হৃদয়স্পর্শী মায়াবিনী পর্ব-২১+২২

0
243

#হৃদয়স্পর্শী_মায়াবিনী
#নুসাইবা_ইসলাম_হুর (মিমি)
#পর্বঃ২১

নাসির খানকে মে/রে হুমকি দিয়ে তাজরা হনহনিয়ে বের হয়ে সবাই আবর আগের মতো গাড়িতে উঠতে তাজ গাড়ি স্টার্ট দিয়ে কিছুদূর যেতে একটা রিক্সা লেগে যায় গাড়ির সাথে। এমন কাজের সাথে সাথে তাজের মেজাজ চটে গেলো। তাজ গাড়ির ব্রেক কোষে চোখমুখ শক্ত করে গাড়ি থেকে নামতে রিক্সাওয়লা দৌড়ে এসে তাজের পায়ের কাছে পড়ে আহজারি করে বলতে লাগলো আমার ভুল হইয়া গেছে ভাই আমারে ক্ষমা কইরা দেন। আমার একমাত্র সম্বল এই রিকশাডা ভাইঙ্গা দিয়েন না দরকার হইলে আমারে মা*রেন এমন আরো অনেক আহাজারি করতে লাগলো লোকটা।

লোকটার এমন আহাজারিতে তাজের মন গলল না এমনি মাথা গরম তার উপরে রিকশাওয়ালার কাজে তাজের মন চাইলে সব কিছু ভস্ম করে দিতে। তাজে রাগে হুঙ্কার ছেড়ে কিছু বলতে যাবে তখন কানে কাছে বেজে উঠলো ফারিসতার বলা সেই কথা..

জীবনটাকে হিংস্র পশুর ন্যায় না করে শিমুল তুলোর ন্যায় কোমল হয়ে দেখুন। অসহায় মানুষদের এভাবে অসহায় না করে দিয়ে তাঁদের পাশে দাঁড়াতে শিখুন। আপনার ভয়ে গুটিয়ে থাকা প্রতিটি মানুষ এখন আপনাকে মনে মনে অভিশাপ দিচ্ছে তখন দেখবেন আপনাকে ভয় পাওয়া মানুষগুলো আপনাকে ভয় পেলেও মন খুলে দোয়া করবে সেখানেই জীবনের স্বার্থক। অসহায় মানুষদের পেটে পা/ড়া দিয়ে তাদের খাবার কেড়ে না নিয়ে তাদের খাবার দিতে শিখুন এটাই সত্যিকারে মানুষের পরিচয়।

কথাগুলো স্মরণ হতে তাজ কিছুটা নরম হয়ে আসলো। রিক্সাওয়ালাকে ওঠ বলতে গিয়েও ফারিসতার কথা স্মরণ হতে নিরেট স্বরে বলে উঠলো ওঠেন….

তাজের আপনি সম্মোধনে সৌরভ চৌধুরী সহ গাড়িতে উপস্থিত থাকা সবার চোখ বড় বড় হয়ে গেলো।

রিকশাওয়ালা উঠতে তাজ রিকশাওয়ালার কাধে মৃদু চাপড় দিয়ে গম্ভীর কণ্ঠে বলল, মাত্র এক্সিডেন্ট হয়ে যেতো এখন থেকে সাবধানে রিকশা চালাবেন এ বলে লোকটাকে যেতে বললে লোকটার মুখে ফুটে উঠলো খুশির ঝলক। তা দেখে থমকায় তাজ। লোকটার মুখের খুশির ঝলক দেখে এই প্রথম তাজ মনের ভিতর কিছু একটা অনুভব করলো। তাহলে কি এই অনুভূতিটাই জীবনের আসল শান্তি? কাউকে উপকার করার শান্তি?

রিকশাওয়ালা যেতে তাজ ঘুরে গাড়িতে উঠতে সবাই চোখ গোল গোল করে তাজের দিকে তাকিয়ে রইলো তা দেখে তাজ সবার দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন ছুড়লো কি হয়েছে?

তাজের প্রশ্নে সবাই এক সাথে দুই পাশে মাথা নাড়িয়ে না বোঝালো যে কিছুনা। কিন্তু সবাই মনে মনে অবাকের শীর্ষে পৌঁছে গেলো তাজের এই পরিবর্তন হতে দেখে। সৌরভ চৌধুরী অবিশ্বাস্য চোখে তাজের দিকে তাকিয়ে ভাবতে লাগলো হুট করে তার ভাতিজার এতো পরিবর্তন হলো কিভাবে।

ভাবনার মাঝে তাজ সবাইকে ক্লাবের কাছে ছেড়ে দিয়ে সৌরভ চৌধুরীকে নিয়ে সোজা বাসায় চলে গেলো। বাসায় পৌঁছে সবে ড্রয়িংরুমে পা দিতে তিফাজ চৌধুরী চোখমুখ লাল করে ঠাস করে তাজের তাজের গালে চ*র বসিয়ে দিলো।

আকস্মিক থাপ্পড়ে ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেলো তাজ। দূর থেকে তাহমিনা বেগম ছুটে আসতে আসতে বলে উঠলো কি করছেন কি এত বড় ছেলের গায়ে হাত…

তাহমিনা বেগমকে থামিয়ে দিয়ে তিফাজ চৌধুরী হুঙ্কার ছেড়ে বলে উঠলো যেখানে আছো সেখানেই থেমে যাও এ বলে তিফাজ চৌধুরী তাজের কলার টেনে ধরে রাগে হিসহিসিয়ে বলে উঠলো,

সাহস হলো কি করে ডক্টর নাহির খানের বাসায় যেয়ে গুন্ডামী করার? কোন সাহসে তার ভাইকে মেরেছো? আর কত ছোট করবে আমাকে মানুষের কাছে? শেষে কিনা ডক্টর নাহির খানের সাথেও বেয়াদবি করেছো। তিলে তিলে আমার কষ্টের গড়া মানসম্মান প্রতিনিয়ত এভাবে ধূলোয় মিশিয়ে না দিয়ে বরং আমাকে তুমি মে/রে ফোলো বুঝতে পেরেছো। আমার এই তিলে তিলে গড়া সম্মান এভাবে চোখের সামনে ধুলোয় মিশে যাওয়ার থেকে ম/রে যাওয়া ভালো।

তিফাজ চৌধুরীর বলা শেষ উক্তিটি কর্ণগোচর হতে তাজ ধেয়ে আসায় গলায় বলে উঠলো বাবা….

কে তোমার বাবা হ্যা? আমি তোমার বাবা না। আজকের পর থেকে তোমার বাবা ম/রে গেছে।

ভাই কি বলছো এসব তুৃমি? এক পাক্ষিক কথা শুনে তুমি তাজের সাথে এমন বিহেভিয়ার করতে পারো না।

সৌরভ চৌধুরীর কথায় তিফাজ চৌধুরী রাগে হিতাহিত জ্ঞানশূণ্য হয়ে তাজকে ছেড়ে ধেয়ে যেয়ে সৌরভ চৌধুরীর কলার টেনে ধরে বলে উঠলো,

তোর এই মুখ দিয়ে দ্বিতীয়বার আমাকে ভাই ডাকবি না। নিজের জীবন তো নষ্ট করেছিস সেই সাথে আমার ছেলের জীবন ও নষ্ট করেছিস। সব কিছু তোর জন্য হয়েছে শুধু তোর জন্য।

সৌরভ চৌধুরী এতদিন সবকিছু মুখবুজে সহ্য করলেও আজ যেনো সহ্যের সীমা পার হয়ে গেলো। সৌরভ চৌধুরী এক ঝটকায় কলায় থেকে তিফাজ চৌধুরীর হাত সরিয়ে চিৎকার দিয়ে বলে উঠলো,

হ্যা আমার জন্য সব হয়েছে তো আমাকে যা করার করো। তাজের উপরে কেনো তার জেদ খাটাচ্ছো। ডক্টর নাহির খানের ভাইকে মারার জন্য নিজের ছেলের কাছে নিজেকে মৃত বলতে তোমার বুক কাঁপলো না? নাহির খানের ভাই কি করেছে সেটা খোঁজ নিয়েছো একবার? আজ সঠিক সময় তাজ সব কিছু সামলে না নিলে এতক্ষণ ছেলের লা*শ এসে পৌঁছাতো তোমার পায়ের কাছে সেটা দেখলে খুব ভালো লাগতো?

সৌরভ চৌধুরীর শেষ কথাটা কর্ণগোচর হতে থমকে গেলো তিফাজ চৌধুরী। তিনি চমকে ছেলের দিকে তাকাতে চোখ পড়লো ছেলে তার দিকে নীরবে চেয়ে যেটা দেখার সাথে সাথে তার বুকের দক করে উঠলে। পরক্ষণে ছেলের হাতের ব্যান্ডেজ চোখে পড়তে আচমকা বুকের ভিতর কামড় মেরে উঠলো। তিফাজ চৌধুরী নিজেকে সামলে প্রশ্নবিদ্ধ চোখে সৌরভ চৌধুরীর দিকে তাকাতে সৌরভ চৌধুরী তাচ্ছিল্য হেঁসে বলে উঠলো,

ভালো লাগছে ছেলের হাতের ব্যান্ডেজ দেখে? আজ যেই ছু*রির আঘাত ছেলের হাতে দেখছো সেই ছু*রির আঘাত তোমার ছেলের পেটে পেতে। ভাগ্য সহায় ছিলো দেখে ছু*রি পেটে না লেগে হাতে লেগেছে আর এই কাজ করেছে তোমার সম্মানীয় ডক্টর নাহিরের খানের ভাই নাসির খান। যে তোমার ছেলের লা*শ তোমার পায়ের কাছে ফেলতে চেয়েছে তাকে মা*রার জন্য তুমি তোমার ছেলেকে আজ এত বড় কথাটা বললে? যেই ছেলে তোমাকে ভালোবেসে তোমার হচ্ছে পূরণের জন্য নিজের রাজনীতির প্রতি ঝোঁকের স্বপ্ন ছেড়ে দিয়ে এখনো ডাক্তারি পেশা ধরে রেখেছে সেটা তোমার চোখে পড়ছে না তোর চোখ আঁটকে আছে ছেলে কেনো ক্ষমতা দাপট দেখিয়ে মা*রা*মা*রি করবে। কখনো দেখেছো ছেলে কাদের মেরেছে? কোনো সাধারণ মানুষকে মেরেছে নাকি শত্রুর মোকাবিলা করার জন্য লড়েছে। যাদের হাতে একবার ক্ষমতা দাপট আসে তাড়া তোমার মতো সাধারণ জীবনযাপন করতে পারবে না তাদের বাঁচতে হলে লড়াই করেই বাঁচতে হবে। এখন বলো ছেলের লা*শ নিজের দুই চোখে দেখতে চাও তাহলে আজি ও সব ছেড়ে দিবে। আমি নিজে দাঁড়িয়ে থেকে ওকে সব কিছু থেকে সরিয়ে নিয়ে আসবো। কথাগুলো বলে সৌরভ চৌধুরী একটু দম নিয়ে আবার বলা শুরু করলো,

রাজনীতি নিয়ে তোমার সব সমস্যা কারণ রাজনীতি করলে সাধারণ জীবন যাপন করা যায় না চারেদিকে শত্রু ওত পেতে থাকে মারার জন্য। তুমি এমন রিস্কি লাইফ লিড করতে চাও না তাই তুমি রাজনীতি হেট করো কিন্তু তোমার কি মনে হয় শুধু রাজনীতির মাঝেই শত্রুতা তৈরি হয় অন্য কিছুতে হয় না? তুমি কি জানো তোমার এই সম্মানীয় পেশা ,এই বিশাল অট্টালিকার জন্য প্রতিনিয়ত তোমার থেকে সব কেঁড়ে নেওয়ার জন্য কত শত্রু ওত পেতে থাকে? তোমার হসপিটালের শেয়ার কেঁড়ে নেওয়ার জন্য কত শত মানুষ দিনের পর দিন ছক করে যাচ্ছে। কিন্তু কোনো কিছুতেই কেউ সফল হয়নি কারণ তোমার অবর্তমানেই আমরা সবাইকে সরিয়ে দিচ্ছি। তোমার সকল সমস্যা তাজ আর আমার পেশা নিয়ে। ধরে নেও আজ আমরা তোমার সমস্যার পেশা ছেড়ে দিয়ে আমরা দুজন দূরে চলে গেলাম তাহলেতো আমাদের কোনো শত্রুর তোমার পরিবারের উপরে কোনো অ্যাটাক করবে না তখন তুমি বাসার সব সেইফটি বন্ধ করে দিবে। একটা সাধারণ মানুষের মত জীবন যাপন করবে তখন তোমার পিছে থাকা আসল শত্রুদের মুখ দেখতে পারবে। শত্রুতা শুধু রাজনীতিতেই গড়ে ওঠে না তোমার মত যাদের এই অট্টালিকা আছে তাদেরও প্রীতি পদে পদে শত্রু ঘুরে বেরায়। রাজনীতি খারাপ না কিন্তু রাজনীতি অপব্যবহার খারাপ। কখনো নিজের দুই চোখ খুলে একবার দেখেছো এই রাজনীতির কখনো অপব্যবহার করেছি নাকি এই ক্ষমতা দিয়ে সাধারণ মানুষের মুখে হাসি ফুটিয়েছি?

সৌরভ চৌধুরীর প্রতিটা কথা তীরের মতো বিধলো যেয়ে তিফাজ চৌধুরীর বুক পাঁজরে। যেই আদরের ছোট ভাইয়ের সাথে রাগে অভিমানে কতগুলো বছর ঠিক ভাবে কথা বলা হয়নি আজ সেই ভাইয়ের প্রতিটি কথায় গভীর ভাবে দাগ কাটলো তার মনে। হঠাৎ করে বুকের ভিতর চিনচিন করে ব্যথা উঠতে লাগলো। তিফাজ চৌধুরী ব্যথার্ত চোখে ভাইয়ের দিকে চোখ তুলে তাকাতে চোখের সামনে ভেসে উঠলো ভাইয়ের মাঝে লুকিয়ে রাখা এত বছরের কাতরানো অনুভূতি। তা দেখে তিফাজ চৌধুরীর বুকে ব্যথা ক্রমশ বাড়তে লাগলো। তিনি সৌরভ চৌধুরীর থেকে চোখ সরিয়ে ফের ছেলের পানে তাকাতে চোখে পড়লে ছেলে ঠিক একি ভাবে এখনো তার দিকে চেয়ে। ছেলের ওই নিষ্পলক তাকিয়ে থাকা চোখ জেড়াও কি তাকে অভিযোগ করছে বাবা তুমি খুব খারাপ বাবা। সারাজীবন নিজের স্বার্থ দেখে গেলে, দেখোনি ছেলের ইচ্ছে স্বাধীনতা কথাগুলো ভাবতে তিফাজ চৌধুরীর চোখ জোড়া ঝাপসা হয়ে উঠতে চাইলো। তিনি ওখানে আর দাঁড়িয়ে না থেকে নীরবে সিঁড়ি ভেঙে উপরে উঠে যেতে লাগলো। পা জোড়া ক্রমশ অবশ হয়ে আসছে তবুও তিনি থামলো না। বিড়বিড় করে শুধু বলল, আমি একজন খারাপ বাবা, একজন খারাপ ভাই। আমি স্বার্থপর কারণ আমি নিজের কলিজাদের হারিয়ে ফেলার ভয় পেয়ে এদের ইচ্ছে স্বাধীনতা কেঁড়ে নিয়ে নিজের মতো গড়ে তুলতে চেয়েছি।

এতক্ষণের পুরো ঘটনা নীরবে অবলোকন করছিলো চৌধুরী বাড়ির প্রতিটি সদস্য। সেই সাথে আজ সবার চোখজোড়া যেনো বাঁধ ভেঙে ফেললো। ভিজে উঠলো সবার চোখ। তাহমিনা বেগম হেকচি তুলে কান্না করে ছেলের দিকে এগিয়ে যেতে নিলে তাজ হাতের ইশারায় থামিয়ে দিয়ে বলে উঠলো,

আমি ঠিক আছি মা, আমাকে একটু একা থাকতে দেও কথাটা বলে তাজও ধীর পায়ে উপরে উঠে গেলো। তাজের পিছু পিছু সৌরভ চৌধুরী ও নীরবে উপরে চলে গেলো। তাঁরা যেতে লিভিংরুম জুড়ে ছেয়ে গেলো পিনপতন নীরবতা। তার মাঝে ডুকরে কেঁদে উঠলো তাহমিনা বেগম।
তাহমিনা বেগমের কান্নায় রেহেনা বেগম যেয়ে তাহমিনা বেগমকে ধরে নিয়ে সোফায় বসিয়ে দিলো। রিফাজ চৌধুরী আর সাফোয়ান অফিসে, এদিকে তিফাজ চৌধুরীকেও তখন ঠিক লাগেনি ভাবতে রেহেনা বেগম তাহমিনা বেগমকে সামলাতে সামলাতে রুশার উদ্দেশ্যে বলল,

তোমার বড় আব্বুর রুমে যাও তাকে ঠিক লাগছিলো না তখন। কোনো সমস্যা হলে আমাকে এসে জানাও।

রেহেনা বেগমের কথায় রুশা চোখ মুছে সম্মতি দিয়ে উপরে উঠে গেলো। রুশা উপরে উঠতে কিছুক্ষণ পর উপর থেকে রুশার চিৎকার কানে ভেসে আসতে হন্তদন্ত হয়ে তাহমিনা আর রেহেনা বেগমের উপরে ছুটে গেলো। রুশার চিৎকার তাজের কান ও এড়ালো না। হঠাৎ বোনের এমন চিৎকারে এক অজানা কারণে তাজের বুকের ভিতর মোচড় মেরে উঠলো। তাজ ও হন্তদন্ত হয়ে দরজা খুলে বাবার রুমে কান্নার শব্দ পেয়ে ছুটে সে রুমে পা দিতে পা জোড়া থমকে গেলো।

*****
হন্তদন্ত হয়ে বিকেলে অফিস থেকে ফিরলো ফারজানা বেগম। মাকে এমন হন্তদন্ত হয়ে বাসায় ফিরতে দেখে ফারিসতা তার কাছে যেয়ে বলে উঠলো কি হয়েছে আম্মু তোমায় এমন অস্থির লাগছে কেনো?

ফারজানা বেগম অস্থির চিত্তে বলে উঠলো, তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নেও হসপিটালে যেতে হবে।

হসপিটালের যেতে হবে মানে? কার কি হয়েছে আম্মু?

তাজের বাবা হার্ট অ্যাটাক করেছে। তাহমিনার অবস্থা খুব খারাপ বার বার জ্ঞান হারাচ্ছে কান্না কাটি করছে।

ফারজানা বেগমের কথায় ফারিসতা চমকে বলে উঠলো, কি বলছো আম্মু? সেদিন ওতো আঙ্কেলকে সুস্থ দেখলাম।

এত কথা বলার সময় নেই তুমি জলদি রেডি হয়ে আসো বের হবো আমরা। ফারজানা বেগমের তাড়ায় ফারিসতা আর কোনো প্রশ্ন না করে চুপচাপ রেডি হয়ে আসতে দুজন হসপিটালের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়লো। হসপিটালে পৌঁছে চোখে পড়লো চৌধুরী পরিবারের সবাই চিন্তিত অবস্থায় করিডোরে দাঁড়িয়ে আছে। ফারজানা বেগম সেখানে যেতে তাহমিনা বেগম বসা থেকে উঠে ফারজানা বেগমকে ঝাপটে ধরে ডুকরে কেঁদে উঠলো। ফারজানা বেগম তাহমিনা বেগমকে সামলে সান্ত্বনা দিতে লাগলো।

ফারিসতা ধীর পায়ে সেখানে এসে নীরবে সবাইকে অবলোকন করলো। তাহমিনা বেগম একটু পর পর ডুকরে কান্না করে উঠছে তাকে সামলাচ্ছে ফারজানা আর রেহেনা বেগম৷ তাদের পাশে দাঁড়িয়ে কিছুক্ষণ পর হেকচি তুলছে রুশা। সৌরভ চৌধুরী আর রিফাজ চৌধুরী পাশাপাশি দুটো চেয়ারে চিন্তিত অবস্থায় বসে আছে। তার পাশে সাফোয়ান নীরবে দাঁড়িয়ে। সাফোয়ান নীরবে ফারিসতার দিকেই তাকিয়ে ছিলো যার জন্য ফারিসতা তাকাতে চোখাচোখি হয়ে যেতে ফারিসতা চোখ সরিয়ে সবার মাঝে নিজের অজান্তেই তাজকে খুঁজতে লাগলো। লোকটার বাবা হসপিটালে ভর্তি আর সে উপস্থিত নেই। কিন্তু কেনো?

#চলবে?

#হৃদয়স্পর্শী_মায়াবিনী
#নুসাইবা_ইসলাম_হুর (মিমি)
#পর্বঃ২২

অপারেশন থিয়েটার থেকে ব্যস্ত পায়ে তাজ বের হতে হতে মুখের মাক্স খুলে সামনে তাকাতে প্রথমে চোখ যেয়ে ঠেকলো মায়ের দুর্বল মুখশ্রীর দিকে। তারপর চোখ গেলো মায়ের পাশে শুকনো মুখে দাঁড়িয়ে থাকা ফারিসতার দিকে। তাজ নীরবে ফারিসতাকে একপলক অবলোকন করে মায়ের কাছে এগিয়ে গেলো।

তাজকে অপারেশন থিয়েটার থেকে বের হতে দেখে সবাই তাজের কাছে এগিয়ে গেলো। তাহমিনা বেগম চেয়ার ছেড়ে দাঁড়িয়ে তাজের হাত আকরে ধরে বিচলিত হয়ে বলে উঠলো,

কি অবস্থা তোমার বাবার? উনি সুস্থ হয়ে যাবে তো?

তাহমিনা বেগমকে এমন বিচলিত হতে দেখে তাজ মাকে একপাশ থেকে অতি সপ্তপর্ণে বুকের মাঝে আগলে নিয়ে বলে উঠলো,

শান্ত হও বাবা ঠিক আছে। অপারেশন সাকসেস হয়েছে। জ্ঞান ফিরলে কেবিলে দেওয়া হবে তখন দেখা করতে পারবে।

তাজের কথায় যেনো জীবন ফিরে পেলো তাহমিনা বেগম। বাবা মাকে হারিয়ে জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে স্বামীকে কাছে পেয়েছে। যদিও মাঝে মাঝে ছেলের জন্য তর্কে বিতর্কে দুজনের মাঝে মনমালিন্য হলেও স্বামীর প্রতি তার অগাধ ভালোবাসা। তাইতো স্বামীর এই অসুস্থতায় একদম ভেঙে পড়েছিলেন।

ফারিসতা এক কোনায় দাঁড়িয়ে নীরবে চেয়ে রইলো মা ছেলের দিকে৷ তখন অপারেশন থিয়েটার থেকে তাজকে বের হতে দেখে ফারিসতার মাথায় এসেছিলো তাজ তো ডক্টর। সবার মাঝে তাজের অনুপস্থিত থাকার কারণ যে ছেলের বাবার অপারেশন করছে সেটা ফারিসতার মাথায় এই আসেনি উল্টো তাজের অনুপস্থিতে কতো কি ভেবে বসেছিলো।

ফারিসতা একবার তাজের দিকে তাকিয়ে ব্যথিত চোখে তাকালো কেবিলের দরজার ছোট গ্লাস ভেদ করে তিফাজ চৌধুরীর দিক যার মাঝে কিছুদিন আগে বাবার মতো ভালোবাসা পেয়েছিলো। ভরসাযোগয় একটা হাত মাথায় রেখে বলেছিলো তোমার কখনো কোনো প্রয়োজন হলে এই বাবাটাকে জানিও। মনে পড়লো সেদিনের কথা,
ক্লান্ত হয়ে ভার্সিটি থেকে ফিরছিলো ফারিসতা তখন আচমকা তিফাজ চৌধুরী ইশারায় রিকশা থামাতে বলতে ফারিসতা তড়িঘড়ি করে রিকশাওয়ালাকে রিকশা থামাতে বলে তিফাজ চৌধুরী সালাম দিলো। তিফাজ চৌধুরী মৃদু হেঁসে ফারিসতার সালামের উত্তর দিয়ে বলেছিলো ওর সাথে একটু কথা আছে তাই ফারিসতাকে নিয়ে পাশেই একটা কফিশপে যেয়ে বসে। তিফাজ চৌধুরী এভাবে ডেকে আনায় ফারিসতা যখন মনে মনে আকাশ কুসুম ভাবতে ব্যস্ত তখন তিফাজ চৌধুরী বলে ওঠে,

আই ডোন্ট নো আমার কথা তুমি কিভাবে নিবে বাট কথাগুলো তোমাকে বলার খুব প্রয়োজন মনে করছিলাম। ধরে নেও আমি তোমার একটা বাবা হিসেবে কথাগুলো তোমায় বলছি। আমার ছেলেকে বিয়ে করবে?

হঠাৎ তিফাজ চৌধুরীর মুখে এই কথা শুনে চমকে উঠে ইয়ানা কাঁপা কাঁপা স্বরে বলে উঠলো, ক…কি বলছেন আপনি আঙ্কেল?

দেখো মা আমি জানিনা আমার এসব বলা ঠিক হচ্ছে কিনা। আমি আমার জীবনে কারো কাছে কখনো কিছু চাইনি কিন্তু আজ তোমার কাছে একটা জিনিস চাইতে এসেছি। তুমি পারবে আমার তাজকে ঠিক করতে। তাজকে যেভাবে ছোটবেলা থেকে গড়তে চেয়েছি ও ঠিক তার উল্টোটা হয়েছে যার জন্য আমি তাজকে ছোট বেলা থেকে অনেক চাপে রাখতাম তার ফল যে এমনটা হবে সত্যি বুঝতে পারিনি। আমার স্বপ্ন ছিলো তাজকে ডক্টর বানানো কিন্তু তাজের ঝোঁক ছিলো রাজনীতি উপরে যার জন্য সব সময় ওকে বকাঝকা, চাপের ভিতরে রাখতাম যার ফেলে আমার ছেলেটা আরো বিগ্রে যায়। ভালোবাসা কি সেই জিনিসটা উপলব্ধি করা ভুলে যায়, হাসতে ভুলে যায়, মানুষের সাথে মিশতে ভুলে যায়। আস্তে আস্তে ওর কোমল হৃদয় পাথরে পরিনত হয়। আমার চাপে পড়ে ডাক্তারি পড়া কমপ্লিট করলেও আমাদের বাবা ছেলের মধ্যে তৈরি হয়ে যাবে বিশাল দূরত্ব। সেই থেকে ছেলেটা হয়ে ওঠে বেপরোয়া। পরিবারের কারো সাথে মেশে না কথাও খুব কম বলে। রাস্তা ঘাটে মারামারি করে বেরায়। শত বুঝিয়েও ছেলেকে এসব দিক থেকে সরাতে পারিনি। আমি আমার ছেলেটাকে এভাবে দেখতে চাই না মা। ওর এই আচরণে সবাই ওকে আড়ালে মনে মনে অভিশাপ দেয় যেগুলো আমার বুকে এসে লাগে। আমি চাই আমার ছেলেটা আবার ঠিক হোক। সবার সাথে মিশতে শিখুক। হাসতে শিখুক। ওর জীবনটা এমন হওয়ার জন্য অনেকটা আমি দায়ী কারণ ওর ইচ্ছেকে প্রাধান্য না দিয়ে জোর করে ওর উপরে চাপিয়ে দিয়েছি ডাক্তারি পেশা।

জানো মা বাবা মাকে হারিয়ে আমার ছোট ভাইটাকে নিজ হাতে মানুষ করেছিলাম সেই ভাই বড় হয়ে রাজনীতির পিছে ছুটে নিজের জীনটা প্রতি পদে পদে বিপদে ফেলে দিচ্ছিলো। আদরের ভাইয়ের জীবন এমন রিস্কি হওয়ায় ওকে রাজনীতি থেকে ফোরানোর অনেক চেষ্টা করেছি কিন্তু ফেরেনি এভাবে সবচেয়ে আদের ভাই যাকে বুকে আগলে রাখতাম তার সাথে তৈরি হয়ে যায় দূরত্বের ফারাক। আমি চাইনি আমার ছেলের সাথেও আমার এই দূরত্ব আসুক। তাই ছেলেকে নিজের মতো করে গড়তে চেয়েছিলাম এতে ছেলের সাথে ভাইয়ের চেয়েও বেশি দূরত্ব তৈরি হয়ে যাবি কল্পনা করিনি।

এক সাথে কথাগুলো বলে থামলো তিফাজ চৌধুরী। ফারিসতা তিফাজ চৌধুরীর প্রতিটি কথা নীরবে শ্রবণ করে তাকিয়ে রইলো তিফাজ চৌধুরী চিকচিক করে ওঠা চোখ জোড়ার দিকে। সবার থেকে শুনেছিলো বাবা ছেলের সম্পর্ক সাপ আর নেউলের। কিন্তু সেই সম্পর্কে আড়ালে বাবা যে ছেলেকে কতটা ভালোবাসে বুঝতে পারলো ফারিসতা। এর পর তিফাজ চৌধুরীর সাথে ফারিসতার আরো অনেক সময় কথা হয়। লোকটা অনেক আকুতি করে বলেছিলো ও এই পারবে তার ছেলেকে ঠিক করতে। সব শেষে ফারিসতার মাথায় স্নেহের হাত বুলিয়ে বলেছিলো কখনো কোনো প্রয়োজন হলে এই বাবাকে জানিও। বাবা কে ছাড়া বড় হওয়া মেয়েটার হঠাৎ বাবার মতো স্নেহের হাত মাথায় পড়তে সেদিন চোখ জোড়া অশ্রুতে চিকচিক করে উঠেছিলো।

কথাগুলো মনে পড়তে ফারিসতার চোখজোড়া আবার চিকচিক করে উঠলো। ফারিসতা কেবিনের দিক থেকে চোখ সরিয়ে তাকালো তাজের শুকনো ক্লান্ত মুখের দিকে যে অতি সপ্তপর্ণ মাকে নিজের বাহুডোরে আগলে নিয়ে ভরসা দিচ্ছে বাবার কিছু হবে না। বাবা ছেলের ভিতরে দূরত্বের ফারাক থাকলেও দু’জনেই দুই পাশ থেকে দুজনকে আড়ালে ভালোবেসে গিয়েছে কিন্তু দু’জনের মাঝে দূরত্ব থাকায় কারো ভালোবাসাটা কেউ উপলব্ধি করতে পারেনি ভাবতে ফারিসতা গভীর ভাবে নিঃশ্বাস নিলো। বাবা থাকতেও এদের বাবা ছেলের মাঝে কতটা দূরত্ব আর যার বাবা নেই সে কতটা কাঙাল থাকে বাবার মতো বটবৃক্ষের একটু ছায়াতলের আশায়।

ঘন্টা খানেক পর তিফাজ চৌধুরীর জ্ঞান ফিরতে তাজ তাকে কেবিনে শিফট করে সবাইকে বলল দেখা করে আসতে। একে একে সবাই কেবিনে যেতে সবার শেষ ইয়ানা কেবিনের ভিতর যেতে নিবে তার আগে হাতে টান পড়াতে ফারিসতা চমকে পিছু ফিরতে তাজের হাতের মুঠোয় নিজের হাত আবদ্ধ দেখে ফারিসতা ভ্রু কুঁচকে বলে উঠলো,

কি সমস্যা?

তাজ ফারিসতার কথার উত্তর না দিয়ে ফারিসতাকে মৃদু টান দিয়ে নিজের সামনে এনে ধীর গলায় বলল,

চোখ বন্ধ করো।

আকস্মিক তাজের কাজে ধড়ফড়িয়ে উঠলো ফারিসতার বক্ষ। কম্পিত হলো চোখের পল্লব। ফারিসতা এলোমেলো ভাবে চোখের পল্লব ঝাপটে কাঁপা কাঁপা স্বরে বলে উঠলো,

ক…কি করছেন ছাড়ুন।

চোখ বন্ধ করো…

ক…কেনো?

করতে বলেছি করো।

করবো না ছাড়ুন আমায়।

ওঁকে করা লাগবে না কথাটা বলে তাজ ফারিসতাকে ফের টান দিয়ে দুজনের মাঝে থাকা দূরত্ব এবার পুরোপুরি ঘুচে নিলো। আকস্মিক তাজের কাজের ফারিসতা চমকে তাজের দিকে তাকাতে তাজের পলকহীন দৃষ্টি ওতে আবদ্ধ দেখে হঠাৎ করে হার্টবিট বেড়ে যেতে লাগলো। ফারিসতার ধড়ফড়িয়ে উঠে তাজের থেকে দূরত্ব বজায় করার জন্য ছটফটিয়ে উঠলো। কিন্ত তাজের বলিষ্ঠ হাতের বাঁধন থেকে এক চিমটিও দূরত্ব বজায় করতে সক্ষম না হয়ে ফারিসতা ভয়ার্ত চোখে চারপাশে অবলোকন করে বলে উঠলো, প্লিজ ছাড়ুন কেউ দেখলে কি ভাববে…

চোখ বন্ধ করো জাস্ট দুই মিনিট সময় নিবো। যত দেরি করবে তত দেরিতে ছাড়া পাবে ততক্ষণে সবাই বাবার সাথে দেখা করে বেরিয়ে আসবে। কাউকে আমি পরোয়া করি না সো সবাই চলে আসলেও আমার কিছু যায় আসে না এবার তুমি কি করবে সেটা তোমর চিন্তা।

তাজের এমন কথায় ফারিসতা শঙ্কায় এত্র গুটিয়ে গেলো। তাজ কেনো ওকে চোখ বন্ধ করতে বলছে? খারাপ কোনো মতলব আছে কিনা ভাবতে ফারিসতার মন শঙ্কিত হলো৷ এমতাবস্থায় কি করবে বুঝে উঠতে পারলো না৷ এদিকে সময় পেরিয়ে যাচ্ছে। এখন যদি কেউ কেবিন থেকে বেরিয়ে ওদের এই অবস্থায় দেখে তাহলে কেলেঙ্কারি বেজে যাবে ভাবতে ফারিসতা আর কোনো উপায় না পেরে দুরুদ দুরুদ বুকে চোখ খিঁচে বন্ধ করে নিলো। মনে মনে মিনতি করতে লাগলো তাজ যেনো উল্টা পাল্টা কিছু না করে। এভাবে শঙ্কার মাঝে কেটে গেলো অনেকটা সময়। এত সময়ের মাঝেও তাজের কোনো রা শব্দ না পেয়ে ফারিসতা টিপটিপ করে চোখ খুলতে সহসা বুকের ভিতর ধক করে উঠলো। কম্পিত হলো সর্বাঙ্গ। কি দেখছে লোকটা এভাবে? কি আছে তাজের এই চাউনিতে? যার শান্ত দৃষ্টি শুধু ওর মুখের উপরে আবদ্ধ যেনো বহু যুগের না দেখার তৃষ্ণা মেটাচ্ছে। কেনো যেনো ফারিসতার মনে হলো এ দৃষ্টির মাঝে নেই কোনো খারাপ উদ্দেশ্য আছে শুধু মুগ্ধতা। কিসের এতো মুগ্ধতা? কথাটা ভাবতে ফারিসতা নড়েচড়ে উঠলো।

ফারিসতার নড়ে ওঠায় ঘোর কাটলো তাজের। তাজ শেষ বারের জন্য ফারিসতার স্নিগ্ধ আদলে একবার চোখ বুলিয়ে ফারিসতাকে ছেড়ে দিয়ে দু’জনের মাঝে দূরত্ব বজায় করে ছোট করে বলল যাও….

তাজকে এভাবে ছেড়ে দিতে দেখে ফারিসতা আর কোনো কথা বলে দুরুদ দুরুদ বুকে কেবিনের ভিতর চলে গেলো।

ফারিসতা যেতে আনমনে মৃদু হাসলো তাজ। কিছু একটা আছে মেয়েটার মাঝে যেটা ওকে চুম্বকের টেনে নিয়ে যায় ফারিসতার কাছে। ওই স্নিগ্ধ আদলের দিকে একবার চোখ গেলে চোখ ফেরানো দায়। কি আছে ওই মুখে? যেই মুখটা যতই দেখুক তবুও তৃষ্ণা মেটে না। মাঝে মাঝে মন চায় মেয়েটাকে তুলে নিয়ে পুতুলের মতো করে ওর সামনে বসিয়ে রেখে মন ভোরে দেখতে এতে যদি একটু তৃষ্ণা মেটে।

**
সময়ের সাথে সাথে রাত গভীর হতে তাজ সবাইকে বাসায় পাঠিয়ে দিয়ে নিজে থাতে চাইলো হসপিটালে। তাহমিনা বেগম থাকতে চাইলেও তাজ জোর করে বাড়ি পাঠানোর জন্য রাজি করালো। সবার যাওয়ার ব্যবস্থা হলে ফারজানা বেগম সবার থেকে বিদায় নিতে নিবে তখন তাজ সাফোয়ানের উদ্দেশ্যে বলে উঠলো আন্টিদের পৌঁছে দিয়ে আয়।

তাজের কথায় ফারজানা বেগম বলে উঠলো না না বাবা পৌঁছে দেওয়ার প্রয়োজন নেই। হসপিটাল থেকে বাসা তো কাছেই চলে যেতে পারবো।

এতো রাতে দুজন মেয়ে একা যাওয়া কতটা রিস্কি সেটা আশা করি আপনাকে বোঝাতে হবে না কথাটা বলে তাজ সাফোয়ানের উদ্দেশ্যে বলে উঠলো, পৌঁছে দিয়ে আয়, না পাড়লে বল আমি দিয়ে আসবো।

তাজের কথায় সাফোয়ান তড়িঘড়ি করে বলে উঠলো, না না ভাইয়া আমি পৌঁছে দিয়ে আসতে পারবো প্রবলেম নেই। তুৃমি একটু রেস্ট করো সব ধকল তো তোমার উপর দিয়ে গিয়েছে।

ওঁকে যা তাহলে এ বলে রিফাজ চৌধুরীর উদ্দেশ্যে বলল, চাচ্চু তুমি বসাইকে নিয়ে বাসায় যাও। টেনশনের কিছু নেই বাবা এখন সুস্থ। আর কোনো সমস্যা হলে আমি আছি তো। যাও এবার সাবধানে রাত অনেক গভীর হচ্ছে।

তাজের কথায় সম্মতি দিয়ে একে একে সবাই সেই স্থান ত্যাগ করতে লাগলো। সবাইকে জোর করে পাঠালেও সৌরভ চৌধুরী থেকে গেলো৷

সবার মাঝে যাওয়ার আগে ফারজানা বেগম সন্তুষ্টির চোখে একবার তাকালো তাজের দিকে। ছেলেটার বয়স অল্প হলেও একা হাতে সব কিছু কি অবলীলায় সামলে নিলো। এত কিছুর মাঝে সবার সেইফটির কথা চিন্তা করেও কাউকে একা ছাড়েনি এমনকি তাদের ও না। ফারজানা বেগমের ভাবনার মাঝে সাফোয়ান গড়িতে উঠতে বলতে ফারজানা বেগম দেখলো দুজন পিছে বসলে বিষয়টা খারাপ দেখায় তাই তিনি ফারিসতাকে সামনে বসতে বলে পিছে যেয়ে বসলো।

ফারিসতা সামনে বসতে সাফোয়ান যেনো আকাশের চাঁদ হাতে পেয়ে গেলো এটাইতো এতক্ষণ মনে মনে চাচ্ছিলো। এটাই মোক্ষম সুযোগ ফারিসতার সাথে ভাব জমানোর তাই সাফোয়ান গাড়ি স্টার্ট দিয়ে ভাবতে লাগলো কি করে ফারিসতার সাথে কথা বলা যায় কিন্তু কোনো কিছু খুঁজে না পেয়ে সাফোয়ান গলা খাকানি দিয়ে বলে উঠলো, আদরিবা আর আপনি এক ব্যাচের?

ফারিসতা গভীর ভাবনার মাঝে ডুবে ছিলো তখন হঠাৎ সাফোয়ানের প্রশ্ন ফারিসতার ভাবনার ছদ ঘটতে নড়েচড়ে বসে বলে উঠলো হ..হ্যা।

পড়ালেখা কেমন চলছে?

ফারিসতা বুঝতে পারলো সাফোয়ান ওর সাথে কথা বলতে চাচ্ছে কিন্তু ওর এখন মোটেও কথা বলতে ইচ্ছে করছে না তবুও জোরপূর্বক মুখে হাসি টেনে বলল জি আলহামদুলিল্লাহ ভালো৷

কথার পৃষ্ঠে ফারিসতাকে শুধু কথার এন্সার দিতে দেখে সাফোয়ান বুঝলো যে ফারিসতা কথা বলতে অনিচ্ছুক তাই সাফোয়ান ফোঁস করে নিঃশ্বাস ছেড়ে আর কিছু বলল না। মনে মনে ভাবলো কি দিন আসলো যেখানে ভদ্র সভ্য হওয়ায় অনেক মেয়েরা ওর সাথে যেচে কথা বলতে আসতো কিন্তু কখনো কোনো মেয়েলি আড্ডায় জড়ায়নি আর আজ কিনা একটা মেয়ের সাথে কথা বলার জন্য কত কি করছে।

#চলবে?

ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।
হ্যাপি রিডিং…🥰