#অগ্নিদগ্ধ_ভালোবাসা
#পর্বঃ১২
#লেখিকাঃদিশা_মনি
শাহনওয়াজ নিজেকে সামলে নেয়। সোহিনীও ততক্ষণে বোধহয় কিছুটা অনুতপ্ত বোধ করে শাহনওয়াজের মাথায় রক্ত দেখে। তাই সে গার্ডসদের উদ্দ্যেশ্যে বলে,
“আপনারা বাইরে যান। এদিকটা আমি সামলে নিচ্ছি।”
গার্ডসরাও বেশি কিছু না ভেবে বেরিয়ে যায়। সোহিনী এবার ফাস্ট এইড বক্স নিয়ে শাহনওয়াজের কাছে গিয়ে তার মাথায় ব্যান্ডেজ করে দিতে দিতে বলে,
“দেখুন..আমি আপনাকে এভাবে আঘাত করতে চাইনি। কিন্তু আপনি যেভাবে আমার উপর হামলে পড়েছিলেন তাতে এছাড়া আর অন্য কোন উপায় ছিল না আমার কাছে।”
সোহিনী খুব যত্ন সহকারে মাথায় ব্যান্ডেজ করে দিচ্ছিল। শাহনওয়াজ সোহিনীর স্পর্শে ভীষণ আবেগময় হয়ে পড়ছিল৷ আচমকা সে বলে ওঠে,
“এরপরেও তুমি বলবে তুমি আমার তানহা নও?”
সোহিনী এবার দ্রুত দূরে সরে গিয়ে বলে,
“আমি মানবিকতার খাতিরে আপনার সেবা করতে চাইছিলাম কিন্তু এখন দেখছি আপনি এটারও যোগ্য নন। যাইহোক, আপনার যা ভাবার আপনি ভাবতে পারেন৷ কিন্তু আমার কথা পরিস্কার। আমি হলাম ডাক্তার সোহিনী চৌধুরী। তানহা ফানহা নই।”
বলেই সোহিনী চৌধুরী দ্রুত বেরিয়ে যায়। শাহনওয়াজ তার যাওয়ার পানেই তাকিয়ে থাকে। এর মাঝে আকবর এসে শাহনওয়াজের পাশে বসে বলে,
“স্যার, সবকিছু ঠিকঠাক তো? আপনার মাথায় এটা কিসের আঘাত লেগেছে।”
“যেখানে আমার মন পুরো ক্ষতবিক্ষত সেখানে তুমি আমার মাথার আঘাত নিয়ে চিন্তিত আকবর?”
“স্যার আমি তো…”
“আমার কেন জানি এই ডাক্তার সোহিনীকেই আমার তানহা মনে হচ্ছে। আচ্ছা, আমি কি তানহাকে চিনতে এত বড় ভুলটা করতে পারি?”
আকবর বলার মতো কিছু খুঁজে পায়না। শাহনওয়াজ আবারো বলে ওঠে,
“আমার মনের সন্দেহ টা কিছুতেই দূর হচ্ছে না আকবর। এই ডাক্তার সোহিনীর উপর আমায় নজর রাখতে হবে। তাহলেই সব প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যাবে।”
“আপনি কি করতে চাইছেন স্যার?”
“আপাতত শুধু সত্য উদঘাটন করতে চাইছি। আর এজন্য তোমার একান্ত সাহায্যের প্রয়োজন।”
“জ্বি, স্যার। বলুন আমায় কি করতে হবে।”
“যেভাবে তানহার সব বায়োডাটা জোগাড় করেছিলে ঠিক সেভাবে এই ডাক্তার সোহিনীর সব বায়োডাটা বের করে আনো।”
“আচ্ছা৷ স্যার।”
শাহনওয়াজ বলে ওঠে,
“তুমি যদি সত্যিই আমার তানহা হয়ে থাকো তাহলে এভাবে আমার চোখে ধুলো দিতে পারবে না। তোমার সত্যটা আমি বের করবই।”
★★
শাহনওয়াজ সিদ্দিকী ম্যানশনে এসে উপস্থিত হয়। গতকাল থেকে তার মানসিক অবস্থা খুব একটা ভালো না। তবুও সে নিজেকে যথাসম্ভব শান্ত রেখে মর্জিনা বেগম ও আসগর ইসলামের সামনে আসে। এসেই গুরুগম্ভীর স্বরে বলে,
“তানহা তো আপনাদের মেয়ে..তবুও ওর মৃত্যুর খবরে আপনাদের মাঝে একটুও দুঃখের ছিটেফোঁটা তো আমি দেখতে পাচ্ছি না।”
মর্জিনা বেগম বলে ওঠেন,
“দুঃখ কি এভাবে মাপা যায়? আমাদের ভেতরের এখন কি অবস্থা সেটা আমরাই জানি..দুঃখে বুকটা ফেটে যাচ্ছে।”
বলেউ হাউমাউ করে ডুকরে ওঠেন। আসগর ইসলামকেও গুতা মেরে তার তালে তাল মেলাতে বলেন। তাদের এমন অভিনয় দেখে শাহনওয়াজ বিরক্তির সুরে বলে,
“আমি জানি আপনারা তানহার মৃত্যুতে একটুও দুঃখ পান নি। তাই এসব লোক দেখানো কান্না বন্ধ করুন। আর একটা কথা…আপনাদের মেয়ে মিম ও কোথায়? ও তো কাল ছিল তানহার সাথে?”
মর্জিনা বেগম বলেন,
“মিমের কোন খবরই তো আমরা পাচ্ছি না। ও তো কাল থেকে নিখোঁজ। আমাদের এক মেয়েকে তো হারিয়ে ফেললাম আরেক মেয়েও…”
বলেই কাঁদলেন তিনি। শাহনওয়াজ বলে,
“মিমকে খোঁজার জন্য আমি লোক লাগিয়েছি। ওকে খুঁজে পাওয়া আমার জন্যেও জরুরী। যাইহোক, আমার আপনাদের থেকে বিশেষ করে আপনার থেকে একটা কথা জানার ছিল।”
আসগর ইসলামের দিকে ইশারা করে বলে শাহনওয়াজ। আসগর ইসলাম বলেন,
“কি জানতে চান?”
“আচ্ছা, তানহার কি কোন যমজ বোন আছে?”
“যমজ বোন? নাহ, ওর তো কোন যমজ বোন নেই।”
মর্জিনা বেগম বলেন,”আপনি হঠাৎ এই কথা কেন জানতে চাইছেন? ওর যমজ বোন আবার কোত্থেকে আসবে। ও তো একাই জন্মেছিল যতদূর আমি জানি।”
শাহনওয়াজ বলে,
“আচ্ছা, আপনারা যান।”
তারা দুজনে চলে যায়। একটু পর আকবর আসে। আকবরকে দেখে শাহনওয়াজ বলে ওঠে,
“তানহার কোন যমজ বোন নেই আকবর। এবার তুমিই বলো, যমজ বোন ছাড়া কি এই দুনিয়ায় কখনো দুটো মানুষ সম্পূর্ণ এক রকম দেখতে হয়? আদৌ কি এটা সম্ভব?”
“না..স্যার।”
“তাহলে ঐ ডাক্তার সোহিনী আমার তানহার মতো দেখতে হয় কিভাবে?”
“এক্ষেত্রে কয়েকটা ফ্যাক্টর কাজ করতে পারে। হয়তো তানহা ম্যামের মা বাবা সত্য লুকাচ্ছে। বা হয়তো ওনার যমজ বোন ছিল কিন্তু কোন কারণে হাসপাতালে বাচ্চা চুরি হয়েছে বা এমন কিছু।”
“ওনাদের দেখে আমার মনে হয়নি ওনারা মিথ্যা বলছেন। আর এটা বাস্তব জীবন আকবর। কোন মুভি নয় যে এমন ভাবে বাচ্চা হাসপাতালে চুরি হবে বা অদল বদল হবে।”
“তাহলে আপনি কি ভাবছেন?”
“যা ভাবার আগেই ভেবে নিয়েছি। নতুন করে ভাবার কিছু নেই। এক্ষুনি গাড়ি বের করো
ঐ ডাক্তার সোহিনীর ঠিকানায় যেতে হবে আমাদের।”
“আমি ডাক্তার সোহিনীর সব বায়োডাটা বের করেছি। ওনার গ্রামের বাসা চট্টগ্রামের পুটিয়ায়। আর উনি এখানে একটি ফ্ল্যাটে থাকেন চেকপয়েন্টের দিকে।”
“তাহলে চেকপয়েন্টে চলো।”
★★
সোহিনীর ফ্ল্যাটের সামনে এসে উপস্থিত শাহনওয়াজ। শুরুতেই সে গার্ডসদের বলে,”ডাক্তার সোহিনীকে আপনি কতদিন থেকে চেনেন?”
“উনি তো প্রায় তিন বছর থেকে এই ফ্ল্যাটে থাকেন।”
শাহনওয়াজ অবাক হয়।
“তিন বছর…!”
আকবর এসে বলে,
“আমি এই ফ্ল্যাটের কিছু অধিবাসীর সাথে কথা বললাম। ওনারা তো বললেন যে ডাক্তার সোহিনী নাকি অনেক আগে থেকেই এখানে রয়েছেন। সবার সাথে অনেক ভালো সম্পর্ক ওনার। সবাই ওনাকে ভালো ভাবে চেনেন। এসব শুনে তো আমার মনে হচ্ছে না, ডাক্তার সোহিনী কোনভাবে তানহা ম্যাম হতে পারে। তাছাড়া ডাক্তার সোহিনীর স্বভাবও তানহা ম্যামের থেকে অনেক ভিন্ন। তানহা ম্যাম তো সহজ সরল নরম স্বভাবের ছিলেন কিন্তু এই ডাক্তার সোহিনী..”
আকবর নিজের বলা কথা শেষ করতে পারে না তার আগেই ডাক্তার সোহিনী সেখানে উপস্থিত হয়ে বলে,
“আপনারা এখানে কি করছেন? আমার প্রতিবেশীদের থেকে শুনলাম আমার নামে নাকি সবার থেকে তথ্য সংগ্রহ করছিলেন।”
আকবর বলে,
“না..মানে..!”
“দেখুন, আপনারা যদি বারবার এভাবে আমার পার্সোনাল লাইফে নাক গলান তাহলে কিন্তু এটা আমি মেনে নেব না। আপনারা চেনেন না আমায়। আপনাদের সবার নামে আমি পুলিশে কমপ্লেইন করব।”
শাহনওয়াজ বাকা হেসে বলে,
“তুমি আমাকে পুলিশের ভয় দেখাচ্ছ।”
“হ্যাঁ, দেখাচ্ছি। আপনি কি নিজেকে খুব বড় কিছু ভাবছেন নাকি? আমার ক্ষমতা সম্পর্কে আপনার কোন আইডিয়াই নেই। আমি কি করতে পারি সেটা দেখাব?”
“দেখান দেখি কি করতে পারেন আপনি। এই শহরের কোন পুলিশের হিম্মত নেই আমার গায়ে হাত দেয়ার।”
“আপনি কোথাকার কোন হরিদাস পাল?”
“হরিদাস পাল নই, আমি এই শহরের কুখ্যাত মাফিয়া শাহনওয়াজ সিদ্দিকী।”
সোহিনীর চোখে একটুও ভয় দেখা যায় না। বরং সে সাহসের সাথে বলে,
“সে আপনি যেই হোন..আই ডোন্ট কেয়ার৷ আমি না কাউকে পরোয়া করি না। নাও গেইট লস্ট।”
চলবে ইনশাআল্লাহ ✨