার রুম ব্যতিত অন্য যেখানে খুশি সেখানে বসে-শুয়ে-দাড়িয়ে থেকে তুই তোর নেইলপালিশ লাগা যা।”

—“উহুহহহ….আমি এখন বাড়ির ভিতরে যাবো না। আমার দুইপায়ের নখগুলোতে নেইলপালিশ লাগানো এখনও বাকি আছে। আর আমি এই গাড়িতে বসেই আমার কাজ সম্পন্ন করবো।”

—“তুই গাড়ি থেকে নামবি নাকি আমাকে তোর পা দুটোই কে*টে ফেলতে বলছিস!”

হুমায়রা ভ্রু কুঁচকে তাহিরের দিকে তাকিয়ে বললো…
—“গাড়ি থেকে এইমূহূর্তে না নামলে তুমি আমার পা কে*টে ফেলবে?”

—“হুম ফেলবো।”

পরক্ষণেই হুমায়রা ওর পা দু’টো নিচ থেকে ড্রাইভিং সিটের উপরে রেখে হাত দিয়ে তাহিরকে নিজের পা গুলো ইশারা করে হাসি দিয়ে বললো….

—“বেশ কা*টো তাহলে, দেখি কেমন পারো।”

হুমায়রার এমন কান্ডে তাহিরের এইমূহূর্তে ঠিক কি বলা উচিত তা সে বুঝে উঠতে পারছে না। পরক্ষণেই তাহির ধমকের স্বরে বললো……

—“পা নামা ইডিয়েট।”

তাহিরের ধমক শুনে হুমায়রার হাসি মুখ গ্যস বের হওয়া বেলুনের মতো চুপসে যায়। সাথে সাথেই নিজের পা ড্রাইভিং সিটের উপর থেকে নামিয়ে নেয় হুমায়রা। তাহির বুঝতে পেরেছে এই মেয়েকে কিছু বলা মানেই তা বৃ*থা। তাই তাহির ওকে আর কিছু না বলেই গাড়িতে উঠে বসে দরজা বন্ধ করে সিটবেল্ট লাগিয়ে গাড়ি স্টার্ট করে তালুকদার ভিলার মূল গেইট দিয়ে বাহিরে বেড়িয়ে আসে। হুমায়রা শান্ত স্বরে প্রশ্ন করলো…..

—“আমরা কোথায় যাচ্ছি!”

তাহির সামনের দিকে দৃষ্টি স্থির রেখে গাড়ি চালাতে চালাতেই বললো….
—“তোর ভাইয়ের হবু বউকে দেখার জন্য তার বাসায় যাচ্ছি।”

—“এতোবছর ধরে আমি জেনে এসেছি আমার বাবা-মায়ের আমি ব্যতিত আর কোনো সন্তানই নেই। তাহলে আজ এই ভাই ডাউনলোড হলো কোন সাইড থেকে? আর এতো বড় একটা কথা বাবা-মা আমার থেকে লুকিয়ে গেলোই বা কি কারণে?”

হুমায়রার মুখে এমন কথা শুনে তাহির হাসবে নাকি কাঁদবে নাকি রাগবে তা সে বুঝতে পারছে না। পরক্ষণেই নিজেকে সামলে নিয়ে তাহির বললো….

—“ছোট বেলা থেকেই খালা-খালু আমাকে তাদের ছেলের মতো আদর-স্নেহ-ভালোবাসা দিয়েছেন। আর আমি তো তোর কাজিন ব্রাদার হই। তাই আমার হবু বউই সম্পর্কে তোর হবু ভাবী হবে! এখন আমরা আমার হবু বউকে দেখতে তার বাসাতেই যাচ্ছি।”

হুমায়রা তাহিরের এরূপ কথা শুনে অন্যদিকে ঘুরে মুখ বাঁ*কিয়ে মনে মনে বললো….

—“দেখো না হাজার জন মেয়েকে দেখার জন্য তাদের বাসায় হাজার বার যাও তবুও সবশেষে তোমায় আমাকেই বিয়ে করে নিজের বউ বানাতে হবে হুম।”

বেশ কিছুসময় ধরে ড্রাইভিং করার পর তাহির অবশেষে নিজ গন্তব্যস্থলে পৌঁছে গিয়েছে। সিকদার ভিলার মূল গেইটের সামনে গাড়িয়ে থামিয়ে দেয় তাহির। অতঃপর সিটবেল্ট খুলতে খুলতে হুমায়রাকে উদ্দেশ্য করে বললো…..

—“তুই গাড়িতেই বসে থাকবি, একদম নামবি না। আমি বাসার ভিতরে যাচ্ছি, কিছুটা সময় লাগবে কাজ সম্পন্ন করতে।”

—“আমাকেও সাথে করে ভিতরে নিয়ে গেলে কি সমস্যা হবে! আমি একা একা গাড়িতে বসে কি করবো?”

—“কিছুসময় আগে না বলছিলি তোর দুই পায়ের নখগুলোতে এখনও নেইলপালিশ লাগানো বাকি রয়ে গিয়েছে! এখন তুই তোর কাজ সম্পন্ন কর বসে বসে।”

এই বলে তাহির গাড়ি থেকে নেমে গাড়ির দরজা বন্ধ করে সিকদার ভিলার মেইন গেইট দিয়ে ভিতরে প্রবেশ করে। হুমায়রা একবার দীর্ঘশ্বাস ফেলে মাত্র।

দীর্ঘ ৫ বছর পর সিকদার ভিলায় পা রাখতেই তাহিরের চোখের সামনে ৫বছর আগের সুন্দর মুহূর্তগুলোর পাশাপাশি সেই বি*ভী*ষি*কা*ময় কাল রাত্রীর স্মৃতিগুলোও ভেসে উঠে। একটা রাত তার জীবনকে একমুহূর্তেই এলোমেলো করে দিয়েছে। দো*ষ না করেও দো*ষে*র মালিক হয়ে জেল খা*ট*তে হয়েছে পাঁচ পাঁচটি বছর ধরে। তাহির সিকদার ভিলার মূল দরজার সামনে এসে দাঁড়িয়ে চোখ বন্ধ করে লম্বা করে একবার নিঃশ্বাস ফেলে কলিং বেলে চাপ দেয়।

চলবে ইনশাআল্লাহ…….

#হৃদকোঠোরে_রেখেছি_তোমায়🖤(পর্বঃ ৩৮-ধামাকা~১)
#Maisha_Jannat_Nura (লেখিকা)

(৯৬)
সিকদার ভিলার মূল দরজার সামনে দাঁড়িয়ে তাহির কলিং বেল বাজানোর কিছুসময় পরই একজন কম বয়সী কাজের মেয়ে এসে দরজা খুলে দিয়ে অবাক স্বরে প্রশ্ন করলো…

—“কাকে চাই?”

তাহির ওর স্থানে দাড়িয়েই একনজরে সিকদার ভিলার ভিতরটা দেখে কিন্তু ভিতরে ২য় কোনো ব্যক্তির উপস্থিতি দেখতে পায় না। পরক্ষণেই তাহির শান্ত স্বরে বললো….

—“তরুনিমা সিকদার বাসায় আছেন?”

—“ছোট আপামনি! হেয় তো আর এই বাসায় থাকেন না।”

—“এই বাসায় থাকেন না মানে?”

সেইসময় পিছন থেকে তরুনিমার মা তমালিকা সিকদার সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামতে নামতে কাজের মেয়েটিকে উদ্দেশ্য করে বললেন….

—“কে এসেছেন মিতু?”

কাজের মেয়ে মিতু তমালিকা সিকদার এর দিকে ঘুরে দাড়িয়ে বললো…
—“ছোট আপামনির খোঁজে একজন সুন্দর সাহেব আইছেন আম্মা। এর আগে তেনারে কখনও দেখি নি আমি।”

—“ভিতরে আসতে বল ওনাকে।”

মিতু তাহিরের দিকে ঘুরে দাঁড়িয়ে বললো…
—“ভিতরে আসেন সাহেব।”

তাহির ধীরপায়ে সিকদার ভিলার মূল দরজা পেরিয়ে ভিতরে প্রবেশ করে সেখানেই দাঁড়িয়ে রয়। তমালিকা সিকদার সিঁড়ি বেয়ে নিচে এসে তাহিরের সামনে দাঁড়িয়ে ওর দিকে ভালো ভাবে লক্ষ্য করতেই ওকে চিনতে সক্ষম হন। মুহূর্তের মধ্যেই তমালিকা সিকদারের মুখের রং পাল্টে যায়। তিনি অত্যন্ত রাগ নিয়ে বললেন…..

—“তুমিই? আবারও আমাদের বাসায় আসার সাহস তোমার হলো কি করে? মিতু…দারোয়ানকে ডেকে এনে শীঘ্রী একে বাসা থেকে বের করে দে।”

তমালিকা সিকদার এর এহেনু কথায় মিতু অত্যন্ত অবাক হয়ে মনে মনে ভাবে…
—“আম্মাকে তো কখনও এভাবে রাগতে দেখি নি। কে এই সাহেবটি? যাকে দেখা মাত্র আম্মায় এতোটা ক্ষিপ্ত হইয়া উঠলেন?”

তাহির কাঁপা স্বরে বললো…
—“আন্টি…..আমাকে এভাবে বের করে দিবেন না। আমার অনেক কিছু বলার আছে আপনাদের।”

তমালিকা রাগী স্বরে বললেন….
—“একজন নি*কৃ*ষ্ট মানসিকতার খু*নি*র সাথে আমি কোনো কথা বলতে চাই না। বেড়িয়ে যাও এই মুহূর্তে আমাদের বাড়ি থেকে।”

—“আমি কোনো খু*ন করি নি। বরং আপনারা আমাকে মি*থ্যে খু*নে*র দায়ে ফাঁ*সি*য়ে ছিলেন।”

—“৫বছর আগে আমার বড় মেয়ে অরুনিমাকে খু*ন করেছিলে তুমি আর সেদিন তোমাকে হাতে-নাতে ধরে পুলিশের হাতেও তুলে দেওয়া হয়েছিলো সেইদিনের কথা তুমি ভুলে গেলেও আমরা কেও ভুলি নি। তোমার জন্য আমি আমার আদরের বড় মেয়ে অরুকে সারাজীবনের মতো হারিয়ে ফেলেছি। নিজের বাবার ক্ষমতা প্রয়োগ করে আইনের আওতা থেকে কম শা*স্তি ভোগ করে তুমি মুক্তি লাভ করলেও আমাদের থেকে জীবনের শেষ নিঃশ্বাস পড়া পর্যন্ত তুমি অ*ভি*শাপ ব্যতিত কিছুই পাবে না।

—“আমি মা*রি নি অরুনিমাকে।”

—“সেইরাতে আমরা অরুনিমার আ*র্ত*নাদ শোনামাত্র যখন বাগানের পিছনদিকে অরুনিমার কাছে পৌঁছেছিলাম তখন ওর পেট ও বুক থেকে অঝর ধারায় র*ক্ত*পাত হচ্ছিলো। অরুর পাশে বসতেই অরু ওর শেষ নিঃশ্বাস ত্যগ করার পূর্বে প্রাচীরের দিকে ওর র*ক্ত মাখা হাত দিয়ে ইশারা করে ২বার শুধু তোমার নামটাই উচ্চারণ করেছিলো। তার কিছুসময় পর তুমি ঐদিক থেকেই এসেছিলে আমাদের কাছে। আর তোমার হাতেই ছিলো সেই র*ক্ত মাখা ছু*ড়ি*টি। যেই ছু*ড়ি দ্বারা নৃ*সং*শ ভাবে আ*ঘা*ত করা মে*রে ফেলেছিলে তুমি আমার মেয়েকে। কি দো*ষ ছিলো আমার মেয়ের? তুমি আমার ছোট মেয়ে তরুনিমাকে নিজের করে পাওয়ার জন্য সবরকম সীমা অতিক্রম করে ফেলেছিলে তাই অরুনিমা তোমাকে একবার থা*প্প*ড় দিয়েছিলো। সেই থা*প্প*ড়ে হওয়া অ*প*মানের প্র*তি*শোধ নিতেই তুমি আমার মেয়েটাকে সেদিন মে*রে*ছিলে তাই না!”

—“আমাকে নিয়ে আপনাদের মনে অনেক বড় ভু*ল ধারণার তৈরি হয়েছে। অরুনিমা আমাকে সকলের সামনে থা*প্প*ড় মা*রায় আমার খারাপ লেগেছিলো ঠিকই কিন্তু সেই খারাপ লাগা থেকে এতো বড় অ*ন্যা*য় করার মতো নি*ম্ন মানসিকতা আমার কাজ করে নি কখনও। সব বাঁ*ধা অতিক্রম করে তরুনিমার সাথে সেইরাতে এঙ্গিয়েজমেন্ট হওয়ার কথা ছিলো আমার। তাহলে কেনো আমি অরুনিমার দেওয়া থা*প্প*ড়ের প্র*তি*শোধ সেইদিন নিতে যাবো একটাবার ভেবে দেখেছিলেন আপনারা? সেইরাতে আংটিবদলের কিছুসময় পূর্বে আমার একটা গুরুত্বপূর্ণ ফোন কল আসায় আমি আপনাদের বাড়ির বাগানের পিছন সাইডে যখন গিয়েছিলাম তখন আমারই চোখের সামনে অরুনিমাকে ছু*ড়ি*কা*ঘাত করেছিলো আমার বয়সী অন্য একজন ছেলে। ছেলেটির চেহেরাও আমি দেখেছিলাম। সেইমূহূর্তে ছুটে অরুনিমার কাছে পৌঁছাতেই ওর খু*নি ছেলেটি প্রাচীরের দিকে দৌড় দেয়। আমি অরুনিমার কাছে বসে ওর য*ন্ত্র*ণা একটু কমতে পারে ভেবে ওর পেট থেকে ছু*ড়ি*টা বের করেছিলাম। অরুনিমা আমাকে কিছু বলার জন্য খুব চেষ্টা করছিলো কিন্তু বলতে পারে নি। শুধু হাত দিয়ে প্রাচীরের দিকে ইশারা করেছিলো। আমি কি করবো তা ভেবে পাচ্ছিলাম না। ওকে ওভাবে রেখেই আমি প্রাচীরের দিকে ছুটে গিয়েছিলাম। কিন্তু আফসোসের বিষয় অরুনিমার খু*নি*কে সেদিন আমি ধরতে সক্ষম হই নি। সে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছিলো। পরবর্তীতে আমি যখন আবারও ফিরে আসি তখন আপনারা পুরো সত্যটা যাচাই না করেই আমার হাতে ছু*ড়ি*টি দেখে ভেবে নিলেন আমিই অরুনিমাকে খু*ন করেছি। কোনোপ্রকার দো*ষ না করেও এতো বড় দো*ষে*র মালিক বানিয়ে আপনারা আমাকে পুলিশের হাতে তুলে দিলেন৷ আমি অনেকবার এই সত্যটা আপনাদের সবাইকে বলার চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু কোনোপ্রকার প্রমাণ না থাকায় আমার কথা আপনারা সেদিন কেও শোনেন নি। মি*থ্যে দো*ষের দায়ে আমাকে জে*ল খাটতে হয়েছে পাঁচ পাঁচটি বছর ধরে। আমি জানি আজও আমার বলা কথাগুলো হয়তো আপনার কাছে মি*থ্যে বানোয়াট বলেই মনে হবে কিন্তু একটা কথা বলে রাখছি অরুনিমার খু*নি*র চেহেরা আমার স্পষ্ট মনে আছে। ৫বছর আগে ওকে খুঁজে বের করার সময় ও সুযোগ আমি পাই নি ঠিকই কিন্তু এখন সেই সময় ও সুযোগ আমার আছে। খুব তাড়াতাড়িই আমি অরুনিমার আসল খু*নিকে খুঁজে বের করে নিজের উপর থেকে মি*থ্যে খু*নে*র দায় উঠিয়ে ফেলবো।”

তাহিরের বলা কথাগুলো শুনে তমালিকা স্তব্ধ হয়ে যান। কেনো যেনো তমালিকার মন তাহিরকে আর দো*ষা*রোপ করতে সায় দিচ্ছে না। পরক্ষণেই তাহির শান্ত স্বরে আবারও বললো….

—“৫ বছর আগের ঘটে যাওয়া সেই ঘটনাটির জন্য আমি আমার জীবনের পাঁচ পাঁচটি বছর হারিয়ে ফেলেছি। কিন্তু এখন আমি আবার জীবনের একটা সেকেন্ডও ন*ষ্ট হতে দিবো না। আমি খুব তাড়াতাড়ি আমার ভালোবাসার মানুষ তরুনিমাকে পুরোপুরি ভাবে নিজের করে নিতে চাই।”

তরুনিমাকে নিজের করে নিতে চায় তাহির এরূপ কথা শোনামাত্র কাজের মেয়ে মিতু অত্যন্ত অবাক হয়ে বললো….
—“কিন্তু সাহেব ছোট আপামনির তো বিয়া হইয়া গেছে একসপ্তাহের বেশি হইলো। আপনে তো আর তারে নিজের কইরা পাইবেন না।”

পিছন থেকে মিতুর কন্ঠে তরুনিমার বিয়ে হয়ে যাওয়ার কথা শুনে তাহির অবাক দৃষ্টি নিয়ে একপলক ওর দিকে তাকিয়ে আবারও তমালিকার দিকে দৃষ্টি স্থির করে। তাহির যেনো নিজের কানে শোনা এই তি*ক্ত কথাটি কিছুতেই বিশ্বাস করে উঠতে পারছে না। তাহির কাঁপা কাঁপা কন্ঠে তমালিকাকে বললো…..

—“আন্টি দয়াকরে আপনি বলুন উনি যা বললেন তা সম্পূর্ণ মিথ্যে কথা। তরুর বিয়ে হয় নি। এমনটা তো হতে পারে না, আর না এমনটা তো হওয়ার কথাও ছিলো না। তরুকে আমি কতোটা ভালোবাসি তা তো আপনি জানেন আন্টি। তরু অন্যকারোর হতে পারে না। আন্টি দয়াকরে সত্যিটা বলুন।”

তমালিকা সিকদার শান্ত স্বরে বললেন…..
—“মিতু মি*থ্যে কথা বলে নি তাহির। তরুনিমার বিয়ে হয়ে গিয়েছে ১সপ্তাহের বেশি হলো। আর এটা সম্পূর্ণ সত্যি কথা।”

তমালিকার মুখে এরূপ কথা শোনামাত্র তাহির হাঁটু ভে*ঙে নিচে বসে পড়ে। মূহূর্তের মধ্যেই তাহিরের মাথার উপর যেনো বিনামেঘের বজ্রপাত হয়, হৃদস্পন্দিত হওয়া বন্ধ হয়ে যায় সাময়িক সময়ের জন্য।

#চলবে ইনশাআল্লাহ……