#হৃদয়জুড়ে_তুমি
#পর্বঃ৪
#লেখিকাঃদিশা_মনি
সিমা ডাইনিং টেবিলে অপেক্ষা করছে সবার জন্য। আজ বৌভাত উপলক্ষে সবার জন্য নিজের হাতে বিভিন্ন রকম রান্না করেছে। এখন তার উদ্দ্যেশ্য সবাইকে খাওয়ানো। একটু পরেই মান্নাত বেগম, ইনায়া, ইহান, রায়হান খান সবাই এসে খেতে বসেছে।
সিমা সবার সামনে তার রান্না করা খাবার নিয়ে আসলে মান্নাত বেগম মুখ বিকৃত করে বলেন,
‘এসব রান্না কি তুমি করেছ?’
সিমা মুচকি হেসে বলে,
‘হ্যা আমিই করেছি। কেন আমার হাতের রান্না কি খাওয়া যাবে না নাকি?’
সাথে সাথেই মান্নাত বেগম, ইনায়া ও ইহান উঠে যায় খাবার টেবিল। শুধুমাত্র রায়হান খানই বসে থাকেন। ইনায়া মুখ ভেংচি দিয়ে বলে,
‘তুমি ভাবলে কি করে তোমার হাতের রান্না করা খাবার আমরা খাবো। আমরা কেউ এই খাবার খাবো না।’
সিমা কিছু বলতে যাবে তার আগেই রায়হান খান বলেন,
‘রোজ রোজ এত অশান্তি আমার ভালো লাগে না। সিমা তোমার কাউকে জোরাজোরি করতে হবে না মা। তুমি আমাকে খেতে দাও আর তুমি নিজেও খেতে বসো। খাবার যদি বেচে যায় পথশিশুদের খাওয়াবো তাও লাভ। তবুও এদের দিতে হবে না।’
মান্নাত বেগম গলা খাকারি দিয়ে বলেন,
‘তুমি আমাদের কে পথশিশুদের সাথে তুলনা করছ! একেই নিজের ছেলের জীবন নষ্ট করেছ এই মেয়ের সাথে বিয়ে দিয়ে তার উপরে,,, ‘
‘আমি কারো জীবন নষ্ট করিনি মান্নাত৷ তুমি নিজের ছেলেকে ভুল বোঝাচ্ছ। যাইহোক এখন এই প্রসঙ্গে কথা বলতে চাইনা। তোমার খেতে হলে খাও আর নাহলে যাও। তোমাদের সেধে সেধে খেতে বসানোর শখ সিমার নেই।’
সিমাকে রায়হান খান খেতে বসতে বলেন। সিমাও খেতে বসে। দুজনে মিলে খাওয়াও শুরু করে। ইহান বলে,
‘আম্মু তুমি চিন্তা করো না। আমি এক্ষুনি খাবার অর্ডার করছি। এই মেয়ের হাতের খাবার তোমাদের কাউকে খেতে হবে না।’
মান্নাত বেগম নিজের ছেলের কথা শুনে মৃদু হেসে বলেন,
‘হ্যা ইহান তুই তাই কর। আমার তো বাইরের খাবার খুব ভালো লাগে। এই মেয়ের হাতের খাবার খাওয়ার থেকে বাইরের খাবার খাবো সেটাই ভালো। বিরিয়ানি অর্ডার করিস তো। আমার তো বিরিয়ানি খুব ভালো লাগে।’
সিমার মাথায় একটা বুদ্ধি আসে। সে রায়হান খানের সাথে একটি বিষয় আলোচনা করতে থাকে। বলে,
‘শুনলাম আজকাল একটা জিনিসের বেশ চর্চা চলছে। কোন একটা রেস্টুরেন্টে নাকি খাসির মাংসের নাম করে কুকুর খাওয়ানো হচ্ছে। ‘
রায়হান খান বুঝতে পারেন সিমার উদ্দেশ্য। তাই তিনিও তাল মিলিয়ে বলেন,
‘হুম এটা আর নতুন কি। আজকাল তো এমনই চলে। কুকুর, বিড়ালের মাংস খাওয়ানো হচ্ছে এসব রেস্টুরেন্টে।’
এসব কথা শুনে মান্নাত বেগমের বাইরের খাবার খাওয়ার শখ মিটে যায়। তিনি বলেন,
‘বাইরের খাবার খেতে হবে না। তোরা সবাই এখানে খেতে বস। একদিন ওর হাতে রান্না খেলে কোন অসুবিধা হবে না।’
অগত্যা সবাই খেতে বসে। সিমা বিজয়ীর হাসি হাসে।
৭.
রাতে ডিনারের আয়োজন করা হয়। রাতের রান্নাও করেছে সিমা। ইহান সবেমাত্র অফিসের সব কাজ শেষ করে বাড়িতে ফিরেছে। সিমা ইহানকে উদ্দ্যেশ্য করে বলে,
‘চলুন নিচে খেতে চলুন।’
‘রান্না কি তুমি করেছ?’
‘হুম।’
‘তাহলে আমি খাবো না।’
সিমা এবার রেগে যায়। নিজে দৌড়ে নিচে যায়। অতঃপর খাবার বেড়ে নিয়ে আসে। ইহানের মুখের সামনে খাবার ধরে বলে,
‘বেশি কথা না বলে চুপচাপ খেয়ে নিন। নাহলে কিন্তু খুব খারাপ হয়ে যাবে।’
ইহান খাবারের প্লেট ফেলে দিতে চাইলে সিমা বলে,
‘এই ভুলটা করবেন না।’
ইহান কিছু বুঝে ওঠার আগেই সিমা নিজের হাতে জোরপূর্বক খাইয়ে দেয় তাকে। ইহান শুধু অবাক হয়ে ছিল। সিমা ভাতের প্লেটটা ইহানের হাতে তুলে দিয়ে বলে,
‘এখন ভালো বাচ্চার মতো খেয়ে নিন। নাহলে আমি আবার খাইয়ে দেব।’
ইহান বাধ্য ছেলের মতো নিজের হাত দিয়ে খেতে থাকে।
ইহানের খাওয়া শেষ হলে সিমা নিচে যায় বাড়ির অন্য সদস্যদের খাবারের ব্যবস্থা করার জন্য। রায়হান খানের সাথে বাকিরাও খেতে বসেছে দেখে অনেকটাই আশ্বস্ত হয় সিমা। রায়হান খানকে খাবার দিয়ে মান্নাত বেগমের প্লেটে খাবার দিতে যাবে তখনই মান্নাত বলে ওঠেন,
‘তোমাকে খাবার দিতে হবে না। আমাদের খাবার আসছে।’
সিমা কিছু বুঝতে পারে না এই কথার মানে। ইনায়া আচমকা বলে ওঠে,
‘নেহা আপু চলে এসেছে আম্মু।’
মান্নাত বেগম খুশি মুখ করে নেহার দিকে তাকান। নেহা হলো মান্নাত বেগমের বোনের মেয়ে। এই নেহার সাথেই মান্নাত বেগম তার ছেলে ইহানের বিয়ে দিতে চেয়েছিলেন।
মান্নাত বেগম বলেন,
‘আয় নেহা আমার পাশে বস।’
নেহা এসে মান্নাত বেগমের পাশে বসে। তার হাতে একটি টিফিন বক্স ছিল। সেটা ডাইনিং টেবিলে রেখে বলে,
‘আম্মু বিরিয়ানি রান্না করে পাঠিয়েছে। তুমি নাকি খেতে চেয়েছ।’
‘হুম দে। এই তো আমাদের খাবার এসে গেছে।’
নেহা রায়হান খানের সাথে কুশল বিনিময় করে বলে,
‘আআসসালামু আলাইকুম খালু। কেমন আছেন আপনি?’
‘আলহামদুলিল্লাহ৷ ভালো। তোমরা সবাই কেমন আছ?’
‘জ্বি আলহামদুলিল্লাহ। ‘
রায়হান খান সিমার দিকে ইশারা করে বলে,
‘তোমরা তো কেউ ইহানের বিয়েতে আসলে না। যাইহোক এই হলো সিমা। ইহানের বউ, আমার পুত্রবধূ।’
নেহা সিমার সাথে কুশল বিনিময় করে বলে,
‘কেমন আছেন ভাবি? আপনার সাথে মনে হয় আমার পরিচয় নেই। আমি নেহা। আমিও আপনার একপ্রকার ননদ। ‘
সিমা মৃদু হেসে নেহার সাথে কিছু কথা বলে।
৮.
সিমা রুমে এসেই ওয়াশরুমে চলে গেছিল ফ্রেশ হতে। ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে নেহাকে রুমে দেখে চমকে যায় সিমা। নেহাকে স্বাভাবিক লাগছিল। সিমাকে দেখে নেহা বলে,
‘আপনার সাথে পরিচিত হতে আসলাম।’
দু’জন মিলে অনেকক্ষণ গল্প করে। অতঃপর নেহা সিমাকে এমন কিছু কথা বলে যা তার ধারণার বাইরে ছিল। নেহা বলে,
‘আপনি জানেন কিনা জানিনা ভাবি, আপনার শাশুড়ী মানে আমার খালা ইহান ভাইয়ার সাথে আমার বিয়ে দিতে চেয়েছিল। আমার পরিবার থেকেও ইতিবাচক সাড়া ছিল। কিন্তু খালু এরমাঝে আপনার সাথে ইহান ভাইয়ার বিয়ে ঠিক করায় এটা নিয়ে অনেক ঝামেলা হয় আমাদের মাঝে৷ খালার সাথে আমার মায়েরও অনেক কথা কাটাকাটি হয়। এই নিয়ে অনেক কিছু হয়ে গেছে। এখন যখন বিয়ের পর ইহান ভাইয়া বিয়েটা মানছে না তখন খালা আমার সাথে আবার ইহান ভাইয়ার বিয়ে দিতে চাইছে। আমার মায়েরও সেটাই ইচ্ছে।’
সিমার মোটেই ভালো লাগে না কথাগুলো শুনে। তবুও সে বলে,
‘আপনার কি ইচ্ছে নেহা? আপনিও কি চান ইহানকে বিয়ে করতে?’
নেহা প্রায় হেসেই দেয় এহেন কথা শুনে। হাসি থামিয়ে বলে,
‘একদম না। আমার তো অন্য কাউকে পছন্দ। মানে আমার একজন বয়ফ্রেন্ড আছে। আমি তো মাঝখানে খুব চিন্তায় ছিলাম যে আম্মু না আবার ইহান ভাইয়ার সাথে আমার বিয়ে দেয়। তাই তো তোমার সাথে ইহান ভাইয়ার বিয়ে হওয়ায় সবথেকে বেশি খুশি আমিই হয়েছি।’
সিমা নিশ্চিত হয়। নেহাকে নিয়ে তাহলে আর কোন অসুবিধা নেই। নেহা সিমার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে রুম থেকে চলে যায়।
চলবে ইনশাআল্লাহ ✨