হৃদয়ের দখিন দুয়ার পর্ব-৯+১০

0
1070

#হৃদয়ের_দখিন_দুয়ার
#পর্ব-৯ ও ১০
ঝিলিক হঠাৎই শান্ত হয়ে গেল। ইশরাক এখনো পর্যন্ত সবচেয়ে নিষ্ঠুর ও নিকৃষ্ট আচরণটা বোধহয় আজ করলো। একবারও তাকিয়ে দেখলো না ঝিলিকের দিকে। একবারও না। তাকালে দেখতে পেত ঝিলিকের গভীর দুই চোখে কতটা কষ্ট আর অপমান ফুটে উঠেছে। ফেরার সময় ইশরাক জিজ্ঞেস করলো,

“কিরে তোর কী ব্যাপার? আর তো কিছু খেলি না। আইসক্রিম খাবি? চকলেট?”

ঝিলিক একদম শান্ত গলায় জবাব দিলো,

“বাসায় চলো। এসাইনমেন্ট আছে, জমিয়ে রাখা যাবে না।”

“আচ্ছা। ”

ইশরাক ঝিলিকের অবস্থা যতটুকু বুঝলো ঝিলিক তার চেয়েও বেশী কষ্ট আজ পেয়েছে। অনেক ফ্লেভারের আইসক্রিম, চকলেট আর কিছু কুকিজ কিনে নিলো ইশরাক। ঝিলিক একদম শান্ত অবস্থায় রাতে খেতে বসলো। ইশরাক একবার রেস্টুরেন্টে খাবারের অফার করেছিল ঝিলিক রাজি হয় নি।

ইশরাক মনে মনে ভাবলো অন্তত এবার যদি একটু শান্ত হয়। জোর করে যে সবকিছু সম্ভব না সেটা যদি এবার বোঝে।

ঝিলিক শান্তভাবে খেল। এরপর প্লেটগুলো ধুয়ে রেখে বইপত্র নিয়ে পাশের ঘরে গেল। ইশরাক বলল না যে এই ঘরে থেকেই পড়াশোনা কর। ও নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে পড়লো। মাঝরাতে একবার ঘুম ভাঙায় টের পেল ঝিলিক ঘুমাতে আসে নি। অতো বিচলিত হলো না অবশ্য। আবারও ঘুমিয়ে পড়লো।

****
খুশি আজ বাসায় এসেছে। এসে নাতাশাকে বলল,

“ভাবী চলো তো কয়টা দিন আমার বাসায় গিয়ে থাকবে। ”

নাতাশা প্রশ্ন করতে গিয়েও থেমে গেল। খুশির কথার অর্থ তো ও জানে। ফাহাদ বাসায় আসছে না অনেক দিন ধরে। ফোন করলেও সেটা ধরার প্রয়োজন মনে করছে না। শাশুড়ী প্রথমে নাতাশার পক্ষে থাকলেও এখন অন্য গীত গাইছে সমানে। তার ছেলেটা বাইরে কী না কী খাচ্ছে তার কোনো ঠিক নেই। ঝগড়াঝাটি কোন সংসারে না হয়। সেই সঙ্গে এসে যুক্ত হয়েছে ইশরাকের বাবা, মা। তাদের ভাষ্যমতে দোষ অনেক টা নাতাশার। এতো তাড়াতাড়ি ব্যাপার টা নিয়ে ঝামেলা না করলেও হতো। ইশরাকের বাবা, মা নাতাশা কে আগে অপছন্দ করতেন না। সুপ্রীতি ইশরাক কে নিয়ে যে জলঘোলা হয়েছে তারপর থেকে নাতাশা তাদের অপছন্দের। সুযোগ পেলেই কথা শুনিয়ে দেন।

আজ সকালে ফাহাদের বাবা বাজার করে আনলেন। এই বাড়িতে প্রতিদিনের বাজার প্রতিদিন হয়। দুটো মুরগী এনেছেন। নাতাশা কেটে একটা চড়িয়ে দিলো। পালক কে কয়েকদিন ধরে শুধু ডিম দিয়ে ভাত খাওয়াচ্ছে। এখন ডিম দেখলে ঠোঁট চেপে শক্ত হয়ে বসে থাকে। খুব সাধারণ একটা ঘটনা। রান্নাবান্না নিয়ে শাশুড়ীর মতামত নিলেও ও নিজে কিছু করলে তিনি সেটা নিয়ে কিছু বলেন না। আজ বললেন,

“আমার ছেলে কী না কী খায় আর তোমার মাংস ছাড়া ভাত গলা দিয়ে নামে না।”

কথাটা এতো খারাপভাবে বলল যে নাতাশার ইচ্ছে হলো এক ছুটে বেরিয়ে রাস্তায় চলে আসে। এই বাড়িতে সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় কে আছে ওর চেয়ে! পালক তো এখনো বোঝেনা যে কী হতে যাচ্ছে ওদের জীবনে। প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে জিজ্ঞেস করে, পাপা আতে(আসে) নাই? মেয়েটা মন খারাপ করে থাকে। ঠিকমতো খায়ও না। একবেলা ভালো করে যেন খেতে পারে সেই চাওয়াটাও কী নাতাশার অন্যায়!

দুপুরের আগে খুশি এলো ছেলেদের নিয়ে। মাংসের ভালো পিস গুলো বেছে বেছে তাদের পাতে দেয়া হলো। অথচ নাতাশাকে কতো বড় একটা কথাই না শোনালো শাশুড়ী।

বিকেলে খুশি যখন বলল ভাবী কয়টা দিন আমার বাসায় থাকবে তখন নাতাশা কিছু বলে নি। লাগেজ ভরে নিজের জিনিসপত্র, পালকের জামাকাপড়, খেলনা গোছালো। খুশি দেখে বলল, হ্যাঁ একটু বেশী করে জামাকাপড় নাও। এমনিতে তো কখনো বেশীদিন আমার বাসায় থাকো না, এবার নাহয় থাকলে। নাতাশা অনেক কিছুই আন্দাজ করে। ফাহাদ কে বাসায় এনে বুদ্ধিশুদ্ধি দেবার একটা চেষ্টা। ফাহাদ তো বলেই গেছে নাতাশা বাসায় থাকলে ও আসবে না। তাই খুশির এই আন্তরিকতা। অবশ্য আরও কারণ আছে। বিনে পয়সায় একজন লোক পাবে রান্নাবান্না করে খাওয়ানোর জন্য।

সন্ধ্যেবেলা সবার জন্য চা করলো। ইশরাকের বাবা মা’কেও ডাকা হলো। তারা এসে পুরোনো সেই বাক্যগুলো আবারও বলল। ফাহাদের কোনো দোষ নেই। অফিসে বেচারা গাধার খাটুনি খেটে বাসায় আসে। নাতাশাকে আরও সহনশীল হওয়া উচিত ছিলো। পুরুষ মানুষের অমন টুকটাক দোষ থাকে, বউকে সেটা আড়াল করতে হয়। বাপ, মায়ের সামনে ব্যাপার টা এনে মস্ত ভুল টা নাতাশা করেছে। ফাহাদের মা’কে জানালেও চলতো, বাপের সামনে ব্যাপার টা এনে বেশী ভুল করেছে। এই বংশের ছেলেদের আত্মসম্মান অনেক বেশী। ফাহাদ সেই কারণেই বেশী ক্ষেপেছে।

নাতাশা নিজেও এক কাপ চা নিলো। বারান্দায় বসে বিস্কুট ডুবিয়ে চা খেল। পরনের সালোয়ার কামিজ গুলো খুলে সুন্দর শাড়ি পরলো। কপালে টিপ দিতেও ভুল করলো না। চোখের নিচে ক্লান্তি ও টেনশনের ছাপ স্পষ্ট। শুকনো ঠোঁটে হালকা রঙের লিপস্টিক লাগালো। ওইটুকু সাজেও কতো ভালো লাগছে। ফাহাদের টিপটপ সাজুনে মেয়ে পছন্দের সেটা তো নাতাশা জানতো না। কখনো জানায় ই নি। বরং কপালের ছোট টিপটার স্বাধীনতাও কেড়ে নিয়েছিল লেকচার দিয়ে।

শাশুড়ী নাতাশাকে দেখে চোখ গরম করলেন। নাতাশা সেই দৃষ্টি উপেক্ষা করে শ্বশুরের পায়ে হাত দিয়ে সালাম করলেন। ঘরে আরও তিনজন বয়োজ্যেষ্ঠ মানুষ থাকা সত্যেও সম্মান টুকু শুধু ওই একজন ই পেলেন। ওটুকু শ্রদ্ধা ওই লোকটার প্রাপ্য ছিলো। নাতাশা জোর করে কিছু করে নি।

“বাবা আসি। আপনার প্রার্থনায় আমাদের রাখবেন। ”

বয়স্ক মানুষ টা তাকিয়ে রইলো ফ্যালফ্যাল করে। খুশি বলল,

“ভাবী এসব কী? মন খারাপ করানো কথাবার্তা বোলো না তো। বেড়াতে যাচ্ছ, ননদের বাসায় বেড়াতে যায় না।”

নাতাশা শাশুড়ীকে বলল,

“মা আমি কিন্তু এক টুকরো মাংসও পালককে খাওয়াই নি। দুধভাত গিলিয়েছি জোর করে। আপনার আজকের কথা আমি সারাজীবন মনে রাখব। মেয়েকেও মনে রাখতে বলব। ”

শাশুড়ী হতভম্ব গলায় বললেন,

“কী বলতেছ তুমি? এসব কেমন কথাবার্তা?”

নাতাশা শীতল গলায় বলল,

“এক বুক আক্ষেপ নিয়ে আপনার সংসার ছাড়ছি। আল্লাহ আপনাদের ভালো করুন।”

মুহুর্তেই গোটা ঘরটা যেন স্তব্ধ হয়ে গেল।

****
ইকরা ফাহাদের কথা খুব ভাবছে। ফাহাদ ভীষণ কেয়ারিং ও প্রটেক্টিভ। অফিসে, বাইরে সব জায়গায়ই একই রকম এটেনশন দেয় ইকরাকে। প্রথম প্রথম ওর একটু খারাপ লাগতো, নিজে বিবাহিত হয়েও সম্পর্কে জড়াচ্ছে বিবাহিত আরেকজনের সঙ্গে। কিন্তু সেটার জন্য যতটা না ও দায়ী তারচেয়ে বেশী দায়ী রুবাব। ভালোবেসে বিয়ে করেছিল রুবাব কে। আর সেটা ছিলো সবচেয়ে ভুল ডিসিশন লাইফের। রুবাব বিয়ের আগে যেমন ছিলো এখনো তেমন ই আছে। কী এক লেখালেখির ভুত মাথায় ঢুকিয়েছে। সারাদিন সেসবে মেতে থাকে। বেঁচে থাকতে হলে যে মিনিমাম টাকা, পয়সা রোজগার করতে হয় সেটুকু পর্যন্ত নেই। ব্যাংকে কিছু টাকা জমে আছে, সেটা দিয়ে যে ইন্টেরেস্ট পায় তাতে এক মাসের বাসা ভাড়া দেয়াও সম্ভব না। ইকরা চাকরির পাশাপাশি অনলাইনে বিজনেসও করে। এন্টিক জুয়েলারির বিজনেস। পরিচিত, বন্ধু, রিলেটিভ দের পাশাপাশি সিলেক্টেড কিছু কাস্টমারও আছে। বেশ ভালো ইনকামও আছে। সব মিলিয়ে ভালোভাবেই চলে যায়। কিন্তু সমস্যা এক জায়গায়, ওর টাকায় রুবাব আয়েশ করে থাকে এই ব্যাপার টা মনে পড়লেই মেজাজ খারাপ হয়।

ইকরা ঘরে ঢুকতেই খাবারের গন্ধ পেল। রান্নাঘরে টুংটাং শব্দ হচ্ছে। রুবাব প্রায় ই রান্নাবান্না করে যেদিন ইকরার ম্যুড অফ থাকে। ইকরা বেডরুমে চলে গেল। মাস্টার বেডরুম টা ওর একারই বলা যায়। রুবাব পাশের রুমে থাকে। লেখালেখির জন্য তাকে রাত জাগতে হয় বলে স্ট্রেইট বলে দিয়েছে পাশের রুমে থাকার জন্য।

বেশ কয়েকমাস ধরে রুবাব কে ইকরার খুব বিরক্ত লাগে। এই বিরক্তি থেকেই দুজনের মধ্যে শারিরীক দূরত্ব এসে গেছে। ইকরা একদিন প্রত্যাখ্যান করেছিল বলে রুবাব আর এগিয়ে আসে নি। ইগো হার্ট হয়েছে।

ফ্রেশ হয়ে বাইরে বেরোতেই রুবাব বলল,

“গুড ইভিনিং। ”

ইকরা ভালো করে তাকিয়ে দেখলো। রুবাবের উসকোখুসকো চুল, ঘুম ঘুম মুখ দেখে বলল,

“তোমার জন্য তো মনে হয় মর্নিং। ”

রুবাব হাসলো। এই হাসিটা একসময় ইকরার বুকে তোলপাড় করে ফেলতো। নাম দিয়েছিল কিলার স্মাইলিং। এখন এটা পয়জন স্মাইলিং মনে হচ্ছে।

“রান্না কী হচ্ছে? ”

“চিকেন রোস্ট, পোলাও। মায়ের স্টাইলে। ”

“তুমি শেফ হলেও পারতে। অন্তত মানুষ কে বলতে পারতাম যে আমার হাজবেন্ড রোজগার করে। ”

“উঁহু ডার্লিং। তুমি তখন আরও বেশি আপসেট থাকতে। কারণ তোমার রিলেটিভ রা আমাকে শেফের পরিবর্তে বাবুর্চি বলতো। রুবাব নামের সঙ্গে বাবুর্চি শব্দ টা যায় না। আমাকে তখন নাম পাল্টে মজিদ মিয়া, কামাল মিয়া টাইপ নাম রাখতে হতো। ”

ইকরা শীতল চোখে দেখলো। টেবিলে রাখা ডেটক্স ওয়াটারের বোতল টা হাতে নিয়ে বলল,

“তোমার পোলাও রোস্ট তুমিই খেও। তোমার মায়ের টাইপ রান্নায় আমার কোনো ইন্টেরেস্ট নেই। ”

রুবাব কঠিন চোখে তাকায়। ইকরা জানে রুবাবের দূর্বলতা ঠিক কোথায়। কোন কথাটা বললে ফুলস্টপ হবে।

ইকরা রুমে চলে এলো। ফাহাদ আবারও টেক্সট করেছে। একটা ছবি পাঠিয়েছে। ডিভোর্স লেটারের ছবি। ছবিটা দেখে ইকরার কোনো ধরনের প্রতিক্রিয়া হলো না। ওটা তো নাতাশার জন্য। তবে ইকরারও ইচ্ছে করে ওরকম একটা ব্যাপার রুবাবের সঙ্গে করতে। তখন ওর প্রতিক্রিয়া কেমন হয় সেটা দেখতে।

***
“আমি একটু মায়ের বাসায় যাচ্ছি। ”

“কেন কোনো সমস্যা? ”

“না এমনি একটু কাজ আছে। ”

“রাতে থাকবে?”

“না। চলে আসব। ”

“আচ্ছা। ”

সুপ্রীতি একটু ভেবে হঠাৎ বলল,

“তোমার সময় থাকলে এসো। রাতে ডিনার করে চলে আসব। ”

অর্ণব কিছু একটা ভেবে বলল,

“আচ্ছা। ”

সুপ্রীতি বেরিয়ে আসে দ্রুত। নাতাশা অপেক্ষা করছে। নাতাশাকে নিয়ে মায়ের বাসায় যাবে। ফাহাদের সঙ্গে নাতাশার বিয়েটা ওর মা দিয়েছিল। ফাহাদ ভালো ছেলে, পরিবার ভালো সব ভালো। অথচ সুপ্রীতি বুঝতো নাতাশার স্বভাবসুলভ হাসিমুখ টা দিন দিন মিলিয়ে যাচ্ছে।

নাতাশার জীবনের এতো বড় একটা সমস্যায়ও মায়ের কোনো হেলদোল নেই। প্রকৃতির মোবাইল থেকে ব্লক করে রেখেছে। বড় মামাকে বলেছে বাসায় জায়গা না দিতে। সুপ্রীতি ঠিক করেছে নাতাশাকে ওদের বাসায় রাখবে। যেভাবে হোক, যেমন করে হোক।

***
পালক ঘুমিয়ে পড়েছে নাতাশার কোলেই। গতরাতে ও ছিলো বন্ধু আফরিনের কাছে। আফরিনও গাজীপুরে থাকে। সকালে চলে এসেছে সুপ্রীতির কথামতো। সুপ্রীতি রিকশা থেকে নেমেই ঘুমন্ত পালক কে চুমু খেল, আদর করলো। নাতাশা সুপ্রীতিকে দেখলো। বিয়ের সময় ও’কে ডাকে নি স্বপ্না। ইশরাক সুপ্রীতির জীবনের ঘটনার জন্য ও’কে দায়ী করে কাঠগড়ায় রাখা হয়েছে বারবার। সুপ্রীতিকে কোনো প্রশ্ন করতে পারলো না। সুপ্রীতি পালক কে কোলে রেখেই নাতাশাকে এক হাতে জড়িয়ে ধরলো। নাতাশার জন্য এটা দরকার ছিলো। এখন ওর সবচেয়ে বেশী দু:খের দিন। কাঁদার জন্যও একটা কাঁধ লাগে।

কিছু মানুষ থাকে যাদের কখনো অপছন্দ করা যায় না। নাতাশা সুপ্রীতিদের কাছে তেমনই। সব কাজিন দের মধ্যে সবচেয়ে ভালো মেয়েটি ও। মামার বাড়িতে বড় হয়েছে বলে সবসময়ই অন্যদের থেকে আলাদা। আবদার করে না, অভিযোগ করে না, দোষ না করেও দোষের ভাগিদার হয়ে নতমস্তকে সব কিছু মেনে নিয়েছে। ওর বিনয়কে দূর্বলতা ভেবে ওর সঙ্গে যাচ্ছেতাই ব্যবহারও করেছে সবাই।

***
স্বপ্না সুপ্রীতিকে দেখে খুশি হলেন। কিন্তু নাতাশাকে দেখামাত্রই মুখ থমথমে হয়ে গেল। সুপ্রীতি ঘরে ঢুকে পানি খেল। তারপর বলল,

“বাবা কোথায়? বাসায় নেই? আমি তো বলেছিলাম আসব।”

স্বপ্না গমগমে গলায় বললেন,

“বাবার সঙ্গে কী এমন জরুরী আলাপ?”

“আস্তে কথা বলো মা। পালক ঘুমাচ্ছে। ”

স্বপ্না রুক্ষ চোখে নাতাশাকে একবার দেখলো। ততক্ষণে নাতাশার ভারী লাগেজ, ব্যাগ ঘরে ঢুকেছে। নাতাশা সুপ্রীতির দিকে তাকালো ভীত চোখে। সুপ্রীতির ভরসায় আসলেও ঠিক ভরসা করে উঠতে পারছে না। ছোট খালামনির রাগ ও জানে। যেকোনো সময় তার হাত উঠে যায়। একবার মারতে শুরু করলে দিগ্বিদিক জ্ঞান থাকে না। সুপ্রীতি নাতাশাকে বলল,

“আপু আমার ঘরে যাও। পালক কে শুইয়ে দিয়ে ফ্রেশ হও। ”

নাতাশা যন্ত্রের মতো এগিয়ে গেল। স্বপ্না এবার মেয়েকে প্রশ্ন করলেন,

“কী হচ্ছে প্রীতি? তোকে আমি বলেছি নাতাশার সঙ্গে যোগাযোগ রাখবি না। ওর কল রিসিভ করবি না।”

সুপ্রীতি ঠান্ডা গলায় বলল,

“আপু এখানে থাকবে মা। প্লিজ শান্ত হও, বাবা আসুক তারপর আমি সব বলব। ”

“তুই কিছু বলবি না। ও এখানে থাকবে না। তুই নিজেকে যাই ভাবিস বেশী চালাক ভাবিস না। তুই চলে যাবার পর আমি ও’কে লাত্থি দিয়ে বের করব। ”

সুপ্রীতি ঘড়িতে সময় দেখলো। স্বপ্না অনেকক্ষন গজগজ করলেন।

নাতাশা মুখে পানির ঝাপটা দিয়ে বেরিয়ে এলো। গোসল করতে পারলে ভালো হতো। কিন্তু এই বাড়িতে ও কতটুকু সময় থাকতে পারবে সেটা নিয়ে ভাবছে। নাতাশা বেরিয়ে আসতেই স্বপ্না বিশ্রী ভাষায় গালি দিয়ে বলল,

“তোমার মেয়ে ঘুম থেকে উঠলেই বেরিয়ে যাবে। কোনো হারামির জায়গা আমার ঘরে নেই। লঙ্গরখানা খুলে বসিনি। ”

সুপ্রীতি চোখের ইশারায় আশ্বস্ত করলো।

***
প্রকৃতি এসে দেখলো নাতাশা এসেছে। ও জানে আসবে। সুপ্রীতি ও’কে বলেছিল। এখন নাতাশাকে দেখে ভয়ে উত্তেজনায় চেহারা পাল্টে গেছে। খানিক বাদে বাবা এলেন। তিনি নাতাশাকে স্নেহ করেন। সুপ্রীতি বাবাকে সরাসরি বলল,

“বাবা বুঝতে পারছ যে আমি কী বলতে চেয়েছিলাম। ”

বাবা মাথা নেড়ে বললেন।

“হ্যাঁ। নাতাশা থাকুক এখানে। তোমার মা’কে ব্যাপার টা বুঝিয়ে বলো। ”

স্বপ্না সব শুনছেন। সুপ্রীতি কঠিন গলায় বলল,

“শুধু থাকুক এই কথাটা যথেষ্ট না বাবা। তোমার স্ত্রী নাতাশা আপুর বিয়ে দিয়েছেন। তার লাইফের গুরুত্বপূর্ণ ডিসিশন সে নিয়েছেন তাই এখন তার আর পালকের দায়িত্ব অবশ্যই তুমি আর সে নিবে। কারোর জীবন এতোটাও ফেলনা নয় যে সেখানে ইচ্ছেমতো নাক গলানো যায়। ”

স্বপ্না খানিকক্ষণ স্থির চোখে দেখে অপ্রিয় কাজ টা করে ফেললেন। সুপ্রীতির গালে থাপ্পড় মারলেন কয়েকবার। প্রকৃতি আর বাবা এসে ছাড়িয়ে নিয়ে গেলে সুপ্রীতি ঠান্ডা গলায় বলল,

“বাবা আমি যা বলছি তাই যেন হয় প্লিজ। সেটা হতেই হবে। নাহলে আমি অন্যপথ দেখব….!”

স্বপ্না এবার এসে সুপ্রীতির চুল ধরলেন। সজোরে থাপ্পড় মারলেন আরও কয়েকটা। রাগে রীতিমতো কাঁপছেন। এবার তাকে ছাড়ানো সম্ভব হচ্ছে না। এই সময়ে ঘটে গেল অঘটন টা। রঙ্গমঞ্চে এসে হাজির হলো অর্ণব। পরিবেশটাই হঠাৎ বদলে গেল।

চুল টানার কারণে প্রচণ্ড ব্যথা অনুভব করছিল সুপ্রীতি। তবুও ঠোঁটে জয়ের হাসি। অর্ণব এক হাত দিয়ে জড়িয়ে রেখেছে। ওর দৃষ্টি ঘরের মানুষগুলোর দিকে। সুপ্রীতির চোখ বন্ধ করে ফেলল। আর কোনো ভয় নেই।

চলবে…..

(টাইপিং মিস্টেক ইগ্নোর কইরেন প্লিজ।)