হৃদয়ে লুকানো প্রেম পর্ব-২৯+৩০

0
611

#হৃদয়ে_লুকানো_প্রেম
#নুুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_২৯
আয়ানরা পিহুদের সাথে গিয়ে বসলো। আয়ান বলে,

“সেদিন তোমাকে বলে যাওয়া উচিত ছিল।”

পিহু অভিমানী কন্ঠে বলে উঠে,
“হ্যাঁ। আপনি একটুও ভালো না। জানেন কতো খুঁজেছি আপনাকে? পুরো রিসোর্ট তন্নতন্ন করে খুঁজেও পাইনি। তারপরে ম্যানেজারকে জিজ্ঞেস করাতে বলল আপনি চলে গেছেন। আপনি আগের রাতেও কথা বলার সময় বলেননি চলে যাবেন।”

আয়ান মাথা নিচু করে হাসলো অতঃপর বলল,
“তাই তো বলতে এলাম। এবার বলেই যাবো।”

পিহুর হুট করে অনেক লজ্জা লাগতে শুরু করলো। পিহুর বান্ধুবীরা মিটিমিটি হাসছে। আয়ান রাদ ও সাদের দিকে তাকিয়ে চোখের ইশারা করে পিহুকে উদ্দেশ্য করে বলে,

“একটা কথা বলো তো? তুমি আমায় খুঁজছিলে কেনো? হোটেল ম্যানেজার আমাকে সবটা জানিয়েছে।”

পিহু থতমত খেয়ে যায়। একবার রাখি, তনিমাদের দিকে তাকায়। থম মে*রে বসে থাকে সে। আয়ান কোনো জবাব না পেয়ে বলে,

“একদিনের পরিচয়ে তাও আবার বি*রক্তিকর সাক্ষাত! তারপরেরদিন নিশ্চয়ই তোমার আমার চলে যাওয়াতে খুশি হওয়ার কথা।”

আয়ান পিহুর দিকে তাকালো কিন্তু জবাব পেলো না। পিহুর দৃষ্টি নিচের দিকে নামানো। তাই বলল,

“আগামীকাল সকালের বাসে আমরা ফিরে যাবো। দুইদিন পর বান্ধুবীর বিয়ে। আমার প্রিয় একজন মানুষের বিয়ে।”

পিহু বিমর্ষ ভাবে চাইলো। এদিকে পিহুর বন্ধুরা বুদ্ধি করে আয়ানের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট জেনে নিয়েছে। আয়ানরা ওদের থেকে বিদায় নিয়ে চলে আসে হোটেলে। পথিমধ্যে সাদ বলে,

“মেয়েটাকে দেখে মনে হলো তোকে ভালোবাসে।”

“জানি আমি। তবে আমি কি তাকে ভালোবাসি? তা জানিনা। প্রিয়াকে হ্যাপি দেখলে খুব ভালো লাগে। আগের মতো কস্ট হয় না।”

রাদ কাঁধে হাত রেখে মুচকি হেসে বলে,
“পিহু মেয়েটাকে সুযোগ দিতে পারিস। খুব সাফ মনের মনে হলো। লাইফ থেমে থাকবে না। যে যার মতো আগাবে। প্রিয়ার বিয়েতে আমরা খুব খুব ইঞ্জয় করব এটা মনে রাখিস।”

আয়ান বিপরীতে হাসলো। সে তার মনকে সুযোগ দিবে আবারও ভালোবাসার।

___________

সকাল থেকে মেহেন্দির অনুষ্ঠানের তোড়জোড় চলছে। আগামীকাল গায়ে হলুদ। মেহেন্দির অনুষ্ঠান হবে সন্ধ্যার পর কিন্তু বাড়িতে অর্গানিক কোণ মেহেদী টিউব বানানোর হিরিক পরে গেছে। এতে নেতৃত্ব দিচ্ছে প্রিয়ার বিবাহিতা কাজিন বোনেরা। প্রিয়া গানের কলি খেলছে ওর অন্য কাজিনদের সাথে। দিনটা আড্ডা আনন্দেই কেটে যাচ্ছে। রাহা প্রিয়ার কাছে এসে বলে,

“আপুইগো! তোমার বিয়েতে কি তোমার হ্যান্ডসাম কোন দেবর আসবেনা? জীবনে একটা প্রেম হলো না! খুব শখ ছিল বোনের দেবরের সাথে প্রেম করবো! এদিকে বোনের কোনো দেবরই নাই!”

রাহার কথায় প্রিয়া সহ অন্য কাজিনদের মাঝে হাসির রোল পরে গেলো। প্রিয়া রাহার কাঁধে কনুই রেখে বলে,

“আমার কিছু হ্যান্ডসাম বন্ধু আছে। চাইলে সেটআপ করে দিতে পারি।”

“না। তোমার বন্ধু নিবো না। আমার তো তোমার দেবরই লাগবে। কোনো কাজিন দেবর তো থাকবেই তোমার। দেখো, ঠিক তার সাথে ভাব করে তোমার সাথে চলে যাবো।”

এক কাজিন রাহার কথার প্রতিউত্তরে বলে উঠে,
“রাহারে, প্রিয়ুর তো কাজিন দেবর দুটো অবিবাহিত আছে। চাইলে লাইন লাগাতে পারিস!”

রাহা লাজুক কন্ঠে এক্সাইটেড হয়ে বলে,
“প্রিয়ুপুর বিয়ের দিন আমি তবে শাড়িই পড়বো। মাকে যেভাবেই হোক রাজি করাবোই।”

সকলের হাসির তেজ আরও বাড়লো। আরেক কাজিন বলে,
“তোর কপালে দুঃখ আছেরে রাহা। কান্নাকা*টি করে গাউন কিনেছিস। এখন পড়বি শাড়ি! তোর মা তোকে জু**তা না মা**রলেই হয়।”

কাঁদো কাঁদো কন্ঠে রাহা বলল,
“এভাবে বলো কেন আপু? আমার ভয় করে তো। মাকে বলব রিশেপশনের ড্রেসটা যেটা কিনিনি সেটাতে গাউন পড়ব। আমার তো শপিং একটু বাকি। বিকেলে যেতাম। এখন আর যাবো না। আম্মুর টাকাও বাঁচবে। আম্মুর একটা লাল-বেগুনী কাঞ্জিভরম শাড়ি আছে। ওটা সে পড়বে না। ওটাই পড়ব আমি।”

প্রিয়া হাসতে হাসতে বলে,
“আচ্ছা বাবা পরিস। এখন আমার দেবর মহোদয়রা সিঙ্গেল থাকলেই হয়!”

আরেকদফা হাসির ধ*ম*কা বয়ে গেলো কিন্তু রাহা ঠোঁট উলটিয়ে সবাইকে দেখে চলেছে। দিনটা এভাবেই কেটে যাচ্ছে ওদের। রাতের জন্য প্রিপারেশন নিচ্ছে।

________

জারিফের কাজিনরাও জারিফকে ঝেঁকে ধরেছে ব্যাচলর পার্টি করবে বলে। জারিফ এসবে উৎসাহ প্রকাশ করছে না। সে বলেছে,

“এসব পার্টি ভ্যালুলেস। বিয়ের সাথে এসব কেনো? ব্যাচলর পার্টিতে ড্রিং*কস করা হয়। বি*য়া*র তো মাস্ট। অ্যাই ডোন্ট ওয়ান্ট ইট।”

জারিফের ইউনিভার্সটি পড়ুয়া এক কাজিন বলে,

“হেই ব্রো, ব্যাচলর পার্টিতে বি*য়ার আনা হয় ঠিক তবে ওটা তো একদিনই তাই না? অন্যান্য জুসও থাকবে।”

“নো মিনস নো। তোদের বিয়ের সময় তোরা এসব ব্যাচলর পার্টি করিস। আর তোদের যদি বি*য়ার খেতে ইচ্ছে হয় তবে নিজেদের মতো খা কিন্তু আমার বিয়ের দোহাই দিয়ে না। বাড়ির কারও যেনো কোনো অসুবিধা না হয়। আব্বু জানলে তোদের রক্ষে নাই। সো বি কেয়ারফুল।”

আরেক কাজিন বলে,
“খালু তো এসব বাড়িতে ঢোকাতেই দিবে না। তোমার সাপোর্ট পেলে দারোয়ানকে মেনেজ করতে ইজি হতো।”

“আমি এসবে নেই। আমার কাজ আছে। ইউ গাইস ক্যারি অন।”

জারিফ তার ল্যাপটপ নিয়ে ডিভানে গিয়ে বসে। আগামীকাল গায়ে হলুদ। প্রিয়াদের বাড়িতে আজ মেহেন্দির অনুষ্ঠান তাই রাতে প্রিয়াকে ফোন করবে। মেহেদীর ছবিও তো দেখবে।

_________
রাদিফ সকালে চলে গেছে। যাওয়ার সময় মুন্নির সাথে দেখা করতে চেয়েছিল কিন্তু মুন্নির ঘরের দরজা লক ছিল। মালা খালাও কয়েকবার ডেকেও মুন্নির কোনো সাড়া শব্দ পায়নি। এদিকে রাদিফের অফিস টাইম হয়ে যাচ্ছিল আবার মেসে ব্যাগ ও জিনিসপাতি রেখে অফিসে যাবে। কালকে অবশ্য মুন্নির বাবা তাকে বলেছে, চাইলে তাদের বাসায় থাকতে পারে। মেসে উঠতে হবে না। কিন্তু রাদিফের নিজের কাছে ব্যাপারটা শোভনীয় লাগেনি। এক মাস ছিল এইতো অনেক। তাই সে বলে দিয়েছে মেসেই উঠবে। মাঝেমধ্যে এসে দেখা করে যাবে।

মুন্নি এখন ব্যালকনিতে বসে চা পান করছে। সময়টা বিকেল। প্রতিদিন এই সময়টা তার ছাদে কা*টে কিন্তু আজকে এই দুই মাসের মধ্যে অন্যথা হলো। আজ তার ছাদে যেতে ইচ্ছে করছে না। সে আজ ব্যালকনিতে বসে থাকবে। আকাশে মেঘ করেছে। মাঝে মাঝে মেঘের গ*র্জন শোনা যাচ্ছে। প্রকৃতিতে অন্যরকম শীতলতা। দেখে মনে হচ্ছে ঝড় হবে। ঝড়ের পূর্বাভাস পাওয়া যাচ্ছে। শীতল বাতাস বইছে। মালা খালা এসে বলেন,

“জানলা, দরজা বন্ধ কইরা ঘরে আহো খালা। তুফান আইব।”

মুন্নি হেসে বলে,
“তুমি অন্য ঘরের গুলো বন্ধ করো। আমারটা পরে করব নে। বাতাসটা ভালো লাগছে।”

মালা খালা কথা বাড়ালো না। মুন্নিও সন্ধ্যা অবধি বসে রইল। তার মা সকালে ফোন করেছিল। পৌঁছেছে জানিয়েছে। রাদিফ যাওয়ার পর সকালে একটা চিরকুট পেয়েছে দরজার নিচ দিয়ে। সকালে সে ইচ্ছে করেই দরজা খুলেনি। চিরকুটে লিখা ছিল,

“দুঃখবিলাসিনী,
আপনার কোনো দুঃখের কারণ হতে চাই না আমি। চেয়েছিলাম বন্ধু হতে। সুখ-দুঃখের ভাগীদার হতে। বুঝিনি আপনাকে কষ্ট দিয়ে ফেলব। পারলে মাফ করবেন।
ইতি
সুখের অন্বেষক পথিক”

মুন্নি কয়েকবার চিরকুটটা পড়েছে। কয়েকটা পঙক্তি হৃদয়স্পর্শী। পিহু চোখ বন্ধ করে আকাশপানে মুখ উুঁচিয়ে রাখলো।

________

“আমার হাত চু*লকা*চ্ছে প্রচুর!”

“উফ প্রিয়ু! একটু সহ্য কর। মেহেদী দিলে এমনই লাগে।”

প্রিয়া উদগ্রীব হয়ে বলে,
“না না। তোমরা এগুলো বানানোর সময় কী কম বেশি দিয়েছ বলো। আমার হাতের যদি কিছু হয় তবে আমার বর তোমাদের আস্ত রাখবে না মিলিয়ে নিও।”

ইফা টি*ট*কারি করে বলে,
“ইশ! এখনি বরের ক্ষমতার বড়াই করছে দেখো। হাতের উপর গর্জিয়াস করে মেহেদী দিয়ে দিচ্ছি তাই এমন লাগছে। শুকোলো ঠিক হয়ে যাবে।”

রাহাও মেহেদী দিচ্ছে তবে প্রিয়ার মতো গর্জিয়াস করে না। রাহা বলে,
“এই প্রিয়ুপু, আমার হাত কিন্তু অতো চু*লকা*চ্ছে না। ফাঁকা স্থানগুলো একটু চু*লকা*চ্ছে। ওটা তো সবসময় হয়।”

প্রিয়া এক হাতে ফুঁ দিচ্ছে আর নিজে নিজেই বলছে,

“জলদি শুকিয়ে যা। আমি হাত চু*লকা*বো।”

প্রিয়া কান্ডে ওরা মিটিমিটি হেসে যে যার কাজ করছে। প্রিয়ার মা এসে প্রিয়াকে ভাত মাখিয়ে খাইয়ে দিয়ে গেছে। খাবারের পর একটা এ*লার্জির ঔ*ষধ খেয়ে নিয়েছে। এখন সে ঘুমাবে। এমনিতেও এ*লার্জির ঔ*ষধ খেলে ঘুম আসে। এদিকে বেচারা জারিফ বউয়ের মেহেদী ডিজাইন দেখবে বলে রাত বারোটার অপেক্ষায় আছে কিন্তু বউ তার আগেই ঘুমিয়ে কাদা!

চলবে ইনশাআল্লাহ্‌,
ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন। কপি নিষিদ্ধ।

#হৃদয়ে_লুকানো_প্রেম
#নুুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_৩০(হলুদ স্পেশাল)
জারিফ প্রিয়ার নাম্বারে, হোয়াটসএপে কয়েকবার টেক্সট করে প্রতিউত্তর না পেয়ে প্রিয়মকে ফোন করে। প্রিয়ম ইভেন্ট অর্গানাইজারের সাথে কথা বলছিল। সকালে গিয়ে দেখে আসবে। যেহেতু গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান একত্রে হবে আর প্রিয়ম এক দিকে কনের ভাই আরেকদিকে বরের বেস্টফ্রেন্ড। প্রেশার তার ভালোই। প্রিয়ম ফোন রিসিভ করে বলে,

“কী ব্যাপার বরবাবু? হঠাৎ আমাকে মনে পরল!”

“কেনো তোকে মনে পরতে পারে না?”

প্রিয়ম রম্যস্বরে বলল,
“পারে তো। আফটারঅল আপনি আমার বোনজামাই।”

“হয়েছে তোর একটিং? তাহলে এবার বলি?”

জারিফের এহেনো কথায় প্রিয়ম হাসি চেপে বলে,
“তোর বউ ঘুমিয়েছে আধঘণ্টা পেরিয়ে গেছে। মেহেদী দেওয়ার সময় চু*লকা*নোতে এ*লার্জির মেডিসিন খেয়েছিল। তাই তার চোখ জুড়ে নিদ্রা ভর করেছে। এখন আপনি বললে তাকে ডাকতে পারি তবে বিশেষ লাভ হবে বলে মনে হয় না।”

“তাহলে থাক। হলুদের ভেন্যুতে ফ্লাওয়ারের এরেঞ্জমেন্ট হয়েছে? কোনো হলুদ ও লাল ফুল যেনো না থাকে হলুদের ফাংশনে।”

প্রিয়ম জারিফকে আশ্বস্ত করে বলে,
“সবকিছু মাথায় আছে আমার। আমার বোনেরও সেম আবদার। অথচ লাল গোলাপ ওর খুব পছন্দের। রাখিরে। বাবা ডাকছেন।”

কল কে*টে জারিফ কফির মগে চুমুক দিয়ে মোবাইলে কিছু রিং কালেকশন দেখছে। প্রিয়ার জন্য নিবে সে।

__________

আয়ান, রাদ, সাদ সকাল সকাল প্রিয়াদের বাড়িতে চলে এসেছে। কথা ছিল নিশি, মিম, অর্ষাকে নিয়ে আসবে কিন্তু এই তিনজন লেট লতিফাদের গোছগাছই শেষ হয় না! তাই ওরা তিনজন ওদেরকে ফেলে চলে এসেছে। এসেই নাস্তা করে প্রিয়ম ও প্রিয়ার অন্য কাজিন ভাইদের সাথে হাতে হাতে কাজে লেগে গেছে।

প্রিয়া সকাল দশটায় ঘুম থেকে উঠে হেলতে দুলতে ব্রাশ করতে গেছে। তার রুমের ওয়াশরুমে কে যেনো গেছে তাই রুমের বাহিরে গেছে। ব্রাশ করতে যাওয়ার সময় রাদকে ওর দিকে তাকিয়ে হাসতে দেখে ভ্রুঁ কুঁচকে তাকায়। ঘুমের কারণে চোখ মুখ ফুলা তার। প্রিয়া মুখ ভেঙচি দিয়ে বেসিনের কাছে গিয়ে নিজেকে দেখে হা করে তাকিয়ে আছে। তার চুল সব কা*কের বাসার মতো ফুলে আছে। জামা, পাজামা, ওড়না একেকটা একেক রঙের। আবার মাথায় মিকি মাউসের রাউন্ড ব্যান্ড। গাড়ো গোলাপি লিপস্টিক ঠোঁটে সহ ঠোঁটের আশেপাশে ছড়িয়ে আছে। প্রিয়া এসব দেখে রে*গে নিজের রুমে গিয়ে রাহাকে ইচ্ছেমত মা**রতে থাকে সাথে আরও কয়েকটা পুচকে কাজিনকে। ওরা মা**র খেয়ে কাঁদার বদলে হাসছে। মে**রে ক্ষান্ত হয়ে প্রিয়া ফেসওয়াশ নিয়ে এবার নিজের রুমের ওয়াশরুমে ঢুকলো। ওর কাজিনরা হেসে লুটোপুটি খাচ্ছে।

________

জারিফ, জায়ান ও কয়েকজন কাজিন মিলে বাজারে গেছে। জারিফ যেতে চাচ্ছিল না কিন্তু জায়ানরা কি ছাড়বে! উহু! হলুদের তত্বের জন্য বড়ো মাছটা জারিফকে দিয়েই কিনাবে। তাছাড়া বিয়ের বরকে দিয়ে বাজার করানোর একটা উৎসব আছে বিয়ের পর। সেটাতে যাতে জারিফ না ঠকে যায় তাই এই পন্থা। জারিফ বিরক্তি নিয়ে বলে,

“এই সকাল সকাল মাছ বাজারে না আসলে হতো না? আমাকেই কেনো এনেছো ভাই? সুপার মার্কেট থেকে কিনলেই হতো।”

“অভ্যাস কর। সবসময় সুপার মার্কেট থেকে মাছ কিনলে হবে? এখানে তাজা মাছ পাওয়া যায়। সুপার মার্কেটে পাবি ফ্রিজার করা মাছ।”

বাকিরাও নানারকমের উপদেশবর্ষণ করছে আর জারিফ চোখ মুখ খিঁচে সেসব শুনছে।

_______

সন্ধ্যাবেলা পার্লার থেকে সেঁজে এখন প্রিয়া স্টেজে বসে আছে। চারিপাশে সাউন্ডবক্সে গায়ে হলুদের গান বাজছে। জারিফরা আর পাঁচ মিনিটের মধ্যে চলে আসবে। এখনও সব অতিথিরাও আসেনি। মিমকে ইফা পাঠিয়েছে প্রিয়া কিছু খাবে কীনা জিজ্ঞেস করতে।

“কিছু খাবি?”

“হ্যাঁ।”

“কী খাবি?”

“বেশি করে ডার্কচকলেট মিক্সড আইসক্রিম আর কেক।”

মিম নিশি ও অর্ষার দিকে তাকায়। নিশি বলে,

“মুখ চকলেট দিয়ে মাখাতে? তোর তো স্বভাব খারাপ। ড্রাই কিছু খা।”

প্রিয়া বিরক্ত হলো। এরা নিজেরাই আগ বাড়িয়ে এসে জিজ্ঞেস করে কিছু খাবে কীনা? আবার নিজেরাই রেস্ট্রিকশন দেয়! বিরক্তি নিয়ে বলে,

“শুকনো টোস্ট হবে? যেগুলো দিয়ে তোর মা*থায় বা*ড়ি দিলেও টোস্ট ভা*ঙবে না! কিন্তু তোর মা**থা আর থাকবে না। হবে?”

নিশি ভ্রুঁ উুঁচিয়ে তীক্ষ্ম দৃষ্টিতে তাকালো। অর্ষা হাসতে হাসতে খেয়াল করেনি স্টেজ থেকে পরে যাচ্ছিল তখনই একজোড়া হাত ওকে আগলে নেয়। অর্ষা চোখ মুখ খিঁচে আছে। মনে মনে ধরে নিয়েছে তার হা*ড্ডি শেষ! কয়েক সেকেন্ড পর কোনো ব্যাথা না পাওয়াতে ধীরে ধীরে চোখ খুলে দেখল এক শ্যামবর্ণা ছেলে অর্ষাকে পরে যাওয়া থেকে বাঁচিয়েছে। ছেলেটির চোখে চিকন ফ্রেমের চশমা। চোখগুলো খুব শান্ত। কালো পাঞ্জাবিতে আরও আকর্ষণীয় লাগছে। অর্ষা হচ্ছে ক্রা*শখোর! তাই যথারীতি তাই হলো। ছেলেটি অর্ষারই পলকহীন দৃষ্টি দেখে অপ্রস্তুত হলো। একটু কাঁশির শব্দ করলো কিন্তু অর্ষা হা করে তাকিয়েই আছে। প্রিয়া, মিম, নিশি, রাহা, সামিহা ওরা অর্ষাকে এভাবে দেখে মুখ টিপে হাসছে। ছেলেটি এবার সুন্দর করে বলে,

“এইযে মিস অর মিসেস! এবার উঠুন। আপনি পরে যাননি। আপনি সিকিউর আছেন।”

অর্ষা থতমত খেয়ে উঠে দাঁড়ায়। তারপর বলে,

“ইটস অকে!”

অর্ষার বেমিল কথা শুনে ছেলেটি কেমন করে তাকায় তা দেখে অর্ষা দ্রুততার সহিত বলে,

“থ্যাংকিউ এন্ড সরি।”

ছেলেটি প্রতিউত্তর করে চলে যায়। সামনে প্রিয়মকে দেখে পিঠ চাঁপড়ে কথা বলতে থাকে। ছেলেটি যাওয়ার পর অর্ষা ঘোর লাগা নজরে দেখছে তাকে। মিম ওর সামনে তুড়ি বাজিয়ে বলে,

“ও হ্যালো মেম! কল্পনা থেকে বের হোন।”

“দেখা তানু পেহলি পেহলি বার বে! হোনে লাগা দিল বেকারার বে!”

অর্ষাকে গান গাইতে শুনে ওদের হাসি ছুটে যায়। রাহা এসে বলে,

“অর্ষাপুও পেয়ে গেছে। আমিই পেলাম না। ইশ! কবে যে আসবে!”

“তোর অর্ষাপু দিনে কয়েকশবার ক্রা*শ খায়। তাই এতো খুশি হোস না।”

আরেকদফা হাসির রোল পরে গেলো। অর্ষা ক্ষিপ্রগতিতে প্রিয়ার পিঠে ধু*মধা*ম লাগিয়ে হনহন করে অন্যদিকে চলে গেছে।

_______

জারিফকে প্রিয়ার পাশে বসানো হয়। সবাই ওদের ঘিরে রেখে ছবি তুলছে আরও কতো কী! জারিফ প্রিয়াকে একান্তে কিছু বলবে তার সুযোগই পাচ্ছে না। প্রিয়ার হাতে ওর ফোন দেখে সে এবার মেসেজ লিখে,

“পুষ্পকন্যা তার রূপের ঢালি নিয়ে হাজির! পুষ্পে আবৃত তার স্নিগ্ধ কায়া।”

মেসেজ পাঠিয়ে জারিফ প্রিয়ার দিকে হালকা ঘুরে হাতের উপর ভর দিয়ে চোখে হেসে তাকিয়ে আছে আর প্রিয়া সামনের দিকে তাকিয়ে হাসছে। জায়ান, প্রিয়মরা এই মোমন্টটা ক্যামেরায় বন্ধি করল। জারিফের পড়নে সবুজ ডিজাইনার পাঞ্জাবি। হাতা গুটানো কনুইয়ের কাছ পর্যন্ত। চুলে জেল দেওয়া না। এলোমোলো করে আঁচড়ানো সাথে চোখে গ্লাস(ফ্রেম ছাড়া চশমা) তো আছেই। শুভ্র কায়ায় বাঁকা হাসি! অনিন্দ্য সৌন্দর্য বহন করছে।

প্রিয়া ফোনের ভাইব্রেশন বুঝতে পেরে একটু অপেক্ষা করে ফোনের মেসেজ অপশনে গিয়ে জারিফের বার্তা দেখে এখন সে জারিফের দিকে তাকায়। ঠোঁটের কোণে স্নিগ্ধ হাসি। দুইজনের দুই নয়নের শুভ মিলনটা যদি ক্যামেরা বন্ধি না হয় তাহলে কী চলে! একদমই না। এটাও ক্যামেরায় ধারণ করা হলো।

গায়ে হলুদ লাগানোর কার্যকর্ম শুরু হয়েছে। প্রিয়ার পছন্দ অনুসারে ডার্ক চকলেট কেক আনা হয়েছে। কেউ কিছু খাওয়াতে আসলে সে কেক, ক্ষীর ও কালো আঙুর দেখিয়ে দিচ্ছে। জারিফ এখানেও প্রিয়ার বাচ্চামি দেখে হাসলো। বাহিরে ঝড়ো হাওয়া। বৃষ্টি হব হবে ভাব। জারিফ হালকা ঝুঁকে প্রিয়ার কানের কাছে ফিসফিস করে বলল,

“বৃষ্টি আসার আগমুহূর্তে শীতলতা তোমায় ঘিরে হোক। তুমি আমার হৃদয়ে সুখ বৃষ্টি হয়ে ঝড়ো প্রিয়তমা!”

বাতাসে প্রণয়ের সুর। হৃদয়ে অনন্য খুশির জোয়ার। প্রতিক্ষায় এখন শুভ লগ্নের।

চলবে ইনশাআল্লাহ্‌,
ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন। কপি নিষিদ্ধ।