হৃদয় নিবাসে তুই
পর্ব-১৮
লেখনীতেঃ ভূমি
বাড়িতে রিয়াদ সাহেব নেই।অদ্রিজা আর অদ্রিজার মা সোফায় বসে রইলেন। এই বাসায় আসার উদ্দেশ্য ইনভাইট করে যাওয়া।কিন্তু উদ্দেশ্য পূরণ হলো না।বাসায় রিয়াদ সাহেব কিংবা রক্তিম কেউই নেই।আছেন রিয়াদ সাহেবের দ্বিতীয় স্ত্রী।মুখে চোখে তার গম্ভীর ভাবটা এখনো আগের মতোই আছে।হাতে ট্রে ভর্তি নাস্তা এনে হাজির হয়ে মুখে মৃদু হাসি ফুটালেন তিনি।অদ্রিজা বিস্ময নিয়ে তাকিয়ে রইল।ভদ্রমহিলা হেসেছে?অদ্ভুত!এর আগে কখনো এই মৃদু হাসিটাও ভদ্রমহিলার মুখে দেখেনি সে।বিস্ময় ভাবটা হালকা হতেই অদ্রিজা বলল,
‘ কেমন আছেন মা?আর বাবা কেমন আছেন?অফিসে চলে গেছেন নিশ্চয় বাবা।’
মহিলা কপালের ঘাম মুঁছলেন হাতের তালুতে।নাস্তাটা এগিয়ে দিয়ে টেবিলে রাখলেন।বললেন,
‘ ভালো আছি।উনিও ভালো আছেন অদ্রিজা।তুমি কেমন আছো?’
অদ্রিজা মুচকি হাসল।বলল,
‘ আমিও ভালো।’
ভদ্র মহিলা হালকা হাসলেন।অদ্রিজার মায়ের দিকে তাকিয়েই প্রশ্ন ছুড়লেন,
‘ আপনি কেমন আছেন?শরীর ঠিক আছে এখন?’
অদ্রিজার মায়ের মুখে মৃদু হাসি ফুটল।বলল,
‘ হ্যাঁ।ঠিক আছে।বেয়াই সাহেব নেই?তাহলে বরং আপনাকেই বলে যাই বেয়াইন সাহেব।বাসায় ছোটখাটো একটা আয়োজন আছে।মেয়ে জামাইকে ভালো মতো আদর আপ্যায়ন করা হয়ে উঠে নি। তাই এই আয়োজন। আপনারা আর অদ্রিজার চাচার পরিবারই কেবল থাকবে।আপনাদের নিমন্ত্রন রইল বেয়াইন সাহেব।’
ভদ্রমহিলা মুচকি হাসল।মাথার ঘোমটাটা আররকটু তুলেই বলল,
‘ আমি কল দিয়েছি উনাকে।উনিও আসছেন। আপনি উনাকেও বলে যেতে পারবেন।আর আমরা অবশ্যই যাব।অদ্রিজার মায়ের বাড়ি বলে কথা।যাব না?’
অদ্রিজার মা আর ভদ্র মহিলা দুইজনই মুচকি হাসলেন।অদ্রিজা কেবল তাকিয়ে তাকিয়ে দেখল সবটা।কি অদ্ভুত।এই ভদ্রমহিলা যে হাসতে পারে, এভাবে কথা বলতে পারে তা সে এতদিন এই বাসায় থেকেও বুঝেনি।অদ্রিজা ভাবল।খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে তীক্ষ্ণ চাহনি ফেলে দেখল কেবল ভদ্রমহিলাকে।তার ভাবনা আর পর্যবেক্ষনের মাঝেই হন্তদন্ত করে বাসায় ডুকলেন রিয়াদ সাহেব।কপাল ভেজা ঘাম।আধপাঁকা দাঁড়ি গুলোও ঘামে নেতিয়ে আছে।পরনের ঘামে ভেজা শার্টটা এক হাত দিয়ে হালকা ঢিলে করে আবার ছেড়ে দিলেন।ক্লান্তিমাখা চাহনি নিয়ে এগিয়ে এসেই বললেন,
‘ অদ্রিজা?কেমন আছো মা?আর আপনি কেমন আছেন বেয়াইন সাহেবা?’
অদ্রিজা মিষ্টি হাসল।উত্তর দেওয়ার পর তার মা আর রক্তিমের বাবার কথোপকোতন শুনল চুপচাপ।কথোপকোতন শেষে চলে যাবে ঠিক তখনই বাসার সদর দরজায় দেখা মিলল টলতে টলতে হাঁটা সেই লোকটির।রক্তিমের।চোখজোড়া লাল টকটকে।হেঁটে আসাটা স্বাভাবিক দেখাচ্ছে না।এই বিকাল বেলায়ও যে সে ড্রিংক করেছে তা তার হাঁটা দেখেই স্পষ্ট।অদ্রিজা একবার রক্তিম তো একবার মায়ের দিকে তাকাল।রক্তিমের এই বিষয়টা বুঝে গেলে তার মা কি ভাববে?মেয়ের জামাই শেষ পর্যন্ত একটা মাতাল! অদ্রিজা চুপচাপ উঠে দাঁড়াল।রক্তিমের কাছাকাছি গিয়ে দুইহাত দিয়ে রক্তিমের বাম বাহুটা চেপে ধরল।শক্ত গলায় মিনমিনিয়ে বলল,
‘ ছিঃ!ড্রিংক করেছেন আপনি?আমার আম্মু বুঝলে কতটা কষ্ট পাবে ধারণা আছে আপনার?আজই ড্রিংক করতে হলো আপনাকে?আজই!এখনই?’
রক্তিম ঘোলা চাহনিতে অদ্রিজার দিকে তাকাল।সঙ্গে সঙ্গেই যেন চকচক করে উঠল তার চাহনি।কিছুক্ষন সেভাবেই অদ্রিজার দিকে তাকিয়ে রইল।অদ্রিজার মুখ,চোখ সব পরখ করে দেখতে লাগল অস্পষ্ট চাহনিতে।ঘোর লাগানো সেই চাহনিতে অদ্রিজা বেসামাল হয়ে উঠল।অস্বস্তিতে হাত পা ঘেমে উঠল তার।এই লোকটার সামনে লজ্জ্বায় নত হওয়া মানে হার মেনে নেওয়া।তা কখনো হতে দেওয়া যায় না।সেইদিনের তীব্র অপমানের পরও এই চাহনিকে কোনভাবেই সুযোগ দেওয়া যায় না।অদ্রিজা দাঁতে দাঁত চেপেই বলল,
‘ এইখানে আসলেন কেন আপনি?কে বলেছে আসতে এখন?নাকি ইচ্ছে করেই আবার খারাপ হওয়ার নাটক কন্টিনিউ করতে আমার আম্মুর সামনে এভাবে হাজির হয়েছেন?আপনার এক্টর হওয়া উচিত ছিল রক্তিম।ছেলেরাও এত ভালো অভিনয় পারে আপনাকে না দেখলে জানতামই না।’
রক্তিম নেশাক্ত লাল টকটকে চোখের সেই চাহনি সেরকমই রাখল।এক পলকও নড়ল না সেই চাহনি।মুচকি হেসে অদ্রিজার কানের কাছে মুখ নিতেই হেলে পড়ল অদ্রিজার কাঁধে।নিজের প্রতি ব্যালেন্স রাখাটা বোধ হয় মাতাল শরীর পারল না।মাথাটা সেভাবেই অদ্রিজার কাঁধে হেলিয়ে দিয়ে বলল,
‘ আপনি এই এক্টরের পেছনেই পড়ে আছেন এখনো।অদ্ভুত!’
অদ্রিজা বিরক্ত হয়ে তাকাল।।রক্তিমের ভারী শরীরের কিছুটা ভার তার উপর ও পড়েছে।দুই হাত দিয়ে রক্তিমকে ধরে নিতেই নাকে এসে লাগল ভারী কোন এক গন্ধ।সঙ্গে সঙ্গে কপাল কুঁচকে গেল তার। ফিসফিসিয়ে বলল,
‘ আপনি তো সত্যিই ড্রিংক করেছেন।ছিঃ! রক্তিম ছিঃ!আশা করিনি আমি।’
রক্তিম ভ্রু কুঁচকাল। বলল,
‘ কেন?’
‘ জানি না।আমি আপনাকে ধরছি । আপনি সোজা হয়ে হাঁটবেন।যাতে বুঝা না যায় আপনি ড্রিংক করেছেন।আম্মুর কাছে গিয়ে সালাম দিবেন।তারপর রুমে গিয়ে যা ইচ্ছে তাই করুন।মাতলামি করুন, প্রেম করুন যা ইচ্ছে তাই।’
রক্তিম মুচকি হেসেই মুখ ঘেষল অদ্রিজার কাঁধে।অদ্রিজা কেঁপে উঠল সঙ্গে সঙ্গেই।বাম হাতটা সজোরে চলে গেল রক্তিমের মুখে।শক্ত করে রক্তিমের মাথাটা ধরে সোজা করে দিয়েই দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
‘ কি করছেন এসব?এটা ড্রয়িং রুম।আম্মু, বাবা সবাই আছে দেখছেন আপনি? ওরা দেখলে কি ভাববে?’
রক্তিম বাঁকা হেসেই ফিসফিসিয়ে বলল,
‘ বাহ!পার্ফেক্ট বউ!’
কথাটা বলেই রক্তিম হাসল।অদ্রিজা কোনভাবে দুইহাত দিয়ে রক্তিমের বিশাল লম্বা চওড়া শরীরটা ব্যলেন্স করার চেষ্টা করল।মায়ের কাছে গিয়ে সোজা করে দাঁড় করাতেই রক্তিম হালকা হাসল।বলল,
‘ আসসলামু আলাইকুম আন্টি।’
অদ্রিজার মা মেকি হাসল।ভ্রু জোড়া কুঁচকে রেখেই রক্তিম আর অদ্রিজাকে পর্যবেক্ষন করল।দেখেই বোঝা যাচ্ছে রক্তিমের শরীরের ভার অদ্রিজার উপরও।উনি ভ্রু কুঁচকে রেখেই বললেন,
‘ ওয়ালাইকুম সালাম।কেমন আছো?অদ্রি?কোন সমস্যা?এভাবে ধরে আছিস কেন?’
অদ্রিজা ভয়ে চুপসে গেল।এই বুঝি তার মা সবটা বুঝে গেল।এই বুঝি বলে ফেলল,”শেষে একটা মাতালকে বিয়ে করেছিস?তোর চাচুর এমন পছন্দ?”শুকনো ঢোক গিলল।আমতা আমতা করেই বলল,
‘ স্ সম্ সমস্যা?নাহ তো আম্মু।কোন সমস্যা নয়।সিঁড়ি দিয়ে উঠার সময় উনার পায়ে ব্যাথা পেয়েছেন তো তাই হাঁটতে পারছেন না।’
অদ্রিজার মা হালকা হাসার চেষ্টা করল।সন্দেহটা গেল না।নজরটা আগের মতো রেখেই তাকিয়ে রইল উনি।অদ্রিজা কাঁপা গলায় আবারও বলল,
‘ আম্মু? তুমি বসো। আমি উনাকে রুম পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে আসি?পায়ে ব্যাথা পেয়েছে তো।ঔষুধটা দিয়ে আসি।তুমি বসো হ্যাঁ?’
অদ্রিজার মা মাথা নাড়ালেন হালকা।অদ্রিজা যত দ্রুত পারল রক্তিমকে নিয়ে রুমে আসল।বিছানার পাশে রক্তিমকে বসিয়ে দিয়েই ঝাঁঝালো গলায় বলে উঠল,
‘ আমার সত্যিই বিরক্ত লাগছে রক্তিম।ড্রিংক করেছেন ভালো কথা।আপনি কেন আবার বাসায় আসবেন?আমি তো জানতাম আপনি এই বাসায় থাকেন না। সুইটহার্টের সাথে থাকেন।তাহলে? এখানে থাকাটা তো কেবল শর্ত ছিল। তাই না?আমার তো মনে হচ্ছে আপনি ইচ্ছে করেই ড্রিংক করে এই বাসায় ফিরেছেন।’
রক্তিম হাসল। জড়ানো কন্ঠে বলল,
উহ, ভুল ভাবছেন অদ্রিজা।মিস্টার মাহমুদ গাড়ি পাঠিয়েছিল। কল করে বলেছিল আপনারা এসেছেন তাই আসাটা নাকি বাধ্যতামূলক।তাই এসেছি।আর কিছু নয়।’
অদ্রিজা লম্বা শ্বাস ফেলল।ছোট গলায় ” ওহ ” বলে চলে আসতে লাগলেই পেঁছন থেকে হাতটা জড়িয়ে ধরল রক্তিম।হেঁচকা টানে নিজের দিকে টানতেই অদ্রিজা টাল সামলাতে না পেরে সোজা রক্তিমের শরীরে গিয়ে পড়ল।রক্তিম মুচকি হেসেই চোখ টিপল।ট্যারাব্যাকা দাঁত গুলো দেখিয়ে হেসেই বলল,
‘ আপনার ডাকনামটা কিন্তু খুব কিউট। অদ্রি।আহ!’
অদ্রিজা দাঁতে দাঁত চেপেই বলল,
‘ আপনি আমার হাত ধরে টানলেন কেন?অসহ্য!’
রক্তিম বাঁকা হেসেই বলে উঠল,
‘ আপনি বললেন না রুমে এসে মাতলামি করুন নয়তো প্রেম করুন, যা ইচ্ছে তাই করুন।তাহলে চলে যাচ্ছেন যে?প্রেম করব না?নাও স্টার্ট?’
অদ্রিজা মিনমিনে চাহনিতে তাকিয়ে রইল।রক্তিমের শরীরের সাথে নিজের শরীরের স্পর্ষে নিঃশ্বাস ক্রমশ ঘন হয়ে উঠল তার।হৃৎপিন্ডে কম্পনটা সময়ের সাথে বেড়ে চলেছে দ্বিগুণ হারে।কাঁপা গলায় বলল,
‘ মা্ মানে? কি হচ্ছে কি?হাত ছাড়ুন।’
রক্তিম হাত ছাড়ল না ফিসফিসিয়ে বলল,
‘ এই রুমে কোথাও ড্রিংক করার সামগ্রী দেখতে পাচ্ছেন আপনি?নেই।আর আমি ড্রিংক না করে মাতলামি কি করে করি বলুন তো।আপনি তো দুটো কথাই বললেন, মাতলামি নয়তো প্রেম। যেহেতু মাতলামি করাটা পসিবল না সেহেতু প্রেমটাই গ্রহণযোগ্য।এখন বলুন, এই রুমে প্রেম করার মতো আর কেউ আছে?কার সাথে প্রেম করব?’
অদ্রিজা বিরক্ত চাহনিতে তাকাল।হাতটা কচলাতে কচলাতে ছাড়ানোর বৃথা চেষ্টা করল।এক মুহুর্তের জন্য মনে হলো রক্তিম ড্রিংক করে নি।এত স্পষ্ট কথা?এত সুস্পষ্ট ভাবনার কথা কি ড্রিংক করার পরও বলা যায় নাকি?অদ্রিজা সন্দেহী চাহনিতে তাকিয়েই বলল,
‘ আপনি সত্যিই ড্রিং করেছেন?নাকি নাটক? এত স্পষ্টভাবে কথা বলছেন?আমার হাত ধরে টানা সময় তো টলতে দেখিনি।’
রক্তিম হাসল।অদ্রিজার হাতটা ছেড়ে দিয়ে সোজা হয়ে বসল।চকচকে চাহনিতে অদ্রিজার দিকে তাকিয়েই বলল,
‘ ড্রিংক করতে আমি অভ্যস্ত।ওসব ড্রিংকের সাইড ইফেক্ট হিসেবে মাতাল হয়ে যাব না আমি অদ্রিজা।ড্রিংক করেছি বলে যে স্পষ্টভাবে কথা বলতে পারব না তা কে বলেছে আপনাকে?’
অদ্রিজা চকচকে চাহনিতে তাকাল।বিরক্ত নিয়েই বলে উঠল,
‘ তাহলে এতক্ষন টলতে টলতে হাঁটছিলেন কেন? এই মনে হলো ঠাস করে পড়ে যাবেন।সবটাই নাটক?’
রক্তিম কিছুটা বিরক্ত হলো বোধ হয়।কপালে দেখা গেল মৃদু ভাজ।অদ্রিজার দিকে তাকিয়েই সোজা হয়ে বসল। বলল,
‘ বারবার নাটক ফাটক কেন টানছেন বলুন তো?আপনার সাথে এক্সেক্টলি কি সম্পর্ক যে আপনার সামনে আমায় নাটক করতে হবে?কি লাভ আমার শুধু শুধু নাটক করে?’
অদ্রিজা মৃদু গলায় বলল,
‘ সেটা জানলেই তো হতো।আমি ও তো জানতে চাই তা।’
রক্তিম মুচকি হাসল কেবল।বলল,
‘ আপনার আম্মু ওয়েট করছে।বাইরে যান।’
অদ্রিজা তাচ্ছিল্যমাখা হাসি হাসল।রক্তিম যে তাকে থাকতে বলবে সে ব্যাপারে এটুকুও আশা রাখেনি সে।তবুও ভয়ংকর রকম রাগ জম্মাল রক্তিমের প্রতি।চোখ মুখে দেখা মিলল অদ্ভুত রাগের ছিটেফুটে।সে ভয়ংকর রাগ নিয়েই বলল সে,
‘ আপনি কি ভেবেছেন? আপনার মতো ফালতু একটা লোকের সাথে এক রুমে দাঁড়িয়ে কথা বলতে আমার ভালো লাগছে?একদমই না।আপনাকে আমার অসহ্য লাগে রক্তিম।এই যে আপনি আমার হাত ছুঁলেন?এ ছোঁয়াটার প্রতিও চরম ঘৃণা হচ্ছে আমার।আর আপনাকে তো আরো ভয়ংকর ঘৃণা করি আমি। ‘
কথাগুলো বলেই বেরিয়ে আসল অদ্রিজা।চোখে মুখের সূক্ষ্ম রাগটা নিয়েই মায়ের সামনে এসে দাঁড়াল।থমথমে মুখেই বলল,
‘ শেষ তো আম্মু।চলো। যাবে না?’
অদ্রিজার মা চুপচাপ বসে রইলেন। মুখে চরম থমথমে ভাব।অদ্রিজার দিকে একনজর কঠিন চাহনিতে তাকিয়েই তাকালেন রিয়াদ সাহেবের দিকে।মৃদু গলায় প্রশ্ন ছুড়লেন,
‘ আপনার ছেলে কি ড্রিংক করে বেয়াই সাহেব?আমার মেয়ের সাথে আপনার মাতাল ছেলের বিয়ে দিয়ে জিতে গিয়েছেন?’
অদ্রিজার মায়ের কথাটা শুনেই অবাক হলো রিয়াদ সাহেব।সঙ্গে অদ্রিজাও।মায়ের দিকে বিস্ময়ে তাকিয়ে থাকতেই তার মা আবারও বলল,
‘ রক্তিম ড্রিংক করে অদ্রি?আমায় বলিস নি তো।’
অদ্রিজা থমকাল।কাঁপা গলায় বলল,
‘ ন্ না আম্মু।আস্ আসলে…’
‘ আসলে?’
মায়ের কথাটা শুনে অদ্রিজা জোরে শ্বাস ফেলল।কি বলবে খুঁজে না পেয়েই কয়েক সেকেন্ড ভাবল।আর সে ভাবনার মাঝেই সেখানে এসে দাঁড়াল রক্তিম।মুচকি হেসেই বলে উঠল,
‘ আসলে আমি ড্রিংক করি আন্টি।এনি প্রবলেম?’
অদ্রিজার মায়ের চাহনিটা এবার তীক্ষ্ণ হলো।রক্তিমের কথাবার্তায় বুঝা গেল না সে ড্রিংক করেছে।তবুও মনের মধ্যকার সন্দেহটা যেন গেল না।হাসার চেষ্টা করেই বলল,
‘ আমি ভেবেছিলাম ড্রিংক করে এসেছো। তাই হাঁটতে পারছো না।ওভাবে তাল পাকিয়ে হাঁটছিলে।যায় হোক, তুমি যদি কখনো ড্রিংক করেও থাকো আর করতে পারবে না রক্তিম।আমি কিংবা আমার মেয়েরা কেউই এসব পছন্দ করি না।আর আমি নিশ্চয় চাইব না আমার মেয়ে এমন একজনের সাথে সংসার করুা যে কিনা ড্রিংক করে।’
অদ্রিজা শুকনো ঢোক গিলল।আর রক্তিম মুচকি হাসল।অদ্রিজার পেছনে দাঁড়িয়েই মাথা নামাল।অদ্রিজার ঘাড়ে ঠোঁট গোল করে ফু দিয়েই ফিসফিসিয়ে বলল,
‘ আপনার মা কিন্তু ভীষণ জটিল মহিলা!’
.
অদ্রিজাদের বাসায় অদ্রিজার চাচাসহ চাচার আত্নীয়রাও।আর তার মায়ের আত্নীয় বলতে কেবল তার এক খালা।অনুষ্ঠানের আগের দিনই এসে হাজির হলো সবাই।অদ্রিজা আর অত্রিয়া মুখে হাত দিয়েই সোফায় বসে ছিল।হঠাৎ সদর দরজায় কিছু একটা দেখেই দুই জোড়া চোখ চকচক করে উঠল।অদ্রিজা সঙ্গে সঙ্গে হাত দিয়ে ঘুষি দিল অত্রিয়ার পেটে।খিলখিলিয়ে হেসেই বলে উঠল,
‘ তোর শ্যামপুরুষ!’
অত্রিয়া লাজুক দৃষ্টিতে তাকাল। ছেলেটাকে প্রথম তার চৌদ্দ বছর বয়সে দেখা।উড়তি কিশোরী বয়স।শরীর মন সবকিছুতে মাত্র যৌবনের ছোঁয়া পড়েছে।তার চাচার বাসায় দেখেছিল প্রথম তাকে কোন এক অনুষ্ঠানে। তারপর থেকে আরো কয়েকবার দেখেছে পারিবারিক বিভিন্ন অনুষ্ঠানে।কিন্তু আশ্চর্যজনক বিষয় এই ছেলেটাকে সে কিংবা অদ্রিজা কেউই চেনে না।কে সে,কোথায় থাকে কিছুই না।অত্রিয়ার মুখটা কালো হয়ে গেল সঙ্গে সঙ্গেই।লম্বা শ্বাস ফেলে বলল,
‘ দূরর!সে কে?তারে তো চিনিই না আমি। নামটাও তো জানি না।শ্যামপুরুষ আর হবে?সম্ভাবনা নেই।’
অদ্রিজা হাসল।চোখ টিপে বলল,
‘আরেহ আছে আছে।পেছনে চাচুর শালীর মেয়ে রাইমা থুক্কু রাইমা আপু দেখ।উনার থেকে নাম ঠিকানা সব জেনে নিব পাক্কা।’
অত্রিয়া চোখ ঘুরিয়ে সেই লোকটার দিকে তাকাল।হ্যাঁ পেছনে আরো দুইজন।রাইমা, আর যে লোকটা সে বোধ হয় রাইমার বর।অত্রিয়া খিলিখিলিয়ে হেসেই লোকটার দিকে বেশ মনোযোগ নিয়ে তাকিয়ে রইল।লোকটা সুন্দর কিনা তার জানা নেই।তবে লোকটার দিকে তাকালে আর নজর সরাতে তার মন চায় না।ইচ্ছে করে কেবল তাকিয়েই থাকুক।
চলবে…..