#হোম_পলিটিক্স
#আফসানানীতু
#পর্ব_১৪
আনোয়ারার ছোট বোন মনোয়ারা তার সামনে এক কাপ চা রেখে রুষ্ঠ কন্ঠে বোনকে বলে,
– এবার দয়া করে কিছু মুখে দেও তো আপা! সকাল থেকে স্বামী সন্তানের শোকে নাওয়া খাওয়া তো ছেড়ে দিয়েছো, অথচ দেখো এক তোমার ছোট ছেলে ছাড়া কেউ তোমার একটা খোঁজ পর্যন্ত নিল না!
– কিছু খেতে ইচ্ছে হচ্ছে নারে। তুই একবার ভেবে দেখ, আমি আমার পুরোটা জীবন এই সংসারের জন্য দিলাম। অথচ কোথাকার কোন মেয়ে উড়ে এসে জুড়ে বসলো সংসারে, ব্যাস! আমার সব অধিকার শেষ? ওই মেয়ের নষ্টামি নিয়ে কথা বলব সেই অধিকারও আমার নেই? বোঝ তাহলে আমরা মেয়েরা সংসারে কতটা গুরুত্ব পাই।
– এসব নিয়ে আর ভেবে লাভ আছে আপা? তোমাকে অনেক আগেই আমি বলেছিলাম, একটু শক্ত হতে শেখো। দুলাভাই একটু চোখ রাঙ্গানি দিলেই তো তুমি চায়ে ডুবানো মুড়ির মতো মিইয়ে যাও। সেসময় শফির বিয়ের কথা যখন উঠলো তখন কত করে বললাম তুমি শক্ত হও তাহলেই হবে। আমাদের শফি নরম ছেলে, তাকে তুমি যেইভাবে বলবে সে সেভাবেই চলবে। তুমি বললে সে পরীকে অবশ্যই বিয়ে করতো। মাঝখান দিয়ে দুলাভাইটা বাঁধ সাধলো, আর তুমিও দুলাভাইয়ের কথায় মাথা নত করে ফেললে। তবে একটা ব্যাপার আপা আমার মাথায় আসেনা, দুলাভাই কেন যে আমাকে এত অপছন্দ করেন! আমি তার একমাত্র শালী, অথচ আমি খেয়াল করেছি সে আমাকে খুব কেয়ারফুলি এভয়েড করে। কেন করে সেটাই মাথায় ঢোকে না! আমি কি এতই খারাপ, আপা?
– তোর দুলাভাইয়ের কথা বাদ দে তো! এই লোকটা সারা জীবন আমাকে শুধু জ্বালায় গেল। একটাবার আমার কথা শুনল না! আমার বড় ছেলের জীবনটা তো নষ্ট করেছে, এখন আবার ছোট ছেলের পিছে লেগেছে। বলে কিনা হৃদিতাকে অভিরূপের বউ করে আনবে! কেন? বিয়ের পর হৃদিতার মা আমাকে কম জ্বালিয়েছে যে এখন তার মেয়েকে এনে আমি বাকি ষোল কলা পুরন করবো?
– ষড়যন্ত্র আপা, সব তোমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র! তুমি যাতে সংসারটা নিজের হাতের মুঠোয় না রাখতে পারো সেইজন্য দুলাভাই একেকবার একেক রকম কেচ্ছা-কাহিনী করে তার দল ভারি রাখে। আপা, এই আমি বলে রাখছি… তুমি কিন্তু এবার কোনরকমেই রাজি হবে না। শফির জীবনে যা হয়েছে হয়েছে, অভির যেন কোন ক্ষতি না হয়। অভি আমাদের সোনার ছেলে, ওর জীবনটা আমি নষ্ট হতে দেব না। তাছাড়া তুমি তোমার কথাও ভাবো! শেষ বয়সে তোমাকে তোমার মত করে ভালোবাসার জন্য, যত্ন নেয়ার জন্য একজন লোক তো দরকার। আমি বলি কি আপা, এখনই সময়!লোহা গরম আছে, হাতুড়ি মেরে দাও। শফিকে বলো মেয়েটাকে ডিভোর্স দিতে। আমার পরী তো এখনো আছে! তোমার ছেলে যদি চারটা বিয়ে করেও বউ ছাড়ে তবুও আমি আমার শফির হাতেই পরীকে তুলে দেব চোখ বুঁজে।
– সে কি আর আমি জানিনা? তুই আর পরী যে আমাকে কতটা ভালোবাসিস তাতো আমি জানি। কিন্তু আমার কপালে কি আর এত সুখ হবেরে!
আনোয়ারা নিজের ভবিষ্যতের কথা ভেবে কাঁদতে বসেন, সেইসঙ্গে তার ছোট বোন মনোয়ারাও সেই কুমিরের কান্নায় মন প্রাণ দিয়ে অংশগ্রহণ করে।
***
ক্ষুধা লেগেছে বলে বিপুল চেঁচামেচি করলেও হাফপ্লেট কাচ্চির অর্ধেকটাও শেষ করতে পারেনা নাফিসা। লাঞ্চ করতে অভির সাথে বের হবার আগে ভয়েস মেসেজগুলো শুনেছে সে। সেগুলো শোনার পর তার মন একটু বিক্ষিপ্ত হয়ে আছে। কোথায় সে ভেবেছিল পেছনে যখন কথা শোনা যাচ্ছে, হোক না হোক কোন সূত্র তো অবশ্যই পাওয়া যাবে। অথচ তাকে হতাশ করে দিয়ে একটা ভয়েজ মেসেজে এক বৃদ্ধর গলা শোনা যাচ্ছে যে কিনা টেনে টেনে কাউকে বলছে…” মদন, ক্ষুধা লাগছে খাইতে দে!” মদন?? মানে সিরিয়াসলি!! নামটা শুনেই নাফিসার মেজাজ খারাপ হয়ে গিয়েছিল। বর্তমান যুগে কারো নাম মদন হয়? আল্লাহ জানে এই মেসেজ কোন মদন পাঠিয়েছে! পাঠিয়েছে তো পাঠিয়েছে আবার জাফরের মতন আরেক মদনকে পাঠিয়েছে! এখন যত ঝক্কি সব তার উপর দিয়ে যাচ্ছে।
আরেকটা ভয়েস মেসেজে একটা মোবাইলের রিংটোন শোনা যায়, যেটা এখন বাংলাদেশের অর্ধেক মানুষই বোধ হয় ব্যবহার করে। বিশেষত্ব বলতে কিছুই নেই তাতে! এখন এই দিয়ে তার কিইবা সাহায্য হবে! নাফিসা হতাশ মনে ভাবে রুচিতার সমস্যাটা অভির হাতে তুলে দিলেও এই সমস্যাটা বোধহয় তার মার কাঁধেই চাপাতে হবে। কেননা নাফিসার পক্ষে এর বেশি আর কিছু করা সম্ভব নয়।
এদিকে নাফিসাকে আনমনে প্লেটের খাবার নাড়াচাড়া করতে দেখে অভি জিজ্ঞাসা করে,
– আপনার না এত ক্ষুধা লেগেছে, এখন তো দেখি প্লেটের খাবারটুকুও শেষ করতে পারছেন না!
নাফিসা এতক্ষণ খুব কষ্ট করে গিলছিল। অভি তার ব্যাপারটা ধরে ফেলেছে বুঝতে পেরে ঝটপট খাওয়ায় সাঙ্গ দেয়। হেসে বলে,
– যাক বাবা, বাঁচা গেল! বুঝতে যখন পেরেছেন তখন কষ্ট করে আর খেতে হবে না। সত্যি বলতে কি আমার আসলে তেমন একটা ক্ষুধা লাগেনি। লাগবে কোত্থেকে? আমরা তো সকালের নাস্তাই করলাম দশটায়। আপু আমাদের বাসায় এলো, তার সঙ্গে কথা বলতে বলতে নাস্তা খেতে একটু দেরি হয়ে গেছে। এখন বেলা দশটায় নাস্তা করে আবার একটার সময় এই মারদাঙ্গা রিচ ফুড আমার গলা দিয়ে নামছেনা, সরি!
– তাহলে যে বললেন ক্ষুধা লেগেছে!
– আসলে আমি আপনার সঙ্গে কিছু কথা বলতে চাচ্ছিলাম। তাই ভেবেছিলাম লাঞ্চ করব বললে আপনি আমাকে নিয়ে বের হবেন, কোথাও বসে নিরিবিলিতে কথাগুলো সারতে পারবো।
অভি এবার আগ্রহ নিয়ে তাকিয়ে বলে,
– ব্যাপারটা কি ভাবীকে নিয়ে?
– আপনি তো ওই ভিডিওটা দেখেন নি, তাই না?
নাফিসা গ্লাসের পানিতে গলা ভিজিয়ে জানতে চায়।
– না দেখিনি।
– ভিডিওটা আসলে এডিট করা। এটা আপু যখন হোস্টেলে পড়াশোনা করছিলেন তখনকার ভিডিও। আপুর এক রুমমেট বান্ধবী তার জন্মদিনে ভিডিওটা করেছিলেন। ভিডিওতে বান্ধবীকে দেখা যাচ্ছে না, শুধু তার ভয়েস শোনা যায়। ওখানে বান্ধবীর গলার জায়গায় এডিট করে অন্য কোন পুরুষ মানুষের গলা জুড়ে দেয়া হয়েছে। তারপর ভিডিওটা পাঠানো হয়েছে আপনার মায়ের কাছে। উনি বোধহয় মনোযোগ দিয়ে শোনেননি, শুনলেই বুঝতে পারতেন ওটা আলগাভাবে জুড়ে দেয়া হয়েছে।
অভি একটুখন চুপ করে থেকে বলে,
– ভিডিওটা খুব সম্ভবত ভাইয়াকেও পাঠানো হয়েছে। দুঃখের বিষয় হচ্ছে আমার মা আর ভাই কেউই প্রযুক্তি সম্পর্কে ততটা জ্ঞান রাখেনা, হয়তো সেজন্যই তারা ধরতে পারেনি।
– সেটাইতো! এখন আপনি এই ব্যাপারে যদি কিছু করতেন!
– ভাবী কি ভিডিওটা আপনার সাথে পাঠিয়েছে?
নাফিসা ঠোঁট উল্টে বলে,
– আপু আসলে ভিডিওটা কাউকে দেখাতে চাইছেন না। ভিডিওটা খুব যে খারাপ তেমন না কিন্তু, আপুর পোশাকটা একটু গড়বড় করে ফেলেছে এই যা!
– এখন ভিডিওটা যদি না দেয় তাহলে আমি কি করতে পারি? ভিডিওটা আমাকে দিতে বলেন, আমি সাইবার ক্রাইমের আওতায় একটা মামলা করি।
– আম্মাও তাই বলছিল। যেহেতু হোয়াটসঅ্যাপ থেকে ভিডিওটা পাঠানো হয়েছে, আপনাদের হাতে একটা মোবাইল নাম্বারও আছে। সেটাও একটা ইম্পর্ট্যান্ট পয়েন্ট, কি বলেন? কিন্তু সমস্যা হল,আপু তো রাজি হচ্ছে না। তবে আপনার ভাই যদি বলে তাহলে হয়তো রাজি হবে।
– ভাবী আসলে সহজ সরল। সে ব্যাপারটাকে অন্যভাবে দেখছে। তাকে বোঝাবেন পুলিশের কাছে এমন হাজার ভিডিও আসে। এগুলোকে তারা সেই নজরে দেখেও না! এগুলো তাদের কাছে এভিডেন্স মাত্র!
– সেটাই! আম্মা আসলে সেজন্য আপনাকে বলতে বলল। যদি আপনারা মনে করেন মামলা করা দরকার তাহলে করবেন, কিন্তু আপনাদেরকে না জানিয়ে মামলা করাটা ঠিক হবে না। তাই আম্মা এ ব্যাপারটা আপনাদের ইচ্ছার উপর ছেড়ে দিতে বলেছে। যেহেতু এখানে আপনাদের পারিবারিক মান সম্মানের ব্যাপার জড়িত তাই আপনারাই ভালো বুঝবেন ব্যাপারটা কিভাবে হ্যান্ডেল করতে হবে।
– আমার উপর ভরসা রাখার জন্য আন্টিকে অসংখ্য ধন্যবাদ। ব্যাপারটা আমি দেখব, আপনি কাইন্ডলি ভাবীকে বাসায় চলে আসতে বলেন।
নাফিসা মাথা নেড়ে বলে,
– থাকুক না আপু আর দুই একটা দিন আমাদের বাসায়। মানে আপনাদের বাসার সিচুয়েশন আপনি নিশ্চয়ই ভাল বুঝতে পারছেন। আর দুই একটা দিন থাকুক, তার মধ্যে আপনি এদিকটা সামলে নিন।
– এটা তো বুঝলাম, কিন্তু ভাইয়া যদি জানে ভাবী পাশের বাড়িতে আছে তাহলে তো মন খারাপ করবে! ভাইয়া কি সেখানে তাকে থাকতে দেবে? যেভাবে কান্নাকাটি করছিল ফোনে, না বলেও তো থাকতে পারছি না। ভাবীর চিন্তায় না আবার শরীর খারাপ করে!
অভি আরো কিছু বলার আগে তার ফোনটা বেজে ওঠে।
– হ্যালো ইয়ামিন।
– ভাইয়া, তোমরা এগুলো কি শুরু করেছো? খালাকে কি কখনোই তোমরা একটু মূল্য দিতে শিখবে না?
ইয়ামিনের কথা বলার ধরণটা মোটেই পছন্দ হয় না অভির।
– মূল্য দিতে শিখব না মানে? দেখ ইয়ামিন কথা বলবি ভালো কথা, কিন্তু বুঝে শুনে বলিস। আমি ভাইয়া না, আমার সঙ্গে কথা বলার সময় হিসেব করে বলবি। আমার মাকে আমি কতটা মূল্য দেই বা না দেই সেটা আমার তোর কাছ থেকে জানতে হবে না।
– অবশ্যই জানতে হবে! বাসার আনওয়ানটেড সিচুয়েশনের জন্য যখন আমার খালাকে বাসা থেকে বের হয়ে যেতে হয় তখন তোমরা ছেলে হিসেবে কিছু না করলে ভাইগ্না হিসেবে আমি অবশ্যই কিছু দায়িত্ব পালন করব।
– তা কর না, হোস্টেলে না থেকে বাড়ি চলে যা। গিয়ে ভালোমতো খালার সেবা কর। যতক্ষণ সে ওখানে থাকবে তাকে হাসিখুশি রাখ। আমার মা যখন আমার বাসায় থাকবে তখন আমি আমার মায়েরটা দেখব। এখন তোর যখন এত খালার দায়িত্ব পালনের শখ তুই বাড়ি গিয়ে সেই দায়িত্ব পালন কর।
– হ্যাঁ তাই করছি! আমি বাসাতেই আছি। পরী আপা ফোন করে খুব কান্নাকাটি করছিল তাই আর হোস্টেলে থাকতে পারলাম না, চলে এলাম।
– খুব ভালো করেছিস! আমিও একটু পরে আসছি, ততক্ষণে তুই তোর এই চটাং চটাং কথা বন্ধ করে শান্ত হ। তবে আগেই বলে রাখছি তোদের বাসায় এসেও যদি তোর এমন হাব ভাব দেখি , তুই আমার হাতে চড় খাবি এটা জেনে রাখিস।
প্রচন্ড বিরক্তির সঙ্গে অভি লাইনটা কেটে দেয়। নাফিসার দিকে তাকিয়ে দেখে নাফিসা খুব মনোযোগ দিয়ে তার কথা শুনছে, এতে সে আরো বেশি বিব্রত বোধ করে। নাফিসা যদিও এমন ভাব দেখায় সে কিছু শোনেনি তবু অভিকে নিজের রাগকে নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য জোরে জোরে দম ফেলতে দেখে নাফিসা নিজেও কিছুটা অস্বস্তিতে পড়ে যায়। অস্বস্তি কাটাতে অভিকে জিজ্ঞাসা করে,
– কে, আপনার কাজিন?
– হ্যা, ওই মা রাগ করে ওদের বাসায় চলে গেছে শুনে ও হোস্টেল থেকে চলে এসেছে এটা বলতে কল দিয়েছিল। যাতে আমিও তাড়াতাড়ি ওদের বাসায় চলে যাই।
অভি বেসুরো কন্ঠে ব্যাখ্যা করে।
– বাব্বা! খালার টানে একেবারে দৌড়ে হোস্টেল থেকে চলে এসেছে? আপনার মা তো দেখছি খুব লাকি!
অভি তার জবাব না দিয়ে আবার আগের কথায় ফিরে আসে।
– হ্যাঁ, যা বলছিলাম। আমি অফিসের কাজ গুছিয়ে একটু পর বসকে বলে আমার খালার বাসায় যাচ্ছি মাকে আনতে। মাকে নিয়ে আসি, এদিকে ভাবীও আসুক। রাতে বসে ব্যাপারটা নিয়ে সবার সঙ্গে আমি আলাপ করব।
– বলছেন তো খুব সহজে! কিন্তু আপনার মাকে ফিরিয়ে আনতে পারবেন?
অভি আবারও অস্বস্তিতে পড়ে যায়। নাফিসা তাহলে তাদের ফোনের কথোপকথন শুনেছে? কথা সত্যি, ইয়ামিনের কথায় যা বোঝা গেল ওখানে ওরা তার মাকে ভালই রাজনীতির পাঠ পড়াচ্ছে। অভি ঘরোয়া রাজনীতিতে একেবারেই কাঁচা, সুতরাং ওখানে গিয়ে মাকে বুঝিয়ে বাড়ি ফিরিয়ে আনতে পারবে কিনা সে ব্যাপারে তার নিজেরও যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে।
– এক কাজ করলে কেমন হয়? আপনি আমাকেও সঙ্গে নিয়ে চলেন।
– আপনাকে? কিন্তু কিভাবে? কেন?
– ওরে বাবা, এত প্রশ্ন!
নাফিসা ভ্রু নাচিয়ে হেসে ওঠে।
– না মানে ওখানে গেলে সবাই জিজ্ঞাসা করবে না আপনাকে কোথা থেকে নিয়ে এলাম? তাছাড়া আপনি ওখানে যেয়েই বা কি করবেন?
অভি তার মাকে ভালো করেই চেনে। ওখানে গেলে তাকে যে তার মা দু চার কথা শোনাবে এটাই স্বাভাবিক। সঙ্গে তার খালা আর খালাতো ভাই বোন মুখ বন্ধ রেখে বসে থাকবে এমনটা নয়। এই পরিবেশে সে আসলে নাফিসাকে নিতে চাচ্ছে না। এদিকে নাফিসা নিজ থেকে কেন ওখানে যেতে চাচ্ছে সেটাও তার কাছে পরিষ্কার হয় না।
নাফিসা অভির বিভ্রান্ত ভাব দেখে মুচকি হেসে বলে,
– আপনি এতো ঘাবড়ে যাচ্ছেন কেন বলুন তো? আমি শুধু আপনাকে একটু সাহায্য করতে চাচ্ছি। ওখানে গিয়ে আমি যদি আপনার মাকে বলি আপনার ভাবী আমাদের বাড়িতে আছে আর সে আমাকে পাঠিয়েছে তার হয়ে আন্টির কাছে মাফ চাইতে। তাই আমি আপনার অফিসে এসেছি এবং আপনাকে নিয়ে তার সঙ্গে দেখা করতে এসেছি… এই কথা বললে চলবে না? এরপরে আর কেউ আপনাকে আর কোন প্রশ্ন করবে বলে আপনার মনে হয়?
অভির জড়তা তবু কাটেনা। তাই দেখে তাকে আশ্বস্ত করার জন্য নাফিসা নরম কন্ঠে বলে,
– আমার উপর বিশ্বাস রাখেন, আমি গেলে আপনার মা অবশ্যই বাড়ি ফিরে আসবে। এই ব্যাপারে আমি আপনাকে শতভাগ গ্যারান্টি দিতে পারি। শুধু আপনি আমাকে কথা দিন বাড়ি ফেরার পর আপনি আপুর হয়ে সবার সঙ্গে লড়বেন। আপুর সম্মানের জন্য তার হাজবেন্ড কি করবে না করবে আমার তাই নিয়ে বলার কিছু নাই। কিন্তু আপনি আমাকে কথা দিবেন, আপনি আপুর পক্ষে থাকবেন। যেকোন সিচুয়েশনে… কথা দিচ্ছেন তো?
অভি কিছু না ভেবেই নাফিসার হাতের উপর হাত রেখে ভরাট কন্ঠে বলে,
– কথা দিচ্ছি।
এতো অল্প পরিচয়ে একটা ছেলে হুট করে নাফিসার হাতের উপর হাত রেখেছে, নাফিসার উচিত হাতটা সরিয়ে নেয়া। কিন্তু সে পারেনা। বরং অভির স্পর্শে তার শরীরের সবকটা রক্তকণিকা একসঙ্গে হুল্লোড় করে ছুটোছুটি শুরু করে দেয় দ্রুত বেগে। তার নিজেকে কেমন পাখির পালকের মতো হালকা মনে হয়। মনে হয় সে যেন এই পৃথিবীর মধ্যাকর্ষণ শক্তি হারিয়েছে। আর তাই তো এত কোলাহলের মাঝেও সে একা শূন্যে ভাসছে। অভিরুপের পুরুষালী হাতটা তার হাতের উপরে… এই দৃশ্যটা যেন পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর দৃশ্যের একটা। যে দৃশ্যটা সে অনেকবার স্বপ্নে দেখেছে, শুধু মানুষটা কে ছিল তা আজ দৃশ্যমান হলো।
চলবে।