হৃদকোঠোরে রেখেছি তোমায় পর্ব-৭৫

0
518

#হৃদকোঠোরে_রেখেছি_তোমায়🖤(৭৫)
#Maisha_Jannat_Nura (লেখিকা)

(১৯০)
রিজভী আর কনক দু’জনে মিলে কাঁ*চি*র সাহায্যে গিফট বক্সটির উপরে থাকা র‍্যপিং কাগজটি কা*ট*ছে। চতুর পাশ দিয়ে পুরো কাগজটি কা*টার পর কাগজটি আলগা হয়ে আসলে কনক কাগজটির উপরের অংশ একহাত দিয়ে ধরে টান মা*রে। সঙ্গে সঙ্গে সিমেন্ট বালুর সংমিশ্রণে জমাট বাঁধা রাজবীরের লা*শ সকলের সামনে প্রকাশ পায়। রাজবীরের গলা থেকে উপরের অংশ টুকুর ভ*য়া*বহ, বি*ভৎ*স অবস্থা দেখা মাত্র কামিনী ভ*য়ে ‘আআআ’ বলে উচ্চস্বরে চিৎকার করে সেখানেই মেঝের উপর সে*ন্স লে*স হয়ে পড়ে যায়। তরুনিমা চোখ-মুখ খিঁ*চে বন্ধ করে কুশলের এক হাত জড়িয়ে ওর বুকের এক পার্শে মুখ লুকায়। সাবরিনা মুখের উপর এক হাত রেখে পিছনের দিকে দু’কদম পিছিয়ে যায়। রিজভী নিজের ছেলের এমন বি*ভ*ৎ*স রূপ দেখে ধ*প করে মেঝের উপর দু’হাঁটু ভাজ করে বসে পরে। কুশল ব্যতিত বাকি সবার অবস্থাই ক*রু*ণ হয়ে দাঁড়ায়। কনক দ্রুততার সাথে রাজবীরের মুখের উপর গিফট র‍্যপিং কাগজটি আবারও দিয়ে ঢেকে ফেলে। পুরো চৌধুরী নিবাশ জুড়ে স্ত*ব্ধ*তা বিরাজ করছে। থ*ম*থ*মে পরিবেশ তৈরি হয়েছে।

কিছুসময় পর সাবরিনা মেঝের উপর সেন্স লে*স অবস্থায় পড়ে থাকা কামিনীর পাশে গিয়ে বসে ওর মাথা নিজের কোলের উপর নিয়ে ওর গালে হালকা হাতে চা*প*ড় দিতে দিতে বললেন….

—“ছোট…এই ছোট…ছোট রে..বড় বউমা গ্লাসে করে পানি নিয়ে এসো ওর চোখে-মুখে পানির ছিঁ*টে দিতে হবে।”

অনন্যা দ্রুত পায়ে ডায়নিং রুমে গিয়ে একগ্লাস পানি নিয়ে আবারও কামিনীর পাশে এসে হাটু ভাঁজ করে বসো ওর চোখ-মুখের উপর হালকা ভাবে পানির ছিঁ*টা দিতে শুরু করে। সাবরিনা এখনও কামিনীকে ডেকে চলেছে। কিছুসময়ের মধ্যেই কামিনীর সেন্স ফিরে আসে। চোখ মেলে তাকিয়ে সঙ্গে সঙ্গে শোয়া অবস্থা থেকে উঠে বসে দু’হাতে নিজের মুখ মুছে সাবরিনার দিকে তাকিয়ে উত্তেজনার স্বরে বললেন…..

—“মে..মেজো ভাবী..জা..জানো! একটু আগে আমি মি * থ্যে খুব বা * জে একটা স্বপ্ন দেখলাম। আ..আমার সোনার টুকরো ছেলে…আমার রাজবীর…আমার মানিক খুবই বি*ভ*ৎ*স ছিলো ওর চেহারা। ওর জিহ্বা টেনে বের করে কেও ওর থুতনীর নিচে তক্তা রেখে তার উপর গেঁ * থে দিয়েছে। ওর দু’গালের চামড়া উঠিয়ে ফেলেছে। লাল দ * গ * দ * গে মাংস বেড়িয়ে ছিলো। ওর পুরো শরীরটা সিমেন্ট বালুর মিশ্রণে চা*পা পড়ে ছিলো। শুধু গলা থেকে উপরের অংশটুকুই দেখা যাচ্ছিলো। আহহহ…কি ভ*য়ং*কর। আমার ছেলেটা দু’দিন হলো বাড়িতে ফিরে না। ওকে ফোন দিলে ফোনে পাই না। হয়তো সেই টেনশন থেকেই এমন বা * জে একটা স্বপ্ন দেখেছি আমি। হ্যা এটাই হবে…আমার মানিকের তো কিছু হয় নি বলো বড় ভাবী…ও বড় ভাবী তুমি কিছু বলছো না কেনো!”

কামিনীকে কি বলে শান্ত করবে সেই ভাষা সাবরিনা খুজে পাচ্ছে না তাই তিনি নিরব হয়ে আছেন। কামিনী সাবরিনার থেকে কোনো প্রতিত্তুর না পেয়ে অনন্যার দিকে তাকায়। অনন্যার দু’চোখে নোনাজলে জমে এসেছে। কামিনী অনন্যার দু’বাহু ধরে বললো…..

—“একি বউমা..তোমার চোখে পানি কেনো? কি হয়েছে? দেখো না তোমার শ্বাশুড়িকে কখন থেকে একটা কথা বলে যাচ্ছি যে আমার মানিক ঠিক আছে আমি বা*জে স্বপ্ন দেখেছি কিন্তু আমার কথায় তিনি সায় ই দিচ্ছে না। কেমন পাথরের ন্যয় বসে আছে। বউমা…তুমি বলো তো আমি সত্যি বলছি কিনা! বলছি তো সত্যি!”

অনন্যা দু’হাতে কামিনীকে শক্ত ভাবে জড়িয়ে ধরে। নিজের চোখের সামনে নিজের সন্তানের বি*ভ*ৎ*স লা*শ দেখার পর কোনো মায়েরই স্বাভাবিক থাকার কথা নয়। অনন্যা ওর দু’চোখ দিয়ে নোনাজল ফেলে বললো…..

—“চাচী..নিজেকে সামলাও, এভাবে ভে * ঙে পড়ো না।”

কামিনী ধা*ক্কা দিয়ে অনন্যার কাছে থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে রাগী স্বরে বললো…
—“এই মেয়ে কি সব বলছো তুমি! কি আমি নিজেকে সামলাতে যাবো? আমার ছেলের যেখানে কিছু হয় ই নি সেখানে আমি ভে * ঙেই বা পড়তে যাবো কেন? উল্টো পাল্টা কথা একদম বলবে না বলেদিলাম।”

সাগরিকা চৌধুরী অন্যপাশে দাঁড়িয়ে নিরবে চোখের পানি ফেলছেন। সেইসময় কামিনীর চোখ আবার সেদিকে যায় যেখানে রাজবীরের স্তম্ভটি রাখে আছে যার উপর র‍্যপিং কাগজটা আলগা ভাবে দেওয়া। কামিনী চেঁ*চি*য়ে বললো…..

—“এ..এই..এইটা এখানে কেন রাখা? এটাই তো আমি স্বপ্নে দেখেছিলাম। এর ভিতরেই আমার মানিক ছিলো। ওটা তো স্বপ্ন ছিলো। এখন তো বাস্তবে আছি। তাহলে এইটা এখানে কি করছে। কি রাখা আছে এর ভিতর!”

সাবরিনা এবার আর নিরব না থেকে কামিনীর দু’কাধ ধরে বললেন…..
—“ছোট…পা * গ * লা * মী করিস না। সত্য যতো কঠিন আর তি * ক্ত * ই হোক না কেনো তা আমাদের সবাইকে মেনে নিতে হবে। একজন মা হিসেবে নিজের চোখের সামনে নিজের সন্তানের বি * ভ * ৎ * স অবস্থার লা * শ দেখা সহজ কিছু নয় আমি জানি। কিন্তু এটা তোকে মেনো নিতে হবে। তোর ছেলে রাজবীর আর আমাদের মাঝে নেই ছোট। নেই সে আমাদের মাঝে।”

সাবরিনার কথায় কামিনী অত্যন্ত রেগে যায়। কাঁধের উপর থেকে সাবরিনার হাত সরিয়ে স্বজোরে তার বাম গালে একটা থা * প্প * ড় দিয়ে বসে। আকস্মিক কামিনীর এমন কাজে তাল সামলাতে না পেরে সাবরিনা মেঝের উপর পড়ে যায়। উপস্থিত কেও ই এমনটা হবে ভাবে নি। সায়মন উচ্চস্বরে বললো….

—“কামিনী….তোমার এতো বড় সাহস তুমি আমার স্ত্রীর শরীরে হাত উঠালে! ছেলের লা * শ দেখে মাথা এতোটাই খা * রা * প হয়ে গিয়েছে তোমার যে তুমি যা নয় তাই করে বসবে!”

কামিনী বসা অবস্থা থেকে উঠে সায়মনের সামনে এসে দাঁড়িয়ে রাগী স্বরে বললো….

—“নিজেরা মুখ সামলে কথা বলুন তারপর আমার ভু*ল ধরতে আসবেন। দিনে দুপুরে নে*শা ভাং খেয়ে বসে আছেন সবাই নয়তো আমার জিবীত ছেলেকে মৃ * ত বলে দাবী করতে না কেউই।”

সায়মন কামিনীর অত্যাধিক পা*গ*লা*মী সহ্য করতে না পেরে দাঁতে দাঁত চে*পে বললো……

—“তোমার ছেলে আর বেঁচে নেই। ঐযে সামনে স্তম্ভটা দেখছো ওটার ভিতরেই আছে তোমার ছেলে। তুমি কোনো স্বপ্ন দেখো নি। যা দেখেছো আর দেখছো সবটাই বাস্তব। যতো তাড়াতাড়ি এটা মেনে নিবে ততোই ভালো।”

কামিনী নিজের হি*তা হি*ত জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছে যেনো। কারোর মুখেই নিজের ছেলের মৃ * ত্যু * র তি * ক্ত সত্যটা সে শুনতে পারছে না। দু’হাতে সাময়নের বুকের উপর ধা * ক্কা প্রয়োগ করে সে। সায়মন কয়েক কদম পিছনের দিকে পিছিয়ে যায়। পরক্ষণেই সায়মনের রাগে সর্বশরীরের র*ক্ত যেনো তার মাথায় চ*ড়ে বসার মতো অবস্থা হয়। সায়মন দ্রুত কদমে কামিনীর কাছে এগিয়ে এসে একহাতে ওর মাথার পিছনের চুলগুলো মু*ষ্ঠি বদ্ধ করে ধরে টানতে টানতে রাজবীরের স্তম্ভটির সামনে এনে ধা*ক্কা প্রয়োগ করে। কামিনী স্তম্ভটির সাথে বা*রি খায়। আর ব্য*থা*য় ‘আহহহ’ বলে আ*র্ত*না*দ করে উঠে সে। সায়মন রাগে হি*স*হি*সি*য়ে কনককে উদ্দেশ্য করে বললো….

—“রাজবীরের মুখের উপর থেকে র‍্যপিং কাগজটা সরিয়ে ফেল কনক। দু’চোখ ভরে ওর মাকে ওর বি*ভ*ৎ*স চেহারা দেখতে দে। যেনো ওর বিশ্বাস হয় যে এটাই ওর ছেলে। আর সে এখন মা*রা গিয়েছে।”

কনক ওর বাবার কথানুযায়ী রাজবীরের মুখের উপর থেকে র‍্যপিং কাগজটা সরিয়ে ফেলে। সঙ্গে সঙ্গে কামিনীর চোখের সামনে রাজবীরের বি*ভ*ৎ*স অবস্থার প্রকাশ ঘটে। সঙ্গে সঙ্গে কামিনী রাজবীরের থুতনির নিচে রাখা তক্তার উপর দু’হাতে জোড়ে জোড়ে বা*রি দিতে দিতে চিৎ*কার করে কাঁদতে শুরু করে। কাঁ*দতে কাঁ*দতে বলছেন…..

—“আআআ….আমার মানিক রেএএএ….এ তোর কি হা*ল হয়েছে রে বাবা। আল্লাহ গোওওওও….! রাজবীর রেএএএ…..আমার কলিজার ধন….আহা আআআ….।”

কুশল নিজের শান্ত দৃষ্টি কামিনীর উপর স্থির করে একবার দীর্ঘশ্বাস ফেলে মনে মনে বললো…..

—“নিজের সবথেকে প্রিয় মানুষটির বি*ভ*ৎ*স মৃ*ত দেহ নিজের চোখের সামনে দেখার পর বুকের ভিতর কতোটা ক*রু*ণ য*ন্ত্র*ণা হয় তা এখন খুব ভালো ভাবেই উপলব্ধি করতে পারছেন আপনি কামিনী চৌধুরী। আজ আপনাদের এই আ*র্ত*না*দে আমার মনে বিন্দুমাত্র খা*রাপ লাগা কাজ করছে না। কাঁ*দুন আপনি…আপনারা সকলে কাঁ*দুন। আপনাদের সুখের দিন ফুরিয়ে গিয়েছে। একটু একটু করে আপনারা সকলেই আপনাদের পা*প কর্মের ফল ভো*গ করবেন। আর কখনও আপনাদের মুখে হাসির রেখা ফুটে উঠতে দিবো না আমি। সব অ*মানুষ গুলোর প*ত*ন নিজের চোখের সামনে হতে দেখার পরেই মনের ভিতর প্রশান্তি কাজ করবে।”

কামিনী রাজবীরের চামড়া উঠে যাওয়া ক্ষ*ত-বি*ক্ষ*ত দু’গালের উপর আলতো ভাবে দু’হাত রেখে কান্না করতে করতে বলছেন……

—“ও আমার মানিক…তোর মা যে তোকে এতো করে ডাকছে তুই তাকাবি না আমার দিকে! একবার মা বলে ডাক না বাবা আমায় তুই। আমার কলিজাটা ছিঁ*ড়ে আসছে বাপ। কারা তোকে এতো বি*ভ*ৎ*স ভাবে আ*ঘা*ত করে করে মে*রে*ছে একবার বল তুই বাপ। সবকয়টার কলিজা কে*টে ফা*লা ফা*লা করার ব্যবস্থা করবো। ও আমার সোনা মানিক একবার কথা বল না। ওরে ওদের কি একটা বারের জন্যও হাত দু’টো কাঁপে নি আমার মানিকরে এতো জ*ঘ*ন্য ভাবে আ*ঘা*ত করতে গিয়ে! আহা হা হা হা….আমার কলিজারেএএএ।”

রিজভী কামিনীর আ*র্ত*না*দ আর নিতে না পেরে বসা অবস্থা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে কামিনীকে শান্ত করার চেষ্টা করে। কামিনী রিজভীকে নিজের পাশে দেখা মাত্র তার বুকে জোড়ে জোড়ে হাত দিয়ে আ*ঘা*ত করতে করতে বললো…..

—“তুমি তো বলেছিলে আমার ছেলেকে তুমি আমার কাছে এনে দিবে। কেমন বাবা তুমি..নিজের ছেলেকে ওর শ*ত্রু*দের হাত থেকে বাঁ*চা*তে পারলে না। বাবা নামে ক*ল*ঙ্ক তুমি রিজভী। তুমি আমার ছেলেকে বাঁ*চা*তে পারলে না। পারলে না আমার মানিককে সুস্থ ভাবে আমার কাছে ফিরিয়ে দিতে।”

রিজভী দু’হাতে কামিনীকে নিজের বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে রেখেছে। তার দু’চোখ বেয়েও অঝোর ধারায় নোনাজল গড়িয়ে পড়ছে। আ*র্ত*না*দ করতে করতেই কামিনী আবারও সে*ন্স লে*স হয়ে যায়। কনক শান্ত স্বরে বললো….

—“চাচা..চাচীকে রুমে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করো। তার মাথার ঠিক নেই এখন। ওনার বিশ্রামের প্রয়োজন। তুমিও চাচীর সাথে থাকো এখন। তোমরা যতোসময় এখানে থাকবে তোমাদের মাঝের খা*রা*প লাগার পরিমাণ ততো বাড়বে। আমরা এদিকটা দেখছি।”

রিজভী আরেকজন মহিলা সার্ভেন্টের সহায়তায় কামিনীকে নিয়ে নিজেদের রুমের দিকে অগ্রসর হতে শুরু করে। কনক সায়মনকে উদ্দেশ্য করে আবারও বললো….

—“বাবা…আমাদের পুলিশকে ইনফর্ম করা উচিত। রাজবীরের এমন অবস্থার পিছনে যারা দা*য়ী তারা তো এভাবে পা*র পেয়ে যেতে পারে না।”

সায়মন রাগী স্বরে বললো….
—“চৌধুরী মেনশনে আজ পর্যন্ত কোনো স*ম*স্যা*র অ*ভি*যোগ নিয়ে পুলিশ আসে নি আর ভবিষ্যতেও আসবে না। রাজবীরের কৃতকর্ম সম্পর্কে কম বেশি আমি অনেককিছুই জানি। আজ ওর এই হালের জন্য ও যে নিজেই দায়ী সেটাও আমি শিওর হয়ে বলতে পারি। এসব নিয়ে এতো ঘাটাঘাটি করে চৌধুরী পরিবারের সম্মান ধুলোর সাথে মি*শি*য়ে দিতে পারি না আমরা। কয়েকজন গার্ডের সাহায্যে রাজবীরকে ঐ স্তম্ভ থেকে বের করার ব্যবস্থা করো। তারপর উপর দা*ফ*ন কার্য সম্পন্ন করতে হবে।”

এই বলে সায়মন নিজের রুমের দিকে হাঁটা ধরলেন। ওনার পিছন পিছন সাবরিনাও চলে গেলেন। কনক একবার দীর্ঘশ্বাস ফেললো মাত্র।

#চলবে ইনশাআল্লাহ……..

#হৃদকোঠোরে_রেখেছি_তোমায়🖤(৭৫ পর্বের ২য় অংশ)
#Maisha_Jannat_Nura (লেখিকা)

(১৯১)
সায়মনের কথানুযায়ী কনক কয়েকজন গার্ডসদের সহায়তায় রাজবীরের স্তম্ভটি বাগানের ফাঁকা অংশে নিয়ে গিয়ে ওর লা*শে*র চারপাশ থেকে সিমেন্ট বালুর জমাট বাধা সংমিশ্রণটিকে ভা*ঙ*তে শুরু করেছে বেশ অনেকসময় হলো।
.
.
.
চৌধুরী মেনশনের ড্রয়িং রুমে সোফায় বসে আছে সাগরিকা চৌধুরী, কুশল, তরুনিমা আর অনন্যা। সাগরিকা চৌধুরী নিরবে চোখের পানি ফেলতে ফেলতে বললেন….

—“আল্লাহ এই বুড়িকে বাঁচিয়ে রেখে আর কতো প্রিয়জনদের মৃ * ত্যু য*ন্ত্র*ণা ভো*গ করাবে! বুকের ভিতরে জ*খ*ম হতে হতে কেমন দ*গ*দ*গে অবস্থা হয়ে গিয়েছে তবুও এই র*ক্ত আর বি*ভ*ৎ*স মৃ*ত্যু*র খেলা বন্ধ হচ্ছে না।”

অনন্যা একবার দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো…
—“দাদীমা…তুমি আমাদের সকলের মাথার উপরের সবথেকে নিরাপদ ছায়াস্থল। তুমি এভাবে ভে*ঙে পড়লে পরিবারের বাকিরা নিজেদের সামলাবে কি করে?”

—“পারছি না রে দিদিভাই…বয়সের সাথে সাথে ধৈর্যক্ষমতা ও সহনক্ষমতা অনেকটা লোপ পেয়ে গিয়েছে।”
.
.
.
নিজরুমে বিছানায় চিন্তিত মুখশ্রী নিয়ে বসে আছেন সাবরিনা। আর তার সামনে চিন্তিত মুখশ্রী নিয়ে পায়চারি করছেন সায়মন। কিয়ৎক্ষণ পর সাবরিনা বললেন….

—“শোনো, তোমাকে একটা কথা বলতে ভুলেই গিয়েছিলাম।”

সায়মন পায়চারি থামিয়ে সাবরিনার সামনে দাঁড়িয়ে ওর উপর দৃষ্টি স্থির করে বললো……

—“কি কথা?”

—“বসো আমার পাশে।”

সায়মন সাবরিনার পাশে বসতেই তিনি আবারও বললেন….
—“দু’দিন আগে আমি কনককে আমাদের অতীত কর্মের সম্পর্কে সব জানিয়ে দিয়েছিলাম। আর সবকথা শোনার পর কনক বলেছিলো সে এই চৌধুরী বংশের সম্পত্তির ১% অংশ ও কুশল কিংবা রাজবীর কারোর সাথেই ভাগ করতে পারবে না। আমাদের পরিকল্পনাতে শুধু কুশলকে মা*রা*র কথা থাকলেও কনক রাজবীর আর কামিনী, রিজভীকেও মে*রে ফেলার কথা বলেছিলো।”

—“কি বলছো কি তুমি!”

—“হুম..এখন তো আমার স*ন্দে*হ হচ্ছে কনক নিজেই রাজবীরকে মে*রে ফেললো না তো! এতো বি*ভ*ৎ*স মৃ*ত্যু কাওকে দেওয়া কি কোনো সুস্থ মস্তিষ্কের মানুষের কাজ হতে পারে বলো! আর তাই এ বিষয়ে আমাদের কনকের সাথে আলোচনা করা জরুরী হয়ে দাঁড়িয়েছে।”

—“রাজবীরের দা*ফ*ন কার্য শেষ হোক তারপর এ নিয়ে আলোচনা করবো ওর সাথে। এখন মুখ ব*ন্ধ রাখো। এ নিয়ে আর কোনো কথা নয়।”

সাবরিনা মাথা নাড়িয়ে ‘হ্যা’ সূচক জবাব দেয়। বেখেয়াল বশত রুমের দরজা ওরা লাগাতে ভুলে গিয়েছিলো। পরক্ষনেই ওদের কথপোকথন শেষ হয়েছে বুঝে ওদের দরজার সামনে থেকে একজন ছায়ামনব দ্রুততার সাথে সরে যায়।
.
.
.
কনক বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করে ড্রয়িং প্লেসে এসে সোফায় বসে দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো….

—“মুখের আর কি বি * ভ * ৎ *স অবস্থা ছিলো রাজবীরের! সিমেন্ট বালুর জমাট বাঁধা সংমিশ্রণের ঐ স্তম্ভটি পুরোপুরি ভা*ঙা*র পর ওর শরীরটা যখন বের করলো গার্ডসরা তা দেখার পর আমার শরীরের প্রতিটি লোমকূপ দাঁড়িয়ে গিয়েছিলো। কোনো সাধারণ মানুষ কি করে কাওকে এতোটা এতোটা য*ন্ত্র*ণা দিয়ে দিয়ে মা*র*তে পারে আমার জানা নেই।”

অনন্যা বললো…
—“হয়তো যে রাজবীর ভাইকে মে*রে*ছে তার ওনার প্রতি প্রচুর রা*গ বা ঘৃ*ণা জমে ছিলো।”

—“হুম..হয়তো! অনন্যা শুনো..তুমি বাবা-মায়ের কাছে যাও আর আমি চাচা-চাচীর কাছে যাচ্ছে। তাদের রাজবীরকে শেষ বারের মতো দেখে নিক। ওর শরীরের অবস্থা খুবই বা*জে হয়ে গিয়েছে ইতিমধ্যেই। তাই যতোদ্রুত সম্ভব ওর দা*ফ*ন কার্য সম্পন্ন করতে হবে৷”

অতঃপর অনন্যা আর কনক দু’জনেই স্থান ত্যগ করে।
.
.
.
সন্ধ্যার পূর্বেই চৌধুরী পরিবারের পারিবারিক ক*ব*র স্থানে রাজবীরের দাফনকার্য সম্পন্ন করা হয়। ছেলের অ*কা*ল মৃ*ত্যু*র কারণে রিজভী আর কামিনীর মানসিক অবস্থা ভালো না হওয়ায় তারা নিজকক্ষেই অবস্থান করছেন। ড্রয়িংরুমে সোফায় কনক, অনন্যা, কুশল আর তরুনিমা বসেছিলেন। সেইসময় সাবরিনা সেখানে এসে শান্ত স্বরে কনককে উদ্দেশ্য করে বললেন….

—“কনক..বাবা! আমার সাথে একটু আমাদের রুমে চল। তোর বাবা তোকে ডাকছেন। ব্যবসার কি যেনো বিষয় নিয়ে জরুরী আলোচনা করার আছে নাকি তার।”

কনক সোফা ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে বললো….
—“অনন্যা..তুমি রুমে যাও এখন। সারাদিন অনেক ধকল গিয়েছে তোমার উপরও৷”

—“আচ্ছা।”

—“মা চলো।”

অতঃপর সাবরিনা আর কনক চলে স্থান ত্যগ করতেই অনন্যাও ওর রুমের উদ্দ্যেশে হাঁটা ধরে। ড্রয়িংরুমে এখন শুধু কুশল আর তরুনিমাই বসে ছিলো। সেইসময় একজন কম বয়সী পুরুষ সার্ভেন্ট কুশলের পাশে এসে দাঁড়িয়ে শান্ত স্বরে বললো…

—“স্যার আপনার সাথে জরুরী কথা বলার ছিলো।”

কুশল সোফা ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে গুটিয়ে রাখা পাঞ্জাবির দু’হাতা নামিয়ে দিতে দিতে বললো….
—“হুম…একটু পর দু’কাপ চা নিয়ে রুমে এসো আমার। তরুনিমা তুমিও রুমে চলো।”

এই বলে কুশল আর তরুনিমা সিঁড়ি বেয়ে উপরে চলে যায় আর সার্ভেন্টটি রান্নাঘরে চলে যায় চা বানানোর উদ্দেশ্যে।
.
.
.
সাবরিনা আর কনক সায়মনদের রুমে প্রবেশ করতেই সাবরিনা ভিতর থেকে রুমের দরজা বন্ধ করে দেয়। অতঃপর কনকের হাত ধরে বিছানার কাছে নিয়ে এসে বসতে বলে নিজেও ওর পাশে বসে পরে। সায়মন শান্ত স্বরে বললেন…..

—“কনক…তোমার মা তোমাকে সব সত্য জানিয়ে দিয়েছে শুনলাম!”

কনক একপলক সাবরিনার দিকে তাকিয়ে পরপরই সায়মনের উপর দৃষ্টি স্থির করে বললো….
—“হুম।”

—“আর তুমি তোমার মা কে এটাও বলেছিলে যে কুশলকে আমাদের রাস্তা থেকে চিরতরের জন্য স*রি*য়ে ফে*লা*র পর রাজবীরকে আর কামিনী, রিজভীকেও মে*রে ফেলার পদক্ষেপ গ্রহন করবে!”

—“হুম বলেছিলাম তো৷ কিন্তু হঠাৎ এসব প্রশ্ন কেনো করছো তুমি বাবা! মা তো বললো তুমি ব্যবসার বিষয়ে কথা বলতে ডেকেছো আমায়।”

সাবরিনা বললেন….
—“তো কি ওদের সামনেই বলতাম যে আমরা তোর সাথে এসব বিষয় নিয়ে কথা বলতে চাই!”

সায়মন বললেন….
—“হুট করে রাজবীরের মৃ*ত্যু*র বিষয়টা তোমার মা আর আমাকে ভাবিয়ে তুলেছে। তাই আমরা তোমার সাথে এই বিষয়ে কথা বলতে চাইছিলাম। কোথাও তুমিই রাজবীরকে মে*রে ফেলো নি তো কনক! যদি তেমন কিছু করে তাহলে আমাদের কাছে সত্যিটা স্বীকার করো। আমরা বিষয়টাকে অন্যভাবে তুলে ধরতে পারবো কামিনী আর রিজভীর সামনে।”

কনক ঝ*ট করে বিছানা ছেড়ে নেমে দাঁড়িয়ে অত্যন্ত অবাক হয়ে কিছুটা উচ্চস্বরে বললো….
—“হোয়াট..? কি বলছো কি তুমি বাবা! তোমার কোনো আইডিয়া আছে কতো বড় সন্দেহ করছো তোমরা আমার উপর!”

সাবরিনা সঙ্গে সঙ্গে কনকের হাত ধরে টেনে আবারও নিজের পাশে বসিয়ে ধীরস্বরে বললেন….
—“কি করছিস তুই বাবা! এতো জোরে কথা বললে বাহির থেকে যে কেও শুনে নিতে পারে। আমরা তো তোকে ডিরেক্টলি বলছি না যে তুই-ই রাজবীরকে খু*ন করেছিস! আমরা শুধু তোকে প্রশ্ন করেছি। যদি এমনটা করে থাকিস তাহলে বিষয়টাকে অন্যভাবে মেনেজ করে নিতে হবে আমাদের নয়তো কামিনী আর রিজভী আমাদের স*ন্দে*হ করে তোর বড় কোনো ক্ষ*তি করে দিতেও দু’বার ভাববে না। ওদের তো এখন মানসিক অবস্থা ভালো না। তাই ওরা যা খুশি করে দিতে পারে। কোনো ভরসা নেই।”

কনক শব্দ করে একবার নিঃশ্বাস ফেলে বললো….
—“মা আমি এমন করার কথা বলেছিলাম ঠিকই কিন্তু এতো বড় একটা কাজ করার আগে আমি তোমাদের সাথে একটা বার কথা বলবো না এটা কি হয় বলো?”

—“তারমানে তুই রাজবীরকে মা*রি*স নি। তাহলে এতো নৃ*শং*স ভাবে রাজবীরকে মা*র*লো কে? সে কি শুধু রাজবীরের একারই শ*ত্রু? নাকি আমাদের সবার! বড্ড চিন্তার বিষয় তো এটা দেখছি।”

সায়মন বললেন…
—“চি*ন্তা করে করে এখন মাথা খা*রাপ করা যাবে না বুঝেছো! সবসময় সাবধানে থাকতে হবে। আর হ্যা রিজভী আর কামিনীকেও এখন হালকা ভাবে নেওয়া যাবে না। বিশেষ করে কনক…বাবা তুই সাবধানতা বজায় রেখে চলাচল করিস কেমন!”

—“বাবা..মা!তোমরা এতো দু*শ্চি*ন্তা করো না তো। যে কাজ আমরা করি নি সেই কাজের জন্য ভ*য় পেয়ে ঘরে বসে থাকারও কোনো মানে নেই। আমি এখন আসছি।”

—“আচ্ছা ঠিক আছে।”

অতঃপর কনক ওর বাবা-মায়ের রুম থেকে বেড়িয়ে যায়। সায়মন কনকের যাওয়ার পানে তাকিয়ে কেবল একবার দীর্ঘশ্বাস ফেললেন।
.
.
.
নিজরুমে বিছানায় বসে আছে তরুনিমা। বিছানার পাশে থাকা হেলানো সিংগেল সোফায় বসে আছে কুশল। সেইসময় ওদের রুমের দরজায় নক করার ও ‘আসবো স্যার’ বলার শব্দ ভেসে আসলে তরুনিমা দরজার দিকে লক্ষ্য করতেই দেখে সেই সার্ভেন্টটি চায়ের ট্রে হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। কুশল শান্ত স্বরে বললো…

—“ভিতরে এসো সুজন।”

সুজন ভিতরে প্রবেশ করে চায়ের ট্রেটা সোফার পাশে থাকা ছোট গোল টেবিলের উপর রেখে নিজের পকেট থেকে ফোনটা বের করে পূর্বের রেকর্ডকৃত একটা ভিডিও প্লে করে কুশলের সামনে ধরে। কুশল সুজনের ফোনটা হাতে নিয়ে খুব মনোযোগের সহিত ভিডিওটা দেখা শেষ করে শান্ত স্বরে সুজনকে তার পরবর্তী কাজের দায়িত্ব বুঝিয়ে দিলো। অতঃপর সুজন ওদের রুম থেকে বেড়িয়ে যেতেই তরুনিমা দ্রুততার সাথে বিছানা থেকে নেমে কুশলের পাশে গিয়ে বসে ধীরস্বরে বললো…..

—“আপনি সুজনকে এই কাজটা করতে বলে তো কনক ভাইয়ার সামনে বি*প*দে*র দরজা খুলে দিলেন কুশল।আর কনক ভাইয়া তো এখনও কোনো অ*ন্যা*য় করেন নি। ঐ অ*মানুষ মহিলাটি কনক ভাইয়ার ভিতরে নিজের ভিতর বিস্তার করা বি*ষ গুলো ঢে*লে দিয়েছেন তাই হয়তো তার চি*ন্তা ধারাও ওদের মতোই হয়ে গিয়েছে। এর জন্য কি তাকে তার প্রা*ণ দিতে হবে বলেন?”

কুশল ওর ঠোঁটে হালকা হাসির রেখা ফুটিয়ে তুলে তরুর দিকে ঘুরে বসে একহাতে ওর কমোর জড়িয়ে নিজের আরো সন্নিকটে টেনে নিয়ে ওর কানের কাছে নিজের মুখ এগিয়ে নিয়ে ফিসফিসিয়ে বললো…..

—“তোমার জামাই ঠান্ডা মাথার খেলোয়াড়। যেকোনো কাজ করার আগে খুব চিন্তা-ভাবা করেই একটা সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করে। তাই তুমি নিশ্চিন্ত থাকতে পারো। আগেও বলেছিলাম যে যেমন কর্ম করবে বা করেছে সে তেমনই ফল ভো*গ করবে। কনক ভাইয়ের জন্য যেটা করা উচিত হবে আমি সেটাই করবো।”

কুশলের কথাগুলো শুনে তরুর ঠোঁটেও হাসির রেখা ফুটে উঠে। তরু সঙ্গে সঙ্গে কুশলের গালে একটা ভালোবাসার পরশ এঁকে দিয়ে ওর সামনে মাথা কিছুটা নুইয়ে রাখে। কুশল অন্যহাত তরুর থুতনিতে রেখে হালকা উঁচু করিয়ে ধরে বললো….

—“ভালোবাসার পরশ গালের উপর এঁকে দিয়ে আমার শান্ত মনকে অ*শান্ত করে দিলে এই অ*ন্যায় তো মেনে নেওয়া যায় না মিসেস চৌধুরী। এখন তোমায় তোমার করা অ*ন্যায়ের সা*জা ও ভো*গ করতে হবে।”

তরু ভ্রু কি*ন্ঞ্চি*ত কুঁচকে নিয়ে চোখের আকৃতিও ছোট করে কুশলের দিকে তাকিয়ে বললো….

—“মানে! ভালোবাসা প্রকাশ করেছি এ কারণে সা*জা ভো*গ করতে হবে কেনো? আর কেমন সা*জা দিবেন আপনি আমায়?”

—“ভালোবাসা প্রকাশ করেছো তো কি হয়েছে? ঐযে বললাম তোমার ভালোবাসা প্রকাশের কারণে আমার শান্ত মনে তো*ল*পা*ড়ে*র সৃষ্টি হয়েছে। এখন এই অ*শান্ত মনটাকে আবারও শান্ত করতে হবে তোমায়। এটাই তোমার জন্য সঠিক সাজা।”

—“মানে!”

—“মানে টা এবার আমাকেই বুঝিয়ে দিতে হবে বুঝেছি।”

এই বলে কুশল তরুকে ছেড়ে দিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে দরজার কাছে গিয়ে ভিতর থেকে দরজা আটকে দিয়ে তরুর উপর দৃষ্টি স্থির করে ঠোঁটে বাঁ*কা হাসির রেখা স্পষ্ট রেখে আবারও ধীরে ধীরে ওর দিকে অগ্রসর হতে হতে পাঞ্জাবির বুকের কাছের বোতাম গুলো একে একে খুলতে শুরু করে। কুশলের এমন কাজে তরুর আর বোঝার বাকি থাকে না এতোসময় ধরে কুশল ওকে কোন সা*জা দেওয়ার কথা বলছিলো। তরু একবার ঢো*ক গিলে দ্রুততার সাথে বসাবস্থা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বিছানার অন্যপাশে যেতে নিলে কুশল তরুর হাত ধরে হ্য*চ*কা টা*ন মে*রে নিজের বুকের উপর এনে ফেলে। তরু ভ*য়ে, ল*জ্জা*য় চোখ-মুখে খিঁ*চে বন্ধ করে ফেলে। কুশল ধীর স্বরে বললো….

—“সা*জা ভো*গ না করেই কোথায় পা*লি*য়ে যেতে চাইছেন বিবি সাহেবা!”

তরু কুশলের দিকে তাকিয়ে কিছুটা কাপান্বিত স্বরে বললো….
—“দ-দে-দেখুন!”

কুশল তরুর মুখের কাছে নিজের মুখ আরো কিছুটা এগিয়ে নিয়ে বললো….
—“হুম…দেখবো তো! একটু পর সব দেখবো…খুব ভালো ভাবেই দেখবো। কি বলো!”

এই বলে কুশল একবার চোখ টি*প দেয়। কুশলের মুখে এমন লা*গা*ম ছাড়া কথা শুনে তরুর লজ্জায় মাটি ফাঁ*কা করে তার ভিতরে ঢু*কে যেতে ইচ্ছে হয়। কুশল তরুকে এভাবে লজ্জা পেতে দেখে কুশল ঠোঁটে ঠোঁট চেপে নিঃশব্দে হাসতে শুরু করে।

#চলবে ইনশাআল্লাহ……

#হৃদকোঠোরে_রেখেছি_তোমায়🖤(৭৫ পর্বের ৩য় অংশ)
#Maisha_Jannat_Nura (লেখিকা)

(১৯২)
রাজবীরের মৃ*ত্যু*র পর কেটে গেছে ৪ দিন। এখনও চৌধুরী নিবাশ জুড়ে থ*ম*থ*মে ভাব বিরাজ করছে। কামিনী আর রিজভীর জন্য নিজেদের একমাত্র ছেলের অ*কা*ল মৃ*ত্যু*র শো*ক কাটিয়ে উঠা এতো সহজ বিষয় নয় জন্য চৌধুরী পরিবারের বাকি সদস্যরা তাদের নিজেদের মতো করে সামলে উঠার সুযোগ করে দিয়ে নিজেরা আগের মতো নিজ নিজ জীবন ও কর্ম নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। রিজভী আর কামিনী নিজ ঘরে বিছানায় পাশাপাশি বসে আছেন। সেইসময় সুজন চায়ের ট্রে হাতে নিয়ে ওদের রুমের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে দরজায় নক করে ভিতরে আসার অনুমতি চাইলে রিজভী কিছুটা বিরক্তি নিয়ে বললেন….

—“এই ভর দুপুর বেলা কেও চা নিয়ে আসে নাকি? আর তোমাকে তো এর আগে কখনও দেখি নি।”

সুজন শান্ত স্বরে বললো…
—“স্যার আমি ৫দিন হলো নতুন যোগদান করেছি সার্ভেন্ট হিসেবে।”

—“চা খাবো না আমরা নিয়ে যাও তুমি।”

সুজন মাথা নাড়িয়ে ‘আচ্ছা’ সূচক জবাব দিয়ে চলে যেতে নিলে কামিনীর ডাকে থেমে যায় সে। কামিনী শান্ত স্বরে বললেন….
—“নিয়ে যেও না। এনেছো যখন দিয়ে যাও। মাথাটা ধ*রেছে। চা খেলে উপকার হবে হয়তো।”

সুজন নিজের ঠোঁটে স্মিত হাসি ফুটিয়ে রুমের ভিতরে ওদের বিছানার পাশে এসে দাঁড়িয়ে চায়ের কাপ দু’টো ওদের দু’জনের দিকে এগিয়ে দিতে দিতে ধীরস্বরে বললো…..

—“স্যার-ম্যম..! আপনাদের মানসিক অবস্থা ভালো না এটা আমি জানি কিন্তু আপনাদের জীবনের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে একটা অজানা সত্য আপনাদের জানাতে চাইছি গত ৪দিন ধরেই। আর এখন চা নিয়ে আপনাদের রুমে আসা সত্যটা জানানোর জন্যই একটা বাহানা ছিলো মাত্র।”

সুজনের এরূপ কথায় কামিনী-রিজভী দু’জনেই অনেক অবাক হয়। কামিনী অবাক স্বরে বললেন…

—“কি বলছো কি তুমি? আমাদের জীবনে আবার কিসের ঝুঁ*কি এসেছে? আর কোন অজানা সত্যের কথা-ই বা বলছো তুমি হ্যা!”

সুজন ধীরস্বরে বললো….
—“ম্যম..আস্তে কথা বলুন। দেওয়ালের ও যে কান আছে এ কথা কিন্তু মি*থ্যে না।”

রিজভী ধীরস্বরে বললেন…
—“আসল কথা বলো তুমি।”

—“স্যার..আমি তো মাত্র ৫দিন হলো এ বাড়িতে কাজে যোগ দিয়েছি তাই কারোর প্রতিই আমার নিজস্ব টান বা ভক্তি তৈরি হয় নি। আমি নিজের যা শুনেছি আর চোখে যা দেখেছি তারপর আমার বিবেক আমাকে যেটা করতে বলেছে আমি সেটাই এখন করছি।”

কামিনী বললেন…..
—“আহহ..এতো ঘুরিয়ে পে*চি*য়ে কথা না বলে কি দেখেছো আর কি শুনেছো সেই সবটা বলো তো আমাদের।”

—“স্যার-ম্যম..! যেদিন আপনাদের ছেলের অ*কা*ল নৃ*শং*স মৃ*ত্যু*র জন্য চৌধুরী পরিবারের একভাব সদস্যরা যেমন শো*কে ডুবে ছিলেন সেদিনই সাবরিনা ম্যম আর সায়মন স্যারের একান্ত আলোচনার কিছু কথা আমি শুনে ফেলেছিলাম। সাবরিনা ম্যম সায়মন স্যারকে বলছিলেন তিনি তাদের বড় ছেলে কনক স্যারকে কয়েকদিন আগে নিজেদের অতীতে করা কোনো কর্মের সম্পর্কে নাকি অবগত করেছেন। কিন্তু কোন কর্ম তা খোলাখুলি ভাবে বলেন নি। কিন্তু এরপর তিনি যা বললেন তা শোনার পর আমার কলিজা কেঁ*পে উঠেছিলো। সাবরিনা ম্যমের থেকে তাদের অতীতের কর্ম সম্পর্কে পুরোপুরি ভাবে অবগত হওয়ার পর কনক স্যার নাকি তাঁকে বলেছিলেন যে তিনি এই চৌধুরী নিবাশ এর যাবতীয় সম্পত্তির মালিকানা একা নিজের নামে করে নিতে চান। আর নিজের এই কার্য সিদ্ধির জন্য তিনি নাকি কুশল স্যার আর রাজবীর স্যার সহ আপনাদের দু’জন কেও যথাসময়ে মে*রে ফেলবেন।”

সুজনের মুখে এরূপ কথা শোনার পর কামিনী আর রিজভীর মাথার উপর যেনো আকাশ ভে*ঙে পড়ার মতো অবস্থা হয়। রিজভী কোনো রকমে নিজেকে সামলে নিয়ে বিছানা থেকে দ্রুততার সাথে নেমে সুজনের সামনে এসে দাঁড়িয়ে ওর শার্টের কলার্ট দু’হাতে চেপে ধরে রাগী স্বরে বললেন…

—“তুই মি*থ্যে বলছিস তাই না ছোটলোকের বা*চ্চা! স্বীকার কর যে তুই মি*থ্যে বলছিস। মেজো ভাইয়া-ভাবী আর কনক কখনও এমন করতে পারবে না আমাদের সাথে। নিশ্চয়ই আমাদের মাঝে ফা*ট*ল ধরাতে আমাদের কোনো শ*ত্রু*ই তোকে এ বাড়িতে পাঠিয়েছে বল!”

সুজন শান্ত স্বরে বললো…
—“আমি কোণো মি*থ্যে কথা বলছি না স্যার। আমি জানতাম আপনারা আমার মুখের কথা বিশ্বাস করবেন না। তাই আমি আপনাদের জন্য প্রমাণ নিয়ে এসেছি। সেটা দেখলেই আপনারা খুব ভালো ভাবেই বুঝতে পারবেন যে কে আপনাদের আসল শ*ত্রু আর কে-ই বা আপনাদের প্রকৃত বন্ধু।”

সুজনের এরূপ কথা শুনে কামিনী ধীরস্বরে বললেন…
—“ওকে ছেড়ে দাও রিজভী। আমাদের ওর কাছে থাকা প্রমাণটা দেখে যাচাই করা উচিত পুরো বিষয়টা।”

অতঃপর রিজভী সুজনকে ছেড়ে দিয়া লম্বা করে একবার নিঃশ্বাস ফেলে বিছানায় আবারও বসতে বসতে বললেন….
—“বেশ দেখা দেখি কি প্রমাণ আছে তোর কাছে। কিসের জোড়ে তুই এতো বড় বড় কথাগুলো বললি।”

সুজন ওর পকেট থেকে নিজের ফোনটা বের করে সেখানে আগে থেকে রেকর্ড করা রাজবীরের মৃ*ত্যু*র দিন সায়মন আর সাবরিনার মাঝের কথপোকথন এর ভিডিও প্লে করে রিজভী আর কামিনীকে দেখার সুযোগ করে দেয়। পুরো ভিডিও খুব ভালো ভাবে দেখার পর ওদের দু’জনেরই চেহারার ধরণ চেইঞ্জ হয়ে যায়। সুজন কিছুটা ভী*ত আর চি*ন্তি*ত ভাব নিজের চেহারায় ফুটিয়ে বললো….

—“স্যার-ম্যম , নিজের জীবনের পরোয়া না করে আপনাদের জীবনের কথা ভেবে আজ এতো বড় সত্য আপনাদের সামনে তুলে ধরলাম। আপনারা এর পর যদি কোনো পদক্ষেপ গ্রহন করে তো দয়া করে এই গরীবের বা*চ্চা*র নাম উঠাবেন না। আমি কখনও কিছু শুনি নি, দেখি নি এমন ভাব নিয়াই এ বাড়িতে বাকি সার্ভেন্টদের মতো কাজ করে যাবো। আমি এখন আসি স্যার। কোনো কাজের জন্য প্রয়োজন মনে করলে একবাক্যে স্মরণ করিয়েন আমাকে আমি হাজির হবো আপনাদের সামনে।”

এই বলে সুজন যেই না চলে যেতে নিবে সেইসময় রিজভী থ*ম*থ*মে স্বরে বললেন…

—“ভিডিওটা তোমার ফোন থেকে আমার ফোনে শেয়ার করে দাও তারপর তোমার ওখান থেকে ভিডিওটা ডি*লে*ট করে দাও।”

—“আচ্ছা স্যার।”

এই বলে সুজন ওর থেকে রিজভীর ফোনে ভিডিওটা শেয়ার করে দিয়ে নিজের ফোন থেকে ডি*লে*ট করে দিয়ে ফোন নিয়ে স্থান ত্যগ করে। রিজভী কামিনীর মুখের দিকে লক্ষ্য করতেই ওর চেহারায় ফুটে উঠা চরম রাগ ও ক্ষো*ভে*র ছাপ স্পষ্ট ফুটে থাকতে দেখতে পায়। রিজভী বললেন….

—“শ*ত্রু*র শ*ত্রু যে মিত্র হয় এই চরম মি*থ্যে কথাটা যে বলেছে তার মতো চরম বো*কা এই পৃথিবীতে আর ২য় কেও নেই। আর তার এই কথার জন্য আমরা আমাদের শ*ত্রু*র শ*ত্রু*কে বিশ্বাস করে তাদের সাথে মিত্রতার সম্পর্ক তৈরি করে প্রায় ২ যুগ হলো বজায় রেখে আসছি। আর আজ জানতে পারলাম সেই মিত্ররাই আমাদের পিঠ পিছনে আমাদের মে*রে ফে*লা*র কূ*ট নৈতিক পরিকল্পনা পর্যন্ত করে ফেলেছে।”

কামিনী নিজের রাগকে আর দমিয়ে রাখতে না পেরে রিজভীর দিকে তাকিয়ে হি*স*হি*সি*য়ে বললেন…

—“পরিকল্পনা তৈরি করে ফেলেছে? ওরা ওদের পরিকল্পনা অনুযায়ী একভাগ কাজ সম্পন্নও করেছে। আমাদের ছেলে যে আমাদের মাঝে আর নেই সেটা কি
তুমি এতো তাড়াতাড়ি ভুলে গিয়েছো?”

—“তুমি কি স*ন্দে*হ করছো যে আমাদের ছেলের মৃ*ত্যু*র পিছনে ওদের হাত আছে?”

—“এখানে স*ন্দে*হ করার কোনো প্রশ্নই আসছে না। আমি পুরোপুরি শিওর যে আমাদের ছেলেকে ওরাই পরিকল্পনা করে মে*রে*ছে। কারণ ওরা যে আমাদের ও আমাদের ছেলেকে মা*রা*র চিন্তা করেছিলো তার জল জ্য*ন্ত প্রমাণও তোমার হাতে আছে।”

—“এখন কি করতে হবে আমাদের? ওদের থেকে যে আমাদের দল পাতলা হয়ে গিয়েছে। ছেলেকে হা*রা*লাম এ জন্য সম্পত্তির সঠিক ভাগ যা পাওয়ার কথা ছিলো তা থেকেও ব*ন্ঞ্চি*ত হয়ে যাবো। তাহলে আমাদের জীবনই বা চলবে কি করে!”

—“সম্পত্তি নিয়া টানা*হেঁ*চ*ড়া করার দিন শেষ। এখন থেকে শুরু হবে প্রতি*শো*ধে*র নতুন খেলা। চোখের বদলে চোখ, হাতের বদলে হাত, টাকার বদলে টাকা তেমনি জান-প্রাণের বলদেও জান-প্রাণ। আমরা আমাদের একমাত্র ছেলেকে হা*রি*য়ে যে ক*রু*ণ য*ন্ত্র*ণায় প্রতিটি সেকেন্ড দ*গ্ধ হচ্ছি সেই একই য*ন্ত্র*ণায় আমি ঐ সায়মন চৌধুরী ও সাবরিনা চৌধুরীকে ছ*ট-ফ*ট করতে দেখতে চাই। যেমন বি*ভ*ৎ*স ভাবে ওরা আমাদের ছেলেকে মে*রে*ছে তার থেকে বি*ভ*ৎ*স ভাবে ওদের ছেলেকে আমরা মারবো। এতোটাই বি*ভ*ৎ*স অবস্থা করবো যে নিজের ছেলেকে ওরা চিনতেও পারবে না। চোখের সামনে যখন ওরা নিজের ছেলের ওমন বি*ভ*ৎ*স লা*শ দেখে য*ন্ত্র*ণা*য় ছ*ট-ফ*ট করবে তখন আমাদের প্রতি*শো*ধে*র খেলাও সম্পন্ন হবে।”

—“কনককে মা*রা*র কথা বলছো তুমি কামিনী?”

—“তাছাড়া আর কার কথা বলবো? ও নিজেই তো প্রথমে আমাদের আর আমাদের ছেলেকে মা*রা*র কথা ওর মাকে জানিয়েছে। তাই ওর-ই প্রাপ্য এই য*ন্ত্র*ণা দায়ক বি*ভ*ৎ*স মৃ*ত্যু।”

—“কিন্তু ওদের আড়ালে এই কাজ করবে কি করবো কি করে আমরা? যদি ওরা স*ন্দে*হ করে তখন!”

—“আমাদের আগের মতো স্বাভাবিক থাকতে হবে ওদের সামনে যা কাজ করার গোপনে গোপনেই করতে হবে আর তা খুব শীঘ্রই।”

—“কিভাবে?”

অতঃপর কামিনী রিজভীকে ওর করা পরিকল্পনা বুঝিয়ে দেয়। রিজভী বললেন….

—“আজ তোমার চিন্তা ধারা দেখে তোমার ভিতর ২০ বছর আগের সেই ধু*র*ন্ধ*র কামিনীর রূপ দেখতে পারছি আমি। যা সত্যিই প্রশংসা পাওয়ার যোগ্য।”

রিজভীর কথা শুনে কামিনী বাঁ*কা হাসলো।

#চলবে ইনশাআল্লাহ……..

#হৃদকোঠোরে_রেখেছি_তোমায়🖤(৭৫ পর্বের ৪র্থ অংশ)
#Maisha_Jannat_Nura (লেখিকা)

(১৯৩)
কামিনী আর রিজভীর পরিকল্পনার সম্পূর্ণ কথপোকথন ওদের রুমের বাহিরে দরজায় দাঁড়িয়ে সুজন সম্পূর্ণই শুনে। সেইসময় রিজভীকে দরজার দিকে অগ্রসর হতে দেখে সুজন দ্রুততার সাথে সেখান থেকে সরে ড্রয়িং প্লেসে আসতেই কনকের সাথে স্বজোরে ধাক্কা খায়। অতঃপর সুজন তাল সামলাতে না পেরে মেঝের উপর পরে যায় আর কনক কয়েক কদম পিছনের দিকে পিছিয়ে যায়। পরক্ষণেই কনক অত্যন্ত রাগ আর বি*র*ক্তি নিয়ে বললো….

—“ছোট*লোকের বা*চ্চা…চোখ কি বউয়ের আঁচলের নিচে রেখে এখানে কাজ করতে এসেছিস নাকি যে চলার সময় সামনের দিকে খেয়াল করিস না ধা*ক্কা মে*রে দিস!”

সুজন দ্রুততার সাথে মেঝে থেকে উঠে কনকের সামনে মাথা নত করে দাড়িয়ে অনুনয়ের স্বরে বললো…

—“স্যার..আমার অনেক বড় ভু*ল হয়ে গিয়েছে। আমি ক্ষ*মা চাইছি আমার ভু*লের জন্য। আমায় মাফ করে দিন স্যার। আর কখনও এমন ভু*ল হবে না।”

—“ভু*ল! কিসের ভু*ল হ্যা! তোরা ছোট*লোকেরা বা*চ্চা*রা গ্রাম থেকে শহরে আসিস কাজের জন্য। আর কাজ পাওয়া মাত্র তোরা দা*য় সারা হয়ে পড়িস। নিজেদর কাজ তো সঠিক ভাবে সম্পন্ন করিস না আবার যাদের টাকায় পেট চা*লা*স তাঁদেরই শারিরীক ভাবে আ*ঘা*ত করিস! তোকে এক্ষুণি কাজ থেকে ব*হি*ষ্কার করে দেওয়ার ব্যবস্থা করছি আমি।”

এই বলে কনক সমস্ত সার্ভেন্টদের দায়িত্ব থাকা প্রধাণ সার্ভেন্ট কেরামত আলীকে ডাকতে শুরু করে….

—“কেরামত…এই কেরামত…কোথায় গিয়ে ম*রে*ছি*স রে….কেরামততত!”

কনকের উচ্চস্বরে ডাকায় মধ্যবয়সের কেরামত তার জন্য বরাদ্দ করা রুম থেকে দ্রুত পায়ে বেড়িয়ে ড্রয়িং প্লেসে কনকের সামনে এসে দাঁড়ায়। কনকের এমন চেঁচামেচিতে দোতলায় নিজেদের রুম থেকে কুশল আর তরুনিমাও বেড়িয়ে এসে রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে নিচে ওদের উপর প্রশ্নসূচক দৃষ্টি নিক্ষেপ করে। কনক রাগী স্বরে কেরামতকে উদ্দেশ্য করে বললো….

—“এক ডাকে আসতে পারিস
না এতো ডাকতে হয় কেন? তুই নিজেই এতো দায়িত্বজ্ঞান*হীন এর মতো থাকিস তোর দায়িত্বে সব সার্ভেন্টরা থাকায় তারা তো আরো বেশি দায়িত্ব*জ্ঞান*হীনের মতো চলাচল করবেই এটা অ*স্বাভাবিক কিছু নয়।”

কেরামত কিছুটা অ*প*মান বোধ করে মাথা নিচু রেখেই বললো…
—“স্যার..মাত্র খাইতে বসছিলাম। আপনে ডাকছেন শুনতে পারছি পর তাড়াহুড়ো তে ওভাবেই খাবারের প্লেটে হাত ধুঁয়ে চলে আসছি। হাত ধুইতেই যে একটু সময় দেড়ি হয়ে গিয়েছে আসতে। আমি ক্ষমা চাইছি আমার ভু*লে*র জন্য স্যার।”

—“এক ছোট*লোকের বা*চ্চা চাকর নিজের বউয়ের আঁচলের নিচে চোখ রেখে চলাচল করে মালিকের শরীরে আ*ঘা*ত করে তো আরেক ছোট লোকের বা*চ্চা বড় চাকর নিজের খাওয়া নিয়ে এতো ব্যস্ত থাকে যে তাকে কয়েকবার ডাকার পর নিজের সামনে আনা যায়। আমি আমার বাড়িতে এমন দায়িত্বজ্ঞান*হীন চাকরদের আর এক সেকেন্ডের জন্যও স*হ্য করবো না। তুই আর তোর এই সার্ভেন্ট নিজেদের ব্যগ পত্র গুছিয়ে নিয়ে বেড়িয়ে যাবি এই মূহূর্তে চৌধুরী মেনশন থেকে। আর কখনও তোদের এই মুখ আমি দেখতে চাই না।”

কনকের এরূপ কথা শুনে কেরামত দ্রুততার সাথে কনকের পায়ের কাছে বসে অনুনয়ের স্বরে বললো…

—“স্যার আমাদের কাজ থেকে বের করে দিবেন না দয়াকরে। আমরা যে গরীব, অসহায় মানুষ। আমাদের এই কাজ থেকে হওয়া আয় দিয়েই বউ-বাচ্চাদের মুখে খাবার তুলে দিতে হয়। স্যার আমি কথা দিচ্ছি আজকে করা এই ভু*ল আর কখনও হবে না। আমি আমার কাজের জন্য আরো অনেক বেশি দায়িত্বশীল আর সচেতন হবো। স্যার আমাদের মাফ করে দেন।”

কনকের কান পর্যন্ত কেরামতের অনুনয়ের স্বরে ক্ষমা বাক্যগুলো পৌছালেও তা ওর হৃদয় স্পর্শ করতে পারলো না। কনক বললো…

—“শুধু পায়ের কাছে বসে ক্ষমা চাইলে তো মাফ পাবি না। তোদের দু’জনকেই আমার পা ধরে কান্না করতে করতে ক্ষমা চাইতে হবে। তোদের ২জনের চোখের পানি আমার পায়ের উপর পড়ে যদি পায়ের ময়লা পরিষ্কার হয়ে যায় তবেই তোরা মাফ পাবি তার আগে নয়।”

কনকের এরূপ কথা শুনে রাগে কুশল ওর হাত মুষ্টিবদ্ধ করে নিয়ে রেলিং এর উপর একবার ঘু*ষি প্রয়োগ করে সিড়ির দিকে অগ্রসর হতে শুরু করে। তরুনিমা কুশলকে এতো রাগতে দেখে একবার শুকনো ঢো*ক গি*লে গলা ভিজিয়ে নেয়। কেরামত সুজনের দিকে তাকিয়ে বললো…

—“ওখানে দাড়িয়ে আছিস কেন? এদিকে আয়..স্যারের পা ধরে ক্ষমা চা। কাজ বাঁচানোর ইচ্ছে নাই নাকি তোর।”

কেরামতের এরূপ কথা শুনে সুজনও কনকের দিকে অগ্রসর হতে নিলে সেইসময় ওদের পিছনে কুশল সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামতে নামতে বললো….

—“সুজন ওখানেই দাঁড়িয়ে যাও। আর কেরামত চাচা…আপনি উঠে দাঁড়ান। পা ধরে ক্ষ*মা চাওয়ার মতো বড় ভু*ল না আপনি করেছেন আর না সুজন করেছে।”

কেরামত ওভাবে থেকেই বললো…
—“বড় ভু*ল না করলে কি কনক স্যার আমাদের দু’জনকে কাজ থেকে ব*হি*ষ্কার করতে চাইতেন ছোট বাবা! আমরা গরীব, ছোটলোক, কর্মচারী মানুষ। ভু*ল করলে মালিকের পা ধরে ক্ষমা চাওয়া, দরকার পড়লে জিহ্বা দিয়ে চাইটা তাদের পায়ের ধু*লো প…….”

কেরামতকে পুরো কথা শেষ করতে না দিয়ে কুশল রাগ নিয়ে উচ্চস্বরে বললো….
—“আমি আপনাকে উঠতে বলছি কেরামত আলী।”

কেরামত আর সাহস পেলো না কনকের পায়ের কাছে বসে থাকার। দ্রুততার সাথে উঠে দাঁড়ালেন। কনক কুশলের দিকে রাগী দৃষ্টি নি*ক্ষে*প করে বললো….

—“এইসব গরীব, ছোট*লোকের বা*চ্চা*দের উপর সহানুভূতি দেখাতে দেখাতে তুই এখন ওদের মাথায় তুলে ফেলেছিস কুশল। একটা কথা মনে রাখিস পায়ের জুতো সবসময় পায়েই মানায় তা মাথায় তুলে মাথার তাজ বানানো যায় না কখনও। এসব গরীব, ছোট*লোকের বা*চ্চা*দের সবসময় পায়ের নিচে ফেলে দাবিয়েই রাখা উচিত।”

কুশল কনকের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে শান্ত স্বরে বললো….
—“বড় ভাইয়া…এই গরীব চাচা, চাচী, বোন, ভাইয়েরা আছে জন্যই আমি, তুমি, আমাদের পরিবারের সকলে সময়ের খাবার সময়ে খেতে পারছি, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন কাপড় পরিধান করতে পারছি, যখন তখন বাহারি রকমের নাস্তা খেতে পারছি, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন বাড়িতে থাকতে পারছি। ওরা গরীব হতে পারে। কিন্তু ওরা কেও বিনাশ্রমে আমাদের থেকে অর্থ নিচ্ছে না। আমাদের সকল ধরনের কাজকে সম্মান করা উচিত। ওরা সকলে যদি না থাকে, না কাজ করে তাহলে আমরা কেওই এতো আরাম-আয়েশের সাথে জীবন কাটাতে পারবো না। মানুষ মাত্রই ভু*ল হয়। আর এই ভু*ল যে তুমি বা আমি বা আমাদের মতো অর্থসম্পদ সম্পন্ন কোনো মানুষ করে না কখনও এমন তো নয়! মাঝেমাঝে চলাচল করতে গেলে আমরা তাড়াহুড়োয় কারোর সাথে ধা*ক্কা খাই না এমনও তো না। সুজন তো তোমায় ইচ্ছেকৃত ধা*ক্কা দেয় নি। ও ভু*ল করেছে আর নিজ থেকে তার জন্য ক্ষমাও চেয়েছে। এই ছোট্ট কারণে তুমি ওকে কাজ থেকে বের করে দিতে চাও কি করে? যদি এসব এসব ছোট ভু*লকে অযথাই বিশাল ভাবে ধরে আমরা কাওকে অ*প্রাপ্য জনক শা*স্তি দেই তাহলে আমাদের উপরে যিনি আছেন তার কাছে কিন্তু আমরা ক্ষ*মা পাবো না। জা*হা*ন্না*মের আ*গু*নে ঝা*ঝ*ড়া পো*ড়া হওয়া আমাদের জন্য ফরজ হয়ে যাবে। আর কেরামত চাচা! উনি তো দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে এ বাড়িতে নিজের শ্রম দিয়ে যাচ্ছেন। কখনও আমাদের পিঠ-পিছনে ছুঁ*ড়ি চা*লিয়ে আমাদের সাথে বিশ্বাস*ঘা*ত*কতা করেন নি। কতো কতো সুযোগ ছিলো ওনার কিন্তু উনি তা কাজে লাগান নি। নিজের সততা ঠিকই বজায় রেখে চলে এসেছেন। এইযে একটু আগে বললেন তুমি ডেকেছো তা শোনামাত্র সবে খেতে বসা খাবারের প্লেটে সম্পূর্ণ খাবার ওভাবে রেখেই তাতে হাত ধুয়ে দ্রুত চলে এসেছেন। এটা শোনার পরও কি করে তোমার মনে হলো তিনি তার দায়িত্ব নিয়ে কাজ নিয়ে অ*সচেতন! একটাবার মাথা ঠান্ডা করে চিন্তা করে দেখো ওরা গরীব বলে ওদের সাথে যা*চ্ছে তাই আচারণ করার কোনো অ*ধি*কার কিন্তু আমাদের নেই। ওরাা পরিশ্রম করে তার বিনিময়েই পারিশ্রমিক পায়। তাই ওরা সকলেই সঠিক সম্মান পাওয়ার সম্পূর্ণ যোগ্যতা ও অধিকার রাখে। সেই অধিকার থেকে আমরা ওদের ব*ন্ঞ্চি*ত করতে পারি না।”

কুশলের এরূপ কথাগুলো শুনে কেরামত আলীর চোখে পানি চলে এসেছে। সুজন আর তরু দু’জনেই মুগ্ধ নয়নে কুশলের দিকে তাকিয়ে আছে আর ওর বলা প্রতিটি শব্দ ওরা শুনেছে। সুজনের থেকে বেশ কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে আছেন রিজভী। কুশলের কথাগুলো যে ওনার একটু পছন্দ হয় নি তা ওনার মুখে ফুটে উঠা বি*র*ক্তি*র ছাপ দেখেই বোঝা সম্ভব। কনকের রাগ সম্পূর্ণ ভাবে দ*মে গিয়েছে। কুশলের কথাগুলো ওর উপর ভালোই প্রভাব ফেলেছে। কিয়ৎক্ষণ পর কনক মুখ দিয়ে আর কোনো শব্দ উচ্চারণ না করে নিজের রুমের দিকে অগ্রসর হতে শুরু করে। কুশল কনকের যাওয়ার দিকে একনজর দেখে হালকা ভাবে হাসি দেয়। কেরামত কুশলের কাছে এসে ওর পা ধরতে ঝু*ক*তে নিলে কুশল দু’হাতে তার দু’বাহু ধরে তাকে থামিয়ে দিয়ে বললেন….

—“আরে চাচা..কি করছেন টা কি আপনি! আপনি আমার গুরুজন। আমার বাবার বয়সী আপনি। এভাবে কারোর সামনে ঝুঁ*ক*বেন না আর ভু*লে ও কারোর পা স্পর্শ করে সালাম কিনবা ক্ষমা চাইবেন না। যদি কারোর সামনে নত হতে হয় তবে শুধু আল্লাহ তায়ালার সামনেই নত হবেন। নিজের করা সব ধরণের ভু*লের জন্য কেবল তার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করবেন। যদি মানবকূলের কাওকে তার ভু*লে*র জন্য ক্ষমা করার ক্ষমতা কারোর থাকে তবে সেটা একমাত্র আল্লাহ তায়ালার আছে। বুঝেছেন!”

কেরামত আলী নিজের চোখের পানি আর আটকে রাখতে পারলেন না। কুশলের দু’হাত নিজের দু‘হাতের মাঝে নিয়ে তা কপালে ঠেকিয়ে বললেন….

—“আল্লাহ তায়ালা তোমাকে দীর্ঘ আয়ু দান করুক ছোট বাবা। সারাজীবন এমনই থেকো তুমি। এমনই থেকো।”

তরু আর সুজনের মুখে হাসির রেখা ফুটে উঠে। রিজভী চরম বি*র*ক্তি নিয়ে আবারও নিজের রুমে চলে যান।

#চলবে ইনশাআল্লাহ…….

#হৃদকোঠোরে_রেখেছি_তোমায়🖤(৭৫ পর্বের ৫ম অংশ)
#Maisha_Jannat_Nura (লেখিকা)

(১৯৬)
কনক ড্রয়িং প্লেস থেকে সোজা নিজের রুমে প্রবেশ করে। বিছানায় বসে অনন্যা ইউটিউবে উলের কাঁ*টা ও উল দিয়ে কিভাবে ছোট বাচ্চাদের সুয়েটার তৈরি করা যায় তার টিউটোরিয়াল ভিডিও দেখছিলো। সেইসময় কনককে রুমে প্রবেশ করতে দেখে অনন্যা হাসিমুখে সেই সম্পর্কে ওকে কিছু বলতে নিবে কিন্তু কনক অনন্যাকে সেই সুযোগ না দিয়ে দ্রুততার সাথে ওয়াশরুমে প্রবেশ করে বেসিং সামনে দাঁড়িয়ে চোখে-মুখে পানি ছিঁ*টা দিয়ে বেসিং এর দু’পাশে দু’হাত রেখে আয়নায় পড়া নিজের প্রতিচ্ছবির উপর দৃষ্টি স্থির করে। কনকের কানে এখনও কুশলের বলা প্রতিটি শব্দ বাজছে। কনক জোরে জোরে নিঃশ্বাস ফেলতে শুরু করে। ওর প্রতিচ্ছবি যেনো দু’ধরণের রূপ ধারণ করেছে ওর সামনে। একজন ওকে চিৎকার করে বলছে….

—“দিলো তো একেবারে মুখের উপর ঝাঁ*মা*টা ঘ*ষে? অতিরিক্ত অ*হং*কার আর ক্ষমতার দা*প*ট দেখাতে গিয়েছিলি নিজের থেকে কম ক্ষ*ম*তা সম্পন্ন ব্যক্তিদের উপর তার জন্য একদম মুখ ব*ন্ধ করে ফেলার মতো জবাব দিয়ে দিয়েছে তোর ছোট ভাই। নিজের ছোট ভাইয়ের কথাগুলোর ভালো প্রভাব ফেলা নিজের মনের উপর। কারণ অ*হং*কার যে করে তার প*ত*ন ও নিশ্চিত হয়। অ*হং*কার ব*র্জ*ন কর। পৃথিবীর সব শ্রেণির মানুষকে তাদের প্রাপ্য সম্মান দে সবসময়। সম্মান দিলে সম্মান পাবি। ছোট হবি না।”

আর অপরজন ঠিক তার বিপরীত সুরে কথা বলছে। কনক পরক্ষণেই দু’হাতে নিজের মাথার দু’পাশ চেপে ধরে। সেইসময় কাঁধের উপর কারোর হাত পড়তেই কনক চমকে উঠে পিছন ফিরে দাঁড়ায়। অনন্যাও কনকের এমন কাজে কিছুটা ভ*য় পেলেও পরক্ষণেই নিজেকে সামলে নিয়ে বললো….

—“কনক..কি হয়েছে তোমার? এতো অস্থির লাগছে কেনো তোমায়? কোনো কি স*ম*স্যা হয়েছে? আর এভাবে হাত-মুখ ভিজিয়ে দাঁড়িয়ে আছো কেনো? শীত পড়ে গিয়েছে ঠান্ডা লেগে যাবে তো। কি যে করো না তুমি! নিজের প্রতি একটু যদি যত্নশীল হতে।”

এই বলে অনন্যা কনকের হাতের বাম পার্শে হ্য*ঙ্গা*রে থাকা টাওয়ালটা হাতে নিয়ে কনকের মুখ ও হাতে লেগে থাকা পানি গুলো খুব যত্ন সহকারে মুছে দেয়। অতঃপর টাওয়ালটা পূর্বের স্থানে রেখে কনকের হাত ধরে ওকে নিয়ে ওয়াশরুমের বাহিরে বেড়িয়ে বিছানার কাছে এসে মুখোমুখি হয়ে বসে পরে। কনক এখনও শান্ত, স্তব্ধ হয়ে আছে। অনন্যা কনকের হাতের উপর হাত রেখে আবারও বললো….

—“কি হয়েছে তোমার কনক? তোমাকে এমন উ*দা*সী*ন-ই বা দেখাচ্ছে কেনো? আমাকে সবটা শেয়ার করো।”

কনক অনন্যার চোখের দিকে তাকিয়ে শান্ত স্বরে বললো…
—“আচ্ছা অনন্যা..যদি হুট করে আমার কিছু হয়ে যায় তখন আমাকে ছাড়া তুমি কি ভালো থাকতে পারবে? আমার কথা মনে পড়বে না তোমার?”

কনকের এমন কথা শুনে অনন্যা একবার আলতো ভাবে ঢোক গি*লে নিয়ে নিজেকে স্বাভাবিক রেখেই কনকের একটা হাত নিজের শাড়ির নিচে উন্মুক্ত অনেকটা ফুলে উঠা পেটের উপর রেখে বললো….

—“এই যে এখানে একটা নিষ্পাপ প্রাণ একটু একটু বেড়ে উঠছে সে তো আমাদের দু’জনের ভালোবাসার চিহ্ন বলো! আমাদের দু’জনকে রেখে কোথায় যাবে তুমি! আমাদের একলা করে চলে যাওয়ার কোনো অধিকার তোমার নেই। এই নিষ্পাপ প্রাণটার অস্তিত্ব যেমন আমি একা তৈরি করি নি তাই ওকে এই পৃথিবীতে নিয়ে আসা যোগ্য মানুষ হিসেবে তৈরি করা দায়িত্ব তোমারও। এতো বড় দায়িত্ব থেকে মুখ ফিরিয়ে চলে যেতে তো পারবে না তুমি কোথাও। বুঝলে মহাশয়?”

অনন্যার কথা বলা শেষ হতে না হতেই পেটের ভিতর থাকা ছোট্ট প্রাণটি নড়ে উঠে। যা অনন্যার সাথে কনকও অনুভব করতে পারে এই প্রথম। কনক হাসিমুখে বললো….

—“এই ও কি*ক মা*র*লো তাই না! আমি অনুভব করলাম ও কি*ক মে*রে*ছে।”

অনন্যা হাসিমুখে মাথা উপরনিচ নাড়িয়ে ‘হ্যা’ সূচক জবাব দিয়ে বললো….

—“ও জানান দিলো যে ও ওর বাবাকে অনেক ভালোবাসে। ওকে আর ওর মাকে ছেড়ে ওর বাবা যেনো কখনও কোথাও চলে না যায়। সবসময় সবরকম পরিস্থিতি ওদের পাশে যেনো ওর বাবা থাকেন এটা ওও চায়।”

অনন্যা এরূপ কথা শুনে কনক হাসিমুখে অনন্যাকে জড়িয়ে ধরে বললো….
—“আমি তোমাদের ছেড়ে কখনও কোথাও যা….!”

কনক পুরো কথা শেষ করার পূর্বেই ওর ফোন বেজে উঠে। কনক অনন্যাকে ছেড়ে দিয়ে বিছানা থেকে নেমে প্যন্টের পকেট থেকে ফোনটা বের করতেই দেখে একটা আননোন নাম্বার থেকে কল এসেছে। কনক ভ্রু কিন্ঞ্চিত কুঁ*চ*কে নিয়ে কলটা রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে কোনো পুরুষের মোটা কন্ঠস্বরে বলা কথাগুলো ভেসে আসে….

—“কনক স্যার…কনক স্যার…আমি আপনাদের নারায়নগঞ্জের সাইডের নতুন খোলা ক্যমিকেল তৈরির ফ্যক্টোরির একজন সহকর্মী বলছিলাম। স্যার অনেক বড় স*র্ব*নাশ হয়ে গিয়েছে।”

—“কি হয়েছে?”

—“স্যার..কয়েকদিন ধরেই গরম পানির লাইন বন্ধ করার সুইচ টা কাজ করতে ঝা*মে*লা করছিলো। ওভাবেই চালাচ্ছিলাম কিন্তু আজ আর কাজ করছে না। আমরা গরম পানির লাইনটা কোনোভাবেই বন্ধ করতে পারছি না। আর এই পানির লাইন ঘন্টাখানেকের ভিতর বন্ধ করতে না পারলে এটা সরাসরি ক্যমিকেলের সাথে মিশে যেতে শুরু করবে। দ্রুত কোনো ব্যবস্থা গ্রহন না করলে ক্যমিকেল গুলো তখন অনেক উ*ত্ত*প্ত হয়ে ট্যংকি ফেঁ*টে যাবে। তখন ক্যমিকেল গুলো বি*ষা*ক্ত গ্যসে পরিণত হয়ে সারা শহরে ছড়িয়ে পড়বে। আমাদের আর করার কিছু থাকবে না। হাজার হাজার মানুষ, পশু-পাখির জীবনের বিষয় স্যার। আপনি যতো দ্রুত সম্ভব ফ্যক্টোরিতে চলে আসুন স্যার।”

কনক উত্তেজিত স্বরে বললো…..
—“হোয়াট? কি বলছেন টা কি আপনি! এতো বড় একটা কা*ন্ড ঘটেছে আর আপনারা আমাকে এতো লেইটে সে সম্পর্কে অবগত করছেন? আমি এক্ষুণি আসছি ফ্যক্টোরিতে। ফ্যক্টোরির মেইন কর্মচারীরা ব্যতিত বাকি যারা আছেন সবাইকে ফ্যক্টোরি থেকে বের করে নিজ নিজ বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করুন দ্রুত।”

এই বলে কনক কল কেটে দেয়। অনন্যা চি*ন্তি*ত স্বরে বললো…..
—“কি হয়েছে ফ্যক্টোরিতে কনক?”

কনক বেডসাইড টেবিলের ড্রয়ার থেকে নিজের জন্য বরাদ্দকৃত গাড়ির চাবি নিতে নিতে বললো….

—“অনেক বড় স*ম*স্যা হয়েছে। এখন সবটা বলার মতো সময় আমার নেই অনন্যা। নিজের আর আমাদের সন্তানের খেয়াল রেখো। চিন্তা করো না। প্রার্থনা করো যেনো সময়ের মধ্যেই সব স*ম*স্যা সমাধান করতে পারি।”

এই বলে কনক অনন্যাকে আর পা*ল্টা কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে দ্রুততার সাথে রুম থেকে বেড়িয়ে যায়। কনকের রুমের দুইটা রুম পরই রিজভী আর কামিনীর রুম। রিজভী দরজায় দাঁড়িয়ে কনককে দ্রুততার সাথে বেড়িয়ে যেতে দেখে বাঁ*কা হেসে ঘাড় ঘুরিয়ে বিছানায় বসারত কামিনীর দিকে তাকিয়ে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে বুঝায় তাদের পরিকল্পনা অনুযায়ীই কাজ হচ্ছে। পরক্ষণেই কামিনীর ঠোঁটেও পৈ*শা*চি*ক হাসির রেখা ফুটে উঠে।

কনক দ্রুততার সাথে বাসার ভিতর থেকে বেড়িয়ে পার্কিং সাইডে এসে নিজের গাড়িতে উঠে বসে গাড়ি স্টার্ট করে চৌধুরী মেনশনের মূল গেইট দিয়ে বেড়িয়ে যায়। গেইট থেকে কয়েকহাত দূরেই অন্য একটা ব্লাক কালার গাড়ির ড্রাইভিং সিটেই বসে ছিলো কুশল। কনককে যেতে দেখে কুশল সঙ্গে সঙ্গে গাড়ি স্টার্ট করে আর কনকের থেকে বেশ কিছুটা দূরত্ব বজায় রেখে ওকে অনুসরণ করতে শুরু করে সে। কনক তাড়াহুড়োর মাঝে থাকায় তা বুঝতে পারে না।

আধঘন্টা সময় নিয়ে ড্রাইভিং করে কনক ওদের নারায়ণগঞ্জের সাইডের নতুন ফ্যক্টোরির মূল গেইট দিয়ে ভিতরে প্রবেশ করে দ্রুততার সাথে গাড়ি থেকে নেমে ফ্যক্টোরির ভিতরে প্রবেশ করতেই কেও ওর মাথার পিছনে শক্ত কিছু দিয়ে স্ব*জোরে আ*ঘা*ত করে। সঙ্গে সঙ্গে কনক ‘আহহহহ’ বলে আ*র্ত*না*দ করে উঠে দু’হাতে মাথার পিছনের ক্ষ*ত স্থানটি চে*পে ধরে মেঝের উপর মুখ থু*ব*রে পড়ে যায়। পরক্ষণেই কনক শব্দ করে একবার নিঃশ্বাস ফেলে সেন্স লে*স হয়ে যায়। কনকের পায়ের কাছে লোহার রড হাতে দাঁড়িয়ে আছে কম বয়সের একজন পুরুষ লোক। কনক সেন্স লে*স হয়ে গিয়েছে বুঝতে পেরে লোকটি তার পকেট থেকে ফোন বের করে রিজভীর নাম্বারে কল করে। ওপাশ থেকে রিজভী কল রিসিভ করতেই লোকটি তাঁকে কনকের বর্তমান অবস্থার কথা জানিয়ে দেয়। ওপাশ থেকে রিজভী হাসিমুখে বললো….….

—“বাহ…খুব ভালো করেছো লিমন। এবার বাকি কাজটুকুও দ্রুত সম্পন্ন করে ফ্যক্টোরি থেকে বেড়িয়ে যাও।”

—“ঠিক আছে স্যার।”

অতঃপর রিজভী কল কে*টে দেয়। রিজভীর পাশেই কামিনী বিছানায় বসে রিজভীর উপর দৃষ্টি স্থির করে রেখেছে। রিজভী কামিনীর গাল আলতো ভাবে টেনে দিয়ে বললো….

—“আর মাত্র কিছুসময়ের অপেক্ষা। তারপর কনক চৌধুরীর অস্তিত্ত্ব এই পৃথিবীর বুক থেকে চিরতরের জন্য মুছে যাবে। কয়েকঘন্টা পর সায়মন আর সাবরিনা চৌধুরীর আ*র্ত*না*দ যখন আমাদের কানে এসে পড়বে তখন আমাদের ছেলের আ*ত্মা শান্তি পাবে। আমাদের মনের ভিতর সৃষ্টি হওয়া অ*শান্তি, ক*ষ্ট গুলো অনেকটা লা*ঘ*ব হয়ে যাবে।”

রিজভীর কথাগুলো শুনে কামিনীর ঠোঁটে পৈ*শা*চি*ক হাসির রেখা ফুটে উঠে।
.
.
.
রিজভীর ঠিক করা লিমন নামের লোকটি কনকের মাথার কাছে এসে দাঁড়িয়ে ওর দু’হাত শক্ত ভাবে ধরে ওভাবেই টানতে টানতে ভিতরে অন্য একটা রুমে এনে মাঝবরাবর মেঝের উপর রাখা লাল কার্পেটের উপরে এনে শুইয়ে দেয়। এরপর রুমের একপার্শের কর্ণার থেকে কেরোসিন-পেট্রোল আর বা*রু*দের গুড়োর তিনটে ট্যংকি নিয়ে আবারও কনকের পায়ের কাছে দাঁড়িয়ে পরে। অতঃপর কনকের পুরো শরীরের উপর আর ওর চারপার্শে লাল কার্পেটের উপর একে একে কেরোসিন-পেট্রোল ও বা*রু*দের গুড়ো দিয়ে দেয়। এরপর কনকের পায়ের কাছ থেকে সোজা ভাবে কেরোসিন-পেট্রোল ও বারুদের গুড়ো একে একে দরজার বাহির পর্যন্ত নিয়ে আসে। অতঃপর লিমন পুরো বিষয়টা নিজের ফোনে ভিডিও রেকর্ড করে রুমটির দরজা বাহির থেকে লাগিয়ে দিয়ে ভিডিওটি রিজভীর ফোনে সেন্ট করে। কিছুসময় পর রিজভীর রিপ্লাই আসে…..

—“আ*গুন ধরিয়ে দাও। জীবন্ত অবস্থায় জ্ব*লে-পু*ড়ে খাঁ*ক হয়ে যাবে। ওর লা*শ দেখে যেনো ভ*য়ে সবার শরীরের লোম দাঁড়িয়ে যায়।”

লিমন প্রতিত্তুরে লিখে….
—“তেমনটাই হবে স্যার।”

লিমন ওর ফোনটা প্যন্টের পকেটে রেখে দিয়ে শার্টের পকেট থেকে দেশলাই কাঠি বের করে একটা শুকনো কাগজে আ*গু*ন লাগিয়ে দরজার বাহির থাকা বা*রু*দ-কেরোসিন-পেট্রোলের সংমিশ্রণের উপর রেখে দেয়। সঙ্গে সঙ্গে সেখানে আ*গু*ন লেগে যায়। আর সেই আ*গু*ন ধরতে ধরতে দরজার নিচ দিয়ে রুমের ভিতরে চলে যায়। লিমন দ্রুততার সাথে ফ্যক্টোরি থেকে বেড়িয়ে যায়।

#চলবে ইনশাআল্লাহ………