হৃদয়স্পর্শী মায়াবিনী পর্ব-১৯+২০

0
237

#হৃদয়স্পর্শী_মায়াবিনী
#নুসাইবা_ইসলাম_হুর (মিমি)
#পর্বঃ১৯

বসন্তের হাওয়া যেমন প্রতিটি মানুষের হৃদয়ে লাগিয়ে দেয় এক ভালোলাগার দোলা ঠিক তেমনি এই বর্ষার দিনেও তাজ যেনো বসন্তের ওয়েদার ফিল করছে। নিজের মাঝে প্রেম প্রেম গন্ধ পাচ্ছে। ফারিসতারা ওদের বাসায় যাওয়ার পর থেকে কেটে গেলো কয়েক মাস। এই মাসগুলো ফারিসতাকে কম জ্বালাতন করেনি তাজ। এই হুটহাট তুলে নিয়ে এক এক জায়গায় চলে যাওয়া। আরফিদের বাসায় যেয়ে জ্বালাতন করা মোট কথায় মেয়েটাকে জ্বালাতন করতে বুকের ভিতর এক শান্তি ছেয়ে যায়। তাজ বুঝতে পারছে দিন দিন ও গভীর ভাবে শুভ্র পরীতে আসক্ত হয়ে যাচ্ছে। কথাগুলো ভাবতে ভাবতে তাজ ক্লাব থেকে বের হয়ে গাড়ির কাছে যেতে নিবে তখন ঝড়ের বেগে কেউ এসে তাজের উপরে ছু*রি চালিয়ে দেয় কিন্তু ছু*রি যেয়ে লাগে হাতের কব্জিতে সাথে সাথে টাটকা র*ক্ত গড়িয়ে পড়তে লাগলো হাত বেয়ে।

আকস্মিক এমন আক্রমণে তাজের পিছু পিছু আসা আরফি, পাপন, মাহিম আর সাব্বির স্তব্ধ হয়ে গেলো পরক্ষণে কি হয়েছে বুঝতে পেরে আরফি সবার উদ্দেশ্যে তাজের কাছে যা বলে যেই ছেলেটা তাজকে আক্রমণ করেছে সেই ছেলেটাকে ও ও ঝড়ের বেগে যেয়ে ধরে ফেলে এলোপাতাড়ি মা/র/তে লাগলো। সেই ছেলেটা আরফির হাতে ধরা পড়তে হঠাৎ করে চারপাশ থেকে মুখে রুমাল বাঁধা কালো পোশাকধারী লোকজন ওঁদের সবাইকে ঘিরে ধরতে লাগলো যেনো আগে থেকেই এদরে প্ল্যান করা ছিলো তাজকে আক্রমণ করা ব্যক্তি ধরা পরে গেলে সবাই এক সাথে মাঠে নামবে।

এদিকে হুট করে এমন আক্রমণে ক্লাবের ভিতরে থাকা সব গার্ডরা ছুটে এসে সেই পোশাকধারী ব্যক্তিদের সাথে লড়াইয়ে প্রস্তুতি নিলো আর কিছু গার্ড তাজকে প্রটেক্ট করার জন্য তাজকে চারপাশ থেকে ঘিরে ধরলো। তাজ চারপাশে একবার চোখ বুলিয়ে সবকিছু অবলোকন করে পকেট থেকে রুমাল বের করে ক্ষত স্থান বেঁধে নিয়ে গার্ডের উদ্দেশ্য বলে উঠলো,

এই লাইনের সব যানজট বন্ধ করে দিতে যাতে একটা গাড়িও ঢুকতে না পারে কথাট বলে তাজ গাড়ি ভিতর থেকে হকিস্টিক হাতে নিয়ে বলে উঠলো তাজ চৌধুরী নিজেই নিজেকে প্রটেক্ট করতে পারে তোদরে যা নির্দেশ দিয়েছি তা কর এ বলে তাজ সামনে এগিয়ে যেতে নিবে তার আগে মাহিম, পাপন আর সাব্বির তাজের সামনে দাঁড়িয়ে মাহিম বলে উঠলো, তুই গাড়িতে ওঠ বিষয়টা আমরা সামলে নিচ্ছি।

সাব্বির বলে উঠলো ভাই আপনার হাত দিয়ে এখনো ব্লা*ড বের হচ্ছে এই অবস্থা ওদের সাথে লড়াই করা ঠিক হবে না আমরা আছিতো আপনি গাড়িতে ওঠেন।

আরফি সেই লোককে মে/রে দৌড়ে তাজের কাছে এসে তাজের হাত পর্যবেক্ষণ করে আদেশের শুরে বলে উঠলো, গাড়িতে ওঠ।

এর ভিতরে শত্রুপক্ষের একজন ওদের কাছে চলে আসায় তাজ হকিস্টিক দিয়ে সেটার মাথা বরাবর বা/রি দিতে লোকটা ছিটকে যেয়ে দূরে পিচঢালা রাস্তায় লুটিয়ে পড়লো। তাজ সেটাকে মে/রে শার্টের হাতা গুটাতে গুটাতে বলে উঠলো এই সামান্য আঘাতে তাজ চৌধুরীকে দুর্বল করতে পারে না এ বলে পাপনের উদ্দেশ্যে বলে উঠলো গাড়ির পিছে হকিস্টিক আছে সেগুলো নিয়ে আসতে। তাজের কথায় কেউ আর বাঁধা না দিয়ে পাপন যেয়ে হকিস্টিক গুলো এনে সবাই একটা একটা করে নিয়ে এক সাথে হামলে পড়লো মুখে কাপর বাঁধা লোকগুলো উপরে। তাজ, আরফি, পাপন মাহিম আর সাব্বির মিলে একে একে কালো পোশাকধারী সবকয়টা লোককে মে/রে ছিন্ন বিচ্ছিন্ন করে দিতে লাগলো। গার্ডরা রাস্তার দুই মাথায় ঘেরাও করে দাঁড়িয়ে আছে যেনো ভিতরে কোনো গাড়ি প্রবেশ করতে না পারে। এর মাঝে মুখোশধারী লোকদের সংখ্যা বাড়তে লাগলো যাদের প্রত্যেকের হাতে ধারালো অ/শ্র কিন্তু ওই ধারালো অ/শ্র দিয়েও ওদের পাঁচ জনের সাথে কেউ পেরে উঠলো না। সব কটাকে মে/রে ছিন্ন বিচ্ছিন্ন করে টাল দিয়ে পিচ ঢালা রাস্তায় মাঝে ফেলে রাখলো।

রাস্তার দুই পাশে গার্ডরা ঘেরাও দেওয়ায় দুই পাশে লেগে গেলো বিশাল জ্যাম। সবাই চুপ্টি করে গড়ি থামিয়ে বসে আছে এদের মা/রা/মা/রি শেষ হলে রাস্তা ফাকা করে দেওয়ার অপেক্ষায়। মনে মনে সবাই তাজ চৌধুরীর এমন রাস্তা আঁটকে মা*রা*মা*রি করায় ক্ষিপ্ত হলেও সেটার প্রতিবাদ করার সাহস কারো নেই। রাস্তার এক পাশে দুটো রিকশা চালক রাস্তার মাঝে মাথায় হাত দিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েছে কারণ তারা ভুলবসত গার্ডের দেওয়া সীমানা অতিক্রম করায় তাদের রিক্সা ভেঙে টুকরো টুকরো করে ফেলেছে। যেই রিকশা চালিয়ে তাদের পেট চলে সেই রিকশা হারিয়ে দুজন কান্নায় ভেঙে পড়লো এখন তাদের কি হবে। দুজন অসহায় দরিদ্র মানুষের এমন অসহায়ত্বে কারো করো কাছে খারাপ লাগলেও কারো সাধ্য নেই তাজ চৌধুরীকে এর প্রতিবাদ করার।

****
ফারিসতার এক্সাম ছিলো মাঝ রাস্তায় এসে দেখলো সব গাড়ি থেমে আছে কেউ কেউ উল্টো ঘুরেও চলে যাচ্ছে। সব কিছু অবলোকন করে ফারিসতা হাত ঘড়ি বার বার দেখতে লাগলো। পরীক্ষায় লেট হয়ে যাচ্ছে এখানে এভাবে আটকা পড়ে থাকলে আজ আর পরীক্ষা দেওয়া লাগবে না তাই ফারিসতা আর বসে না থেকে রিকশাওয়ালার ভাড়া মিটিয়ে রিকশা থেকে নেমে জ্যাম পেরিয়ে সামবে হাঁটা দিলো৷ কিছু দূর যেতে তাজদের মা/রা/মা/রি করতে দেখে ফারিসতার মাথায় ধাউ ধাউ করে আগুন জ্বলে উঠলো। ওর যেমন পরীক্ষায় লেট হচ্ছে এমনি লেট হচ্ছে সবার কর্মক্ষেত্রে কিন্তু কেউ প্রতিবাদ করতে এগিয়ে যাচ্ছে না তা দেখে ফারিসতা এগিয়ে যেতে নিলে গার্ডরা বাঁধা দিলে গার্ডদের অবজ্ঞা করে ফারিসতা এগিয়ে যেতে চোখ পড়লো রাস্তার মাঝে ভেঙে চুরমার হয়ে পরে থাকা রিকশার দিকে আর তার পাশে অসহায় অবস্থা মাথায় হাত দিয়ে বসে থাকা দুজন বৃদ্ধার দিকে তা দেখে ফারিসতা চোখমুখ আরো শক্ত করে তাজদের দিকে এগিয়ে গেলো যারা রাস্তার মাঝে লুটিয়ে পড়ে থাকা লোকদের শাসাচ্ছে কিছু একটা জানার জন্য।

এদিকে নিচে পড়ে থাকা লোকদের কে পাঠিয়েছে জানার জন্য আরফিরা সবাইকে হু*মকি দিচ্ছিলো তখন ওদের দিকে ফারসিতাকে এগিয়ে আসতে দেখে সবাই সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে গেলো। ফারিসতাকে আসতে দেখে আরফি তাজের রক্তিম মুখশ্রীর দিকে একবার তাকিয়ে আরফি দ্রুত ফারিসতার কাছে এগিয়ে গিয়ে বলে উঠলো,

দেখো ফারিসতা আমি তোমাকে আদরিবার মতো নিজের বোন ভাবি। এতদিন তোমাকে যতটা চিনেছি তাতে বুঝতে পেরেছি তুমি প্রতিবাদী একটা মেয়ে কিন্তু এখানে কি হয়েছে, কেনো এদের মারা হয়েছে কিছু তুমি জানো না। আজ কারো মাথা ঠিক নেই তাই তোমাকে বলছি এসব ঝামেলায় জড়াতে এসো না। চুপচাপ এখান থেকে চলে যাও… বিলিভ মি তোমার ভালোর জন্য কথাটা বলছি।

কিসের ভালোর জন্য বলছেন কথাটা ভাইয়া? আজ আমি এখান থেকে ব্যাক করলে আমার এক্সাম মিস হয়ে যাবে যার দরুন আমার লাইফ থেকে একটা বছর হারিয়ে যাবে। আমি আমার স্বপ্ন পূরণে একধাপ পিছয়ে যাবো এই ভালো চান?

ফারিসতার এক্সামের কথা শুনে আরফি মাথা ঝাঁকিয়ে বলল, ঠিক আছে তুমি আমার সাথে চলো। এখানে কোনো কথা না বলে অপজিট পাশে যেয়ে গাড়ি নিয়ে হলে পৌঁছে যাও তাহলেতো প্রবলেম সলভ?

আরফির কথায় ফারিসতা তাচ্ছিল্য হেঁসে বলে উঠলো আমাকে বোন ভাবেন তাই আমার প্রবলেম সলভ করে দিলেন কিন্তু বাকিদের? আপনাদের মতো সবার বাবার অট্টালিকা নেই যে যা খুশি করে বেরাবে। এখানে জ্যামে আঁটকে আছে অনেক মানুষ যারা নিজেদের কর্মক্ষেত্রে যাওয়ার জন্য সকাল সকাল বাসা থেকে বেরিয়েছে যাতে ঠিক টাইমে অফিসে পৌঁছাতে পারে। কিন্তু এদের মাঝ রাস্তায় সব যাতায়াত বন্ধ করে দেওয়ায় অনেকের অফিসে পৌঁছাতে দেরি হয়ে যাবে যার জন্য অনেকে অফিসে ঢোকার অনুমতি এই পাবে না বা অনেকে অনুমতি পেলেও তাদের মাইনে থেকে কেটে যাবে তাদের আজকের স্যালারি। এই একদিনের স্যালারি দিয়েও হাজারো মধ্যবিত্ত পরিবারের পেট চলে। এই যে দুজন বৃদ্ধার রিকশা ভেঙে গুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে আজকের পর বউ বাচ্চা নিয়ে না খেয়ে তাদের ম/র/তে হবে পারবেন সবার প্রবলেম সলভ করতে?

ফারিসতার এমন কথায় আরফি বলার মতো কিছু খুঁজে পেলো না। কি বলবে? বলার ভাষাটাই যে এই মেয়ে কেড়ে নিলে। সত্যি পথে চলা মেয়েটার প্রতিটি কথাই যে সত্যি। কিন্তু এই মেয়েকে কি করে বোঝাবে এখানে চারপাশে শত্রুরা ওত পেতে আছে। এই মেয়ে যে তাজের দুর্বলতা এটা যদি ভুলেও কেউ টের পায় তাহলে নিজের অজান্তেই যে ওর জীবনটা কতটা রিস্কি হয়ে যাবে তা কল্পনাও করতে পারবে না কথাটা ভেবে আরফি কিছু বলতে যাবে তার আগে ফারিসতা আরফিকে থামিয়ে দিয়ে আরফির থেকে কয়েক কদম দূরে দাঁড়িয়ে থাকা তাজের সামনে যেয়ে শান্ত গলায় বলে উঠলো,

ক্ষমতা ভালো কিন্তু ক্ষমতার অপব্যবহার করা অন্যায়। ক্ষমতার অপব্যবহার করে অসহায় মানুষদের আরো অসহায় না করে দিয়ে সেই অসহায় মানুষদের সাহায্য করে দেখুন দেখবেন সেখানেই জীবনের আসল শান্তি। এভাবে আপনি অনেক ক্ষমতাবান ক্ষমতার অধিকারী হবেন কিন্তু জীবনের আসল শান্তিতা কখনো উপভোগ করতে পারবেন না। জীবনটাকে হিংস্র পশুর ন্যায় না করে শিমুল তুলোর ন্যায় কোমল হয়ে দেখুন। অসহায় মানুষদের এভাবে অসহায় না করে দিয়ে তাঁদের পাশে দাঁড়াতে শিখুন। আপনার ভয়ে গুটিয়ে থাকা প্রতিটি মানুষ এখন আপনাকে মনে মনে অভিশাপ দিচ্ছে তখন দেখবেন আপনাকে ভয় পাওয়া মানুষগুলো আপনাকে ভয় পেলেও মন খুলে দোয়া করবে সেখানেই জীবনের স্বার্থক। এভাবে অসহায় মানুষদের পেটে পা/রা দিয়ে তাদের খাবার কেড়ে না নিয়ে তাদের খাবার দিতে শিখুন।

ফারিসতার প্রতিটি কথা শ্রবণ হতে দাগ কাটলো তাজের মনে। শত্রুদের সাথে হাট্টা হাট্টি লড়াইয়ের মাঝে ক্ষতি করেছে হাজারো অসহায় মানুষদের কিন্তু সেটা চোখ দিয়ে দেখলেও হৃদয় দিয়ে উপলব্ধি করেনি। তাজ তাকালো ফারিসতর স্নিগ্ধ আদলে। এই স্নিগ্ধ মেয়েটা কি বুঝতে পারছে আজকের পর থেকে এর কতটা রিস্কি লাইফ লিড করতে হবে? যত দ্রুত সম্ভব এখান থেকে ফারিসতাকে সড়ানো জরুরি তাই তাজ তর্ক বা রাগারাগি না করে চেক বের করে আরফির হাতে দিয়ে বলল ক্ষতিপূরণ দিয়ে দে এদের।

সবসময়ের মতো ওদের কাজে বাঁধা দেওয়ায় তাজকে আজ রাগতে না দেখে এমন শান্ত থাকতে দেখে চমকালো ফারিসতা। সেই সাথে যাদের ক্ষতি করেছে তাদের ক্ষতিপূরন দিচ্ছে বিষয়টা ঠিক হজম করতে পারলো না।

তাজ চারেদিকে সচেতন দৃষ্টি বুলিয়ে শান্ত গলায় ফারিসতার উদ্দেশ্যে বলল গাড়িতে ওঠো…

তাজ গাড়িতে উঠতে বলায় চমকে উঠলো ফারিসতা। ফারিসতা চমকে তাজের দিকে তাকাতে তাজ চেচিয়ে বলে উঠলো,

গাড়িতে উঠতে বলেছি কানে যায় না?

তাজের এমন চেঁচানোতে ফারিসতার অন্তরাত্মা সহ সব কেঁপে উঠল। হঠাৎ করে শান্ত থাকা তাজকে এভাবে রেগে যেতে দেখে ফারিসতা জড়সড় হয়ে গেলো। কি করবে এখন ও সেটা ভাবতে আচমকা হাতে টান পড়াতে ফারিসতা হকচকিয়ে চোখ তুলে তাকাতে দেখতে পেলো তাজ ওকে এক টানে গাড়িতে উঠিয়ে দিয়ে কিছু বুঝে ওঠার আগে হাওয়ার বেগে সেখান থেকে চলে গেলো।

গাড়ি কিছুদূর যেতে ফারিসতা আরো চোখে তাজের শক্ত মুখের দিকে তাকালো। এই কয়েক মাসে কম জ্বালাতন করেনি লোকটা ওঁকে। এই কয়েক মাসে তাজের এমন জ্বালাতনে তাজের গ্যাঙপার্রটির উপরে আস্তে আস্তে ফারিসতার ভয়ের রেশ কমে গিয়েছে সেই সাথে তাজের প্রতিও আগের মত ভয় কাজ করেনা তাইতো তখন সাহস করে সবার মাঝে যেয়ে কথাগুলো বলেছিলো কথাগুলো ভাবতে ফারিসতার চোখ যেয়ে ঠেকলো তাজের হাতের দিকে। হাতের দিকে চোখ যেতে ধক করে উঠলো ফারিসতার বক্ষ। জানে তাজ রেগে আছে তবুও ফারিসতা সাহস যুগিয়ে চটপটে স্বরে বলে উঠলো, মাস্তানি করে হাত কেটেছেন সেটা ব্যান্ডেজ না করে কার জন্য বসে আছেন?

এমনি ফারিসতার উপরে তাজ ক্ষেপে ছিলো তার উপরে ফারিসতার কথা শুনে যেনো আগুনে ঘি ঢালা হয়ে গেলো। তাজ ক্ষিপ্ত হয়ে হঠাৎ গাড়ির ব্রেক কশে ফারিসতার দিকে ঝুঁকে চোয়াল শক্ত করে বলে উঠলো,

বার বার বলেছি সব ঝামেলায় নিজেকে জড়াবে না তবুও সাহস হলো কি করে তখন সবার মাঝে যাওয়া? এর ফলে কত শকুনের চোখ তোমার দিকে পড়েছে তার ধারণা আছে? ইডিয়েট

তাজের কথায় তাচ্ছিল্য হেঁসে ফারিসতা বলে উঠলো,

গত কয়েক মাস যাবত আপনি যেভাবে আমার সাথে চিপকে আছেন। যখন যা ইচ্ছে করছেন এতে এখনো মনে হয় আপনার শত্রুদের চোখে আমি পরিনি?

ফারিসতার প্রত্যুত্তরে এবার দমে গেলো তাজ। তাজকে দমে যেতে দেখে ফারিসতা ফের তাজের চোখের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো কেনো আমার পিছে পড়েছেন? আপনার ক্ষমতা আছে তাই আপনি অনায়াসে হাজারো শত্রুর মোকাবিলা করতে পারবেন কিন্তু আপনার মতো আমার ক্ষমতা নেই যে প্রতিনিয়ত শত্রুর মোকাবিলা করবো। কেনো আমার মতো সাধারণ একটা মেয়েকে নিজের সাথে জড়িয়ে এভাবে আমাকে ধ্বংস করে দিচ্ছেন? আমি জানি আমার লাইফের এখন প্রতিটি মুহূর্তে কতটা রিস্কি। এও জানি আপনার চ্যালা সাব্বির সবসময় আমাকে নজরে রাখছে কেউ যাতে আমার ক্ষতি না করে। কিন্তু এই বন্দী জীবন আমি কখনো চাইনি। আমি আমার জীবনটাকে এনজয় করতে চাই। পাখির মতো উড়ে বেরাতে চাই তাহলে কেনো আমার স্বাধীনতা গুলো দিন দিন এবাবে কেঁড়ে নিচ্ছেন?

এর জন্য তুৃমি নিজে দায়ী কথাটা বলে তাজ আবার আগের জায়গায় গিয়ে চোয়াল শক্ত করে গাড়ি স্টার্ট দিলো। রীতিমতো রাগে কপালের রগগুলো ফুলে উঠেছে ইচ্ছে করছে পাশে বসে থাকা মেয়েটার গালে ঠাটিয়ে একটা থাপ্পড় মেরে বয়রা করে দিতে এতো বেশি বোঝার জন্য। ও এতদিন জ্বালাতন করেছে, হুট হাট করে তুলে নিয়ে এক এক জায়গায় চলে গিয়েছে সবকিছু সেইফটি রেখেই করেছে যাতে শত্রুরা টেরও না পায় তাজ চৌধুরীর দুর্বলতার কথা কিন্তু এই মেয়ে পাকনামি করে আজ সব কিছু ওলোট পালোট করে দিয়েছে ভাবতে তাজের রাগে কপালের শীরা গুলো লাফাতে লাগলো।

#চলবে?

#হৃদয়স্পর্শী_মায়াবিনী
#নুসাইবা_ইসলাম_হুর (মিমি)
#পর্বঃ২০

ভার্সিটির সামনে গাড়ি থামতে তাজ সামনের দিকে তাকিয়েই গম্ভীর কণ্ঠে বলে উঠলো নামো।

তাজের কণ্ঠস্বর শুনে ফারিসতার ভাবনার ছেদ ঘটতে দেখলো ভার্সিটিতে পৌঁছে গিয়েছে। ফারিসতা ভারাক্রান্ত মন নিয়ে তাজের কাটা হাতের দিকে একবার চেয়ে তপ্ত শ্বাস ফেলে গাড়ি থেকে নীরবে নেমে গেলো। ফারিসতা গাড়ি থেকে নামতে তাজ শা শা করে গড়ি নিয়ে মুহূর্তে মাঝে সেখান থেকে চলে গেলো। ফারিসতা তাজের গাড়ির দিকে চেয়ে রইলো এক ধ্যানে। দিন দিন তাজের পাগলামিতে কেমন একটা ভেরাজালে মধ্যে আঁটকে যাচ্ছে ও। যত চাচ্ছে তাজের থেকে দূরে যেতে তত করে আঁটকে যাচ্ছে তাজের জীবনে। কথাগুলো ভেবে ফারিসতা দীর্ঘনিঃশ্বাস ছেড়ে ভার্সিটিতে প্রবেশ করার জন্য গেটের সামনে যেতে রাশফিয়া আর আদরিবাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে চমকে উঠলো৷ এতক্ষণ বেখেয়ালি ভাবে থাকায় রাশফিয়া আর আদরিবাকে ফারিসতা খেয়াল করেনি যা দরুন ওদের খেয়াল হতে চমকালো ফারিসতা।

ফারিসতার চমকানো মুখের দিকে ভ্রু কুঁচকে রাশফিয়া আর আদরিবা তাকিয়ে রইলো তা দেখে ফারিসতা চোখ ছোট ছোট করে বলে উঠলো,

আজব এভাবে তাকিয়ে আছিস কেনো দুজনে?

ফারিসতার প্রশ্নে রাশফিয়া ভ্রু নাচিয়ে বলে উঠলো ঘটনা কি দোস্ত সত্যি করে বলতো।

রাশফিয়ার এমন প্রশ্নে ফারিসতার রাশফিয়ার পিঠে চাপর মেরে বলে উঠলো, একদম উল্টা পাল্টা কিছু বলবি না। ঘটনা কি তা তোরা জানিস না? নিজেরাইতো দেখতে পারছিস কয়েক মাস যাবত তাজ চৌধুরীর জ্বালাতন। আজো তার ব্যতিক্রম কিছু না।

ফারিসতার কথায় আদরিবা বলে উঠলো আমি শিওর তাজ ভাইয়া তোকে পছন্দ করে। তাজ ভাইয়ার আচরণ দেখে সন্দেহ জাগায় কাল রাতে আরফি ভাইয়াকে জেরা করি সত্যি বলার জন্য। ভাইয়া বলতে না চাইলেও আমার চাপে পড়ে বলেছিলো তাজ ভাইয়া উইক তোর উপরে।

আদরিবার কথায় চমকানোর কথা থাকলেও চমকালো না ফারিসতা। এই কয়েক মাসে তাজের আচর দেখে ফারিসতাও সেটা উপলব্ধি করেছে। কিন্তু যেটা হওয়ার না সেটা আর সামনে না গাড়ানোই ভালো তাই ফারিসতা ভাবলো তাজের সাথে এ ব্যপারে সরাসরি কথা বলবে।

এখন কি করবি? চিন্তিত অবস্থায় বলে উঠলো রাশফিয়া।

আদরিবা বলল, এতো চিন্তা করছিস কেনো? তাজ ভাইয়াকে সবাই যতটা খারাপ ভাবে ভাইয়া আসলে ততটাও খারাপ না শুধু রাগটা একটু বেশি যার জন্য কখন কি করে বসে নিজেও জানেনা কিন্তু ভাইয়া যেই জিনিসটা ভালোবাসে সেটাকে এমন ভাবে আগলে রাখে যে কারে সাধ্য নেই সেই জিনিসটা নষ্ট করার।

হ্যা এখন তো ভাইয়ের সাফাই গাবি এই, চোখ পাকিয়ে বলে উঠলো রাশফিয়া।

এটা যদি আরফি ভাইয়া হতো তাহলে বলতে পারতি নিজের ভাইর সাফাই গাই। বিলিভ মি আমি সত্যি বলছি তাজ ভাইয়াকে সবাই ভায় পায় দেখে সে জন্য সবার তার প্রতি নেগেটিভ একটা ধারণা থাকে কিন্তু সত্যি বলতে ভাইয়া অমন না। ভাইয়া যে পদে আছে সেই পদে প্রতিনিয়ত শত্রুর সাথে মোকাবিলা করতে হয় এই জন্য প্রায় সময় এই তাদের মারপিট করতে দেখা যায় বাট সেটা শত্রুর সাথে, কোনো সাধারণ মানুষের সাথে না।

আদরিবা আর রাশফিয়ার কথোপকথন শুনে ফারিসতা এবার চোখমুখ কুঁচকে ধমকে বলে উঠলো থামবি তোরা? কি করবো না করবো তা পরে দেখা যাবে এখন ভিতরে চল এক্সাম শুরু হয়ে যাবে।

ফারিসতার ধমকে রাশফিয়া আর আদরিবা চুপ হয়ে গেলো। বুঝতে পারলো আজ ফারিসতার মেজাজ ঠিক নেই তাই এই টপিক নিয়ে কেউ আর কথা বাড়ালো না।

*****
তাজ ফারিসতাকে ভার্সিটিতে পৌঁছে দিয়ে সোজা ক্লাবে চলে গেলো। তাজ ক্লাবে পৌঁছাতে আরফি, মাহিম, পাপন আর সাব্বির তাজের কাছে এগিয়ে আসলো। তাজ সবার দিকে একবার তাকিয়ে সাব্বিরের উদ্দেশ্যে বলে উঠলো ভার্সিটিতে যা সাথে গার্ড বাড়িয়ে দে। আজকের পর ওর উপরে অ্যাটাক হওয়ার সম্ভাবনা আছে তাই সারাক্ষণ ওর উপরে নজর রাখা চাই। সন্দেহজনক কিছু চোখে পড়লে সাথে সাথে আমাকে জানাবি।

তাজের কথায় সাব্বির সম্মতি দিয়ে আচ্ছা ভাই বলে ক্লাব থেকে বেরিয়ে গেলো সাথে নিয়ে গেলো কিছু গার্ড।

সাব্বির যেতে আরফি তাজের হাতের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো এখনো হাতে ব্যান্ডেজ করিসনি কেনো? হাতে ইনফেকশন হয়ে গেলে করবি?

সময় পাইনি এখন করবো ফাস্ট এইড বক্স নিয়ে আয়।

তাজের কথায় সম্মতি দিয়ে ওরা তিনজন ফাস্ট এইড বক্স নিয়ে তাজের পিছু গেলো। তাজ ওর কেবিনে যেয়ে বসে এইড বক্স খুলে হাতের রক্ত ক্লিন করতে লাগলো। এতখানি জায়গা কেটে গেছে এখন নিজেই মেডিসিন দিয়ে সেই ক্ষত পরিষ্কার করছে কিন্তু মুখে দেখা গেলো না কোনো ব্যথার্ত আর্তনাদ তা দেখে মাহিম চোখ ছোট ছোট করে তাজের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো,

মানুষ আসলে ঠিক এই বলে ডক্টর রা আসলেই কসাই। দেখ কিভাবে নিজের ক্ষত নিজে ক্লিল করছে, না আছে ভয় আর না আছে ব্যথা। কি দিয়ে তৈরি তুই মামা? এত জখম ক্ষততেও তোর একটু ব্যথা করছে না?

মাহিমের কথায় তাজ ফিচলে হেঁসে বলে উঠলো, মনের ব্যথার কাছে এ ব্যথা খুবি নগন্য।

তাজের জবাবে আরফি অস্থির চিত্তে বলে উঠলো মনের ব্যথা মানে? কি হয়েছে তোর?

আরফির এমন বোকা প্রশ্নে পাপন আরফির কাঁধে চাপর মেরে বলে উঠলো এই ব্যথা সেই ব্যথা না মামা এই ব্যথা ভাবিকে না পাওয়া ব্যথা। তুমি তো আমাদের লেদা ফিটার খাওয়া বন্ধু কিছু বুঝো না।

পাপনের কথায় আরফি চোখমুখ কুঁচকে বলে উঠলো, আমি তোর মতো প্রেম বিশেষজ্ঞ ছাগল না যে এসব বুঝবো।

প্রেম বিশেষজ্ঞ ডক্টরের জায়গায় ছাগল বলায় পাপন দাঁত কটমট করে বলে উঠলো। হ্যা তুমিতো কিছু বোঝো না ফিটার খাও। উপরে উপরে ভাজা মাছ উল্টে খেতে না পড়লেও তলে তলে কি করে বেরাও তা আমাদের কানেও আসে।

তাজ এদের তর্ক বিতর্ক থামাতে ধমকে বলে উঠলো থাম তোরা আগে বল কিছু জানতে পেরেছিস?

এতো মার খেয়েও শা*লারা মুখ খোলেনি। বুঝতে পারছি না কে এভাবে সবকিছু নিখুঁত পরিকল্পনা করে মাঠে খেলতে নেমেছে আর নাহলে বুঝতে পারছিস মার খেয়ে এক একজনের নিঃশ্বাস আঁটকে আসার উপক্রম তবুও মুখ খুলছে না।
আরফির বলা কথার মাঝে হন্তদন্ত হয়ে কেবিনে প্রবেশ করল সৌরভ চৌধুরী।

এই টাইমে ক্লাবে সৌরভ চৌধুরীকে দেখে তাজ চেয়ার ছেড়ে উঠে বলে উঠলো চাচ্চু তুমি এখানে?

সৌরভ চৌধুরী বিচলিত হয়ে তাজের কাছে গিয়ে তাজের হাতে ব্যান্ডেজ করা দেখে রাগে হুঙ্কার ছেড়ে বলে উঠলো শু*বা*চ্চা ওকে আমি জানে মে/রে ফেলবো কত বড় কলিজা তোর উপরে অ্যাটাক করিয়েছে।

সৌরভ চৌধুরীর হুঙ্কারে তাজ ভ্রু কুঁচকে বলে উঠলো, এক মিনিট… কে এমন করেছে তুমি জানো?

সৌরভ চৌধুরী রাগে বিশ্রী ভাষায় কয়েকটা গালি দিয়ে বলে উঠলো ডক্টর নিহার খানের ছোট ভাই নাসির খান মা* এই কাজ করিয়েছে। ওই মা* এই কয় মাস আমাকে হুমকি দিচ্ছিলো এমপির পদ থেকে সড়ে যেতে যাতে আমার আসনে নিজে বসতে পারে। তোর উপরে অ্যাটাক করার পর আমাকে হুমকি দেওয়ার জন্য ফোন করতে সাথে সাথে ওই নাম্বারের লোকেশন ট্র্যাক করে শু* বা*চ্চা*র পরিচয় জানতে পারি৷

সৌরভ চৌধুরী কথা শুনে টগবগিয়ে উঠলো তাজের শরীরের রক্তকণা গুলো। তাজ চোখমুখ লাল করে সৌরভ চৌধুরীকে বলল, চলো এ বলে বড়বড় কদম ফেলে কেবিন থেকে বেরিয়ে গেলো। তাজের পিছু পিছু সবাই যেতে তাজ যেয়ে ড্রাইভিং সিটে বসে পড়লো। তজের পাশে যেয়ে বসলো সৌরভ চৌধুরী আর পিছে বসলো আরফি, পাপন আর মাহিম। সবাই বসতে তাজ চোখমুখ শক্ত করে রকেট বেগে গাড়ি স্টার্ট দিয়ে এসে থামলো খান ভিলায়। গন্তব্যে পৌঁছে সবাই এক সাথে গাড়ি থেকে নেমে বাসার ভিতরে ঢুকতে গেলে দারোয়ান বাঁধা দিলে তাজ সজোরে দারোয়ানের নাক বরাবর ঘুষি মা*রতে ব্যাটা সেখানেই কপোকাত।
দারোয়ানকে মে*রে সবাই বাসার সামনে যেয়ে কলিংবেল চাপতে পঁয়ত্রিশ উর্ধে এক মহিলা এসে দরজা খুলে দিলো। যার পুরো শরীরে লেপ্টে আছে আভিজাত্যের ছোয়া। মিসেস জেরিনা দরজা খুলে দরজার বাহিরে তাজদের দেখে একটু চমকালেও সেটা বুঝতে না দিয়ে গম্ভীর কণ্ঠে বলে উঠলো,

কাকে চাই?

নাসির খান বাসায় আছে? সৌরভ চৌধুরী বলে উঠলো।

মিসেস জেরিন সবার দিকে চোখ বুলিয়ে সন্দিহান কণ্ঠে বলে উঠলো আছে, বাট ক….

সম্পূর্ণ কথা শেষ করার আগে মিসেস জেরিনকে অবজ্ঞা করে সবাই হনহনিয়ে বাসার ভিতরে ঢুকতে পিছ থেকে মিসেস জেরিন চেচিয়ে বলে উঠলো, কি সমস্যা আপনারা কিছু না বলে এভাবে বাসায় ঢুকছেন কেনো?

নিচে চেচামেচি শব্দ শুনে নাসির খান রুম ছেড়ে বেরিয়ে সিঁড়ি কাছে আসতে কিছু বুঝে ওঠার আগে এক আগন্তক ঝড়ের বেগে ছুটে এসে বুক বরাবর সজোরে লাত্তি মারায় ছিটকে সিঁড়ি থেকে গড়াতে গড়াতে নিচে পড়ে গেলো। আকস্মিক আক্রমণে নাসির খানের নাকে আঘাত লেগে গলগলিয়ে নাক দিয়ে র*ক্ত ঝড়তে লাগলো। তিনি উঠে বসার আগে সেই আগন্তক সিঁড়ি থেকে মেনে তার কলার টেনে ধরে উঠিয়ে এলোপাতাড়ি শরীরের বিভিন্ন স্থানে জখম ভাবে আঘাত করতে লাগলো।

বাসার ভিতরে এমন হই হুল্লোড়ের আওয়াজ পেয়ে গার্ডরা ছুটে আসতে সবার মাঝে তুমুল লড়াই বেজে গেলো।

হঠাৎ করে বাসার এমন পরিস্থিতি এমন বদলে যাওয়ায় একজন গার্ড ডক্টর নাহিরকে ফোন করে বিষয়টা জানাতে কিছুক্ষণের ভিতরে ডক্টর নাহির এসে ড্রয়িংরুমে উপস্থিত হতে দেখতে পেলো ড্রয়িংরুমে যত কাচের জিনিসপত্র আছে সব ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে মেঝেতে পড়ে আছে। গার্ডরা সব টাল হয়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে এক এক জায়গায় পড়ে আছে। সবার মাঝে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছে নাসির খান যার চারপাশে ক্ষিপ্ত হয়ে দাঁড়িয়ে আছে তাজরা। নিজের ভাইকে এভানে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে ডক্টর মাহির ছুটে সেখানে যেয়ে হুঙ্কার দিয়ে তাজের উদ্দেশ্য বলে উঠলো,

তাজ গুন্ডামীর একটা সীমা থাকে সেই সীমা তুৃমি এবার অতিক্রম করে ফেলেছো। কোন সাহসে আমার বাসায় এসে আমার ভাইয়ের গায়ে হাত তুলেছো?

হসপিটালের সিনিয়র ডক্টর হিসেবে ডক্টর নাহির খানকে যথেষ্ট সম্মান তাজ করে কিন্তু আজ সেই সম্মনটা হাওয়ায় মিলিয়ে গিয়ে তাজ ও হুঙ্কার ছেড়ে বলে উঠলো,

তোর ভাই এখনো শ্বাস নিতে পারছে এটা ওর সাত কপালের ভাগ্য। ওর কলিজা টেনে ছিড়ে ফেলিনি সেই জন্য শুকরিয়া আদায় কর।

তাজের এমন তুই তোকারিতে ডক্টর নাহির চমকে উঠে বলে উঠলো,

হাউ ডু ইউর বিহেব? আমি তোমার সিনিয়র এভাবে তুই তোকারি কেনো করছো?

রাখ তুই তোর সিনিয়র। এখনো সময় আছে তোর ভাইকে শুধরে নিতে বল আর নাহলে এই নিঃশ্বাস নেওয়াটার ও সুযোগ পাবে না।

তাজ এবার তুমি বেশি বারাবাড়ি করছো। কি করেছে আমার ভাই?

তা তোর ভাইর কাছ থেকেই জেনে নে কথাটা বলে তাজ নাসির খানের দিকে ঝুঁকি বলে উঠলো আজ ভিক্ষা দিয়ে গেলাম তোর জীবন বাট নেক্সট টাইম সেটারও সুযোগ পাবিনা কথাটা বলে সবাইকে নিয়ে হনহনিয়ে বেরিয়ে গেলো। যাওয়ার সময় সৌরভ চৌধুরীর চোখে পড়লো ড্রয়িংরুমের এক কোনায় দাঁড়িয়ে মিসেস জেরিন তাদের দিকে গম্ভীর নেত্রে তাকিয়ে। ভদ্রমহিলাকে অনেকটা রহস্যময়ী ঠেকলো সৌরভ চৌধুরীর কাছে। কারণ যতক্ষণ তাঁরা এখানে মা*রা*মা*রি ভাঙচোর করছিলো ভদ্রমহিলা রা রো কোনো শব্দ করেনি শুধু গভীর ভাবে তাকিয়ে ছিলো তাদের পানে। ভদ্রমহিলার পড়নে প্রশাধনীর ছায়া থাকলেও মুখে যেনো লেপ্টে আছে এক অসমান অসহায়ত্ব কিন্তু সেই অসহায়ত্ব অতি সপ্তপর্ণে লুকিয়ে রেখেছে নিজের গম্ভীর মুখশ্রীর আড়ালে।

#চলবে?

ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।
হ্যাপি রিডিং…🥰