#হৃদয়স্পর্শী_মায়াবিনী
#নুসাইবা_ইসলাম_হুর (মিমি)
#পর্বঃ১৭
দেখো তাজরিয়ান তুমি একজন বিশেষজ্ঞ ডক্টর। ডক্টর একটা সম্মানীয় পেশা সেখানে তেমার অ্যাংরি স্বভাবটা দূর করা প্রয়োজন। একজন ডক্টর হয়ে তোমার বখাটপানার পথ এখনো ছেড়ে ছাড়ছো না কেনো? তুমি কি জানো একজন অ্যাঙ্গারম্যান সার্জারির সময় রোগীর সার্জারি করা মানে তার মৃত্যু ডেকে আনা। একজন অ্যাঙ্গারম্যান ডক্টর না কশাইয়ের সমতুল্য। নিজের রাগকে কনট্রোল করতে শেখো।
ডাঃ নাহির খানের কথাগুলো তাজের কর্ণগোচর হতে ভ্রু কুঁচকে একবার তিফাজ চৌধুরীর দিকে তাকিয়ে ডক্টর নাহির খানের উদ্দেশ্যে বলে উঠলো কথাগুলো কি ডঃ তিফাজ চৌধুরীর শিখিয়ে দেওয়া নাকি আঙ্কেল?
তাজরিয়ানের এমন সঙ্কোচহীন প্রশ্নে তিফাজ চৌধুরী আর ডক্টর নাহির খান ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেলো। এই চতুর বুদ্ধিমত্তার ছেলের একেবারে লক্ষবস্তুকে কেন্দ্র করে ঢিল ছোড়ায় কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে পড়লো তিনি। ডক্টর নাহির খান আরো চোখে তিফাজ চৌধুরীর দিকে তাকাতে তিফাজ চৌধুরী চোখের ইশারায় কিছু বলতে বললেন তা দেখে নাহির খান গলা পরিষ্কার করে বলে উঠলো
তিফাজ চৌধুরী কেনো এগুলো আমাকে শিখিয়ে দিবে?
আমি শুধু তোমাকে এটাই বোঝাতে চেয়েছি একজন অ্যাঙ্গারম্যান ডক্টর হলে সেটা একজন পেশেন্টের লাইফের উপর কতটা ইফেক্ট পড়ে। আই থিঙ্ক আমি কি বলতে চাচ্ছি বুঝতে পারছো।
ইয়েস আই আডারস্ট্যান্ড বাট আমি আমার ডিটিউটির বাহিরে আমি যা খুঁশি করি তাতে আমি মনে করি না কারো যায় আসে৷ এসব কথা রাখুন আমি যেই দুদিন ডিউটি করি সেই দুইদিন নিয়ে কোনো অভিযোগ থাকলে সেটা আগে বলুন। আমি অ্যাঙ্গার হই বা যাই হই মেইন টপিক হলো আমার ডিউটিতে কোনো ত্রুটি আছে কিনা সেটা। আমার ওয়ান ইয়ারের ট্রিটমেন্টে কোনো পেশেন্টের কমপ্লেইন এসেছে কিনা। ডিউটির বাহিরে আমি যাই করি সেটা আমার একমাত্র পার্সোনাল ব্যাপার। এবার বলুন ওয়ান ইয়ারের আমার ডিউটির উপরে কোনো অভিযোগ আছে কিন।
তাজের প্রীতিটি লজিক্যাললি কথায় ডাঃ নাহির নিশ্চুপ হয়ে গেলো। আসলেই এই এক বছরে এখন পর্যন্ত তাজের ট্রিটমেন্টের মাঝে কোনো ত্রুটি ছিলো না তাহলে অভিযোগ করবে কিভাবে? ডিউটির বাহিরে এই ছেলে যাই করুক না কেনো বাট কখনো নিজের ডিউটির মাঝে এক তিল পরিমাণ ত্রুটি রাখেনি সেটা নিজের সচক্ষে সবসময় পর্যবেক্ষণ করেছে।
ডাঃ নাহিরকে চুপ হয়ে যেতে দেখে তাজ চেয়ার ছেড়ে উঠে তিফাজ চৌধুরী আর নাহির খানের উদ্দেশ্য বলে উঠলো, আই হোপ আপনাদরে আর কিছু বলার নেই কজ তাজ চৌধুরী যেই কাজ নিজের দায়িত্বে নেয় সেটার খুঁত বের করা করো সাধ্য নেই। আসি কেমন? এ বলে তাজ একবার তিফাজ চৌধুরীর থতমত মুখের দিকে তাকিয়ে বাঁকা হেঁসে সেই স্থান প্রস্থান করলো।
তাজ য়েতে তিফাজ চৌধুরী হতাশার শ্বাস ফেলে তাকালো ডাঃ নাহির খানের দিকে। এই হসপিটালের অর্ধেক শেয়ার তার নিজের আর বাকি অর্ধেক নাহির খানের। উনি এই হলো এই হসপিটালের সবচেয়ে সিনিয়র ডক্টর। যার ব্যবহার এতটাই বিনয়ের যে তার কোনো কথা কেউ অমান্য করে না। তাই ভেবেছিলো তাকে দিয়ে তার ঘাড় ত্যাড়া ছেলেটাকে বোঝালে যদি একটু বোঝে কিন্তু তার ত্যাড়া ছেলে বুঝলো তো না এই উল্টো চতুরতার সাথে কথা বলে সবার মুখ তালা লাগিয়ে দিয়ে গিয়েছে। কেউ কি পারবে না তার ত্যাড়া ছেলেটাকে সোজা করতে ভাবতে তিফাজ চৌধুরী দীর্ঘনিঃশ্বাস ছাড়লো।
———-
গাড়ি থেকে নেমে সামনে চোখ যেতে একরাশ মুগ্ধতা এসে ভীর করলো ফারিসতার চোখ জুড়ে। চারপাশে ফলফুল গাছে ভরপুর সবুজ প্রকৃতি মাঝে বিশাল এক আলিশান বাড়ি যেটা যে কারে চোখ জুড়িয়ে যাওয়া জন্য যথেষ্ট। গাছ গুলো খুব একটা বড় না হলেও বাড়ির চারপাশে বাহারী রকমের ফলফুল গাছে ভরপুর। এমন স্নিগ্ধকর পরিবেশ দেখলে কার এই বা ভালো না লাগবে? ইটপাথরের এই শহরের মাঝে যেখানে বেশিরভাগ জায়গা এই মরুভূমিরর মতো যেখানে চাইলেও সবুজ শ্যামলের স্নিগ্ধ প্রকৃতি দেখার সুযোগ হয়ে ওঠে না। টাকা পয়সা লোভ লালসার পিছে ছুটটে ছুটটে মানুষ পারলে এক বিল্ডিং এর ভিতরে আরো একটা বিল্ডিং তৈরি করে। টাকার জন্য ভুলে যায় স্নিগ্ধ সবুজ শ্যামলের প্রকৃতিকে। যার জন্য এই ব্যস্ত শহরে এখন সবুজ প্রকৃতি দেখাটা দুষ্কর হয়ে পড়েছে।
ভিতরে চলো মা…
ফারিসতার হাত ধরে তাহমিনা বেগম কথাটা বলে সামনের দিকে হাঁটা দিতে ফারিসতার ভাবনার ছেদ ঘটলো। ফারিসতা ভার্সিটি থেকে আসতে তাহমিনা বেগমের দেখা পেলো৷ তখন জানতে পারলো তিনি ফারিসতা আর ফারজানা বেগমকে তাদের বাড়িতে নেওয়ার জন্য এসেছে। এরপর রেডি হয়ে তাহমিনা বেগমের সাথে আসতে এমন আলিশান বাসা দেখে বুঝলো যে তারা কতটা উচ্চবিত্তের মানুষ কিন্তু এই মানুষ গুলো এতো ভালো যে মনের ভিতরের নেই কোনো হিংসা অহংকার। এতো অট্টালিকা থাকা সত্যেও তাহমিনা বেগমরে এমন নম্র সভ্য হিংসাহীন মনোবল দেখে মুগ্ধ হলো।
তাহমিনা বেগমের সাথে ফারিসতা আর ফারজানা বেগম বাসায় প্রবেশ করতে রেহেনা বেগম আর রুশা এসে একগাল হেঁসে তাদের সাথে কুশল বিনিময় করলো। এতক্ষণ মা মেয়ে মিলি তাদের অপেক্ষায় এই ছিলো। তাঁরা আসতে সবাই মিলে আড্ডার আসর জমিয়ে দিলো। অনেক সময় সবার সাথে আড্ডা দেওয়ার পর রুশা ফারিসতার উদ্দেশ্যে বলে উঠলো ,
চলো কিউটিপাই তোমাকে পুরো বাসাটা ঘুরিয়ে দেখাই।
রুশার প্রস্তাবে ইয়ানা খুশি হয়ে গেলো। এই বাড়িটা খুব করে মনে ধরেছে ফারিসতার। এতক্ষণ মনে মনে খুব করে ইচ্ছে হয়েছিলো বাসাটা ঘুরে দেখার। এর ভিতরে রুশা নিজ থেকে বাসা ঘুরিয়ে দেখার প্রস্তাব দিতে মেয়েটার মুখে ফুটে উঠলো খুশির ঝলক। ফারিসতা আর রুশা আড্ডার মাঝ থেকে উঠে চলে গেলো বাসা ঘুরে দেখতে।
বাসা ঘুরে দেখতে দেখতে ওরা ছাঁদে গেলো। ছাদে ছোট ছোট টবে বাহারি রকম নজর কারা ফুলগাছ দেখে ফারিসতার মন খুশিতে দুলে উঠলো। ফারিসতা যেয়ে ওর প্রিয় ফুল কাঠগোলাপ আলতো করে ছুয়ে দিলো তা দেখে রুশা বলে উঠলো, ভালো লাগলে ছিঁড়তে পারো ফুল।
রুশার কথায় ফারিসতা স্মিত হেসে একটা ফুল ছিড়ে কানে গুজতে পিছ থেকে কেউ বলে উঠলো আমার অনুমতি না নিয়ে আমার গাছের ফুল ছিড়লেন কেনো?
হঠাৎ এমন পুরুষালী কণ্ঠস্বর শুনে ফারিসতা পিছু ঘুড়তে সাফওয়ানকে দেখে কিছুটা চমকালেও সেটা বুঝতে না দিয়ে ভ্রু কুঁচকে বলে উঠলো,
আপনার গাছ কোথাও লেখা আছে নাকি? আমিতো কোথায় নাম দেখলাম না।
ফারিসতার এহেন জবাবে সাফওয়ান থতমত খেয়ে গেলো। বুঝলো যে ওর মতো বোকাসোকা একটা ছেলে এই দুর্দান্ত মেয়ের সাথে তর্কে পেরে উঠবে না তাই সাফওয়ান দাঁত কেলিয়ে হেঁসে বলে উঠলো মজা করছিলাম আপনার যতগুলো লাগে নিন।
সাফওয়ানের কথায় রুশা ভ্রু নাচিয়ে বলে উঠলো,
আমি তোর গাছের ফুল ছিঁড়বো তো দূররে কথা একটা পাতা ছিড়লেও পারলে আমাকে ছাঁদ থেকে ফেলে দেস আর ওকে বলছিস যতগুলো লাগে নিতে ঘটনা কি?
সাফওয়ান রুশার মাথায় গাট্টা মেরে বলে উঠলো তোর মতো শাঁকচুন্নির হাতে এই ফুল শোভা পায় না। কাঠগোলাপের স্নিগ্ধতা শুধু স্নিগ্ধ ফুলের হাতেই শোভা পায়।
সাফওয়ানের এমন কথায় অপ্রস্তুত হয়ে পড়লো ফারিসতা। এই ছেলে ওকে ইনডারেক্টলি ফুলে সাথে তুলোনা করেছে? ভাবতে ফারিসতার কয়টা কথা শুনিয়ে দিতে মন চাইলো কিন্তু এদের বাসায় এসে এনাকে এখন কথা শুনালে সেটা বেয়াদবি হয়ে যাবে তাই ফারিসতা বিষয়টা ইগনোর করে রুশাকে নিয়ে ছাঁদ থেকে নেমে গেলো।
সাফওয়ান ফারিসতার গমন পথে চেয়ে রইলো নিষ্পলক। কাল রাতে যখন তাহমিনা বেগমের মুখে শুনেছিলো ফারিসতাদের আজ এই বাসায় আনবে তখন থেকে মন আনচান আনচান করতে লাগলো এক পলক ওই স্নিগ্ধ মুখটা দেখার জন্য। তাইতো অফিস যেয়েও অফিসের কাজে মন বসাতে না পেরে তাড়াতাড়ি চলে আসলো ফারিসতাকে এক পলক দেখার লোভে। হুট করে মেয়েটার মাঝে সাফওয়ার কি দেখেছে ওর জানা নেই কিন্তু এই মেয়েকে একবার দেখলে চোখ ফেরানো দায় হয়ে পরে।
রুশার সাথে ফারিসতা নিচে আসতে রুশা সবার রুম ঘুরিয়ে দেখালো। তারপর আরেকটা রুমের কাছে আসতে রুশার ফিওন্সি ফোন করতে রুশা ফারিসতাকে ঘুরে দেখতে বলে ফোন নিয়ে অন্য পাশে গেলো। ফারিসতা সেই রুমে উকি দিতে এমন পরিপাটি গোছালো রুম দেখে মনে কৌতুহল জাগলো রুমটা ঘুরে দেখার। কার এই বা রুম যে এতটা পরিপাটি ভাবতে ফারিসতা গুটি গুটি পায়ে রুমে প্রবেশ করতে পুরো রুমে চোখ বুলিয়ে এতটা পরিপাটি দেখে অবাক হলো। কারো রুম এতটাও পরিপাটি হতে পারে? রুম এতো পরিপাটি হলে যার রুম সে কতটা পরিপাটি হতে পারে ভাবতে ফারিসতা পুরো রুম খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে লাগলো।
***
হসপিটালে আজ প্রেশার কম থাকায় তিফাজ চৌধুরী আর তাজ দুপুরে বাসায় না এসে সব কাজ শেষ করে একবারে বিকেলে বাসায় আসলো। আসার পথে তাজ তিফাজ চৌধুরীকে খুঁচিয়ে কথা শুনাতে ভুললো না ডক্টর নাহির চৌধুরীকে দিয়ে সকালে কথাগুলো বলানোর জন্য। যদিও তিফাজ চৌধুরী ও তাজকে ছেড়ে দেয় নি। দুজনের মাঝে সব সময় এই সাপ আর নেউলের মতো বেজেই থাকে। বাপ ছেলের রোজকার এমন এমন একজন আরেকজনকে খুঁচিয়ে কথা না শুনালে যেনো পেটের ভাত হজম হয় না। এমন তর্ক বিতর্কের মাঝে এক পযার্য়ের তিফাজ চৌধুরী সব তর্ক এক পাশে ফেলে রেখে খোঁচা মেরে বলে উঠলো,
চুল দাঁড়ি তো পাকলো বলে, বিয়ে করছো কবে? সব কিছু থেকে তো আমাদের বিতাড়িত করেছো এই এখন কি নাতি নাতনির মুখ দেখা থেকেও বিতাড়িত করে চাচার মতো দেবদাস হয়ে ঘুরে বেড়ানোর ফন্দি আটছো?
তিফাজ চৌধুরীর কথায় তাজ গায়ে না মাখিয়ে ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে গাড়ি ড্রাইভ করতে করতে বলে উঠলো,
এত নাতি নাতনির মুখ দেখার শখ থাকলে আরেকটা বাচ্চা গাচ্চা হওয়িয়ে সেটার নাতি নাতনির মুখ দেখো। আমি আবার কিছু মনে করবো না এই বয়সে একটা ভাইবোন পেলে।
তজের এহেন কথায় ভিসম খেলো তিফাজ চৌধুরী। ২৯ বছরের ছেলে এই বয়সে ভাইবোন আনতে বলছে ভাবতে তিফাজ চৌধুরী চোখ গোল গোল করে ধমকে বলে উঠলো, অসভ্য ছেলে বাপকে এসব কথা বলতে লজ্জা করে না?
লজ্জা মেয়েদের ভূষণ এটা কেনো আমার থাকবে?
তাজের এমন ঠোঁট কাটা কথায় তিফাজ চৌধুরী চোখমুখ কুঁচকে ফেলে নিজেকে নিজেলে শাসানো এই অসভ্য ছেলের সাথে আর একটা কথাও বলবে না। এর সাথে আর একটা কথা বলা মানে নিজের মান সম্মান সব লুফে দেওয়া।
এদিকে তিফাজ চৌধুরীর মুখের এক্সপ্রেশন দেখে তাজ ঠোঁট চেপে হাসলো। সেই হাসি তিফাজ চৌধুরীর চোখে পড়তে গরম তেলের ভিতরে মাছ ছাড়লে যেমন ছ্যাত করে ওঠে তিফাজ চৌধুরী তেমন ছ্যাত করে বলে উঠলো অসভ্য।
তিফাজ চৌধুরীর এমন ছ্যাত করে ওঠায় তাজ এবার কিছুটা শব্দ করে হেঁসে ফেললো। হঠাৎ ছেলের মুখে এমন হাসি দেখে থমকালো তিফাজ চৌধুরী। অবিশ্বাস্য চোখে ছেলের হাসি মুখের দিকে চেয়ে রইলো। ঠিক কতগুলো বছর পর ছেলের মুখে এমন হাসি দেখলো ভাবতে তার চোখ জোড়া চিকচিক করে উঠলো।
তিফাজ চৌধুরীকে এমন করে নিজের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে হঠাৎ থতমত খেয়ে গেলো তাজ নিজের কাজে নিজেই। ও হাসছে তাও তিফাজ চৌধুরীর সাথে কথাটা স্মরণ হতে চমকে উঠলো তাজ। এর ভিতরেই গাড়ি বাসার সামনে এসে পড়তে আর কোনো কথা না বলে তাজ নীরবে গাড়ি থেকে নেমে বাসায় প্রবেশ করে নিজের রুমে চলে গেলো। রুমে প্রবেশ করতে হঠাৎ তাজের পা জোড়া থমকে গেলো। অবিশ্বাস্য চোখে তাকালো ফারিসতার বিরক্তিতে কুঁচকে থাকা মুখ পানে যে ওর টেবিলে সাজিয়ে রাখা বাহারি রকমের বই গুলোগুলো একটা একটা করে দেখে আবার আগের জায়গায় রেখে দিচ্ছে। তাজ বুঝে উঠতে পারলো না এটা ওর ভ্রম নাকি সত্যি।
এদিকে ফারিসতা টেবিলের উপরে থাকা একের পর এক বই দেখছে আর বিরক্তি নিয়ে সেটা রেখে দিচ্ছে। এই পরিপাটি রুমটা ও যখন খুটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছিলো তখন চোখ যেয়ে ঠেকেছিলো টেবিলের উপরে সাজিয়ে রাখা বাহারি রকমের বই দেখে। প্রথমে এগুলো উপন্যাসের বই ভেবে ফারিসতা খুশি হয়ে টেবিলের কাছে এগিয়ে গিয়ে একটা বই হাতে নিতে দেখতে পেলো ডাক্তারি পড়ার বই। ফারিসতা ভাবলো এতো বইয়ের ভেতরে একটা না একটা উপন্যাসের বই পাইবে এ ভেবে পনেরোটা বই ইতিমধ্যে চেক করেছে কিন্তু সব গুলো বই ইংলিশ, ডাক্তারি হাবিজাবি আরো কত কি। এগুলো দেখে ফারিসতা বুঝলো যে এই রুমের মালিক নিশ্চয়ই ডক্টর। অবশ্য শুনেছিলো ফারজানা বেগমের একমাত্র ছেলে ডক্টর তাহলে এটা তার ছেলের রুম ভাবতে ফারিসতা বিরক্ত হয়ে বিড়বিড় করে বলে উঠলো আমি শিওর এই শা*লা আস্ত রসকষহীন ডক্টর নামক কসাই আর নাহলে এতো বইয়ের ভিতরে একটাও উপন্যাসের বই থাকবে না ধুর শুধু শুধু এতক্ষণ ফাও কষ্ট করলাম এ বলে ফারিসতা চলে আসতে নিবে তখন দরজার সামনে তাজকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ফারিসতা আচমকা ভূত দেখার মতে চমকে উঠে যেই চিৎকার দিতে নিবে তার আগে হঠাৎ তাজ ফারিসতার মুখ চেপে ধরে পিছের টেবিলের সাথে চেপে ধরলো।
#চলবে?
#হৃদয়স্পর্শী_মায়াবিনী
#নুসাইবা_ইসলাম_হুর (মিমি)
#পর্বঃ১৮
কারেন্টের শকড খেলে যেমন মানুষের পুরো শরীর ঝাকিয়ে কেঁপে ওঠে ঠিক তেমন কেঁপে উঠল ফারিসতা পুরো শরীর। ধড়ফড়িয়ে উঠলো অন্তঃপট। বক্ষজুড়ে ধড়াস ধড়াস করে শব্দ তুলছে বরংবার। আকস্মিক ঘটনায় মেয়েটা চমকালো সাথে ভড়কালো।
একদম চিৎকার দিবে না এটা আমার বাসা। চিৎকার দিয়ে আমাকে কেইস খাওয়ানোর ফন্দি আটছো?
তাজের চিবানো কথায় ফারিসতা সহসা চমকে উঠলো। এটা ওনার বাসা তাহলে ইনিই এই ফারজানা আন্টির ছেলে ভাবতে ফারিসতা চোখ বড় বড় করে কিছু বলতে চাইলে বলতে পারলো না তাজের বলিষ্ঠ হাতের চাপায় মুখে পড়ে। এদিকে এমন খসখস শক্ত হাতের চাপে ওর কোমল মুখটা ইতিমধ্যে ব্যথায় টনটনানিয়ে উঠেছে। ফারিসতা তাজের বন্দী হাতে থেকে ছোটার জন্য ছটফটিয়ে উঠলো।
ফারিসতার ছটফটানি দেখে তাজ ফারিসতার মুখ থেকে হাত সড়ালো না বরং ফারিসতার আরেকটু নিকটে গিয়ে ভ্রু গুটিয়ে ফারিসতার চোখের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো,
আমি তোমার কোন বোনকে বিয়ে করেছি যে তোমার শা*লা লাগি?
তাজের এবারের কথায় ফারিসতার চোখ কোটর থেকে বেড়িয়ে আসার উপক্রম হলো। ওর বিড়বিড়ানী এই লোক শুনেছে ভাবতে ফারিসতার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়লো।
আমি রসকষহীন? দুজনের মাঝে থাকা যতটুকু দূরত্ব ছিলো সেটাও ঘুচে নিয়ে তাজ ফারিসতার একদম নিকটবর্তী হয়ে বলে উঠলো কথাটা।
তাজের এমন ঘনিষ্ঠতায় ফারিসতার নিঃশ্বাস আঁটকে আসার উপক্রম হলো। তাজের গরম নিশ্বাস আছড়ে পড়ছে ওর মুখ জুড়ে। প্রতিটি নিঃশ্বাসের তোপে কেঁপে উঠছে মেয়েটা সর্বাঙ্গ জুড়ে। ধড়াস ধড়াস করে হার্টবিট ওঠানামা করছে। কোনো পুরুষের এতটা ঘনিষ্ঠতায় কাটা দিয়ে উঠলো পুরো শরীর। এতক্ষণ ছটফট করতে থাকা শরীর টা বরফে পরিণত হয়ে গেলো। একবিন্দু নড়ার শক্তিটাও যেনো হারিয়ে ফেললো।
ফারিসতার কম্পনরত মুখটা খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখলো তাজ। তখন চোখ আটকালো ধীরে ধীরে ফারিসতার ফর্সা গালে রক্তিম আভা ধারণ হতে দেখে। তাজ নিজেকে নিজে প্রশ্ন করলো মেয়েটা লজ্জা পাচ্ছে? ওতো লজ্জা পাওয়ার কিছু করেনি কিন্তু এই অবুঝ বেপরোয়া ছেলেটাকে কি আদো জানে একটা পুরুষের এমন ঘনিষ্ঠতায় একটা মেয়ের নিঃশ্বাস আঁটকে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট?
এদিকে ফারিসতা আর ওভাবে থাকতে না পেরে শেষে কোনো উপায় না পেয়ে তাজের হাতে কামড় বসিয়ে দিলো। আকস্মিক কামড়ে তাজ ফারিসতার মুখ থেকে হাত সরিয়ে ফেলতে ফারিসতা যেই দৌড়ে ওখান থেকে পালাতে যাবে তার আগে তাজ টেবিলের দুইপাশে হাত দিয়ে দুই হাতের মাঝে ফারিসতাকে বন্দী করে নিলো।
তাজের এহেন কাজে ফারিসতার মাথা যেয়ে ঠেকলো তাজের বুকে সাথে সাথে ফারিসতার হৃদপিণ্ড ছলাৎ করে উঠলো। ফারিসতা দ্রুত নিজেকে সামলে এবার চোখমুখ শক্ত করে খ্যাক করে বলে উঠলো,
কি সমস্যা সড়ুন সামনে থেকে।
এতক্ষণ চুপসে থাকা মেয়েটা হঠাৎ এমন খ্যাক করে ওঠায় তাজ ফারিসতার দিকে কিছুটা ঝুকে বলে উঠলো না সড়লে কি করবে?
তাজের এমন কথায় ফারিসতা চোখমুখ কুঁচকে তাজের দিকে তাকাতে ফারিসতার মুখের উপরে তাজ ফু দিলো যার দরুন চোখ খিঁচে বন্ধ করে ফেললো ফারিসতা। কাপলের দুই পাশে এলোমেলো হয়ে আছড়ে পড়ে থাকা ছোট ছোট চুলগুলো মৃদু উড়ে আবার নিজের স্থানে বসে গেলো। সব কিছু অবলোকন করে তাজ এক হাত দিয়ে টেবিলের একটা ড্রয়ার খুলে বলে উঠলো,
এখানে তোমার রসকষআলা উপন্যাসের অভাব নেই যতগুলো লাগে নিয়ে নেও এ বলে ফারিসতাকে আর বিরক্ত না করে দূরত্ব বজায় করে দাঁড়ালো তাজ।
তাজ দূরে সড়তে ফারিসতা হাঁপ ছেড়ে বেঁচে খিঁচে থাকা চোখ খুলে আরো চোখে পাশের ড্রয়ারে থাকা উপন্যাসের বই গুলো অবলোকন করে লাগবে না বলে এক ছুটে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।
ফারিসতাকে এভাবে পালাতে দেখে তাজ কিছুটা শব্দ করে হেঁসে ফেললো এই ত্যাড়া মেয়েকে জব্দ করতে পেড়ে। তাজ হাসতে হাসতে সোফার সাথে গা এলিয়ে দিয়ে নিজেই নিজেকে বলে উঠলো মনে হচ্ছে তুই ইদানিং একটু বেশি হাসছিস। কথাটা বলতে তাজের চোখের সামনে ভেসে উঠলো তখনের ফারিসতার লজ্জামাখা রক্তিম মুখশ্রী সাথে সাথে তাজ বুকের বা পাশে হাত রেখে বলে উঠলো শুভ্র পরী কি জাদু করে এভাবে পাথর হৃদয় ভেদ করে স্পর্শ করে দিলে আমায়? হৃদয়স্পর্শ যেহেতু একবার করেই ফেলেছো এবার রেডি থেকো এই বেপরোয়া ছেলেকে সামলানোর জন্য কথাটা বলে তাজ উঠে ফ্রেশ হয়ে নিচে নামতে নামতে তাজ তাহমিনা বেগমের উদ্দেশ্যে বলে উঠলো, মা খিদে পেয়েছে খাবার দেও এ বলে ডাইনিং টেবিলের কাছে যেতে নিবে তখন ফারজানা বেগম অবাক হয়ে বলে উঠলো তুমি…
ফারজানা বেগমের কথায় তাহমিনা বেগম বলে উঠলো তাজকে আগে থেকে চিনিস তুই? সেদিন আদরিবার বার্থডে পার্টিতে ও উপস্থিত ছিলো না তাই পরিচয় করিয়ে দিতে পারিনি।
তাহমিনা বেগমের কথায় ফারাজানা বেগম এক গাল হেঁসে বলল হ্যা তোর ছেলেকে চিনবো না? তাজ এইতো দুই দুবার করে আমার মেয়েকে প্রটেক্ট করলো। প্রথমে জ্বরে মেয়ের অবস্থা খারাপ হয়ে গিয়েছিলো তখন ফার্স্ট তাজের কাছে ওকে নিয়ে যেতে ওর ট্রিটমেন্টে আল্লাহর রহমতে ফারিসতা সুস্থ হয়ে ওঠে তারপর সেদিন লিফটে আটকা পড়ে নিক্টোফোয়ার জন্য ফারিসতা জ্ঞান হারায় তখন তাজ এই ওকে প্রটেক্ট করে। তোর ছেলেটার কাছে আমি ঋণি হয়ে গেলাম। সেদিন ও না তাকলে আমার ফারিসতার কি হতো ভাবতে আমার কলিজা কেঁপে ওঠে। অনেক অনেক দোয়া রইলো তোমার জন্য বাবা।
ফারনাজানা বেগমের কথায় চৌধুরী পরিবারের সবাই চোখ বড় বড় করে একে অপরের দিকে চাওয়া চাওয়ি করতে লাগলো। যেনো কেউ নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারলো না। সবার এমন অভিব্যক্তি দেখে তাজ কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে পড়লো।
এদিকে তিফাজ চৌধুরী সিঁড়ি বেয়ে নামছিলো তখন ফারজানা বেগমের পুরো কথাই তার কানে যেতে মনে মনে ভাবলো এই মেয়ে এই পারবে তার ত্যাড়া ছেলেকে সোজা করতে কথাটা ভাবতে তিনি খুশি হয়ে গেলেন। সামনে কি কি করতে হবে সেটাও মনে মনে কশে নিয়ে নিচে নামতে তাহমিনা আর রেহেনা বেগম সবাইকে তাড়া দিয়ে খাওয়ার জন্য ডাকলো। সবার সাথে গল্প গুজবের মাঝে কারোই দুপুরো খাওয়া হয়নি তাই সবাই এক এক করে ডাইনিং টেবিলে বসতে সাফওয়ান খেয়াল করলো ফারিসতার পাশের চেয়ার খালি তা দেখে সাফোয়ান খুশি হয়ে সেই চেয়ারে বসার জন্য পা বাড়াতে যাবে তখন ধাপ করে সেই চেয়ারটায় তাজ বসে পড়লো। তাজকে বসতে দেখে সাফোয়ানের হাসিখুশি মুখটায় আধার নেমে এলো ফারিসতার পাশে বসতে না পাড়ার জন্য। সাফোয়ান মুখ আঁধার করে তাজের পাশের চেয়ারটায় বসে পড়লো।
এদিকে পাশে হঠাৎ করে তাজ এভাবে বসায় হকচকিয়ে উঠলো ফারিসতা। তখন রুমের কথা মনে পড়তে স্বাভাবিক গতিতে চলতে থাকা হার্টবিট এবার দ্রুতগতিতে লাফাতে লাগলো। এই হার্টবিট এমন লাফালাফিতে ফারিসতা এবার বিরক্তির শেষ সীমানায় চলে গেলো।
তাহমিনা আর রেহেনা বেগম মিলে সবাইকে খাবার বেড়ে দিতে ফারিসতা যেই না টেবিলের নিচ থেকে হাত উঠাতে নিবে তখন একটা উষ্ণ খসখসে হাত টেবিলের নিচ থেকে ওর ডান হাত চেপে ধরতে ধরফরিয়ে উঠলো ফারিসতা। আকস্মিক ঘটনায় মেয়েটা চমকে তড়িৎ গতিতে তাজের দিকে তাকাতে দেখতে পেলো তাজ নিজের মত করে খাবার তুলে মুখে দিচ্ছে যেনো কি হচ্ছে ও কিছুই জানে না। এদিকে তাজের এহেন কাজে ইনার পুরো শরীর শিড়শির করে উঠলো। হুট করে তাজের এমন বিহেভিয়ারের মানে বুঝতে সক্ষম হলো না মেয়েটা। ফারিসতা এবার দাঁতে দাঁত চেপে তাজের হাত থেকে নিজের হাত ছুটানোর জন্য মোচড়ামুচড়ি করতে লাগলো কিন্তু তাজের ওই বলিষ্ঠ হাতের কাছে ওর পুটি মাছের মতো হাতের শক্তিতে পেড়ে উঠলো না। শেষে কোনো উপায় না পেয়ে ফারিসতা নিজের শরীরের সব শক্তি প্রয়োগ করে টেবিলের নিচে তাজের পায়ে লাত্তি মারলো কিন্তু দুর্ভাগ্যবসত লাত্তি তাজের পায়ে না লেগে গিয়ে লাগলো সাফোয়ানের পায়ে।
এদিকে সাফওয়ান সবে খাবার মুখে দিতে আকস্মিক এমন লাত্তি খেয়ে মস্তক উঠে গেলো। হঠাৎ সাফোয়ানের এমন কাশি ওঠায় রেহেনা বেগম দ্রুত সাফওয়ানের দিকে পানি এগিয়ে দিয়ে বলল, তোর খাবার কি কেউ নিয়ে যাচ্ছে? আস্তে খা।
সাফোয়ান দ্রুত মায়ের হাত থেকে পানি নিয়ে এক টানে পুরো গ্লাস ফাঁকা করে স্বাভাবিক হতে অবিশ্বাস্য চোখে তাজের দিকে তাকালো। বুঝে উঠতে পারলো না তাজ ওকে ঠিক কি করণে এভাবে লাত্তি মারলো। সাফোয়ানকে এভাবে নিজের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে তাজ বলে উঠলো তোর খাবার আমি নেইনি তোর প্লেটেই আছে।
তাজের এহেন কথায় থতমত খেয়ে গেলো সাফোয়ান। খাবার টেবিলে উপস্থিত থাকা সবার নজর ওদের দিকে খেয়াল করতে সাফোয়ান দাঁত কেলিয়ে বলে উঠলো কিছু হয়নি সবাই খাওয়া শুরু করো এ বলে সাফোয়ান থতমত মুখে খাবার খেতে লাগলো।
লাত্তি তাজের পায়ে না পড়ে সাফোয়ানের পায়ে পড়েছে বুঝতে পেরে ফারিসতা দাঁত দিয়ে জ্বিভ কাটলো। এরি ভিতরে তাহমিনা বেগম ফারিসতার উদ্দেশ্যে বলে উঠলো,
একি ফারিসতা তুমি খাচ্ছো না কেনো? খাবার পছন্দ হয়নি?
তাহমিনা বেগমের ছোড়া প্রশ্ন ভড়কালো ফারিসতা। এমতাবস্থায় কি করবে ঠিক বুঝে উঠতে না পেরে ফারিসতা জোর করে হাসার চেষ্টা করে বলে উঠলো না না আন্টি এমন কিছু না খাচ্ছি তো আমি এ বলে আর কোনো উপায় না পেয়ে বাম হাত দিয়ে চামচ ধরে যেই খাবার মুখে দিতে নিবে তখন ফারজানা বেগম গম্ভীর কণ্ঠে বলে উঠলো,
ফারিসতা কি সমস্যা? বা হাত দিয়ে খাবার মুখে দিচ্ছো কেনো?
মায়ের এমন প্রশ্ন ফারিসতার এবার ইচ্ছে করলো সবার সামনে এই খাবারের প্লেট দিয়ে তাজের মাথা ফাটাতে কিন্তু আপাতত সেটা করতে পারবে না কিন্তু কি করেই বা সবাইকে বুঝাবে এই দানবটা তার দানবীয় শক্তি দিয়ে ওর হাত চেপে ধরেছে।
ফারজানা বেগমের কথায় তাজ বাকা হেঁসে বলে উঠলো হাত দিয়ে খেতে ইচ্ছে করছে না তাইতো? সমস্যা নেই আমরা আছিতো এ তাজ নিজেই চামচে খাবার তুলে ফারিসতার মুখের সামনে নিতে টেবিলে উপস্থিত থাকা সবাই যেনো ১০০ ভোল্টেজের ঝটকা খেলো। সবাই হা করে তাকিয়ে রইলে তাজ ফারিসতার দিকে এমনকি তিফাজ চৌধুরী পর্যন্ত খাবার রেখে বিস্মিত হয়ে তাকালো ছেলের পানে। তাজের এমন বিহেভিয়ারটা ঠিক কেই হজম করতে পারলো না মনে হলো এ যেনো তাদের সামনে তাজ বসা না। তাজ রুপে অন্য কেউ বসা।
এদিকে তাজের কথা আর কাজে ফারিসতার মাথা এবার চক্কর কাটতে লাগলো। খাবার টেবিলে উপস্থিত সবার ধারালো চাউনি এদিকে তাজের হাতে মুঠোয় ওর হাত বন্দী। খাবার টেবিলে এসে এমন ভাবে ফেসে যাওয়ায় বসকিছু মিলিয়ে ফারিসতার মাথা চক্কর কেটে উঠলো বেশ কয়েকবার। এরি মাঝে টেবিলের নিচে ধরে রাখা ফারিসতার হাতে তাজ চাপ প্রয়োগ করলো যার অর্থ বিনাবাক্যে বুঝিয়ে দিলো খাবার মুখে তুলতে। এমতাবস্থায় ফারিসতার দরজার চিপায় পড়ার মতো অবস্থা হলো। ফারিসতা আর কোনো উপায় না পেয়ে অসহায় চোখে সবার দিকে একাবার চোখ বুলিয়ে ছোট করে হা করতে তাজ অমায়িক হাসি দিয়ে ফারিসতার মুখে খাবার তুলে দিয়ে সবার দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো,
আজব সবাই এভাবে তাকিয়ে আছো কেনো? বাসায় অতিথি এসেছে তাই অতিথি আপ্যায়ন করছি।
তাজের এহেন কথায় সবাই নড়েচড়ে বসে আবার খাওয়ায় মনোযোগ দিলো কিন্তু মনে মনে প্রতিটি মানুষ অবাকে শীর্ষে পৌঁছে গিয়েছে তাজের কান্ডে। সবাই বিষয়টা নিয়ে আর না ঘাঁটলেও রুশার মনে খটকা জাগলো খাবারের টেবিলের নিচে কিছু না কিছু তো ঘটছেই বিষয়টা দেখতে হবে ভেবে রুশা ইচ্ছে করে নিজের চামচটা ফেলে দিলো।
হঠাৎ ঝনঝন করে নিচে কিছু পড়তে সবাই আবার খাবার রেখে রুশার দিকে তাকাতে রুশা দাঁত কেলিয়ে হাসার চেষ্টা করে বলে উঠলো পড়ে গেছে এ বলে বসা থেকে চামচ ওঠানোর জন্য নিচে ঝুঁকে সামনে তাকাতে তাজের হাতের মুঠোয় ফারিসতাট হাত দেখে সহসা মেয়েটার কাশি উঠে গেলো। রুশা দ্রুত নিচ থেকে উঠে কাশতে লাগলো তা দেখে রেহেনা বেগম ফের রুশার কাছে পানি বাড়িয়ে দিয়ে ধমকে উঠে বলে উঠলো কি শুরু করেছিস দুই ভাই বোন মিলে? সবার খাওয়ায় বার বার ডিসটার্ব করছিস।
রিশা ঢকঢক করে পানি খেয়ে নিজেকে স্বাভাবিক করে ছোট করে বলে উঠলো সরি এরপর আবার সবাই খাবারে মনোযোগ দিলো। এদিকে ফারিসতার গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গিয়েছে এটা খেয়াল করে যে রুশা ওদের এভাবে দেখে ফেলেছে। তখন রুশাকে নিচে ঝুকতে দেখে ফারিসতা চোখ বড় বড় করে তাজের হাতের মুঠোয় থেকে নিজের হাত ছাড়ানোর এতো চেষ্টা করলো কিন্তু খাটাশ লোক ছাড়লো তো না এই উল্টো আরো জোরে চেপে ধরেছে। এদিকে গলা দিয়ে খাবার নামছে না তবুও একের পর এক তাজ ওর মুখে খাবার ঢুকিয়েই যাচ্ছে। এখন ফারিসতা মনে হচ্ছে এই মুহূর্তে ওর ও সাফোয়ান আর রুশার মতো কাশি উঠে যাবে কিন্তু এই মুহূর্তে সেটা ভুলেও করা যাবে না ভাবতে ফারিসতা বাম হাত দিয়ে গ্লাস টেনে নিয়ে ঢক ঢক করে পানির সাথে খাবার গিলে নিলো তখন চোখ পড়লো ফারজানা বেগম ওর দিকে সন্দিহান চোখে বার বার তাকাচ্ছে। মায়ের এই সন্দিহান দৃষ্টি দেখে ফারিসতার ঢোক গিললো।
#চলবে?
ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।
হ্যাপি রিডিং…🥰