হৃদয়ে লুকানো প্রেম পর্ব-১৪

0
715

#হৃদয়ে_লুকানো_প্রেম
#নুুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_১৪
আবারও ব্যাস্ত জীবন। শনিবারটা প্রিয়ার পুরো অলস কেটেছে সবসময়কার মতোই। তরুণীমা বেগম, তামান্না, ফিহা ও তুতুলের সাথে ফোনে কথা হয়েছিল একবার। জারিফ চাচ্ছে প্রিয়ার এই সেমিস্টারটা শেষ হলে আনুষ্ঠানিক বিয়ে হবে। আজকে জারিফের ক্লাস আছে তা ভাবতেই প্রিয়ার শরীরে শীতল হাওয়া দোল দিয়ে যায়। অস্বস্থিতে ক্লাস কি করে করবে তাই বুঝে আসছে না। ভার্সিটিতে যাওয়ার পর একটা ক্লাসের পর অর্ষা, নিশি, মিমরা ওকে ঝেঁকে ধরেছে। প্রশ্নের বাহারে অতীষ্ঠ হয়ে প্রিয়া বলে,

“আমি কি জানতাম নাকি? ভাইয়া এসবের পিছনে। যদি কেউ জানতো তবে সেটা জারিফ স্যার। আমি তো বাবা-মায়ের পছন্দে হ্যাঁ বলেছি মাত্র।”

“রেগে যাচ্ছিস কেনো দোস্ত? আমরা একটু ফান করছিলাম।”

প্রিয়ার রূঢ় শব্দের বিপরীতে অর্ষার নরম স্বরে শান্ত হলো প্রিয়া।

“সরি। আসলে আজকের ক্লাসটা নিয়ে টেনশন হচ্ছে। আমি দেড় ঘণ্টা কিভাবে ক্লাসটা করব বুঝতে পারছি না।”

মিম এসে প্রিয়ার পাশে বসে বলে,
“ক্লাসের সময় স্যারের সাথে অ্যাই কন্টাক্ট করবি না। কি কি পড়াচ্ছে সব নোট করবি। দেখবি দেড় ঘণ্টা নিমিষেই পেরিয়ে যাবে। আমরা বাদে আর কেউ বিষয়টা এখন না জানাটাই বেটার। যেহেতু সেমিস্টারের পর ফাংশন করবে তাই তখন নাহয় সবাই জানুক।”

নিশি বলে,
“কতোদিন আড়াল থাকবে তাই দেখার বিষয়। তবে স্যার যে তোর হাসবেন্ড আবার তোর ক্লাসও নেয় এটাতে অন্যরা ভাবতে পারে স্যার তোকে কারচুপি করে হেল্প করবে। তাই এখন বিয়ের ব্যাপারটাই আড়াল থাকা দরকার।”

প্রিয়া দুশ্চিন্তায় পরে যায়। প্রিয়াও ভাবে তিনটা মাস এড়িয়ে গেলেই হবে।

জারিফের ক্লাসে প্রিয়া একটু কর্নার ও পেছোনের দিকে বসেছে। জারিফ ক্লাসে ঢুকে সবার দিকে নজর বুলিয়ে প্রিয়াকে পেছোনে বসতে দেখে মনে মনে হাসে। তারপর ক্লাসে মনোযোগ দেয়। আজকে ক্লাসে আর সে প্রিয়াকে অধিক অস্বস্থিতে ফেলল না। প্রিয়াও জারিফের সাথে অ্যাই কন্টাক্ট অনেকটা এড়িয়ে গেছে শুধু একবার চোখে চোখ পরে যাওয়াতে প্রিয়া থতমত খেয়ে গেছিলো। ক্লাস শেষে জারিফ চলে গেলে প্রিয়া হাঁফ ছেড়ে বাঁচে। এতক্ষণ একটা গুমোট অনুভূতি বিরাজ করছিল প্রিয়ার হৃদয় জুড়ে।

জারিফ নিজের অফিসরুমে যেতে যেতে প্রিয়মকে মেসেজ করলো,

“তোর বোনের কন্টাক্ট নাম্বারটা দিস।”

মেসেজ করেই পরের ক্লাসের জন্য প্রয়োজনীয় সব নিয়ে ক্লাসে চলে যায়। এখন প্রিয়মের লাঞ্চটাইম তাই মেসেজটা দ্রুত দেখবে জানে জারিফ। হলোও তাই। প্রিয়ম বিপরীতে একটু হাসি-ঠাট্টা করে মেসেজ করে,

“আমার বোনের কন্টাক্ট নাম্বার দিয়ে তুই কী করবি? সে ম্যারিড তাই তার সাথে চান্স নেওয়ার চেষ্টা করিস না!”

জারিফ মেসেজটা দেখে হাসলো অতঃপর লিখলো,

“ওকে বন্ধু। তোর বোনের সাথে কেউ চান্স নিবে না। এবার কি নাম্বার পাবো?”

“নে দিয়ে দিলাম। এতো ইনসিস্ট করছিস যেহেতু!”

জারিফ নাম্বারটা নিয়ে সেভ করে নিলো।

________

সব ক্লাস শেষে প্রিয়া বন্ধুদের সাথে ক্যাম্পাসে বসে আছে। আজকে আয়ান নেই। ছেলেটা ক্লাস মিস দেয় না। নিশি রাদকে জিজ্ঞাসা করে,

“কীরে? আয়ানটা কই আবার? সে তো ক্লাস মিস দেয় না। হুট করে আজকে ক্লাসে এলো না। শরীর খারাপ নাকি?”

রাদ মলিন হাসে। আয়ান যে কেনো আসেনি তা সে আর সাদ জানে। আয়ান গতকাল রাতে একা একা সাজেক ট্যুরে গেছে। রাদ বলে,

“আয়ান সাজেক গেছে।”

মিম অবাক কন্ঠে বলে,
“আমাদের বলল না! আর একা গেলো?”

সাদ রাদের দিকে তাকিয়ে তারপর মিমকে বলে,
“ওর কাজ পরেছে। জানিসই তো ওর বাবার সাজেকে একটা হোটেল আছে। যেহেতু কাজে যাব। তাই একটু ট্যুর দিয়ে আসবে। হুট করে প্ল্যানিং তাই তোদের জানায়নি। আমরাও সকালে জেনেছি।”

“ওহ। ”

এবারের মতো কথা কে*টে যাওয়ায় স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল ওরা। হাঠাৎ প্রিয়ার ফোন বেজে উঠলে স্ক্রিনে আননোওন নাম্বার দেখে কল কে*টে দেয়। আবারও কিছুক্ষণ পর কল আসলে প্রিয়া আবারও কা*টে। তৃতীয়বার ফোন আসলে প্রিয়া এবার কটমট দৃষ্টিতে ফোনের দিকে তাকায় তারপর রিসিভ করে বলে উঠে,

“কে ভাই আপনি? কে*টে দিচ্ছি তাও কল করেই যাচ্ছেন!”

জারিফের হাসি পেলেও কন্ঠে গম্ভীর্যতা প্রকাশ করে বলে,

“আমার অফিসরুমে এসে দেখা করো। কুইক।”

প্রিয়া মুখ বাঁকায় তারপর ফোনটা চোখের সামনে ধরেও নাম্বারটা চিনতে অসমর্থ হয় কিন্তু গলার স্বর চেনা চেনা ঠেকছে। প্রিয়া বলে,

“কে আপনি? আপনার অফিসরুমে আমি যাবো কেনো? আজব!”

“তো কি বে*ডরুমে যাবে?”

চোখ দুটো রসোগোল্লার মতো বড়ো বড়ো হয়ে যায় প্রিয়ার। দাঁত কিড়মিড় করে বলে,

“অ*স*ভ্য, ফা*জি*ল লোক। মেয়ের ভয়েস শুনেই বাজে কথা শুরু! বাড়িতে কি মা-বোন নাই?”

জারিফ নিরব হাসলো তারপর বলল,
“মা আছে। কাজিন বোনও আছে। নতুন বিয়ে করলাম তাই বউও আছে। আর এই মূহুর্তে আমি আমার বউয়ের সাথেই কথা বলছি আর সে আমাকে অ*স*ভ্য, ফা*জি*ল লোক বলছে!”

প্রিয়া হতবাক হয়ে যায়। ফোনটা কে*টে দেয়। তারপর কিয়ৎ ভেবে বলে,

“তোদের কারও কাছে জারিফ স্যারের নাম্বার আছে?”

সাদ বলল,
“আছে। কেনো?”

“দেখা তো।”

সাদ কল লিস্ট থেকে নাম্বারটা দেখালে প্রিয়া একটু আগের নাম্বারের সাথে মিলিয়ে দাঁত দিয়ে জিভ কে*টে বলে,

“ইশ! উনি আমাকে ফোন করেছিল আর আমি তাকে কতোকিছু বলে দিয়েছি। এখন কি করব!”

অর্ষা বলে,
“স্যার তোকে ফোন করেছিল? আর তাকে তুই অ*স*ভ্য, ফা*জি*ল লোক এসব বলছিস! বোকা নাকি তুই! কন্ঠ শুনেও বুঝিস নি?”

“নারে ভাই। বুঝলে কি বলতাম নাকি। কেমন ভরাট কন্ঠস্বর লাগছিল। সে আমাকে তার অফিসরুমে যেতে বলল।”

“তো যা। দরকার আছে বলেই বলেছে।”

নিশির প্রতিউত্তরে প্রিয়া চুপ করে গেলো। যেতে বলেছে তো না গেলে কেমন দেখায়! প্রিয়া গেলো। এদিকে জারিফ কলম হাতে নিয়ে প্রিয়ার রিয়াকশনগুলো ভেবে নিঃশব্দে হাসছে। মিনিট দশেক পর প্রিয়া এসে জারিফের অফিসরুমের দরজায় দাঁড়িয়ে ঢোক গিলে। যা বলেছে ওসব বলা ঠিক হয়নি। সরি বলে দিবে। প্রিয়া দরজায় নক করলে ভেতর থেকে জারিফ ওকে আসতে বলে। প্রিয়া রুমে প্রবেশ করে সালাম দিয়ে বলে,

“সরি! আমি বুঝতে পারিনি ওটা আপনার নাম্বার।”

“ইটস অকে। অচেনা কারও সাথে এমন বিহেভ হবে আমি বুঝি। সো কুল। তোমাকে যে জন্য ডাকা, প্লিজ সিট।”

প্রিয়া বসলে জারিফ বলে,
“দেখো, লেকচারার হিসেবে জয়েন করার আগে আমি বা তুমি কেউ জানতাম না আমাদের ভাগ্য এভাবে বদলাবে। এমনকি তোমাদের ক্লাস নেওয়ার আগেও না। আমার পরিবার যে তোমাদের বাড়িতে যাবে তাও জানতাম না। তুমিই যে প্রিয়মের বোন তাও জানতাম না। সব যখন ধাপে ধাপে হলো তখন নিমিষেই মানা করলে ব্যাপারটা দৃষ্টিকটু হতো। আমি চেয়ারপার্সন ও কয়েকজন সিনিয়র ফ্যাকাল্টির সাথে কনসাল্ট করেছিলাম। তারা আমাকে পজেটিভ বলেছে বলে আমি নিশ্চিন্তে ছিলাম। কিন্তু এই সেমিস্টারে বিয়ের খবর ভার্সিটিতে না ছড়ানোই ভালো। শুধু শুধু বাকি স্টুডেন্টদের মধ্যে কনফিউশন হবে। এরপরের মেমিস্টার থেকে আমি তোমার কোনো ক্লাস নিবো না। আশাকরি তুমি বুঝবে। আর ক্লাসে নরমাল বিহেভ করবে। ক্লাসে আমি জাস্ট তোমার কোর্স লেকচারার। নাথিং এলস।”

প্রিয়া মন্ত্রমুগ্ধের মতো জারিফের কথা গুলো শুনছিল। লোকটার যে সবদিকে খেয়াল আছে প্রিয়ার কিছুটা বুঝে আসছে। প্রিয়া মৌন সম্মতি দিলে জারিফ বলে,

“ঠিক আছে। তাড়া থাকলে যেতে পারো নয়তো আমার সাথেও ফিরতে পারো।”

“না না স্যার। আমি যেতে পারব। ধন্যবাদ।”

প্রিয়া বিদায় নিয়ে চলে আসে। কিছুটা শান্তি শান্তি লাগছে ওর কাছে। জারিফের এই সাইলেন্ট কেয়ার গুলো প্রিয়ার মনে বেশ প্রভাব ফেলছে।

চলবে ইনশাআল্লাহ্‌,
ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন। কপি নিষিদ্ধ।