হৃদয়স্পর্শী মায়াবিনী পর্ব-০১

0
164

#হৃদয়স্পর্শী_মায়াবিনী
#নুসাইবা_ইসলাম_হুর (মিমি)
#সূচনা_পর্ব

প্রবল বেগে দখিনা হাওয়া বইছে শহর জুড়ে। এইতো কিছুক্ষণ আগেও তীব্র রোদের ভাপসা গরমে সবাই পিপাসার্ত কাকের মতো এদিক ওদিক ছুটে চলেছিলো একটু ঠান্ডা শীতল ছায়ার জন্য। এর ভিতরেই হুট করে আকাশ ঘনকালো হয়ে দখিয়া হাওয়া ছড়িয়ে পড়লো তীব্র বেগে। বাতাসের বেগে শহরের ধুলোবালি উড়ে চারপাশ ধোয়াসে হয়ে গেলো যেনো তাকিয়ে থাকা দুষ্কর হয়ে পড়েছে।

হঠাৎ এমন আবহাওয়া পরিবর্তন হওয়াতে তীব্র বিরক্ত নিয়ে ফারিসতা চোখের উপর দুই হাত দিয়ে রিক্সা চালককে তাড়া দিয়ে বলল,

মামা একটু দ্রুত চালান….

রিক্সা চালক সামনে দৃষ্টি রেখেই বলল,

ধুলার জন্য চোহে কিছু দেহা যাইতাছে না এহন জোরে রিক্সা চালাইলে দূর্ঘটনা ঘইটা যাইতে পারে।

রিক্সাওয়ালার কথা শুনে বিরক্তিতে কুচকে যাওয়া চোখ আরে কুঁচকে ফেলল ফারিসতা। জানে এখন কিছু বলে লাভ হবে না তাই একরাশ বিরক্ত নিয়ে চোখে হাত দিয়ে বসে রইলো। কয়েক মিনিট পর ফারিসতা খেয়াল করলো রিক্সা থেমে গেছে। এতো তাড়াতাড়ি তো ওর ঠিকানায় পৌঁছানো সম্ভব না তাহলে রিক্সা কেনো থামলো ভাবতে ফারিসতা চোখ থেকে হাত সরিয়ে পিটপিট করে তাকিয়ে বলল,

কি হলো মামা রিক্সা থামালেন কেনো?

রিক্সাওয়ালা সামনে তাকিয়ে ভয় জড়ানো কণ্ঠে বলল,

আমি আর সামনে যাইতে পারুম না আমনে এইখানে নামেন।

রিক্সাওয়ালার কথা শুনে ফারিসতার মাথায় যেনো বাজ পড়লো। দাঁত কটমট করে রিক্সা থেকে নেমে রিক্সাওয়ালার দিকে তাকিয়ে বলল,

ফাজলামো শুরু করেছেন? মাঝরাস্তায় এসে বলছেন আর যেতে পারবেন না। যেতে না পারলে রিক্সায় কেনো উঠিয়েছেন? এখন এই মাঝ রাস্তায় আমি রিক্সা পাবো কোথায়?

রিক্সাওয়ালা ভীত চোখে সামনে তাকিয়ে বলল, আমারে মাফ করবেন আম্মা এহন আর সামনে যাওয়া সম্ভব না। এহন সামনে গেলে আমার রিক্সা হারাইতে হইবো। এই রিক্সা দিয়া আমার পেট চলে। এহন রিক্সা হারাইলে বউ বাচ্চা নিয়া না খাইয়া ম/র/তে হইবো।

রিক্সাওয়ালার কথায় ফারিসতা ভ্রু কুঁচকে বলল,

রিক্সা হারাতে হবে মানে?

রিক্সাওয়ালা সামনে তাকিয়ে ভয়ে ভয়ে বলল, সামনে তাজ ভাইরা আছে। মনে হয় কাউরে মারতাছে, এহন ওই জায়গা দিয়া গেলে রাগের মাথায় তাজ ভাইর সাঙ্গপাঙ্গরা আমার রিক্সা ভাইঙ্গা ফালাইবো।

রিক্সাওয়ালার কথায় ফারিসতা সামনে তাকাতে দেখতে পেলো কিছুটা দূরে অনেকগুলো ছেলেরা মিলে কয়েকটা ছেলেকে বেধড়ে হকিস্টিক দিয়ে পিটাচ্ছে তা দেখে কিছুটা চমকালো ফারিসতা। ফারিসতা আশপাশে খেয়াল করে দেখলো কেনো গাড়ি ওই দিকে আর যাচ্ছে না সব গাড়ি উল্টো ঘুরে অন্য পথে চলে যাচ্ছে তা দেখে ফারিসতা ভ্রু কুঁচকে বলল,

তাজ কে? ওনাকে সবাই এভাবে ভয় পাচ্ছেন কেনো?

ফারিসতার কথায় রিক্সাওয়ালা যেনো আকাশ থেকে পড়লো। অবিশ্বাস্য চোখে ফারিসতার দিকে তাকিয়ে বলল,

তাজ ভাইরে চেনেন না? এলাকায় নতুন?

ফারিসতা সম্মতি দিয়ে বলল, জ্বি আজ এই নতুন এসেছি এই এলাকায়।

এই জন্যই চেনেন না। এই এলাকার ক্ষমতাবান লোক একজন উনি। মাথা সব সময় আগুন হইয়া থাহে কহন কি করে নিজেও জানেনা। সবাই তারে বাঘের মতো ডরায়। এই এলাকায় যেহেতু আইছেন আস্তে ধীরে সব জানতে পারবেন। আমি আর এইহানে থাকতে পারতাম না এই বলে ফারিসতাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে রিক্সাওয়ালা গাড়ি ঘুরিয়ে এক টানে চলে গেলো।

ফারিসতা হতবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো রিক্সাওয়ালার যাওয়ার দিকে। কিছুক্ষণ পর ঘুরে সামনে তাকাতে দেখতে পেলো ছেলেপেলেগুলো এখনো মারামারি করে যাচ্ছে। ফারিসতা ভয়ে ঢোক গিললো। এখন এই মাঝরাস্তায় দাঁড়িয়ে কি করবে বুঝে উঠতে পারলো না। এলাকায় নতুন শুধু আরেকবার এসেছিলো মায়ের সাথে কিছুদিন আগে বাসা দেখতে। তখন এই রাস্তা দিয়েই গিয়েছিলো যার জন্য ফারিসতার জানা নেই এই নতুন এলাকায় অন্য কোনো রাস্তা দিয়ে যাওয়া যায়।

ফারিসতা এবার বিপাকে পড়ে গেলো কি করবে তাই ভেবে। এদিকে আকাশের অবস্থা ও খারাপ হচ্ছে যেকোনো সময় ঝরঝর করে বৃষ্টি নেমে আসবে প্রকৃতির বুকে। ফারিসতা একবার ভাবলো ওর মাকে ফোন করবে পরক্ষণে ভাবলো এখন ফোন করেলে টেনশন করবে সাথে বকাঝকা তো ফ্রী আছেই। এই এলাকায় আজ এই নতুন উঠেছে তাই বাসার মালামাল নিয়ে ফারিসতার মা আগে চলে গিয়েছে বলেছে ওকে আবার নিতে আসবে তখন ফারিসতা পাকনামি করে বলেছিলো একা যেতে পারবে নিতে আসা লাগবে না। তখন পাকনামি করে একা আসতে পারবে বলার জন্য ফারিসতার এখন ইচ্ছে করছে নিজের মাথা নিজে টাকাতে। এখন কি করবে ভেবে পাচ্ছে না। আর কতক্ষণ এখানে এভাবে শটান হয়ে দাঁড়িয়ে থাবে? এদিকে আকাশের অবস্থা ও ভালো না।

ফারিসতা কাঁদো কাঁদো ফেস করে বলল, সব বিপদ আজ এক দিনেই আসা লাগলো?

ফারিসতা আরো কিছুক্ষণ স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। ইতিমধ্যে গুড়িগুড়ি বৃষ্টি ও পড়া শুরু করে দিয়েছে। বৃষ্টি পড়া দেখে আতকে উঠে ফারিসতা নিজের দিকে তাকালো। পড়নে সাদা সেলোয়ার-কামিজ এখন বৃষ্টিতে ভিজলে সর্বনাশ হয়ে যাবে ভাবতে ফারিসতা কি করবে দিশেহারা হয়ে গেলো। ফারিসতা কোনো দিক দিশা না পেয়ে ভাবলো ছেলেগুলোর পাশ কাটিয়ে চলে যাবে। কিন্তু সাহসে কুলাচ্ছে না এতগুলো ছেলের পাশ কাটিয়ে যেতে তার উপর ছেলেগুলো মারামারি করছে।

বৃষ্টির বেগ ধীরে ধীরে বাড়তে লাগলো। ফারিসতা আর কোনো উপায় না পেয়ে ভালো করে ওড়না গায়ে জড়িয়ে নিয়ে ভয়ে ভয়ে কদম ফেললো সামনের দিকে। দুরুদ দুরুদ বুকে ফারিসতা ছেলেগুলোর অনেকটা কাছে এগিয়ে গিয়ে থেমে গেলো। সামনে আর এক পা বাড়ানোর ও সাহসে কুলাচ্ছে না। ফারিসতা ঢোক গিলে আশেপাশে তাকাতে লাগলো। আশেপাশে কোনো লোকজনের দেখা না পেয়ে ভয় বেড়ে আরো দ্বিগুণ হয়ে গেলো৷ ফারিসতা যখন ভয়ে ভয়ে আশপাশ দেখতে ব্যস্ত তখন আচমকা কপালে তীব্র ব্যথা অনুভব করতে মুখ থেকে অস্ফুট স্বরে বেড়িয়ে আসলো আহঃ…..

ফারফিসতা কপালে হাত দিয়ে সামনে তাকাতে দুনিয়াটা যেনো ঘুরে উঠলো। চোখের সামনে সব কিছু ঝাপসা হয়ে আসলো। মাথা ঘুরতে লাগলো কি থেকে কি হয়ে গিয়েছে বোঝার সময়টুকু ও পায়নি। তীব্র ব্যথায় কপালে হাত দিয়ে চোখমুখ কুঁচকে নিজেকে সামলানোর ব্যর্থ চেষ্টা করতে লাগলো ফারিসতা।

এদিকে হঠাৎ মেয়েলি কণ্ঠস্বরে আর্তনাদ শুনে চমকে পিছু ঘুরলো তাজ। পিছু ঘুরতে আচমকা হৃদপিণ্ড কেঁপে উঠলো যেনো। ওর থেকে কয়েক কদম দূরে এক শুভ্র পরী দাঁড়িয়ে। কপালে হাত দিয়ে চোখমুখ খিঁচে বন্ধ করে আছে। পাতলা গোলাপি ঠোঁট জোড়া দাঁত দিয়ে কামড়ে ধরে ব্যথা সয়ে নেওয়ার বৃথা চেষ্টা করে যাচ্ছে। চোখ মুখে ফুটে উঠেছে ব্যথায় জর্জরিত কষ্ট। বৃষ্টির তোপে গুটি গুটি বৃষ্টির ফোঁটা গুলো মুক্তর মতো চিকচিক করে উঠলো মুখে। ব্রাউন কালার চুল বেয়ে চুইয়ে চুইয়ে পড়ছে পানি। পড়নে শুভ্র ড্রেস বৃষ্টিতে ভিজে কয়েক জায়গা দিয়ে শরীরের সাথে লেপ্টে আছে। ব্যথায় জর্জরিত হয়ে ফর্সা গাল দুটি মুহূর্তের মাঝে রক্তিম হয়ে উঠলো। মুহূর্তের মাঝে থমকে গেলো তাজ। নিষ্পলক ভাবে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছে ওর থেকে কয়েক কদম দূরে দাঁড়িয়ে থাকা শুভ্র মানবীয় অধিকারী মেয়েটার দিকে।

এই মেয়ে তুমি এখানে কোন সাহসে এসেছো? বাজখাঁই গলায় ধমকে উঠলো আরফি।

একেতো ফারিসতার দুনিয়া শুদ্ধ ঘুরছে কপালে আঘাত লাগায়। চোখমুখে ঝাপসা দেখছে তার উপর তখন বাজখাঁই গলায় ধমকে খেয়ে কেঁপে উঠলো অন্তরাত্মা। ফারিসতা কাঁপা কাঁপা চোখে চোখ খুলতে চোখের সামনে সব ঝাপসা হয়ে গেলো। ফারিসতা আবার চোখ বন্ধ করে চোখ খুলতে চোখের সামনে ধীরে ধীরে স্পষ্ট হলো একটা রক্তিম মুখশ্রী। রক্তিম মুখশ্রীর অধিকারী লোকটার চোখজোড়া শীতল কিন্তু তবুও ওই চোখজোড়া দেখে সহসা বুক কেঁপে উঠল ফারিসতার। সামনে থাকা লোটার পড়নে থাকা কালো শার্ট বৃষ্টিতে ভিজে লেপ্টে আছে শরীরের সাথে। বুকের কাছে কয়েটা বোতাম খোলা যার জন্য ফর্সা বুকে কালো লোম গুলো ভাসমান হয়ে আছে। মুখে খোঁচা খোঁচা দাঁড়িয়ে, খাঁড়া নাক, রক্তিম চোখ সব মিলিয়ে সামনে থাকা লোকটাকে কোনো দানবীয় মানুষ মনে হচ্ছে ফারিসতার কাছে। ফারিসতা ভয়ে ঢোক গিললো তখন আবার বাজখাঁই কেউ বলে উঠলো,

এই মেয়ে কথা বলছো না কেনো?

ফারিসতা ফের ধমক খেয়ে আবারো কেঁপে উঠলো। কণ্ঠ অনুসরন করে পাশে তাকাতে দেখতে পেলো রাগী চোখে একটা ছেলে ওর দিকে তাকিয়ে আছে। ফারিসতা কোনো কথা বলার শক্তি যেনো খুজে পাচ্ছে না। ভয়ে অধর কাঁপতে লাগলো সেই সাথে মাথায় তীব্র ব্যথায় চারপাশ ঘুরছে।

ফারিসতাকে কোনো কথা না বলে ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে থাকতে দেখে আরফি ফের ধমক দিয়ে কিছু বলতে যাবে তার আগে তাজ হাতের ইশারায় আরফিকে চুপ থাকতে বলে কয়েক কদম ফারিসতার কাছে এগিয়ে গেলো। ফারিসতার তা দেখে প্রাণ পাখি যায় যায় অবস্থা। ভয়ে কাঁপা কাঁপা পায়ে দু কদম পিছিয়ে গেলো।

তাজ ফারিসতার দিকে ভ্রু কুঁচকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে রাশভারী কন্ঠে বলে উঠলো,

এলাকায় নতুন?

হঠাৎ এমন রাশভারী কন্ঠ শুনে ফারিসতা চমকে চোখ তুলে তাকাতে সামনে থাকা ছেলেটার চোখে চোখ পড়ে গেলো। ওই রক্তিম চোখ পড়তে সাহসা বুকের ভিতর কেঁপে উঠল ফের। সাথে সাথে ফারিসতা চোখ সরিয়ে মাথা নিচু করে কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে শুধালো,

জ..জ্বি ভ…ভাইয়া

নতুন বলে ছেড়ে দিলাম। আজ যেই দুঃসাহস নিয়ে এখানে এসেছো সেই দুঃসাহস দ্বিতীয়বার যেনো না দেখাও।

তাজের রাশভারী শান্ত কণ্ঠে দেওয়া হুমকিতে ফারিসতা মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দিলো এমন দুঃসাহস আর দেখাবে না।

কোন দিক যাবে?

ফারিসতা এতক্ষণ কপালে চেপে রাখা হাত সরিয়ে সামনের দিকে অনামিকা আঙুল তাক করে কাঁপা কণ্ঠে বলল ও..ওই দ..দিকে।

ফারিসতা কপাল থেকে হাত সরাতে তাজের চোখে পড়লো কপালের এক পাশ ফুলে উঠে লাল হয়ে আছে যার মাঝে রক্ত জমাট বেঁধে গেছে। আরেকটু হলে কপাল ফেটে রক্ত বেড়িয়ে আসতো। এখনো গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি পড়ছে। বৃষ্টির ফোটা এসে কপালে লাগতে তীব্র জ্বালায় চোখমুখ কুঁচকে ফেলল ফারিসতা। তাজ নীরবে কিছুক্ষণ ফারিসতাকে পর্যবেক্ষণ করে তাকালো ওর হাতে থাকা হকিস্টিক এর দিকে। তখন নিচে পড়ে থাকা ছেলেটাকে মারার জন্য হকিস্টিক উপরে ওঠাতে আচমকা পিছে কেউ চলে আসাতে পিছবিলে বারি খেয়ে গিয়েছে সে। ভাগ্য ভালো পিছ বিলে বাড়ি খেয়েছে আর নাহলে এই মেয়ের নরম মাথা সামনে বিলে বারি খেলে নির্ঘাত দু ভাগ হয়ে যেতো। তাজ কাঁপতে থাকা সামনের ভিতু মেয়েটাকে পর্যবেক্ষণ করে তীক্ষ্ণ কণ্ঠে ডাকলো

বনি…..

বনি নামের ছেলেটা পিছ থেকে একপ্রকার দৌড়ে এসে তাজের পাশে দাঁড়িয়ে বলল, জ্বি ভাই…?

রিক্সা ডেকে নিয়ে আয় একটা।

তাজের কথায় চমকালো বনি কিন্তু কিছু বলার সাহস হলো না তাই মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দিয়ে সামনে চলে গেলো। কয়েক মিনিটের ব্যবধানে একজন রিক্সা চালকে ধরে নিয়ে আসলো।

রিক্সাওয়ানার পরাণ পাখি যায় যায় অবস্থা তাজের লোক তাকে ধরে নিয়ে আসায়। তাজ এবং তাজের সাঙ্গপাঙ্গদের অদ্য এলাকার সবাই রগে রগে চেনে সেই সাথে সবাইকে বাঘের মতো ভয় ও পায়। এর একমাত্র কারণ হলো তাজ। যার ভয়ে কেঁপে ওঠে এই এলাকার প্রতিরি লোক সেখানে এই লোকের চ্যালাপ্যালাদের ভয় পাওয়াটাই স্বাভাবিক। রিক্সাওয়ালা তাজের কাছে আসতে রিক্সা থেকে নেমে তাজের পায়ের কাছে বসে ভয়ে জর্জরিত হয়ে বলল,

ভ..ভাই বিশ্বাস করুন আমি কিছু করি নাই। আমারে ছাইড়া দেন। আপনার লোক আমারে ক্যান ধইরা আনছে বিশ্বাস করেন আমি কিছু জানিনা। আপানারা এই রোডে আছেন দেইখে আমি এই রোডে ঢুকি ও নাই ভাই। আমারে ছাইড়া দেন আমি কিছু করি নাই ভাই।

ওঠ…. শক্ত কণ্ঠে পায়ের কাছে পড়ে থাকা লোকটার উদ্দেশ্যে বলল তাজ।

তাজের কথায় চমকালো ফারিসতা। বাপের বয়সের একটা লোক তার পায়ের কাছে পড়ে আকুতি করছে আর ওই লোক তাকে তুই বলে সম্মোধন করলো। কে এই লোক? এই কি তাহলে তাজ? যার ভয়ে ওকে নিয়ে আসা রিক্সাওয়ালা ওকে ফেলে রেখে পালিয়েছে। ফারিসতার ভাবনার মাঝে তাজ ফারিসতার দিকে আঙুল তাক করে বলল,

ওকে ওর ঠিকানায় পৌঁছে দিয়ে আয়।

তাজের কথায় এতক্ষণে লোকটা যেনো জীবন ফিরে পেলো। তড়িঘড়ি করে তাজের পায়ের কাছ থেকে উঠে বলল, আচ্ছা ভাই এ বলে রিক্সায় উঠে ফারিসতার উদ্দেশ্যে বলল, ওডেন আম্মা।

ফারিসতা কোনো কথা না বলে কাঁপা কাঁপা পায়ে রিক্সায় উঠে বসলো। ফারিসতা উঠতে লোকটা তড়িঘড়ি করে রিক্সা নিয়ে সেই জায়গা থেকে এক প্রকার ছুটে পালালো। চোখের পলকের মাঝে সবাইকে অতিক্রম করে চলে যাওয়ার সময় ফারিসতার গা গুলিয়ে উঠলো নিচে তাকাতে। নিচে কতগুলো ছেলে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছে আর তাদের পাশে কতগুলো ছেলেপেলে হাতে হকিস্টিক নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। কেনো এই ছেলেদের মারা হয়েছে জানা নেই ফারিসতার কিন্তু যারা মেরেছে তাদের মনে কোনো মায়াদয়া নেই এক কথায় পাষাণ। আর এই পাষানদের লিডার এই কি কালো শার্ট পড়া ছেলেটা?

রিক্সা চোখের আড়াল হতে আরফি চোখ বড় বড় করে তাকালো তাজের দিকে যেনো নিজের দুই চোখকে বিশ্বাস করতে পারছে না। আরফি একরাশ বিস্ময় নিয়ে তাজের দিকে তাকিয়ে বলল, এটা কি হলো?

চোখে যা দেখেছিস তাই হেয়েছে নির্বিকার ভাবে বলল তাজ।

সিরিয়াসলি তাজ তুই এই কাজ করেছিস? বিলিভ মি আমি আমার নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছি না। যেই ছেলে কাউকে পরোয়া করে না কারো কষ্টে বা সুখে কোনো কিছুতেই যায় আসে না। কাউকে তুই তোকারি ছাড়া কথা পর্যন্ত বলে না সেই ছেলে একটা মেয়েকে রিক্সায় করে বাসায় পৌঁছে দেওয়ার কথা বলেছিস। তাও যেই মেয়ে তোর কাজে ব্যাঘাত ঘটিয়েছে সেই মেয়েকে কিছু না বলে উল্টো বাসায় পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করেছিস। কাহিনী কি ঝেড়ে কাশ তো….

পাশ থেকে মাহিম বলে উঠলো দোস্ত বাই এনি চান্স তুই মেয়েটার প্রেমে পড়ে গিয়েছিস নাকি?

মাম্মা মেয়েটা আকাশ থেকে নেমে আসা জলজ্যান্ত এক পরী যে কারো চোখ ধাদানোর জন্য এক পলক দেখাই যথেষ্ট আর নাহলে ভাব তাজের মতো শক্ত হৃদয়ের অধিকারী ছেলের মন কয়েক মিনিটের ব্যবধানে কিভাবে গলিয়ে ফেলল বলে উঠলো পাপন।

বনি বলে উঠলো ভাই তাহলে কি আমরা অবশেষে ভাবির দেখা পেলাম নাকি?

কি হলো কথা বলছিস না কেনো? বলে উঠলো আরফি

তাজ বিরক্ত নিয়ে সবার দিকে তাকিয়ে বলল, তোদের আজাইরা প্রশ্ন করা শেষ? যেই কাজে এখানে এসেছিস সেই কাজে মন দে।

মাহিম বলে উঠলো এরা যেই মার খেয়েছে এক সপ্তাহ ক্যান আগামী এক মাসেও হসপিটাল থেকে ছাড়া পাবে না। এবার আমাদের কথার এন্সার দে? ভালো লেগেছে মেয়েটাকে খোঁজ নিবো? শুধু একবার বল কি করা লাগবে।

তাজ বিরক্ত নিয়ে মাহিমের দিকে একবার তাকিয়ে তাকালো রনি, বনি আরো কিছু ছোট ছেলেপেলের দিকে। ওদের দিকে তাকিয়ে নিচে পড়ে থাকা পাঁচটা ছেলের দিকে তাকিয়ে বলল, এদের জায়গা মতো এদের ছেড়ে দিয়ে তোরা এখন যে যার বাড়ি যা পড়ে দেখা হচ্ছে।

ছেলেগুলো আচ্ছা ভাই বলে নিচে পড়ে থাকা ছেলেপেলে গুলোকে গাড়িতে তুলে নিয়ে সেই স্থান ত্যাগ করলো।

ছোটরা যেতে পাপন বলে উঠলো মামা মেয়েটা তোর ভালো না লাগলে ওই মেয়ে আমার।

তাজ এবার বিরক্তির শেষ সীমানায় চলে গেলো যেনো। তাজ বিরক্ত নিয়ে বলল, যা খুশি কর আমি গেলাম এই বলে বাইকে উঠে বাই স্টার্ট দিতে নিলে আরফি তড়িঘড়ি করে বলে উঠলো এই দাঁড়া আমিও যাবো এ বলে তাজের পিছে যেয়ে উঠে বসতে তাজ আর কউকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে চোখের পলকে হাওয়ায় মিলিয়ে গেলো।

তাজ যেতে পাপন বুকে হাত দিয়ে বলে উঠলো মামা ওটা মেয়ে ছিলো নাকি আকাশের পরী। আমি শিওর তাজের মতো শক্ত হৃদয় এতো সহজে গলবে না। তাহলে ওই মেয়ে এখন আমার।

পাপনের কথায় মহিম বলে উঠলো,

কোথাও লেখা আছে নাকি ওই মেয়ে তোর?

দেখ মাহিম খবরদার ওই মেয়ের দিকে ভুলেও নজর দিবি না।

ওই মেয়ের জন্য যদি সত্যি তাজের মনে জায়গায় না হয়ে থাকে তাহলে তখন দেখা যাবে ওই মেয়ে কার হবে না হবে।

আমিও দেখে নিবো তাজের পছন্দ না হলে আমি বাদে অন্য কারো হয় কিভাবে।

আগে নিজের পুরোনো গার্লফ্রেন্ডদের সামাল দে তারপর নতুনের দিকে নজর দে শা*লা এ বলে মাহিমও বাইকে উঠে পাপনকে রেখেই চলে গেলো।

পাপন দাঁত কিরমির করে মাহিমের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলো।

#চলবে?