হে সখা পর্ব-৩৩+৩৪+৩৫

0
240

#হে_সখা
#অক্ষরময়ী
ত্রয়োত্রিংশ পর্ব

যা আটকে রাখতে চাই, তা বেশি করে ছুটে যায়। সময়ের ক্ষেত্রেও তাই। সুখের সময় যেনো আলোর বেগে ছুটে যায়। এইতো সেদিন এলো ছেলেটা। এখনি মাকে ছেড়ে চলে যাওয়ার দিন এসে গেলো। আড়ালে চোখ মুছলেন আম্বিয়া খাতুন। ডাইনিং টেবিলে রাতের খাবার খাচ্ছিলো সবাই। একটু পরেই যাত্রা শুরু হবে। রেহবার ও গুলিস্তাকে দুপাশে নিয়ে মাঝখানে বসেছেন আম্বিয়া খাতুন। নিজের যথাসম্ভব স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করছেন। যাত্রাকালে ছেলের মন খারাপ করাতে চাইছেন না। মায়ের আদ্র চোখ রেহবারের দৃষ্টি এড়িয়ে যেতে পারেনি। সেই ছোটবেলার মতোন মায়ের কাঁধে মাথা এলিয়ে বললো,
– চলো তোমাকে আমাদের সাথে নিয়ে যাই।
পাশ থেকে রাহিল হৈ হৈ করে উঠলো।
– তুমি যাচ্ছো যাও। আমার মাকে নিয়ে একদম টানাটানি করবে না।

ওর দিকে মনোযোগ না দিয়ে রেহবার মায়ের উদ্দেশ্যে বললো,
– মাঝেমধ্যে আমার মনে হয় তুমি ওই বাদরটাকে বেশি ভালোবাসো। আমাকে একা রেখে ওর সাথে চলে এলে।

রাহিল আবার বলে উঠলো,
– একলা কোথায়? তোমার জন্য পার্টনার ম্যানেজ করে দিয়ে তবেই এসেছি। এখন তোমার পার্টনার আছে, আমারও আছে। মা তোমার সাথে চলে গেলে আমি একলা হয়ে যাবো? আমাকে নিয়ে কারো চিন্তা নেই।
– তোকে বিয়ে করতে বারণ করেছে কে? বিয়ে করে নিজের পার্টনার নিয়ে আয়। আমি আমার মাকে নিয়ে চলে যাই।

দুই ছেলের তর্ক বিতর্কে আম্বিয়া খাতুন মুচকি হাসেন। রেহবারের মাথায় হাত বুলিয়ে দেন। ইমতিয়াজ মামুন চুপচাপ ধরনের মানুষ। দুই ছেলের খুনসুটিতে নিজের শান্ত স্বরে বললেন,
– রেহবার ভুল কিছু বলেনি। বিয়ের ব্যাপারে কিছু ভেবেছো তুমি?

রাহিল যেনো আকাশ থেকে দুম করে নিচে পরে গেলো। চোখ দুটো গোল গোল করে অবাক কন্ঠে বললো,
– বিয়ে! আমার? আমার এখনো বিয়ের বয়স হয়েছে নাকি?
– নাহ, তুই এখনো বাচ্চা ছেলেটি রয়ে গেছিস।

রাত দশটায় মিয়ামি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে রওনা দিবে রেহবার ও গুলিস্তা। ওদের বিদায় জানাতে বিমানবন্দর পর্যন্ত এসেছে পুরো পরিবার। সায়ীদা জামান হাসি মুখে এগিয়ে এলো গুলিস্তার দিকে। উনি সবসময় সূক্ষ্ম চোখে তাকিয়ে থাকে। গুলিস্তার ভীষণ অস্বস্তি হয়। আদুরে স্বরে বললেন,
– আবার এসো।

আম্বিয়া খাতুন ভেবেছিলেন গুলিস্তা নিজে থেকে একটু কাছে আসবে। কিন্তু এলো না। দূরে থেকেই উদাস চোখে চেয়ে আছে। ফিরে যেতে কষ্ট হচ্ছে তা খুব সহজে বুঝা যায়। আম্বিয়া খাতুন তো মা। উনি আরও বেশি করে অনুভব করলেন। নিজে থেকে এগিয়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরলেন। মুখে কিছু না বললেও উনাকে শক্ত করে অনেকক্ষণ জড়িয়ে ধরে রইলো গুলিস্তা। ছেড়ে দেওয়ার কোনো ইচ্ছে দেখতে না পেয়ে আম্বিয়া খাতুন নিজে থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বললেন,
– যাও এবার। দেরী হয়ে যাচ্ছে।

রেহবারের শুষ্ক মুখের দিকে চেয়ে আম্বিয়া খাতুন একটু হাসলেন। ছেলের কপালে আলতো চুমু একে দিয়ে বললেন,
– আসা যাওয়া চলতেই থাকবে। এতো মন খারাপ করলে হবে?
– তুমি নিজের খেয়াল রেখো। ঐ বাদরটাকে আর কতোদিন সামলে রাখবে। এবার ওকে একা ছেড়ে দেও।

সবার থেকে বিদায় নিয়ে ওরা চলে গেলো বিমানবন্দরের ভেতরে। প্রত্যেকের বুকের ভেতর সূক্ষ্ম ব্যথা। একজন আরেকজনের থেকে ক্রোশ দূরে যখন ছিলো তখন এতোটাও খারাপ লাগেনি। মাঝেমধ্যে মনে পরতো এতোটুকুই। কিন্তু চোখের সামনে থেকে চলে যাওয়ার বেলায় এতো কষ্ট হচ্ছে! কাছাকাছি থাকলে বুঝি এভাবেই মায়া বাড়ে। ধীরে ধীরে কষ্ট কমে যাবে। তবুও এই মুহুর্তটা অসহনীয় লাগছে।

****

ভেনিস থেকে ফিরে রেহবার ও গুলিস্তা দুজনে ব্যস্ত হয়ে পরলো। ধুলোয় জমে থাকা বাড়ি পরিষ্কার করা, ঝিমিয়ে যাওয়া গাছের যত্ন নেওয়া এসব কাজেকর্মে দিন পেরিয়ে রাত এসে যায়। অফিসের জমিয়ে রাখা কাজ সামলে হিমশিম খেতে হচ্ছে রেহবারকেও। একের পর এক মিটিং এর মাঝখানে দশ পনের মিনিটের যে ব্রেকটুকু পায়, চট করে গুলিস্তাকে ফোন দেয়। কি করছে, খেয়েছে কিনা, মেডিসিন নিয়েছে কিনা, কিছু লাগবে কিনা জানতে চায়। গুলিস্তা জিজ্ঞাসা না করলেও নিজে থেকে নিজের আপডেট জানায়। এখন কি করছে, কখন কাজ শেষ হবে, বাড়ি ফিরবে কখন ইত্যাদি তথ্য শেয়ার করতে দিনে কয়েকবার ফোন দেয়। রেহবার জানে না, এতে গুলিস্তা বিরক্ত হয় কিনা। বিরক্তবোধ করলেও রেহবারের কিছু যায় আসে না। এবার সে কিছুতেই থামবে না।
অন্যদিকে দিনভর কাজের মাঝেও গুলিস্তার মনোযোগ থাকে ফনের দিকে। সে জানে কিছুক্ষণ পর পর রেহবারের কল আসবে। প্রথমদিকে একটু হাঁপিয়ে উঠতো। এখন অবশ্য ভালোমন্দ কিছু মনে হয় না। শুধু কেমন একটা অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। রাতের জন্য রান্না বসিয়ে পাশে রাখা ফোনের দিকে তাকালো। বিকালের পর থেকে রেহবার কল দেয়নি। হঠাট কি হলো কে জানে! খানিকটা চিন্তা হচ্ছে। এর মাঝেই মেইন ডোর বেল বেজে উঠলো। অস্থিরভাবে বিরতিহীন বেল বাজিয়ে যাচ্ছে। চুলার আঁচ কমিয়ে গুলিস্তা ছুটে গেলো সেদিকে। পিপহোল দিয়ে দরজার ওপাশে দাঁড়িয়ে থাকা ব্যক্তিটিকে দেখে ভ্রু কুঞ্চিত হলো। রেহবারের কাছে এক্সট্রা চাবী থাকা সত্ত্বেও ডোরবেল বাজাচ্ছে কেনো?

দরজা খুলে দিতে রেহবারের হাস্যোজ্জ্বল মুখশ্রীর দেখা মিললো। ক্লান্ত মুখ, কুচকানো শার্ট, উসকোখুসকো চুল। এই ব্যক্তিটির উপর দিয়ে কাজের ভীষণ চাপ যাচ্ছে দেখেই বুঝা যায়। বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করে দরজা চাপিয়ে দিয়ে একহাতে গুলিস্তাকে কাছে টেনে নিয়ে কপালে চুমু দিলো। গুলিস্তা যেনো অবাক হতেও ভুলে গেছে। এ কোন নতুন পাগলামি! এরপর রেহবার যখন ওকে জড়িয়ে ধরলো নিজের অজান্তেই গুলিস্তা খানিকটা হকচকিয়ে কেঁপে উঠলো। পরমুহূর্তে অবশ্য নিজেকে সামলে নিয়েছে। ওকে ছেড়ে দিয়ে ওর চিন্তিত মুখের দিকে সরু চোখে চেয়ে রেহবার বললো,
– কপালে ওমন ভাজ ফেলে কি এতো ভাবছো?
– কিছু না।
একহাতে কপাল মুছে গুলিস্তা জবাব দিলো। কিন্তু সে কথা রেহবার মানলো না।

– অবশ্যই কিছু একটা ভাবছো। কিছু তো সমস্যা হয়েছে। অফিস ফেরত আমাকে দেখতে বাজে লাগছে?
গুলিস্তা ঝটপট মাথা দুলিয়ে না জানালো।

– ঘামের গন্ধ করছে?
– নাহ।
– তাহলে কি সমস্যা? মাথায় কিছু একটা চলছে আমি নিশ্চিত। বলে ফেলো তাড়াতাড়ি।

না চাইতেও নিজের মনের কথা মুখে এসে গেলো।
– আপনার কাছে মেইনডোরের চাবী আছে না? ডোরবেল বাজালেন যে?
– আজ অফিসে অনেক প্যারা গেছে বুঝলে। ঘরে ফিরে প্রথমে মিষ্টি চেহারাটা দেখতে ইচ্ছে করলো। ক্লান্ত শরীরে বাড়ি ফেরার সময় বউ যদি হাসি মুখে দরজা খুলে দেয় তাহলে সারাদিনের অর্ধেক ক্লান্তি এক নিমিষেই দূর হয়ে যায়। বাকি ক্লান্তি দূর করতে বউকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে টপাটপ কয়েকটা চুমু খেতে হয়। তাই ক্লান্তি দূর করতে এই টেকনিক অবলম্বন করলাম। কিন্তু মিষ্টি মুখের হাসিটা মিসিং ছিলো। পরেরবার দরজা খুলে একটু হাসি দিও। ওকে?

উত্তরের অপেক্ষা না করে রেহবার নিজের কক্ষের দিকে চলে গেলো। খানিক সময়ের জন্য গুলিস্তা নড়াচড়া বন্ধ করে ওখানেই দাঁড়িয়ে রেহবারের বলে যাওয়া কথাগুলো ভাবছিলো। প্রেসারকুকারের তীব্র শব্দে ধ্যান ভাঙল। আবার ছুটে গেলো রান্না ঘরের দিকে।

আজকাল রেহবারকে নিত্য নতুন রুপে আবিষ্কার করছে গুলিস্তা। আগে অফিস থেকে ফিরে স্টাডিরুমে নিজের কাজে ব্যস্ত থাকতো। এখন আর বাড়ি ফিরে অফিসের কাজে হাত দেয় না। সারাক্ষণ গুলিস্তার আশেপাশে ঘুরঘুর করে। অফিস থেকে ফিরে ফ্রেশ হয়ে সোজা কিচেনে চলে আসে। মানা করার পরেও রান্নায় টুকটাক হেল্প করে। টেবিল সেট করা, নোংরা থালাবাসন পরিষ্কার করা সবকিছুতেই হাত লাগায়।

সেদিনের পর থেকে রেহবার আর এক্সট্রা চাবী ইউজ করে না। গুলিস্তাকে রোজ দরজা খুলে দিতে হয়। তবে বাড়ি ফিরে এখনো বউয়ের হাসি মুখের দেখা না পেয়ে রেহবারের পুরো ক্লান্তি কাটে না। উন্নতি বলতে এতোটুকু হয়েছে, জড়িয়ে ধরলে গুলিস্তা আর হকচকিয়ে যায় না। অভ্যাস হয়ে গিয়েছে। তরকারীর কড়াই সরিয়ে রেখে চুলায় পানি গরম করতে বসিয়ে দিলো। কিছুক্ষণের মধ্যে ফ্রেশ হয়ে রেহবার কিচেনে চলে আসবে। কফি তৈরী করতে করতে চলেও এলো। কফির কাপ রেহবারের হাতে দিয়ে বললো,
– রান্না প্রায় শেষের দিকে। আপনি না হয় ডাইনিং টেবিলে গিয়ে বসুন। এখানে অনেক গরম।

কিচেন টুলে বসে কফির কাপে চুমুক দিতেই মাথা ব্যথা অনেকটা কমে এলো। কফির কড়া গন্ধে মন চনমনে হয়ে উঠেছে। সেদিকে তাকিয়ে হতাশ হলো গুলিস্তা। তরকারী দমে রেখে সালাদের জন্য সবজি বের করে আনলো।
– এই গরমের মধ্যে তুমি অনেকক্ষণ ধরে এখানে রান্না করছো। আমি দু মিনিট থাকতে পারবো না?

গুলিস্তা কিছু বললো না। বললেও এই লোক শুনবে নাকি! সে তো নিজের মনেরটাই করবে। শসা, টমেটো, গাজর ধুয়ে কাটতে শুরু করলো। সমস্ত আক্রোশ তাদের উপরেই দেখানো যাক।
– এসির বাতাস এখানে পৌছায় না। ভাবছি এখানে একটা ফ্যান লাগিয়ে নিবো। কেমন হবে?
– লাগবে না।
– কেনো লাগবে না? আমি বরং এক্ষুণি ইলেকট্রিশিয়ানকে কল দিয়ে কনফার্ম করে দেই।

গুলিস্তা ভীষণ বিরক্ত হলো। শসাটিকে বেশ জোরে চপিং বোর্ডের উপর রেখে রেহবারের দিকে ফিরে শান্ত কন্ঠে প্রতিটি বাক্য স্পষ্ট উচ্চারণ করলো।
– বললাম না, লাগবে না। অল্প কিছুক্ষণের মধ্যে রান্না হয়ে যায়। তাছাড়া এতোটাও গরম লাগে না। অভ্যাস আছে আমার।

প্রথমে স্তব্ধ হলেও মনে মনে বেশ খুশি হলো রেহবার। ফোনটি পকেটের মধ্যে রেখে মিনমিনিয়ে বললো,
– ওকে। অ্যাজ ইউ উইশ।

গুলিস্তা আবার সবজি কাটায় মনোযোগ দিলো। দ্রুত কফি শেষ করে রেহবার চলে গেলো খাবারের টেবিল সেট করতে।

ইদানীং ওরা রাত জেগে গল্প করে৷ রেহবার প্রথমে গুলিস্তার কথা জানতে চায়। দিন কেমন কেটেছে, বাজার সদাই সব আছে কিনা, কিছু কিনতে হবে কিনা ইত্যাদি। অল্প কথায় গুলিস্তা সেগুলোর উত্তর দেয়। তারপর রেহবার দীর্ঘক্ষণ ধরে নিজের কথা বলে। সারাদিন অফিসে কি করলো, কতোক্ষণ মিটিং চললো, আগামীদিনের প্ল্যান কি এসব। গুলিস্তা সেসব মনোযোগ দিয়ে শুনে।
প্রতিদিনের মতো আজও রাত জেগে রেহবারের অফিসের গল্প শুনতে হবে গুলিস্তাকে। বিছানার একপাশে শুয়ে তারই অপেক্ষা করছিলো। পাশেই বেডে হেলান দিয়ে আম্বিয়া খাতুনের সাথে ভিডিও কলে কথা বলছিলো রেহবার। কথা শেষে কল কেটে দিয়ে গুলিস্তার দিকে তাকালো।
– ঘুম পেয়েছে?

গুলিস্তার সত্যি ঘুম পেয়েছিলো। ঘুমের কারনে সবকিছু ঝাপসা দেখছে। হাই তুলে কোনোরকম জবাব ছিলো,
– হ্যাঁ।
– ঔষধ খেয়েছো?

একলাফে শোয়া থেকে উঠে বসলো গুলিস্তা। ঘুমের চোটে ঔষধের কথা বেমালুম ভুলে গিয়েছিলো। ও যে ঔষধ খায়নি তা বুঝতে পেরেও রেহবার তখনো উত্তরের আশায় তাকিয়ে আছে। ওই চোখের দিকে তাকিয়ে দৃষ্টি নত হলো গুলিস্তার। ক্ষীণ কন্ঠে বললো,
– ভুলে গিয়েছিলাম। এখনি খাচ্ছি।
– উঠতে হবে না। বসো আমি নিয়ে আসছি।

বেডে হেলান দিয়ে বাধ্য মেয়ের মতো বসে রইলো। রেহবার কিচেনে গিয়ে দুধ গরম করে নিলো। এক গ্লাস গরম দুধ ও ঔষধ নিয়ে ঘরে ফিরে দেখলো বেডে হেলান দিয়ে ঘুমের দেশে পাড়ি দিয়েছে মেয়েটা। পাশে বসে আলতো করে ডাক দিলো,
– ফুল, ফুল?

ঘুমের কারনে চোখ খুলতে কষ্ট হচ্ছিলো। তবুও পিটপিট করে চাইলো। আধো ঘুমের মাঝেই ঔষধ ও পুরো এক গ্লাস দুধ খাইয়ে দিয়ে তবে দম নিলো রেহবার। ওকে ঠিকভাবে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে রানুর সাথে কথা বলে পরবর্তী সমস্যা চিহ্নিত করে নিলো। খুব শীঘ্রই নতুন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে চলেছে গুলিস্তা।

(চলবে…)

#হে_সখা
#অক্ষরময়ী
চর্তুত্রিংশ পর্ব

গুলিস্তা রান্না করছিলো। এমন সময় রেহবার এসে পাশে দাড়ালো। অফিস ফেরত ক্লান্ত শরীর। মাথা এলিয়ে দিলো গুলিস্তার কাঁধে৷ গুলিস্তা তখন তরকারির অবস্থা দেখতে চুলায় বসানো কড়াইয়ের ঢাকনা তুলতেই যাচ্ছিলো। রেহবারের এমন আচরণে মাঝপথে হাত থেমে গেলো৷ শক্ত হয়ে আসা শরীরটা কোনোভাবে সহজ হচ্ছে না৷ কয়েক বার লম্বা শ্বাস ফেলে ঘাড় ঘুরিয়ে রেহবারের দিকে তাকিয়ে বললো,

– বেশি ক্লান্ত লাগছে?

শরীর ঝেড়ে সোজা হয়ে দাঁড়ালো রেহবার। কাউন্টারটপে পিঠ ঠেকিয়ে গুলিস্তার দিকে মুখ করে দাঁড়িয়ে জানতে চাইলো,
– রান্না শেষ?
– প্রায় শেষ। এখানে দাঁড়িয়ে না থেকে ডাইনিং টেবিলে গিয়ে বসুন। ক্লান্ত লাগছে আপনাকে।
– একটু হেসে ক্লান্তি দূর করে দেও।

রেহবারের দুষ্টামিতে গুলিস্তা তেমন প্রতিক্রিয়া দেখালো না। চুলা বন্ধ করে দিলো। রান্নার কাজ শেষ। রেহবার ওর দিকে এগিয়ে এসে বললো,
– হাসো না কেনো তুমি? দেখি তো হাসলে তোমাকে কেমন দেখায়।

হাত বাড়িয়ে গুলিস্তার উন্মুক্ত কোমড়ে আলতো করে সুড়সুড়ি দিলো। চকিতে এক লাফ দিয়ে দু কদম পিছিয়ে গেলো গুলিস্তা। অজান্তেই মুখ দিয়ে চিৎকার বেরিয়ে গেলো৷ ওমন প্রতিক্রিয়ায় রেহবার ভীষণ মজা পেয়েছে৷ হো হো করে ঘর কাঁপিয়ে হেসে উঠলো৷ অবিশ্বাস্য চোখে গুলিস্তা তাকিয়ে আছে রেহবারের দিকে৷ এ কেমন বাচ্চামি! ততোক্ষণে রেহবার আবার এগিয়েছে গুলিস্তার দিকে। রেহবার এক পা আগায় গুলিস্তা দু পা পিছিয়ে যায়। মুখে কিছু না বললেও ওর চোখের ভাষায় ভীষণ আকুতি। রেহবার সেসব পাত্তা দিলো না৷ লম্বা লম্বা পা ফেলে গুলিস্তার কাছাকাছি চলে গেলো। দু হাতের বাঁধনে আটকে ফেললো ওকে। নিজেকে বাঁচাতে গুলিস্তা ছটফট করতে শুরু করে দিলো।
– পালিয়ে কতোদূর যাবে? এমন পটকা শরীরে লাফালাফি করে কিছুতেই ছুটতে পারবে না।
– আরে ছাড়ুন। করছেন কী?

রেহবার ততোক্ষণে গুলিস্তার কোমড় ও পেটের কিছু অংশে সুড়সুড়ি দেওয়া শুরু করে দিয়েছে৷ অতর্কিত আক্রমণে খিলখিল করে হেসে উঠলো গুলিস্তা৷ হাসির রিনিঝিনি সেই আওয়াজে রেহবার ভেসে গেলো, ডুবে গেলো। হারিয়ে গেলো কোনো এক মায়ার রাজ্যে। রেহবার শান্ত হতেই হাসি থামিয়ে গুলিস্তা নিজের দু হাতে নিজের মুখ চিপে ধরলো। নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়াতে ওভাবে উচ্চস্বরে হেসে ফেলেছে৷ নিয়ন্ত্রণ ফিরে পেতেই হাসি থামিয়ে লজ্জিত বোধ করলো। কিন্তু রেহবারের কানে তখনো প্রতিধ্বনিত হচ্ছে সেই হাসির শব্দ৷

– ছাড়ুন। তারকারি নামাতে হবে।
গুলিস্তার কথায় রেহবারের ধ্যান ভাঙ্গলো। হাতের বাঁধন আলগা না করেই গুলিস্তাকে নিজের দিকে ফিরিয়ে বললো,
– এমন মোহনীয় হাসিতে আমার মনে হয় নেশা ধরে গেছে। তোমার আসলে বিশেষ বিশেষ মুহুর্তে এভাবে হাসা উচিত। যেমন ধরো, আমি তোমার উপর প্রচন্ড রেগে আছি। কাছে এসে তুমি এভাবে হেসে উঠলে। আমার রাগ তৎক্ষনাৎ হাওয়ায় মিলিয়ে যাবে।

গুলিস্তার কী হলো কে জানে! দু ঠোঁট হালকা প্রসারিত করে একটু লাজুক হাসলো। তাতে দ্বিতীয়বারের মতো রেহবার ধ্বংস হলো৷ মেয়েটা লজ্জা পাচ্ছে, মেয়েটা হাসছে। একদিনে, এক মুহুর্তে এতো প্রাপ্তি কি সামলানো যায়! গুলিস্তার কাঁধে মাথা এলিয়ে দিয়ে নিজের পতন ঠেকিয়ে ফিসফিসিয়ে বললো,
– আমি মনে হয় নিজের সর্বনাশ নিজেই ডেকে আনলাম।

গুলিস্তা ভীষণ অস্থির হয়ে উঠলো। সুস্থ মানুষটার হঠাৎ কি হলো! পিঠে হাত রেখে বারবার ডাকতে লাগলো,
– কি হলো আপনার? বেশি খারাপ লাগছে? শুনছেন?
– কিচ্ছু হয়নি৷ তুমি খাবার নিয়ে আসো। আমার মাথাটা ঝিমঝিম করছে।

গুলিস্তাকে ছেড়ে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে কথাগুলো বলে হনহন করে ডাইনিং টেবিলে চলে গেলো।

****

পরীক্ষায় ভালো রেজাল্ট করলে প্রত্যেকবার রেহবারকে স্পেশাল কিছু গিফট দিতেন আম্বিয়া খাতুন। রাহিলের ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটতো। পেন্সিল বক্স, কালার বক্স, সাইকেল, বাস্কেট বল কিংবা পছন্দের ক্রিকেট ব্যাটসহ শৈশবের সেরা গিফটগুলো ওরা পেয়েছে পরীক্ষার ফলাফলের দিন। ফলাফল ভালো হোক কিংবা খারাপ আম্বিয়া খাতুন কখনো উৎসাহ প্রদানে কার্পণ্য করেননি। বি গ্রেট এর রেজাল্ট কার্ড হাতে নিয়েও হাসি মুখে ছেলের হাতে বাজারের সেরা পেন্সিল বক্সটি তুলে দিয়েছেন।

গুলিস্তার জন্য এই সময়টি তো কঠিন পরীক্ষার মতোই। পাথরের মূর্তিটি কাঁদতে শিখেছে, হাসতে শিখেছে, লজ্জা পেতে শিখেছে। বাকিটাও ধীরে ধীরে রেহবার শিখিয়ে দিবে। কিন্তু এই মুহূর্তে এতোটা উন্নতি দেখে ওকে সেই ছোটবেলার মতো পুরষ্কৃত করতে ইচ্ছে করছে। অফিস থেকে ফেরার পথে অনেক দোকান ঘুরে ঘুরে ওর জন্য রেহবার উপহার কিনেছে। এখন সময় সুযোগ বুঝে বিজয়ীর হাতে তুলে দেওয়া বাকি।

সন্ধ্যে পেরিয়ে গেছে অনেকক্ষণ আগে। রেহবার এখনো ফিরছে না দেখে ভিষণ চিন্তা হচ্ছিলো। হলরুমে অস্থির পায়েচারি করে ফোন হাতে তুলে নিলো গুলিস্তা। একটা ফোন করে কি দেখবে? রেহবার কখনো এতো দেরী করে না বাড়ি ফিরতে। দোনামোনা করে অবশেষে কল দিয়েই দিলো। খানিকবাদে ওপাশ থেকে রেহবারের কন্ঠ ভেসে আসতেই গুলিস্তা খানিকটা কেঁপে উঠলো।

– হ্যালো?

ফোনে মানুষটার কন্ঠ একটু আলাদা শোনায়। একের পর এক হ্যালো শব্দ উচ্চারণ করে যাচ্ছে। সেই প্রতিধ্বনি যেনো শরীরের প্রতিটি লোমকূপ ভেদ করে হৃদয়ে কাঁপন ধরায়। বলতে দ্বিধা নেই, প্রথমবার কন্ঠটা ঠিকভাবে চিনতেই পারেনি গুলিস্তা। আর এখন এই কন্ঠস্বর গুলিস্তার সবকিছু শুষে নিচ্ছে। শুকনো গলা দিয়ে কোনো আওয়াজ বের হচ্ছে না। হ্যালো, হ্যালো বলতে বলতে বিরক্ত হয়ে ফোন কেটে দিলো রেহবার। এরপর না মেয়েটার হুশ ফিরলো। এখন কপালে ফোন চাপড়ে নিজেকেই বকছে। এমন সময় ফোন বেজে উঠলো। রেহবার কল ব্যাক করেছে। জিহ্বা দিয়ে শুকনো ঠোঁট জোড়া ভিজিয়ে গুলিস্তাই প্রথম কথা বললো,

– হ্যালো?

– তখন কি বলছিলে শোনা যাচ্ছিলো না।

গুলিস্তা ভাবলো , কথা বললে না শুনতে পাবেন। ও চুপ করে আছে তাই রেহবার ডাকলো,

– ফুল, কিছু বলবে? কোনো সমস্যা?

– আপনি কখন আসবেন?

রেহবার অবাক হলো। এটা সত্যি ওর বউ তো? যে মানুষটা কখনো নিজে থেকে একবার কল দেয় না, চোখের সামনে থাকলেও পাত্তা দেয় না৷ সে আজ নিছে জানতে চাইছে, বাড়ি কখন ফিরবে!

– এটা জানতে কল দিয়েছো?

গুলিস্তা কিছু বললো না। বুঝাই তো যাচ্ছে , এটা জানতেই কল দিয়েছে। আলাদা করে জিজ্ঞাসা করার কি আছে! আজব মানুষ। নীরবতা সম্মতির লক্ষণ। তাই মেনে নিয়ে রেহবার সামান্য হাসলো। মাতাল হাওয়ায় উড়ন্ত মনটাকে লাই দিতে মেয়েটা উঠে পরে লেগেছে।

– রাস্তায় আছি। তাড়াতাড়ি চলে আসবো।

তাড়াতাড়ি বললেও রেহবার তাড়াতাড়ি এলো না। হয়তো তাড়াতাড়ি-ই আসছে৷ এদিকে গুলিস্তার সময় মনে হয় ধীরে ধীরে যাচ্ছে। সময় কাটাতে দরজার বাইরে খোলা জায়গায় ঘাসের উপর হাঁটাহাঁটি করছিলো। রেহবারের গাড়ি সদর দরজা পেরিয়ে ভেতরে প্রবেশ করলো। ঘরে ফিরে যাওয়ার সময় আর গুলিস্তা পেলো না। রেহবারের সাথে চোখাচোখি হয়েই গেলো। তাই ওখানেই দাঁড়িয়ে রেহবারের অপেক্ষা করছে। গাড়ি থেকে বের হয়ে গাড়ির পেছনের ট্রাঙ্ক থেকে একটা বড় বক্স বের করলো। বক্সে কি আছে জানার আগ্রহ জন্মালেও গুলিস্তা কিছু বললো না। কারো ব্যক্তিগত বিষয়ে হস্তক্ষেপ করার স্বভাব ওর নেই। রেহবারের দৃঢ় বিশ্বাস ছিলো, গুলিস্তা কোনো প্রশ্ন করবে না। তাই তো ওর সামনে দিয়েই বক্সটিকে ঘরের ভেতরে প্রবেশ করালো।

আজকে রাতের খাবার শেষ করে রেহবার আগেই ঘরে ফিরে গিয়েছে। হাতের কাজ শেষ করে গুলিস্তা ঘরে ফিরে দেখলো রেহবার ঘরে নেই। আবারও স্টাডিরুমে গিয়েছে ভেবে সামান্য মন খারাপ হলো। এই কয়েকদিনে রেহবারের সাথে অতিরিক্ত সময় কাটিয়ে অভ্যাস খারাপ হয়ে গিয়েছে। সারাক্ষণ সামনে বসে রেহবারের কথা শুনতে ইচ্ছে করে। ভারাক্রান্ত মনের দিকে মনোযোগ না দিয়ে চুল আচড়ে বেণুনী করতে বসলো। লম্বা চুলে বেণুনী গেঁথে বিছানার দিকে যেতেই চমকে দু পা পিছিয়ে গেলো। ঘর লাগায়ো ব্যালকনির দরজায় হেলান দিয়ে রেহবার দাঁড়িয়ে আছে। ওর দিকে তাকিয়ে ওকেই দেখছে। ধুকধুক করতে থাকা হৃৎপিণ্ডের গতি নিয়ন্ত্রণে বুকের বাম পাশে হাত দিয়ে তাকে শান্ত করার চেষ্টা করলো। ওকে চোখ বড় বড় তাকিয়ে থাকতে দেখে রেহবার এগিয়ে এসে বললো,

– কী হলো? চমকালে কেনো?

– ভেবেছিলাম আপনি স্টাডিরুমে। হটাৎ সামনে দেখেছি তাই।

– স্টাডিরুমে কেনো যাবো! ব্যালকনিতে ছিলাম। চলো তোমাকে একটা জিনিস দেখাই।

সেই যে বিষাদের রাতটিতে গুলিস্তা ব্যালকনিতে দাঁড়িয়েছিলো, এরপর আর কখনো ও মুখো হয়নি। মন ছটফট করেছিলো, চাঁদের আলো ডেকেছিলো। কিন্তু গুলিস্তা যায়নি। ব্যালকনি থেকে নিয়ে এসেই তো রেহবার চড়াও হয়েছিলো। কী ভয়ানক রাত্রি! গুলিস্তা মনে করতে চায় না। ওর হাত ধরে রেহবার ওকে নিয়ে গেলো ব্যালকনিতে । গুটিগুটি পায়ে গুলিস্তা এগিয়ে গেলো বিষাদ ভরা অধ্যায়ে। কিন্তু সেখানে গিয়ে দেখলো, ব্যালকনিতে নতুন একটা সুয়িং চেয়ার রাখা। কালো ফ্রেমের ঝুলন্ত দোলনার মতো চেয়ারটিতে ফ্লোরাল গদি বসানো। সাদা গোলাপির মিশেলে রঙটা যেনো আরও বেশি উজ্জ্বল দেখাচ্ছে। প্রথম দেখাতেই গুলিস্তার পছন্দ হয়ে গেলো। রেহবার চেয়ে দেখলো গুলিস্তার মুখের সেই চাপা আনন্দ। হাত ধরে বসিয়ে দিলো চেয়ারে। সাদা গোলাপি ফুলের বাগানে আরেকটা ফুল। গুলিস্তার দু দিকে দু হাত রেখে ওর সামনে ঝুঁকে বললো,

– এটা তোমার জন্য। ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে চাঁদ দেখতে হবে না। এখন থেকে এখানে বসে চাঁদ দেখবে। তোমার সামনেই চাঁদ এসে উঁকি দিবে।

গুলিস্তা সামনে তাকালো। সত্যিই তো। চোখের সামনে এক ফালি চাঁদ হাসছে। যেনো আজ সে নিজেই গুলিস্তার সাথে দেখা করতে এসেছে। অতি আনন্দে গুলিস্তার চোখ সিক্ত হতে চাইলো। এই হয়েছে আরেক মুশকিল। আজকাল একটুতেই মন ভালো হয়ে যায়। ময়ূরের মতো নেচে উঠে। আবার কখনো সামান্য ঘটনাকে কেন্দ্র করে মন ভার হয়ে আসে। উভয় সময়েই দু চোখ ছাপিয়ে কোথা থেকে যেনো হুড়মুড় করে জলের ফোয়ারা আসতে চায়। রেহবার জানতে চাইলো,

– পছন্দ হয়েছে?

– হ্যাঁ। খুব সুন্দর।

রেহবারকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বিনাবাক্যে একপাশে চেপে বসলো গুলিস্তা। রেহবারও নীরবে সেখানে স্থান দখল করে নিলো। এইটুকুতে সে থেমে থাকলো না। এক হাতে গুলিস্তাকে টেনে নিজের কোলে বসিয়ে নিয়ে। আদুরে বিড়ালের মতো রেহবারের বুকে মাথা রেখে শান্ত হয়ে বসে রইলো গুলিস্তা।

আকাশে খুব সামান্য আলো। এক ফালি চাঁদটি এই আলো আধারি পরিবেশে আরও বেশি মোহনীয় লাগছে। চাঁদের দিকে তাকালে মনে চাপা কষ্ট অনুভব হয়। এই কষ্ট একদিকে প্রশান্তি দেয়, অন্যদিকে হাহাকার সৃষ্টি করে। সুখ দুঃখ মিলিয়ে যেমন জীবন সুন্দর। তেমনি এই হাহাকারময় প্রশান্তি অনুভব করতে আমরা চাঁদের পাণে চাই। বিশাল আকাশের চাঁদটিকে নিজের প্রতিচ্ছবি মনে হয়। অসীম আকাশে চাঁদ যেমন একলা, নিঃসঙ্গ, বৃহৎ এই পৃথিবীতে আমরাও ভেতরে ভেতরে ভীষণ একলা।

গুলিস্তাকে চাঁদের মাঝে হারিয়ে যেতে দেখে রেহবার মৃদু কন্ঠে জানতে চাইলো,

– চাঁদ এতো পছন্দ কেনো?

গুলিস্তা ফিরে তাকালো রেহবারের দিকে। চোখে চোখ রেখে ভরসা ও বিশ্বাস খোঁজার চেষ্টা করলো। রেহবারের চোখে এসবের কোনো কমতি কখনোই ছিলো না। চোখ ফিরিয়ে নিয়ে আবার চাঁদের দিকে তাকিয়ে ফিসফিসিয়ে জবাব দিলো,

– ও আমার বন্ধু।

– কে? চাঁদ?

– হুম।

– তুমি বন্ধুত্ব করেছো? আশ্চর্য ব্যাপার। আমি ভাবতাম তুমি কাউকে বিশ্বাস করো না। তা বন্ধুত্ব কীভাবে হলো?

গুলিস্তা কিছুক্ষণ চুপ করে রইলো। বলা ঠিক হবে কিনা ভাবছে। আজ পর্যন্ত কাউকে বলেনি। কী ভেবে যেনো বলা শুরু করলো,

– আমার মা খুব রাগী। একটু এদিক ওদিক হলেই রেগে গিয়ে বকা দেয়, মা-রে। তাই সাবধানে চলাফেরা করতে হতো৷ এতো সতর্ক থাকতাম, তবুও কীভাবে যেনো ভুল হয়েই যেতো। একদিন জাহিদ ছেলেটা রাস্তায় হাত ধরে টানাটানি করলো, এ নিয়ে পাড়ায় অনেক কথা হচ্ছিলো। এসব মায়ের পছন্দ না। আমার কারনেই তো এসব হয়েছে। তাই রেগে গিয়ে সেবার অনেক মে-রেছিলো। ভেজা কাঠের লাকড়ি দিয়ে মে-রেছে। অনেক ব্যথা করছিলো। আমি কান্নাকাটি করে মায়ের মেজাজ বিগড়ে দিয়েছিলাম। রেগেমেগে আমাকে বাড়ির বাইরে বের করে দিয়ে দোর দিয়ে দিলো। গ্রীষ্মকাল, ভ্যাবসা গরম। দীর্ঘ লোডশেডিং। অন্ধকার রাতে রাস্তার ধারে একলা বসে খুব ভয় করছিলো। এলাকার কুকুরটাও আমাকে দেখে ঘেউ ঘেউ করছিলো। আতংকে ভুলে গিয়েছিলাম শরীরের ব্যথা। সেই সময় আমাকে অন্ধকার থেকে বাঁচাতে শুধুমাত্র এই চাঁদটি এগিয়ে এসেছিলো। ভাগ্যিস পূর্ণিমা ছিলো সে রাতে। তবে মেঘলা আকাশে ঢেকে ছিলো চাঁদের আলো। সেই যে মেঘ কেটে গিয়ে চাঁদের দেখা মিললো, সারারাত সে আমার সাথে ছিলো। আমার আর একলা রাত কাটাতে হয়নি। বিপদের সময় যে এগিয়ে আসে, সে তো বন্ধু-ই হয়। তাই না?

দু হাতে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে ওকে আরও কাছে টেনে নিলো রেহবার। যেনো কেউ এসে ছিনিয়ে নিয়ে যাবে। আঘাত করবে, যন্ত্রণা দিবে। রেহবার পারলে অতীতে গিয়ে এই ক্ষতগুলো মুছে দিয়ে আসতো। যেহেতু এটি অসম্ভব তাই আপাতত বুকের মাঝে জড়িয়ে ধরে বললো,

– হুম। এমন বন্ধু পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার।

এরপর অনেকক্ষণ দুজনে চুপ করে রইলো। যেনো কথা ফুরিয়ে গেছে। জানতে চাইবে না , চাইবে না করেও রেহবার বলেই ফেললো,

– তারপর কি হয়েছিলো? বাড়ি ফিরলে কীভাবে?

– ছোট ভাইয়া ফিরিয়ে নিয়ে গেছে। সকালবেলা বাজার থেকে ফেরার পথে আমার সাথে দেখা হলো। তখন সাথে করে নিয়ে গেলো।

গভীর রাতে মেয়েকে বাড়ির বাইরে বের করে দিয়ে কোনো মা কীভাবে ঘুমাতে পারে! রাহিল যতোবার বাড়ির বাইরে রাত কাটিয়েছে ওদের মা সারারাত ঘুমাতো না। বিছানায় এপাশ ওপাশ করতো। সকাল হতেই ফোন দিতে দিতে রাহিলকে বিরক্ত করে ফেলতো। মায়ের অত্যাচারে বাধ্য হয়ে বেচারা ছুটতে ছুটতে বাড়ি ফিরে আসতো। একই পৃথিবীতে কতো ধরনের মানুষ আছে, এই ভেবে অবাক হলো রেহবার। গুলিস্তা ততোক্ষণে গুটিশুটি হয়ে রেহবারের বুকের উপরেই ঘুমিয়ে পরেছে। ওকে খুব সাবধানে ঘরে নিয়ে এসে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে নিজেও শুয়ে পরলো।

(চলবে..)

#হে_সখা
#অক্ষরময়ী
পঞ্চত্রিংশ পর্ব

দরজা খুলে দিতেই গুলিস্তার হাসি হাসি মুখটা চুপসে গেলো। যেখানে উঁকি দিলো হতভম্বতা। ওর গোল গোল চোখ দুটো রেহবারের ভীষণ হাসি পেলো। সামান্য হেসে বলল,
– দরজা আটকে দাঁড়িয়ে আছো কেনো? ভেতরে ঢুকতে দিবে না?

গুলিস্তা সরে দাঁড়িয়ে রেহবারকে জায়গা করে দিলো। এক হাতে পাখির খাচা অন্য হাতে অফিসের ব্যাগ হাতে নিয়ে ওভাবেই গুলিস্তা জড়িয়ে ধরে কপালে চুমু খেলো।

গুলিস্তা তখনো ভ্রু কুচকে রেহবারের দিকে তাকিয়ে আছে। ওর চোখের ভাষায় জিজ্ঞাসিত প্রশ্নের উত্তর রেহবার দিলো না। উল্টো নিজেই এক ভ্রু উঁচু করে দুষ্টু হেসে বললো,
– কি? কিছু বলতে চাও?
– আপনার হাতে ওটা কি?
– পাখি।

এমনভাবে বললো যেনো, খাচায় ভরে পাখি নিয়ে আসা খুবই স্বাভাবিক কাজ। গুলিস্তা খানিক বিরক্ত হলো। কোমড়ে দু হাত রেখে জানতে চাইলো,
– পাখি নিয়ে এসেছেন কেনো?
– তোমার জন্য।
– আমি পাখি দিয়ে কি করবো?
– চিন্তা করে দেখলাম, সারাদিন বাড়িতে একা থাকতে থাকতে তুমি বোর হয়ে যাও। আমি অফিসে ব্যস্ত থাকি। তোমাকে ঠিকমতো সময় দিতে পারি না। তোমাকে আমার সাথে অফিস যেতে বলেছি, কিন্তু সেটা তোমার পছন্দ না। তাই অনেক ভেবে চিন্তে পাখি নিয়ে এলাম। এটা যেনো তেনো কোনো পাখি নয়। পৃথিবীর অন্য সব পাখিদের তুলনায় এই পাখি সবচেয়ে বেশি বুদ্ধিমান। এর নাম গ্রে পেরোট বা ধূসর তোঁতা। একজন পাঁচ বছরের শিশুর বুদ্ধিমত্তার সমান এই তোঁতার বুদ্ধিমত্তা। আমাদের একটা বাচ্চা থাকলে ওর সাথে তোমার সময় কেটে যেতো। কথা বলার সঙ্গী হতো। কিন্তু এই মুহূর্তে পাঁচ বছরের বাচ্চা তোমাকে দেওয়া আমার পক্ষে সম্ভব নয়। সে অনেক লেনথি প্রসেস। তাই এর বিপরীতে তোঁতা নিয়ে এসেছি।

গুলিস্তা চোখ দুটো বড় করে তাকালো খাঁচার ভেতর শান্ত হয়ে বসে থাকা পাখির দিকে। কেমন ড্যাব ড্যাব করে গুলিস্তার দিকে চেয়ে আছে। যেনো সে বুঝে গিয়েছে , ওকে গুলিস্তার জন্য নিয়ে আসা হয়েছে। পাখির দিকে তাকিয়ে থেকেই গুলিস্তা বললো,
– পাখিকে খাঁচায় বন্দী করে রাখা ঠিক নয়।
– এখন ছেড়ে দিলে উড়ে চলে যাবে। তোমার সাথে ভাব জমে গেলে তখন ছেড়ে দিও। একবার মনে ধরে গেলে তাকে সহজে ছেড়ে চলে যাওয়া যায় না। সেটা মানুষ হোক, কিংবা পাখি। অভ্যাসে পরিণতে হয়ে গেলে আর চিন্তা নেই। হেলাফেলা করলেও সে তোমাকে ছেড়ে যাবে না।
– ধূসর তোঁতা।

নামটা বেশ কয়েক বার আওড়ালো গুলিস্তা। তা শুনে রেহবার হেসে বললো,
– আমাদের যেমন একটা কমন আইডেন্টিটি হচ্ছে, আমরা মানুষ। তেমনি ধূসর তোঁতা এটা ওদের কমন আইডেন্টিটি। প্রত্যেকর মানুষের যেমন আলাদা নাম আছে, তেমনি ওকেও একটা নাম দিতে হবে। তার আগে চলো, ওর বাসা গুছিয়ে ফেলি।

গুলিস্তার হাত ধরে ওকে কক্ষের দিকে নিয়ে গেলো। ওদের ঘরের সাথে লাগোয়া মস্ত বড় ব্যালকনির একপাশে হবে পাখিটির বাসা। ইনডোর প্ল্যান্টে ভরা ব্যালকনির ফ্লোরে মাদুর বিছানো। একপাশে রেহবারের নিয়ে আসা সুয়িং চেয়ার। আরেকপাশে পাখিটিকে রাখা হবে। ছোট টি টেবিলের উপর পাখির খাঁচাটি রেখে রেহবার আশেপাশে তাকিয়ে জায়গাটি ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করে নিলো। কোথায়, কীভাবে খাঁচাটি ঝুলানো যাবে তা ভেবে নিচ্ছে। রেহবারের গায়ে তখনো অফিসের পোষাক। তা দেখে গুলিস্তা বললো,
– আগে ফ্রেশ হয়ে আসুন।
– ওর একটা গতি করে দিয়েই যাই। বেচারা একা একা এখানে পরে থাকবে।
– আমি বসে আছি ওর সাথে। আপনি ফ্রেশ হয়ে আসুন।
– বেশিক্ষণ লাগবে না।
– নাহ। আগে ফ্রেশ হয়ে নিন। এক্ষুনি যান।
– এতো ইমপ্রুভমেন্ট! আমাকে ধমকাচ্ছো! বাহ! ভালোই।

হালকা হেসে রেহবার চলে গেলো শাওয়ার নিতে। ঝুলানো দোলনায় দুলতে দুলতে গুলিস্তা পাখিটিকে দেখছে। পাখিটি ভীষণ সাহসী। অচেনা পরিবেশে এসে একটুও ঘাবড়ে যাচ্ছে না। উল্টো চোখ বড় বড় করে গুলিস্তার দিকে তাকিয়ে আছে। যেনো ওকে চ্যালেঞ্জ করছে। গুলিস্তা কিছুক্ষণ সরু চোখে তাকিয়ে থেকে ওকে ভয় দেখানোর চেষ্টা করলো। কিন্তু ও ভয় পেলো না। রেহবার ফিরে এলে ছায়াযুক্ত জায়গা দেখে খাঁচা ঝুলানো হলো। পটে খাবার, পানি দিয়ে দিলো। বসে থাকার জন্য একটি গাছের ডাল, বিশ্রামের জন্য মাঝারি আকারের মাটির হাড়িও রাখা হলো। হাড়িটির দু পাশে ছোট দুটি ছিদ্র। পাখিটি একটি ছিদ্র দিয়ে ভেতরে ঢুকে অন্যটি দিয়ে বেরিয়ে আসে। তা দেখে গুলিস্তা আনমনে হেসে উঠলো। গুলিস্তাকে হাসতে দেখে ওকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে রেহবার বললো,
– এখন তোমার কাজ হচ্ছে ওকে কথা শেখানো।

গুলিস্তা অবাক হয়ে রেহবারের দিকে তাকালো। ও কীভাবে কথা শিখাবে! সে নিজেই সারাদিনে দু চারটে কথা বলে।কথা বলতে ভালো লাগে না। এখন তাও রেহবারের সাথে টুকটাক কথা বলা হয়। এছাড়া সারদিন চুপচাপ থাকাই গুলিস্তার পছন্দ।

– ও কথা বলতে পারে?
– ওই যে বললাম, পাঁচ বছর বয়সী মানুষের মতো এদের বুদ্ধি ও দক্ষতা রয়েছে। শুধু কথা নয়, ঠিকমতো ট্রেইন করলে এরা ধাঁধাঁও সমাধান করে দিতে পারে। নতুন কাজ শেখার চমৎকার দক্ষতা রয়েছে এদের।
– কীভাবে শিখাবো?
– ওর সাথে কথা বলবে। তোমার কথা শুনতে শুনতে ও নিজেই তোমার মতো করে কথা বলা শুরু করে দিবে। তার আগে ওকে একটা নাম দিতে হবে। এখন তোমার কাজ হচ্ছে, ওকে সুন্দর দেখে একটা নাম দেওয়া।
– এসব আমি পারি না। আপনি নিজেই একটা নাম রেখে দিন।
– পারি না বললে হবে না। আমি তোমার জন্য এতো শখ করে একটা পাখি নিয়ে এলাম আর তুমি একটা নাম দিতে পারবে না!
– আমার মাথায় কিছু আসছে না।
– খুঁজতে থাকো।

এরপর থেকে গুলিস্তার অর্ধেক মনোযোগ চলে গেলো পাখিটির দিকে। এক চোখ থাকে ব্যালকনির দিকে। এক কান থাকে ওখানে পরে। পাখিটি কখন ডানা ঝাপটাচ্ছে , কখন খাবার খাচ্ছে, কখন ঘুমাচ্ছে সবকিছু গুলিস্তা লক্ষ্য করছে। এর মধ্যে বেশ কয়েকবার গিয়ে চেক করে এসেছে। খাবার , পানি সব ঠিকঠাক আছে কিনা। ওর আগ্রহ দেখে রেহবারের খুব ভালো লাগছে আবার হিংসাও হচ্ছে। গুলিস্তার এটেনশন এখন দু ভাগে বিভক্ত হয়ে গেলো কিনা।

বেশি খাবার খেলে হিতে বিপরীত হবে। সবসময় খাবার দেওয়ার প্রয়োজন নেই। শুধু পানির পটে পানিটা ঠিকঠাক যেনো থাকে।

রেহবারের কথায় এ যাত্রায় ছোটাছুটি কিছুটা কমেছে। রাতে খাবারের পর দুজনে বিছানায় শুয়ে আছে। ব্যালকনির দরজা লক করা হয়নি। সেখানে সাদা পর্দা ঝুলছে। রেহবারের কথা শোনার ফাঁকে ফাঁকে গুলিস্তা সেদিকে তাকাচ্ছে।

– তারপর এতো খোঁজাখুঁজি করেও ফাইলটা পেলাম না। লিতুন কি করলো জানো? একা খুঁজতে না পেরে আরও কয়েকজন কলিগকে ডেকে নিয়ে এলো। এদিকে মিটিং এর সময় পেরিয়ে যাচ্ছে অথচ আমরা সবাই মিলেও ফাইল খুঁজে পাচ্ছি না। আমি তো আশা ছেড়েই দিয়েছিলাম। এই প্রজেক্ট মনে হয় হাত থেকে বেড়িয়েই গেলো। সেই মুহুর্তে লিতুন ফাইল খুঁজে পেলো। কোথায় ছিলো জানো?

রেহবারের প্রশ্নের বিপরীতে গুলিস্তা কোনো উত্তর দিলো না। সে তাকিয়ে আছে ব্যালকনির দিকে। তা দেখে রেহবার ওকে ডাকলো,
– ফুল? তুমি কি আমার কথা শুনছো?
– হ্যাঁ। শুনছি তো। কোথায় পেলো হারিয়ে যাওয়া ফাইলটি?
– কাবার্ডের নিচে। শেলফ থেকে পরে গিয়ে কাবার্ডের নিচে চলে গিয়েছিলো। তুমি ভাবতেও পারবে না, আমার কেবিনের কী যে বাজে অবস্থা। সব উল্টাপাল্টা হয়ে আছে। কোথাকার ফাইল কোথায় পরে যে আছে। ওগুলো ওভাবেই রেখে বেরিয়ে এসেছি। এদিকে এই সপ্তাহে টানা মিটিং রয়েছে। লিতুনের হাতেও সময় নেই।

গুলিস্তা হুট করে বলে বসলো,
– আমি গুছিয়ে দিবো?

গুলিস্তার প্রস্তাবে রেহবার অবাক হলো। নিশ্চয়ই কোনো কিছু না ভেবে এমনিতেই বলে ফেলেছে। তাই শিওর হওয়ার জন্য বললো,
– তুমি? আমার অফিসে যাবে? তোমার না আমার অফিসে যাওয়া পছন্দ নয়।
– না মানে, প্রয়োজনে যাওয়াই যায়। প্রতিদিন যেতে ভালো লাগে না। অনেক মানুষজন চারপাশে। আমার ভালো লাগে না। কালকে গিয়ে ফাইল গুছিয়ে দিয়ে চলে আসবো। যদি আপনার সমস্যা না হয় আরকি।
– আমার কী সমস্যা হবে? আমার অফিস মানে তোমার অফিস। যখন ইচ্ছে হয় যাবে, যখন ইচ্ছে চলে আসবে।

রাত গভীর হতেই দুজনে শুয়ে পরলো। রেহবারের চোখে ঘুম নেমে আসলেও গুলিস্তার চোখে ঘুম নেই। ছোট বাচ্চারা পছন্দের কোনো খেলনা পেলে আনন্দে তাদের যেমন রাতের ঘুম হারিয়ে যায়, গুলিস্তার সেরকম লাগছে। বারবার মনে হচ্ছে, ওই পর্দার ওপাশে একটা অদ্ভুত প্রাণী আছে। যে চোখ পাকিয়ে গুলিস্তার দিকে তাকায়। নীরবে যেনো গুলিস্তাকে বকা দিচ্ছে, শাসন করছে। গুলিস্তার বেশ মজা লাগে ওর দিকে তাকিয়ে থাকতে।

ঘুমের মাঝেই এক পাশে ফিরে শুতে গিয়ে রেহবার দেখলো গুলিস্তা চিৎ হয়ে শুয়ে ঘাড় কাত করে ব্যালকনির দিকে তাকিয়ে আছে। মৃদু হেসে ঘুম জড়ানো কন্ঠে রেহবার বললো,
– এবার ঘুমাও। সকাল হলে আবার গিয়ে দেখে এসো। পাখিটা তোমার এতো পছন্দ হয়েছে, আমাকে বললে না তো। উপহার পছন্দ হলো আর উপহারদাতা জানলো না। কী দুঃখজনক!

একপাশে কাত হয়ে রেহবারের দিকে মুখ করে শুয়ে গুলিস্তা বললো,
– থ্যাংকিউ।
– এতো শুকনো ধন্যবাদ! কোনো ব্যাপার না। এই দিয়ে কাজ চালিয়ে নিবো।

মজার ছলে কথাটি বলে রেহবার হালকা হাসলো। তা দেখে গুলিস্তার ঠোঁটেও সামান্য হাসি দেখা গেলো। তবে সে হাসির পেছনে মলিনতার ছায়া দেখতে পেলো রেহবার। মন খারাপের কারন বুঝতে না পেরে হাত বাড়িয়ে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললো,
– অনেক রাত হয়েছে। এবার ঘুমাও।

(চলবে)